চট্টগ্রাম জেলায় দিনে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার ডোজ লাগে পাঁচ থেকে সাত হাজারের মতো। সেখানে যে পরিমাণ মজুত আছে, তাতে চলবে বড়জোর পাঁচ দিন।
জেলার সিভিল সার্জন ফজলে রাব্বি জানিয়েছেন, তাদের হাতে টিকা আছে ২৭ হাজারের মতো। যা আছে তা দিয়ে বড়জোর ঈদ পর্যন্ত টিকাদান কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া যাবে।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে গণটিকা শুরু হওয়ার আগে-পরে বন্দর নগরীর জন্য টিকা পাঠানো হয় আট লাখের মতো।
জেলায় প্রথম ডোজের টিকা দেয়া হয়েছে ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৭০৭টি। টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৩ লাখ ১৬ হাজার ৩০১ জন। আরও ২৭ হাজার দ্বিতীয় ডোজ পাবেন। এরপরও টিকা পাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকবে এক লাখের বেশি মানুষ।
এদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
একই চিত্র মোটামুটি সারা দেশেরই। কোনো কোনো জায়গায় এরই মধ্যে বন্ধ রাখা হয়েছে টিকার দ্বিতীয় ডোজ। কোথাও চলবে এক দিন, দুই দিন বা তিন দিন।
কোনো কোনো জেলার চিত্র অবশ্য কিছুটা ভালো। তবে কোথাও প্রথম ডোজ যাদের দেয়া হয়েছে, তাদের সবার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে না।
যে কারণে সংকট
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত টিকা পেয়েছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে। তবে যত টিকা পাওয়ার কথা ছিল, ততগুলো আসেনি।
৩ কোটি ৪০ লাখ কেনা টিকার মধ্যে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত পেয়েছে ৭০ লাখ। বাকি টিকা আসা অনিশ্চিত পুরোপুরি। এর বাইরে আছে ভারত সরকারের উপহারের ৩৩ লাখ টিকা।
সিরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের জন্য আরও ৫০ লাখ টিকা প্রস্তুত রাখালেও সেটি পাঠাতে পারছে না ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে।
সেখানে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা এখন চার লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে সে দেশই নিজেদের চাহিদামতো টিকা দিতে পারছে না।
সিরাম তার সক্ষমতা অনুযায়ী টিকা উৎপাদন করতে পারছে না কাঁচামালের অভাবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার কাঁচামাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
গণটিকাদান শুরুর ৭৮ দিনের মাথায় প্রথম ডোজ বন্ধ হয়ে গেলেও তত দিনে প্রয়োগ করা হয় ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৬ টিকা। এদের সবার দ্বিতীয় ডোজ লাগবেই।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বলছে, প্রথম ডোজ যে কোম্পানির টিকা দেয়া হয়েছে, দ্বিতীয় ডোজের সেই পরিমাণ টিকাই লাগবে। ফলে প্রথম ডোজে যাদের সিরামের টিকা দেয়া হয়েছে, তাদের সবার টিকা নিশ্চিত করতে হলে আরও অন্তত ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৯২ ডোজ লাগবে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারত থেকে আরও ২০ লাখ টিকা আসবে বলে জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু সেটি আসেনি।
বিকল্প হিসেবে ইউরোপ ও আমেরিকায় অব্যবহৃত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা চেয়েছে বাংলাদেশ।
সিরাম উৎপাদন করছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাই। ইউরোপের বেশ কিছু দেশে প্রয়োগের পর রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা তৈরি হওয়ার পর সেসব দেশে এই টিকা আর দেয়া হয়নি।
টিকা প্রয়োগ বন্ধ দুই জেলায়
চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় রোববার টিকা বন্ধ হয়ে গেছে খাগড়াছড়িতে।
এ জেলায় প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছেন ৩০ হাজার ২৩২ জন। এদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়ে গেছে ১৭ হাজার ৮১৭ জনকে। বাকিদের কী হবে, তা জানা নেই স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের বন্ধ করে দেয়া টিকাদান কেন্দ্র। ছবি: নিউজবাংলা
টিকার মজুত তলানিতে নামার পর প্রয়োগ বন্ধ রেখেছে সুনামগঞ্জ স্বাস্থ্য প্রশাসনও।
আরও বেশ কিছু জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোথাও টিকার মজুতে চলবে দুই দিন, কোথাও চলবে চার থেকে পাঁচ দিন।
বরিশাল বিভাগে মজুত চট্টগ্রাম জেলার সমান
গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গণটিকাদান শুরুর জন্য বরিশাল বিভাগে পাঠানো হয় ৪ লাখ ২৯ হাজার ৮২৩ ডোজ। বর্তমান মজুত রয়েছে ২৭ হাজার ৯২০ ডোজ।
এর মধ্যে প্রথম ডোজের জন্য পাঠানো হয় ২ লাখ ৫০ হাজার ৩০০টি। এর সব টিকাই প্রয়োগ হয়ে গেছে।
দ্বিতীয় ডোজের জন্য পাঠানো হয় ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫২০টি। দ্বিতীয় ডোজের টিকা বাকি আছে আর ২৭ হাজার ৯২০টি।
বিভাগে দিনে গড়ে তিন হাজার টিকা লাগে বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল। এই হিসাবে এ বিভাগে ৯ দিন পর আর কোনো টিকা থাকবে না।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ঈদের ছুটির কারণে টিকা সংকটের মধ্যে পড়তে হবে না। যা মজুত রয়েছে, তা দিয়ে বেশ কিছুদিন কভার করা যাবে।
‘তবে কত দিন যাবে, সেটা অ্যাগজ্যাক্ট বলতে পারছি না। সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা বলছে। শিগগিরই আরও টিকা আসবে বলে আশা আমাদের।’
সিলেটে চলবে আর দুই দিন
সিলেট মহানগরে দুই হাজার ও গোটা জেলায় আরও প্রায় সাত হাজার ডোজ টিকা মজুত রয়েছে। এই মজুত চলবে দুই দিন।
রোববার পর্যন্ত সিলেট নগরে প্রথম ও দ্বিতীয় মিলিয়ে ৫৯ হাজার ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে।
যাদের প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে তাদের সবার দ্বিতীয় ডোজ দিতে লাগবে আরও ১৫ হাজার।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, রোববার নগরে টিকা দেয়া হয়েছে ১ হাজার ১৩৭ জনকে। এ হারে চললে দুই দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে মজুত।
তিনি বলেন, ‘রোববার টিকা কেন্দ্রে উপস্থিত সকল গ্রহীতাকে টিকা দেয়া সম্ভব হয়নি। তাই দেশে নতুন করে টিকা না আসা পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের জন্য নিবন্ধিতদের অপেক্ষায় থাকতে হবে।’
জেলার সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মণ্ডল বলেন, ‘জেলায় আরও সাত হাজার ডোজ ভ্যাকসিনের মজুত রয়েছে। তা দিয়ে ঈদের আগে পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া যাবে।’
সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন শামস উদ্দিন জানান, জেলায় ৭০০ ভায়াল টিকা মজুত রয়েছে। চাহিদার তুলনায় এই মজুত সামান্য হওয়ায় টিকা দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এক ভায়ালে টিকা থাকে ১০টি। সে হিসাবে জেলায় টিকার মজুত আছে ৭ হাজার।
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দিন মোর্শেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখনও ৪৯২ ভায়াল টিকা জমা আছে। আরও ৫ দিনের মতো টিকা দেয়া যাবে। যদি এরই মধ্যে নতুন টিকা না আসে তবে টিকাদান বন্ধ থাকবে।’
খুলনায় চলবে চার দিন
খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ফেরদৌসী আক্তার জানান, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় রোববার পর্যন্ত ৩৭ হাজার ১৩০টি টিকার মজুত আছে। আর এক দিনেই সেখানে লাগে ২০ থেকে ২৬ হাজার টিকা।
এর মধ্যে খুলনা জেলায় আছে সবচেয়ে বেশি ১৪ হাজার ৯৭০টি। এই জেলায় দিনে টিকা লাগে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার। এই হিসাবে চার থেকে বড়জোর পাঁচ দিন চলবে টিকা।
বাগেরহাটে ২ হাজার ৭৫০টি, যশোরে ২ হাজার ৯০টি, কুষ্টিয়ায় ১ হাজার ১৩০টি, মাগুরায় ২ হাজার ১৩০টি, নড়াইলে ২ হাজার ২৯০টি, সাতক্ষীরায় ২ হাজার ২৫০টি, ঝিনাইদহে ৩ হাজার ৩০টি, চুয়াডাঙ্গায় ৫ হাজার ৭৭০টি আর মেহেরপুরে ৭২০টি টিকা মজুত আছে।
এ পরিমাণ টিকায় কোনো জেলায় চলবে এক দিন, কোনো জেলায় দুই দিন বা কোনো জেলায় তিন দিন।
তুলনামূলক ভালো অবস্থানে ময়মনসিংহ
জেলার সিভিল সার্জন নজরুল ইসলাম জানান, তাদের হাতে ১৯ হাজার টিকা রয়েছে। প্রতিদিন যে হারে টিকা লাগে, তা দিয়ে ২০ মে পর্যন্ত টিকাদান কর্মসূচি চালানো সম্ভব হবে।
ময়মনসিংহ বিভাগের আরেক জেলা জামালপুরের সিভিল সার্জন প্রণয় কান্তি দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে পাঁচ হাজার ডোজের কাছাকাছি টিকা এখন মজুত আছে। ঈদ পর্যন্ত আমরা এই টিকা প্রদান করতে পারব। তারপর শেষ হয়ে যাবে।’
এ জেলাতেও যে টিকা আছে, তা নিয়ে সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া সম্ভব হবে না।
সিভিল সার্জন বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত দেবে সেভাবেই আমরা কাজ করব।’
ঠাকুরগাঁওয়ে চলবে তিন দিন
ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন মাহফুজুর রহমান জানান, গোটা জেলায় এখন টিকা আছে দুই হাজারের মতো। দিনে গড়ে ছয় থেকে সাত শ টিকা লাগে। এই হিসাবে এই জেলায় টিকা দেয়া সম্ভব আর বড়জোর তিন দিন।
আরও পড়ুন:লন্ডনে চার মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাকে বিদায় জানাতে লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দলটির প্রবাসী নেতাকর্মীদের ভিড় করতে দেখা গেছে।
সোমবার (৭ মে) স্থানীয় সময় ২টা ১০ মিনিটে লন্ডনে বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসা থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন খালেদা জিয়া। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেই গাড়ি চালিয়ে তার মাকে বিমানবন্দরে নিয়ে গেছেন।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিসকর অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘গাড়িতে সামনের আসনে ছেলের পাশে বসেছেন খালেদা জিয়া। দুই পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান, সৈয়দা শার্মিলা রহমান এবং তারেকের মেয়ে জাইমা রহমানও রয়েছেন গাড়িতে। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে কাতারের আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আমরা রওনা হব। বিকাল ৪টায় আমাদের রওনা হওয়ার কথা।
দোহায় যাত্রাবিরতি করে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে তাদের।
এদিকে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর গুলশান-২ এ অবস্থিত খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’ সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। নেতাকর্মীদের হাজারো ভিড়ের মধ্য দিয়ে তাকে বিমানবন্দর থেকে বাসায় পৌঁছানোর সময় অভ্যর্থনা জানানো হবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইউএনবিকে জানান, ‘তিনি মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন বলে আশা করছি।’
খালেদা জিয়ার গাড়িবহর কাকলী রুট ধরে ফিরোজায় পৌঁছাবে। ফখরুল বলেন, ‘নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে তারা ফুটপাথে দাঁড়িয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা হাতে তাকে শুভেচ্ছা জানাবে।’
তিনি জনগণকে অনুরোধ করেন বিমানবন্দর থেকে কাকলী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে, যাতে রাস্তায় যানজট না হয়। মঙ্গলবার সকালে বিমানবন্দরে বিএনপি মহাসচিব, অন্যান্য নেতা ও খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন।
বিএনপির পরিকল্পনা অনুযায়ী, বিমানবন্দর থেকে লা মেরিডিয়ান পর্যন্ত অবস্থান নেবে ঢাকা উত্তর সিটি ইউনিট, এরপর ছাত্রদল লে মেরিডিয়ান থেকে খিলখেত পর্যন্ত, যুবদল খিলখেত থেকে রেডিসন পর্যন্ত।
রেডিসন থেকে আর্মি স্টেডিয়াম পর্যন্ত থাকবে দক্ষিণ সিটি ইউনিট, এরপর স্বেচ্ছাসেবক দল স্টেডিয়াম থেকে বনানী কবরস্থান পর্যন্ত, কৃষক দল কবরস্থান থেকে কাকলী পর্যন্ত, শ্রমিক দল কাকলী থেকে বনানী শেরাটন পর্যন্ত অবস্থান নেবে।
বনানী শেরাটন থেকে কিচেন মার্কেট পর্যন্ত থাকবে ওলামা দল, তাঁতি দল, জাসাস ও মৎস্যজীবী দল। মুক্তিযোদ্ধা দল ও অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠন থাকবেন কিচেন মার্কেট থেকে গুলশান-২ পর্যন্ত, আর মহিলা দল ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যরা থাকবেন গুলশান অ্যাভিনিউ পর্যন্ত।
বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীদেরও রুটের সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিমানবন্দর বা ফিরোজা বাসভবনে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না এবং খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সঙ্গে পায়ে হেঁটে বা মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ থাকবে।
বাংলাদেশ থেকে বৈধ পথে আরও বেশি হারে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী নিতে আগ্রহী ইতালি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সোমবার (৫ মে) বিকালে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ইতালি ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা জানান।
বৈঠকে ইতালির পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশে সফররত দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ম্যাথু পিয়ান্তেডোসি।
উপদেষ্টা বলেন, ইতালির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শ্রমিকরা খুব পরিশ্রমী ও দেশটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দেশটি নতুন করে বৈধ পথে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিতে আগ্রহী। তবে অন্য দেশের ভিসা নিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে যাওয়ার প্রবণতাকে তারা সম্পূর্ণরূপে নিরুৎসাহিত করেছে।
তিনি বলেন, ইতালি অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছে ও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে বলে জানিয়েছে। পাশাপাশি তারা নিরাপত্তা খাতেও সহায়তা বৃদ্ধি করার কথা জানিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে ইতোমধ্যে যেসকল বাংলাদেশি অবৈধভাবে ইতালিতে গিয়েছেন, তাদের যেন উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় বৈধতা দেওয়া হয়- সে বিষয়েও ইতালিকে অনুরোধ করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ইতালির পুলিশ মাফিয়া চক্রসহ সংগঠিত ও সংঘবদ্ধ অপরাধ দমনে পারদর্শী। সেজন্য তারা এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের প্রশিক্ষণ ও সামর্থ্য বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করতে চায়। তিনি বলেন, বৈঠকে আমরা পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও কোস্টগার্ডের দক্ষতা ও সামর্থ্য বৃদ্ধিতে ইতালির সহায়তা কামনা করেছি।
সম্প্রতি এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর ওপর হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, এ ঘটনায় ৫৪ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটানোর চেষ্টা করবে, তাদের কাউকেই কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
বৈঠকে অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধ, অভিবাসন সংক্রান্ত অপরাধ নেটওয়ার্ক দমনে বাংলাদেশের গৃহীত নীতি ও কর্মপন্থা, অপরাধ দমন ও বিচার প্রক্রিয়ায় দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার এবং নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে ইতালির পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো, দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিপ্লোমেটিক অ্যাডভাইজার ম্যাক্রো ভিলানি ও ডেপুটি হেড অভ কেবিনেট সাবিনা মাদারো, ইমিগ্রেশন ও বর্ডার পুলিশের সেন্ট্রাল ডিরেক্টর ক্লডিও গালজেরানো প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সচিবালয়ে পৌঁছালে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আগামী ঢাকায় এলে তাকে পথে পথে অভ্যর্থনা দেবেন দলীয় নেতাকর্মীরা। তারা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন। এ ক্ষেত্রে সাধারণ নাগরিকদের চলাচলে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, সে জন্য কিছু বিষয় মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
সোমবার (৫ মে) এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। আগামীকাল মঙ্গলবার (৬ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স।
ডিএমপির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (৬ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জনসাধারণকে গুলশান/বনানী থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত রাস্তায় অবস্থান না করে ফুটপাতে অবস্থান করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আগত জনসাধারণকে রাস্তা থেকে সরিয়ে ফুটপাতে অবস্থান করানোর জন্য প্রয়োজনীয় স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগামীকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গুলশান-বনানী থেকে উত্তরা পর্যন্ত সড়ক যথাসম্ভব পরিহার করে বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের অনুরোধ করা হয়েছে। বিকল্প রাস্তার মধ্যে রয়েছে:
• আব্দুল্লাপুর কামারপাড়া ধউর ব্রীজ-পঞ্চবটী-মিরপুর বেড়িবাঁধ দিয়ে গাবতলী হয়ে চলাচল।
• ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার।
• উত্তরা ও মিরপুরে বসবাসকারীদের এয়ারপোর্ট সড়ক ব্যবহার না করে বিকল্প হিসেবে হাউস বিল্ডিং- জমজম টাওয়ার-১২নং সেক্টর খালপাড়-মেট্রোরেল উত্তরা উত্তর স্টেশন- উত্তরা সেন্টার স্টেশন-মিরপুর ডিওএইচএস হয়ে চলাচল এবং উত্তরা সেন্টার স্টেশন হতে ১৮ নং সেক্টর-পঞ্চবটী হয়ে মিরপুর বেড়িবাঁধ দিয়ে চলাচল করতে পারেন।
• গুলশান, বাড্ডা এবং প্রগতি সরণি এলাকার যাত্রীরা কাকলী, গুলশান-২, কামাল আতাতুর্ক সড়কের পরিবর্তে গুলশান-১/পুলিশ প্লাজা-আমতলী-মহাখালী হয়ে মহাখালী বাস টার্মিনাল সংলগ্ন র্যাম্প ব্যবহার করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে এয়ারপোর্ট/উত্তরা যেতে পারবে।
• মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইলগামী যানবাহন মিরপুর-গাবতলী রোড হয়ে চলাচল করতে পারবে।
• এয়ারপোর্ট/৩০০ ফিট রাস্তা থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনকে বনানী/কাকলী র্যাম্পের পরিবর্তে মহাখালী র্যাম্প/এফডিসি র্যাম্প ব্যবহার করতে পারবে।
এছাড়া ডিএমপির অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা সেনানিবাস কর্তৃপক্ষ ঢাকা সেনানিবাসের রাস্তা (জিয়া কলোনী/জাহাঙ্গীর গেইট /সৈনিক ক্লাব/স্টাফ রোড) সকাল ৮ থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শুধু হালকা যানবাহন চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। সুতরাং সেনানিবাসের রাস্তা ব্যবহার করতে পারেন।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ সিএনজিচালিত অটোরিক্শা ও মোটরসাইকেল নির্ধারিত টোল পরিশোধপূর্বক ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪০ কিমি গতিসীমা মেনে ও এক্সপ্রেসওয়ের বাঁ পাশের সেইফ লেন ব্যবহার করে সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ওভারস্পিড ও লেন পরিবর্তন করলে আইন প্রয়োগের জন্য পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
বিকল্প হিসেবে ঢাকা-জয়দেবপুর চলাচলকারী ট্রেন ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। রেলওয়ের সব আন্তঃনগর ট্রেন আগামীকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টঙ্গী, এয়ারপোর্ট এবং তেজগাঁও স্টেশনে দুই মিনিটের জন্য থেমে যাত্রী বহনের ব্যবস্থা করবে। এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ে আগামীকাল সকাল থেকৈ দুপুর পর্যন্ত কমলাপুর-টঙ্গী রুটে অতিরিক্ত একটি শাটল ট্রেন পরিচালনা করবে।
হজযাত্রীসহ বিদেশগামীদের এয়ারপোর্টে গমানগমনের ক্ষেত্রে এবং ওই এলাকায় এসএসসি পরীক্ষার্থীদেরকে যথেষ্ট সময় নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। মিরপুর ও উত্তরাবাসীকে বিকল্প হিসেবে মেট্রোরেল ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
কোনো ব্যাগ, লাঠি ইত্যাদি বহন না করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনাকারীদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। অভ্যর্থনাকারীরা কোনো যানবাহন নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বহরে যুক্ত হতে পারবেন না।
অভ্যর্থনাকারী ব্যক্তিরা মোটরসাইকেল নিয়ে কোনোক্রমেই গুলশান/বনানী থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত রাস্তায় অবস্থান করতে পারবেন না বা মোটরসাইকেলযোগে জনতার মধ্য দিয়ে চলতে পারবেন না। তবে এ রাস্তা দিয়ে (জনসমাগম না হলে) সাধারণ যানের সাথে মোটরসাইকেল চলতে পারবে।
দেশের স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘ দিন থেকে যেসব সমস্যা রয়েছে তা নিরসনে স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে যেসব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নযোগ্য তা দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ সোমবার স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নিকট তাদের প্রতিবেদন পেশ করার পর তিনি এই নির্দেশ প্রদান করেন।
স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্কার কমিশনের এই প্রতিবেদনকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের সমস্যাগুলো বহুদিনের সমস্যা, এর মাধ্যমে আমরা যদি এসব সমস্যার সমাধান করতে পারি তা হবে যুগান্তকারী ঘটনা।’
তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেসব সুপারিশ আশু বাস্তবায়নযোগ্য তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের এখনি মনোযোগী হতে হবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘একটি বড় সমস্যা হচ্ছে ডাক্তারের সংকট, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডাক্তার থাকলেও যেখানে দরকার সেখানে ডাক্তার নেই। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে।’
চিকিৎসা ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণের উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা ছাড়া সমস্যা নিরসন সম্ভব নয়। চিকিৎসকদের যেখানে পোস্টিং সেখানে থাকাটা নিশ্চিত করতে হবে।’
কমিশন প্রধান জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে এই কমিশনের সদস্যরা তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার নিকট হস্তান্তর করেন।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য ইনফরমেটিকস বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন, অধ্যাপক লিয়াকত আলী, ডা. সায়েবা আক্তার, সাবেক সচিব এম এম রেজা, ডা. আজহারুল ইসলাম, ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন, ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, ডা. আহমেদ এহসানুর রাহমান এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি উমায়ের আফিফ।
স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্কার কমিশনের অন্য দুই সদস্য হলেন ডা: নায়লা জামান খান, ডা: মোজাহেরুল হক।
চট্টগ্রামে আলোচিত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় ইসকনের সাবেক সংগঠক ও বর্তমানে কারাবন্দি চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার সকালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৬ষ্ঠ আদালতের বিচারক এস এম আলাউদ্দীন এই আদেশ দেন। শুনানিকালে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নিরাপত্তা জনিত কারণে আদালতে হাজির না করে কারাগার থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত করা হয়।
একইসঙ্গে আরো তিনটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেছে পুলিশ। পুলিশের ওপর আক্রমণ, কর্তব্যকাজে বাধা, আদালত প্রাঙ্গনে ত্রাস সৃষ্টি, হামলার অভিযোগের বাকি তিনটি মামলার শুনানি ভার্চুয়ালি আগামীকাল মঙ্গলবার হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ইসকনের বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আলিফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এরআগে, গতকাল রোববার চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চিন্ময় দাসকে আলিফ হত্যাসহ চারটি মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন জমা দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি মামলা আজকে ভার্চুয়াল শুনানি হয়। অন্য তিনটি মঙ্গলবার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত বছরের ২৫ নভেম্বর রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইসকনের বহিষ্কৃত সংগঠক ও সনাতনী জাগরণ জোট নামে একটি সংগঠনের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরদিন ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
কারাগারে পাঠানোর নির্দেশকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গনে ত্রাস সৃষ্টি করে চিন্ময়ের অনুসারীরা। প্রায় তিন ঘণ্টা তাকে বহনকারী প্রিজন ভ্যান আদালত এলাকায় আটকে রাখে তারা। একপর্যায়ে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখনই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে নগরীর লালদিঘীর পাড় থেকে কোতোয়ালী এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষের সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়। এ ঘটনায় তার বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন।
এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধা এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ৫১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে আলিফ হত্যা মামলায় ২১ জনের বিরুদ্ধে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার তিন আসামি-চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা আইনজীবী সাইফুলকে তারা নির্মমভাবে হত্যা করেন।
চিন্ময় দাসের বিরুদ্ধে আরো একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাও রয়েছে, যা গত বছরের ৩১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানায় বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, জাতীয় পতাকা অবমাননা করে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন চিন্ময় ও তার অনুসারীরা। ওই মামলায় গত বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকায় গ্রেফতার করা হয় তাকে।
এর মধ্যে, গত ৩০ এপ্রিল রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। তবে রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বার জজ আদালতে জামিনের বিরুদ্ধে আপীল করেছে।
সারাদেশের অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মচারীগণ নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ০৫ মে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে দুই ঘণ্টা সর্বাত্মক শান্তিপূর্ণভাবে কর্মবিরতি পালন করেছেন।
ফেনীতেও বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন, ফেনী শাখার সদস্যগণ দুই দফা দাবিতে আদালতে আঙ্গিনায় সর্বাত্মক শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি পালন করেছেন ।
বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রীম কোর্টের অধীন পৃথক সচিবালয় করণ, অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মচারীগণকে বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারী হিসেবে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতন ভাতা প্রদানসহ বিদ্যমান জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের ১ম-৬ষ্ঠ গ্রেডের পরবর্তী ৭ম-১২তম গ্রেডভুক্ত করা এবং বিদ্যমান ব্লকপদ বিলুপ্ত করে যুগোপযোগী পদ সৃজনপূর্বক যোগ্যতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ রেখে স্বতন্ত্র নিয়োগবিধি প্রণয়নের দাবিতে তারা এই কর্মবিরতি পালন করেছেন।
সোমবার (৫ মে) সকাল সাড়ে ৯ টায় ফেনীতে আদালতের নিচ তলায় আয়োজিত দুই ঘণ্টাব্যাপি কর্মবিরতিতে সভাপতিত্ব করেন যুগ্ম জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতের সিনিয়র স্ট্রোনোগ্রাফার ও অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ মহসিন।
বেঞ্চ সহকারি মোঃ জসিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন যুগ্ম জেলা জজ প্রথম কোর্টের সেরেসতাদার ও অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি আলতাফ হোসেন, জেলা ও দায়রা জজ ফেনী এর নাজির শাহনাজ বেগম,
স্টোনোগ্রাফার মো: দিদারুল ইসলাম, রেকর্ড কিপার সামছুল কিবরিয়া, স্টোনোগ্রাফার মো: শামছু উদ্দীন,
বেঞ্চ সহকারী আশিকুর রহমান ভূঁইয়া, তুলনা সরকারি মোঃ ইকবাল হোসেন, খোরশেদ আলম ভূঁইয়া, ইসমাইল ভূঁইয়া, আনোয়ারুল আজিম, ইউনুস শরীফ, মোঃ: জহির উদ্দিন মজুমদার, হারিস মাহমুদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন, ফেনী শাখা কর্মকর্তারা জানায়, এসব দাবী উপস্থাপন করে গত ০৪ মে তারিখের মধ্যে উক্ত দাবী বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচরে আনা সত্বেও এসোসিয়েশনের ন্যায্য দাবী বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী হিসেবে এই কর্মবিরতি পালন করছেন।
বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন ফেনী শাখার কর্মকর্তারা আরো বলেন, ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হয়। বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর শুধুমাত্র মাননীয় বিচারকগণের জন্য ৬টি গ্রেড রেখে পৃথক পে-স্কেলসহ নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করা হলেও সহায়ক কর্মচারীগণকে উক্ত পে-স্কেলের আওতাভুক্ত করা হয়নি। মাননীয় বিচারকগণের সাথে আদালতের সহায়ক কর্মচারীগণ একই দপ্তরে কাজ করা সত্বেও জুডিসিয়াল সার্ভিস পে-স্কেলের আলোকে মাননীয় বিচারকগণের বেতন-ভাতাদি প্রদেয় হলেও সহায়ক কর্মচারীগণ জনপ্রশাসনের আলোকে বেতন-ভাতাদি পেয়ে থাকেন। মাননীয় বিচারকগণের জন্য বিচারিক ভাতা, চৌকি ভাতা, ডিসেম্বর মাসে দেওয়ানি আদালতের অবকাশকালীন (ডিসেম্বর মাস) দায়িত্ব ভাতা'সহ ফৌজদারি আদালতে দায়িত্ব পালনের জন্য এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অবকাশ ভাতা প্রদানের বিধান থাকলেও বিচার সহায়ক কর্মচারীগণকে অনুরূপ কোনো ভাতা প্রদান করা হয়না। এক কথায় বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর মাননীয় বিচারকগণের জন্য কিছু সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হলেও সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত করা হয়েছে সহায়ক কর্মচারীগণকে।
বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সংস্কারমূলক এজেন্ডা বাস্তবায়নে সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেছেন, ‘নির্বাচন কবে হবে—সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া বাংলাদেশের নিজস্ব বিষয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের চাপ নেই কোনো নির্দিষ্ট তারিখে নির্বাচন আয়োজনের।’
সোমবার (৫ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ‘নির্বাচনের সময় নির্ধারণ বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত। আমরা এই রাজনৈতিক রূপান্তরকে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পথে অগ্রগতি হিসেবে দেখি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো নির্দিষ্ট তারিখ নিয়ে মতামত নেই।‘
ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে ডিক্যাব সভাপতি একেএম মঈনউদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুজ্জামান মামুনও বক্তব্য রাখেন।
মিলার বলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করছি, রাজনৈতিক দলগুলো এবং অন্তর্বর্তী সরকার একটি সুস্পষ্ট ও অগ্রাধিকারভিত্তিক সংস্কার তালিকায় একমত হবে। আমাদের কাছে সেই অভিজ্ঞতা আছে, আর্থিক সহায়তা আছে, এবং আছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস সম্প্রতি বলেছেন, ‘মানুষ এখনো মনে করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই সঠিক উত্তর। তবে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে দেশের ইতিহাসে সর্বোত্তম নির্বাচন আয়োজন করতেই হবে।’
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ‘এই সরকারকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া উচিত যেন তারা প্রতিশ্রুত সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে।’
জুলাই-আগস্টের সহিংসতা প্রসঙ্গে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রায় এক হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছেন এবং হাজার হাজার আহত হয়েছেন।
এসব বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ‘জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের কাজকে আমরা সমর্থন করি। এসব ভয়াবহ অপরাধের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার যেন যথাযথভাবে প্রক্রিয়ায় সুরক্ষিত হয় - সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
নারীর অধিকার বিষয়ে রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ‘পুরুষ ও নারীর সমতা ইউরোপের মৌলিক মূল্যবোধ। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে পর্যালোচনা করা উচিত। আমরা চাই, রাজনৈতিক দলগুলো এই সুপারিশগুলো বাস্তবে রূপ দিক।’
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এক প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু সীমান্তের ওপারে এখনো সহিংসতা চলছে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি সংকট।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় বাংলাদেশের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছেছি—রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া অবশ্যই নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছামূলক হতে হবে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ২০২৫ সালে ৩২ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ দিয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ইইউ এবং এর সদস্য দেশগুলো মিলে প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরো সহায়তা দিয়েছে।
মন্তব্য