দেশে করোনাভাইরাসের গত ২৪ ঘণ্টায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১১৫ জনের।
করোনায় এর আগে গত ২৭ জুন এক দিনে সর্বোচ্চ ১১৯ জনের মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার এ তথ্য জানানো হয়।
সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৮২২ জনের শরীরে। দেশে এ নিয়ে মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৯ লাখ ১৩ হাজার ২৫৮ জনের। এর মধ্যে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৪ হাজার ৫০৩ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৬৫টি ল্যাবে ৩৫ হাজার ১০৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ১৩। মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৮২ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৪ হাজার ৫৫০ জন সুস্থ হয়েছে। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ৮ লাখ ১৬ হাজার ২৫০ জন।
সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১১৫ জনের মধ্যে ৭২ পুরুষ ও ৪৩ নারী।
বয়স বিবেচনায় মৃত ১১৫ জনের মধ্যে বিশোর্ধ্ব ৪, ত্রিশোর্ধ্ব ১২, চল্লিশোর্ধ্ব ১৭, পঞ্চাশোর্ধ্ব ২৫ ও ষাটোর্ধ্ব ৫৭ জন।
বিভাগ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে খুলনা বিভাগে। এরপরই রয়েছে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে ২৩ জন করে। ঢাকায় ১৭, বরিশালে ২, সিলেটে ৩, রংপুরে ১১ ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ মৃত্যু হয়েছে।
দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে গত বছরের ৮ মার্চ। ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের তথ্য প্রকাশ করা হয়। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের কথা ঘোষণা করে।
পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত বছরের ৪ জানুয়ারি থেকেই দেশের বিমানবন্দরসহ সব স্থল ও নৌবন্দরে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং শুরু করে। ওই বছরের ৪ মার্চ সমন্বিত করোনা কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়।
টানা চার দিন ‘মাঝারি’ শ্রেণিতে থাকার পর ছুটির দিনে অনেকটা অবাক করে দিয়ে ঢাকার বাতাসের মানে অবনতি হয়েছে। সেইসঙ্গে বায়ুদূষণে শীর্ষ শহরগুলোর তালিকাতেও লম্বা লাফ দিয়ে উপরের দিকে চলে এসেছে বাংলাদেশের রাজধানী শহর।
শুক্রবার (২৭ জুন) সকাল ৯টায় ঢাকার বাতাসের একিউআই সূচক ছিল ১০২। বায়ুমানের শ্রেণি অনুযায়ী, সংবেদনশীল গোষ্ঠীর মানুষের জন্য এই মান অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচিত হয়।
সবশেষ গত ২১ জুন এই শ্রেণিতে নেমেছিল ঢাকার বায়ুমান। তার পরের চার দিন ‘মাঝারি’ শ্রেণিতে থাকার পাশাপাশি দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকাতেও বেশ নিচে অবস্থান করছিল শহরটি।
এর মধ্যে ২১ জুন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দশম, ২২ জুন একই সময়ে ১৭তম, ২৩ জুন সকাল ৯টায় ২১তম, ২৪ জুন ২৯তম, ২৫ জুন ৩১তম এবং গতকাল ২৬ জুন ঢাকার অবস্থান ছিল ৩৮তম। অর্থাৎ ক্রমেই উন্নতি হচ্ছিল ঢাকার বায়ুমানে।
গত কয়েক দিনে একটু একটু করে দূষণ থেকে দূরে সরলেও আজ (শুক্রবার) ফের শীর্ষ দশ শহরের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে ঢাকা। শহরটির অবস্থান আজ দশম।
এই সময়ে ১৭৩ একিউআই স্কোর নিয়ে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, স্কোর ১৬৫ নিয়ে পাকিস্তানের লাহোরের অবস্থান দ্বিতীয় এবং গতকাল এই সময়ে শীর্ষে থাকা কঙ্গোর কিনশাসা রয়েছে আজ তিন নম্বরে; শহরটির একিউআই স্কোর ১৫৯।
এ ছাড়া ১৫৪ ও ১৫২ স্কোর নিয়ে শীর্ষ পাচ শহরের অপর দুটি স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা ও চিলির সান্তিয়াগো।
এর মধ্যে আজ লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে দিল্লির বাতাসের। ৭৯ স্কোর নিয়ে ভারতের শহরটির বায়ুমান ‘মাঝারি’, আর তালিকায় রয়েছে ২১তম স্থানে।
কণা দূষণের একিউআই মান যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ কথা জানিয়েছে।
আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ও অভিযোগ পত্র প্রত্যাখান করে সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা।
২৬ জুন সন্ধ্যায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, যারা জড়িত নয় তদন্ত প্রতিবেদনে তাদেরও জড়ানো হয়েছে। এছাড়া প্রকৃত দুই তিনজন আসামিকে আড়ালের চেষ্টা করা হয়েছে।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্তু আবু সাঈদ হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা সাবেক প্রক্টরকে নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন। এবং এর পুনরায় তদন্ত দাবি করেন। একই সময় তারা আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচারের দাবিও করেন।
এ সময় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা তাদের (ট্রাইব্যুনাল) সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে বসতে চেয়েছি কিন্তু তারা আসেনি। তারা বলছে হামলা নাকি ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে হয়েছে। এটা মিথ্যাচার। বাংলাদেশের বিচারহীনতার বড় প্রমাণ আজ এই অফিযোগপত্র দেওয়ার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষকের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন আহমেদ বলেন, আবু সাঈদ হত্যা মামলায় অভিযোগ পত্র প্রকাশের আগে তদন্ত কমিটির রংপুর এসে আবু সাঈদ হত্যার সাক্ষী ও সহযোদ্ধাদের সঙ্গে বসে অভিযোগ পত্র প্রকাশ করার কথা ছিলো। কিন্তু তারা কারো সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করে মনগড়া তদন্ত করে অভিযোগপত্র প্রকাশ করেছে। যা এক ধরনের প্রহসন। তাই এই মিথ্যা প্রহসন ও মিথ্যা তদন্তকে বেরোবি শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তারই ধারাবাহিকতায় আমরা প্রশাসনিক ভবনে সকল ডিপার্টমেন্টর শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।
যতক্ষণ পর্যন্ত আবু সাঈদ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে কোনো প্রহসন সহ্য করা হবে না। প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, এটাতো আইনের বিষয়ে তারা কি করছে এখনতো আমরা জানি না। সাবেক প্রক্টর শরিফুলের এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল কি ছিলো না তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করলে জানা যাবে। তারা কি তদন্ত রিপোর্ট দিবে তা তো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে দেবে না।
উল্লেখ্য, এ মামলায় চার আসামি কারাগারে রয়েছেন। তারা হলেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী আকাশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনে রাজস্ব আদায় কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আপনারা আমরা সবাই দেশের জন্য কাজ করব। আমাদের সবার আগে দেশের স্বার্থ নিয়ে চিন্তা করা উচিত। যেকোনো ধরনের সংস্কার করি, আইন করি বা আন্দোলন ও সংগ্রাম করি, সবই যেন আমাদের নিজেদের জন্য না হয়ে দেশের জন্য হয়।’
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্ক আয়োজিত ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা ও ভ্যাট’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
সেমিনারে ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা। এ সময় ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্কের গবেষণাপ্রধান ইমরুল হাসান তার উপস্থাপনায় বলেন, ‘আমরা দেশের ১৫টি স্থানে ১ হাজার ২২ জন নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর গবেষণা পরিচালনা করেছি। গবেষণায় আমরা দেখতে পেয়েছি, তাদের মধ্য ৮৮ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ এক বেলা বিস্কুট ও পাউরুটি খান। তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশেরই প্রত্যাশ্য ছিল, এই বাজেটে এসব পণ্যর ওপর ট্যাক্স নিয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ আসবে। তবে এ নিয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।’
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআরের চেয়ারম্যান আরও বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম বাজেটের আকার কমেছে। লক্ষ্য ছিল, মানুষের ওপর যেন চাপ না পড়ে। বাজেটের আকার যতটা ছোট হয়েছে—ধরে নিতে হবে, রাষ্ট্র ততটা সঞ্চয় করেছে, ততটা ঋণের চাপ কমেছে।
চেয়ারম্যান আরও জানান, চলতি অর্থবছরে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমার সংখ্যা ১৭ লাখ ছাড়িয়েছে। যেখানে গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৫ লাখ। গতবার অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া সেপ্টেম্বরে শুরু হলেও এবার জুলাই থেকেই অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের লাইসেন্সসহ অন্যান্য সুবিধার জন্য চালু হচ্ছে ‘ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো’। এর ফলে ১৯টি সংস্থার ১১০ ধরনের লাইসেন্স, অনুমোদন ও সনদ অনলাইনে জমা ও গ্রহণ করা যাবে।
করনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় একসঙ্গে বিবেচনা করতে হয়। একদিকে যেমন রাজস্ব আয়ের নির্ধারিত লক্ষ্যে থাকে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার শর্ত পূরণের চাহিদাও মাথায় রাখতে হয়। আগামী বছর উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় যুক্ত হওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে দেশের বেশ কিছু কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। এর মধ্যে শুল্ক হার কমিয়ে আনা অন্যতম। বর্তমানে দেশের কিছু পণ্যে সর্বোচ্চ ৮০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হয়। এই শুল্ক কমাতে হবে ধাপে ধাপে। তা না হলে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের ধাক্কা সামলানো কঠিন হবে।
আবদুর রহমান খান আরও বলেন, পাউরুটি ও বিস্কুটে ভ্যাট বাড়ানো হলেও এই বাড়তি ভ্যাট ব্যবসায়ীরা নিজেরা বহন না করে পুরো বোঝা ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন কি না, সে বিষয়েও আমাদেরে খেয়াল রাখতে হবে। সরকারের কর যেখান থেকে নেওয়ার কথা, সেখান থেকে নিতে পারলে সহজেই করছাড় দেওয়া যেত। অনেক সময় আবার কর বাড়ানোর যে সুবিধার কথা বলা হয়, তা ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছায় না। এর ফলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় সরকারের ঋণ নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
বয়স ষাট পেরিয়েছে। সংসার উন্নতির আশায় রাস্তার পাশে ছোট্ট একটি দোকানে ডিম, সিঙ্গাড়া, পাপড় ও পরোটা বিক্রি করে জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় পার করেছেন। পরিশ্রম করলেও ভাগ্য তার এখনো সহায় হয়নি। অভাব ঘোচানোর আশায় যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন তা এখন রূপ নিয়েছে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে।
প্রায় বছর ৩৫ আগে শ্রবণ প্রতিবন্ধী ঝর্ণার বিয়ে হয় একই এলাকার হরিচাঁদ বিশ্বাসের সঙ্গে। বিয়ের পর সহায়সম্বলহীন স্বামীর সঙ্গে থাকতেন সদর উপজেলার শেখহাপি ইউনিয়নের মালিয়াট বাজারের একটি ঝুপড়ি ঘরে। সে সময় স্বামীর অভাবের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ঘরের সামনে ছোট একটি দোকান দেন ঝর্ণা। সেখানে ডিম, সিঙ্গাড়া, পাপড়, পরোটা বিক্রি শুরু করেন। স্বামীও খেত-খামারে কাজ করে আয়-রোজগার করতেন তখন। তবে বিয়ের দীর্ঘদিন পার হলেও তাদের কোনো সন্তানাদি না হওয়ায় ঝর্ণার সম্মতিতে স্বামী হরিচান দ্বিতীয় বিয়ে করেন।
সেই ঘরে এক সন্তানের জন্ম হয়। দুজনের সংসার হয় চারজনের। ঝুপড়ি ঘরে জায়গা না হওয়ায় পাশে সরকারি জমিতে একটি দোচালা ঘর উঠিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেন ৷ গাদাগাদি করে এখনো সেখানেই বসবাস করছেন তারা। একই সঙ্গে ৩০ বছর ধরে রাস্তার পাশে ডিম-সিঙাড়া বিক্রি করে যাচ্ছেন ঝর্ণা ৷ তবে এসব বিক্রি করে এখন আর তেমন আয় নেই। স্বামীর রোজগারও ভাল না। কোনোমতে চলছে তাদের সংসার। সচ্ছলতা ফেরানোর সংগ্রামে জয়ী না হতে পেরে এখন কেবল বেঁচে থাকার লড়াই চালাচ্ছেন ঝর্ণা ও তার পরিবার।
মালিয়াট এলাকার বাসিন্দা শংকর বিশ্বাস ও নিউটন গোস্বামী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ঝর্ণা বিশ্বাস এখানে দোকানদারি করছেন। এই দোকান থেকে যে আয় হয় তাতে তাদের সংসার চলে না। তাদের কোন জায়গা-জমি নেই, সরকারি জমিতে থাকে। তারা যদি একটু সরকারি সাহায্য পায় তাহলে ভাল লাগবে।’
ঝর্ণার স্বামী হরিচাণ বিশ্বাস বলেন, ‘দোকান চালাতে ঝর্ণাকে সবসময় সহযোগিতা করি। তবে এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আর বাঁচা যাচ্ছে না। কোন রকমে চলছে সংসার। খুব কষ্টে দিন যায়। ঝর্ণা বিশ্বাস বলেন, এই দোকান ঘরেই এক সময় স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতাম। এখন পাশের একটা সরকারি জায়গায় কোনোমতে থাকি। প্রায় ২৫-৩০ বছর ধরে এই দোকানদারি করছি। এই ব্যবসায় এখন আর সংসার চলে না। তারপরও বাঁচতে তো হবে। তাই দুচার টাকা আয়ের আশায় দোকানদারি করি। সরকারি একটু সাহায্য-সহযোগিতা পেলে একটু ভালোভাবে বসবাস করতে পারতাম।
শেখহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সুরঞ্জন গুপ্ত বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মালিয়াট বাজারে সিঙ্গারা, ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালায়। সে একজন অসহায় প্রতিবন্ধী। ইতোমধ্যে তাকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামীতে ঝর্ণাকে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানান। সরকারের সহযোগিতা পেলে তাদের উপকার হবে।
শেখহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অশোক বিশ্বাস বলেন, সরকারি সহায়তা বরাদ্দ পেলে অসহায় দরিদ্র শ্রেণির মানুষকে ভাল রাখার চেষ্টা করি। ঝর্ণা রানীকে সাধ্যমত সহায়তা করা হয়েছে। আগামিতেও করা হবে।
উজান থেকে নেমে আশা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে হু-হু করে বাড়ছে পানি। এতে জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে।
ফলে জেলা সদর, কাজীপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার চরাঞ্চলের অনেক গ্রামের ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ অংশে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৬ দিনে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্ট এলাকায় ১০৭ ও কাজিপুর মেঘাইঘাট পয়েন্টে ১১২ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রুত পানি বৃদ্ধির কারণে নদী তীরবর্তী অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে চরের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় ফসলি জমিতে পানি ওঠায় ফসলের ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে।
সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের বর্ণি গ্রামের কৃষক মতিন মোল্লা জানান, গত কয়েকদিন ধরে যমুনা নদীতে দ্রুতগতিতে পানি বাড়ছে। এতে চরাঞ্চলের বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে প্লাবিত হচ্ছে। এতে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
বাড়াবাড়ি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল জানান, উজানে বৃষ্টিপাত বেড়েছে এবং মেঘের অবস্থান দেশের উত্তরের দিকে রয়েছে, ফলে পানি বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকবে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে যমুনায় পানি বাড়ছে। গত ২৪ ঘন্টায় শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার ও কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ৪৮ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পানি বাড়লেও সিরাজগঞ্জে বিপৎসীমার ১৯৯ সেন্টিমিটার ও কাজীপুরে ২১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়লেও বন্যার কোন আশঙ্কা নেই।
নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকার দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্য দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জরাজীর্ণ ও ভাঙা ভবনের কারণে শিক্ষার্থীরা যখন তখন প্রাণ হারানোর আশঙ্কা নিয়ে স্কুলে আসে। শ্রেণিকক্ষ সংকট চরমে পৌঁছানোয় পাশের একটি মন্দিরে চলছে পাঠদান। এতে করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি মানসিকভাবে তারাও রয়েছে আতঙ্কে।
দুটি ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল হলো ২৬নং লক্ষীনারায়ণ বালক ও ২৭ নং লক্ষীনারায়ণ বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৩৭ সালে স্থাপিত এই দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে একটি পুরোনো দুতলা ভবনে চলছিল। ভবনটিতে ৭টি শ্রেণিকক্ষ থাকলেও বর্তমানে ৪টি কক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে দুই শিফটে ১৪ জন শিক্ষক প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থীকে পাঠদান করে যাচ্ছেন। দুই দফা ভূমিকম্পে ফাটল ও পলেস্তারা খসে পড়ার ভয়াবহতা- ২০১৫ সালে এক ভূমিকম্পে ভবনের দ্বিতীয় তলায় ফাটল ধরে ও পলেস্তারা খসে পড়ে। এরপর ২০১৮ সালের আরেক ভূমিকম্পে ভবনের আরও দুটি কক্ষে ফাটল দেখা দেয়। ভবনের ছাদ, দেওয়াল ও সিঁড়ির অবস্থা এতটাই নাজুক হয়ে পড়ে যে ছাদ ধসে পড়ার আশঙ্কায় বাঁশ দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে। শ্রেণিকক্ষ সংকটে মন্দিরে ক্লাস- বর্তমানে স্কুলের দ্বিতীয় তলার পাঠদান কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ। বাধ্য হয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সাল থেকে পার্শ্ববর্তী লক্ষীনারায়ণ জিউর মন্দিরের দুটি কক্ষে আংশিক পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছে। পাশাপাশি নিচতলার মাত্র দুটি কক্ষে চলছে ক্লাস। সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা এবং দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দুই শিফটে চলছে এই ‘জীবনের ঝুঁকি’ মিশ্রিত শিক্ষা। শিক্ষার্থীদের ভাষায়- ক্লাস নয়, আতঙ্কে কাটে দিন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী উর্মি দাস বলে, ‘স্কুলে এসে সব সময় ভয় লাগে। খেলতে পারি না, মনোযোগ দিতে পারি না। কখন যে ভবন ভেঙে পড়ে এই চিন্তায় থাকি।’ চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নিলয় চক্রবর্তী জানায়, ‘আমাদের স্কুলের ছাদ ফেটে গেছে, অনেক জায়গায় বাঁশ দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে। ক্লাস করতে ভয় হয়।’ অভিভাবকদের উৎকণ্ঠা- অভিভাবক উদিতা রাণী বলেন, ‘স্কুল ভবন এতটা ভাঙা যে বাচ্চারা কখন দুর্ঘটনার শিকার হবে বলা যায় না। বাধ্য হয়ে মন্দিরে ক্লাস করতে হচ্ছে।’ রাকিব সাহা নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘সন্তানকে পাঠিয়ে সারাদিন দুশ্চিন্তায় থাকি। যদি কিছু ঘটে যায়, তার দায় কে নেবে?’
শিক্ষক-পুরোহিত সবাই চিন্তিত- শিক্ষক সুবর্ণা আক্তার বলেন, ‘ভবনের ছাদের আস্তর পড়ে যায়, বৃষ্টির সময় ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। ফলে পাঠদান ঠিকভাবে সম্ভব হচ্ছে না। আবার মন্দিরে পাঠ দিতে গিয়ে সময় ও নিরাপত্তা- দুটোই বিঘ্নিত হচ্ছে।’ লক্ষীনারায়ণ জিউর মন্দিরের পুরোহিত দীপঙ্কর চক্রবর্তী জানান, ‘স্থানীয়দের অনুরোধে মন্দিরের দুটি কক্ষ দেওয়া হয়েছে। তবে ২ বছর পার হলেও স্কুলের সংস্কার হয়নি। পূজার সময় পাঠদান চালানো কঠিন হয়ে পড়ে।’
প্রধান শিক্ষকদের আশঙ্কা ও আবেদন- ২৭নং বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুন্নাহার বলেন, ‘জেলা শিক্ষা অফিস, ডিসি, মেয়র সবাইকে জানানো হয়েছে। ৭০০ শিক্ষার্থীর জন্য এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’
২৬নং বালক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপসী সাহা বলেন, ‘ভবনের কারণে আমাদের ছাত্র সংখ্যা কমছে। অভিভাবকরা অন্য স্কুলে নিয়ে যাচ্ছেন।’
প্রশাসনের বক্তব্য ও আশ্বাস- জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফেরদৌসী বেগম বলেন, ‘ভবনটি নিয়ে একটি মামলা ছিল, যা নিষ্পত্তি হয়েছে। এখন নতুন ভবনের জন্য আবেদন প্রক্রিয়াধীন।’ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা জানান, ‘স্কুলটির ঝুঁকি পর্যালোচনার জন্য এক্সপার্ট মতামত নেওয়া হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মন্তব্য