গোপালগঞ্জে সাতজনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তাদের বাড়িঘর ঘিরে পুরো এলাকায় বিশেষ লকডাউন বাড়ানো হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় সংক্রমণ বাড়ায় নতুন নতুন পাড়া-মহল্লায় কঠোর লকডাউন দেয়া হচ্ছে।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত উখিয়া ও টেকনাফের কিছু এলাকায় সংক্রমণ বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। মোংলায় করোনার সংক্রমণ রোধে জনগণকে কঠোর বিধিনিষেধ মানাতে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তায় মাঠে নেমেছেন কোস্টগার্ড সদস্যরা। নিউজবাংলা প্রতিনিধিদের বিস্তারিত খবর-
৭ জনের শরীরের ভারতীয় ভেরিয়েন্ট
গোপালগঞ্জ সদরে করোনায় আক্রান্ত সাতজনের শরীরের ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব মিলেছে।
সদর উপজেলার সাতপাড় ইউনিয়নের তেলিভিটা গ্রামে আরও সাত দিন লকডাউন বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে কালিভিটা গ্রামকে সাত দিনের কঠোর লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে।
গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন সুজাত আহমেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, তেলিভিটা গ্রামের ২৫২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৫০ জনের করোনা পজিটিভ আসে। এর মধ্য থেকে ১১ জনের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিং পরীক্ষার জন্য ঢাকার আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। রিপোর্টে সাতজনের নমুনায় ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। তাদের বাড়ি সাতপাড়ের তেলিভিটা ও কালিভিটা গ্রামে।
তেলিভিটা গ্রামে লকডাউন বাড়ানোর পাশাপাশি কালিভিটা গ্রামকে নতুন করে সাত দিনের কঠোর লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে।
এর আগে ২৭ মে তেলিভিটা গ্রামসহ সাতপাড়, সাহাপুর ও বৌলতলী ইউনয়নে সাত দিনের লকডাউন দেয়া হয়।
সিভিল সার্জন জানান, করোনা আক্রান্তদের দেখভালের জন্য ওই এলাকায় ১০ জন চিকিৎসক নিযুক্ত করা হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় গোপালগঞ্জে নতুন করে ১৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। জেলায় মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৪৩ জন। মারা গেছেন ৪০ জন।
আরও চার গ্রামে লকডাউন
চুয়াডাঙ্গায় গত কয়েক দিনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে। আক্রান্তদের অধিকাংশের বাড়ি সীমান্তবর্তী কার্পাসডাঙ্গা এলাকায়।
সংক্রমণ বাড়ায় দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী আরও চার গ্রামে লকডাউন দেয়া হয়েছে।
শনিবার দুপুরে উপজেলা কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
নতুন লকডাউন করা গ্রামগুলো হলো কুড়ালগাছি ইউনিয়নের ঠাকুরপুর, চাকুলিয়া, ফুলবাড়ি ও পারকৃষ্ণপুর মদনা ইউনিয়নের বড় বলদিয়া।
এ নিয়ে দামুড়হুদা উপজেলায় ১১টি গ্রাম লকডাউন করা হয়েছে। এর আগে ২ জুন কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের সাত গ্রাম ও নাটুদহ ইউনিয়নের দুটি এলাকা লকডাউন করে উপজেলা প্রশাসন।
কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কমিটির সভায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল দামুড়হুদার সবশেষ করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি জানান, উপজেলায় বর্তমানে ৯৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৬২ জন বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সভায় চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর বলেন, ভারত থেকে কেউ যেন অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করতে না পারে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
মোংলায় মাঠে নেমেছে কোস্টগার্ড
মোংলায় করোনার সংক্রমণ বাড়ায় স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তায় মাঠে নেমেছে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের সদস্যরা।
করোনার কঠোর বিধিনিষেধের সপ্তম দিনে শনিবার মোংলায় সব ধরনের যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বাগেরহাটে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও গত ২৪ ঘণ্টায় মোংলায় আরও ৩৪ জন, মোরেলগঞ্জে পাঁচ, শরণখোলায় দুই, ফকিরহাটে এক ও রামপালে চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জীবিতেষ বিশ্বাস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার জানান, মোংলায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কোস্টগার্ড, পুলিশের পাশাপাশি দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছেন। অপ্রয়োজনে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে শহরে প্রবেশ ও অহেতুক ঘোরাফেরা করলেই জরিমানা করা হচ্ছে।
বাগেরহাট জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭৬৮ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪৬ জনের।
শরণার্থী শিবিরে বাড়ছে সংক্রমণ
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত উখিয়া ও টেকনাফের কিছু এলাকায় ৬ জুন পর্যন্ত রেড জোন ও লকডাউন বাড়ানো হয়েছে।
প্রশাসনে কঠোর নজরদারির মধ্যেও উখিয়া-টেকনাফে লকডাউনের নির্দেশনা মানছে না অধিকাংশ মানুষ।
করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে। দিন দিন লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।
গত ২৪ ঘণ্টায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, উখিয়ায় ২০ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ৬ জুন পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানো হয়।
একই সঙ্গে রাজাপালং ইউনিয়নের ৪টি ওয়ার্ডে রেড জোন কার্যকর করা হয়েছে। রেড জোন ও লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসন মাঠে কাজ করছে।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান জানান, ঘনবসতি হওয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লকডাউন কার্যকর করা অনেকটা কঠিন।
৩ জুন পর্যন্ত জেলায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৫৭৮ জনের শরীরে। এর মধ্যে রোহিঙ্গা ১২৭৭ জন।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া জানান, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলায় করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। কাজের জন্য রোহিঙ্গারা নিয়মিত ভোরে ক্যাম্প থেকে বের হয়ে সন্ধ্যায় ফেরে। এনজিও কর্মীরা প্রতিদিন ক্যাম্পে যাওয়া-আসা করছেন।
দুই ওয়ার্ডে সীমিত লকডাউন
যশোরে করোনা সংক্রমণ রোধে দুই ওয়ার্ডে সীমিত লকডাউন দিয়েছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. সায়েমুজ্জামান এ তথ্য জানিয়েছেন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. সায়েমুজ্জামান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। এ ছাড়া যশোর পৌরসভার দুটি ওয়ার্ডে চলাচল সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে।
শনিবার দুপুর ১২টা থেকে ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছে।
যশোরে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনার শনাক্ত হয়েছে ১৮ জনের। এর মধ্যে কোয়ারেন্টিনে থাকা ভারতফেরত পাসপোর্টধারী যাত্রী রয়েছেন ২ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে যশোর।
করোনায় এক দিনে ২ জনের মৃত্যু
নওগাঁ জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক দিনে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একজনের বাড়ি সদরে আর অপরজন রানীনগর উপজেলার।
সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার আশীষ কুমার সরকার জানান, আরও দুজনসহ নওগাঁয় করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ জনে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শনিবার সকাল ৮টার দিকে একজনের মৃত্যু হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধামইরহাট উপজেলা সদরে বাসায় মারা যান আরেকজন।
জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, নওগাঁয় করোনা আক্রান্ত হয়ে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা সংক্রমণের হার না কমলে সাত দিনের বিশেষ লকডাউন আরও বাড়তে পারে।
পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান মিয়া জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে নওগাঁ পৌরসভা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় সাত দিনের বিশেষ লকডাউন চলছে। শনিবার সকাল থেকে নওগাঁ পৌরসভা ও নিয়ামতপুরে মোট ৪৫টি স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যানবাহন বের করা হলে জরিমানা করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান ছাড়া বন্ধ রয়েছে অন্য সব দোকান।
সিভিল সার্জন অফিস জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে ১০৫ জনকে। এ নিয়ে কোয়ারেন্টিনে আছেন ১ হাজার ১২০ জন।
মাইজদীতে ঢিলেঢালা লকডাউন
করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নোয়াখালী পৌরসভাসহ সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে শনিবার ভোর ৬টা থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, জেলা শহর মাইজদী থেকে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন না ছাড়লেও দুপুরের দিকে অভ্যন্তরীণ সড়কে সিএনজি, অটোরিকশা, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করেছে। গণপরিবহনে ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে বেশি।
শহরের দোকানপাট ও শপিংমলগুলো বন্ধ রয়েছে। সদর উপজেলার ছয় ইউনিয়নে লকডাউনে দোকানপাট খোলা ছিল। গণপরিবহনও চলাচল করেছে অন্য সময়ের মতো।
শহরে লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখা গেছে। বিভিন্ন চেকপোস্টে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশা ও যাত্রীকে জরিমানা করা হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার জানান, ঈদের পর জেলায় করোনা সংক্রমণ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। নোয়াখালী পৌরসভাসহ সদর উপজেলায় আক্রান্তের হার বেশি।
তিনি জানান, লকডাউন কার্যকর করতে ছয়জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৬টি মোবাইল টিম ও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৪টি টিম মাঠে কাজ করছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৩৯০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১২৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন:ঝালকাঠিতে সিমেন্টবাহী একটি ট্রাক কয়েকটি গাড়িকে ধাক্কা দিয়েছে, এতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ জনে।
সদর উপজেলার গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় বরিশাল-পিরোজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে বুধবার দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আফরুজুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের ১০ জনকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের রাখা হয়েছে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে।
এদিকে নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম জহিরুল ইসলাম।
শেখেরহাট হাট ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত গ্রাম পুলিশ মো. কামাল হোসেন বলেন, আমরা চারটি ইজিবাইক এবং একটি মাইক্রো গাড়িতে শেখেরহাট গ্রামে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলাম। গাবখান সেতুর টোলে আসার পর বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক আমাদেরকে সামনো থেকে চাপা দেয়। এতে আমার ছোট ভাই দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া আতিকুর রহমান সাদি নিহত হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী মাইনুল হোসেন বলেন, বেপরোয়া গতিতে আসা ট্রাকটি ব্রেক ফেল করে চারটি ইজিবাইক এবং একটি মাইক্রোবাসকে সামনে থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ১১ জন বিয়ের যাত্রী মারা যান।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সেলিম ও শফিউল আলম নামে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী। এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে গত ইউপি নির্বাচনের সৃষ্ট বিরোধের জের রয়েছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তরপাড়ায় এই জোড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত সেলিম ওই এলাকার নূর মোহাম্মদের ছেলে। অপরজন শফিউল আলম একই এলাকার আবু সালামের ছেলে।
নিহত সেলিমের পিতা নুর মোহাম্মদ জানান, স্থানীয় ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহেদুল ইসলাম ও সেলিমের মধ্যে গত ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এর জের ধরে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে মানিকপুর উত্তরপাড়া বাজার এলাকার নবীন ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় জাহেদুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল ভাড়াটে সন্ত্রাসী অতর্কিত হামলা চালায় নিহতদের ওপর।
ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত সেলিমকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। অপরজন শফিউল আলমের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে নেয়ার পথে রাত সাড়ে ১২টার দিকে শফিউল আলমের মৃত্যু হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেনে সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক।
প্রসঙ্গত, বিগত ইউপি নির্বাচনে বর্তমান মেম্বার জাহেদুল ইসলামের সঙ্গে সেলিম ও শফিউল আলমের বড় ভাই শামসুল আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনের দিন দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনার জের ধরে এই জোড়া হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
চকরিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘নিহত দুজনই একটি হত্যা মামলার আসামি। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।’
আরও পড়ুন:কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় পুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে পুকুরের পানিতে ডুবে আহাদ ও আফরোজা নামের যথাক্রমে ৫ ও ৭ বছরের দুই শিশু নিহত হয়েছে।
বুধবার দুপুরে উপজেলার নেওয়াশি ইউনিয়নের পশ্চিম সুখাতি গ্রামের বোর্ডঘর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিশুদুটি সম্পর্কে খালাতো ভাইবোন।
নিহত আহাদ নাগেশ্বরীর আমতলা এলাকার মমিনুল ইসলামের ছেলে এবং বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর আফরোজা ওই এলাকায় মায়ের সঙ্গে নানা বাড়িতে থাকত।
স্থানীয়রা জানান, দুপুরে বাড়ির পাশের পুকুরে মাছ ধরতে যায় আহাদ ও আফরোজাসহ তিন শিশু। নানা বাড়ির পাশের পুকুরে মাছ ধরার জন্য ফাঁসি জাল ফেলে রাখে আহাদ ও আফরোজা। সেখানে ওই তিন শিশু জাল থেকে মাছ ধরতে যায়। এ সময় বাড়ির লোকজন সবাই কাজে ব্যস্ত থাকায় তাদের খবর রাখতে পারেননি। কিছুক্ষণ পর এক শিশু বাড়িতে ফিরে আসলেও বাকি দুজনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে ওই শিশুকে জিজ্ঞাসা করলে বাকি দুজন পুকুরের পানিতে পড়েছে বলে জানতে পারে পরিবারের লোকজন।
পরে পুকুরে নেমে খোঁজার এক পর্যায়ে দুজনকে পানিতে ডুবন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয়রা। এরপর তাদের নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে দ্বায়িত্বরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
নাগেশ্বরী থানার ওসি রুপ কুমার সরকার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে রয়েছি। বিষয়টির খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের কারণে ১৭, ১৮ ও ১৯ এপ্রিল পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে পাথরসহ সকল প্রকার আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ ঘোষণা করেছে ভারত। পাশাপাশি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপারও বন্ধ থাকবে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শামা পারভীন স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয় ।
এদিকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বুধবার দুপুরে ৩ দিন বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘ভারতের লোকসভা নির্বাচন কারনে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে আজ (বুধবার) থেকে শুক্রবার বন্দর দিয়ে দুই দেশের মাঝে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এ সময় অফিস যথারীতি খোলা থাকবে।’
শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে স্থলবন্দর দিয়ে পুনরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কর্মকর্তা অমৃত অধিকারী জানান, দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধের সঙ্গে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাওয়া-আসাও বন্ধ থাকবে।
হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্তের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই বন্দর দিয়ে পার হতে আসা যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে, জরুরি চিকিৎসার জন্য যাতায়াতকারী মানুষের দূর্ভোগ বেড়েছে।
আরও পড়ুন:কুমিল্লার হোমনায় এক নারীকে তার ছেলে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার নিলখী ইউনিয়নের লালবাগ এলাকায় বুধবার বেলা ১১টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রাণ হারানো রায়জুলের নেসা (৬৫) হোমনা থানার নিলখী ইউনিয়নের লালবাগ এলাকার প্রয়াত চাঁদ মিয়ার স্ত্রী। এ ঘটনায় ছেলে আবুল হোসেনকে (৪৫) আটক করেছে পুলিশ।
হোমনা থানার ওসি জয়নাল আবেদীন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আবুল হোসেন তার মাকে নিয়ে একই ঘরে থাকতেন। মঙ্গলবার রাতে তিনি তার মায়ের সঙ্গে ছিলেন।
তিনি জানান, রায়জুলের নেসার মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। মরদেহ উদ্ধারের সময় ছেলে আবুল হোসেন ঘরে ছিলেন না। পরে সকালে পুলিশ তাকে আটক করে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে হোমনা থানার ওসি জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘ওই ছেলে তার মায়ের সঙ্গে একাই থাকত। তাই আমরা তদন্তের স্বার্থে তাকে আটক করেছি। মরদেহ কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলমান।’
নওগাঁয় দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে স্বামী-স্ত্রী নিহত হয়েছেন। নিহতদের পাঁচ বছর বয়সী সন্তানসহ দুজন গুরুতর আহত হয়েছে।
সদর উপজেলার নওগাঁ-বগুড়া মহাসড়কের শাহাপুর এলাকায় বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী গ্রামের এনামুল হক (৪০) এবং তার স্ত্রী বৃষ্টি আক্তার (৩২)। নিহত এনামুল পেশায় আনসার সদস্য ছিলেন।
স্থানীয় একজনের ভাষ্য, সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রী মোটরসাইকেলে নওগাঁ থেকে বগুড়ার সান্তাহারের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেলটি শাহাপুর এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুত গতির আরেকটি মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদেরকে ধাক্কা দেয়। এতে তারা সড়কের ওপর ছিটকে পড়ে গেলে পেছন দিক থেকে আসা একটি পিকআপ তাদেরকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই স্বামী-স্ত্রী মারা যান।
পরে তাদের আহত পাঁচ বছরের শিশু জুনাইদ ইসলাম ও অন্য মোটরসাইকেলের এক আরোহীকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি জাহিদুল হক বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। পরে দুর্ঘটনা কবলিত মোটরসাইকেল দুটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নওগাঁ সদর থানায় একটি মামলা হবে।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় একজন নিহত হয়েছেন।
কাপাসিয়া-টোক সড়কের বাইপাসে টোক বাজার সংলগ্ন এলাকায় বুধবার সকাল ৬টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো মো. ফজলুর রহমান (৩৬) কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার কৃষ্টপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি অটোরিকশাটির চালক ছিলেন।
টোক নয়ন বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই সুজন রঞ্জন তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সংঘর্ষে অটোরিকশাটির সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই চালকের মৃত্যু হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে অটোরিকশাটির গ্রিল কেটে চালকের মরদেহ উদ্ধার করেন।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, “বুধবার সকালে টোক বাজার এলাকায় গাজীপুরগামী ‘পথের সাথী রাজদূত’ পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে কিশোরগঞ্জগামী সিএনজি চালিত অটোরিকশার সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে কাপাসিয়া ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে ফায়ার কর্মীরা গিয়ে অটোরিকশাটির গ্রিল কেটে চালকের মরদেহ উদ্ধার করে।”
এসআই সুজন রঞ্জন তালুকদার সাংবাদিকদের জানান, বাস ও অটোরিকশাটি জব্দ করা হয়েছে। নিহতের মরদেহ পুলিশের হেফাজতে রয়েছে এবং তার স্বজনদের জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য