ঈদ উপলক্ষে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে মানুষ যেভাবে ভিড় জমিয়ে বাড়ি যাচ্ছে তাতে দেশে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ চলে আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বুধবার বিকেলে জরুরি ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে এসে এমন শঙ্কা প্রকাশ করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম।
তিনি বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসেছিল, তা ইতোমধ্যে নিয়ন্ত্রণে আসছে। আমরা শঙ্কা প্রকাশ করছি, আগামীতে না আরও একটা ঢেউয়ের সম্মুখিন হই।
‘করোনা মহামারি কবে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে আমরা জানি না। যতদিন পর্যন্ত বিদায় না নেয় ততদিন পর্যন্ত আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনার ভয়াবহতা আপনারা দেখেছেন। এর থেকে বাঁচতে অবশ্যই আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ প্রতিরোধে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকরে ১২ এপ্রিল ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ।
এতে বলা হয়, সব পরিবহন (সড়ক, নৌ, রেলপথ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না।
এরপর দুই দফা বাড়িয়ে লকডাউন ১৬ মে পর্যন্ত করা হয়।
গত ৫ মে নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগের মতোই আন্তজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। তবে ৫ মের পর যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে। উল্লেখ্য, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল আগের মতোই বন্ধ থাকবে।
এই প্রজ্ঞাপনে ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
বাসসহ গণপরিবহন চলাচলে বিধিনিষেধ থাকলেও থেমে নেই মানুষের ঈদযাত্রা। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার পাটুরিয়া ফেরিঘাটে প্রতিদিনই দেখা যায় হাজার হাজার যাত্রীর ভিড়। একই অবস্থা মহাসড়কগুলোতেও।
এতে করোনা ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ঈদের পরে তৃতীয় ঢেউ আসবে, তৃতীয় ঢেউ কমাতে কমাতে আবার কোরবানির ঈদ চলে আসবে, ঈদে আবার আমরা এভাবে বাড়িতে যাব। আবার সংক্রমণ বেড়ে যাবে, এভাবে করোনার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। সবাই যদি এমনভাবে চলাচল করতে থাকি তাহলে করোনা শেষ হবে না।’
একই আশঙ্কার কথা জানালেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, ‘অস্বাভাবিক ঈদকে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরের মধ্যে পালন করি। আমাদের জীবনে আরও অনেকগুলো ঈদ উপভোগ করার সুযোগ আসবে।
‘দেশের প্রস্তুতি ও চিকিৎসা ব্যবস্থার একটা সীমাবদ্ধতা আছে। উন্নত দেশগুলোও কারোনা রোগীর চাপ নিতে পারছে না। যার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কীভাবে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে।
ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানাও।
আরও পড়ুন:কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মিজানুর রহমান রিপন (৪৮) নামের এক স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীকে মারধর ও লাঞ্চিতের ঘটনা ঘটেছে। মিজানুর রহমান রিপন ফিলিপনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে।
গত রবিবার সন্ধার দিকে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ বাজারে এই ঘটনা ঘটে। মিজানুর রহমান রিপন ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আমর সংবাদ পত্রিকার দৌলতপুর উপজেলা প্রতিনিধি ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডেইলি নিউজ বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে কাজ করে আসছেন। এঘটনায় ওই দিন রাতে ভূক্তভুগী নিজে বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন।
এযাহার সূত্রে জানাযায়, গত ৮ জুন উপজেলার তারাগুনিয়া থানার মোড় এলাকার তারাগুনিয়া ক্লিনিকে আখি খাতুন (২২) নামের এক প্রশুতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় তিনি সহ উপজেলার বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী সংবাদ প্রকাশ করে। তারি জের ধরে উপজেলা বাজারে থাকা সরকার নিষিদ্ধ ক্লিনিক বেবি নার্সিং হোম এর মালিক আহসান হাবিব কালুর ছোট ছেলে খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারে তাকে মারধর করে।
এবিষয়ে মিজানুর রহমান নামের ওই গণমাধ্যম কর্মী বলেন, গতকাল বিকেলে আমি উপজেলা বাজারে বাড়ির দৈনন্দিন বাজার করছিলাম এসময় খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারের বেবী ক্লিনিক মালিকের ছেলে আমার উপর হামলা চালায়। এসময় সে আমাকে বলে আমার হাসপাতালে যে ডাক্তার আসে সেই ডাক্তারের নামে তুরা নিউজ করেছিস বলে আমার উপর হামলা চালিয়ে বেদড়ক মারধর করে। এঘটনার পর আমি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
গণমাধ্যম কর্মীকে মারধরের বিষয়ে, দৌলতপুর উপজেলার একজন প্রবীন গণমাধ্যম কর্মী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে এটি কখনই কাম্য নয়। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেওয়া উচিৎ।
এঘটনায় দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নাজমুল হুদা জানান, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
অভিযুক্ত খালিদ হাসান আর্জু
কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের ১নং প্লাটফর্মে সন্দেহজনকভাবে মো.শামীম (২২) নামের এক যুবককে আটক করে তল্লাশি চালিয়ে তার কোমরে মিললো ১ টি লোহার তৈরি পিস্তল। তাছাড়াও তার কাছ থেকে একটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ।
গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের ২নং প্লাটফর্মে এই ঘটনাটি ঘটেছে।
আটকৃত আসামী কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন থানার ভাটি ঘাগড়া এলাকার মো.আব্দুল আজিজের ছেলে মোঃ শামীম মিয়া (২২)।
রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা কিশোরগঞ্জগামী ‘এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি স্টেশনে থামলে ২নং প্লাটফর্মে শামীম নামের ওই যুবক সন্দেহজনকভাবে দীর্ঘ সময় ধরে ঘুরাঘুরি করছিলেন। এসময় বিষয়টি প্লাটফর্মে দায়িত্বে থাকা রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও রেলওয়ে পুলিশ সদস্যদের নজরে আসলে, তারা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে চ্যালেঞ্জ করেন এবং চৌকিতে নিয়ে গিয়ে তল্লাশি চালান। এসময় যুবকের কোমরে গোজা অবস্থায় একটি লোহার তৈরি পুরনো পিস্তল ও একটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ভৈরব চৌকির ইনচার্জ হাসান মাহমুদ জানান, “রাত প্রায় সাড়ে ৮টার সময় কর্তব্যরত সদস্যরা একজন যুবকের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে করেন। তাকে আটক করে তল্লাশি চালানো হলে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এরপর আইন অনুযায়ী তাকে ভৈরব রেলওয়ে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া রয়েছে বলে তিনি জানান।
চাকরিতে ১৪তম গ্রেড ও ‘টেকনিক্যাল পদমর্যাদা’ দেওয়াসহ ছয় দাবিতে নওগাঁয় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ২ঘন্টাব্যাপী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েনের ব্যানারে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এসময় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশ নওগাঁ জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক অনুপ কুমার, সদর উপজেলা শাখার সভাপতি নার্গিস আক্তার, সাধারন সম্পাদক আসমানী বানু, কোষাধ্যক্ষ রুকশানা আরাসহ স্বাস্থ্য সহকারীরা।
তাদের ৬দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর গ্রেড নিশ্চিত করা, সব স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শককে প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা, ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা সম্পন্নকারীদের স্নাতক সমমানের স্বীকৃতি দেওয়া ও বেতন স্কেল পুনর্র্র্নিধারণের সময় প্রাপ্ত টাইম স্কেল বা উচ্চতর স্কেল সংযুক্ত করা।
অবস্থান কর্মসূচিতে স্বাস্থ্য সহকারী বলেন, অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা ও সীমিত জনবল নিয়েও প্রত্যন্ত অঞ্চলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর রোগ প্রতিরোধে কাজ করেন তারা। এছাড়াও রোগ থেকে মুক্তির উপায়, নতুন রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানো এবং পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু বেতন কাঠামোয় রয়েছে চরম বৈষম্য। তাই স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবি মেনে নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশ নওগাঁ সদর উপজেলা শাখার সভাপতি নার্গিস আক্তার বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে সারাদেশে প্রায় ২৬ হাজার স্বাস্থ্য সহকারী আছেন। তারা শিশু, গর্ভবর্তী নারী ও কিশোরীদের টিকাদান এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে কাজ করেন। বিভিন্ন সময়ে টেকনিক্যাল পদমর্যাদাসহ বেতন স্কেল উন্নতির জন্য স্বাস্থ্য সহকারীরা আন্দোলন করলেও তা প্রতিশ্রুতি এবং আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
গুম সংক্রান্ত ঘটনা তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত কমিশন তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এ ধরনের ঘটনার পেছনে শুধু দেশীয় নিরাপত্তা বাহিনীই নয় বরং বিদেশি অংশীদারদের ভূমিকা এবং বাহিনীর অভ্যন্তরীণ দ্বিধা ও মতবিরোধও কাজ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের একটি অংশ গুমসহ নানা বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, যার ফলে অনেককে পেশাগত ও ব্যক্তিগতভাবে ভুগতে হয়েছে।
কমিশন বলেছে, গুম ছিল না বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার ফল, বরং এটি এমন একটি কাঠামোগত ব্যবস্থা, যেখানে আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতাও ছিল-বিশেষ করে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতার নামে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর সম্পৃক্ততা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, গুম সংক্রান্ত বিষয়ে নিরপেক্ষ মত দেওয়ার কারণে তাকে সহকর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়, নতুন পদায়নের আগেই তার সম্পর্কে সতর্ক বার্তা ছড়ানো হত, এমনকি তার পরিবারের ওপর নজরদারি চলত।
এক যুবক কমিশনকে জানান, তার ভাই একটি গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করতেন। তাকে রাজনৈতিক ‘বিরোধীদের’ তালিকা করতে বলা হয়। পরে দেখা যায়, তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে, যা জানার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তার ভাই এবং শেষ পর্যন্ত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
এক সৈনিক জানান, তাকে একটি গোপন বন্দিশিবিরে পাঠানো হয়েছিল যেখানে বন্দিদের প্রতি ছিল চরম নিষ্ঠুরতা। তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয় যেন স্বাভাবিক ব্যবহার না করা হয়, বরং বন্দিদের কষ্ট দেওয়ার নির্দেশ মেনে চলা হয়। এমনকি বন্দিদের সামনে কথা বলাও নিরুৎসাহিত করা হতো; পরিবর্তে ইশারা ও শিসের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে বলা হতো- যা অনেক ভুক্তভোগীর বর্ণনায়ও উঠে এসেছে।
তবে প্রতিবেদন জানায়, ওই সৈনিক একপর্যায়ে প্রতিরোধের ছোটখাটো চেষ্টা করতেন, যেমন নিজের খাবার বন্দিদের দিয়ে দিতেন। এক বন্দি কমিশনকে সরাসরি জানান, ওই সৈনিকের দেওয়া খাবারে তিনি বেঁচে ছিলেন।
আরেকজন র্যাব গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, তাকে একজন দীর্ঘদিনের বন্দিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা অমান্য করেন এবং ৫ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্বে থেকে তার অবস্থান ধরে রাখেন।
কমিশনের ভাষায়, ‘সবসময়ই যে অবাধ্যতার ফলাফল তাৎক্ষণিক হয়, তা নয়। কেউ কেউ তাদের অবস্থান জানানোর পরও টিকে ছিলেন।’ যেমন দুজন র্যাব সদস্য র্যাব গোয়েন্দা প্রধানকে নিজ হাতে লেখা চিঠিতে জানান যে তারা বেআইনি কোনো আদেশ পালন করবেন না।
এক চিঠিতে লেখা ছিল: ‘যদি কোনো অভিযান আইন বহির্ভূত বা আইন বহির্ভূত গুলি চালানোর উদ্দেশে হয়, তাহলে আমি তাতে অংশ নিতে পারব না।’
প্রতিবেদন জানায়, বিগত সরকারের পতনের পর এই ধরনের কয়েকটি নোট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকেও পাঠানো হয়েছিল, যা পরে গণভবন থেকে উদ্ধার হয়।
তবু কমিশনের ভাষায়, ‘এরপরও গুমের মতো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, যেখানে ট্রেনলাইন কিংবা চলন্ত যানবাহনের নিচে ফেলে লাশ গুম করা হয়েছে।’
প্রতিবেদন বলছে, ‘গুমের মতো অপরাধকে অনেকাংশে অঘোষিতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল এবং যারা এসব করেছিল, তারা প্রকৃত অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হননি।’
কমিশনের প্রতিবেদন জানায়, আন্তর্জাতিক সংযোগও এই ঘটনার পেছনে কার্যকর ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ভারতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও, আওয়ামী লীগ সরকার সন্ত্রাসবিরোধী যৌথ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পশ্চিমা সহযোগিতার সুবিধাও পেয়েছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয় একজন ভুক্তভোগী কমিশনকে জানান, তাকে ডিবির হেফাজতে দুজন আমেরিকান নাগরিক জেরা করেছিলেন। যদিও তারা সরাসরি নির্যাতনে অংশ নেয়নি, তথাপি তাদের উপস্থিতিই এই বেআইনি আটক ব্যবস্থাকে বৈধতা দেয়।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নুরুল হুদাকে আটকের সময় যেভাবে মব জাস্টিজ করা হয়েছে তা কাম্য নয় বলে জানিয়েয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে এ ধরনের ঘটনায় বাহিনীর কেউ জড়িত থাকলে তা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গতকাল সোমবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাকে হর্টিকালচার সেন্টার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘গত রোববার সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তারের যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা সঠিক নয়; তাকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। গ্রেপ্তার হয়েছেন নুরুল হুদা।’
‘তবে তাকে গ্রেপ্তারের সময় যেভাবে মব জাস্টিজ করা হয়েছে তা কাম্য নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে এ ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটেছে। এ ঘটনার তদন্ত হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কৃষি জমি দখল রোধে কৃষি জমি সুরক্ষা আইন করা হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বিদেশি ফলের পাশাপাশি দেশীয় ফলের উৎপাদন বাড়াতে হবে, যেন এসব ফল হারিয়ে না যায়।’
পরিদর্শনের সময় গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন, পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী যাবের সাদেক, কালিয়াকৈর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কাউসার আহমেদ, হর্টিকালচার সেন্টারের এনামুল হকসহ পুলিশ ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় উপদেষ্টা হর্টিকালচার সেন্টারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং নানা দিক নির্দেশনা দেন।
অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা জয় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তির জন্য নির্বাচিত নেত্রকোনার চারজন শিক্ষার্থীকে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৮০ হাজার টাকা শিক্ষা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। গত রোববার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা শেষে তাদের হাতে এই অর্থ তোলে দেন জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস।
এই চারজন মেধাবী শিক্ষার্থীরা হলেন ইংরেজি বিভাগে মো. সাজ্জাদ আলী, অর্থনীতি বিভাগে মানব তালুকদার, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে রেশমা আক্তার এবং বাংলা বিভাগে বন্যা রানী সরকার।
জানা যায়, এই চারজন মেধাবী শিক্ষার্থী নিজেদের প্রচেষ্টা ও প্রতিভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য মনোনীত হন। তবে তাদের প্রত্যেকেই আর্থিক সংকটে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়লে খবর পেয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসন।
বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে এলে জেলা পরিষদের মাধ্যমে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে শিক্ষা সহায়তা প্রদান করা হয়, যাতে তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন।
নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, ‘চারজন শিক্ষার্থী ভর্তি সহায়তার জন্য আবেদন করেছিলেন। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট কলেজের মাধ্যমে যাচাই করে দেখা যায়, তারা আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হয়।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, “এই মেধাবী শিক্ষার্থীরা নিঃসন্দেহে আমাদের জেলার সম্পদ। ভবিষ্যতে যেন কেউ আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়, সে লক্ষ্যেই জেলা প্রশাসনের সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন, যাতে মেধার বিকাশে অর্থ কখনো বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।” এছাড়াও স্থানীয়ভাবে এই পদক্ষেপকে শিক্ষাবান্ধব প্রশাসনের একটি মানবিক দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পরিবার ও অভিভাবকরাও এ সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রাম প্রতিদিন তৈরি করছে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশজুড়ে রয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্য। নগরজুড়ে উৎপন্ন এই প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের অভাবে সরাসরি নদী, খাল ও নালায় গিয়ে মিশছে। যা পরিবেশের জন্য এক ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), জার্মান সরকার এবং বাউস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণায় দেখা যায়, চট্টগ্রাম শহরে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। এর মধ্যে ১৪০ টন সরাসরি খাল ও নালার মাধ্যমে গিয়ে পড়ে কর্ণফুলী নদীতে। নদীতে জমা হওয়া এই প্লাস্টিক বর্জ্যে তৈরি হচ্ছে পলিথিন ও প্লাস্টিকের আস্তর। এর ফলে নদীর স্বাভাবিক গভীরতা দিন দিন কমে যাচ্ছে, ব্যাহত হচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে জাহাজ ও নৌযান চলাচল। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নদীর গভীরতা বাড়াতে সম্প্রতি প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করতে হয়েছে। এই ব্যয় অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যান্য প্লাস্টিকের পাশাপাশি ওয়ান টাইম প্লাস্টিক সবচেয়ে বেশি পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, প্লাস্টিক মূলত তৈরি হয় পেট্রোলিয়াম থেকে। সুতরাং পরিবেশের ওপর এর একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থেকে যায়। এছাড়া প্লাস্টিক পলিথিনের মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় যেগুলোর প্রায় প্রতিটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৪৮০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন হয়। ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পরিবেশের উপর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
চুয়েটের পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যদি শহরের বর্জ্য ঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করতে পারতাম তাহলে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ড্রেজিংয়ে খরচ হতো না। একইসঙ্গে পরিবেশ রক্ষায় আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।’ এক গবেষণায় দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীতে প্রতিদিন গড়ে ৭৮৫ টন বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য গিয়ে পড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া ওয়ান টাইম প্লাস্টিক, যা পরিবেশের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। গবেষকরা জানান, বন্দরে যেসব জাহাজ আসে সেগুলোও কম-বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি করে। এসব বর্জ্য যথাযথভাবে নিষ্কাশন না হলে তা শুধু নদী নয়, সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য এবং সামুদ্রিক পরিবেশেও মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
এসসিআইপি প্লাস্টিক প্রজেক্টের পরিচালক ড. ফারজানা রহমান জুথি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতিদিনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে করতে হবে। আর এটি করতে না পারলে নদী ও সমুদ্র উভয়ের পরিবেশই বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।’
জানা গেছে, বাংলাদেশ প্লাস্টিক দূষণের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে একটি। নদীতে প্লাস্টিক দূষণ রোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গবেষকরা। কারণ, এটি শুধু পরিবেশ নয়, জনস্বাস্থ্যের ওপরও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের এক সমীক্ষায় কর্ণফুলী নদীর ৭৯টি স্থানে দূষণের চিত্র ধরা পড়েছে। এর মধ্যে ৭৭টি স্থানে দূষণকে ভয়াবহ বলা হয়েছে। শিল্প-কারখানা, গৃহস্থালি, রাসায়নিক, কঠিন ও তরল বর্জ্য, পয়োঃবর্জ্য ও পলিথিন সরাসরি নদীতে ফেলার কারণে নদীর জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, চট্টগ্রাম শহরের ২৩টি স্থানে এবং ১৯টি খালের মাধ্যমে গৃহস্থালি ও শিল্প বর্জ্য কর্ণফুলীতে যাচ্ছে। শুধু নগরী নয়, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী ও কর্ণফুলী উপজেলা থেকেও নদীতে ব্যাপক দূষণ হচ্ছে।
বিশেষভাবে কর্ণফুলী উপজেলায় অবস্থিত দেশের শীর্ষস্থানীয় সিমেন্ট, চিনি, তেল পরিশোধন, ফিশিং কমপ্লেক্স ও অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান নদীতে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা তেলের দোকান, খোলা টয়লেট, ডায়িং মিল, সার কারখানাসহ নানা প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ড্রেন ও খালের মাধ্যমে গিয়ে মিশছে কর্ণফুলীতে। কৃষি কাজে ব্যবহৃত কীটনাশক ও রাসায়নিক সারও খালের মাধ্যমে নদীতে পৌঁছে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।ঢাকায় আয়োজিত এক সেমিনারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. এম. ফিরোজ আহমেদ জানান, দেশে বছরে প্রায় ৯, ৭৭,০০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে ওয়ান টাইম প্লাস্টিক সবচেয়ে ক্ষতিকর। তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক মূলত পেট্রোলিয়াম থেকে তৈরি হয়। এটি পরিবেশে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। এসব প্লাস্টিকের মান উন্নয়নের জন্য ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।’ তিনি আরও বলেন, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৪৮০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হচ্ছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।
মন্তব্য