দেশে করোনায় মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। প্রতিদিনই লম্বা হচ্ছে লাইন। এদিকে, করোনা রোগীর সংখ্যা হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে দ্রুতগতিতে। করোনা চিহ্নিত না হলেও করোনা রোগের সব লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। তাদের প্রায় সবারই ফুসফুসে আক্রান্ত।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু মূলত করোনার কারণেই হচ্ছে। তবে, এসব মৃত্যুর হিসাব যোগ হচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগের মৃত্যুর তালিকায়। প্রতিদিনিই করোনার থেকে উপসর্গেই মৃত্যু বেশি। কোনো কোনো দিন করোনার চেয়ে উপসর্গের মৃত্যু হচ্ছে ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি।
রাজশাহী
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে এক দিনে আরও ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার সকালের মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৮ জন ও উপসর্গে ১১জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে করোনা নেগেটিভ হওয়ার পর ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগের ২৪ ঘণ্টায় এখানে ১৪ জনের মৃত্যু হয়।
এদিকে, চলতি মাসের ১৩ দিনে এই হাসপাতালে মারা গেছেন ২২৩ জন। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়ে মারা যান ৭১ জন। বাকি ১৫২ জন মারা যান উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।
গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে রাজশাহীর ৬ জন, নাটোরের ৩ জন, নওগাঁর ৩ জন, পাবনার ৩ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২ জন এবং বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে একজন করে রয়েছেন।
বয়স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৯ জনের মধ্যে ৭ জন ষাটোর্ধ্ব, ১০ জন পঞ্চাশোর্ধ এবং ২ জন চল্লিশোর্ধ্ব।
তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ওয়ার্ডে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৬৩ জন। এ সময় সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৭৬ জন। সকালে ৪৫৪ বেডের বিপরীতে মোট ভর্তি রোগী ছিলেন ৫০৪ জন।
এদিকে, সোমবার রাজশাহীর দুটি পিসিআর ল্যাবে রাজশাহী জেলার ৪৬৯টি নমুনা পরীক্ষায় ১৫৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। রাজশাহীতে শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
খুলনা
খুলনায় ৪ হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে এক দিনে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১০ জন, জেলা জেনারেল হাসপাতালে ৪ জন, গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন ও আবু নাসের হাসপাতালে ১ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ডেডিকেটেড হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা (ফোকাল পার্সন) সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, এ হাসপাতালে মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে করোনা নিয়ে ৫ ও উপসর্গ নিয়ে ৫ জন মারা গেছেন। শনাক্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে খুলনার ৪ জন ও বাগেরহাটে ১ জন।
এ ছাড়া এই হাসপাতালে ১৯৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। যার মধ্যে রেড জোনে ১৩০ জন, ইয়েলো জোনে ২৫ জন, এইচডিইউতে ২০ ও আইসিইউতে ২০ জন। নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৪৩ জন।
গাজী মেডিক্যালের মালিক গাজী মিজানুর রহমান জানান, এই হাসপাতালে মৃত ৪ জনের মধ্য খুলনার ৩ ও বাগেরহাটে ১ জন।
জেলা জেনারেল হাসপাতালের মুখপাত্র আবু রাশেদ জানান, এই হাসপাতালে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৪ জনের বাড়ি খুলনায়। এই হাসপাতালে মোট রোগী রয়েছেন ৭৬ জন। নতুন ভর্তি হয়েছেন ১২ জন; সুস্থ হয়েছেন ৮ জন।
আবু নাসের হাসপাতালের মুখপাত্র প্রকাশ দেব নাথ জানান, এই হাসপাতালে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি খুলনায়। ৪৪ জন রোগী ভর্তি যার মধ্যে আইসিইউতে ১০ জন। এখানে নতুন ভর্তি হয়েছেন ৬ জন; সুস্থ হয়েছেন ৬ জন।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২৪ ঘণ্টায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন করোনা শনাক্ত হয়ে ও বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা যান।
হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আবাসিক কর্মকর্তা (ফোকাল পার্সন) মহিউদ্দিন খান মুন মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৯টায় নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে করোনা ইউনিটে ৪৬২ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে ভর্তি আছেন ২০ জন। নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৮৪ জন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২ জন সুস্থ হয়েছেন।
তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় টেলিমেডিসিন সেবা নিয়েছেন ৪৫ জন।
জেলা সিভিল সার্জন নজরুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৯৭৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। জেলায় আক্রান্তের হার ২৭ দশমিক ১৭ শতাংশ।
ঝিনাইদহ
জেলায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়াও নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১০৮ জন।
সিভিল সার্জন সেলিনা বেগম মঙ্গলবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে সদর হাসপাতালে ৯ জন, কোটচাঁদপুরে ২ জন ও কালীগঞ্জে ১ জন মারা গেছেন।
এ ছাড়া জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১০৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তের হার ৩১ দশমিক ৩৯ ভাগ।
এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৫ হাজার ৮৫৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫৬ জন।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৫৫ জন। যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ আক্রান্ত। এই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০ জন।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মঙ্গলবার এই তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের ১০টি এবং কক্সবাজারের একটিসহ মোট ১১টি ল্যাবে ২ হাজার ৬৪৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে নতুন করে ৯৫৫ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত এটাই ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ শনাক্ত।
এর আগে সোমবার সর্বোচ্চ ৮২১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৬৩৬ জন শহরের ও ৩১৯ জন উপজেলার বাসিন্দা। এ নিয়ে চট্টগ্রামে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬ হাজার ৭৮৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০ জন। এর মধ্যে ৩ জন শহরের ও ৭ জন উপজেলার বাসিন্দা। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ৭৯০ জন।
জেলার ১৪টি উপজেলার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫০ জন আক্রান্ত হয়েছেন সীতাকুণ্ডে এবং সবচেয়ে কম ৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন লোহাগড়ায়। বাকি উপজেলাগুলোর মধ্যে সাতকানিয়ায় ৯ জন, বাঁশখালীতে ৯ জন, আনোয়ারায় ১৫ জন, চন্দনাইশে ১১ জন, পটিয়ায় ২১ জন, বোয়ালখালীতে ২৬ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ২৮ জন, রাউজানে ৩৫ জন, ফটিকছড়িতে ৩০ জন, হাটহাজারীতে ২৬ জন, মীরসরাইয়ে ২৭ জন এবং সন্দ্বীপে ১৪ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
এদিকে জেলার বড় সরকারি হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে করোনা রোগী ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীর চাপ। ইতোমধ্যে কোভিড চিকিৎসা উন্নত করতে হাসপাতালে শয্যা খালি করার পাশাপাশি রুটিন ভর্তি ও রুটিন সার্জারি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। রোববার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে চারটি নির্দেশনা দিয়ে বিভাগীয় প্রধানদের চিঠি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ওই দিন থেকেই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের পরিচাল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কবীর।
নির্দেশনায় বলা হয় কেবল জরুরি রোগীদের ভর্তি ব্যতীত অন্যান্য রুটিন অপারেশনসমূহ স্থগিত থাকবে। জরুরি রোগীদের ভর্তি করা হবে, তবে রুটিন ভর্তি বন্ধ থাকবে। ইতোমধ্যে ভর্তি রোগীদের মধ্যে যারা জরুরি নন (দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত) তাদের আপাতত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য ছাড়পত্র দেয়া হবে।
এ বিষয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। রোববার থেকে আমাদের এই সিদ্ধান্তটি বাস্তবতায়ন করা হয়েছে। এটা কত দিন চলবে সেটা কেভিড পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। তবে আমাদের ইমার্জেন্সি সেবা ঠিকঠাক চলছে।’
কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৯ জন করোনা আক্রান্ত ছিলেন। আর ১ জন ভর্তি ছিলেন উপসর্গ নিয়ে।
সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন।
জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৯১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষায় গত দিনের চেয়ে শনাক্তের হার ৩ বেড়ে ২৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ হয়েছে।
জেলায় ৭ দিনে করোনা শনাক্ত হয়ে ৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ৭ দিনে জেলায় ১ হাজার ৬৭৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ৩৫৯ জন মারা গেছেন।
এদিকে, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েই চলেছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন জানান, ২০০ শয্যায় করোনা ও এর উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন প্রায় ৩০০ জন। এদের মধ্যে করোনা শনাক্ত রোগী ১৯২ জন। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন।
প্রায় ৭০ শতাংশ রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে। এতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের প্রায় সব বেডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্বে অবহেলা নজরদারি করতে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে রোগীর মৃত্যুর বিষয়টিও নজরদারি করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন।
মঙ্গলবার দুদকের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ থাকার পরও এই মামলা পরিসমাপ্তি করা হয়। গেল জানুয়ারিতে শুরু হওয়া অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণও মিলেছে।’
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, গায়ের জোরেই পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলায় আসামিদের অব্যাহতি দিয়েছিল তৎকালীন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দাবি, বেশকিছু দুর্নীতির তথ্য মিলেছে। এই মামলায় আসামির অব্যাহতির পেছনে তৎকালীন কমিশনের দায় আছে কি না তাও খতিয়ে দেখার কথা জানান তিনি।
আব্দুল মোমেন বলেন, নতুন তদন্তে কারো সংশ্লিষ্টতা মিললে, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে করা মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘ একযুগ পর; গত জানুয়ারি মাসে সেই মামলা পুনরায় অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। গঠন করা হয় উচ্চ পর্যায়ে কমিটি।
জানা যায়, ২০১২ সালে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে মামলা করে দুদক। তবে ২০১৪ সালে অদৃশ্য কারণে মামলাটি পরিসমাপ্তি করে তৎকালীন বদিউজ্জামান ও শাহাবুদ্দিন চুপ্পু কমিশন।
চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছ রক্ষায় এখন থেকে ড্রোন দিয়ে নজরদারি করা হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। গতকাল মঙ্গলবার হালদা নদীর মোবারক খিল এলাকায় ড্রোন উড়িয়ে কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, হালদা নদীর মা মাছ রক্ষায় নজরদারির জন্য ব্যবহার করা হবে চারটি ড্রোন। নদীর পরিবেশ রক্ষায় এবং সব ধরনের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে এসব ড্রোন ব্যবহার করা হবে।
রাউজান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ আলমগীর হোসাইন বলেন, চারটি ড্রোন মৎস্য অধিদপ্তর থেকে দেওয়া হয়েছে হালদা এবং কর্ণফুলীর মোহনা পর্যবেক্ষণ করার জন্য। ড্রোনগুলো দিয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের ১২টি দল নদী পর্যবেক্ষণ করবে। এতে নদীতে সব ধরনের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ হবে। একেকটি ড্রোন সাত লাখ টাকা করে কেনা হয়েছে ঠিকাদারের মাধ্যমে।
এর আগে সকালে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার গহিরা এলাকায় মাছের পোনা অবমুক্ত করেন। এরপর স্পিডবোটে হালদা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকা পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। দুপুর দুইটায় হালদার অংশীজনদের সঙ্গে মোবারক খিল এলাকায় মতবিনিময় সভা করেন।
মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা হালদার প্রাকৃতিক পরিবেশ, দূষণ, ডিম সংগ্রহ ও জেলেদের নানা সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘হালদা দেশের বড় ঐতিহ্য। এটা আমাদের রক্ষা করতে হবে। তবে একা নয় সবাই মিলে।’
হালদার দূষণ প্রসঙ্গে ফরিদা আখতার বলেন, ‘যারা নদীর পরিবেশ দূষণ করে, তারা নদীকে নির্যাতন করে। এটাকে আমি দূষণ বলব না। এদের নির্যাতনকারী হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। তাহলে দূষণ বন্ধ করা সহজ হবে।’
মৎস্য অধিদপ্তরের হালদা নদী উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা প্রকল্প আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন। এতে বক্তব্য রাখেন সাবেক সচিব আবদুল করিম, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুর রউফ, নৌ পুলিশ সুপার আ ফ ম নিজাম উদ্দিন, হালদা প্রকল্পের পরিচালক মিজানুর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হালদা গবেষক মনজুরুল কিবরিয়া, মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক আনোয়ার হোসেন হালদা রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আলী।
প্রহসনের নির্বাচন ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদালতে এ জবানবন্দি দেন তিনি।
এর আগে দুই দফায় চার দিন করে আট দিনের রিমান্ড শেষে নূরুল হুদাকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার। এরপর নূরুল হুদা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মতি হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন এই তদন্তকারী কর্মকর্তা।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
নূরুল হুদার পক্ষে অ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম সজিব এ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, নূরুল হুদার রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করেন পুলিশ। আমরা তার জামিনের দরখাস্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে উপস্থিত হই। এরপর আদালতে এসে জানতে পারি তিনি দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিচ্ছেন।
গত ২২ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে নূরুল হুদার বাড়িতে গিয়ে ‘স্থানীয় জনতা’ তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পরদিন প্রভাব খাটিয়ে প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। চার দিনের রিমান্ড শেষে একই মামলায় গত ২৭ জুন আবারও চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার সিএমএম আদালত।
একই মামলায় গত ২৯ জুন তিন দিনের রিমান্ড শেষে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ২২ জুন দশম থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করা তিন সিইসি যথাক্রমে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সালাহ উদ্দিন খান। পরবর্তীতে গত ২৫ জুন এ মামলায় নতুন করে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ধারা যুক্ত করা হয়।
সাবেক আমলা নূরুল হুদা ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সিইসি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন দেশের দ্বাদশ সিইসি। তার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশনের অধীনে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় পর্যায়ের সব ভোট হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আরও পাঁচ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা অবৈধ সম্পদ অর্জন, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং পক্ষপাতিত্বের সঙ্গে জড়িত। মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুদক এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে এই কর্মকর্তারা বড় পরিসরে কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এতে করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের উল্লেখযোগ্য রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।
এমন সব অভিযোগে যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে তারা হলেন— বড় করদাতা বিভাগের (ভ্যাট) অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল রশিদ মিয়া, সদস্য মো. লুৎফুর আজিম, কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের (সিআইআইডি) সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আলমগীর হোসেন, ঢাকার কর অঞ্চল-১৬ এর উপকর কমিশনার মো. শিহাবুল ইসলাম এবং যুগ্ম কমিশনার মো. তারেক হাসান।
এর আগে ২৯ জুন দুদক এনবিআরের আরও ছয়জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। যাদের বিরুদ্ধে কর্তৃত্বের অপব্যবহার ও গত দুই দশক ধরে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ছয় কর্মকর্তা হলেন— আয়কর নীতি বিভাগের সদস্য একেএম বদিউল আলম, ঢাকা কর অঞ্চল-৮ এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা, বিসিএস কর একাডেমির যুগ্ম কর কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দিন খান, ঢাকার কর অঞ্চল-১৬ এর উপকর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, অডিট-গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর-ভ্যাটের ঢাকার অতিরিক্ত কমিশনার হাসান তারেক রিকাবদার এবং কাস্টমস-আবগারি ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (দক্ষিণ) এর অতিরিক্ত কমিশনারসাধন কুমার কুন্ডু।
এই ছয় কর্মকর্তার মধ্যে হাসান তারেক এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হিসেবে পরিচিত। তার নেতৃত্বাধীন পরিষদটি রাজস্ব বোর্ড ভেঙে দেওয়ার পরিবর্তে এর অভ্যন্তরে কাঠামোগত সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছে।
দুদকের মুখপাত্র আক্তারুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্ত কর্মকর্তারা কর দায় কমানোর বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার কেউ কেউ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাও দায়ের করেছেন—যারা তাদের অবৈধ দাবি পূরণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগও রয়েছে যে, করদাতাদের কর ফেরত ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বিত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে করদাতাদের তাদের পাওনা পেতে ঘুষ দিতে বা উপহার দিতে বাধ্য করা হয়েছে। কখনো কখনো এই ঘুষের পরিমাণ ছিল করদাতাদের পাওনার অর্ধেকের সম পরিমাণ।
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের ষোলআনীতে ৬০০ মেগাওয়াটের একটি এলএনজি ভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল ও ৬৫ মেগাওয়াটের একটি সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে চাহিদা না থাকায় ৬০০ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ আপাতত স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ৬৫ মেগাওয়াটের সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০২৫ সালের জুনে চালু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো শুরুই করা যায়নি নির্মাণ কাজ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছে অর্থের যোগান নিশ্চিত না হওয়ায় এতদিন কাজ শুরু করা যায়নি। তবে বিদেশি একটি উন্নয়ন সংস্থা প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করায় দ্রুতই নির্মাণকাজ শুরু হবে।
জানা যায়, গজারিয়া উপজেলার ষোলআনী ও দৌলতপুর মৌজায় ২০১৬ সালে ৩৫০ মেগাওয়াটের কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। সে লক্ষ্যে প্রায় আড়াইশো একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তবে পরিবেশ রক্ষার দাবিতে স্থানীয়দের আন্দোলনের মুখে সে পরিকল্পনা থেকে সরে এসে ওই জায়গায় ৬০০ মেগাওয়াটের একটি এলএনজিভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল ও ৬৫ মেগাওয়াটের একটি পরিবেশবান্ধব সোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে চাহিদা না থাকায় ৬০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ ২০৩০ সাল পর্যন্ত স্থগিত করে আরপিসিএল। অন্যদিকে সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ ২০২৩ সালে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) সূত্রে জানা যায়, ৬০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ আপাতত বন্ধ। ৬৫ মেগাওয়াটের সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নিয়ে ২০২২ সাল থেকে কাজ করছেন তারা। ২০২৩ সালে ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়। ২০২৫ সালের জুনে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করার কথা থাকলেও বিভিন্ন জটিলতায় তার নির্মাণ কাজই শুরু করা যায়নি। এদিকে বিভিন্ন জটিলতার পর প্রকল্পটিতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে জার্মানির বিনিয়োগ ও উন্নয়ন ব্যাংক কেএফডব্লিউ (KFW)। দ্রুতই প্রকল্পটি নির্মাণকাজ শুরু হবে যা ২০২৮ সালের মধ্যে শেষ হবে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (০১ জুলাই) বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্ধারিত জায়গায় গিয়ে দেখা যায়, মাটি ভরাট এবং ভূমি উন্নয়নের যাবতীয় কাজ শেষ করেছে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল)। প্রকল্পটি নদীর তীরে হওয়ায় নদীভাঙন প্রতিরোধে ফেলা হয়েছে কংক্রিট ব্লক। প্রকল্প এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র (সাবস্টেশন) নির্মাণে কাজও শেষ হয়েছে। তবে জমি অধিগ্রহণের ৯ বছর পার হলেও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য সেখানে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চোখে পড়েনি।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহ আলী বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনের কাছে এ জায়গাটি এখন ষোলআনী প্রজেক্ট নামে পরিচিত। শুনেছিলাম এখানে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে। কিছু লোক বলেছিল প্রকল্প এলাকার একপাশে একটি সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হবে, কিন্তু আমরা সেরকম কিছুই দেখতে পাচ্ছি না’।
প্রকল্প এলাকায় ঘুরতে আসা নুরুল হক বলেন, ‘আমরা মাঝেমধ্যে এখানে ঘুরতে আসি। মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা এই জায়গাটি ষোলআনী সৈকত নামে পরিচিত। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এখানে বেড়াতে আসে। অনেকদিন ধরে শুনছি এখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে তবে শুধুমাত্র একটি বিদ্যুৎ সাবস্টেশন ছাড়া এখানে কিছুই নেই’।
আরপিসিএলের নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মো. সেলিম ভূঁইয়া জানান, ‘প্রয়োজনীয় ফান্ড না পাওয়ায় আমরা কাজ শুরু করতে পারিনি। তবে আসার কথা হচ্ছে অনিশ্চয়তার মেঘ কেটে গেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কেএফডব্লিউ (KFW) ৪২ মিলিয়ন ইউরো ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। স্বল্প সুদে পাওয়া এই ঋণ দীর্ঘমেয়াদি কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে। বাকি টাকা দিবে সরকার। সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জমি পাওয়া। আমাদের জমি রেডি রয়েছে দ্রুতই আমরা সেখানে নির্মাণকাজ শুরু করতে পারব। ২০২৮ সালে আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কাজ শেষ করার ব্যাপারে আশাবাদী আমরা’।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমরা যখন আগে নৌকায় করে অনেক দূরে যেতাম, মাঝি বলত চুপ থাকুন ওই গ্রাম ডাকাতদের গ্রাম। হাসিনার আমলে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ডাকাতদের গ্রাম। অনেক আতঙ্ক নিয়ে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পার হতাম।
মঙ্গলবার (০১ জুলাই) প্রথম প্রহরে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্রদল আয়োজিত ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মৃতি স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন ও সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, মোমবাতি প্রজ্বলন আগামী দিনে গণতন্ত্রের পদযাত্রায় এগিয়ে যাওয়া। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতন্ত্রের মিনার, অধিকার প্রতিষ্ঠার মিনার। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি সেই বায়ান্ন, ঊনসত্তরের বিশ্ববিদ্যালয় দেখছি, যেখানে বইছে শান্তির সুবাতাস।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বাঁধা দিলে সব বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা সবকিছু দিয়ে ছাত্রদের স্তব্ধ করে দেব। এত কিছু থাকার পরেও গণতন্ত্রের জন্য ছাত্রদের যে সংগ্রাম তাকে শেখ হাসিনা ঠেকাতে পারেনি। আলোক প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে আমাদের ৩৬ দিনের কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন হলো।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, শেখ হাসিনার পেটুয়া বাহিনীর কাছে ছাত্রদলের কত নেতাকর্মী গুম, খুন হয়েছেন। তারা নব্বই, আশির দশকে যে ভূমিকা পালন করেছে সেভাবে তারা চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানেও ভূমিকা রেখেছে। এই সংগ্রাম বাস্তবায়ন করতে হলে আরও বাধা আসবে। সেই বাধা অতিক্রম করতে আমরা গণতন্ত্রের মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করব।
কর্মসূচিতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান বলেন, জুলাই মাসের শুরুতে ছাত্রদল যে আয়োজন করেছে সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। জুলাই আন্দোলন একদিনে হয় নাই। হাজার হাজার মানুষ এখানে জীবন দিয়েছে। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান আসাদের রক্তের মাধ্যমে হয়েছে। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সেদিন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সফল হয়েছিল। আজকে আমরা খুনি হাসিনামুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি। শহীদ ওয়াসিম, সাঈদের রক্ত কখনো বৃথা যাবে না।
তিনি বলেন, বিএনপি আল্লাহর রহমতে ক্ষমতায় আসবে এবং তারেক রহমান দেশ পরিচালনা করবে। ইনশাআল্লাহ তারেক রহমান কিছুদিনের মধ্যে বাংলাদেশে আসবে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, জুলাই আন্দোলন শুরু করেছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কিন্তু আন্দোলন শুরু হওয়ার পরে আন্দোলনের সম্মুখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রদল। রাজপথে একক ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্রদল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ছাত্রদলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি হামলা ও মামলার শিকার হয়েছে। একক ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মী জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছে। আমরা তাদের আত্মত্যাগ কখনো ভুলে যাবো না।
কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, পনেরো বছর ধরে বাংলাদেশে যে ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়েছিল তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ জাতীয়তাবাদী বিভিন্ন দল অংশ নিয়েছিল। ফ্যাসিবাদের আমলে তরুণদের মতামত দেওয়ার অধিকার রাখা হয়নি অথচ এই তরুণরাই চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছে।
কর্মসূচিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকার চার মহানগরের বিভিন্ন থানা ও ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, জলবায়ু অভিযোজন কার্যক্রমে জবাবদিহি, সমন্বয় ও তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ও পানি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পরিবীক্ষণ ব্যবস্থায় তরুণ প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। একইসঙ্গে পয়ঃনিষ্কাশন ও চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ইনসিনারেশনের বিকল্প হিসেবে উন্নত প্রযুক্তির মতো নিরাপদ ও ব্যবহারিক সমাধান গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
মঙ্গলবার (০১ জুলাই) বাংলাদেশ সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে ইউনিসেফ বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রানা ফ্লাওয়ার্স-এর নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। বৈঠকে শিক্ষা, সামাজিক খাত ও তরুণদের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় যৌথ উদ্যোগ জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
বৈঠকে রানা ফ্লাওয়ার্স শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব—যেমন বন্যা, অপুষ্টি ও শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাহত হওয়া উল্লেখ করে বলেন, ইউনিসেফ তরুণদের জলবায়ু সমাধানের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বিভিন্ন জেলায় তরুণদের নিয়ে পরামর্শ সভার পরিসর বাড়ানোর প্রস্তাব দেন এবং নিয়মিতভাবে তরুণদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগের জন্য একটি কাঠামোগত ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
পরিবেশ সচেতনতা তৈরির অংশ হিসেবে ইউনিসেফ একটি যৌথ ডকুমেন্টারি সিরিজ নির্মাণের প্রস্তাব দেয়, যেখানে শিশুদের পরিবেশবান্ধব বার্তা স্থান পাবে। উপদেষ্টা এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটি বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
বৈঠকে ইউনিসেফ ও মন্ত্রণালয় যৌথভাবে পরিবেশ শিক্ষাভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা ও স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু উদ্যোগ পরিচালনার ব্যাপারে একমত পোষণ করে। পরিকল্পনায় পুনর্ব্যবহার, বর্জ্য পৃথকীকরণ এবং শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে জরুরি প্রস্তুতির কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ, ইউনিসেফ বাংলাদেশের চিফ অব ওয়াশ পিটার জর্জ এল ম্যাস, চিফ অব ফিল্ড সার্ভিসেস ফ্রাঙ্কো গার্সিয়া এবং প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট (জলবায়ু) ভ্যালেন্টিনা স্পিনেডি।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও ইউনিসেফ উভয় পক্ষই জলবায়ুবান্ধব নেতৃত্ব গড়ে তুলতে ও দেশের টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও জোরদারের আশাবাদ ব্যক্ত করে।
মন্তব্য