করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নয়নে মনোযোগী হচ্ছে সরকার। এ জন্য প্রায় এক লাখ ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ানসহ অন্যান্য লোকবল নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন।
তিনি জানিয়েছেন, শূন্য পদে নিয়োগের পাশাপাশি নতুন পদও তৈরি করা হবে। এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানোর জন্য কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সরকারপ্রধান অনুমোদন করলেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বাংলাদেশে জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান স্বল্পতার অভিযোগ নতুন নয়। ২০২০ সালের মার্চে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর দেশের বড় হাসপাতালগুলোতেই সুযোগ-সুবিধাসহ লোকবলের অপ্রতুলতার বিষয়টি সামনে আসে। এ সময় অ্যাডহক ভিত্তিতে কয়েক হাজার চিকিৎসককে নিয়োগও দেয়া হয়।
কিন্তু এবার দীর্ঘমেয়াদের কথা চিন্তা করে স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজাতে চাইছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা হিসাব করেছিলাম এক লাখেরও বেশি লোক লাগবে। এগুলো আমরা এখন হিসাব করছি পদ সৃষ্টির জন্য।’
এই উদ্যোগ কোন পর্যায়ে আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। ওনাকে আমরা বিষয়টি অবহিত করেছি। আমাদের ডাক্তার, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী আরও নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন রয়েছে। উনিও বলেছেন বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব সহকারে দেখবেন।’
করোনার চিকিৎসায় শয্যা বাড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি হাসপাতালে কোভিডের জন্য আমরা বেড বাড়িয়েছি। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজারের মতো। আগে আড়াই হাজার ছিল, এখন আড়াই হাজার মিলে মোট পাঁচ হাজার হলো। তারপর এখানেও (ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন হাসপাতালে) এক হাজার। তাহলে ছয় হাজার হয়ে গেল। ছয় হাজার বেড হলে জনবল তো সেই হারে দরকার।’
প্রাণঘাতী এই ছোঁয়াচে রোগের সংক্রমণ থেকে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে চিকিৎসাসেবা দিতে দ্বিগুণ ডাক্তার, নার্স, চিকিৎসাকর্মী লাগবে বলেও জানান মন্ত্রী। কারণ, এই রোগের চিকিৎসা শেষে ডাক্তার, নার্সরা ১৫ দিন পরপর আইসোলেশনে যান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইমিডিয়েট পাঠিয়ে দিচ্ছি। তারপর ওখান থেকে (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) অনুমোদন হয়ে আসলে আমরা কার্যক্রম শুরু করতে পারব। সংখ্যাটা এখনও ওনার ওপর নির্ভর করে। উনি যতজন নিতে বলবেন, অনুমতি দেবেন, আমরা ততজনকে নিয়োগ দেব। দেখি উনি কী দেন।’
দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজেও লোকবলের অভাব রয়েছে। কিন্তু করোনা মহামারি সামাল দিতে জেলা হাসপাতালগুলোকে ১০০ থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। উপজেলা হাসপাতালগুলোকে ৩০ বেড থেকে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২০২০ সালে আমরা যে সেটআপ তৈরি করেছি, আপনারা জানেন হাসপাতাল অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। জনবল কিন্তু আগেরটাই রয়ে গেছে।’
দেশের সরকারি হাসপাতালগুলো সচল করতে কী পরিমাণ লোকবল প্রয়োজন- জানতে চাওয়া হয় মন্ত্রীর কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা হিসাব করেছিলাম এক লাখেরও বেশি লোক লাগবে। এগুলো আমরা এখন হিসাব করছি পদ সৃষ্টি করার জন্য।’
বিষয়টি সরকারপ্রধানকে জানানো হলে তিনি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন বলেও জানান মন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যত (লোকবল) লাগে তত আমরা দিয়ে দেব।’
তবে জুড়ে দিয়েছেন একটি শর্ত। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথভাবে সচল রাখতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথভাবে চালু করতে হবে। শুধু বিল্ডিং বানিয়ে রাখলেই হবে না। আমরা বিল্ডিং দেখি, বিল্ডিং বানানো হয়েছে জনগণের কথাটা ওভাবে ভাবা হয়নি। কিন্তু এখন জনগণ কত লাগবে সে অ্যাসেসমেন্ট করার কার্যক্রম চলছে।’
এ বিষয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে দুই-তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে স্বাস্থ্য খাত উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য খাত ঢেলে সাজাতে আগামী ১০ বছর স্বাস্থ্যে কী ধরনের পরিবর্তন করা দরকার এই বিষয়ে মেগা পরিকল্পনা প্রয়োজন। তবে মহামারি মোকাবিলায় সরকারের তেমন কোনো প্রস্তুতি দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন করতে হলে মানুষের সুস্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসাব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। একই সঙ্গে চিকিৎসকদের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করতে হবে। ওষুধ কোম্পানি, চিকিৎসক ও বিক্রয় প্রতিনিধিদের অশুভ ও অনৈতিক তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, ‘বাজেটে বরাদ্দ ব্যয় বাড়ালেই চলবে না। কোথায় ব্যয় হবে সেটা আগে নিশ্চিত করতে হবে। মেডিক্যাল শিক্ষা বরাদ্দ বাড়াতে হবে। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী বৃদ্ধি করতে হবে। তারা যাতে গ্রামে গিয়ে কাজ করতে পারে, এটাও নিশ্চিত করতে হবে। এমনকি শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় তাদের গ্রামে কিছু সময় থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিবছর ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে এক মাস গ্রামে রাখতে যে খরচ হবে, সেটিও সরকাকে বহন করতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাজেট যদি গুণগত ব্যয় করা হতো, তাহলেও উন্নয়ন করা সম্ভব হতো। তবে বরাদ্দকৃত অর্থ দুর্নীতি-অদক্ষতার কারণে ঠিকমতো ব্যয় করতে পারে না। একই সঙ্গে মহামারির মধ্যে প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে করোনা চিকিৎসার জন্য কেনা যন্ত্রপাতির।
তিনি বলেন, অনেক যন্ত্রপাতি কিনে বছরের পর বছর ফেলে রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দের টাকা একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে খরচ করতে হবে। এ ছাড়া প্রতিবছর কিছু টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়, সেটা কর্মচারীদের বেতনে চলে যায়। স্বাস্থ্য গবেষণায় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যেটা গত বছরেও ছিল তবে কোনো টাকাই খরচ হয়নি। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উন্নত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা অত্যন্ত জরুরি। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষণার ক্ষেত্রে সব ধরনের সহায়তা সরকারের দেয়া উচিত।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বাজেটের অর্থ দুর্নীতি হয়, তাহলে বরাদ্দ বাড়িয়ে লাভ নেই। বরাদ্দ অর্থ দুর্ন ীতিবাজদের পকেটে চলে যাবে। মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ অর্থ যথাযথ জায়গায় ব্যয় হচ্ছে কি না এটি তদারকি প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জনবল সংকট নিরসন করতে হবে। হাসপাতালগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও বিপুলসংখ্যক জনবল নিয়োগ করে জনগণের যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। জোর দিতে হবে শিক্ষা ও গবেষণায় ৷ আমরা যদি টিকা উৎপাদন করতে পারতাম এবং আমাদের সে ধরনের সক্ষমতা থাকত, তাহলে টিকা নিয়ে এ অবস্থা হতো না। বিভিন্ন দেশ আমাদের জিম্মি করতে পারত না। টিকা ক্রয়ে বাজেটে আলাদা বরাদ্দ দিতে হবে।’
আরও পড়ুন:পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটতে গিয়ে অসাবধানতাবশত শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
শনিবার(৭ জুন) সকাল থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
জেলা সদরসহ আশপাশের অঞ্চল থেকে আসা আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই ধারালো ছুরি, চাপাতি বা দা ব্যবহারে অদক্ষ থাকায় হাত-পা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে কেটে যায়। যদিও অধিকাংশ আহতের অবস্থা আশঙ্কাজনক নয় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন—ফুলবাড়িয়া এলাকার পাবেল মিয়া (২৭), ঘাটুরা গ্রামের সেলিম (৪৫), চাঁনপুরের আরস মিয়া (২৬), জহিরুল হক (৫০), মো. মিলন (২৩), আজিজুল (২১), শাকিব (২৮), জীবন (৪০), সুমন (২৬), রামরাইলের আলামিন (২৩), আক্কাস (৪৫), উবায়দুল (৩৩), ইউবিন (২২), রহমত আলী (৫৫), সুলতানপুর এলাকার আবু সুফিয়ান (১৫), সাদেক (১৮) সহ অনেকেই। কারও হাতে, কারও বা পায়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।
আহত সুফিয়ান বলেন, পায়ের নিচে রাখা মাংস কাটতে গিয়ে অসতর্কভাবে ছুরির কোপ পায়ে লাগে। পরে হাসপাতালে এসে সেলাই নিতে হয়।
আরেকজন, রিকশাচালক আরস মিয়া বলেন, মাংস কাটার সময় হাত ফসকে ছুরি লেগে যায়। হাসপাতালে তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শুভ্র রায় বলেন, ঈদের দিন সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত অন্তত ১০০ জন রোগী আমাদের এখানে এসেছেন। এদের প্রায় সবাই কোরবানির পশুর মাংস কাটতে গিয়ে আহত হয়েছেন। সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। গুরুতর কেউ নয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে একযোগে কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কোরবানির বর্জ্য দ্রুত অপসারণ কার্যক্রম পরিদর্শন করার জন্য কলাবাগান শিশু পার্ক সংলগ্ন সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) পরিদর্শন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এ সময় স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মানিত সচিব জনাব মো: রেজাউল মাকছুদ জাহেদী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শনকালে উপদেষ্টা বলেন, শহরে কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সময়মতো বর্জ্য অপসারণ না হলে দুর্গন্ধ ছড়ায়, এমনকি রোগ-জীবাণু সৃষ্টি হতে পারে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ১২ ঘন্টা সময়ের মধ্যেই সকল বর্জ্য অপসারণ করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে উপদেষ্টা বলেন এ বছর কোরবানির বর্জ্যের কারণে নগরবাসীর ঈদ আনন্দ বাঁধাগ্রস্ত হবে না।
কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ১০০০০ হাজারের অধিক জনবল মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। ২০৭টি ডাম্প ট্রাক, ৪৪টি কম্পেক্টর, ৩৯টি কন্টেইনার ক্যারিয়ার, ১৬টি পে-লোডারসহ বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে ৭৫টি ওয়ার্ডে মোট ২০৭৯টি যানবাহন নিয়োজিত রয়েছে।
কোরবানির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম ব্যবস্থাপনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জরুরি পরিচালন কেন্দ্রে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপিত হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।
পরিদর্শনকালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টার একান্ত সচিব জনাব মো: আবুল হাসান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সচিব জনাব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মোঃ মাহাবুবুর রহমান তালুকদারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া পাচার রোধে সীমান্ত এলাকাগুলোতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) শরীফুল ইসলাম ইউএনবিকে জানান, সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি কাঁচা চামড়া পাচার ও ভারতে পুশ-ইনের যেকোনো অপচেষ্টা প্রতিহত করতে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, ঈদ মৌসুমে কাঁচা চামড়া পাচার অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমন বাস্তবতায় সীমান্তজুড়ে নজরদারি ও টহল জোরদার করা হয়েছে।
পাশাপাশি, ভারতের দিক থেকে যেকোনো পুশ-ইন ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে সীমান্তরক্ষী এই বাহিনী।
বিজিবির পিআরও আরও জানান, ঈদের দিনেও ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিজিবির সদস্যরা। টহল ও নজরদারি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, কোরবানির পশুর চামড়া যাতে বৈধ বাণিজ্য চ্যানেলের মধ্য দিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে, সেজন্য স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে কাজ করছে বিজিবি।
জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় যেকোনো অপচেষ্টা প্রতিহত করতে বিজিবি দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ঈদ মৌসুমজুড়েই তারা সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকবে বলে জানানো হয়।
ঈদুল আজহার ছুটিকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের ভিড় সামলাতে প্রস্তুত করা হয়েছে সিলেটের সাতটি প্রধান পর্যটন স্পট। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চলের টিলা, চা-বাগান, ঝরনা ও স্বচ্ছ জলের ধারায় মুগ্ধ হতে ছুটে আসছেন সারা দেশের ভ্রমণপিপাসুরা।
সিলেট মহানগরীর আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক কিন ব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি, শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.) মাজার, খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান, শাহী ঈদগাহ ও গৌর গোবিন্দের টিলা। তবে নগরীর বাইরে ছড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থানগুলোই সবচেয়ে বেশি পর্যটকের মনোযোগ কাড়ছে।
সাদাপাথর (ভোলাগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ): সিলেট শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাদাপাথরে চোখে পড়ে দিগন্তজোড়া সাদা পাথরের মেলা, স্বচ্ছ নীল জল, আর পাহাড়ের কোলে ঝরনার ধারা। ধলাই নদীর জলে মিশে প্রকৃতি এখানে যেন তার রঙের খেলায় ব্যস্ত।
রাতারগুল: দেশের একমাত্র স্বীকৃত জলাবন রাতারগুল বর্ষায় ২০ থেকে ৩০ ফুট পানিতে ডুবে থাকে। ৭৩ প্রজাতির গাছগাছালিতে ঘেরা এ বনাঞ্চলে নৌকাভ্রমণ পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ।
জাফলং: মেঘালয়ের পাদদেশে পিয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত জাফলং পর্যটকদের কাছে বছরের পর বছর ধরে প্রিয় গন্তব্য। পাথরের স্তূপ, ঝরনা ও খাসিয়া সংস্কৃতির পাশাপাশি শ্রীপুর চা-বাগান ও ইকোপার্কের সৌন্দর্য জাফলং সফরকে স্মরণীয় করে তোলে।
রাংপানি (গোয়াইনঘাট): সাদা পাথর ও পাহাড়ি ঝরনার মিলনস্থল রাংপানির পাশে খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী গ্রাম মোকামপুঞ্জি অবস্থিত। সিলেট শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৫৪ কিলোমিটার।
উৎমাছড়া (কোম্পানীগঞ্জ): ঝরনার স্বচ্ছ জলের ধারা, সবুজ পাহাড় এবং বিশাল পাথরের বিছানায় ঘেরা উৎমাছড়ায় ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে শুরু করেছে।
লালাখাল (কানাইঘাট): নীলজলের লালাখাল ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য। আঁকাবাঁকা নদীপথ, পাশের পাহাড়ি বন ও চা-বাগান লালাখালকে করেছে ছবির মতো সুন্দর।
লোভাছড়া (কানাইঘাট): ঐতিহাসিক লোভাছড়া চা-বাগান ও তার আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঝুলন্ত সেতু, ঝরনা, খাসিয়া গ্রাম এবং ব্রিটিশ আমলের স্থাপনাগুলো একসঙ্গে দেখতে পাওয়া যায় এখানে। সুরমা ও লোভা নদীর মিলনস্থলও এ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ।
পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে এসব এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সহায়তাও নিশ্চিত করা হয়েছে।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় পারিবারিক কলহের জেরে এ্যামি বেগম নামে এক গৃহবধূকে গলাকেটে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে।
শনিবার (৭ জুন) সকালে উপজেলার কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত স্বামী হাসিবুল পলাতক রয়েছেন।
নিহত এ্যামি বেগম একই ইউনিয়নের ইসরাক হোসেনের মেয়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ চলছিল। এর জেরে শনিবার ঈদের দিন সকালে হাসিবুল ধারালো অস্ত্র দিয়ে স্ত্রী এ্যামি বেগমের গলাকেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পরে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানতে পেরে পাটগ্রাম থানা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে এবং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে।
পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের কারণেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত হাসিবুলকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করা হয়েছে।
বিচার, সংস্কার, জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র এবং ভোটের সমতল মাঠ তৈরি হলে রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচন সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামের আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) সকালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নে নিজ গ্রাম তুলাপুর পাঁচগাঁও ঈদগাহে নামাজ আদায় শেষে তিনি এসব বলেন।
তিনি বলেন, ‘জাতি যেনতেন নির্বাচন চায় না। বিচার, সংস্কার, জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র এবং ভোটের সমতল মাঠ তৈরি হলে রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচন সম্ভব হবে। পরপর তিনবার মানুষ ভোট দেওয়ার কোনো সুযোগ পাননি। এবার নতুন ভোটার যুব সমাজকে ভোটের সুযোগ করে দিতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা কোনো সহযোগিতা চাইলে তারা সহযোগিতা করবেন বলেও জানান জামায়াতের এই নেতা। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দেশের সংকট দূর করা খুবই জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
এর আগে, ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘ঈদুল আজহা ত্যাগ, কুরবানি ও আল্লাহর সন্তুষ্টির পরীক্ষা। এই মহিমান্বিত দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক অন্যায়, জুলুম-নিপীড়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। দেশের চলমান সংকট উত্তরণে জাতিকে সত্য, ন্যায় ও ইসলামি আদর্শের পথে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
নামাজ শেষে এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করেন তিনি।
তার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগরীর আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মো. ফখরুল ইসলাম, মৌলভীবাজার পৌর আমীর হাফেজ তাজুল ইসলাম, ছাত্রশিবির জেলা সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন, ভাটেরা ইউনিয়ন সভাপতি মাওলানা আব্দুল করিম ও ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল লতিফ প্রমুখ।
আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে বলে জাতীর উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঘোষণা গোটা জাতিকে হতাশ করেছে বলে অভিহিত করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএনপি।
শনিবার (৭ জুন) সকালে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেছে দলটি।
বিবৃতিতে বিএনপি জানায়, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রসমাজ ও জনতার বিপুল ত্যাগের মধ্য দিয়ে জনগণের বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের অযৌক্তিক বিলম্ব জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।’
এ সময় রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি।
এর আগে, শুক্রবার (৬ জুন) রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে শনিবার ভোরে বিবৃতিটি দেওয়া হয়।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়বস্তু বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে এই ঘোষণা দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রায় দেড় দশক ধরে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত এ দেশের জনগণ। বারবার গুম, হত্যা, কারাবরণ, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও তারা ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।’
ঐকমত্য গঠনের কথা বললেও অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
তারা বলেন, ‘এ কারণে বৈঠকে মনে করে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না; তা নিয়ে জনগণ উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভাষ্যে, এপ্রিলের শুরুতে নির্বাচন দিলে তা আবহাওয়াজনিত জটিলতা ও রমজান মাসে প্রচার-প্রচারণা ও নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে, যা পরবর্তীতে নির্বাচনের সময়সূচি পেছানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
তারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়— এমন কোনো সুস্পষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করা হয়নি।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আরও বলা হয়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাণী দেওয়ার কথা থাকলেও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য এক পর্যায়ে জাতির উদ্দেশ্য ভাষণে রূপ নেয়।
দীর্ঘ ওই ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস নিজেই স্বীকার করেছেন বন্দর ও করিডর ইস্য অন্তবর্তী সরকারের তিনটি নির্দিষ্ট দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
এ ছাড়াও ওই ভাষণে ব্যবহৃত কিছু শব্দ রাজনৈতিক সৌজন্যের সীমা অতিক্রম করেছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির নেতারা।
মন্তব্য