চট্টগ্রাম জেলায় দিনে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার ডোজ লাগে পাঁচ থেকে সাত হাজারের মতো। সেখানে যে পরিমাণ মজুত আছে, তাতে চলবে বড়জোর পাঁচ দিন।
জেলার সিভিল সার্জন ফজলে রাব্বি জানিয়েছেন, তাদের হাতে টিকা আছে ২৭ হাজারের মতো। যা আছে তা দিয়ে বড়জোর ঈদ পর্যন্ত টিকাদান কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া যাবে।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে গণটিকা শুরু হওয়ার আগে-পরে বন্দর নগরীর জন্য টিকা পাঠানো হয় আট লাখের মতো।
জেলায় প্রথম ডোজের টিকা দেয়া হয়েছে ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৭০৭টি। টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৩ লাখ ১৬ হাজার ৩০১ জন। আরও ২৭ হাজার দ্বিতীয় ডোজ পাবেন। এরপরও টিকা পাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকবে এক লাখের বেশি মানুষ।
এদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
একই চিত্র মোটামুটি সারা দেশেরই। কোনো কোনো জায়গায় এরই মধ্যে বন্ধ রাখা হয়েছে টিকার দ্বিতীয় ডোজ। কোথাও চলবে এক দিন, দুই দিন বা তিন দিন।
কোনো কোনো জেলার চিত্র অবশ্য কিছুটা ভালো। তবে কোথাও প্রথম ডোজ যাদের দেয়া হয়েছে, তাদের সবার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে না।
যে কারণে সংকট
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত টিকা পেয়েছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে। তবে যত টিকা পাওয়ার কথা ছিল, ততগুলো আসেনি।
৩ কোটি ৪০ লাখ কেনা টিকার মধ্যে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত পেয়েছে ৭০ লাখ। বাকি টিকা আসা অনিশ্চিত পুরোপুরি। এর বাইরে আছে ভারত সরকারের উপহারের ৩৩ লাখ টিকা।
সিরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের জন্য আরও ৫০ লাখ টিকা প্রস্তুত রাখালেও সেটি পাঠাতে পারছে না ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে।
সেখানে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা এখন চার লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে সে দেশই নিজেদের চাহিদামতো টিকা দিতে পারছে না।
সিরাম তার সক্ষমতা অনুযায়ী টিকা উৎপাদন করতে পারছে না কাঁচামালের অভাবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার কাঁচামাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
গণটিকাদান শুরুর ৭৮ দিনের মাথায় প্রথম ডোজ বন্ধ হয়ে গেলেও তত দিনে প্রয়োগ করা হয় ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৬ টিকা। এদের সবার দ্বিতীয় ডোজ লাগবেই।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বলছে, প্রথম ডোজ যে কোম্পানির টিকা দেয়া হয়েছে, দ্বিতীয় ডোজের সেই পরিমাণ টিকাই লাগবে। ফলে প্রথম ডোজে যাদের সিরামের টিকা দেয়া হয়েছে, তাদের সবার টিকা নিশ্চিত করতে হলে আরও অন্তত ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৯২ ডোজ লাগবে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারত থেকে আরও ২০ লাখ টিকা আসবে বলে জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু সেটি আসেনি।
বিকল্প হিসেবে ইউরোপ ও আমেরিকায় অব্যবহৃত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা চেয়েছে বাংলাদেশ।
সিরাম উৎপাদন করছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাই। ইউরোপের বেশ কিছু দেশে প্রয়োগের পর রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা তৈরি হওয়ার পর সেসব দেশে এই টিকা আর দেয়া হয়নি।
টিকা প্রয়োগ বন্ধ দুই জেলায়
চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় রোববার টিকা বন্ধ হয়ে গেছে খাগড়াছড়িতে।
এ জেলায় প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছেন ৩০ হাজার ২৩২ জন। এদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়ে গেছে ১৭ হাজার ৮১৭ জনকে। বাকিদের কী হবে, তা জানা নেই স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের বন্ধ করে দেয়া টিকাদান কেন্দ্র। ছবি: নিউজবাংলা
টিকার মজুত তলানিতে নামার পর প্রয়োগ বন্ধ রেখেছে সুনামগঞ্জ স্বাস্থ্য প্রশাসনও।
আরও বেশ কিছু জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোথাও টিকার মজুতে চলবে দুই দিন, কোথাও চলবে চার থেকে পাঁচ দিন।
বরিশাল বিভাগে মজুত চট্টগ্রাম জেলার সমান
গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গণটিকাদান শুরুর জন্য বরিশাল বিভাগে পাঠানো হয় ৪ লাখ ২৯ হাজার ৮২৩ ডোজ। বর্তমান মজুত রয়েছে ২৭ হাজার ৯২০ ডোজ।
এর মধ্যে প্রথম ডোজের জন্য পাঠানো হয় ২ লাখ ৫০ হাজার ৩০০টি। এর সব টিকাই প্রয়োগ হয়ে গেছে।
দ্বিতীয় ডোজের জন্য পাঠানো হয় ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫২০টি। দ্বিতীয় ডোজের টিকা বাকি আছে আর ২৭ হাজার ৯২০টি।
বিভাগে দিনে গড়ে তিন হাজার টিকা লাগে বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল। এই হিসাবে এ বিভাগে ৯ দিন পর আর কোনো টিকা থাকবে না।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ঈদের ছুটির কারণে টিকা সংকটের মধ্যে পড়তে হবে না। যা মজুত রয়েছে, তা দিয়ে বেশ কিছুদিন কভার করা যাবে।
‘তবে কত দিন যাবে, সেটা অ্যাগজ্যাক্ট বলতে পারছি না। সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা বলছে। শিগগিরই আরও টিকা আসবে বলে আশা আমাদের।’
সিলেটে চলবে আর দুই দিন
সিলেট মহানগরে দুই হাজার ও গোটা জেলায় আরও প্রায় সাত হাজার ডোজ টিকা মজুত রয়েছে। এই মজুত চলবে দুই দিন।
রোববার পর্যন্ত সিলেট নগরে প্রথম ও দ্বিতীয় মিলিয়ে ৫৯ হাজার ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে।
যাদের প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে তাদের সবার দ্বিতীয় ডোজ দিতে লাগবে আরও ১৫ হাজার।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, রোববার নগরে টিকা দেয়া হয়েছে ১ হাজার ১৩৭ জনকে। এ হারে চললে দুই দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে মজুত।
তিনি বলেন, ‘রোববার টিকা কেন্দ্রে উপস্থিত সকল গ্রহীতাকে টিকা দেয়া সম্ভব হয়নি। তাই দেশে নতুন করে টিকা না আসা পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের জন্য নিবন্ধিতদের অপেক্ষায় থাকতে হবে।’
জেলার সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মণ্ডল বলেন, ‘জেলায় আরও সাত হাজার ডোজ ভ্যাকসিনের মজুত রয়েছে। তা দিয়ে ঈদের আগে পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া যাবে।’
সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন শামস উদ্দিন জানান, জেলায় ৭০০ ভায়াল টিকা মজুত রয়েছে। চাহিদার তুলনায় এই মজুত সামান্য হওয়ায় টিকা দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এক ভায়ালে টিকা থাকে ১০টি। সে হিসাবে জেলায় টিকার মজুত আছে ৭ হাজার।
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দিন মোর্শেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখনও ৪৯২ ভায়াল টিকা জমা আছে। আরও ৫ দিনের মতো টিকা দেয়া যাবে। যদি এরই মধ্যে নতুন টিকা না আসে তবে টিকাদান বন্ধ থাকবে।’
খুলনায় চলবে চার দিন
খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ফেরদৌসী আক্তার জানান, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় রোববার পর্যন্ত ৩৭ হাজার ১৩০টি টিকার মজুত আছে। আর এক দিনেই সেখানে লাগে ২০ থেকে ২৬ হাজার টিকা।
এর মধ্যে খুলনা জেলায় আছে সবচেয়ে বেশি ১৪ হাজার ৯৭০টি। এই জেলায় দিনে টিকা লাগে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার। এই হিসাবে চার থেকে বড়জোর পাঁচ দিন চলবে টিকা।
বাগেরহাটে ২ হাজার ৭৫০টি, যশোরে ২ হাজার ৯০টি, কুষ্টিয়ায় ১ হাজার ১৩০টি, মাগুরায় ২ হাজার ১৩০টি, নড়াইলে ২ হাজার ২৯০টি, সাতক্ষীরায় ২ হাজার ২৫০টি, ঝিনাইদহে ৩ হাজার ৩০টি, চুয়াডাঙ্গায় ৫ হাজার ৭৭০টি আর মেহেরপুরে ৭২০টি টিকা মজুত আছে।
এ পরিমাণ টিকায় কোনো জেলায় চলবে এক দিন, কোনো জেলায় দুই দিন বা কোনো জেলায় তিন দিন।
তুলনামূলক ভালো অবস্থানে ময়মনসিংহ
জেলার সিভিল সার্জন নজরুল ইসলাম জানান, তাদের হাতে ১৯ হাজার টিকা রয়েছে। প্রতিদিন যে হারে টিকা লাগে, তা দিয়ে ২০ মে পর্যন্ত টিকাদান কর্মসূচি চালানো সম্ভব হবে।
ময়মনসিংহ বিভাগের আরেক জেলা জামালপুরের সিভিল সার্জন প্রণয় কান্তি দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে পাঁচ হাজার ডোজের কাছাকাছি টিকা এখন মজুত আছে। ঈদ পর্যন্ত আমরা এই টিকা প্রদান করতে পারব। তারপর শেষ হয়ে যাবে।’
এ জেলাতেও যে টিকা আছে, তা নিয়ে সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া সম্ভব হবে না।
সিভিল সার্জন বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত দেবে সেভাবেই আমরা কাজ করব।’
ঠাকুরগাঁওয়ে চলবে তিন দিন
ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন মাহফুজুর রহমান জানান, গোটা জেলায় এখন টিকা আছে দুই হাজারের মতো। দিনে গড়ে ছয় থেকে সাত শ টিকা লাগে। এই হিসাবে এই জেলায় টিকা দেয়া সম্ভব আর বড়জোর তিন দিন।
আরও পড়ুন:র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, মব ভায়োলেন্স বা মব সন্ত্রাস করে এ দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে না। অপরাধী যেই হোক বা যে দলেরই হোক, আমরা তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করব।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ঘটে যাওয়া ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রগতিসহ আরও কয়েকটি ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেন র্যাবের ডিজি। ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘র্যাব এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো ধরনের অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের বিষয়ে তৎপর রয়েছে। দেশে বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তাদের যেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, সে ব্যাপারে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির অপরাধে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন অপরাধীকে র্যাব আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।’
‘গত ২ জুলাই লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় সন্ত্রাসী কর্তৃক মব সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের আহত করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়াও গত ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় একই পরিবারের মা ও দুই সন্তানের ওপর মব ভায়োলেন্সের অযাচিত ঘটনায় ৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সলিমুল্লাহ মেডিকেলের সামনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহারনামীয় ৪ নম্বর আসামি আলমগীর (২৮) এবং ৫ নম্বর আসামি মনির ওরফে লম্বা মনিরকে (৩২) আমরা গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’
‘এ ঘটনায় আমরা ছায়া তদন্ত করছি, আর পুরো বিষয়টি দেখছে ডিএমপির তদন্ত বিভাগ।’
র্যাবের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে (৩৯) নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনাকে খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর পুরান ঢাকার মিল ব্যারাকে পুলিশের বিশেষ কল্যাণ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ব্যবসায়ী হত্যা ও মব সহিংসতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র বলেন, ‘ঢাকায় যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে, সেটা খুবই দুঃখজনক। এ ঘটনায় এরই মধ্যে পাঁচজনকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। গতকালও র্যাব দুজন ও ডিএমপি দুজনকে ধরেছে। পরে আরও একজনকে ধরা হয়েছে।’
বাকিদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সতর্ক অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মোটামুটি অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছি। ছোটখাট ঘটনায়ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ি। এই জিনিসটা বন্ধ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এর আগে চাঁদপুরে, খুলনা ও চট্টগ্রামের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যেগুলো হচ্ছে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
পুলিশের মিল ব্যারাক এলাকা পরিদর্শন নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে পরিদর্শনের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের সঙ্গে একটু কথা বলা। তাদের থাকা ও খাবারের মান দেখা। আগামী নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনে তাদের একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব এখানে।’
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে চাই বলেও এ সময় মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কবে হবে, সেটা আমরা জানি না। সেটা জানাবে নির্বাচন কমিশন।’
অভিযানে গৌরবময় অবদান রাখায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের টাগবোট ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর ক্রুদের ‘প্রশংসাপত্র’ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও)।
শনিবার সকালে কোস্টগার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ বাসস’কে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থানকালে গত বছর ৫ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন তেলবাহী জাহাজ ‘এমটি বাংলার সৌরভ’-এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দ্রুত ও কার্যকর অগ্নিনির্বাপণ এবং সামুদ্রিক পরিবেশগত বিপর্যয় রোধে ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ অসাধারণ ভূমিকা রাখে।
ঘটনার সময় ট্যাংকারটিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র ও পরিবেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তৎক্ষণাৎ জরুরি উদ্ধার অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড।
‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর সাহসী নাবিকরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সফল অভিযান পরিচালনা করেন। সেই অভিযানে ৪৮ জন নাবিককে উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি তেল ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কার্যকর ব্যারিয়ার স্থাপন ও বর্জ্য সংগ্রহের মাধ্যমে গভীর সমুদ্রে দূষণরোধ করা হয়।
এই দৃষ্টান্তমূলক ও সাহসিকতাপূর্ণ অভিযানের জন্য আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর ক্রুদের ‘লেটার অব কমান্ডেশন' দিয়েছে।
আইএমও এই অভিযানে প্রদর্শিত পেশাদারিত্ব, দক্ষতা, পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তা নীতিমালা অনুসরণের বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আইএমও’র এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দেশের জন্য বড় অর্জন। এটি শুধু কোস্টগার্ড নয়, পুরো দেশের জন্যই গর্বের। এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে, কোস্টগার্ড একটি আধুনিক ও দক্ষ বাহিনী হিসেবে যেকোন দুর্যোগে সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সর্বদা সমুদ্রসীমায় নিরাপত্তা বিধান, বিপদগ্রস্তদের উদ্ধার, সমুদ্র দূষণ প্রতিরোধ ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভবিষ্যতেও বাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর থাকবে।
টানা চার দিনের মুষলধারে বৃষ্টিপাতের পর টানা দুদিন নোয়াখালীতে রোদ্রৌউজ্জ্বল আবহাওয়া বিরাজ করছে। এতে অধিকাংশ উপজেলায় জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর, দুর্গাপুর ও লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামে পানি বেড়েছে। স্থানীয়দের ধারণা ফেনীর পানি ঢুকে বৃষ্টি না থাকলে এ অঞ্চলে পানি বেড়েছে।
শনিবার (১১ জুলাই) সকালে জেলার সদর, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দারা জানায় তাদের এলাকায় পানি নামছে ধীর গতিতে। এজন্য বেশিরভাগ এলাকায় এখনো বন্যার পানি জমে থাকায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ছয়টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এতে ৪৬ হাজার ৭০টি পরিবারের প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৫০৩ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলায় আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৫টি বসতঘর। সুবর্ণচরে একটি বসতঘর সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ,পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব এবং পানি নিষ্কাশনের নালা ও জলাশয় গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় শহরবাসীর এ দুর্ভোগ। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন অনেকে। হালকা বৃষ্টিতেই নোয়াখালী পৌরসভা এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এদিকে মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুর, সেন্ট্রাল রোড, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এখনো রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে রয়েছে। আশপাশের অনেক বাসাবাড়িতেও পানি জমে রয়েছে। টানা বৃষ্টির বিরতিতে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেলেও জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে তেমন কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। আপাতত ভারী বৃষ্টিরও সম্ভাবনা নেই। তবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।
জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, পাঁচটি উপজেলায় ৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ১ হাজার ৮৫০ জন মানুষ এবং ১৭১টি গবাদি পশু। দুর্গতদের চিকিৎসায় ৫১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৯টি কাজ শুরু করেছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, পানি নিষ্কাশনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনে দ্রুততম সময়ে বিচার শেষ করা হবে।
উপদেষ্টা শনিবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৫ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
তিনি আরো বলেন, এই পাশবিক হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে এবং ধারা ১০-এর অধীনে দ্রুততম সময়ে বিচার নিশ্চিত করা হবে।
গত বুধবার রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯)। হত্যার আগে তাকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও ইট-পাথরের আঘাতে মাথা ও শরীর থেঁতলে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ, মামলার এজাহার, নিহতের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে হত্যাকাণ্ডের এমন বর্ণনা উঠে এসেছে।
মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনের ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ চাঁদাবাজি। নিহত লাল চাঁদ একসময় যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
এদিকে, অভিযুক্ত নেতা-কর্মীদের দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি। পাশাপাশি ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আসকর আলী (২৪) নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার (১২ জুলাই) ভোরে উপজেলার মিনাপুর সীমান্তের ৩৫৩ নম্বর প্রধান পিলারের কাছে ভারতের অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আসকর আলী হরিপুর উপজেলার জীবনপুর গ্রামের কানুরার ছেলে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয় সূত্র ও বিজিবি জানায়, শনিবার ভোর আনুমানিক চারটার দিকে আসকর আলীসহ কয়েকজন মিনাপুর সীমান্তের ৩৫৩ নম্বর প্রধান পিলার সংলগ্ন এলাকা দিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে যান। এ সময় ভারতের কিষাণগঞ্জ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে আসকর আলী ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তার মরদেহ ভারতের প্রায় ২০০ গজ অভ্যন্তরে পড়ে আছে বলে জানা গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অপরদিকে, ভারতের সীমান্তেও অতিরিক্ত বিএসএফ সদস্য মোতায়েন রয়েছে বলে জানা গেছে।
দিনাজপুর ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেছে। নিহত যুবকের লাশ ফেরত আনার জন্য বিএসএফকে পতাকা বৈঠকে বসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
৪২ বিজিবি জানিয়েছে, "আমরা বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লাশটি ফেরত আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন শুক্রবার এ সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি।
ডব্লিউএইচও’র এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার বলেছে, আমরা এটিকে জবাবদিহিতার পথে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম শনিবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে সরকারের এই বক্তব্য তুলে ধরেন।
সায়মা ওয়াজেদকে পদ থেকে অপসারণ প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এর একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন, যেখানে সায়মা ওয়াজেদকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হবে, তার সকল সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হবে এবং এই মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্বের সততা ও জাতিসংঘ ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্ববাসী স্বচ্ছতা, সততা ও ন্যায়বিচারের আবির্ভাবে আনন্দিত।
মন্তব্য