করোনাভাইরাসের তীব্র সংক্রমণের মধ্যেও টানা সেবা দিয়ে আসা দেশের সমুদ্র ও স্থলবন্দরের কর্মীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোভিড-১৯ রোধী টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সচিবালয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে রোববার দুপুরে এ তথ্য জানান প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘দেশের সমুদ্র ও স্থলসহ সকল বন্দরে যারা কাজ করছেন, তারা ফার্স্ট প্রায়োরিটির তালিকায় আছে। তাদের আমরা ভ্যাকসিনেট করে ফেলব। এখানে অনেক দক্ষ লোকজন কাজ করেন। তারা যদি কোনো কারণে আক্রান্ত হয়ে যান, তাহলে এ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।’
নৌখাত-সংশ্লিষ্টদের করোনা প্রতিরোধী টিকার আওতায় নিয়ে আসায় ধন্যবাদ জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বুধবার থেকে এ কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি।’
শুরুতে ১২ হাজার কর্মীকে এ টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী। বলেন, ‘সবাইকে টিকার আওতায় আনা হচ্ছে। এটা চলমান থাকবে। এই কার্যক্রম বন্ধ হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগস্ট থেকে প্রচুর পরিমাণ ভ্যাকসিন আসছে। তাহলে আর সমস্যা হবে না।’
কোথায় কত টিকা দেয়া হবে সেটা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলো সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সকল সমুদ্র ও স্থলবন্দরগুলো ঝুঁকি নিয়েই শুরু থেকে সেবা দিয়ে আসছে। গত বছরের ২৬ মার্চ দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করা হলেও, কখনও থেমে থাকেনি বন্দরের কার্যক্রম।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তারা ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস দিচ্ছে। সাপ্লাই চেইনটা অব্যাহত রেখেছে।’
ফেব্রুয়ারিতে দেশজুড়ে প্রথম ধাপে গণটিকা শুরু হলে মন্ত্রণালয় থেকে নৌ খাত-সংশ্লিষ্টদের জন্য টিকা চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছিল বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এরা কিন্তু একদম দৃশ্যমান না হলেও পেছন দিক থেকে ফ্রন্টলাইনে কাজ করছেন। কাজেই এটা খুবই জরুরি। তো এ ব্যাপারে আমরা পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’
আরও পড়ুন:জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম খান বাবুলের সাজা বাতিল ও নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান যুবদল নেতা বেনজির আহমেদ তাবরিজ এর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে জনতা ব্যাংকের মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেসময় ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের আরেক সাবেক সভাপতি ও ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো.সেলিম মিয়া সেলিম, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কাউয়ুম মিয়া, জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান বকু, যুগ্ম সম্পাদক শহিদুল ইসলাম লিটন, বিএনপি নেতা শাহিন হক, জরিুলহক ঝন্টু, তামজিদ মোল্যা, বাচ্চু মোল্যা, মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন সাদ্দাম সহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে বক্তারা স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দায়ের করা মিথ্যা মামলায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম খাঁন বাবুলকে কারাগারে পাঠানোর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে শহীদুল ইসলাম বাবুলকে মুক্তি দেওয়া না হলে বৃহত্তর ফরিদপুরে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
ফটিকছড়ি উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নে চুরির আপবাদে মাহিন (১৪) নামে সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া এক স্কুল শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার ভোর ৫ টার দিকে ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের চেঙ্গুয়া ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
মানিক ও রাহাত নামে দুই কিশোরকে বেড়ধক পেটানো হলে, তারা গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও মাহিন ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায়।
নিহত মাহিন স্থানীয় কাঞ্চন নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র এবং একই এলাকার সাগর আলী তালুকদার বাড়ির জনৈক লোকমানের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার ভোরে মাহিনসহ তিন কিশোর চেঙ্গার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। সেসময় কয়েকজন কিশোর দৌড়ে এসে তাদের ধাওয়া করে। প্রাণ ভয়ে তিনজন পাশ্ববর্তী একটি নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে আশ্রয় নেয়। হামলাকারীরা ছাদে উঠে জোরপূর্বক তাদের নিচে নামিয়ে এনে ব্রিজের উপর বেধড়ক মারধর করে সটকে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে মাহিনের মৃত্যু ঘটে। গুরুতর আহত দুজনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আহতদের পরিবারের অভিযোগ, মানিক ও রাহাত আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। চোর সন্দেহে তাদের উপর এমন নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার দাবি করছি। ফটিকছড়ি থানার ওসি নুর আহমদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ইতোমধ্যে পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে সন্দেহজনকভাবে নোমান ও আজাদ নামে দুইজনকে আটক করেছে। কেন, কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে পুলিশের পৃথক দুটি মাদকবিরোধী অভিযানে বিপুল পরিমাণ গাঁজা ও ইয়াবাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে উপজেলার সলিমগঞ্জ ও মিরপুর এলাকায় এ অভিযান দুটি পরিচালিত হয়।
পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নবীনগর থানার এএসআই শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল সলিমগঞ্জ বাজার সংলগ্ন মেঘনা নদী-সংলগ্ন খাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক পুরুষ ও চার নারীকে আটক করে। সেসময় তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে ১২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। আটককৃতরা হলেন মো. আরিফুল ইসলাম (৪২) ও তার স্ত্রী বিলকিস বেগম (৩৭), বাড়ি: গৌরীপুর, ময়মনসিংহ নাজমা (২৬), বাড়ি: পঞ্চগড় মাইমুনা (২২), বাড়ি: আশুলিয়া, ঢাকাআমেনা (২৭), বাড়ি: বগুড়া । একই রাতে নবীনগর থানার এসআই শাহ আলমের নেতৃত্বে আরেকটি দল মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার মোল্লা (৪৮) কে আটক করে। তার দেহ তল্লাশি করে ২৬০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট এবং মাদক বিক্রির নগদ ৩,৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে নবীনগর থানার ওসি শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘দুটি পৃথক অভিযানে মোট ১২ কেজি গাঁজা, ২৬০ পিস ইয়াবা ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি পৃথক মামলা রুজু করা হয়েছে।’
গ্রেপ্তারকৃতদের গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। আবাসন চাহিদা পূরনের জন্য কৃষি জমিতে বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানীর বালি ভরাটের কারনে এ সংকট দেখা দিয়েছে। গৃহপালিত পশু পালনে কৃষকদের এখন ভরসা নেপিয়ার জাতের ঘাস। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে গোখাদ্যর সংকটের বিষয়টি কৃষকদের ভাবিয়ে তুলেছে। গোখাদ্য সংকটে অনেকই কম দামে পশুগুলোকে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
উপজেলার কাঞ্চন, ভোলাব, দাউদপুর, মুড়াপাড়া, মাঝিনা নদীর পাড়, দেইলপাড়া, নদ্দাসহ অর্ধ শতাধিক গ্রামে এখন নেপিয়ার ঘাস চাষ হচ্ছে। বেসরকারি দুগ্ধ খামারিরা তাদের বাড়িতে খরচ কমানোর জন্য নেপিয়ার ঘাস চাষের দিকে ঝুকছে। আঁশযুক্ত, পুষ্টিকর, সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে চাহিদা ব্যাপক। একবার কেটে নিলে ঘাস মরে যায়না বরং কাটা অংশ থেকে পুনরায় কুঁড়ি জন্মে আবার তা পূর্নাঙ্গ ঘাসে পরিণত হয়।
সরজমিন ঘুরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে গোখাদ্য সংকট এবং নেপিয়ার জাতের ঘাসে কৃষকের ভরসার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
বারৈ গ্রামের কদম আলী বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, অন্যের জমি চাষ করি। বাড়তি আয়ের জন্যে গরু-ছাগল পালি। কৃষক টিপু হায়দার বলেন, গরুর খাদ্য সমস্যার জন্যে আমাদের গরু কম দামে বিক্রি করে দিছি। নেপিয়ার জাতের ঘাস দ্রুত বর্ধনশীল, ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই কেটে নেয়া ঘাসগুলো বড় হয়ে যায়।
উপজেলা পশু পালন কর্মকর্তা ডা. সজল কুমার দাস গোখাদ্যের সংকটের কথা স্বীকার করে জানান, বর্তমানে পশু খাদ্যের আরেক নাম নেপিয়ার ঘাস। দ্রুত বর্ধনশীল, উৎপাদন খরচ কম ও লাভজনক হওয়ায় এলাকার চাষিরা দিনদিন নেপিয়ার জাতীয় ঘাস চাষে ঝুঁকছেন। এতে কৃষকরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অপরদিকে গোখাদ্য সংকট নিরসনেও ভূমিকা রাখছেন। প্রতিমাসে খামারিদেরকে বিনামূল্যে নেপিয়ার ঘাসের বীজ কাটিং দেয়া হয়। নেপিয়ার ঘাস ১০/১২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। চাষের পদ্ধতিও সহজ।
নেত্রকোনার হৃদয়ে একসময় মানুষের স্বপ্ন, ভরসা আর যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম ছিল লঞ্চ। নেত্রকোনা পৌর এলাকার মালনী রোড সংলগ্ন মগড়া নদীর তীরে গড়ে ওঠা সেই পুরানো লঞ্চঘাট এখন শুধুই স্মৃতিচিহ্ন বহন করে যাচ্ছে। এই লঞ্চঘাট ঘিরে একসময় গড়ে উঠেছিল পাটপট্রি এলাকায় অসংখ্য পাট গুদাম ও ধানের বড় বড় গুদাম ঘর। বিভিন্ন এলাকা থেকে বড়-ছোট নৌকা আর লঞ্চ আসত এই ঘাটে। অপরিকল্পিত নৌযোগাযোগের কারণে আজ বিলীন হয়েছে এই লঞ্চ ঘাটটি। মগড়া নদী বয়ে গেছে সদর দেওপুর, লক্ষীগঞ্জ, আটপাড়া কোনাপাড়া, ব্রোজের বাজার, নাজিরগঞ্জ বাজার হয়ে মদন দেওয়ান বাজার ও মদন বাজার পর্যন্ত। আর এই রুটেই লঞ্চ দিয়ে যাত্রী ও মালামাল পৌঁছাত নির্বিঘ্নে। তখনকার দিনগুলোতে সড়ক যোগাযোগের অবস্থা ছিলো খুবই দুর্বল, তাই মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো লঞ্চ ভ্রমণ করতে। লঞ্চঘাটে ভিড় জমতো সকাল-বিকেলে। এখানে যাত্রী ওঠা-নামার ভিড়, নদীর ঢেউ আর হুইসেলের শব্দে সরগরম হয়ে উঠত পুরো এলাকা। ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা নদীর পাড়ে দৌড়ে এসে লঞ্চ দেখত, আনন্দে হাত নেড়ে যাত্রীদের বিদায় জানাত ছোট-ছোট শিশুরা। সেইসব মুহূর্ত আজ কেবলই স্মৃতি হয়ে রয়েছে। কালের আবর্তে সেই লঞ্চ সেবা হারিয়ে গেছে এলাকা থেকে। নদী নিয়মিত খনন না হওয়া, আর এর উপর অপরিকল্পিতভাবে নিচু ব্রিজ নির্মাণ করায় এখন নৌকা বা ট্রলারও চলাচল করতে পারছে না। ফলে একসময়কার নদীপথের প্রাণচাঞ্চল্য নিভে গেছে। এলাকার মানুষের এখন সড়কপথই প্রধান ভরসা। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে, অর্থনৈতিক ক্ষতিও হচ্ছে সমষ্টিগতভাবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি নদী পথটিকে পুনরুজ্জীবিত করা যায়, তবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে যেমন বিকল্প সুবিধা মিলবে, তেমনি সড়কের চাপও কমবে। নেত্রকোনার লঞ্চঘাট তাই এখন কেবলই মানুষের স্মৃতিতে বেঁচে আছে। পুরোনো দিনের সেসব কোলাহল, শিশুদের হাসি আর যাত্রীদের ভরসা সবকিছুই সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছে।
৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যা, পরবর্তীতে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নিতকরণ হওয়ায় চিকিসাসেবায় আশার আলো দেখেছিল নড়াইলের আমজনতা। কিন্তু সুচিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল এখন নকশা জটিলতার গ্যাড়াকলে। ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নিতকরণ প্রকল্পের কাজ দেড় বছর মেয়াদের ভবনের কাজ ৭ বছরেও শেষ হয়নি। ফলে জেলার ৮ লাখ মানুষের উন্নত চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসাস্থল নির্মাণাধীন হাসপাতাল ভবনটি এখন রোগীদের কাতারে। তবে থেমে নেই ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম।
সরেজমিন দেখা গেছে, নড়াইল জেলা শহরের ১০০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিনই প্রায় ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ রোগী সেবা নিতে আসে। আর হাসপাতালের শয্যা সংকটে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন বারান্দা, সিড়িঘর, করিডোরে। এসব রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।
আবার কোনো কোনো বেডে একাধিক রোগীকে রাত যাপন করতে দেখা গেছে। নিয়মনীতির যেন, কোনো বালাই নেই। যদি হয় সুজন-তেতুল পাতায় নয়জন এমন প্রবাদ বাক্যটি এখন হাসপাতালের রোগীদের বিছানার জন্য খুবই উপযোগী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৮ সালের জুন মাসে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের ৮ তলা পর্যন্ত ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৪০ কেটি টাকা। তিন দফা মেয়াদ বাড়িয়েও নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে, নকশা পরিবর্তন আর সংশ্লিষ্ট বিভাগের অসহযোগিতাকে দায়ী করছেন ঠিকাদার। ৯ তলার কাজ মাত্র শুরু করেছেন আরেক ঠিকাদার ।
গণপূর্ত বিভাগ জানায়, একটি মাত্র লিফ্ট দিয়ে শুরু হয় ৭ তলা ভবনের নির্মাণকাজ। নকশা পরিবর্তনের পর প্রথমে ৮ম তলা ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ম্যাকানিক্যাল ইকুয়েপমেন্ট ও চিকিৎসকদের চেম্বারের জন্য ৬ তলা ভবন নির্ধারণ করা হয়। আর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রিভাইস ওসি পাশ হয়। নতুন করে বসানো হয় আরো তিনটি লিপ্ট। নবম তলায় হওয়ার কথা ১০ শয্যার আইসিইউ।
অভিযোগ করা হচ্ছে, ভবনের কাজ সম্পন্ন হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে নির্মাণাধীন নতুন ভবন হস্তান্তর করছে না গণপূর্ত বিভাগ। গণপূর্ত বিভাগের টালবাহনা করার কারণে হতাশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে গত ২০২৪ সালের ২৭ এপ্রিল বিকেলে নড়াইলের ১০০ শয্যার হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নিতকরণ কাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীণ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। উদ্বোধনের এই কর্মকান্ডটি জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। তারা বুঝতেই পারছেন না এই অনুষ্ঠান আযোজনের উদ্দেশ্য কি? তাদের অভিমত হাসপাতালের নতুন ভবন উদ্বোধন, না নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করার জন্য অনুষ্ঠান টা ছিল এটি!।
ওই দিন মন্ত্রী মহোদয় ফলক উন্মেচনের পর ফিতা কেটে ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ভবনের উদ্বোধন করেন। মন্ত্রীর সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেরিনা ফ্লোরা, নড়াইল-২ আসনের সাবেক সাংসদ মাশরাফি বিন মোর্ত্তজাসহ ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ওইদিন নেতাকর্মীদের ভিড়ে উদ্বোধনের ছবিই তোলা দুষ্কর হয়ে পড়ে সাংবাদিকদের। হাসপাতাল চত্বরে এখন আর নেতাকর্মীদের সেই ঠেলাঠেলি নেই। তবে রোগীদের ঠেলা-ঠেলিতে হাসপাতাল নিজেই এখন অসুস্থ ।
নড়াইল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. তারিকুজ্জামান লিটু বলেন, ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের প্রতিটি সেক্টরে ছিল দূর্ণীতিতে ঠাসা। তাদের আমলে যেখানে যে কাজ হয়েছে, তা কল্যাণকর ছিল না। অক্টোপাসের মত সব গিলে খেয়েছে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের নেতা-কর্মীরা। তারিকুজ্জামান লিটু আশাবাদী এই বাংলার মাটিতেই আওয়ামী সরকারের বিচার হবে। অপরাধীরা কেউই রেহাই পাবে না।
নড়াইলের সিভিল সার্জন ডা. আব্দুর রশীদ বলেন, গোড়া থেকেই গলদ রয়েছে ভবন নকশার। যে কারণে ভবন নির্মাণ কাজের শেষ মুহূর্তে বিষয়টি নজরে আসে। নকশা সংযোজন কিংবা পরিবর্তন করে খুব তাড়াতাড়ি আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে এমনটাই আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার শ্রীকাইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রে একজনও নেই জনবল। সৃষ্ট ৬টি পদ থাকলেও সবকয়টি পদই শূন্য। জনবলের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত ইউনিয়নের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই ভঙ্গুর দশা নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তাদের দাবি জনবল নিয়োগ দিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হউক। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শ্রীকাইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রটি বন্ধ। নেই কোনো চিকিৎসক।
রোগী এসে ফেরত চলে যাচ্ছেন।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনেই মলমূত্র ত্যাগ করছেন মানুষ। প্রস্রাব ও আবর্জনার তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। রেগীরা সুস্থ হতে এসে আরো বেশি অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন।
শ্রীকাইল ইউনিয়নের ভূতাইল গ্রামের সুজন মুন্সি (২৮) বলেন, প্রতিদিন শত শত রোগী এসে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফেরত যায়। এদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগী খুবই দরিদ্র।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার নাই। বাউন্ডারি নাই। দুটি ভবন পুরোপুরি পরিত্যাক্ত। চারদিকে খোলা মেলা ও ঝোপঝাড় থাকায় এটি এখন জনসাধারণের নিরাপদ প্রস্রাব কেন্দ্র। তৃণমূলের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতলটি চালু করা খুবই জরুরি।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশের বাড়ীর তাজুল ইসলাম (৬০) জানান, যেকোনো রোগের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য শ্রীকাইল স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রই একমাত্র ভরসা। শ্রীকাইল থেকে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। জেলার দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে তাকে উপজেলা কিংবা জেলায় পৌঁছানোর আগে মৃত্যুর কোলে ঢলে যায়।
সোনাকান্দা বহুমুখী কামিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মফিজুল ইসলাম জানান, ১ নং শ্রীকাইল ইউনিয়নে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসবাস। ইউনিয়নবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাধীনতার পূর্বে শ্রীকাইলে দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি চালু করা হয়। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে নামেরও পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান নাম ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। চিকিৎসক না থাকায় কেন্দ্রটি প্রায়ই বন্ধ থাকে। এ কারণে হাজার হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত থেকে হচ্ছে।
এদিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তিনটি ভবনই পরিত্যক্ত। জরাজীর্ণ একটি কক্ষে সপ্তাহে দুদিন বসে রোগী দেখেন অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মাজহারুল ইসলাম। তিনার কর্মস্থল রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র।
অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মাজহারুল ইসলাম জানান, রোগীর চাহিদা আছে। প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত রোগী দেখেন। গড়ে প্রতিদিন ১’শ রোগী দেখা হয়। জনবলের অভাবে রোগীরা এসে ফিরে যায়। সরকার নতুন করে সৃষ্ট পদসমূহে জনবল বাড়িয়ে দিলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এছাড়াও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন।
স্থানীয়রা জানান, মুরাদনগরের বিভিন্ন ইউনিয়নে এমন চিত্র আরো আছে, আন্দিকোট, আকুবপুরসহ অন্যান্য ইউনিয়নগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত সাধারণ মানুষ।
মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল ইসলাম মানিক বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি জনবল শূণ্য হওয়ায় চিকিৎসাসেবা ব্যবহত হচ্ছে। আমরা চাহিদা দিয়ে রাখছি। নিয়োগ হলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
মন্তব্য