চট্টগ্রাম জেলায় দিনে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার ডোজ লাগে পাঁচ থেকে সাত হাজারের মতো। সেখানে যে পরিমাণ মজুত আছে, তাতে চলবে বড়জোর পাঁচ দিন।
জেলার সিভিল সার্জন ফজলে রাব্বি জানিয়েছেন, তাদের হাতে টিকা আছে ২৭ হাজারের মতো। যা আছে তা দিয়ে বড়জোর ঈদ পর্যন্ত টিকাদান কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া যাবে।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে গণটিকা শুরু হওয়ার আগে-পরে বন্দর নগরীর জন্য টিকা পাঠানো হয় আট লাখের মতো।
জেলায় প্রথম ডোজের টিকা দেয়া হয়েছে ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৭০৭টি। টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৩ লাখ ১৬ হাজার ৩০১ জন। আরও ২৭ হাজার দ্বিতীয় ডোজ পাবেন। এরপরও টিকা পাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকবে এক লাখের বেশি মানুষ।
এদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
একই চিত্র মোটামুটি সারা দেশেরই। কোনো কোনো জায়গায় এরই মধ্যে বন্ধ রাখা হয়েছে টিকার দ্বিতীয় ডোজ। কোথাও চলবে এক দিন, দুই দিন বা তিন দিন।
কোনো কোনো জেলার চিত্র অবশ্য কিছুটা ভালো। তবে কোথাও প্রথম ডোজ যাদের দেয়া হয়েছে, তাদের সবার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে না।
যে কারণে সংকট
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত টিকা পেয়েছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে। তবে যত টিকা পাওয়ার কথা ছিল, ততগুলো আসেনি।
৩ কোটি ৪০ লাখ কেনা টিকার মধ্যে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত পেয়েছে ৭০ লাখ। বাকি টিকা আসা অনিশ্চিত পুরোপুরি। এর বাইরে আছে ভারত সরকারের উপহারের ৩৩ লাখ টিকা।
সিরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের জন্য আরও ৫০ লাখ টিকা প্রস্তুত রাখালেও সেটি পাঠাতে পারছে না ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে।
সেখানে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা এখন চার লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে সে দেশই নিজেদের চাহিদামতো টিকা দিতে পারছে না।
সিরাম তার সক্ষমতা অনুযায়ী টিকা উৎপাদন করতে পারছে না কাঁচামালের অভাবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার কাঁচামাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
গণটিকাদান শুরুর ৭৮ দিনের মাথায় প্রথম ডোজ বন্ধ হয়ে গেলেও তত দিনে প্রয়োগ করা হয় ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৬ টিকা। এদের সবার দ্বিতীয় ডোজ লাগবেই।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বলছে, প্রথম ডোজ যে কোম্পানির টিকা দেয়া হয়েছে, দ্বিতীয় ডোজের সেই পরিমাণ টিকাই লাগবে। ফলে প্রথম ডোজে যাদের সিরামের টিকা দেয়া হয়েছে, তাদের সবার টিকা নিশ্চিত করতে হলে আরও অন্তত ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৯২ ডোজ লাগবে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারত থেকে আরও ২০ লাখ টিকা আসবে বলে জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু সেটি আসেনি।
বিকল্প হিসেবে ইউরোপ ও আমেরিকায় অব্যবহৃত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা চেয়েছে বাংলাদেশ।
সিরাম উৎপাদন করছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাই। ইউরোপের বেশ কিছু দেশে প্রয়োগের পর রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা তৈরি হওয়ার পর সেসব দেশে এই টিকা আর দেয়া হয়নি।
টিকা প্রয়োগ বন্ধ দুই জেলায়
চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় রোববার টিকা বন্ধ হয়ে গেছে খাগড়াছড়িতে।
এ জেলায় প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছেন ৩০ হাজার ২৩২ জন। এদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়ে গেছে ১৭ হাজার ৮১৭ জনকে। বাকিদের কী হবে, তা জানা নেই স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের বন্ধ করে দেয়া টিকাদান কেন্দ্র। ছবি: নিউজবাংলা
টিকার মজুত তলানিতে নামার পর প্রয়োগ বন্ধ রেখেছে সুনামগঞ্জ স্বাস্থ্য প্রশাসনও।
আরও বেশ কিছু জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোথাও টিকার মজুতে চলবে দুই দিন, কোথাও চলবে চার থেকে পাঁচ দিন।
বরিশাল বিভাগে মজুত চট্টগ্রাম জেলার সমান
গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গণটিকাদান শুরুর জন্য বরিশাল বিভাগে পাঠানো হয় ৪ লাখ ২৯ হাজার ৮২৩ ডোজ। বর্তমান মজুত রয়েছে ২৭ হাজার ৯২০ ডোজ।
এর মধ্যে প্রথম ডোজের জন্য পাঠানো হয় ২ লাখ ৫০ হাজার ৩০০টি। এর সব টিকাই প্রয়োগ হয়ে গেছে।
দ্বিতীয় ডোজের জন্য পাঠানো হয় ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫২০টি। দ্বিতীয় ডোজের টিকা বাকি আছে আর ২৭ হাজার ৯২০টি।
বিভাগে দিনে গড়ে তিন হাজার টিকা লাগে বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল। এই হিসাবে এ বিভাগে ৯ দিন পর আর কোনো টিকা থাকবে না।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ঈদের ছুটির কারণে টিকা সংকটের মধ্যে পড়তে হবে না। যা মজুত রয়েছে, তা দিয়ে বেশ কিছুদিন কভার করা যাবে।
‘তবে কত দিন যাবে, সেটা অ্যাগজ্যাক্ট বলতে পারছি না। সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা বলছে। শিগগিরই আরও টিকা আসবে বলে আশা আমাদের।’
সিলেটে চলবে আর দুই দিন
সিলেট মহানগরে দুই হাজার ও গোটা জেলায় আরও প্রায় সাত হাজার ডোজ টিকা মজুত রয়েছে। এই মজুত চলবে দুই দিন।
রোববার পর্যন্ত সিলেট নগরে প্রথম ও দ্বিতীয় মিলিয়ে ৫৯ হাজার ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে।
যাদের প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে তাদের সবার দ্বিতীয় ডোজ দিতে লাগবে আরও ১৫ হাজার।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, রোববার নগরে টিকা দেয়া হয়েছে ১ হাজার ১৩৭ জনকে। এ হারে চললে দুই দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে মজুত।
তিনি বলেন, ‘রোববার টিকা কেন্দ্রে উপস্থিত সকল গ্রহীতাকে টিকা দেয়া সম্ভব হয়নি। তাই দেশে নতুন করে টিকা না আসা পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের জন্য নিবন্ধিতদের অপেক্ষায় থাকতে হবে।’
জেলার সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মণ্ডল বলেন, ‘জেলায় আরও সাত হাজার ডোজ ভ্যাকসিনের মজুত রয়েছে। তা দিয়ে ঈদের আগে পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া যাবে।’
সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন শামস উদ্দিন জানান, জেলায় ৭০০ ভায়াল টিকা মজুত রয়েছে। চাহিদার তুলনায় এই মজুত সামান্য হওয়ায় টিকা দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এক ভায়ালে টিকা থাকে ১০টি। সে হিসাবে জেলায় টিকার মজুত আছে ৭ হাজার।
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দিন মোর্শেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখনও ৪৯২ ভায়াল টিকা জমা আছে। আরও ৫ দিনের মতো টিকা দেয়া যাবে। যদি এরই মধ্যে নতুন টিকা না আসে তবে টিকাদান বন্ধ থাকবে।’
খুলনায় চলবে চার দিন
খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ফেরদৌসী আক্তার জানান, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় রোববার পর্যন্ত ৩৭ হাজার ১৩০টি টিকার মজুত আছে। আর এক দিনেই সেখানে লাগে ২০ থেকে ২৬ হাজার টিকা।
এর মধ্যে খুলনা জেলায় আছে সবচেয়ে বেশি ১৪ হাজার ৯৭০টি। এই জেলায় দিনে টিকা লাগে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার। এই হিসাবে চার থেকে বড়জোর পাঁচ দিন চলবে টিকা।
বাগেরহাটে ২ হাজার ৭৫০টি, যশোরে ২ হাজার ৯০টি, কুষ্টিয়ায় ১ হাজার ১৩০টি, মাগুরায় ২ হাজার ১৩০টি, নড়াইলে ২ হাজার ২৯০টি, সাতক্ষীরায় ২ হাজার ২৫০টি, ঝিনাইদহে ৩ হাজার ৩০টি, চুয়াডাঙ্গায় ৫ হাজার ৭৭০টি আর মেহেরপুরে ৭২০টি টিকা মজুত আছে।
এ পরিমাণ টিকায় কোনো জেলায় চলবে এক দিন, কোনো জেলায় দুই দিন বা কোনো জেলায় তিন দিন।
তুলনামূলক ভালো অবস্থানে ময়মনসিংহ
জেলার সিভিল সার্জন নজরুল ইসলাম জানান, তাদের হাতে ১৯ হাজার টিকা রয়েছে। প্রতিদিন যে হারে টিকা লাগে, তা দিয়ে ২০ মে পর্যন্ত টিকাদান কর্মসূচি চালানো সম্ভব হবে।
ময়মনসিংহ বিভাগের আরেক জেলা জামালপুরের সিভিল সার্জন প্রণয় কান্তি দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে পাঁচ হাজার ডোজের কাছাকাছি টিকা এখন মজুত আছে। ঈদ পর্যন্ত আমরা এই টিকা প্রদান করতে পারব। তারপর শেষ হয়ে যাবে।’
এ জেলাতেও যে টিকা আছে, তা নিয়ে সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া সম্ভব হবে না।
সিভিল সার্জন বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত দেবে সেভাবেই আমরা কাজ করব।’
ঠাকুরগাঁওয়ে চলবে তিন দিন
ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন মাহফুজুর রহমান জানান, গোটা জেলায় এখন টিকা আছে দুই হাজারের মতো। দিনে গড়ে ছয় থেকে সাত শ টিকা লাগে। এই হিসাবে এই জেলায় টিকা দেয়া সম্ভব আর বড়জোর তিন দিন।
আরও পড়ুন:ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে র্যাবের অভিযানে ৯৬ গ্রাম হেরোইনসহ মোস্তফা হাওলাদার নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে চুনকুটিয়া চৌধুরীপাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে র্যাব-১০।
গ্রেফতারকৃত মোস্তফা হাওলাদার (৪৫) বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম রতনপুর গ্রামের মোবারক হাওলাদারের ছেলে। এ সময় তার কাছ থেকে ৯৬ গ্রাম হেরোইন ও ৩টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
র্যাব জানায়, মোস্তফা হাওলাদার পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। সে দীর্ঘদিন ধরে হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে আসছিল।
আটককৃত আসামির বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন।
জেলার সদর উপজেলায় যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহ কাজল (৩৫) এবং আবির আহম্মেদ (২৭) নামে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে সদর উপজেলার বৈখর এলাকা থেকে দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহ তাদের গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত কাজল সদর উপজেলার বৈখর গ্রামের আবু তালেব শিকদারের পুত্র এবং আবির আহম্মেদ নয়াকান্দি গ্রামের শাহীন মাঝির পুত্র।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম সাইফুল আলম জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৭ টায় সদর উপজেলার বৈখর এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় অবৈধ মাদক ক্রয় বিক্রির সাথে জড়িত কাজল এবং আবির আহম্মেদকে ১৭টি দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে। মাদক ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সময় তারা এসব ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করতো।
তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে সদর থানায় মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত কাজলের নামে মাদক আইনে আগে থেকেই মামলা আছে।
শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা ৪ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি কর্মচারীরা। আগামী ১ থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত এ ছুটি পাবেন তারা।
২০২৫ সালের সরকারি ছুটির তালিকা অনুযায়ী, দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ১ অক্টোবর (বুধবার) নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি। আর ২ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে সাধারণ ছুটি।
পরের দুদিন ৩ ও ৪ অক্টোবর (শুক্র ও শনিবার) সাপ্তাহিক ছুটি। সবমিলিয়ে ১ থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে সরকারি কর্মচারীদের।
উল্লেখ্য, সাধারণত সরকারি কর্মচারীদের ঈদে তিন দিন করে ও দুর্গাপূজায় একদিন ছুটি থাকে। তবে কোনো কোনো বছর নির্বাহী আদেশে তা বাড়ানো হয়েছিল।
তবে ২০২৫ সালের দুই ঈদ মিলিয়ে মোট ১১ দিন ছুটি এবং শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটি দুই দিন অনুমোদন করে উপদেষ্টা পরিষদ। গত বছরের ১৭ অক্টোবর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী ছুটির তালিকা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
গত ১১ বছরে দেশে সড়কে ৬২ হাজার ৬১৯টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৮৬ হাজার ৬৯০ জন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৫৭ জন।
গতকাল শনিবার যাত্রী অধিকার দিবস উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত ‘যাত্রী অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক অঙ্গীকার চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ তথ্য তুলে ধরেন।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, শুধু ঢাকায় প্রতিদিন যানজটে নষ্ট হচ্ছে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা। বার্ষিক অর্থনৈতিক ক্ষতি ৯৮ হাজার কোটি টাকা, জ্বালানি অপচয় ১১ হাজার কোটি টাকা, আর যানজটের কারণে সংসার ভাঙার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
তাই সড়কে প্রতি বছর হাজারও প্রাণহানি রোধ ও ভয়াবহ যানজট নিরসনে নির্বাচনী ইশতেহারে উন্নত গণপরিবহন অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, গত এক দশকের বেশি সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা, যানজট ও দূষণে দেশের অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও সামাজিক কাঠামো মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়েছে। কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পরিবহন খাতে দুর্নীতি ও ভুল নীতির কারণে পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, গত ১১ বছরে দেশে সড়কে ৬২ হাজার ৬১৯টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৮৬ হাজার ৬৯০ জন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৫৭ জন। শুধু ঢাকায় প্রতিদিন যানজটে নষ্ট হচ্ছে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা। বার্ষিক অর্থনৈতিক ক্ষতি ৯৮ হাজার কোটি টাকা, জ্বালানি অপচয় ১১ হাজার কোটি টাকা, আর যানজটের কারণে সংসার ভাঙার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির এই মহাসচিব বলেন, দীর্ঘ যানজট শুধু সময় ও অর্থনৈতিক ক্ষতিই করছে না; নাগরিকদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতাও বিপন্ন করছে। এতে উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ নানা রোগ বাড়ছে। একই সঙ্গে উদ্বেগ, খিটখিটে মেজাজ ও পারিবারিক অশান্তি দেখা দিচ্ছে। শিশুদের বুদ্ধির বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে এবং টিনএজদের বিপথগামিতার অন্যতম কারণও যানজট ও বেকারত্ব।
দেশের অধিকাংশ চালকের লাইসেন্স নেই জানিয়ে আলোচনা সভায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি শরিফ রফিকুজ্জামান বলেন, লাইসেন্সহীন ও মাদকাসক্ত চালকরা যাতে গাড়ি চালাতে না পারেন, সে বিষয়ে সরকারকে কঠোর হতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো সোজা করে সড়ক সংস্কার না করলে দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে না।
রফিকুজ্জামান আরও বলেন, বাসভাড়ার সঙ্গে যাত্রীদের কাছ থেকে ইন্স্যুরেন্সের টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীরা কোনোদিন এই সুবিধা পান না। ক্ষতিগ্রস্তদের পাওনা আদায়ে যাত্রীসাধারণকে আরও সচেতন হতে হবে।
গণঅধিকারের মুখপাত্র ফারুক খান বলেন, তারা চান, যাত্রী কল্যাণ সমিতি শক্তিশালী হয়ে সব সিদ্ধান্ত প্রণয়নে অংশগ্রহণ করবে, যাতে তাদের দাবি বাস্তবায়িত হয়। কোনো দল বা সরকারের বিরুদ্ধে নয়, জনগণের পক্ষের কথা তারা বলতে চান। তাদের লক্ষ্য হলো- যাত্রীদের অধিকার সুরক্ষিত রাখা, সৎ ও ন্যায়সংগতভাবে দাবি পূরণ করা।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক মেজর (অব.) আবদুল ওহাব মিনার, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক রয়, যাত্রীকল্যাণ সমিতির অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।
শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেকার। প্রতি তিনজন বেকারের একজন স্নাতক ডিগ্রিধারী। আর দুই বছরের বেশি বেকার এমন তরুণ-তরুণীদের মধ্যে স্নাতক ডিগ্রিধারী সবচেয়ে বেশি।
সম্প্রতি বাংলাদেশ শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৪–এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সেখানে শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি এবং বেশ সময় ধরে বেকার থাকার প্রবণতা দেখা গেছে।
দেশে বিপুলসংখ্যক শিক্ষিত তরুণ-তরুণী বেকার বসে আছেন। তারা একেবারে চাকরি পাচ্ছেন না কিংবা পছন্দমতো চাকরি পাচ্ছেন না। মেস করে থাকেন, মানবেতর জীবনযাপন করেন, আর একটি সম্মানজনক চাকরির জন্য দিন গোনেন। মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত বেকারদের মধ্যে যারা পরিবারের সঙ্গে থাকেন, নানা টানাপোড়েন তাদের অসহায় করে তোলে, মানসিক চাপে থাকেন সবসময়।
গত বছর শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেওয়ার পর শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। মূলত চাকরি পাওয়া নিয়ে হতাশা থেকেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ওই আন্দোলন গড়ে তোলেন।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, দেশের চলমান সংস্কার আলোচনায় রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংস্কারকেও প্রাধান্য দেওয়া উচিত। বিশেষ তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানে কী কী করা উচিত, আলোচনায় থাকা দরকার।
প্রতি ৩ জনে ১ জন বেকার উচ্চশিক্ষিত
বিবিএসের শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে, বাংলাদেশে এখন বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ২৪ হাজার। এর মধ্যে স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকারের সংখ্যা ৮ লাখ ৮৫ হাজার।
সার্বিকভাবে কয়েক বছর ধরে দেশে বেকারের মোট সংখ্যা প্রায় অপরিবর্তিত। কিন্তু খারাপ খবর হলো, সাম্প্রতিক কয়েক বছরে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। দেশে এখন প্রতি তিনজন বেকারের মধ্য একজন উচ্চশিক্ষিত। তারা বিএ কিংবা এমএ ডিগ্রি নিয়েও শোভন চাকরি পাচ্ছেন না।
২০১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে, ওই বছর চার লাখের মতো স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকার ছিলেন। আট বছর পর এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ লাখ। এর মানে আট বছরের ব্যবধানে উচ্চশিক্ষিত বেকার দ্বিগুণের বেশি হয়েছে।
উচ্চশিক্ষিত তরুণেরা বেশি দিন বেকার থাকেন
১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে বেকারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই বয়সসীমার মধ্যে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে ২ বছরের বেশি সময় ধরে বেকার থাকেন ১৭ শতাংশের বেশি তরুণ বেকার। এই হার অন্য ডিগ্রিধারীর চেয়ে বেশি। উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ২ বছরের বেশি সময় বেকার থাকেন ৮ শতাংশের বেশি বেকার। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই এমন তরুণদের মধ্যে বেকারের হার ১ শতাংশের মতো।
ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে অবস্থিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (কেবি) কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. আতাউর রহমান আমরণ অনশন শুরু করেছেন। তার এই পদক্ষেপে সংহতি জানিয়ে কলেজের অন্যান্য শিক্ষকরা আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। শনিবার কলেজ প্রাঙ্গণে অনশন করেন।
সরেজমিনে জানা গেছে, কেবি কলেজে বোমা হামলার হুমকি, শিক্ষকদের শারীরিক নির্যাতনের ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নানা ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে তারা এই আমরণ অনশন কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক বি. এম. আব্দুল্লাহ রনি জানান, দুপুর ১২টার দিকে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে অধ্যক্ষ ঘোষণা দেন, কলেজ ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে চলমান হুমকি এবং বহিরাগতদের অনুপ্রবেশের প্রতিবাদে তিনি আমরণ অনশনে বসবেন। তখন অন্যান্য শিক্ষকরা একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হলে আমরা অনশন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেব।’
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় দিনদুপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় নগদ ৬০ হাজার ৬০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত যুবকের নাম আরকান চৌধুরী (২৫)। তিনি কাঞ্চনা ইউনিয়নের মনুফকিরহাট জাফর চৌধুরীবাড়ি এলাকার মো. জাকির হোসেনের ছেলে। গত শুক্রবার রাতে উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের মনুফকিরহাট জাফর চৌধুরীবাড়ি এলাকায় এ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
থানার ওসি জাহেদুল ইসলাম জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আরকান চৌধুরী ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। শনিবার তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে কাঞ্চনা মনুফকিরহাট হাটের জলদাশপাড়া ব্রিজের ওপর গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা অভি চৌধুরীর কাছ থেকে নগদ ৩ লাখ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন ছিনতাইকারীরা। অভি কাঞ্চনা শাখার কেন্দ্র ব্যবস্থাপক। পরে এ ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয়ে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন ব্যাংক কর্মকর্তা।
মন্তব্য