একটা বিভাগের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। শয্যা সংখ্যা ১ হাজার। কিন্তু এ হাসপাতালে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন নষ্ট। কাজ করে না সিটি স্ক্যান, ইকোকার্ডিওগ্রাম, ডায়ালাইসিস, এমআরআই, এন্ডোসকপি মেশিন। সবই বিকল।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব চিকিৎসা যন্ত্র মাসের পর মাস অকেজো হয়ে পড়ে আছে। কোনো কোনোটি বছরের পর বছর ধরে অচল। মেরামতের উদ্যোগ নেই।
সরকারি হাসপাতালগুলো যন্ত্রপাতি মেরামতের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি আলাদা সংস্থা আছে, যেটির নাম ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিক্যাল ইক্যুইপম্যান্ট মেইনটেন্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি)। এটির প্রধান টেকনিক্যাল ম্যানেজারের কাছে চলতি মাসে দুই দফা চিঠি দিয়েও কোনো উত্তর পাচ্ছে না রংপুরের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের ইনচার্জ হারুন-উল-কবির জানান, হাসপাতালে দুটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন স্থাপন হয় ২০১৪ সালে। এখন দুটিই অচল। একটি বিকল হয়েছে ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। অপরটি একই বছরের ১০ অক্টোবর। আরও পাঁচটি সাধারণ এক্স-রে মেশিন বিকল দীর্ঘদিন ধরে।
হাসপাতালের সিঙ্গেল স্লাইস সিটি স্ক্যান মেশিন স্থাপন করা হয় ২০০৬ সালের ৯ জুলাই। এটি বিকল হয়ে পড়ে আছে ২০১৯ সালের ৩০ আগস্ট থেকে। অন্যদিকে, ৬৪ স্লাইস সিটি স্ক্যান মেশিন স্থাপন করা হয় ২০১২ সালের ২৮ মার্চ। এটিও বিকল হয়ে পড়ে আছে ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ থেকে।
হাসপাতালের এমআরআই মেশিনও ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে অকেজো। আরেকটি এমআরআই মেশিন বিকল হয় ২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর।
এই ইউনিটে ২০১৯ সালে আরও একটি অত্যাধুনিক এমআরআই মেশিন স্থাপন করা হয়। ফিল্ম হলেই এটি চালু করা সম্ভব। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেটি চালু হচ্ছে না।
হাসপাতালের হৃদরোগ ইউনিটে গুরুত্বপুর্ণ পাঁচটি ইকোকার্ডিওগ্রাম মেশিনে ধুলা পড়ছে বহুদিন ধরে।
হৃদরোগ ইউনিটের সিসিইউ ওয়ার্ডের ইনচার্জ রহিমা বেগম জানান, ইউনিটের সর্বাধুনিক ১০ বেডের ইউনিট তার। ওয়ার্ডের দুটি আধুনিক ইকো মেশিনের দুটিই বিকল হয়ে পড়ে আছে। ২০১৭ সালের ২৪ জানুয়ারি এগুলো চালু করা হয়েছিল। বছর না ঘুরতে সেগুলো অচল।
এ ইউনিটের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের (পুরাতন সিসিইউ) ইনচার্জ কহিনুর বেগম জানান, তার ওয়ার্ডে তিনটি ইকো কার্ডিওগ্রাম কালাম মেশিন বিকল হয়ে পড়ে আছে। একটি মেশিন এমনকি ২০১০ সাল থেকে বিকল। তার ওয়ার্ডে এখন একটিও ইকোকার্ডিওগ্রাম কালাম মেশিন সচল নেই।
হাসপাতালের ডায়ালাইসিস ইউনিটের টেকনিশিয়ান মাসুদ জানান, কিডনি রোগিদের জন্য এই ওয়ার্ডে ২৫টি ডায়ালাইসিস মেশিনের মধ্যে ১২টি বিকল। দুটি বায়োপ্লান্টের উভয়ই নষ্ট হওয়ায় চলতি মাসের ৮ এপ্রিল থেকে ডায়ালাইসিস ইউনিট পুরোপুরি বন্ধ।
তিনি জানান, ডায়ালাইসিসের প্রধান উপাদান পিউরিফায়েড পানি, যা মেশিনের সাহায্যে পরিশোধন করা হয়। সেই মেশিন দুটি পুরোপুরি বিকল। এর আগেও কয়েকবার মেশিন দুটি বিকল হয়েছিল, তখন মেরামত করা হয়। এবার ঢাকা থেকে আসা টেকনিশিয়ানরা জানিয়ে দিয়েছেন, এই মেশিন আর সচল করা সম্ভব নয়। নতুন মেশিন স্থাপন করতে হবে।
মাসুদ আরও জানান, একজন কিডনি রোগীকে চার ঘণ্টা ডায়ালাইসিস করতে হয়। এ জন্য একেক রোগীর জন্য ১৮০ লিটার পিউরিফায়েড পানির প্রয়োজন হয়। এটা ছাড়া ডায়ালাইসিস করা যাবে না।
প্যাথোলজিক্যাল ইউনিটের প্রধান ওমর ফারুক জানান, তার ইউনিটে এখন ব্লাড গ্রুপ, ইউরিন আর কোভিড-১৯ ছাড়া কোনো পরীক্ষাই হচ্ছে না। অনেক যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকায় গুরুত্বপূর্ণ ৯টি প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করা কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য বাইরে নোটিশ টানিয়ে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।
একইভাবে হাসপাতালের এন্ডোসকপি ও কোলোনোসকপি মেশিন দুটিও দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে।
কেন নষ্ট হয় যন্ত্র?
হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের দায়িত্বরত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, গুরুত্বপূর্ণ এসব যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে মূলত এসির ব্যবহার ঠিকমত না হওয়ায়। মেশিন চালু থাক বা না থাক, এসি চালু রাখতে হয় ২৪ ঘণ্টা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসিই নষ্ট অথবা নাই। ফলে যেসব মেশিন এখনও চালু আছে, সেগুলোও নষ্টের পথে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০টি রিপোর্ট দেয়া হতো। সেটি বন্ধ। সিটি স্ক্যান করা হতো ৫৫ থেকে ৬০ জনের, এমআরআই করা হতো ১৫ থেকে ২০টা। ইকো, ইসিজিও করা হতো প্রয়োজন মতো। রোগীদের এসব পরীক্ষা বাইরে থেকে করিয়ে আনতে হচ্ছে। তাদের খরচ বেড়ে গেছে। আবার হাসপাতালের আয়ও এতে কমে গেছে।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করতে ছয় মাসের প্যাকেজে মাত্র ২০ হাজার টাকা লাগে। প্রতিবার ডায়ালাইসিস করতে খরচ পড়ে ৪শ টাকা। এটি বাইরে করালে লাগে প্রতিবার তিন হাজার টাকা। তাই দরিদ্র মানুষরা বাইরে ডায়ালাইসিস করাতে পারেন না।
রোগী ছেড়ে যাচ্ছে হাসপাতাল
হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তর জানিয়েছে, ১০০০ শয্যার এই হাসপাতালে বছরের যে কোনো সময় রোগী থাকত দুই থেকে আড়াই হাজার। কখনও বেড সংকুলন হতো না। ফ্লোরে গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিত লোকে। এখন সেখানে বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) বিকেল পর্যন্ত ৪৯টি ওয়ার্ডে রোগী মাত্র ৮১৭ জন। এদের মধ্যেও হাসপাতাল থেকে স্বেচ্ছায় চলে গেছেন ৩৪ জন আর না জানিয়ে চলে গেছেন ৩০ জন।
হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে অনেক রোগী ও তাদের স্বজন হাসপাতাল ছেড়েছেন।
গত তিন দিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ কোনো পরীক্ষা হাসপাতাল থেকে করানো যাচ্ছে না। এ কারণে হাসপাতালে বেড ফাঁকা হয়ে পড়ে আছে। কোনো কোনো ওয়ার্ডে একটিও রোগী নেই।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বদিজামালপুর গ্রামের জরিনা বেগম জানান, ‘আমি সার্জারি ওয়ার্ডে চারদিন হইচি ভর্তি হবার। খালি নার্স আইসে, ডাক্তার আইসে না। ঠিক মতন খোঁজ খবর নেয় না।’
রংপুরের বদরগঞ্জের নাগেরহাট থেকে আসা চন্দন সাহা জানান, ‘১৬ নম্বর ওয়ার্ডে আমার দিদি নীলি রানীকে ভর্তি করিয়েছি। বায়োপসি, সিটি স্ক্যান, প্যাথোলজিক্যাল সব টেস্ট বাইরে করিয়েছি। আর হাসপাতালে শুধু করোনার পরীক্ষা করা হয়েছে। টেষ্ট করতে এত খরচ, মনে হচ্ছে দিদির চিকিৎসা করা সম্ভব হবে না।’
পঞ্চগড় থেকে আসা বাবুল হক জানান, ‘আমি আমার বাবা শহিদুল ইসলামকে ৬ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করিয়েছি। চিকিৎসকরা প্রথমে যে টেস্ট দিয়েছে, তাতে ৫ হাজার টাকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। আরও যেসব পরীক্ষা দিয়েছে, তাতেও ৫ হাজারের বেশি টাকা লাগবে। আমাদের মত যারা সাধারণ মানুষ আছে, তাদের জন্য এখানে বিন্দুমাত্র সুযোগ-সুবিধা নেই। যত টেস্ট দিচ্ছে সবগুলো বাইরে করতে হচ্ছে। আমাদের পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
যন্ত্রপাতিগুলোর দেখভাল করা ইউনিটের প্রধানরা জানিয়েছেন, তারা প্রতি মাসেই হাসপাতালের পরিচালকের বরাবর আবেদন করছেন মেশিনগুলো সচল করতে। কিন্তু হচ্ছে না।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০১৯ সালে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রোস্তম আলী নিমিউ অ্যান্ড টিসির প্রধানকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। আমি এসেও চলতি মাসে দুই দুইবার চিঠি দিয়েছি। তাদের সঙ্গে কথাও বলেছি। তারা দ্রুত আসবে বলেও জানিয়েছেন। এই মুহূর্তে দরিদ্র মানুষগুলোকে আমরা সাপোর্ট দিতে পারছি না। তবে দ্রুব শিগরিই এর ব্যবস্থা হবে।’
রোগীরা চিকিৎসা না পাবার বিষয়ে পরিচালক বলেন, করোনার কারণে ইন্টার্ন ডাক্তাররা সিডিউল অনুযায়ী ভিজিট করছেন আর সিনিয়ারা তো আসছেনই। কিন্তু কেন এমন অভিযোগ তা খতিয়ে দেখা হবে।
এ নিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও রংপুর-৩ আসনের সংসদ সদদ্য সাদ এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য