চীনের সিনোফার্ম উদ্ভাবিত বিবিআইবিপি-করভির কেনা টিকা আসার পর তা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার কথা জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, চীনের টিকা সামনের দিকে আমরা যেটা কিনব সেটা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়ার জন্য।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলে দেয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে টিকা দেয়া হবে।’
তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দিন-তারিখ জানাতে পারেননি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
এরই মধ্যে উপহার হিসেবে সিনোফার্মের ৫ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশকে দিয়েছে চীন। আরও ৬ লাখ ডোজ টিকা উপহার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং।
হাতে আসা সিনোফার্মের টিকা থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়া হচ্ছে ঢাকার চারটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থীদের। পুলিশ সদস্যদেরও এখান থেকে টিকা দেয়া হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সিনোফার্মের দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ টিকার প্রতি ডোজ কিনতে খরচ হবে ১০ ডলার করে, যা ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত কোভিশিল্ড টিকার মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি। সিরামের কাছ থেকে প্রতি ডোজ ৪ ডলারে কিনছে বাংলাদেশ। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে চীন থেকে টিকা কিনবে সরকার।
চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের অধীন বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টস উদ্ভাবিত বিবিআইবিপি-করভি নামের দুই ডোজের টিকা জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও)।
বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টস জানিয়েছে, তাদের টিকা করোনা প্রতিরোধে ৭৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ কার্যকর। চীন, পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি দেশে এই টিকা প্রয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক ব্যবহারের ফলাফলের ভিত্তিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত জানিয়েছে, এই টিকা ৮৬ শতাংশ কার্যকর।
আরও পড়ুন:
সংস্কারের নামে সময় নষ্ট না করে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবেদীন ফারুক।
বুধবার (৭ মে) রাজধানীতে এক প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এই আহ্বান জানান। বাংলাদেশ জাতীয় নাগরিক পরিষদ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
ফারুক বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ এখনই নির্বাচন চায়। নির্বাচন আয়োজনে আর দেরি করা উচিত নয়, কারণ এখনই এটি প্রয়োজন।’
তিনি সংসদ নির্বাচনের জন্য একটি রোডম্যাপ এবং জনগণের উপর অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারী আওয়ামী মাফিয়া শাসকদের গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের আগে তাদের বিচারের দাবিও জানান।
সংসদে বিরোধী দলের সাবেক প্রধান হুইপ ফারুক বলেন, সরকারের সংস্কার উদ্যোগ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এমন কোনো সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ না করার আহ্বান জানান, যা ১/১১-এর মতো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচন বিলম্বিত করতে পারে।
অধ্যাপক ইউনূসকে একজন সম্মানিত ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করে বিএনপির নেতা। তিনি তাকে এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান। বলেন, ‘দয়া করে এর ব্যবস্থা করুন।’
তিনি বলেন, দেশের জনগণ একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সংসদ গঠন করবে।
ফারুক বলেন, জনগণ যদি তার দলকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনে তবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিএনপির ৩১ দফা রাষ্ট্রীয় সংস্কার প্রস্তাব পরবর্তী সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। ‘কোথাও, একটি দাবার খেলা চলছে এবং সঠিক সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান থেকে আপনাকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আপনাকে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে এবং আপনার উপদেষ্টাদেরও এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
বিএনপি নেতা বলেন, সংস্কার এবং সংস্কার কমিশনের জন্যই সময় ব্যয় করা হচ্ছে। ‘নির্বাচনের আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত করা হচ্ছে। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ বাংলাদেশপন্থী শক্তিগুলোকে ক্ষমতায় আনবে, যারা দেশের সমস্যা সমাধান করবে।’
মিয়ানমারের রাখাইনের জন্য একটি মানবিক করিডোর দেওয়ার সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টাকে তার অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা ও সরকার গঠনকারী দলের উপর বিষয়টি ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেন্দ্রিক রাজধানীর দুই থানায় হওয়া পৃথক তিনটি মামলায় গান বাংলা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কৌশিক হোসেন তাপসসহ চারজনকে ঢাকার আদালতে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন— নিয়ন ফামাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম, দৈনিক সরেজমিন বার্তার সাংবাদিক সিকদার লিটন ও যুব মহিলা লীগ নেত্রী আশা আক্তার।
বুধবার (৭ মে) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফারহান ইসতিয়াক শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এর আগে তাদের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা রাজধানীর তিন হত্যা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। পরে আদালত সেটি মঞ্জুর করেন।
তাপসের মামলা সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই গুলশানের শাহজাদপুরের কনফিডেন্স টাওয়ারের সামনে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে জব্বার আলী হাওলাদার নামে একজন গুলিবিদ্ধ হন। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১০৯ জনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন।
আব্দুস সালামের মামলা সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট রাজধানীর ধানমণ্ডির সাইন্সল্যাব থেকে জিগাতলা এলাকায় যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন মো. রিয়াজ (২৩)। দুই সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৭ আগস্ট বিকালে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নিহতের মা মোসা. শাফিয়া বেগম ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ধানমণ্ডি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
এছাড়া আশা ও সিকদার লিটনের মামলার সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ভাটারা থানাধীন যমুনা ফিউচার পার্কের পাশে গত ২০ জুলাই আন্দোলনে অংশ নেন মো. জাহাঙ্গীর। এদিন দুপুর ১২টায় আসামিদের ছোঁড়া গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর ২১ জুলাই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এ বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভাটারা থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। বুধবার (৭ এপ্রিল) এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুই দেশকে শান্ত থাকার পাশাপাশি সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সরকার ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উদ্ভূত পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।’
এতে বলা হয়, আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশ আশাবাদী যে এই উত্তেজনা কূটনৈতিকভাবে নিরসন হবে এবং শান্তি ফিরে আসবে, যা দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এ নিয়ে প্রতিবেশি দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ঘটনাকে ‘যুদ্ধের শামিল’ ও ‘আগ্রাসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে পাকিস্তান। যেকোনো সময় হামলার জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ। তিনি বলেছেন, ‘কোথায় ও কীভাবে জবাব দেব, সেটি একান্তই আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।’
অন্যদিকে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, ‘ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা হচ্ছে, এমন অন্তত ৯টি স্থানে আঘাত হানা হয়েছে।’
এমন বাস্তবতায় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত রাতে ভারতের হামলার মধ্য দিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা এই পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষকেই সংযম প্রদর্শনের জন্য আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও দেশ।
হজের উদ্দেশে আজ বুধবার ২ হাজার ২৪৮ জন সৌদি আরব যাত্রা করেছেন। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে রওনা হয়েছেন ১ হাজার ৪৪৬ জন এবং সৌদি এয়ারলাইন্সে ৮০২ জন।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অফিসের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. লোকমান হোসেন এ তথ্য জানান।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ এপ্রিল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে হজযাত্রীদের প্রথম ফ্লাইট ছেড়ে যায়। এর আগে ২৭ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস হজ কার্যক্রমের উদ্বোধন ও হজযাত্রীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
হজযাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘব এবং উন্নত সেবা দিতে হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার স্থাপন এবং এ সংক্রান্ত একটি অ্যাপ তৈরি করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। হজযাত্রী পরিবহনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং সৌদিয়া এয়ারলাইন্স সমানভাবে ৫০ শতাংশ করে যাত্রী বহন করবে (৪৩ হাজার ৫৫০ জন করে)। এ ছাড়া ফ্লাইন্যাস এয়ারলাইন্স ১৫ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করবে। ফ্লাইট শিডিউল অনুযায়ী মদিনায় যাবে ২০ শতাংশ এবং মক্কায় যাবে ৮০ শতাংশ হজযাত্রী।
উল্লেখ্য, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবারের হজ অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন। হজ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে ৯৪১টি হজ এজেন্সি। সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ প্যাকেজ ১-এর খরচ ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা এবং প্যাকেজ ২-এর খরচ ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ প্যাকেজে সর্বনিম্ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা।
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে আপিল শুনানির জন্য মঙ্গলবার (১৩ মে) দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। বুধবার (৭ মে) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেছেন।
এদিন আদালতে জামায়াতের নিবন্ধন মামলা দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন জানান আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। ১২ মার্চ রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে আপিল শুনানি শুরু হয়। এরপর আর শুনানি হয়নি।
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া হয়। পরের বছর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির তৎকালীন মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন।
রিটে জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নির্বাচন কমিশনসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়। তারা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের আর্জি জানান।
এ রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক (পরে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের (বর্তমানে অবসর) হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন। জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে রুল জারির পর ওই বছরের ডিসেম্বরে একবার, ২০১০ সালের জুলাই ও নভেম্বরে দুবার এবং ২০১২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে দুবার তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়।
এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ করা হয়।
২০১৩ সালের ১২ জুন ওই রুলের শুনানি শেষ হয়। একই বছরের ১ আগস্ট জামায়াতকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অবৈধ বলে রায় দেন বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন (বর্তমানে অবসর), বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম (পরে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের (১৯ নভেম্বর পদত্যাগ করেন) সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ।
সে সময় সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলেন, এ নিবন্ধন দেওয়া আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত। একইসঙ্গে আদালত জামায়াতে ইসলামীকে আপিল করারও অনুমোদন দিয়ে দেন। তবে এ রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন একই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। পরে একই বছরের ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে।
গত বছরের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। এদিন আদালতে রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তানিয়া আমীর ও আহসানুল করীম। জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউর রহমান।
ওইদিন আইনজীবী জিয়াউর রহমান বলেন, আমাদের সিনিয়র আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলীর ব্যক্তিগত অসুবিধা ছিল। আর অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীনও অনুপস্থিত ছিলেন। ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে ছয় সপ্তাহ সময় চেয়েছিলাম। যেহেতু আমাদের আইনজীবীরা উপস্থিত নেই, সেহেতু আদালত এটা ডিসমিস ফর ডিফল্ট করেছেন। অর্থাৎ আইনজীবী উপস্থিত না থাকার কারণে খারিজ করেছেন।
পরে আইনি সুযোগ কী আছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রেস্টোর (পুনরায় শুনানির জন্য) আবেদনের সুযোগ আছে। সেক্ষেত্রে এটা আদালতের এখতিয়ার।
এরপর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ফের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। গত জুলাই মাস থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা কোটা প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে। এ আন্দোলনে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে ছাত্র-জনতা সরকার পদত্যাগের দাবি তোলে। এর মধ্যে ১ আগস্ট সরকার অঙ্গসংগঠনসহ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের আবেদন বাতিলের উদ্যোগ নেয়। গত ২৮ আগস্ট সরকার আগের নিষিদ্ধের আদেশ বাতিল করে।
এছাড়া আপিল বিভাগে নিবন্ধন মামলাটি পুনরায় শুনানির জন্য আবেদন করে। পরে গত বছরের ২২ অক্টোবর রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত করে আদেশ দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ। এর ফলে নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা ফিরে জামায়াতের আইনি লড়াই করার পথ খুলে যায়। এরপর ১২ মার্চ এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর গত ৪ মে আপিল দ্রুত শুনানি করতে আবেদন করে জামায়াতের আইনজীবী।
আইনজীবি শিশির মনির আপিল বিভাগকে বলেন, মামলাটির শুনানি শুরু হয়েছিল আগেই কিন্তু হুট করেই তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আজ ফের শুনানির উদ্যেগ নেওয়া হয়।
দেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শাখা ক্যাম্পাস স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে গাইডলাইন পলিসি তৈরির জন্য কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট ও কঠোর নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করছে ইউজিসির হাই-পাওয়ার কমিটি।
নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার পর মানসম্পন্ন ও স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবেদন বিবেচনা করে অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে উচ্চশিক্ষার মান রক্ষা ও বাণিজ্যিকীকরণ রোধে প্রয়োজনীয় সতর্কতাও অবলম্বন করা হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিদেশি (বিশ্ববিদ্যালয়ের) ক্যাম্পাস এলে বাংলাদেশের কতটুকু ভালো হবে—সব দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে একটি গাইডলাইন পলিসি তৈরির জন্য হাই-পাওয়ার কমিটি কাজ করছে। কমিটিতে প্রফেসররা আছেন। কমিটির প্রধান বুয়েট ভিসি। কমিটি পলিসি তৈরি করছে। পলিসি তৈরি হলে বিদেশি (বিশ্ববিদ্যালয়ের) ক্যাম্পাস অনুমোদনের বিষয়টি নিয়ে বলা যাবে।’
‘এই কমিটি সাব-কমিটি। মেইন কমিটির প্রধান আমি। সেখানে ঢাবি, বুয়েটে, নর্থ সাউথ ও জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়েসরদের নিয়ে একটি হাই-পাওয়ার কমিটি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিদেশি ক্যাম্পাসের অনুমতি দিতে আমরা পজিটিভ। তবে আমরা দেখছি, শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হয় কি না। এছাড়া আমাদের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কী ধরনের প্রেসারে পড়বে, সেটাও দেখতে হবে।’
ইউজিসির এই সদস্য বলেন, ‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় একটি অবস্থানে চলে গেছে। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জীবনযাত্রার মান, তাদের বেতনকাঠামো, সুযোগ-সুবিধা, গবেষণার সুযোগ খুব যে ভালো, তা দেখছি না। সবদিক থেকে বিবেচনায় নিয়ে বিদেশি ভার্সিটি এলে পাবলিক ও প্রাইভেট ভার্সিটিগুলো আরও শিক্ষক সংকটে পড়বে কি না তা দেখতে হবে। তাছাড়া এই পদক্ষেপ দেশের জন্য লাভজনক কি না, তা দেখে সেইভাবে পলিসি তৈরি করা হবে।’
ইউজিসি থেকে জানা যায়, ইউজিসি বর্তমানে ২০১৪ সালের ‘বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা’ সংশোধনের কাজ করছে। এই বিধিমালায় কিছু অস্পষ্টতা ও সীমাবদ্ধতা থাকায় তারা এটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন নীতিমালায় শুধুমাত্র শাখা ক্যাম্পাস স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে, স্টাডি সেন্টার নয়। শাখা ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য নির্দিষ্ট শর্তাবলী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেমন: ২৫ হাজার বর্গফুট জায়গা, পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োগ, ৫ কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট, অনুমোদনের জন্য ১০ লাখ টাকা ফি। সর্বোপরি, উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিত এবং বাণিজ্যিকীকরণ রোধ করাই এই নীতিমালার লক্ষ্য।
বাংলাদেশে প্রথম বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শাখা ক্যাম্পাস খুলতে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েছে মালয়েশিয়ার ইউসিএসসি ইউনিভার্সিটি। ইতোমধ্যে তারা ঢাকায় কার্যক্রম শুরু করেছে।
সাংবাদিকতার নোবেল খ্যাত পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী সংবাদমাধ্যমের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি বছর এ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে রয়টার্স, নিউইয়র্ক টাইমস এবং ওয়াশিংটন পোস্ট ছাড়াও আরও কিছু প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পর্যায়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ পুরস্কার ১৯১৭ সাল থেকে দেওয়া শুরু হয়।
সাংবাদিকতা ছাড়াও সাহিত্য, সংগীত ও নাটকে বিশেষ অবদানের জন্যও এই পুরস্কার দেওয়া হয়। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির একটি বোর্ড প্রতিবছর এ পুরস্কার ঘোষণা করে। সোমবার পুলিৎজার বিজয়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করা হয়। চলতি বছর ব্রেকিং নিউজের জন্য সম্মানজনক পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। গত বছরের ১৩ জুলাই তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলার খবর প্রচার করে পুরস্কার পেয়েছে তারা।
সম্পাদকীয় শাখায় পুলিৎজার পেয়েছে হিউস্টন ক্রোনিকল। অন্যদিকে নিউইয়র্ক টাইমস এবার চারটি শাখায় পুলিৎজার পুরস্কার জিতে নিয়েছে। বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন শাখায় এ বছর পুলিৎজার পেয়েছেন নিউইয়র্ক টাইমসের আজম আহমেদ ও ক্রিস্টিনা গোল্ডবাম এবং প্রদায়ক ম্যাথিউ আইকিনস।
স্থানীয় সংবাদ শাখায় পুরস্কার পেয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস ও বাল্টিমোর ব্যানার। আফ্রিকার দেশ সুদানের সংঘাত নিয়ে সাংবাদিকতার জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন শাখায়ও পুলিৎজার পেয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।
চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী মাদক ফেন্টানিলের সহজলভ্যতা এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এই ভয়াবহ মাদকের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কারণে চলতি বছর পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
অন্যদিকে গর্ভপাত নিয়ে কঠোর আইন থাকা অঙ্গরাজ্যগুলোতে জরুরি প্রয়োজনের সময় চিকিৎসকদের বিলম্বের কারণে মারা যাওয়া অন্তঃসত্ত্বা নারীদের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন করে পাবলিক সার্ভিস শাখায় পুলিৎজার পেয়েছে প্রোরিপাবলিকা।
অন্যদিকে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে ধারাবাহিক পরিবর্তনের বিষয়ে প্রতিবেদন করে জাতীয় সংবাদ শাখায় সাংবাদিকতার জন্য পুলিৎজার পেয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
পুলিৎজার পেলেন ফিলিস্তিনি কবি
পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ফিলিস্তিনি কবি মোসাব আবু তোহা। দ্য নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ‘গাজায় শারীরিক ও মানসিক ধ্বংসযজ্ঞের’ ওপর লেখা তার প্রবন্ধের জন্য তিনি এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার পেয়েছেন। পুরস্কার পাওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে তিনি বলেন, আমি এইমাত্র পুলিৎজার পুরস্কার জিতেছি। এটা আশার বার্তা হয়ে উঠুক। এটি একটি গল্প হোক।
আবু তোহা আরেক ফিলিস্তিনি কবি রেফাত আলআরির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই এ কথা বলেছেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গাজায় ইসরায়েলের এক হামলায় আলআরি নিহত হন। আলআরির লেখা শেষ কবিতার শিরোনাম ছিল ‘যদি আমাকে মরতেই হয়, তবে এটি একটি গল্প হোক’।
মন্তব্য