সারা দেশে করোনার মৃত্যু বেড়েই চলেছে। ঢিলেঢালা লকডাউনে দ্রুতগতিতে বাড়ছে সংক্রমণও। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু দেখেছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল; ২৫ জন। এর পরেই বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১৯ জন করে মারা গেছেন। এই সময়ে চট্টগ্রামে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৩ জনের, যা এখন পর্যন্ত জেলায় সর্বোচ্চ শনাক্ত।
রাজশাহী
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে এক দিনে আরও ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকালের মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৭ জন ও উপসর্গে ১৪ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে করোনা নেগেটিভ হওয়ার পর ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তাদের মধ্যে রাজশাহীর ১২ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও পাবনায় ৩ জন করে, নওগাঁয় ২ জন এবং কুষ্টিয়া ও যশোরে একজন করে রয়েছেন।
এর আগের ২৪ ঘণ্টায় এখানে ১৯ জনের মৃত্যু হয়।
এদিকে, মঙ্গলবার রাজশাহীর দুটি পিসিআর ল্যাবে রাজশাহী জেলার ৪৩০টি নমুনা পরীক্ষায় ১৪৯ জনের করোনা পজেটিভ আসে।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ওয়ার্ডে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৭২ জন। সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৫৪ জন। এনিয়ে ৪৫৪ বেডের বিপরীতে মোট ভর্তি রোগী আছেন ৫০০ জন।
বরিশাল
বরিশাল বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের একই সময়ে নতুন করে ৫৩৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসাপাতালের করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বরিশালের ৩ জন ও উপসর্গ নিয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া পটুয়াখালীতে ২ জন ও বরগুনায় ৪ জন।
এ পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩৬৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বাসুদেব কুমার দাস বুধবার সকালে নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, বিভাগে মোট আক্রান্ত ২৪ হাজার ৯৬ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৬ হাজার ৩৯১ জন।
আক্রান্ত সংখ্যায় বরিশালে নতুন ২০২ জন নিয়ে মোট ১০ হাজার ৩০৬ জন, পটুয়াখালীতে নতুন ৪৭ জন নিয়ে ৩ হাজার ২০ জন, ভোলায় নতুন ৪৩ জনসহ মোট ২ হাজার ৩৬৯ জন, পিরোজপুরে নতুন ৪৮ জন নিয়ে মোট ৩ হাজার ৩৩৭ জন, বরগুনায় নতুন ৬৬ জন নিয়ে মোট আক্রান্ত ২ হাজার ৪৩ জন এবং ঝালকাঠিতে নতুন ১২৭ জন শনাক্ত নিয়ে মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২১ জন।
এদিকে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র শেবাচিম হাসপাতালেই করোনা আক্রান্ত হয়ে ২৩৪ জন এবং উপসর্গ নিয়ে ৬৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২৪ ঘণ্টায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৭ জন করোনা শনাক্ত হয়ে ও বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা যান।
হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আবাসিক কর্মকর্তা (ফোকাল পার্সন) মহিউদ্দিন খান মুন বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে করোনা ইউনিটে ৪৩০ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে ভর্তি আছেন ২২ জন। নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৪৮ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৩ জন সুস্থ হয়ে ফিরেছেন।
তিনি আরও বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় টেলিমেডিসিন সেবা নিয়েছেন ২৬ জন এবং ওয়ান স্টপ ফ্লু কর্নারে ৩৮৪ জন সেবা নিয়েছেন।
সিভিল সার্জন নজরুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১০৫৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় জেলায় আক্রান্তের হার ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ায় টানা ৩৩ দিনের লকডাউন শেষ হচ্ছে আজ। কিন্তু করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু কমেনি।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও এর উপসর্গ নিয়ে জেলায় আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ জন করোনা শনাক্ত ছিলেন। আর ৩ জন মারা গেছেন উপসর্গ নিয়ে।
মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টার মধ্যে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান।
এছাড়াও ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩২৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষায় গত দিনের চেয়ে শনাক্তের হার ৭ শতাংশ বেড়ে ৩৬ শতাংশ হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ৭ দিনে জেলায় করোনা আক্রান্ত ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৭শ’ ৬৬ জন। এখন পর্যন্ত জেলায় আক্রান্ত হয়ে ৩৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কুষ্টিয়া করোনা ডেডিকেডেট জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েই চলেছে।
হাসপাতালের তত্বাবধায়ক আব্দুল মোমেন জানান, ২০০ বেডে করোনা ও এর উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন ২৭৯ জন। এদের মধ্যে করোনা শনাক্ত রোগী ২০৫ জন। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন। প্রায় ৭০ শতাংশ রোগীদের অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে। এতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছেন।
খুলনা
খুলনায় ৩ হাসপাতালে একদিনে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে আবু নাসের হাসপাতালে আজ কোনো মৃত্যু নেই।
এরমধ্যে খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ৫ জন, জেলা জেনারেল হাসপাতালে ৪ জন, গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩ জন মারা গেছেন।
মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টার মধ্যে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান।
ডেডিকেটেড হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা (ফোকাল পার্সন) সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, এ হাসপাতালে মৃতদের মধ্যে করোনা নিয়ে ২ ও উপসর্গ নিয়ে ৩ জন মারা গেছেন।
এ ছাড়া হাসপাতালে ২০১ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। যার মধ্যে রেড জোনে ১৩৫ জন, ইয়ালো জোনে ২৬ জন, এইচডিইউতে ২০ ও আইসিইউতে ২০ জন। নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৩৮ জন। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ২১ জন।
গাজী মেডিক্যালের স্বত্বাধিকারী গাজী মিজানুর রহমান জানান, এই হাসপাতালে মৃত ৩ জনের মধ্য খুলনা ও বাগেরহাটের ১ জন করে। হাসপাতালে ১১৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে আইসিইউতে ৯ ও এইচডিইউতে ৯ জন রয়েছেন। এক দিনে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ১২ জন। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ২৫ জন।
জেলা জেনারেল হাসপাতালের মুখপাত্র আবু রাশেদ জানান, এ হাসপাতালে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে খুলনার ১ জন ও বাগেরহাটের ৩ জন।
এ হাসপাতালে মোট রোগী রয়েছেন ৬৮ জন। নতুন ভর্তি হয়েছে ৮ জন; সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ১২ জন।
আবু নাসের হাসপাতালের মুখপাত্র প্রকাশ দেব নাথ জানান, এ হাসপাতালে আজ কোনো মৃত্যু নেই। ৪৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। যার মধ্যে আইসিইউতে ১০ জন। এখানে নতুন ভর্তি হয়েছেন ৬ জন; সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৬ জন।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে করোনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৩ জনের, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বুধবার এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের ১১টি ও কক্সবাজারের একটিসহ মোট ১২টি ল্যাবে ২ হাজার ৮৬৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ১ হাজার ৩ জনের শরীরে ভাইরাসটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৬৫২ জন নগরের আর গ্রামের বাসিন্দা ৩৫১ জন।
এ নিয়ে চট্টগ্রামে করোনা শনাক্ত হলো ৬৭ হাজার ৭৮৭ জনের।
গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০ জন। তাদের মধ্যে ছয়জন উপজেলার ও চারজন শহরের বাসিন্দা। এ নিয়ে চট্টগ্রামে করোনায় মৃত্যু হলো ৮০০ জনের।
জেলার ১৪টি উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৫ জন আক্রান্ত হয়েছে হাটহাজারীতে। সবচেয়ে কম ছয়জন আক্রান্ত হয়েছে সন্দ্বীপ উপজেলায়।
চট্টগ্রামে আক্রান্তের সংখ্যায় প্রতিদিনই ছড়িয়ে যাচ্ছে রেকর্ড। গত সোমবার জেলায় করোনায় আক্রান্ত হন ৮২১ জন। এর পরদিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার আক্রান্ত হন ৯৫৫ জন। সর্বশেষ বুধবার গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হন এক হাজার ৩ জন।
নেত্রকোণা
জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ৩ জন মারা গেছেন। এই সময়ে জেলায় নতুন করে আরও ৮০ জন শনাক্ত হয়েছেন।
মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টার মধ্যে তারা মারা যান।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র চিকিৎসা কর্মকর্তা উত্তম কুমার পাল জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সদর, দুর্গাপুর ও মোহনগঞ্জে ৩ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ১ জন পুরুষ ও ২ জন নারী ছিলেন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র আরও জানান, ২১৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হন ৮০ জন। জেলায় শনাক্তের হার শতকরা ৩০ দশমিক ৪২।
শনাক্তদের মধ্যে সদরে ২৩ জন, মোহনগঞ্জে ২২ জন, দুর্গাপুরে ১৩ জন, আটপাড়ায় ৯ জন, বারহাট্রায় ৪ জন, কেন্দুয়ায় ৩ জন, কলমাকান্দায় ৩ জন, মদনে ২ জন ও পর্বধলায় ১ জন রয়েছেন। জেলায় এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ৩৯০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩৭৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৩২৫ জন।
এ ছাড়া হাসপাতাল ও নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন আছেন এক হাজার ৫০ জন। জেলায় এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪৪ জন।
আরও পড়ুন:চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমের শুরু থেকেই উচ্চ তাপমাত্রায় আলোচনায় রয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা। মৃদু, মাঝারি, তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপমাত্রা দেখছে জেলাবাসী। মাঝে তাপমাত্রা সামান্য কমলেও ফের অতি তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশের পশ্চিমের এই জেলা।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার মানে জেলায় আবারও অতি তীব্র তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে এই জেলা।
আগের দিন বুধবারও এখানে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। ওইদিন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগের দিন তাপমাত্রা নেমেছিল ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সেই তীব্র তাপপ্রবাহ বৃহস্পতিবার এসে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।
জেলা জুড়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবনে অস্বস্তি আরও বেড়েছে। স্বস্তি মিলছে না কোথাও। তীব্র গরমে একটু স্বস্তি পেতে দিনের অধিকাংশ সময় মানুষ গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে।
গরমের প্রভাবে বাড়ছে রোগবালাই। গরমজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হাসপাতালে। তীব্র তাপদাহে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষ কাজে যেতে পারছে না। নষ্ট হচ্ছে ধান, কলা, আম, লিচুসহ মৌসুমী ফসল।
গোপালপুর গ্রামের কৃষক হান্নান আলী বলেন, ‘এই তাপে মাটে উঠতি ফসল নষ্ট হয়ি যাচ্চি। আর রোদির তাতে মাটে দাঁড়ানু যাচ্চি না। ধানের ক্ষেতে বেশি সেচ লাগচি। তাও আবার দিনের বেলায় পাম্পে পানি উটচি না। রাতি দিতি হচ্চি।’
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি বেড়েছে। জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ রূপ নিয়েছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে। সহসা বৃষ্টি হওয়ার কোনো পূর্বাভাস নেই। চলতি এপ্রিল মাসের শেষ দিন পর্যন্ত আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ঘরে ঢুকে এক নারী ও তার মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সোমবারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগটি করেন ছেনুয়ারা বেগম নামের নারী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত সোমবার রাত দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব উত্তরপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমের ঘরের দরজা ভেঙে আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন প্রবেশ করেন। তারা ছেনুয়ারা ও তার মেয়ের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি ও ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে মা ও মেয়ে উভয়কে বিবস্ত্র করেন আইয়ুব ও তার লোকজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান৷
এ বিষয়ে ছেনুয়ারা বেগম বলেন, ‘সন্ত্রাসী আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন যুবক আমার বাড়িতে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রবেশ করে। পরে বাড়ি থেকে আমাকে জোরপূর্বক কয়েকজন লোক বের করে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং আমার মেয়েকে নির্যাতন করে স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিষয়ে কাউকে বললে মেরে ফেলা হবে বলে চলে যায়।’
থানায় অভিযোগের পর আয়ুব হুমকি দিয়েছে জানিয়ে ছেনুয়ারা বলেন, ‘সেই আয়ুব খান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে, মামলা হলে কী হবে? জামিন নিয়ে বাহির হয়ে আমাকে আর আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হবে বলে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমি টেকনাফ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি এবং সঠিক তদন্ত করে পুলিশকে সহযোগিতা করব।’
অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমি ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এবং আমি মামলা করার জন্য ওসি বরাবর সুপারিশ করেছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি ওসমান গণি বলেন, ‘আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দ্বায়িত্ব পালনকালে এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা যাওয়া ওই ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের নাম রুহুল আমিন। যশোরের বেলাপোল পৌরসভার শর্শার কোরবান আলীর ছেলে তিনি।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) সাজ্জাদ হোসেন জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের মধ্যে ট্রাক পরিদর্শন শেষে দুপুর পৌনে ১টার দিকে নিজ অফিস কক্ষে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন রুহুল আমিন। এ সময় তাকে তার সহকর্মীরা দ্রুত শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে, চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন এসএম মাহমুদুর রশিদ জানান, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রুহুল আমিনকে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে যখন নিয়ে আসা হয়, তার আগেই তার মৃত্য হয়েছে।
তিনি বলেন, হাসপাতালে যারা নিয়ে এসেছিলেন তারা বলেছেন তিনি তৃষ্ণার্ত ছিলেন, পানি খেতে চেয়ে ছিলেন। তবে তার মৃত্যু যে হিট স্ট্রোকে হয়েছে এটা নিশ্চিত করে এখনই বলা যাবে না।
মাহমুদুর রশিদ বলেন, এখন যেহেতু প্রচণ্ড গরম চলছে তাই এটার প্রভাব থাকতেও পারে। সেই সাথে তার আগের অন্য কোনো রোগের ইতিহাসও আমাদের জানা নাই। তাই হিট স্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে, এ সিদ্ধান্ত এখনই নেয়া যাবে না।
রাজশাহীর বাগমারায় ভাড়া বাসায় আটকে রেখে এক মাস ধরে এক তরুণীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার রাতে উপজেলার তাহেরপুর পৌর এলাকার হরিফলার মোড়ের একটি বাসা থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার ও এ ঘটনায় অভিযুক্ত একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
আটক রাজু হোসেন (২৫) পেশায় চা দোকানি। তিনি তাহেরপুর পৌরসভার হরিফলা মহল্লার আবদুর রাজ্জাক শাহের ছেলে।
পুলিশ জানায়, অসুস্থ অবস্থায় তরুণীকে বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়ার পর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) স্থানান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ওই তরুণীর বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। ফোনে রাজুর সঙ্গে তার পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ২৪ মার্চ বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফোনে ভুক্তভোগী তরুণীকে তাহেরপুরে নিয়ে আসেন রাজু। পরে তাকে নিয়ে ভাড়া বাসায় ওঠেন রাজু। সেখানে আটকে রেখে এক মাস ধরে রাজু ওই তরুণীকে ভয় দেখিয়ে ও মারধর করে ধর্ষণ করেন।
এক পর্যায়ে নির্যাতনের শিকার তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়লে পাশের বাড়ির লোকজন টের পেয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানান। তিনি থানায় খবর দিলে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ ওই বাসা থেকে তরুণীকে উদ্ধার করে। পরে ওই এলাকা থেকে রাজুকে আটক করে পুলিশ। রাতেই তরুণী বাদী হয়ে অপহরণ, ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন।
রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মুখপাত্র রফিকুল আলম জানান, মেয়েটার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। আটক তরুণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারক শপথ গ্রহণ করেছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান তাদের শপথ পাঠ করান। খবর বাসসের
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী পরিচালনায় শপথ অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, শপথ পাঠকারী তিন বিচারপতির পরিবারের সদস্য, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক এবং সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রিার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫(১)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারক ১) বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ ২) বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ৩) বিচারপতি কাশেফা হোসেনকে আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে বুধবার রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশিলদিয়ায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় ওই দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রেজার জব্দ করার সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত ড্রেজার দুটির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মেহেরপুরের গাংনীতে সেচ পাম্পের সুইচ দিতে গিয়ে বিদুৎস্পৃষ্ট হয়ে আবদুল হান্নান (৭৫) নামের কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নের দেবীপুর দক্ষিণপাড়ায় বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার দিকে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
প্রাণ হারানো আবদুল হান্নান দেবীপুর দক্ষিণপাড়ার খোদা বক্সের ছেলে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য হিরোক আহমেদ বলেন, ‘আজ সকালে আবদুল হান্নান নিজ গ্রামের মাঠে অবস্থিত সেচ পাম্পের সুইচ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। পরে স্থানীয়রা মরদেহটি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে নিজ বাড়ি দেবীপুরে নিয়ে আসে।’
বামন্দী পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) শরীফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিদুৎস্পৃষ্টে মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে প্রাথমিক তদন্ত শেষ করেছি। বতর্মানে মরদেহটি পরিবারের কাছে রয়েছে।’
মন্তব্য