দেশে কতগুলো আইসিইউ ইউনিট আছে, তার মধ্যে কতগুলোতে রোগী আছে আর কতগুলো ফাঁকা আছে, তার হিসাব নিয়মিতভাবে দেয়া হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে। কিন্তু কতগুলো ইউনিট আসলে সেবা দেয়ার অবস্থায় নেই সে কথা জানানো হয় না কখনও।
নিউজবাংলা সারা দেশের বিভিন্ন জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো আইসিইউ ইউনিটের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেছে, সেগুলোতে আসলে রোগীর সেবা দেয়ার মতো পরিস্থিতি নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইউনিট পাঠিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে। সেগুলো পরিচালনার বিষয়ে স্থানীয় পর্যায় থেকে যে চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে, সেগুলো পূরণ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে।
পরিস্থিতিটি কাজীর গরুর মতো হয়েছে। আইসিইউ কেতাবে থাকবে, কিন্তু গোয়ালে নয়।
এর আগেও এমন চিত্র দেখা গেছে হাসপাতালগুলোতে। লোকবল ছাড়া মূল্যবান বহু যন্ত্রাংশ পড়ে পড়ে নষ্ট হয়েছে। এগুলো কিনে আনতে জনগণের করের টাকার অপচয় ছাড়া আর কিছুই হয়নি।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ফরিদ হোসেন মিয়াও বিষয়টি স্বীকার করেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সারাদেশে আইসিইউ স্থাপনের জন্য যে জনবল প্রয়োজন তার অনেক অভাব রয়েছে। আমরা অধিদপ্তর থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জনবল নিয়োগ জন্য একটা চিঠি দিয়েছি। এটা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, আইসিইউ স্থাপনের জন্য হাসাপাতালগুলোতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন অবশ্যই থাকতে হবে। অধিকাংশ হাসপাতাল পুরনো হওয়ার কারণে আইসিইউ বসানো যায় না। এটা কীভাবে সমাধান করা যায় সে বিষয় কাজ করা হচ্ছে।’
অবকাঠামোগত সংকট থাকার পরেও কেন আইসিইউ ইউনিট পাঠানো হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সারাদেশে আইসিইউ স্থাপনের জন্য যে
জনবল প্রয়োজন তার অনেক অভাব রয়েছে।
‘জনবল সংকট বিভিন্ন হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপন করা যাচ্ছে না জানিয়ে চিঠিও আসছে। আমরা অধিদপ্তর থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জনবল নিয়োগ জন্য একটা চিঠি দিয়েছি। এটা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
তিনি জানান, আইসিইউ স্থাপনের জন্য হাসাপাতালগুলোতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন অবশ্যই থাকতে হবে। অধিকাংশ হাসপাতাল পুরানো হওয়ার কারণে আইসিইউ বসানো যায় না। এটা কীভাবে সমাধান করা যায় সে বিষয় কাজ করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর জেলায় সাত বছর ধরে তালাবদ্ধ ইউনিট
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর জেলা মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিটের বসেছে ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর। কিন্তু টাকা খরচ ছাড়া রোগীর কোনো লাভ হয়নি।
এই ইউনিট স্থাপনের সময় জাহিদ মালেক স্বপন ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। পরে পদোন্নতি হয়ে হয়েছেন পূর্ণ মন্ত্রী। কিন্তু তার জেলায় আইসিইউ ইউনিট চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল নিশ্চিত করা যায়নি।
জটিল রোগীর আইসিইউ সাপোর্ট লাগলে হাসপাতাল থেকে এখনও পাঠানো হয় রাজধানীতে।
গত বছর দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়লে মে মাসে আইসিইউ স্বল্পতার বিষয়টি সামনে আসার পর দরজা খোলা হয়। নষ্ট হয়ে যাওয়া কিছু সরঞ্জাম পাল্টে নতুন সরঞ্জামও সংযোজন করা হয়। কিন্তু চিকিৎসা হয়নি একজন রোগীরও। আবার সেই ইউনিটে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে তালা।
সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আরশাদ উল্লাহ বলেন, ‘উদ্বোধনের পর জনবলের অভাবের কারণে এখন পর্যন্ত আইসিইউয়ের কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় চিকিৎসা সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যায়। পরে গত বছরের মে মাসে কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়ে পুনরায় আইসিইউটি ঠিক করা হয়।
‘তা ছাড়া সদর হাসপাতালে তেমন কোনো মুমূর্ষু রোগী আসে না। যেসব রোগী আসে, তাদের সাধারণ বেডে চিকিৎসা দেয়া হয়। আর যদি অবস্থা ক্রিটিক্যাল হয় তাহলে ঢাকায় পাঠানো হয়।’
সিভিল সার্জন আনোয়ারুল আমিন আখন্দ জানান, দুই শয্যার আইসিইউ ইউনিট চালাতে প্রতি শিফটে একজন করে অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক, দুইজন সিনিয়র নার্স ও দুইজন সাপোর্টিং নার্স থাকতে হবে। অর্থাৎ প্রতি ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসকসহ কমপক্ষে ১২ জন দক্ষ জনবল থাকতে হবে।
এই লোকবলই যখন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের জন্য চাহিদাপত্র দিয়েছে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার পর আইসিইউ নিয়ে অনেক কথাবার্তার মধ্যে বিভিন্ন জেলা শহরে পাঠানো হচ্ছে আইসিইউ শয্যা। কোথাও কোথাও ঘটা করে উদ্বোধন করছে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু এই পর্যন্তই। এতে রোগীদের আদৌ কোনো লাভ হবে কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
কোথাও নেই আইসিইউ চালানোর মতো প্রশিক্ষিত জনবল। নেই সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা, এমনকি নেই আইসিইউ বসানোর মতো দক্ষ টেকনিশিয়ান।
শয্যা পেয়ে যেসব হাসপাতাল সেগুলো চালানোর জন্য জনবল চেয়ে চিঠি দিয়েছে, সেই হাসপাতালগুলোতে না করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই অবস্থায় সেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হয়ে যাচ্ছে হতোদ্যম।
ইউনিট স্থাপনের জায়গাই নেই লক্ষ্মীপুর হাসপাতালে
লক্ষ্মীপুর জেলা হাসপাতালে গত ২২ এপ্রিল করোনা ওয়ার্ডে তিন শয্যার আইসিইউ ইউনিটের উদ্বোধন করেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসেন আকন্দ।
এরপর আরও ১০টি শয্যা পাঠানো হয়। কিন্তু সেগুলো স্থাপনই করা যায়নি। হাসপাতালে স্থান সংকুলান না হওয়াই এর কারণ বলে জানিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন আবদুল গফফার।
স্থাপনের জায়গা না থাকার পরেও শয্যা পাঠানো পরিকল্পনাহীনতার প্রমাণ হিসেবেই দেখছেন চিকিৎসকরা।
আইসিইউ স্থাপনের পর এখন পর্যন্ত আট জন করোনা রোগী এই সেবা নিয়েছেন বলেও জানান সিভিল সার্জন। আইসিইউএর জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ান না থাকায় সাময়িকভাবে প্রশিক্ষণহীন ডাক্তাররা এই সেবা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
দুই সপ্তাহ বাক্সবন্দি পটুয়াখালীরগুলো
লক্ষ্মীপুর যেদিন তিনটি আইসিইউ শয্যা স্থাপন করা হয়, একই দিন পটুয়াখালীতে পাঠানো হয় পাঁচটি। কিন্তু যেভাবে প্যাকেট করে পাঠানো হয়েছে, সেভাবেই পড়ে আছে সেগুলো।
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সেগুলো বসার কথা। এই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মতিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা ছেলের হাতের মোয়া না, বেড পাইলাম অর্ধেকটা লাইছা দিলাম ঘুমাইয়া দিই। আপনারা দূর থেকে মনে করেন সবকিছু রেডি। আসলে তা না।’
তিনি বলেন, ‘এটা বসাইতে দুই মাস সময় লাগবে। আইসিইউ বসাইলে সেন্টাল অক্সিজেন লাগবে না? সেন্টাল অক্সিজেন বসাতে দুই মাস লাগবে। আইসিইউ বেড বসানো বড় কথা না। সেন্টাল অক্সিজেন না থাকলে আমি বেড দিয়ে কী করব?’
বেড বসানোর মত জনবল বা দক্ষ কারিগর আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এই চিকিৎসক বলেন, ‘জনবল গভর্নমেন্ট দেবে।’
আগামী দুই মাসের মধ্যে জনবল পাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাই তো মনে হইতাছে।’
হাসপাতালে ভর্তি সোহরাব হোসেন নামে এক আইনজীবী বলেন, ‘আইসিইউ এর কথা বাদ দেন। এখানে চিকিৎসক নার্স সংকট প্রকট। হাসপাতালের মধ্যে পরিবেশ খুবই বাজে। এসব দেখবার করার দায়িত্বে যারা তারা দেখেও না দেখার ভান করছেন।’
হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে ৩৬৮টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ২০১ জন। ১৬৭টি পদ খালি দীর্ঘদিন ধরে।
চিকিৎসকের ৫৮টি পদের মধ্যে কর্মরত মাত্র ১১ জন। ১৭৪ জন নার্সর মধ্যে কর্মরত ১৪৪ জন।
হাসপাতালের তত্বাবধায়ক আবদুল মতিন ২৬ এপ্রিল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার মতো কোনো রোগী আমরা এখনও পাই নাই। তারপরেও হাসপাতালে সেন্টাল অক্সিজেন সিস্টেম চালুর জন্য জায়গা সিলেকশন হয়ে গেছে। দ্রুতই সেখানে কাজ শুরু হবে।’
তিনি সেদিন বলেন, ‘একে জনবল সংকট, আবার ঢাকা থেকে দক্ষ কারিগর আসার পর করোনা ইউনিট থেকে রোগীদের স্থানান্তর করতে বেশ কিছু সময় দরকার।’
দক্ষ কারিগর বা প্রয়োজনীয় জনবল না থাকার পরেও কেন এসব সরঞ্জাম চাহিদা পাঠানো হলো- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আগে তো মালামাল আনতে হয়। তারপর না হয় মিস্ত্রি। আমরা প্রয়োজনীয় জনবল চেয়েছি। আশা করি আইসিইউ এবং সেন্টাল অক্সিজেন সিস্টেমের মতো জনবলও পেয়ে যাব।’
সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম শিপন জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য।’
ভোলাকে বলা হয়েছে বরিশালের সহায়তা নিতে, কিন্তু বরিশালেরই নাই
গত ১৮ এপ্রিল ভোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয় তিনটি আইসিইউ শয্যা, তিনটি ভেন্টিলেটর ও তিনটি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা।
এই হাসপাতালের কর্মীরা জানতেনই না এই শয্যা ও ভেন্টিলেটর কীভাবে চালু করতে হয়। পরে ফোনে শুনে সেগুলো বসানো হয়েছে। কিন্তু এই পর্যন্তই।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘এগুলো চালানোর জন্য সার্বক্ষণিক কমপক্ষে তিন জন ডাক্তার ও তিন জন নার্স দরকার। কিন্তু আমাদের কাছে অভিজ্ঞত নার্স ও ডাক্তার না থাকায় এগুলো চালানো যাচ্ছে না।’
‘এগুলো আসার পর আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এগুলো স্থাপন ও পরিচালনার জন্য ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ানসহ অন্যান্য জনবলের চাহিদা পাঠিয়েছি। তারা আমাদেরকে বলেছে সারা দেশেই জনবল সংকট। তাই কোনো ডাক্তার নার্স ও টেকনিশিয়ান দেয়া সম্ভব না। এগুলো স্থানীয়ভাবে স্থাপন করতে হবে’-আইসিইউ ইউনিট কীভাবে নতুন সংকট তৈরি করেছে, সেটি জানালেন এই চিকিৎসা কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এক জন এনেসথেসিওলজিস্টের জন্য বললে মন্ত্রণালয় আমাদেরকে এক জন এনেসথেসিওলজিস্ট দেয়ার কথা বলেছে। তারও কোনো খবর নেই।’
লোকবল না পেলে কীভাবে চলবে- এমন প্রশ্ন যখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করেছে, তখন তাদেরকে বলা হয় বরিশালের সহযোগিতা নিতে।
সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা বরিশাল খবর নিয়েছি। সেখানেও আইসিইউ চালানোর লোক নেই। তারা হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দিয়ে গুরুতর রোগীদের সেবা দেয়। যেটি আমরা আরও আগ থেকেই পাঁচটি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দিয়ে রোগীদের সেবা দিচ্ছি।’
আইসিইউ বসেছে, নেই অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর
বাগেরহাট শেখ রাজিয়া নাসের ২৫০ শয্যা হাসপাতালে তিন শয্যার একটি আইসিইউ ইউনিট উদ্বোধন করা হয় গত ২৩ এপ্রিল। বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময় এর ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেয়া এ শয্যা তিনটি হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সংযুক্ত করা হয়।
তবে প্রশিক্ষিত জনবল ও টেকনিশিয়ানের অভাবে গত ১০ দিনেও আইসিইউ শয্যা গুলো চালু করা যায়নি।
হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেমসহ অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপন করা হলেও অক্সিজেনের অভাবে সেটি ফাঁকা পরে রয়েছে।
তবে বাগেরহাট স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে জরুরি প্রয়োজনে আইসিইউতে রোগীদের সেবার জন্য সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন কে এম হুমায়ুন কবির বলেন, এখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন আছে, হাইফ্লো নেজাল ক্যানুলাসহ চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন সবই আছে।
বর্তমানে আমাদের সব চেয়ে বেশি যে জিনিসটি প্রয়োজন সেটি হচ্ছে প্রশিক্ষিত জনবল এটা প্ররিচালনা করার জন্য। এ জন্য আমরা দুই জন চিকিৎসক ও পাঁচ জন নার্সকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। আগামী ৫ মে লকডাউন উঠে গেলে তাদেরকে প্রশিক্ষনের জন্য খুলনা পাঠানো হবে।
তবে বর্তমানে আমাদের যে এনেশথেশিয়া ডাক্তার রয়েছে তিনি এটি পরিচালনা করতে সক্ষম। প্রয়োজন হলে আমরা এখনই আইসিইউ বেডে রোগীদের চিৎসিকা দিতে পারব।
আইসিইউতে একজন রোগী চিৎকিসা নেয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবই আছে। তবে আমাদের ভেনটিলেটর নেই, সেটা চেয়েছি।
এর আগে আমরা মন্ত্রণালয় থেকে ১০টি ভেন্টিলেটর পেয়েছি, যেগুলো মূলত আইসিইউতে ব্যবহার উপযোগী না। এটা অ্যাম্বুলেন্সে ব্যবহার উপযোগী ভেনটিলেটর। আশা করছি ভেন্টিলেটর পেয়ে গেলে আইসিইউ ইউনিটে আর কোন সমস্য থাকবে না।
রাজবাড়ীতে সম্বল আত্মবিশ্বাস
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের দোতলায় ২০ শয্যা করোনা ইউনিটর জন্য তিন শয্যার আইসিইউ ইউনিট বসানো হয়েছে গত ১৯ এপ্রিল। কিন্তু কাউকে সেবা দেয়ার মতো অবকাঠামো নেই।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দীপক কুমার বলেন, আমাদের সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন এর কাজ চলছে। এটা আগামী মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তবে আমাদের আইসিইউ বেড চালানোর মতো সম্পূর্ণ দক্ষ নার্স নেই। এটার জন্য আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে চাহিদা হিসেবে চিঠি দিয়েছি।’
হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রেয়েছে ৪১টি। এর মধ্যে শূন্য ২৬টি। এর মধ্যে নতুন ইউনিট সেখানে তৈরি করেছে বাড়তি চাপ।
তার পরেও সিভিল সার্জন ইব্রাহিম টিটোন দাবি করছেন, তারা রোগীদের সেবা দিতে পারবেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আলাদা কোন জনবল নার্স বা ডাক্তার নেই, তবে যা আছে এইগুলো দিয়ে আমি আইসিইউ চালাতে পারব, এরা আইসিইউ চালাতে পারবে।’
আরও পড়ুন:ভারতীয় পণ্য বয়কট কেবলই একটি পলিটিক্যাল স্টান্ট বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, ‘ইদানীং ভারতীয় পণ্য বয়কটের যে প্রবণতা দেখা দিয়েছে তাতে বিএনপিও সায় দিচ্ছে। আমার মতামত হলো, এই ভারতীয় পণ্য বয়কট কেবলই একটি পলিটিক্যাল স্টান্ট।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির প্রথম বৈঠক শেষে শুক্রবার ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এবারের সংসদীয় কমিটিতে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তার মধ্যে একটি ইস্যু হলো, প্রায়ই আমরা প্রবাসীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাই। বিদেশে চলা সব মিশনেই একজন প্রধান ইনস্পেকটর আছেন। সেখানে সুপারিশ করা হয়েছে, প্রত্যেক মাসে প্রবাসীদের কাছ থেকে কতগুলো এবং কী অভিযোগ আসে, তার বিবরণ যেন আমাদের জানানো হয়।’
বৈঠকে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জসহ বিদেশের কোন কোন জেলে কত বাংলাদেশি বন্দি আছেন এবং তাদের মুক্তির বিষয়ে মিশনগুলো কী করেছে, সেসবের বিবরণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
সোমালিয়ার উপকূলে জিম্মি নাবিকদের বিষয়ে সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি উঠে এসেছে। তিনি জানিয়েছেন যে, নাবিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে কাজ চলছে, শিগগিরই একটি ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মবেশে পাকিস্তানের চর ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মাবরণে জিয়া পাকিস্তানের দোসর হয়ে কাজ করেছেন। এই সত্য উন্মোচন হওয়ায় বিএনপির মাথা খারাপ হয়ে গেছে।’
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ‘স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় কেউ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে বা মুক্তিযোদ্ধাদের কোনোভাবে সাহায্য করেছে, এমনকি একবেলা খাইয়েছে বা এক গ্লাস পানি খাইয়েছে জানলেও সেসব পরিবারের ওপর নেমে আসত অকথ্য নির্যাতন। আর জিয়াউর রহমান যুদ্ধক্ষেত্রে থাকেন আর তার পরিবার বেগম খালেদা জিয়া দুই সন্তান নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানিদের সঙ্গে আরাম-আয়েশে থাকেন।
‘এ থেকেই তো পরিষ্কার যে জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের দোসর হিসেবে, গুপ্তচর হিসেবে কাজ করেছেন। এর তো আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয় না। আর জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল চিঠি লিখেছিলেন, তোমার কাজে আমরা সন্তুষ্ট, তোমার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করো না। সেই চিঠির কপি আমার কাছেও আছে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি মিথ্যাচার করে বলে- আওয়ামী লীগ নেতারা তখন কোথায় ছিল। অথচ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার আওয়ামী লীগ সরকার, যার রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান; উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, যিনি বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ।
‘এই সরকারের অধীনেই জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে ৪০০ টাকা মাসিক বেতনে চাকরি করেছেন। যদিও কোনো সম্মুখ সমরে কখনও যাননি।’
বিএনপি স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করার অনেক চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত বিফল হয়েছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে ২১ বছর ধরে তারা বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাসকে মানুষের কাছে আড়াল করেছে, বিকৃত করেছে। কিন্তু গত ১৫ বছরে মানুষ আবার সঠিক ইতিহাস জেনেছে।
‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর দেয়া স্বাধীনতার ঘোষণাটি পরদিন ২৬ তারিখ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান কয়েকবার পাঠ করেন। এরপর আওয়ামী লীগ নেতারা একজন সেনা অফিসারকে দিয়ে পাঠ করানোর সিদ্ধান্ত নেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধরত মেজর রফিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান যে অ্যামবুশ নিয়ে আছেন, নড়লে যুদ্ধের ক্ষতি হবে। তখন এ দেশের মানুষের ওপর হামলার জন্য আসা পাকিস্তানি অস্ত্র সোয়াত জাহাজ থেকে খালাস করতে পাকিস্তানিদের সঙ্গে যাওয়ার পথে জনগণের বাধার মুখে পড়া মেজর জিয়াউর রহমানকে ডেকে এনে স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করানো হয়। প্রথম কয়েকবার তিনি ভুল পড়েন, আওয়ামী লীগ নেতারা ঠিক করে দিলে আবার পাঠ করেন।
‘স্কুলে ছুটির ঘণ্টা বাজায় যে দপ্তরি, সে ছুটির সিদ্ধান্ত নেয় না; টিভি-রেডিওতে যে উপস্থাপক সংবাদ পাঠ করে, সে ওই সংবাদ সৃজনকর্তা নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দেয়া স্বাধীনতার ঘোষণার একজন পাঠকমাত্র। জিয়া নিজেও কখনও নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করেননি, যেটি নিয়ে বিএনপি এখন মিথ্যাচার করে।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্যে সমাজ উন্নয়ন ও পরিবর্তনে, তরুণ সমাজকে বিপথে যাওয়া, জঙ্গিবাদে প্রলুব্ধ হওয়া থেকে বিরত রাখতে পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায়, সারাদেশে সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটানোর আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের আগে এ দেশে সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটেছিল, স্বাধীনতার পরও তা চলেছিল। ১৯৭৫ সালের পর তা ব্যাহত হয়। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ সব সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সংস্কৃতিমনা মানুষকে সারাদেশে সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটানোর আহ্বান জানাই।’
রাজধানীর সবুজবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চিত্তরঞ্জন দাসের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগ জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার।
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানার পরিচালনায় জোটের কার্যকরী সভাপতি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী রফিকুল আলম, কবি রবীন্দ্র গোপ, জোটের সহ-সভাপতি চিত্রনায়ক ও সাংসদ ফেরদৌস আহমেদ, সহ-সভাপতি চিত্রনায়ক মাহমুদ কলি, যুবলীগ নেতা মানিক লাল ঘোষ প্রমুখ সভায় বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুকের আমন্ত্রণে ভুটান সফরে গেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। শুক্রবার ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তিনি।
বাংলাদেশ সফর শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে সড়কপথে দেশে ফেরেন ভুটানের রাজা। রাজার আমন্ত্রণে তার সফরসঙ্গী হয়ে ভারত হয়ে ভুটানে যান তথ্য প্রতিমন্ত্রী। সূত্র: বাসস
এদিন ভুটানের দক্ষিণাঞ্চলীয় গেলেফু সিটিতে অবস্থান করেন ভুটানের রাজা ও বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী। সেখানে অবস্থানকালে ভুটানের রাজা বেশকিছু সময় ধরে তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে গেলেফু সিটি ঘুরে দেখেন এবং সেখানে শান্তিপূর্ণ, পরিবেশবান্ধব, পরিচ্ছন্ন ও সৌন্দর্যমণ্ডিত আইকনিক সিটি গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানান।
গেলেফু সিটি থেকে ভুটানের রাজার সঙ্গে বিমানযোগে পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তথ্য প্রতিমন্ত্রী। বিমানবন্দরে ভুটানের রাজা ও মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে স্বাগত জানান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে ও ভুটানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শিবনাথ রায়। পরে পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে যান রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক এবং প্রতিমন্ত্রী আলী আরাফাত।
ভুটান সফর শেষে রোববার দুপুরে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায় একটি বহুজাতিক কোম্পানির জুতার কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিটের প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে কারখানাটিতে আগুন লাগে। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট। অবশেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ফায়ার স্টেশনকর্মী শিবলি সাদিক বলেন, ‘কারখানা ভবনটি ছয় তলাবিশিষ্ট৷ এই ভবনের দ্বিতীয় তলায় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। পরে ভবনের বিভিন্ন তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
‘খবর পেয়ে বায়েজিদ ও আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশনের সাতটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কেউ হতাহত হওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আগুন লাগার কারণ বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কেও কিছু জানা যায়নি।’
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি সঞ্জয় কুমার সিনহা বলেন, ‘বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায় টেক্সটাইল মোড়ের রংদা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি কারখানায় জুতার সোল তৈরি করা হয়। এটি চীনের একটি বহুজাতিক কোম্পানির মালিকানাধীন।
‘ছুটির দিন হওয়ায় কারখানায় কোনো কর্মী ছিলেন না। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে দ্রুত কাজ শুরু করে।’
আরও পড়ুন:সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ থাকা খাবার কমে আসছে। এ কারণে জলদস্যুরা বাইরে থেকে জাহাজে খাবার নিয়ে আসা শুরু করেছে। ফলে খাবার নিয়ে তেমন সমস্যা না হলেও বিশুদ্ধ পানির সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কেএসআরএম সূত্র জানিয়েছে, দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়টিও এগিয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ২৩ নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে করণীয় সবকিছুই করা হচ্ছে বলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাধারণত জাহাজে দুই ধরনের খাবার থাকে। এগুলো হচ্ছে, হিমায়িত খাবার ও শুকনো খাবার। যাত্রাপথের সময় অনুযায়ী জাহাজে খাবার মজুত রাখা হয়। তবে শুকনো খাবার অনেক দিনের জন্য মজুত থাকে।’
তিনি বলেন, ‘জাহাজ জিম্মি করলে জলদস্যুরা সাধারণত খাবার সরবরাহ করে। তবে সুপেয় পানি নিয়ে সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে রেশনিং করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়।’
তিনি আরও জানান, জলদস্যুরা সম্প্রতি জাহাজের বাইরে থেকে খাবার আনছে- এরকম খবর তারা পেয়েছেন।
জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘খাবার এখনও শেষ হয়নি, তবে কমে আসছে। জলদস্যুরা তাদের নিজেদের জন্য বাইরে থেকে খাবার এনেছে বলে আমরা জেনেছি।’
তিনি বলেন, ‘আটক জাহাজ এবং জিম্মি ২৩ নাবিককে দ্রুত উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
‘এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করার সময় জাহাজটিতে নাবিকদের জন্য ২৫ দিনের খাবার ও ২০০ টন বিশুদ্ধ পানি ছিল। এই পানি দিয়ে এক মাস পর্যন্ত চালানো যাবে বলে তখন নাবিকরা জানিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, তবে রেশনিং করলে অনেক দিন চালানো যাবে। পানি বাঁচাতে এখন শুধু রান্না ও খাবারের জন্য বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করছেন তারা।’
১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করে সোমালি দস্যুরা। পরে তারা জাহাজটিকে সোমালিয়া উপকূলের কাছে নিয়ে যায়। চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজটি বর্তমানে সোমালিয়ার গদভজিরান জেলার জিফল উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে আছে।
প্রায় ১৩ বছর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর এমভি জাহান মণি নামের একই গ্রুপের মালিকানাধীন একটি জাহাজ জিম্মি করেছিল সোমালি জলদস্যুরা। জাহাজটি ১০০ দিন পর সব নাবিকসহ উদ্ধার করা হয়েছিল।
অপরদিকে, জলদস্যুদের কবল থেকে জিম্মি ২৩ নাবিককে উদ্ধার ও জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যোগাযোগের মধ্যে আছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো, নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা। একইসঙ্গে জিম্মি জাহাজটি উদ্ধার করাও আমাদের উদ্দেশ্য। শুধু এতটুকু বলতে চাই, আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।’
জাহাজে খাবার সংকটের বিষয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘অতীতে যখন জাহাজ অপহরণ হয়েছে, কখনও খাবারের সংকট হয়নি। তিন বছর ছিল, তখনও হয়নি; ১০০ দিন ছিল, তখনও হয়নি। আশা করি, এক্ষেত্রেও হবে না।’
আরও পড়ুন:নীলফামারীতে জমির জন্য বাবার মরদেহ দাফন করতে বাধা দিয়েছেন ছেলে। বাবার কবরে শুয়ে কবর দিতে বাধা প্রদান করেন তিনি। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে দাফনকার্য সম্পন্ন হয়।
শুক্রবার নীলফামারী সদর উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের যাদুরহাট বাটুলটারিতে এ ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার রাতে মারা যান ওই এলাকার বাসিন্দা মজিবুর রহমান। জমি রেজিস্ট্রির করার আগে বাবার মৃত্যু হওয়ায় ছেলে নওশাদ আলী মরদেহ দাফনে বাধা দেন ছেলে নওশাদ আলী।
স্থানীয়রা জানান, সদ্য প্রয়াত মুজিবুর রহমানের দুই স্ত্রী রয়েছেন। মৃত্যুর আগে দ্বিতীয় স্ত্রীকে ২ শতাংশ ও ছোট ছেলেকে ৫ শতাংশ জমি লিখে দেন তিনি। প্রথম স্ত্রীর তিন ছেলের মধ্যে ওয়াজেদ আলী, খয়রাত আলী ও নওশাদ আলীকে মৌখিকভাবে ৩ শতাংশ জমি প্রদান করেন বাবা মজিবুর রহমান। কিন্তু মৃত্যুর আগে প্রথম পক্ষের তিন ছেলেকে দেয়া জমি রেজিস্ট্রি করে না দেয়ায় বাবার মরদেহ দাফনে বাধা দেন নওশাদ। এক পর্যায়ে কবরে শুয়ে পড়েন তিনি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চাপড়া ইউনিয়নের পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) মাহাবুল ইসলাম বলেন, ‘জমি লিখে না দেয়ায় বাবাকে কবর দিতে বাধা প্রদানের ঘটনাটি আসলেই দুঃখজনক। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।’
রাঙামাটির সাজেক উপত্যকায় পণ্য পরিবহনের সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের খাদে পড়ে এক মাহেন্দ্র চালক নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার দুপুরে সাজেকের কংলাক পাহাড়ে যাওয়ার সময় প্রাণ কোম্পানির পণ্যবাহী মাহেন্দ্রটি খাদে পড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ৩৫ বছর বয়সী চাঁন মিয়া দীঘিনালা উপজেলার উত্তর রশিক নগর এলাকার তৈয়ব আলীর ছেলে।
জানা যায়, গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারালে প্রাণ কোম্পানির ২ প্রতিনিধি লাফ দিয়ে নেমে গেলেও রক্ষা হয়নি চালকের। অন্তত ১৫০ ফুট পাহাড়ের নিচে পড়ে গাছের সঙ্গে আটকে যায় গাড়িটি। এতে মাথা ফেটে মগজ বের হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন চাঁন মিয়া।
সাজেক থানার ওসি আবুল হাসান খান দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
মন্তব্য