করোনা মহামারির মধ্যে ভারতে ব্যাপক হারে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা কালো ছত্রাক ছড়িয়ে পড়া এবং বাংলাদেশেও একই রোগী শনাক্তের পর নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে আতঙ্কে।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এটি দেশে নতুন কোনো রোগ নয়। এই রোগী আগেও ছিল। এর চিকিৎসাও অজানা নয়, ওষুধও আছে। আর সেটি উৎপাদন হয় দেশেই।
তবে চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। একেকটি ইনজেকশনের দাম ১৫ হাজার টাকা। দিতে হয় অনেকগুলো। পাশাপাশি রোগীকে হাসপাতালে থাকতে হয় চার থেকে ছয় সপ্তাহ।
সমস্যা হচ্ছে উৎপাদন করে একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান। ওষুধের আর চাহিদা বাড়লে তারা সামাল দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে আছে সংশয়।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে রোগটির নাম মিউকরমাইকোসিস। করোনাকালে ভারতে এটি এত ছড়িয়েছে যে একে মহামারি ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সেখানে রোগটি ছড়াচ্ছে করোনা থেকে সেরে ওঠার পর।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, করোনা থেকে মুক্ত হলেও শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা পুরোপুরি ফিরে পেতে সময় লাগে বেশি।
আর এই দুর্বল সময়ে আঘাত হানে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। আর এই রোগে মৃত্যুর হার খুবই বেশি; শতকরা ৫০ থেকে ১০০ ভাগ পর্যন্ত মৃত্যুর তথ্য আছে।
দেশে নতুন করে দুজন রোগী পাওয়া গেছে, যারা এই ছত্রাকে আক্রান্ত ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন মারা গেছেন। অন্য একজন বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অজানা নয় চিকিৎসা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শরফুদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে জানান, এই রোগের চিকিৎসা হয় চার ভাগে।
আক্রান্ত ব্যক্তির যদি ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে প্রথমে সেটি নিয়ন্ত্রণে নিতে হয়। রোগী আগে থেকে স্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে সেটিও অনেক কমিয়ে দিতে হবে।
এমন কিছু রোগের ক্ষেত্রে রোগীর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমানোর ওষুধও দিতে হয়। তবে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হলে সেসব ওষুধও বন্ধ রাখতে হয়।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসবিরোধী একটি ইনজেকশন আছে। সেটি প্রয়োগের পাশাপাশি কোনো স্থানে যদি ক্ষত তৈরি হয়, সেই ক্ষতটি কেটে ফেলতে হয়। চোখে ক্ষত হলে চোখও তুলে ফেলতে হয়।
নার্জাল এন্ডোস্কোপি করে যদি ব্ল্যাক ফাঙ্গাস প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়, তাহলে বিদ্যুতের শকও দেয়া হয়।
চিকিৎসা ব্যয়বহুল
মৃত্যুহার যেমন বেশি, তেমনি সমস্যা হচ্ছে এর চিকিৎসার খরচ।
চার থেকে ছয় সপ্তাহ রোগীকে ফলোআপে রাখতে হয়। আর এই সম্পূর্ণ সময়টি হাসপাতালে ভর্তি থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে বলে জানাচ্ছেন অধ্যাপক শরফুদ্দিন। এত দীর্ঘ সময় হাসপাতালে থাকলে যে খরচ তা অনেকের পক্ষেই সামাল দেয়া কঠিন।
যে ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়, তার একেকটির দাম ১৫ হাজার টাকা। দেশে সংকট দেখা দিলে ওষুধের দাম বাড়ার অতীত ইতিহাস আছে।
বারডেম হাসপাতালে যে দুজন রোগীর চিকিৎসা চলছে, তাদের তত্ত্বাবধান করা চিকিৎসক দেলোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, এই ইনজেকশন দিতে হয় স্যালাইনের মাধ্যমে। দিনে দুই থেকে তিনটিও লাগে কখনও কখনও। দুই সপ্তাহ থেকে ছয় সপ্তাহে এই ইনজেকশন দিতে হয়।
দিনে দুটি লাগলেও যদি দুই সপ্তাহ দিতে হয়, তাহলে কেবল ইনজেকশনের খরচ দাঁড়ায় ২ লাখ ১০ হাজার, আর যদি ছয় সপ্তাহ দিতে হয়, তাহলে খরচ হবে ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
তিনটি করে লাগলে দুই সপ্তাহে ইনজেকশনের পেছনে খরচ হবে ৩ লাখ ১৫ হাজার, আর ছয় সপ্তাহে ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম ব্রিফিং করে জানিয়েছেন, এই চিকিৎসার ব্যয় কমানোর উপায় খুঁজছেন তারা। এরই মধ্যে বিভিন্নভাবে আলোচনা করা হচ্ছে। এই ছত্রাক বৃদ্ধি পেলেও যাতে ওষুধের দাম না বাড়ে, সে বিষয়ে সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে।
উৎপাদনক্ষমতা বেশি নয়
বাংলাদেশে যে কোম্পানি ইনজেকশনটি উৎপাদন করে, এর উৎপাদনক্ষমতা খুব বেশি নয়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ও ইনফেকশাস বিভাগের অধ্যাপক ফরহাদ উদ্দিন হাছান চৌধুরী মারুফ বলেছেন, ‘কমসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হওয়ায় ওষুধের উৎপাদন কম। হঠাৎ সংক্রমণ বাড়লে ওষুধ প্রাপ্তি নিয়ে শঙ্কা আছে।’
যে কোম্পানিটি ওষুধ উৎপাদন করে, সেটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। তাদের শেয়ার দর কখনও বেশি ছিল না। তবে সম্প্রতি উত্থান ঘটেছে কোম্পানির আয় ও শেয়ারমূল্যে।
এই ইনজেকশনের চাহিদা পূরণ করলে সরবরাহ করতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নে কোম্পানি সচিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটি আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।’
অন্য একটি নম্বর দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন কোম্পানি সচিব।
কোম্পানির ব্যবস্থাপক (উৎপাদন) মাসুদ বিল্লাহ নামে ওই কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেছেন, ইনজেকশনের চাহিদা সম্প্রতি ১০ থেকে ১৫ গুণ বেড়েছে। এখনও যে চাহিদা আছে, সেটা পূরণে সক্ষমতা আমাদের আছে। তবে চাহিদা বাড়লে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব না-ও হতে পারে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস প্রতিরোধী ওষুধ তৈরি করতে বিভিন্ন কোম্পানিকে বলা হয়েছে। এ জন্য আলোচনা চলছে।
তবে এর অগ্রগতি কী, সে বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম কিছু জানাতে পারেননি।
চিকিৎসায় গাইডলাইন তৈরি হচ্ছে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের বিষয়ে করোনা প্রতিরোধে গঠিত কারিগরি পরামর্শক কমিটিকে বলা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছেন। তারা একটি পরামর্শ চূড়ান্ত করবেন। এ নিয়ে আমরা কথা বলেছি নিজেদের মধ্যে।
‘এরই মধ্যে আমরা সারা দেশে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছি। আনুষ্ঠানিকভাবে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসাব্যবস্থা কেমন হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরির কাজ চলছে। শেষ হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সারা দেশে পাঠাবে।’
ছোঁয়াচে নয় ব্ল্যাক ফাঙ্গাস
কিছুটা স্বস্তির বার্তা হলো, চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ‘পারসন টু পারসন’ অর্থাৎ মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। তার পরেও সতর্ক থাকতে হবে এই ছত্রাক নিয়ে।
বারডেম হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এম দেলোয়ার হোসেন বলেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস যে কেবল করোনার কারণেই হবে, সেটা নয়। ‘হসপিটাল অ্যাকোয়ার্ড’ ইনফেকশনও হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘তাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় রোগীদের পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং দরকার না হলে স্টেরয়েড ও অক্সিজেন না দেয়ার মতো কাজগুলো করতে হবে।’
কখন আক্রমণ করে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শরফুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস পরিবেশে সব সময়ই থাকে। থাকে মানুষের শরীরেও। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলে এটা রোগ হিসাবে দেখা দেয়।
বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকে, তাদের ঝুঁকি বেশি। আবার স্টেরয়েড গ্রহণ করা ব্যক্তিরাও এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।
তিনি জানান, এই ছত্রাক নাক, চোখ এবং কখনও কখনও মস্তিষ্কে আক্রমণ করে।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মানুষ কারো চাকরি করার জন্য জন্মায়নি, মানুষের জন্ম উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য। তাই দেশে এমন আর্থিক ব্যবস্থা আমাদের গড়ে তুলতে হবে যেন সবাই উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ পায়।
আজ রোববার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের খিলজি রোডে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর নতুন ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘মানুষ কারো চাকরি করার জন্য আসে নাই। মানুষের জন্ম হয়েছে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য। আমাদের আর্থিক ব্যবস্থাকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে সবাই উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারে।’
তিনি বলেন, এখনকার প্রজন্ম আগের মতো নয়। এখন গ্রামের ছেলেমেয়েরাও অনেক কিছু বোঝে, জানে, নিজস্ব চিন্তাভাবনায় সমৃদ্ধ। কাজেই এদের জন্য এমন একটি আর্থিক ও সামাজিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে তারা নিজস্ব উদ্যোগে কাজ করতে পারে, চাইলে এককভাবে কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যদি একটি কাঠামো তৈরি করতে পারি যেখানে মানুষ নিজের উদ্যোগ শুরু করতে পারবে, এমনকি চাইলে বিনিয়োগকারী হিসেবেও যুক্ত হতে পারবে—তাহলে এই পরিবর্তন বাস্তবায়ন সম্ভব।’
অধ্যাপক ইউনূস মনে করেন, যে কেউ চাইলে প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করতে পারবে, আবার ইচ্ছা করলে ব্যক্তি উদ্যোগেও এগিয়ে যেতে পারবে। এমনকি কেউ চাইলে বিনিয়োগ সংগ্রহ করে নিজ এলাকায় উদ্যোগ পরিচালনা করতে পারবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সামনে অগ্রসর হতে চাই। পরীক্ষামূলকভাবে দেখা যেতে পারে কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ। কিন্তু ইতোমধ্যে কয়েক লাখ উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে, যাদের অনেকে ছেলে-মেয়ে মিলে দলগতভাবে কাজ করছে।’ তিনি বলেন, এই অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করে এর সম্প্রসারণ ঘটানো সম্ভব।
পিকেএসএফ-এর জন্ম ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকিয়ে ইউনূস বলেন, এর সূচনা হয়েছিল অনেকটা ঘটনাচক্রে। ‘বিশ্বব্যাংক ২০ কোটি টাকা দিচ্ছিল, তা নিয়ে নানা পর্যায়ে চিঠিপত্র চালাচালি হচ্ছিল। আমি বলেছিলাম, এই চিঠিগুলো সংরক্ষণ করা হোক, এগুলো ইতিহাস। এই টাকা ঘিরেই সরকার, পরিকল্পনা কমিশন, দাতা সংস্থা—সবাই মিলে মতবিনিময় করেছে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ পর্যন্ত নিজে তাতে যুক্ত হয়েছেন।’
ড. ইউনূস বলেন, এই ২০ কোটি টাকা না এলে পিকেএসএফ হয়তো গঠিত হতো, কিন্তু এভাবে হতো না। তিনি জানান, সেসময় গঠন করা হয় একটি কমিটি, যার সভাপতি হন তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী এবং আমি নিজে সদস্য হই। প্রস্তাবনার ভিত্তিতে একটি নাম ঠিক হয়—পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)।
অধ্যাপক ইউনূস জানান, প্রাথমিকভাবে পিকেএসএফ যে উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিল, তা সময়ের সঙ্গে আরও বিস্তৃত হয়েছে। তবে বিভিন্ন সময় কাঠামোগত ও নীতিগত চ্যালেঞ্জ এসেছে। বিশেষ করে মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) এর-সঙ্গে কিছু দূরত্ব তৈরি হয়েছে, যেটা দূর করা জরুরি।
তিনি বলেন, ‘আমরা তো মাইক্রোক্রেডিট দিচ্ছি না। আমরা অংশীদার হই উদ্যোক্তার সঙ্গে। তাই এই কাঠামোকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, এখন সময় এসেছে এমন একটি আর্থিক কাঠামো দাঁড় করানোর, যেখানে প্রতিষ্ঠান নয়, ব্যক্তি উদ্যোক্তার পাশে দাঁড়াতে হবে। ‘আমরা ব্যবসার পার্টনার হতে চাই। কেউ যদি ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে আসে, আমরা তার সঙ্গে অংশীদার হব। শুধু ঋণ নয়—সোজা বিনিয়োগ। সে যদি পাঁচ লাখ টাকা চায়, আমরা দেব। তবে বিনিময়ে আমাদের শেয়ার থাকবে।’
এই মডেলে উদ্যোক্তা সফল হলে ধীরে ধীরে পুরো মালিকানা নিজের হাতে নিতে পারবে—এই ধারণার ভিত্তিতে তিনি একটি কাঠামো প্রস্তাব করেন, যেটি যৌথ মালিকানা থেকে সম্পূর্ণ মালিকানায় রূপান্তরযোগ্য।
তিনি বলেন, ‘সে যদি ভালো করে, তাহলে আমাদের অংশ ক্রয় করে নিয়ে নিতে পারবে। আমরা চাই সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে সহায়তা করতে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা তালিকা করে রাখিনি, কিন্তু বহু রকমের উদ্যোক্তা গড়ে উঠেছে। প্রযুক্তি এখন বড় সুযোগ এনে দিয়েছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা প্রত্যেক ব্যক্তিকে বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত করতে পারি। সে যে পথেই যেতে চায়, সেই সুযোগ করে দিতে হবে।’
বর্তমান আইন কাঠামো যে প্রেক্ষাপটে গড়ে উঠেছিল তা আজকের বাস্তবতায় অনেকাংশে প্রয়োজনীয়তা হারিয়েছে এমন মন্তব্য করে ইউনূস বলেন, ‘৮০ দশকের যে আইন, তা আজকের উদ্যোক্তা ব্যবস্থার সাথে খাপ খায় না। বিশেষ করে পিকেএসএফ-এর নিজস্ব আইন, সেটাকে সংস্কার করে সম্প্রসারিত করা যেতে পারে। নানামুখী কর্মসূচি সংযোজনের সুযোগ আছে।’
তিনি বলেন, ‘এই ভবনের যাত্রা হোক পিকেএসএফ-এর নতুন দিগন্তের সূচনা। দীর্ঘ ৩৫ বছরের যাত্রায় যা অর্জিত হয়েছে, তা একটি শক্ত ভিত। এখন সময় এসেছে বড় পরিসরে যাওয়ার।’
তিনি আশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘টাকার কোনো অভাব হবে না। আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের ওপর আস্থা আছে। আমরা যদি একটি সমন্বিত ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেম দাঁড় করাতে পারি, তাহলে সত্যিকারের উদ্যোক্তা তৈরির যে স্বপ্ন—তা বাস্তবায়ন সম্ভব।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ,পিকেএসএফ পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের বক্তব্য রাখেন।
মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে ঢাকাসহ সারাদেশে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। এই বৃষ্টি আরও এক সপ্তাহ থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা বলেন, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে সারা দেশে বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টি আগামী ১৯ তারিখ পর্যন্ত চলতে থাকতে পারে। এরপর আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে থাকবে। তিনি আরও বলেন, এই সময়ে বৃষ্টিপাত কোথাও কমবে আবার বাড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে সরে গিয়ে বর্তমানে তেলেঙ্গা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী অবস্থায় রয়েছে।
আজ রোববার সকাল ৯টায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ সময় রাজধানী ঢাকায় বাতাস দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
আজ রোববার সন্ধ্যা ৬ টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯০ শতাংশ। আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত হবে সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে। আগামীকাল ঢাকায় সূর্যোদয় হবে ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে।
ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কবার্তায় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সক্রিয় দক্ষিণ বা পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আজ রোববার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধ্বসের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সাথে ভারী বর্ষণজনিত কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে।
সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি ধরনের ভারি, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে ভারি এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হলে তাকে বলা হয়ে থাকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত।
আজ রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল পাবনার ইশ্বরদীতে; ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল সিলেটে; ২৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময়ে চট্টগ্রামে দেশের সর্বোচ্চ ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া রাঙামাটিতে ৮৭, সন্দ্বীপে ৮০ এবং তেঁতুলিয়ায় ৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, এ বছরও শারদীয় দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নেই উদযাপিত হবে।
তিনি আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে এ কথা বলেন।
দুর্গাপূজা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবারও ভালোভাবে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। সবার সহযোগিতায় উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপিত হবে।
তিনি আরও বলেন, ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো ছিলো। এটা নিয়ে কারো কোনো প্রশ্ন ছিলো না। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের প্রস্তুতি চলছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কোর কমিটির সভায় দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দু-একটি নির্বাচন হয়ে গেল, এসব বিষয়েও একটু আলোচনা হয়েছে। পুলিশের প্রশিক্ষণ এবং আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ছিনতাই, চুরি-ডাকাতিরোধসহ সীমান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে পূজা এবং ফরিদপুরের দুটি ইউনিয়ন নিয়ে যে সমস্যা, সে বিষয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন,সীমানা নির্ধারণ নিয়ে ফরিদপুরের দুই ইউনিয়নের কারণে বিভিন্ন জেলার মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। ফরিদপুরে দুটি ইউনিয়ন আগে যে সংসদীয় আসনে ছিল, সেখান থেকে অন্য আসনে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। এটা নির্বাচন কমিশনের বিষয়। এটা নির্বাচন কমিশন করেছে। যুক্তি-তর্কের সবকিছু শোনার পর তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা নিয়েই এলাকার লোকজনের মধ্যে একটা ক্ষোভ চলছে।
তিনি বলেন, এটা নিয়ে আসলেই যদি তাদের ক্ষোভ থাকে, তাহলে সেটা যথাযথ চ্যানেলে জানানো প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এটাকে কেন্দ্র করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই দুটি ইউনিয়নে কতজন লোক আর কতজন ভোটার? অথচ তারা লাখ লাখ লোককে জিম্মি করে রেখেছে। এটা কোনো অবস্থায় বরদাশত করা হবে না। তারা যদি আজকের মধ্যে এটা সমাধান না করে, তাহলে আমরা আইন প্রয়োগ করে সড়ক ক্লিয়ার করবো।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কারাগারে কিছু সমস্যা আছে, এখানেও সংস্কার দরকার। বন্দিদের মধ্যে যাদের অনেক বয়স হয়ে গেছে, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, আমরা চাচ্ছিলাম লাইফটাইম সাজা তো ৩০ বছর, সেটা কমিয়ে কত করা যায়, যুক্তিযুক্ত একটা করে, যারা বয়স্ক হয়ে গেছে তাদের যাতে ছাড়ার ব্যবস্থা করা যায়।
বয়সটা কত নির্ধারণ করা হবে, এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত নির্ধারণ করিনি। আলোচনার ভিত্তিতে মেয়েদের ক্ষেত্রে হয়তো ২০ বছর করে দিতে চাচ্ছি। ছেলেদের ক্ষেত্রে হয়তো আরও একটু বেশি হতে পারে।
তিনি বলেন, আবার কতগুলো স্পেসিফিক আছে, তার বয়সটা কত। যে ১৮ বছরে অপকর্ম করেছে, ২০ বছর পর তাকে ছেড়ে দিলে তখন তো তার বয়স ৩৮ বছর হয়। সে হয়তো এসে আবার অপকর্ম করতে পারে। এ বিষয়গুলো দেখা হবে, তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে আমরা একটু বেশি লিবারেল।
প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ কমিশনের সভায় উপস্থিত থাকবেন।
দুপুর তিনটায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে 'জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫' বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হবে।
কমিশনের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আজ একথা জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা দুপুর ৩টায় রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে উপস্থিত হবেন।
সেখানে তাঁর বিকাল ৪টা পর্যন্ত অবস্থান করার কথা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা সভাকক্ষ ত্যাগ করার পর কমিশনের সাথে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
আলোচনা শেষে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি পরে ব্রিফ করবেন।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল আয়োজিত “অপসাংবাদিকতা প্রতিরোধ, সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা, আচরণবিধি প্রতিপালন ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন” শীর্ষক সেমিনার ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার সকালে শ্রীমঙ্গল পৌরসভা সভাকক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসলাম উদ্দিন। সেমিনারে প্রধান অতিথি ও মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানও বিচারপতি এ কে এম আব্দুল হাকিম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকতার নীতি ও নৈতিকতা বিষয়ে আলোচনা করেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সচিব মো. আব্দুস সবুর।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রেস কাউন্সিলের সুপারিনটেনডেন্ট মো. সাখাওয়াত হোসেন।
সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, দৈনিক যুগান্তরের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি সৈয়দ আবু জাফর সালাউদ্দিন, দৈনিক ইত্তেফাকের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি সৈয়দ সাহেদ আহমেদ এবং দৈনিক খোলা কাগজের জেলা প্রতিনিধি এহসানুল হক।
সেমিনারে শ্রীমঙ্গলে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অর্ধশতাধিক সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।
পাবনা-১ (বেড়া আংশিক-সাঁথিয়া) সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বহালের দাবিতে বেড়ায় হরতাল-অবরোধ চলছে। রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই হরতাল চলবে বলে জানা গেছে। এর পাশাপাশি সড়ক ও নৌপথে অবরোধ চলছে।
হরতাল সমর্থনকারীরা পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের বেড়া সিএন্ডবি মোড়ে রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ও ট্টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেছেন। এদিকে রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করা হয়।
রোববার সকাল থেকে কোনো বাস বা অন্য কোনো যান চলছে না সড়কে। বেড়া নগরবাড়ি ও কাজিরহাট নদী বন্দর বন্ধ করে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এতে ভোগান্তিতে পড়ার কথা জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
এর আগে শনিবার এক সভায় এই ঘোষণা দেয় সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি।। শনিবার সকালে বেড়া উপজেলা সদরের সান্যালপাড়া সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির অস্থায়ী কার্যালয়ে আলহাজ ফজলুর রহমান ফকিরের সভাপতিত্বে পাবনা-১ নির্বাচনী এলাকা পুনর্বহালের দাবিতে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন, বেড়া পৌর বিএনপির সাধারন সম্পাদক সালাউদ্দিন ইকবাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আকছেদ আলী, পৌর বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি সাজেদুল ইসলাম দিপু, বণিক সমিতির প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম, রিকশা ভ্যান সমিতির সধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন খাজা, চতুহাট বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহীন মোল্লাসহ বিভিন্ন সংগঠণের প্রতিনিধি।
সভায় রোববার বেড়া উপজেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল, সড়ক ও নৌপথ অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়।
গত ৪ আগস্ট ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ আসনে চূড়ান্ত সীমানার প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত পাবনা-১ আসন সংশোধন করে শুধু সাঁথিয়া উপজেলাকে নিয়ে পাবনা-১ আসন করা হয়েছে এবং পাবনা-২ আসনের (সুজানগর ও বেড়া উপজেলার একাংশ) সঙ্গে বেড়া উপজেলাকে পুরোপুরি সংযুক্ত করা হয়েছে।
এরপর থেকে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বেড়া উপজেলাবাসী। এর আগে একই দাবিতে গত ৭ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক দুই ঘণ্টা অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে শুধু সাঁথিয়া উপজেলাকে নিয়ে পাবনা-১ আসন আলাদা করা হয়েছে। আর বেড়া উপজেলাকে পৃথক করে পাবনা-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু বেড়া উপজেলার জনগণের ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু সাঁথিয়া উপজেলার সঙ্গে যুক্ত।
ফরিদপুরের সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাস্তা অবরোধের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, রাস্তা অবরোধ করার অধিকার কারো নেই। তারা লাখ লাখ মানুষকে জিম্মি করে রাখছে। এটা কোনো অবস্থায় বরদাশত করা হবে না। তারা যদি আজকের মধ্যে এটা সমাধান না করে, তাহলে আইন প্রয়োগ করতে বাধ্য হব।
রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ফরিদপুরের এই দুই ইউনিয়নের কারণে বিভিন্ন জেলার মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। ফরিদপুরে দুটি ইউনিয়ন আগে যে সংসদীয় আসনে ছিল, সেখান থেকে অন্য আসনে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেই।
এটা নির্বাচন কমিশনের বিষয়। এটা নির্বাচন কমিশন করেছে। যুক্তি-তর্কে সবকিছু শোনার পর তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা নিয়েই এলাকার লোকজনের মধ্যে একটা ক্ষোভ।
তিনি বলেন, এটা নিয়ে আসলেই যদি তাদের ক্ষোভ থাকে, তাহলে সেটা যথাযথ চ্যানেলে জানানো প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এটাকে কেন্দ্র করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই দুটি ইউনিয়নে কতজন লোক, আর কতজন ভোটার? অথচ তারা লাখ লাখ লোককে জিম্মি করে রাখছে। এটা কোনো অবস্থায় বরদাশত করা হবে না।
তিনি আরো বলেন, কোর কমিটির সভায় দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
দু-একটি নির্বাচন হয়ে গেল, এসব বিষয়েও একটু আলোচনা হয়েছে। পুলিশের প্রশিক্ষণ এবং আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ছিনতাই, চুরি-ডাকাতিসহ সীমান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
মন্তব্য