গোপালগঞ্জে সাতজনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তাদের বাড়িঘর ঘিরে পুরো এলাকায় বিশেষ লকডাউন বাড়ানো হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় সংক্রমণ বাড়ায় নতুন নতুন পাড়া-মহল্লায় কঠোর লকডাউন দেয়া হচ্ছে।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত উখিয়া ও টেকনাফের কিছু এলাকায় সংক্রমণ বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। মোংলায় করোনার সংক্রমণ রোধে জনগণকে কঠোর বিধিনিষেধ মানাতে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তায় মাঠে নেমেছেন কোস্টগার্ড সদস্যরা। নিউজবাংলা প্রতিনিধিদের বিস্তারিত খবর-
৭ জনের শরীরের ভারতীয় ভেরিয়েন্ট
গোপালগঞ্জ সদরে করোনায় আক্রান্ত সাতজনের শরীরের ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব মিলেছে।
সদর উপজেলার সাতপাড় ইউনিয়নের তেলিভিটা গ্রামে আরও সাত দিন লকডাউন বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে কালিভিটা গ্রামকে সাত দিনের কঠোর লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে।
গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন সুজাত আহমেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, তেলিভিটা গ্রামের ২৫২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৫০ জনের করোনা পজিটিভ আসে। এর মধ্য থেকে ১১ জনের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিং পরীক্ষার জন্য ঢাকার আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। রিপোর্টে সাতজনের নমুনায় ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। তাদের বাড়ি সাতপাড়ের তেলিভিটা ও কালিভিটা গ্রামে।
তেলিভিটা গ্রামে লকডাউন বাড়ানোর পাশাপাশি কালিভিটা গ্রামকে নতুন করে সাত দিনের কঠোর লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে।
এর আগে ২৭ মে তেলিভিটা গ্রামসহ সাতপাড়, সাহাপুর ও বৌলতলী ইউনয়নে সাত দিনের লকডাউন দেয়া হয়।
সিভিল সার্জন জানান, করোনা আক্রান্তদের দেখভালের জন্য ওই এলাকায় ১০ জন চিকিৎসক নিযুক্ত করা হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় গোপালগঞ্জে নতুন করে ১৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। জেলায় মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৪৩ জন। মারা গেছেন ৪০ জন।
আরও চার গ্রামে লকডাউন
চুয়াডাঙ্গায় গত কয়েক দিনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে। আক্রান্তদের অধিকাংশের বাড়ি সীমান্তবর্তী কার্পাসডাঙ্গা এলাকায়।
সংক্রমণ বাড়ায় দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী আরও চার গ্রামে লকডাউন দেয়া হয়েছে।
শনিবার দুপুরে উপজেলা কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
নতুন লকডাউন করা গ্রামগুলো হলো কুড়ালগাছি ইউনিয়নের ঠাকুরপুর, চাকুলিয়া, ফুলবাড়ি ও পারকৃষ্ণপুর মদনা ইউনিয়নের বড় বলদিয়া।
এ নিয়ে দামুড়হুদা উপজেলায় ১১টি গ্রাম লকডাউন করা হয়েছে। এর আগে ২ জুন কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের সাত গ্রাম ও নাটুদহ ইউনিয়নের দুটি এলাকা লকডাউন করে উপজেলা প্রশাসন।
কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কমিটির সভায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল দামুড়হুদার সবশেষ করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি জানান, উপজেলায় বর্তমানে ৯৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৬২ জন বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সভায় চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর বলেন, ভারত থেকে কেউ যেন অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করতে না পারে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
মোংলায় মাঠে নেমেছে কোস্টগার্ড
মোংলায় করোনার সংক্রমণ বাড়ায় স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তায় মাঠে নেমেছে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের সদস্যরা।
করোনার কঠোর বিধিনিষেধের সপ্তম দিনে শনিবার মোংলায় সব ধরনের যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বাগেরহাটে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও গত ২৪ ঘণ্টায় মোংলায় আরও ৩৪ জন, মোরেলগঞ্জে পাঁচ, শরণখোলায় দুই, ফকিরহাটে এক ও রামপালে চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জীবিতেষ বিশ্বাস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার জানান, মোংলায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কোস্টগার্ড, পুলিশের পাশাপাশি দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছেন। অপ্রয়োজনে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে শহরে প্রবেশ ও অহেতুক ঘোরাফেরা করলেই জরিমানা করা হচ্ছে।
বাগেরহাট জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭৬৮ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪৬ জনের।
শরণার্থী শিবিরে বাড়ছে সংক্রমণ
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত উখিয়া ও টেকনাফের কিছু এলাকায় ৬ জুন পর্যন্ত রেড জোন ও লকডাউন বাড়ানো হয়েছে।
প্রশাসনে কঠোর নজরদারির মধ্যেও উখিয়া-টেকনাফে লকডাউনের নির্দেশনা মানছে না অধিকাংশ মানুষ।
করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে। দিন দিন লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।
গত ২৪ ঘণ্টায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, উখিয়ায় ২০ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ৬ জুন পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানো হয়।
একই সঙ্গে রাজাপালং ইউনিয়নের ৪টি ওয়ার্ডে রেড জোন কার্যকর করা হয়েছে। রেড জোন ও লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসন মাঠে কাজ করছে।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান জানান, ঘনবসতি হওয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লকডাউন কার্যকর করা অনেকটা কঠিন।
৩ জুন পর্যন্ত জেলায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৫৭৮ জনের শরীরে। এর মধ্যে রোহিঙ্গা ১২৭৭ জন।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া জানান, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলায় করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। কাজের জন্য রোহিঙ্গারা নিয়মিত ভোরে ক্যাম্প থেকে বের হয়ে সন্ধ্যায় ফেরে। এনজিও কর্মীরা প্রতিদিন ক্যাম্পে যাওয়া-আসা করছেন।
দুই ওয়ার্ডে সীমিত লকডাউন
যশোরে করোনা সংক্রমণ রোধে দুই ওয়ার্ডে সীমিত লকডাউন দিয়েছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. সায়েমুজ্জামান এ তথ্য জানিয়েছেন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. সায়েমুজ্জামান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। এ ছাড়া যশোর পৌরসভার দুটি ওয়ার্ডে চলাচল সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে।
শনিবার দুপুর ১২টা থেকে ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছে।
যশোরে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনার শনাক্ত হয়েছে ১৮ জনের। এর মধ্যে কোয়ারেন্টিনে থাকা ভারতফেরত পাসপোর্টধারী যাত্রী রয়েছেন ২ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে যশোর।
করোনায় এক দিনে ২ জনের মৃত্যু
নওগাঁ জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক দিনে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একজনের বাড়ি সদরে আর অপরজন রানীনগর উপজেলার।
সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার আশীষ কুমার সরকার জানান, আরও দুজনসহ নওগাঁয় করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ জনে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শনিবার সকাল ৮টার দিকে একজনের মৃত্যু হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধামইরহাট উপজেলা সদরে বাসায় মারা যান আরেকজন।
জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, নওগাঁয় করোনা আক্রান্ত হয়ে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা সংক্রমণের হার না কমলে সাত দিনের বিশেষ লকডাউন আরও বাড়তে পারে।
পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান মিয়া জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে নওগাঁ পৌরসভা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় সাত দিনের বিশেষ লকডাউন চলছে। শনিবার সকাল থেকে নওগাঁ পৌরসভা ও নিয়ামতপুরে মোট ৪৫টি স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যানবাহন বের করা হলে জরিমানা করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান ছাড়া বন্ধ রয়েছে অন্য সব দোকান।
সিভিল সার্জন অফিস জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে ১০৫ জনকে। এ নিয়ে কোয়ারেন্টিনে আছেন ১ হাজার ১২০ জন।
মাইজদীতে ঢিলেঢালা লকডাউন
করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নোয়াখালী পৌরসভাসহ সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে শনিবার ভোর ৬টা থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, জেলা শহর মাইজদী থেকে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন না ছাড়লেও দুপুরের দিকে অভ্যন্তরীণ সড়কে সিএনজি, অটোরিকশা, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করেছে। গণপরিবহনে ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে বেশি।
শহরের দোকানপাট ও শপিংমলগুলো বন্ধ রয়েছে। সদর উপজেলার ছয় ইউনিয়নে লকডাউনে দোকানপাট খোলা ছিল। গণপরিবহনও চলাচল করেছে অন্য সময়ের মতো।
শহরে লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখা গেছে। বিভিন্ন চেকপোস্টে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশা ও যাত্রীকে জরিমানা করা হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার জানান, ঈদের পর জেলায় করোনা সংক্রমণ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। নোয়াখালী পৌরসভাসহ সদর উপজেলায় আক্রান্তের হার বেশি।
তিনি জানান, লকডাউন কার্যকর করতে ছয়জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৬টি মোবাইল টিম ও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৪টি টিম মাঠে কাজ করছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৩৯০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১২৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন:ঝিনাইদহ জেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন ভোরের কাগজ পত্রিকার সাংবাদিক রোকনুজ্জামান মিলন। আনসারের জেলা কমান্ড্যান্ট সোহাগ হোসেন ও মহেশপুর উপজেলা টিআই হুসাইনসহ আনসার সদস্যরা তাকে মারধর করে একটি ঘরে আটকে রাখেন। পরে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করেন।
সংবাদকর্মীরা জানান, ৮ মে অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে আনসার অফিসে নির্বাচনকালীন অস্থায়ী সদস্য নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। সেই খবর সংগ্রহের জন্য সাংবাদিক রোকনুজ্জামান মিলন সেখানে গেলে তার সঙ্গে অসদাচরণ করেন জেলা কমান্ড্যান্ট সোহাগ। এক পর্যায়ে তাকে টেনেহিঁচড়ে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে ঝিনাইদহে কর্মরত সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত হয়ে পুলিশের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করেন।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন জেলায় কর্মরত সংবাদকর্মীরা।
ভুক্তভোগী রোকনুজ্জামান মিলন বলেন, ‘আমি সংবাদ সংগ্রহের জন্য ওই অফিসের বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। জেলা কমান্ড্যান্ট সোহাগ হোসেন এক নারীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছিলেন। আমি এগিয়ে গেলে আমাকে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন সোহাগ।
‘আমি সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পরে অন্য আসনার সদস্যরা আমাকে টেনে-হিঁচড়ে একটি কক্ষে নিয়ে কিল-ঘুষি মারেন। আমাকে সেখানে এক ঘণ্টা আটকে রাখার পর মোবাইল ফোন ফেরত দেয়া হয়। পরে মোবাইলে সহকর্মীদের ফোন করলে তারা এসে আমাকে উদ্ধার করেন। আমি ওই কর্মকর্তাসহ ঘটনায় জড়িত অন্যদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জেলা কমান্ড্যান্ট সোহাগ হোসেন বলেন, ‘যেভাবে বলা হচ্ছে তেমন কিছু ঘটেনি। সে প্রথমে পরিচয় না দেয়ায় তাকে রুমের মধ্যে বসিয়ে রেখেছিলাম। তাকে মারধর বা লাঞ্ছিত করা হয়নি।’
আরও পড়ুন:সারা দেশের মতো তাপপ্রবাহে পুড়ছে শেরপুর জেলাও। কয়েকদিনের গরমে শেরপুরে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। শুধু তাই নয়, লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জেলার বোরো ধানের আবাদেও।
কৃষি বিভাগের তথ্যনুসারে, চলতি মৌসুমে শেরপুর জেলাজুড়ে ৯১ হাজার ৯৪২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ধানখেতে ধান পুষ্ট হতে শুরু করেছে। তবে এরই মধ্যে লোডশেডিং শুরু হওয়ায় চাহিদামাফিক সেচ দিতে না পারছেন না জেলার কৃষকরা। ফলে ধানের আশানুরূপ ফলন পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তাদের মনে।
বিদ্যুতের ঘন ঘন যাওয়া-আসা এবং ভোল্টেজ কম থাকায় সেচ পাম্পের মোটরও পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। সেচ পাম্পের মালিকরাও আছে বিপাকে।
শেরপুর কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৯১ হাজার ৯৪২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। ৭০ শতাংশ জমিতে বোরো ধানের ফ্লাওয়ারিং হয়েছে (ফুল ফুটেছে)। অন্যদিকে, পাহাড়ি এলাকায় আগাম জাতের লাগানো ধানগুলো ইতোমধ্যে কাটা শুরু করেছে।
জেলার পিডিবি অফিস বলছে, জেলায় দৈনিক বিদ্যুৎতের চাহিদা প্রায় ৬০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২৫ থেকে ২৮ মেগাওয়াট। তাই চাহিদার তুলনায় অর্ধেক বিদ্যুৎ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের মতও একইরকম। তাদের ভাষ্য, জেলায় পল্লীবিদ্যুতের বিদ্যুৎ চাহিদা ৮০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে ৫০ মেগাওয়াটেরও কম। তাই চাহিদার তুলনায় অর্ধেক বিদ্যুৎ দিয়ে যতটা পারা যায়, ঠিকঠাক ব্যবস্থাপনার চেষ্টা করছেন তারা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেখানে দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ থাকে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার মতো। এতে করে সেচ পাম্পগুলো ঠিক মতো চালাতে পারছেন না কৃষকরা। বিদ্যুতের ঘন ঘন যাওয়া-আসা এবং ভোল্টেজ কম থাকায় মোটর পুড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, পানির অভাবে জমি ফেটে যাচ্ছে। ধানের থোড় (গাছে যে অংশ থেকে ফুল হয়ে পরে ধান হয়) বের হওয়ার পর কিছু কিছু জমির থোড় শুকিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ অবস্থার পরিবর্তন না হলে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা কৃষকদের।
সদর উপজেলার যোগিনীমুড়া গ্রামের কৃষক আলমগীর হারুন বলেন, ‘বোরোর আবাদ কইরা আমরা বর্তমানে খুবই আশঙ্কার মধ্যে আছি। মাঠে যে থুর (থোড়) ধানগুলা বাইর হইতাছে, ঠিকমত সেচ দিবার পাইতাছি না। এই ধানগুলা চিচ (চিটা) হইয়া যাইব।
‘বিদ্যুৎ দিনে ৪-৫ ঘণ্টা থাকে। এত কষ্ট কইরা ফসল ফলাইয়া ঘরে না তোলবার পাইলে আমরা মাঠেই মারা যাব।’
সদর উপজেলার বাজিতখিলা গ্রামের কৃষক লাল মিয়া বলেন, ‘আবাদ তো নষ্ট হইয়া গেল। কারেন্ট থাহে না। ৫০ হাজার টাহা খরচ কইরা ধান লাগাইছি। পানি দিবার না পাইলে তো সব শেষ। আমগোরে কি মাইরা হারবার চাইতাছে নাকি?’
আরেক কৃষক শামসুল মিয়া বলেন, ‘দিনে কারেন্ট থাহে ৪-৬ ঘণ্টা, কিন্তু ভোল্টেজ তো থাহে না। কম ভোল্টেজে মোটর চালু দিলে তো মোটর পুইড়া যায়।’
কৃষকদের কাছে বিদুৎ সঙ্কটের কারণে সেচে প্রভাব পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেলেও পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তার দাবি, এতে সেচে তেমন প্রভাব পড়বে না।
শেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আলী হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এই শেরপুর জেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাভুক্ত ৫টি উপজেলা এবং এর আওতায় প্রায় ১০ হাজার সেচ সংযোগ রয়েছে। জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। এর আগে আমরা ভালো বিদুৎ পেয়েছি, তবে বর্তমানে জেলায় ৩০ শতাংশের মতো লোডশেডিং হচ্ছে। আশা করি, খুব দ্রুত এ সঙ্কটও কেটে যাবে।’
প্রান্তিক জনগণের যাতায়াত সুবিধা এবং গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের স্বার্থে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার কালীগঙ্গা নদীর ওপর ৩৬৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি দীর্ঘ সেতু নির্মাণ করা হয়। তবে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় কাজে আসছে না সরকারের ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি। সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়কের অভাবে দুই বছর ধরে কালীগঙ্গায় ঠাঁই দাড়িয়ে আছে সেটি।
উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ঘিওরের সিংজুরী ইউনিয়নের বৈকুণ্ঠপুর কালীগঙ্গা নদীর ওপর ৩৬৫ মিটার দৈর্ঘের সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডারস এবং মেসার্স কহিনুর এন্টাইপ্রাইজ। সংযোগ সড়ক ছাড়াই ২০২২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।
এরপর সংযোগ সড়ক নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৩ সালের ৯ মার্চ পর্যন্ত। প্রথমার্ধে সেতু নির্মাণের ব্যয় ৩০ কোটি থাকলেও পরবর্তীতে সংযোগ সড়ক ও বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের আরও পাঁচ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। এরপর সেতু ও সংযোগ সড়কসহ যাবতীয় উন্নয়নকাজের ব্যয় ধরা হয় ৩৫ কোটি ৬০ লাখ ৪৫৪ হাজার টাকা। তবে সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের সময় বাড়ানো হলেও নির্ধারিত সময়ের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ব্যবহারোপযোগী হয়নি সেতুটি।
স্থানীয় মির্জাপুর এলাকার কৃষক খোরশেদ আলম বলেন, ‘সেতুটির নির্মাণ দেখে ভাবছিলাম, আমাদের দীর্ঘ দিনের কষ্ট দূর হবে, কিন্তু ব্রিজের দুই পাশে রাস্তা না থাকায় আমরা কেউ সেতুটি ব্যবহার করতে পারি না। আগের মতো নৌকায় করেই খেতের ফসল আনতে হচ্ছে। আমাগো মনের আশা মনেই রইল। তাহলে সরকার এত টাকা দিয়ে ব্রিজ নির্মাণ করল কেন?’
আরেক কৃষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সেতুর পাশে আমার দেড় শতাংশ কৃষিজমি আছে। সেতুর রাস্তার জন্য আমার জমি নিতে চাইছে। এলাকার মানুষের ভালোর জন্য আমার জমি দিতে চাইছিলাম। দীর্ঘদিন ধরে খালি শুনতেছি, আমাগো জমি অধিগ্রহণ করা হবে, কিন্তু জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় জমিতে আগের মতো ইরি ধানের আবাদ করছি।’
স্থানীয় বালিয়াবাধা এলাকার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সেতুটি নির্মাণের পর একদিনের জন্যও কেউ সেতুটি ব্যবহার করতে পারে নাই। সেতুটি ব্যবহার করতে পারলে সেতুর আশপাশের অন্তত ৫০টি গ্রামের কৃষক ও সাধারণ মানুষ উপকৃত হতো।
‘সেতুটি ব্যবহারের উপযোগী না হওয়ায় আমাদের ও আশপাশের এলাকার মানুষকে ১৫ কিলোমিটার ঘুরে জেলা শহরে যেতে হচ্ছে। আমাদের দাবি, দ্রুত ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে সেতুটি ব্যবহারের উপযোগী করবে সরকার।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মাসুদ মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেতু নির্মাণের পর সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার জমির মালিকদের বাধার মুখে পড়ে কাজ বন্ধ করতে হয়েছে। এখন সংযোগ সড়কের জায়গা বুঝে পেলেই আমরা কাজ শুরু করব। আর সংযোগ সড়কের কাজ করতে আমাদের সময় লাগবে ৪-৫ মাস। আমরা যত দ্রুত পারব, তত দ্রুত কাজ শুরু করব।’
এ বিষয়ে ঘিওর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিউজবাংলা।
তিনি বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই ভূমি জটিলতা কেটে যাবে এবং সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য খোঁজ খবর নিচ্ছে।’
ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে মানিকগঞ্জ ডেপুটি রেভিনিউ কালেক্টর এল এ শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মামুনুর রশিদ বলেন, ‘সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ৪.৯৬ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান। ইতোমধ্যে ভূমি মালিকদের ৭ ধারা নোটিশ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে খুব দ্রুত ভূমির মালিকদের তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।’
আরও পড়ুন:পার্বত্য জেলা বান্দরবানে প্রতি বছর ঈদ, পহেলা বৈশাখ ও সাংগ্রাই উৎসব ঘিরে ব্যাপক পর্যটকের সমাগম হয়। বছর ঘুরে এসব উৎসব এলেও এবারের পরিস্থিতি পুরোপুরি ভিন্ন। বিশেষত জেলার রুমা ও থানচিতে পর্যটন শিল্পে ধস নেমেছে। হোটেল-রিসোট পড়ে থাকছে ফাঁকা। দেখা মিলছে না দেশি-বিদেশি পর্যটকের।
সম্প্রতি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ব্যাংকে হামলা ও অস্ত্র লুটের ঘটনার পর পর্যটন খাতে কালো ছায়া পড়েছে। ভয়ে ও আতঙ্কে পর্যটকরা আগে থেকে করে রাখা বুকিং বাতিল করছেন। ফলে ভরা মৌসুমেও লোকসানের মুখে পড়েছেন পর্যটন ব্যবসা-সংশ্লিষ্টরা।
পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে অবস্থানকারী জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম বান্দরবান। জেলার রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচির অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য পর্যটকদের কাছে বড় আকর্ষণ। ইতোমধ্যে এসব স্পটের খ্যাতি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।
বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে থানচির অবস্থান। আর রোয়াংছড়ি ২০ কিলোমিটার ও রুমার দূরত্ব ৬৯ কিলোমিটার।
বান্দরবান-থানচি সড়কের মাঝামাঝি জীবননগর নামক স্থানে রয়েছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট নীলগিরি। নীল দিগন্ত বিস্তৃত এলাকাটি ম্রো অধ্যুষিত।
থানচি-আলিকদম সংযোগ সড়কে থানচি সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে ক্রাউডং (মারমা) ডিম পাহাড় (বাংলা)। নৌপথে সাংগু নদী বেয়ে তিন্দু ইউনিয়নে রয়েছে রাজা পাথর (বাংলা)।
এরপর রয়েছে রেমাক্রী খাল। জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের রোয়াংছড়ি উপজেলার শীলবাঁধা পাড়ায় দেবতাখুমের অবস্থান। এছাড়াও রয়েছে অনেক পর্যটন স্পট।
বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত প্রাকৃতিক হ্রদ হলো বগা লেক। রুমা উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে তিন হাজার সাতশ’ ফুট উচুঁতে এর অবস্থান। লেকটি পাহাড় চূড়ায় ১৫ হাজার একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত।
বগা লেক নিয়ে নানা কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হল বিজয় (তাজিং ডং)। সমতল থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৪ হাজার ৫শ’ ফুট। রুমা উপজেলার রেমাক্রী পাংশা ইউনিয়নে এর অবস্থান।
রুমা উপজেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। শীত মৌসুমে এই পর্বত দেখতে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে।
এছাড়াও রয়েছে কেওকারাডং, জলপ্রপাতের পানি ঝিরসহ অনেক পর্যটন স্পট। আবার জেলার থানচিতে পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে থাকা তালিকায় স্থান করে নিয়েছে নাফাখুম ঝরনা, আমিয়াখুং ঝরনা, ভেলাখুং ঝরনা, সাত ভাই খুং ঝরনা, লাংলুক ঝরনা, লৈক্ষ্যং ঝরনা, চিংড়িৎ ঝরনা।
প্রকৃতি এতোসব সম্ভার সাজিয়ে বসে আছে। কিন্তু তা দেখার জন্য পর্যটকের আগমন ঘটছে না। সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ভয় আর আতঙ্কে তারা পার্বত্য এসব পর্যটন স্পট এড়িয়ে চলছেন।
পর্যটন-সংশ্লিষ্টরা জানান, বান্দরবান জেলায় পর্যটকদের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থানগুলো হচ্ছে রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলায়। বিরাজমান পরিস্থিতিতে এই তিন উপজেলায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ-এর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে যৌথ বাহিনী। ফলে এসব দর্শনীয় স্থানে যাতায়াত করাটা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন পর্যটকরা। অধিকাংশ এলাকায় দোকানপাট বন্ধ। যানবাহন চলাচলও সীমিত। সন্ধ্যার আগেই লোকজন ঘরবন্দি হয়ে পড়ছে।
রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচির হোটেল-রিসোর্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ ও পহেলা বৈশাখ চলে গেল। এসব উৎসবের ছুটিতে এখানে হোটেল-মোটেলের শতভাগ রুম বুকিং হওয়ার কথা। কিন্তু এবার সেসবের কিছুই হয়নি।
হঠাৎ করে ২ এপ্রিল রাতে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংকে ডাকাতি, অস্ত্র লুট, ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ করে। পরদিন দুপুরে থানচি সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে অস্থির হয়ে পড়েছে বান্দরবান।
কেএনএফ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শুরু হয় যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান। আর এই খবর দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে ভয়-আতঙ্কে মুখ ফিরিয়ে নেয় পর্যটকরা। অথচ এই সময়টাতে থানচি রেমাক্রীতে হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম হওয়ার কথা ছিল।
পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, পর্যটক না আসার কারণে এই ঈদ মৌসুমে তাদেরকে লাখ লাখ টাকার লোকসান গুনতে হবে।
নৌকার এক মাঝি জানান, থানচিতে পর্যটকের ছুটে চলার একমাত্র মাধ্যম হলো নৌকা। এখানে নৌকার সংখ্যা রয়েছে পাঁচ শতাধিক। আর এসব নৌকা চালানোর জন্য সমসংখ্যক মাঝি রয়েছেন। তাদের প্রধান আয়ের উৎস পর্যটক। নৌকা চালাতে পারলে সংসারের চাকা ঘুরবে, অন্যথায় উপোস থাকতে হবে। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তারা দিনশেষে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন।
থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুন বলেন, ‘সরকারিভাবে পর্যটকদের এই এলাকা ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়নি। তবে এমন পরিস্থিতি শোনার পর আর কেউ এখানে ঘুরতে আসবে বলে মনেও হয় না। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিটরা অনেক কষ্ট ও লোকসানে পড়বে বোঝা যাচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ কেএনএফ-এর শতাধিক অস্ত্রধারী ২ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে রুমা উপজেলার ইউএনও অফিস সংলগ্ন মসজিদ ও ব্যাংক ঘেরাও করে। তারা সোনালী ব্যাংকের টাকাসহ ডিউটিরত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তারা যাওয়ার সময় রুমা সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকেও অপহরণ করে। পরদিন থানচি উপজেলা শহরের সোনালী ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখায় ডাকাতি হয়।
যৌথ অভিযান চালিয়ে সোনালী ব্যাংকের অপহৃত ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে র্যাব ও সেনাবাহিনী। এরপর কেএনএফের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের ঘোষণা দেয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
এসব ঘটনায় আটটি মামলা করে পুলিশ। ঘটনার পরপরই জড়িতদের ধরতে এবং সন্ত্রাসীদের নির্মূলে ৬ এপ্রিল যৌথ বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। দুদিনের অভিযানে ১৮ নারীসহ ৫৬ জনকে আটক করে যৌথ বাহিনী। বাকি সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আরও পড়ুন:চরম আবহাওয়ার খবরে বরাবরই শিরোনামে থাকে চুয়াডাঙ্গার নাম। চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমেও শুরু থেকে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়ে আসছে এই জেলায়। অতি তীব্র তাপপ্রবাহের পর এখানে মঙ্গলবার ছিল তীব্র তাপপ্রবাহ। তবে সোমবারের তুলনায় এদিন কয়েক ডিগ্রি কমেছে তাপমাত্রা।
মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল থেকে সূর্যের চোখ রাঙানিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জেলার জনপদ। দিনের মতোই থাকছে রাতের তাপমাত্রা। বাতাসে আগুনের হল্কা। গরমে একটু স্বস্তি পেতে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ। পুকুর ও সেচ পাম্পের পানিতে গোসল করে শান্তি খুঁজছেন অনেকে। দিন ও রাতের তাপমাত্রায় খুব বেশি পার্থক্য না থাকায় দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে এখানকার জনজীবন।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তালতলা গ্রামের কৃষক ফজলুল হক বলেন, ‘এই তাপে মাঠে দাঁড়ানো যাচ্ছে না। ভ্যাপসা গরমে কৃষি কাজ করা যাচ্ছে না। ধানে বেশি সেচ লাগছে। কিন্তু সেচ পাম্পে পানিও ঠিকমতো উঠছে না। বিদ্যুতের ভোগান্তি তো আছেই।’
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ (মঙ্গলবার) তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। তীব্র তাপদাহ আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে।’
চট্টগ্রামে চিকিৎকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস এবং বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নতুন রোগীর সেবা কার্যক্রম ২৪ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রয়েছে।
দুজন চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে এ ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখা জানিয়েছে, পূর্ব-ঘোষিত এ কর্মসূচি পালন শুরু হয় মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে যা চলবে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ ফয়সল ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে আমাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি পালন শুরু হয়েছে। দাবি মানা না হলে সামনে আরও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে, তবে বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে আগে ভর্তি হওয়া রোগীর চিকিৎসা সেবা চলবে।’
চট্টগ্রামের পটিয়া জেনারেল হাসপাতালে ডা. রক্তিম দাশের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি ও শহরে মেডিক্যাল সেন্টার হসপিটালে ডা. রিয়াজ উদ্দিন শিবলুর ওপর হামলাকারীদের জামিন বাতিলের দাবিতে গত শনিবার (২০ এপ্রিল) থেকে কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএমএ চট্টগ্রাম শাখা।
এর মধ্যে গত শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা চট্টগ্রামের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে চমেক হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন করে আন্দোলনের এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:কুমিল্লার বুড়িচং সীমান্তে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক আহত হয়েছেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের চড়ানল তেঁতুলতলা সীমান্তে সোমবার রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আহত বিল্লাল হোসেন (২৮) রাজাপুর ইউনিয়নের লড়িবাগ এলাকার বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিল্লাল হোসেন ভারত থেকে অবৈধ পথে চিনি ও অন্য পণ্য ওঠা-নামার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। সোমবার রাত ৮টার দিকে তেঁতুলতলা সীমান্ত দিয়ে আসা চিনি নামানোর সময় বিএসএফের সদস্যরা গুলি করে তাকে। তার শরীরে ৩০টির মতো ছররা (ছোট গুলি) গুলি লাগে।
পরে বিল্লালকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। গুলিতে তার চোখ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান চিকিৎসক।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কামরান হোসেন জানান, গুলিতে আহত ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই। সীমান্তের ঘটনা সম্পর্কে বিজিবি বলতে পারবে।
বিজিবির সংকুচাইল বিওপির কামান্ডার ফারুক কামাল জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তারা এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য