ঈদের ছুটি শেষ হবে শনিবার। আগামীকাল থেকেই ঢাকায় আসতে হবে ঈদের আগে রাজধানী ছেড়ে যাওয়া লোকজনকে। তবে যেভাবে ঢাকা থেকে মানুষ গ্রামে ফিরেছে একইভাবে ঢাকায় আসার বিপক্ষে মত দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তারা মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালু করাই হবে ভালো সমাধান।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় সরকার ৪ এপ্রিল কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। ১৮টি বিধিনিষেধের মধ্যে গণপরিবহন ও শপিং মল বন্ধ রাখার কথা বলা হয়।
তবে পরবর্তী সময়ে বিধিনিষেধ বাড়লেও খুলে দেয়া হয় শপিং মল। এরপর আস্তে আস্তে বিধিনিষেধ শিথিল করে সরকার। মানুষের বাইরে বের হওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
গত দুই সপ্তাহে শপিং মলগুলোতে ঈদ কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। এরপর গত সপ্তাহে খুলে দেয়া হয় নগর পরিবহন। তবে চালু করা হয়নি আন্তজেলা বাস। আর এতে দুর্ভোগ ও ভোগান্তি চরম মাত্রায় বাড়তে থাকে।
ঈদের আগে ঘরমুখো মানুষ নানা উপায়ে ভিড় করে ফেরি ঘাটে। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত মানুষ নিয়ে পার হয় ফেরি। সংক্রমণ বাড়ার কথা বলে সরকার যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল সেটি উপহাসে পরিণত হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ যেভাবে বাড়ি ফিরেছে তাতে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন হয়েছে। এভাবে একটি খাত বন্ধ রেখে ভোগান্তি না বাড়িয়ে বরং স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহনসহ সব পরিবহন খুলে দেয়া হোক।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট ডা. নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। এভাবে যারা ঢাকা ছেড়েছে সেখানে বরং স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো লক্ষণ নেই।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব খুলে দিতে হবে। সেটাই সবচেয়ে ভালো হবে এখন। শুধু সড়ক পরিবহন নয়, নৌপরিবহনও খুলে দিতে হবে।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ঈদের আগে যেমন দুই-তিন দিনের মধ্যে মানুষ বাড়িতে ফিরে গেছে আসার ক্ষেত্রে একটু সময় নিতে পারে। যেভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, পাঁচ থেকে সাত দিন ধরে, সেটা একটু মনিটরিং করলে আর কোনো সমস্যা হবে না।’
দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের যে অবস্থা তাতে তো আপনি সবকিছু অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকতে পারেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব খুলে দেয়া যেতে পারে। আর আমরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু করতে পারি।’
হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের পরিচালক ডা. লেলিন চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অবশ্যই গণপরিবহন খুলে দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেখুন ঈদের আগে মানুষ ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বড় শহর থেকে বাড়ি যাবে। এটা আমাদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য এবং জনমনস্তত্ত্বের সাথে জড়িত। এটিকে মাথায় রেখেই আমাদের পরিকল্পনা করা উচিত ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দুইটি উপায় নেয়া উচিত ছিল। এক. আপনি সব কিছু বন্ধ রাখুন। সে ক্ষেত্রে বাইসাইকেল থেকে শুরু করে অ্যারোপ্লেন বন্ধ থাকবে। কেউ কোথাও যেতে পারবে না। শুধু অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলবে। দুই. আপনি সব খোলা রাখেন, যাতে সবাই যাতায়াত করতে পারে।’
‘কিন্তু সরকার এটি না করে কী করল? যাদের প্রাইভেট কার আছে বা বেশি ভাড়া দিয়ে গাড়ি নিতে পারবে আবার যাদের বিমানের টিকিটের টাকা আছে, তারা বাড়ি যাচ্ছে। কিন্তু প্রান্তিক মানুষ কিন্তু সেটি পারছে না। তাই তারা বাড়ি যাচ্ছে। ১৬ তারিখে অফিস খুলবে। আমরা যাই নির্দেশ দিই আর না দিই তারা তো চাকরি বাঁচাতে ফিরে আসবে।’
সংকট নিরসনে দুটি পরামর্শ দিয়েছেন লেলিন।
তিনি বলেন, ‘সরকার ছুটি আরও তিন দিন বাড়িয়ে দিক। আর এটি সব সরকারি ও বেসরকারি কর্মস্থলে প্রযোজ্য থাকবে। না হয় বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক গণপরিবহন খুলে দিক। এতে চাপ কমতে পারে।
‘নির্দিষ্ট বিভাগ অনুযায়ী মানুষ গণপরিবহনে ফিরে আসুক। তবে অবশ্যই সেটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে অথবা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি, সেনাবাহিনীর গাড়ি দিয়ে দেয়া হোক। অবশ্যই সেটি দুই সিটে একজন করে বসবে।’
সরকার ও সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঈদের পর আরও অন্তত এক সপ্তাহ লকডাউন বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘ঈদের পর ২০ থেকে ২২ তারিখের দিকে সংক্রমণ আবার বৃদ্ধি পেতে পারে। এ দিক থেকে আমাদের পরিকল্পনা আছে ঈদের পরে আরও এক সপ্তাহ বিধিনিষেধ চলমান রাখা অন্তত।’
আন্তজেলা পরিবহন খুলে দেয়া নিয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।
তিনি বলেন, ‘এখন যে অবস্থা, সেটা আমরা চিন্তা করছি। ২০-২২ তারিখে কী অবস্থা হয়, সেটা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’
লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যা আছে সেভাবেই। নতুন কিছু থাকলে সেটা জানানো হবে। কী হবে সেটা সবটা ১৬ তারিখে জানানো হবে।’
পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্যাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেভাবে মানুষ বাড়িতে গিয়েছে তাতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো লক্ষণ ছিল না। যদি গণপরিবহন খুলে দেয়া হয় আর সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হয় তবে কিন্তু এই সমস্যা থাকত না।’
সরকার কী কারণে পরিবহন বন্ধ রাখতে বলেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার সংক্রমণের ভয় পাচ্ছে। তবে যেভাবে এখন সবকিছু চলছে তাতেই তো সংক্রমণ বাড়ার কথা।
‘আমরা তো দেখেছি ফেরিতে মানুষ কীভাবে পার হয়েছে। সেখানে গণপরিবহন থাকলে সুষ্ঠুভাবে যাওয়া যেত।’
আরও পড়ুন:দেশে ক্যান্সার চিকিৎসায় অধিক সংখ্যক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। ক্যান্সার রোগী বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান।
গতকাল সোমবার রাজধানীর ন্যাশনাল বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, শুধু স্তন ক্যান্সার নয়, আমাদের দেশে এখন ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ক্যান্সার প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা থেকে শুরু করে আমাদের আরও বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে।
পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির আহ্বান জানান তিনি।
নূরজাহান বেগম আরও বলেন, আমাদেরকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি করতে হবে, যাতে করে আমরা ৬৪ জেলায় ক্যান্সার সচেতনতার বিষয়টি পৌঁছে দিতে পারি।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিটি বিভাগীয় হাসপাতালে ক্যান্সার, কিডনি ও ডায়ালাইসিস চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে।
উপদেষ্টা আরো বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য লিনাগ মেশিন খুবই প্রয়োজনীয়। বর্তমান সরকার ৩৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও ছয়টি লিনাগ মেশিন ক্রয়ের ব্যবস্থা নিয়েছে।
আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মেশিন গুলো দেশে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় যুগোপযোগী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ন্যাশনাল বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতা সরকার অব্যাহত রাখবে।
দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দায়ী করে উপদেষ্টা বলেন, আপনারা জানলে অবাক হবেন যে একটি ফাইল একজনের কাছেই ছিল এক মাস দশ দিন। তাহলে বলুন, উন্নয়ন কাজ কিভাবে এগিয়ে নেয়া যায়?
তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
নূরজাহান বেগম আরো বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের পর হয়তো আমরা কেউ থাকব না। তবে আমাদের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণ এনজিও আপনাদের পাশে থাকবে সব সময়।
তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে আমরা সাধারণ মানুষের পাশে থাকব এবং আপনারা আমাদেরকে যখনই ডাকবেন, আমরা তখনই আপনাদের ডাকে সাড়া দেব।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের টাকার অভাব রয়েছে। তাই আমরা হয়তো পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সব সময় বিদেশে যেতে পারি না। কিন্তু বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেশে এনে তো আমরা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি। এক্ষেত্রে তো কোন বাধা নাই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সকলকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মহা-পরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার মো. আবু জাফর বলেন, স্তন ক্যান্সার ধরা পড়লে শতভাগ নিরাময় সম্ভব। এজন্য আমাদের লজ্জা বা ভয় না পেয়ে যথাসময়ে স্ক্যানিং করতে হবে।
শসা হলো কম ক্যালোরি সমৃদ্ধ সবজি। এই সবজির প্রায় পুরোটাই পানি (প্রায় ৯৬%)। সকালের নাস্তা থেকে রাতের খাবার পর্যন্ত, বিভিন্ন উপায়ে স্বাস্থ্যকর এবং হাইড্রেটিং খাবার তৈরি করতে শসা ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ভিটামিন কে, ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবারের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে, যা হাইড্রেশন ও সুস্থতায় সাহায্য করে। এর উচ্চ ফাইবার এবং জলীয় উপাদান হজমশক্তি উন্নত করে এবং পেট ফাঁপা রোধ করতে সাহায্য করে।
শসায় উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিশেষ করে কিউকারবিটাসিন এবং ফ্ল্যাভোনয়েড, প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। শসা ভিটামিন কে সরবরাহ করে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, যা ক্যালসিয়াম শোষণ এবং হাড় মেরামতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো শসার সঙ্গে খেলে শসার পুষ্টিগুণ আরও বেড়ে যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক-
টমেটো
গবেষণা অনুসারে, টমেটো লাইকোপিন এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে এবং সামগ্রিক ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে বলে জানা গেছে। শসা এবং টমেটো অলিভ অয়েল এবং বিভিন্ন ভেষজের সঙ্গে মিশিয়ে স্বাস্থ্যকর সালাদ তৈরি করে খেতে পারেন। যা ডিটক্সিফিকেশন এবং হাইড্রেশনের জন্য উপযুক্ত। চাইলে এই সংমিশ্রণ স্যান্ডউইচ স্টাফিং হিসাবেও ব্যবহার করতে পারেন।
দই
দই প্রচুর প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং প্রোবায়োটিক যোগ করে এবং শসা থেকে প্রাপ্ত পানির সঙ্গে মিশে এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য সহায়তা করে। শসার রায়তা বা স্মুদি তৈরি করতে পারেন। যা শীতল, ক্রিমি এবং হজম-বান্ধবও।
ছোলা
ছোলা উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, আয়রন এবং ফাইবার সরবরাহ করে বলে জানা গেছে, যা শসার সঙ্গে মিলে আরও বেশি পুষ্টিকর হয়ে ওঠে। এই দুই খাবার একসঙ্গে খেলে তা দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে এবং সুষম খাবারের বিকল্প হতে পারে। সেদ্ধ ছোলা, শসা, অলিভ অয়েল, কাঁচা মরিচ এবং পুদিনা পাতা একসঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
পুদিনা বা তুলসী
এই ভেষজগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ এবং হজমে সহায়তা করে। সেইসঙ্গে এগুলো শসার শীতল প্রকৃতির পরিপূরক। সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো শসা-পুদিনা মিশ্রিত পানি বা তুলসী-শসার সালাদ যা ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং আপনাকে সতেজ বোধ করায়।
ভরা শরতে হঠাৎ বৃষ্টি আর রোদের পালা বদলে ঘরে ঘরে বাড়ছে জ্বর, সর্দি-কাশি, পেটের সমস্যা। এর সঙ্গে দেখা দিচ্ছে পানিশূন্যতা, যা হতে পারে রোদের তাপে ঘাম, শরীরচর্চা বা পরিশ্রমের পর পর্যাপ্ত পানি না খেলে। গুরুতর ক্ষেত্রে এটি প্রাণঘাতীও হতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে, শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হয়। শরীর থেকে শুধু পানি নয়, হারিয়ে যায় প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ যেমন সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ক্লোরাইড। এর ফলেই দেখা দেয় ক্লান্তি, মাথা ধরা, দুর্বলতা— এমনকি শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
ডাবের পানি: প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়
পুষ্টিবিদরা বলেন, ডাবের পানি হলো একেবারে প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়। এতে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সোডিয়াম, যা অল্প পানিশূন্যতা দূর করতে কার্যকর। রোদে দীর্ঘক্ষণ হাঁটা, শরীরচর্চা বা উপবাসের পর এক গ্লাস ডাবের পানি শরীরে দ্রুত শক্তি ফিরিয়ে আনে। এতে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট শরীরকে চাঙ্গা রাখে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়।
স্যালাইন: গুরুতর অবস্থার নির্ভরযোগ্য সমাধান
তবে বমি, ডায়রিয়া বা আন্ত্রিকের কারণে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও লবণ বের হয়ে গেলে তখন প্রয়োজন হয় স্যালাইন। এতে নির্দিষ্ট মাত্রায় সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও গ্লুকোজ থাকে, যা দ্রুত শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে।
কতটা খাওয়া উচিত?
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
হালকা পানিশূন্যতায় ডাবের পানি যথেষ্ট কার্যকর। কিন্তু শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও লবণ বের হতে থাকলে স্যালাইনই সবচেয়ে নিরাপদ বিকল্প। এছাড়া লবণ–চিনি–দইয়ের পাতলা ঘোল বা পাতিলেবুর শরবতও শরীরের পানির ঘাটতি পূরণে সহায়ক।
পুষ্টিবিদদের মতে, শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় বেছে নিলেই পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
প্রকৃতিতে হেমন্তের বাতাস বইতে শুরু করেছে। এর হাত ধরেই আসবে শুষ্কতার দিন। কারণ দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে শীতকাল। আবহাওয়ার পরিবর্তনে এমন সময় বাড়তে থাকে দূষণের মাত্রাও। বিশেষ করে কমতে থাকে বাতাসের মান। যে কারণে তা আমাদের শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। ফুসফুসের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু খাবার ও খাদ্যাভ্যাস ফুসফুসের পরিশ্রম কমিয়ে আপনাকে সহজে শ্বাস নিতে সাহায্য করবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক-
১. হাইড্রেশন বজায় রাখুন
সুস্থ ফুসফুস বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অভ্যাস শ্বাসনালীতে শ্লেষ্মা পাতলা রাখতে সাহায্য করে, যা বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেওয়া সহজ করে তোলে। ভেষজ চা, মধু দিয়ে গরম পানি এবং গ্রিন টি এক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। আমেরিকান জার্নাল অফ রেসপিরেটরি অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, গ্রিন টি ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
২. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণ করুন
ভিটামিন সি এবং ই-এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল এবং শাক-সবজি দূষণের কারণে সৃষ্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে আপনার ফুসফুসকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। কমলা, বেরি, পালং শাক এবং বাদাম অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের চমৎকার উৎস। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণ বৃদ্ধি করলে তা ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করে।
৩. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এই স্বাস্থ্যকর চর্বিতে প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি প্রদাহ কমিয়ে ফুসফুসের রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। পুষ্টিবিদরা স্যামন, ম্যাকেরেল, তিসি এবং আখরোটের মতো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।
৪. প্রতিরক্ষার জন্য মসলা
হলুদ, মৌরি, হলুদ এবং আদার মতো মসলা শক্তিশালী প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যে ভরপুর। এগুলো শ্বাসনালীতে দূষণকারী পদার্থের প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে। আদার মতো মসলা শ্লেষ্মা ভেঙে দেয়, যা আমাদের শ্বাস নেওয়া সহজ করে তোলে। মসলা ফুসফুসে রক্ত সঞ্চালনও উন্নত করে এবং প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত আদা, রসুন এবং হলুদ খাওয়ার পরামর্শ দেন।
৫. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার শরীরকে পরিষ্কার করতে এবং টক্সিন অপসারণে সাহায্য করতে পারে। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ফুসফুসের কার্যকারিতা বজায় রাখে। আমেরিকান থোরাসিক সোসাইটির একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার প্রাপ্তবয়স্কদের ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করে।
লিভার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ অঙ্গের মধ্যে একটি। এর কাজ হলো ডিটক্সিফাই করা, চর্বি ভেঙে ফেলা, পুষ্টি প্রক্রিয়াজাত করা এবং সিস্টেমকে সচল রাখা। আমাদের খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশগত কারণ ইত্যাদি অনেক সময় লিভারকে অতিরিক্ত চাপে ফেলে। তবে লিভার সঠিকভাবে পরিষ্কার করার জন্য খুব বেশি কিছু করার প্রয়োজন হয় না। প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিয়ে সাধারণ কিছু খাবার প্রতিদিন খাওয়া হলে তা লিভারকে ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, লিভার ভালো রাখতে কোন ৫ খাবার প্রতিদিন খেতে হবে-
১. পেঁয়াজ
পেঁয়াজ সালফার যৌগ দিয়ে পূর্ণ যা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে এনজাইমগুলোকে সক্রিয় করে, বিশেষ করে যখন লিভারের কথা আসে। এতে কোয়ারসেটিন নামে একটি উপকারী যৌগ রয়েছে, যা একটি উদ্ভিদ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারের কোষকে যেকোনো ধরনের অক্সিডেটিভ ক্ষতি এবং যেকোনো অঙ্গের প্রদাহ থেকে রক্ষা করে। প্রতিদিন পেঁয়াজ খেলে তা লিভারকে বর্জ্য বিপাকে সাহায্য করে এবং ডিটক্সিফিকেশন উন্নত করে।
২. বাঁধাকপি
বাঁধাকপির উপকারিতা জেনে আপনি অবাক হবেন। এটি লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য সেরা সবজির মধ্যে একটি। বাঁধাকপি একটি ক্রুসিফেরাস সবজি যা ডিটক্সিফাইং এনজাইম বৃদ্ধি করে। এতে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা হজম এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করে। এতে গ্লুকোসিনোলেট রয়েছে, যা হজম প্রক্রিয়া এবং লিভারকে পরিশোধনকারী এনজাইম নিঃসরণে সহায়তা করে। যদি প্রতিদিন এক বা অন্য আকারে খাওয়া হয় তবে এটি ফ্যাটি লিভার তৈরিতে বাধা দেবে এবং প্রদাহ কমাবে।
৩. বিটেরুটের রস
লিভারের জন্য শক্তিশালী অস্ত্র বিটরুট পুষ্টিতে সমৃদ্ধ এবং লিভারকে ডিটক্সিফাইং করতে সহায়তা করে। বিটের রসে উপস্থিত বিটালাইন এবং নাইট্রেট রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং লিভারের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। এই যৌগগুলো লিভার দ্বারা বিষাক্ত পদার্থ নির্মূল করতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষ নিরাময়ে সহায়তা করে। প্রতিদিন বিটের রস খেলে পিত্ত উৎপাদনও ভালো হয়, যা হজম এবং চর্বি বিপাকের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪. গ্রিন টি
আমরা সবাই গ্রিন টি-এর ওজন কমানোর উপকারিতা সম্পর্কে জানি, কিন্তু আমরা হয়তো যা জানি না তা হলো, এর মৃদু কিন্তু শক্তিশালী লিভারের স্বাস্থ্য উপকারিতা। এতে ক্যাটেচিন রয়েছে, এই্ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারে চর্বি জমা কমায় এবং লিভারের এনজাইমের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে, যারা নিয়মিত গ্রিন টি পান করেন তাদের নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। গ্রিন টি শক্তিও বাড়ায় এবং বিপাকক্রিয়ায় লিভারের কার্যকারিতা বজায় রাখে।
৫. কুমড়া
কুমড়া বিটা-ক্যারোটিন, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ যা লিভারের টিস্যুকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এর কোমল পুষ্টি উপাদান খাবার হজমে সাহায্য করে যার ফলে শরীর সহজেই বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে পারে। কুমড়ায় থাকা ফাইবার কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমায় এবং লিভারে চর্বি জমা কমায়। কুমড়া পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফোলেটের একটি ভালো উৎস, এগুলো সবই লিভার-বান্ধব পুষ্টি, যা লিভারের কার্যকারিতায় সহায়তা করে।
বিগত বছরগুলোর চেয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। গত তিন মাসের তুলনায় এ মাসের ৯ দিনে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতি মাসে ডেঙ্গুতে আক্রন্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ‘এই রোদ, এই বৃষ্টি’- এমন অস্থিতিশীল আবহাওয়া এডিস মশার বিস্তারে খুবই সহায়ক। এ কারণে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বেড়েছে। রোগী বাড়লে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ে।
এবারের ভয়াবহতা ২০১৯ সালের মতো হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
চলতি বছরে ডেঙ্গুরোগী বাড়তে শুরু করে মে থেকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জুন মাসে ৫হাজার ৯৫১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। মৃত্যু হয় ১৯ জনের। জুলাই মাসে ১০ হাজার ৬৮৪ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। মৃত্যু হয় ৪১ জনের। আগস্ট মাসে ভর্তি হয়েছেন ১০ হাজার ৪৯৬ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। সেপ্টেম্বর মাসে ১৫ হাজার ৮৬৬ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। এ মাসে মৃত্যু হয় ৭৬ জনের। অক্টোবর মাসে মাত্র ৯ দিনে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ৫৪৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩০৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে এ সময়ে নতুন করে কারও মৃত্যু হয়নি। ফলে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ২২৪ জনে অপরিবর্তিত রইল।
গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩০৮ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১১৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৫ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৪৭ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৪০ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ২১ জন ভর্তি হয়েছেন।
এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৫৩ হাজার ১৯৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, থেমে থেমে বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে যায়। রাস্তায় কিংবা বাসাবাড়ির আনাচে-কানাচে পড়ে থাকা পলিথিন, বিভিন্ন খাবারের প্যাকেট, ডাবের খোসাসহ বিভিন্ন আধারে পানি জমে যায়। এখন সেখান থেকেই এডিস মশার বিস্তার হচ্ছে।
জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, মাঝে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছু কম ছিল। বৃষ্টির কারণে এখন বাড়ছে। অক্টোবরেও বাড়বে।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালের মতো পরিস্থিতি না হলেও ২০১৯ সালের মতো হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৭৪ জন আক্রান্তের মধ্যে ১৬৪ জনের মৃত্যু হয়। চলতি বছরের এখন (৯ অক্টেবার) পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫২ হাজার ৮৮৫ জন।
মৃত্যু হয়েছে ২২৪ জনের। এবার ১৯ সালের মতো আক্রান্ত না হলেও বছরের ৯ মাসে মৃত্যু প্রায় তখনকার সমান।
২০২১ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। মৃত্যু হয় ১০৫ জনের। ২০২২ সালে ৬২ হাজার ৩৮২ জন আক্রান্ত হন। মৃত্যু হয় ২৮১ জনের। ২০২৩ সালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সে বছর আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। ২০২৪ সালে ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন আক্রান্তের মধ্যে ৫৭৫ জনের মৃত্যু হয়। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত আক্রন্ত হয়েছে ৫২ হাজার ৮৮৫ জন আক্রন্ত ও ২২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এই বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা।
এ সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার ৫০০। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বয়সসীমার মানুষ কর্মজীবী ও চলাফেরায় বেশি সক্রিয় হওয়ায় তারা বেশি মশার সংস্পর্শে আসছেন।
ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, সারাদেশে যদি ছাত্রদের অংশগ্রহণে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা যেত, তাহলে হয়তো একটা দৃশ্যমান পরিবর্তন আসত। সে ধরনের কিছু হচ্ছে না। বাসাবাড়িতে ফুলের টবে যাতে পানি জমে না থাকে, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মঈনুল আহসান জ্বর হওয়ার সাথে সাথে সবাইকে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সকল জ্বরের রোগীকে জ্বর হওয়ার সাথে সাথে নিকটস্থ হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো এবং ডেঙ্গুরোগ শনাক্ত হলে অনতিবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।’
দেশে আগামী রোববার ১২ অক্টোবর থেকে প্রথমবারের মতো টাইফয়েডের টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে। সরকার প্রায় পাঁচ কোটি শিশু-কিশোর-কিশোরীকে বিনামূল্যে এই টিকা দেবে। জন্ম সনদ নেই এমন শিশুরাও এই টিকা পাবে। ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৫’ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী সংবাদ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
শেরপুর প্রতিনিধি জানান: টাইফয়েড জ্বরের প্রাদুর্ভাব রোধে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআইর) আওতায় দেশব্যাপী টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু করছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে শেরপুরে গত বুধবার সন্ধ্যায় শেরপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ শাহিন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন শেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কাঁকন রেজা, কার্যনির্বাহী সভাপতি রফিক মজিদ, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান বাদলসহ অন্যান্য সাংবাদিকরা।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ১৫ বছরের কম বয়সি শিক্ষার্থীকে তাদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বহির্ভূত ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের বিদ্যমান ইপিআইয়ের স্থায়ী ও অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে।
শেরপুর জেলায় টাইফয়েড টিকার মোট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ১৯৪ জন শিশু। শেরপুর জেকায় এখন পযন্ত ৫৮ শতাংশ রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২ লাখ ৪২ হাজার ৬৩৪ জন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৫৬ জন শিশুকে টিকা দেওয়া হবে।
সিভিল সার্জন ডা. শাহিন বলেন, টাইফয়েড জ্বর একটি প্রতিরোধযোগ্য সংক্রামক রোগ। শিশুদের সুরক্ষায় সরকার বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী ১২ অক্টোবর থেকে সারাদেশে এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে।
তরিকুল ইসলাম তরুন, কুমিল্লা দক্ষিণ থেকে জানান: কুমিল্লা সিটি করপোরেশন সম্মেলন কক্ষে ইউ এন সি ইএফ, হো, এবং গেবি সংস্থার সহযোগিতায় টাইফয়েড (টিসিবি) টিকাদান ক্যাম্পেইন উপলক্ষে কুমিল্লায় কর্মরত সাংবাদিক দের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
১ ডোজ টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন টিসিবি টিকা নিন টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধে টিকা পেতে নিবন্ধন করুন এই স্লোগান কে নিয়ে
বৃহস্পতিবার সকালে সিটি করপোরেশনের ইপিআই টেকনোলজিস্ট মো. জহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার আবু সায়েম।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হারুন আল রশিদসহ কুমিল্লার সি. সাংবাদিকরা। আগামী ১২ অক্টোবর ২০২৫ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ১২২০৫৫ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই টাইফয়েড( টিসিবি) টিকাদান কর্মসূচী শুরু হবে। ৯ মাস থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত এই টিকা দেওয়া হবে। ২৯৫টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য ৪৫টি টিকাদান কেন্দ্রর নির্ধারন করা হয়। অধিকতর প্রচারের লক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরের প্রধান অতিথি ব্যাখ্যা দেন।
ফেনী প্রতিনিধি জানান: ‘এক ডোজ টাইফয়েড টিকা নিন। আপনার সন্তানকে টাইফয়েড ঝুঁকি থেকে মুক্তি দিন।’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন উপলক্ষে ফেনীর কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ফেনীর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ রুবাইয়াত বিন করিমের সভাপতিত্বে ও সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. ইমাম হাসানের সঞ্চালনায় টাইফয়েড টিকাদান বিষয়ের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাঃ আমির খসরু তারেক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৯ মাস থেকে ১৫ বছর শিশুদের এই টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে। ১২ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রতিটি কেন্দ্রে এই টিকা দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ রুবাইয়াত বিন করিম জানান, ফেনীর ৬ উপজেলায় টিকাদানের স্থায়ী কেন্দ্র ০৭টি, অস্থায়ী কেন্দ্র ১ হাজার ৯৮ টি, মিলে মোট ১১০৫ টি কেন্দ্রে এই টিকা দেওয়া হবে।
টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২ লক্ষ ৯৫ হাজার ১শ ২৭ শিশু, কমিউনিটি লক্ষমাত্রা ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৩শত ১০জন শিশু মিলে ৪ লক্ষ ২৫ হাজার ৪ শত ৩৭জন শিশু ।
ইতোমধ্যে ৩ লক্ষ ১৩ হাজার ৮শত ৮ জন, যার শতকরা হারে ৭৪ জন শিশুকে এই টাইফয়েড টিকার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ফেনীতে কর্মরত বিভিন্ন পিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রতিনিধি বৃন্দ অংশ নেন।
কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম)প্রতিনিধি জানান: টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধে সারাদেশের মতো চট্টগ্রাম জেলাতেও শুরু হচ্ছে ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন (টিসিভি)-২০২৫’। আগামী ১২ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে এবং ১ থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী ও অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে চলবে এ কর্মসূচি।
চট্টগ্রাম জেলার ১৫টি উপজেলার ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি বা প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে এক ডোজ টিসিভি টিকা প্রদান করা হবে। টিকা গ্রহণে জন্মনিবন্ধনের ১৭ ডিজিটের তথ্য দিয়ে অনলাইনে নিবন্ধন করা যাবে। তবে নিবন্ধন না করলেও টিকা পাওয়া যাবে। জেলায় এবার ৬ হাজার ৫৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি পর্যায়ে ১৬ লাখ ৩২ হাজার ৪১ জন শিশুকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে স্কুল ও মাদ্রাসায় ১১ লাখ ৩৪ হাজার ৭১ জন এবং কমিউনিটিতে ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৯৭০ জন। আগামী ১২ অক্টোবর সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে পটিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করা হবে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ে প্রেস কনফারেন্স ক্যাম্পেইন সফল করতে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এক প্রেস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম। উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদুল আনোয়ার, ডা. মো. নুরুল হায়দার (এমওডিসি), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এসআইএমও ডা. এফ.এম. জাহিদুল ইসলাম এবং কর্ণফুলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহাদাত হোসেন।
সিভিল সার্জন জানান, জেলার ২০০ ইউনিয়নের ৬০০ ওয়ার্ডে ১,২১৫ জন প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী, ১,৮০০ জন ভলান্টিয়ার, ৬০০ জন প্রথম সারির পরিদর্শক এবং ৬০ জন দ্বিতীয় সারির পরিদর্শক দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ মপ-আপ টিমও মাঠে থাকবে।
তিনি বলেন, “টাইফয়েড টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ। টিকা নেয়ার পর টিকাদান স্থানে সামান্য লালচে দাগ, হালকা জ্বর বা ক্লান্তি দেখা দিতে পারে—যা স্বাভাবিক ও অল্প সময়েই সেরে যায়। তাই কোনো গুজবে কান না দিয়ে অভিভাবকদের নির্ধারিত দিনে শিশুদের টিকাদান কেন্দ্রে নিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। নিবন্ধন ও সময়সূচি ৮ অক্টোবর পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় ৯ লাখ ৯২ হাজার ৮১ জন শিশু অনলাইনে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ৬১ শতাংশ। এর মধ্যে রাউজান উপজেলায় নিবন্ধনের হার সর্বোচ্চ ৭৬ শতাংশ। টিকাদান কার্যক্রম চলবে শুক্রবার ও সরকারি ছুটি বাদে প্রতিদিন সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৩টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত।
টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধে এ উদ্যোগ কেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) ২০১৯ সালের তথ্যানুসারে, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৯০ লাখ মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার জন মৃত্যুবরণ করে। আক্রান্তদের অধিকাংশই দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকার জনগোষ্ঠী।
উন্নত দেশে টাইফয়েডের প্রাদুর্ভাব কমে এলেও বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশে এটি এখনও গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা। সরকারের ইপিআই কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী এই টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু হচ্ছে ১২ অক্টোবর থেকে, যার মাধ্যমে শিশুদের টাইফয়েড জ্বর থেকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হবে।
সচেতনতায় সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “প্রতিটি পরিবার, শিক্ষক, মসজিদ-মন্দিরের ইমাম ও পুরোহিত, মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রী সবাইকে টাইফয়েড টিকার গুরুত্ব জানাতে হবে। ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি প্রতিটি শিশুকে নিরাপদ এই টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করুন।’
নীলফামারী প্রতিনিধি জানান: আগামী ১২অক্টোবর থেকে সারাদেশে শুরু হতে যাওয়া টাইফয়েড জ্বরের টিকাদান কর্মসূচি সফল করণে নীলফামারীতে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে অ্যাডভোকেসি ও পরিকল্পনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন নীলফামারী কার্যালয়ের উদ্যোগে জেলা মডেল মসজিদ হলরুমে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলার বিভিন্ন মসজিদের ইমাম-খতিব ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মোছাদ্দিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. আব্দুর রাজ্জাক, জেলা তথ্য কর্মকর্তা বায়েজিদ হোসেন। এসময় টিকাদান কর্মসুচির চিত্র উপস্থাপন করেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. আতাউর রহমান শেখ।
সভায় জানানো হয়, ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি কোনো শিশু যাতে টিকাদান থেকে বাদ না যায় সেজন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রচার প্রচারণার পাশাপাশি পারিবারিক ভাবে সকল শিশুকে টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে টিকা গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, টিকাদান কর্মসূচি সফল করণে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের বিশেষ ভুমিকা রয়েছে। বিশেষ করে মসজিদের নামাজের সময় এনিয়ে প্রচারণা চালানো হলে কোন শিশু বাদ পড়বে না। তিনি বলেন, অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে এই টিকা গ্রহণ করা যাবে।
ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান: দেশব্যাপী টাইফয়েড নিয়ন্ত্রণে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন ২০২৫ শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঝালকাঠি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সভাকক্ষে আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্যাম্পেইনের কার্যক্রম সম্পর্কে স্থানীয় গনমাধ্যম কর্মীদের অবহিত করেছেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
ঝালকাঠির ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা (প.প.)কর্মকর্তা ডা. রিফাত আহম্মেদ তার বক্তব্যে বলেন, 'ঝালকাঠি জেলায় মাসব্যাপী ক্যাম্পেইনে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি দের লক্ষাধিক শিশুকে বিনামূল্যে একটি করে টাইফয়েড টিকা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এক ডোজ টাইফয়েড টিকাই জীবন বাঁচাতে সহায়তা করবে।
তিনি আরো বলেন, 'টাইফয়েড জ্বর শিশুদের জন্য এক নীরব ঘাতক। প্রতি বছর অনেক শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে, অনেকে স্থায়ী জটিলতায় ভুগছে। অথচ একটি মাত্র টিকা এই বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে। তাই আগামী ১২ অক্টোবর থেকে মাসব্যাপী শিশুদেরকে নিরাপদ ও কার্যকর টিকা বিনামূল্যে প্রদান করা হবে।
তিনি আরো জানান, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি (মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যমসহ) শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বিদ্যালয়ে টিকা পাবে। স্কুলবহির্ভূত শিশুদের দেওয়া হবে কমিউনিটি পর্যায়ে ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে। এছাড়া সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের (যেমন পথশিশু, বেদে পল্লী, চা বাগান, যৌনপল্লী, এতিমখানা, উন্নয়ন কেন্দ্রের শিশু) জন্য থাকবে বিশেষ টিকাদান ব্যবস্থা।’ প্রেস বিফিং চলাকালে টাইফয়েড জ্বরের প্রভাব, এ জ্বর কীভাবে ছড়ায়, জ্বরের লক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা হয়।
পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান: দেশব্যাপী টাইফয়েড নিয়ন্ত্রণে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন ২০২৫ শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পিরোজপুর এর সিভিল সার্জন ডা. মো. মতিউর রহমান, সিভিল সার্জন জানান, মাসব্যাপী ক্যাম্পেইনে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি শিশুকে বিনামূল্যে একটি করে টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার পিরোজপুর সিভিল সার্জন অফিসের সভাকক্ষে সিভিল সার্জন পিরোজপুর ডা. মো. মতিউর রহমান এর সভাপতিত্বে ও মেডিকেল অফিসার পিরোজপুর সদর অনিন্দিতা কর্মকারের সঞ্চালনায় পিরোজপুরে কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়ে প্রেস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ওই প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন রভিল্যান্স অ্যান্ড ইস্যুনাইজেশন মেডিকেল অফিসার ডা. সাজিয়া নওশীন, পিরোজপুর জেলা ব্র্যাকের সমন্বয়ক মো.হাসিবুল ইসলাম,
জেলা প্রেসক্লাব পিরোজপুর এর সভাপতি এম এ জলিল,সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু জাফর, সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম সোহেল বিল্লাহ, মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহীন ফকির, দপ্তর সম্পাদক, এম এ নকিব নাসরুল্লাহ,কোষাধ্যক্ষ টি এম মনোয়ার হোসেন পলাশ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম শামীম রেজা সহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
সিভিল সার্জন ডা. মো. মতিউর রহমান বলেন,
‘টাইফয়েড জ্বর শিশুদের জন্য এক নীরব ঘাতক। প্রতি বছর শত শত শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে, অথচ একটি মাত্র টিকা এই বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে।তাই সরকার আগামী ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনে ৫ কোটি শিশুকে নিরাপদ ও কার্যকর টিকা বিনামূল্যে প্রদান করতে যাচ্ছে।”
দূষিত পানি,খাবার এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এ রোগ বিস্তারে ভূমিকা রাখে ‘টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অনেক অ্যান্টিবায়োটিক এখন আর কাজ করছে না। ওষুধ প্রতিরোধী টাইফয়েড একটি বৈশ্বিক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই টিকাই এখন সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি (মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যমসহ) শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বিদ্যালয়ে টিকা পাবে। স্কুলবহির্ভূত শিশুদের দেওয়া হবে কমিউনিটি পর্যায়ে ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে।’
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য থাকবে বিশেষ টিকাদান ব্যবস্থা।অন্যান্য টাইফয়েড টিকার তুলনায় এটি উন্নততর, অধিক কার্যকর ও নিরাপদ,
তিনি আরও বলেন, ‘টিকা দেওয়ার পর হালকা জ্বর, ক্লান্তি, বা ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা হতে পারে। তবে এটি অস্বাভাবিক নয় এবং দ্রুত সেরে যায়। ‘টিকার কারণে বাংলাদেশ পোলিও মুক্ত হয়েছে, হাম-রুবেলা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, ধনুষ্টংকার নির্মূল হয়েছে। কিছু গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। তাই গুজবে কান না দিয়ে, টিকা সম্পর্কে তথ্য পেতে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বা রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। উক্ত প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দরা টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে ধরেন এবং সেই প্রশ্নের উত্তর দেন পিরোজপুরের সিভিল সার্জন। উল্লেখ্য পিরোজপুর জেলায় সর্বমোট ৩,২৯,৮৬৯ জনকে টিকা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করছে জেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মন্তব্য