করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তার, ক্রমাগত রূপ পরিবর্তন আর টিকার ঘাটতিতে মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কায় বিপর্যস্ত ভারত। একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশেও।
শনিবার বাংলাদেশে প্রথম ভারতীয় ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর সঙ্গে রয়েছে টিকার ঘাটতিও।
বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে মহামারির ঊর্ধ্বগতির বিপজ্জনক প্রভাব পড়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশেও। বিশেষ করে যখন টিকা কর্মসূচি জোরেশোরে এগোনোর কথা, তখনই টিকার সংকট তৈরি হয়েছে বলে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তার ওপর ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অধিক সংক্রামক করোনার বিস্তারও বাড়ছে।
ভারতে প্রথম শনাক্ত যে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের করোনার উপস্থিতি বাংলাদেশে পাওয়া গেছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য মেলেনি এখনও।
এর আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশে করোনার যত নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং হয়েছে, তার অধিকাংশই ছিল সাউথ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট।
অব্যাহত রূপ পরিবর্তনের ফলে নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলো বেশি সংক্রামক। এগুলোর ওপর করোনা প্রতিরোধী বিদ্যমান টিকার কার্যকারিতা কম বলে আগেই সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, মার্চ ও এপ্রিলের শুরুর দিকের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের হার কমেছে। কিন্তু এর কারণ অস্পষ্ট। এখনই মোক্ষম সময় করোনা প্রতিরোধে টিকা কর্মসূচির গতি বাড়ানোর।
দেশে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করছেন শিশু স্বাস্থ্য গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা।
তিনি বলেন, ‘টিকাদানের গতি বাড়িয়ে করোনার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখার এখনই সময়। এখনই নিশ্চিত করা দরকার যে ভাইরাসের নতুন রূপগুলোর বিস্তার এ দেশে যেন না বাড়ে।’
বাংলাদেশে টিকা আসার মূল উৎস ভারত। করোনা মহামারির বর্তমান প্রেক্ষাপটে ডোজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে দিল্লি।
বিশ্বে টিকা উৎপাদনকারী সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদন করছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা ফার্মাসিউটিক্যালসের গবেষণালব্ধ করোনা প্রতিরোধী টিকা। এখন পর্যন্ত এ টিকাই সবচেয়ে বেশি কিনেছে বাংলাদেশ সরকার।
প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ হিসাবে জুনের মধ্যে বাংলাদেশে তিন কোটি ডোজ পাঠানোর কথা ছিল সিরামের। সেখানে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ পাঠানোর পর গত ফেব্রুয়ারি থেকে টিকা রপ্তানি বন্ধ রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষক ড. আ স ম আলমগীর জানান, মহামারির এ পর্যায়ে টিকার ঘাটতি উদ্বেগজনক।
টিকার ঘাটতি দেখা দেয় গত মাসে প্রথম ডোজ নেয়ার জন্য নিবন্ধন কর্মসূচি স্থগিত করেছে সরকার। বিঘ্নিত হচ্ছে দ্বিতীয় ডোজ দেয়াও।
এ অবস্থায় মরিয়া হয়ে টিকা আমদানির জন্য ভারতের বিকল্প উৎসের সন্ধান করছে বাংলাদেশ।
এরই ধারাবাহিকতায় দেশে রাশিয়া ও চীন উদ্ভাবিত টিকা উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেশ দুটি থেকে টিকা উৎপাদনের প্রযুক্তিও দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে।
চীন থেকে ১২ মে উপহার হিসেবে পাঁচ লাখ ডোজ টিকা পৌঁছানোর কথা রয়েছে বাংলাদেশে।
টিকার ঘাটতি পূরণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও দুই কোটি ডোজ চেয়েছে সরকার।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) গবেষক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের অব্যাহত রূপ পরিবর্তন ও দেশে নতুন নতুন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের করোনার উপস্থিতি এমনিতেই উদ্বেগের কারণ। টিকার সংকটে এ জটিলতা আরও বাড়বে।’
বিশ্বে করোনার দৈনিক সংক্রমণে শীর্ষে রয়েছে ভারত। প্রতিদিন গড়ে শনাক্তের সংখ্যা বেশ কিছুদিন ধরেই চার লাখের উপরে রয়েছে। দৈনিক প্রাণহানির রেকর্ডও চার হাজার ছাড়িয়েছে।
অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় করোনায় ১৬৬ জন প্রাণ হারাচ্ছে দেশটিতে। প্রতি মিনিটে এ সংখ্যা কমপক্ষে তিন।
ছোঁয়াচে ভাইরাস আতঙ্কে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হয়ে ভ্রমণ বন্ধ থাকলেও অব্যাহত আছে পণ্য আনা-নেয়া।
যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রায় সব দেশে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রয়োজনের তুলনায় ভীষণ অপ্রতুল। বাংলাদেশে এ সংখ্যা ধারেকাছেও নেই। অর্থাৎ নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার এ দেশে কতটা, সে বিষয়ে একেবারেই অনিশ্চিত গবেষকরা।
এ নিয়ে ড. আলমগীর বলেন, ‘বাংলাদেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কারণে মহামারির তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়ার উপায় নেই। বিশেষ করে আমাদের সীমান্ত যখন পুরোপুরি সুরক্ষিত নয়, তখন তো এ শঙ্কা অনিবার্য।’
গত বছরের মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে প্রায় পৌনে আট লাখ মানুষের দেহে। প্রাণহানি ১২ হাজারের কাছাকাছি।
ড. আলমগীর বলেন, ‘দেশজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে ব্যর্থতার অর্থ হলো প্রাকৃতিক নিয়মে ভাইরাসটিকে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠার সুযোগ দেয়া, যা এড়ানোর কোনো উপায় নেই।’
ঠিক এ ধরনের পদক্ষেপের ফলেই ভারতে করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কা এতোটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বলে বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটের শনিবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ল্যানসেটের বরাত দিয়ে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারির প্রথম ধাক্কা নিয়ন্ত্রণের সাফল্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের অতি আত্মতুষ্টিই ভারতে জাতীয় বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভাইরাসের বিস্তার সীমিত থাকাকালীন একের পর এক ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত সরকার। বিশেষ করে সংকট সামলাতে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনা ও উন্মুক্ত আলোচনা দমনেরও তীব্র সমালোচনা করা হয় এতে।
হিন্দু অধ্যুষিত ভারতে ধর্মীয় কুম্ভমেলায় কোটি মানুষের সমাগম আর পাঁচ রাজ্যে মাসব্যাপী বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ও প্রচারণার পরই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তীব্র রূপ নেয় দেশটিতে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যবিদদের বারবার সতর্কতাও নরেন্দ্র মোদির প্রশাসন আমলে নেয়নি বলে রয়েছে অভিযোগ।
অন্যদিকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে এক বছরের মধ্যে করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যু রেকর্ড করে বাংলাদেশ।
এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে প্রাণহানি ও সংক্রমণ নিম্নমুখী হতে শুরু করলে গৃহীত স্বাস্থ্যবিধি একে একে শিথিল করে সরকার।
দেশজুড়ে লকডাউন কমপক্ষে ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হলেও সচল রয়েছে শপিং মল, স্থানীয় পরিবহন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
আন্তজেলা গণপরিবহন বন্ধ রাখা হলেও পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে নিজস্ব ব্যবস্থায় ঢাকা ছাড়ার অপেক্ষায় আছে লাখো মানুষ।
অথচ ভারতের সীমান্তবর্তী আরেক দেশ নেপালেও করোনার বিস্তার আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকায় কঠোর লকডাউন আরোপ করেছে দেশটি।
এমন পরিস্থিতি স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা আর লকডাউনের শৈথিল্যের ফলে ভারতের পরে মহামারির ঝড় বাংলাদেশে আঘাত হানবে কি না, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ।
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য