করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে লকডাউনের মধ্যে সংক্রমণের হার ২০ মার্চের পর থেকে কমে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমেছে।
গত এক সপ্তাহ ধরে শনাক্তের হার ক্রমাগত নিম্নমুখী থাকাকে লকডাউনের সুফল হিসেবে দেখছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। লকডাউন আরও কার্যকর থাকলে সংক্রমণ আরও কমত বলে মনে করেন তারা।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে পরীক্ষার বিবেচনায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। গত ২০ মার্চও পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল একই রকম।
গত বছরের মার্চে দেশে সংক্রমণ ধরা পড়ার পর গত নভেম্বর থেকে কমতে শুরু করে। শীতে দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাত নিয়ে সরকার শঙ্কায় থাকলেও ওই মৌসুমে ছিল উল্টো চিত্র।
জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারিতে এক পর্যায়ে টানা বেশ কিছুদিন সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশের নিচে চলে আসে। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী এই পর্যায়কে করোনা নিয়ন্ত্রণও বলা যায়।
বাংলাদেশ যখন স্বস্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল তখন মার্চ থেকে আবার তৈরি হয় উদ্বেগ। বাড়তে থাকে সংক্রমণ।
প্রথম ঢেউয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর আবার পরীক্ষার বিবেচনায় সংক্রমণের হার টানা দুই সপ্তাহ পাঁচ শতাংশের উপরে থাকলে তখন তাকে বলে দ্বিতীয় ঢেউ।
৬ মার্চ এই শনাক্তের হার ৫ শতাংশের ওপরে আসে। এরপর থেকে সেটি আরও বাড়তে থাকে। আর ২০ মার্চ সেটি পৌঁছায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি। এরপর তা আরও বাড়তে থাকে।
আর এই পরিস্থিতিতে সরকার ২৯ মার্চ থেকে জনসমাগমে বিধিনিষেধ দেয়। এতেও কাজ না হওয়ায় ৫ এপ্রিল থেকে দেয়া হয় লকডাউন। তার আগের দিন ৪ এপ্রিল পরীক্ষার বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার বেড়ে হয় ২৩.২৮ শতাংশ।
তবে প্রথম দিকে লকডাউন ছিল শিথিল। বেসরকারি অফিস খোলা থাকায় লকডাউন প্রথম দিন থেকেই কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে।
এই অবস্থায় ১৪ এপ্রিল শুরু হয় কঠোর লকডাউন। শুরুর দিকে রোগীর সংখ্যা কমে আসলেও পরীক্ষার বিবেচনায় শতকরা হারের দিকে কমেনি খুব একটা। লকডাউনে যাতায়াতের অভাবে পরীক্ষা করাতে ঝামেলা এর একটি কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শতকরা হিসেবেও রোগীর হার টানা কমতে থাকে।
লকডাউনের প্রথম সপ্তাহের চিত্র
গত ৫ এপ্রিল এক সপ্তাহের লকডাউন শুরু হয়। সেদিন যারা নমুনা দিয়েছেন, তাদের ফল আসে পরদিন। ৬ এপ্রিল শনাক্তের হার ছিল ২১.০২ শতাংশ।
৭ এপ্রিল এটি ছিল ২২.০৪ শতাংশ, ৮ এপ্রিল ২০.২৬ শতাংশ. ৯ এপ্রিল ২৩.৫৭ শতাংশ, ১০ এপ্রিল ২০.৪৯ শতাংশ, ১১ এপ্রিল ১৯.৮১ শতাংশ, ১২ এপ্রিল ২০.৫৯ শতাংশ, ১৩ এপ্রিল এটি ছিল ১৮.২৯ শতাংশ, ১৪ এপ্রিল ২০.৮৯ শতাংশ।
কঠোর লকডাউনে শনাক্তের হার
১৪ এপ্রিল শুরু হয় কঠোর লকডাউন। সেদিন যারা নমুনা জমা দিয়েছেন, তাদের ফলাফল পাওয়া যায় পরদিন।
১৫ এপ্রিল শনাক্তের হার ছিল ২১ শতাংশ, ১৬ এপ্রিল তা আবার বেড়ে হয় ২৩.১৬ শতাংশ, ১৭ এপ্রিল ২১.৪৬ শতাংশ, ১৮ এপ্রিল ১৯.০৬ শতাংশ, ১৯ এপ্রিল ১৭.৬৮ শতাংশ, ২০ এপ্রিল ১৬.৮৫ শতাংশ।
কমতে শুরু করে ২১ এপ্রিল থেকে
সেদিন পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ১৫.০৭ শতাংশ, ২২ এপ্রিল তা ছিল ১৪.৬৩ শতাংশ, ২৩ এপ্রিল ১৪ শতাংশ, ২৪ এপ্রিল আরও কমে হয় ১৩.৯৫ শতাংশ।
২৫ এপ্রিল শনাক্তের হার ছিল ১৩.৯৪ শতাংশ, ২৬ এপ্রিল ১২.৮২ শতাংশ, ২৭ এপ্রিল ১২.৫১ শতাংশ, ২৮ এপ্রিল ১৩.৯৫ শতাংশ।
লকডাউনের আগে লাফিয়ে বাড়ে সংক্রমণ
করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার পর দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রথমবারের মতো সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের বেশি হয় ২১ মার্চ। সেদিন পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার বেড়ে হয় ১০.২৯, পরের দিন হয় ১১.১৯ শতাংশ।
২৩ মার্চ এটি দাঁড়ায় ১৪ শতাংশে, যা ২৪ মার্চ হয় ১২.৯৭ শতাংশ। ২৫ ও ২৬ মার্চ শনাক্তের হার ছিল যথাক্রমে ১৩.২৬ ও ১৩.৬৯ শতাংশ।
২৭ মার্চ সংক্রমণের হার আরও বেড়ে হয় ১৪.৯০ শতাংশ, যা পরদিন হয় ১৭.৬৫ শতাংশ। ২৯ মার্চ কিছুটা কমে সংক্রমণের হার দাঁড়ায় ১৬.৬৫ শতাংশ। ৩০ মার্চ এটি আবার বেড়ে হয় ১৮.৯৪ শতাংশ। মাসের শেষের দিন ৩১ মার্চ সংক্রমণের হার ছিল ১৯.৭ শতাংশ।
১ এপ্রিল থেকে টানা কয়েকদিন সংক্রমণের হার ২০ শতাংশের বেশি ছিল। মাসের প্রথম দিন পরীক্ষার বিবেচনায় হার ছির ২২.৯৪ শতাংশ। ২ এপ্রিল তা আরও বেড়ে হয় ২৩.২৮, ৩ এপ্রিল ২৩.১৫, ৪ এপ্রিল ২৩.০৭ শতাংশ, ৫ এপ্রিল ২৩.৪ শতাংশ।
অবশ্য পরীক্ষার বিবেচনায় সংক্রমণের হারের রেকর্ড হয়েছে প্রথম ঢেউয়ে। গত বছরের ৩১ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত যত পরীক্ষা হয়, তাদের মধ্যে ২৪ দশমিক ৮৯ শতাংশের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে।
বিশেষজ্ঞ মত
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চলামান লকডাউনের কারণে সংক্রমণ কমেছে।
করেনা প্রতিরোধে গঠিত কারিগরি কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনা সংক্রমণ আর কমে আসত। তবে যেটা কমে আসছে সেটা অবশ্যই লকডাউনের সুফল।’
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন বলেন, ‘লকডাউনের কারণেই করোনা সংক্রমণ নিম্নগামী হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, মাস্ক পরা, নিয়মিত হাতধোয়া, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসা সম্ভব এটা আবার প্রমাণ হলো। অর্থাৎ করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।’
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর জাহিদ মালেক স্বপন বলেন, ‘জনগণ সচেতন হয়েছে। মাস্ক বেশি পরছে। দেশে এখন করোনা রোগীর জন্য নির্ধারিত বেডের অর্ধেক ফাঁকা রয়েছে।’
ভয় ভারতকে নিয়ে
করোনা সংক্রমণ কমে আসতে থাকলেও সরকার লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়েছে মূলত ভারতের পরিস্থিতি দেখে।
প্রতিবেশী দেশটিতে করোনার বিস্তার লাফিয়ে বাড়ছে। প্রতিদিনই শনাক্তের সংখ্যায় বিশ্ব রেকর্ড হচ্ছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও।
সেখানে করোনার নতুন এক ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে, যার নাম দেয়া হয়েছে বেঙ্গল ভ্যারিয়েন্ট। এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীর অক্সিজেন লাগছে দ্রুত। আর লক্ষণ ছাড়াই রোগী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে গত সোমবার থেকে ভারত সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দুই সপ্তাহের জন্য। ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা বিশেষ অনুমতি নিয়ে দেশে ফিরতে পারছেন। তবে সীমান্তেই তাদের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। আর সেখানে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনেও থাকতে হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের ভাইরাস আমাদের দেশে যাতে না আসে সেই কারণে আমরা এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমরা আশা করছি আগামী কিছু দিনের মধ্যেই করোনা ভাইরাস আবার নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে।’
প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণ যেভাবে
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর মে মাসের মাঝামাঝিতে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে।
জুন থেকে আগস্ট- এই তিন মাসে করোনার সংক্রমণ ছিল তীব্র। এরপর থেকে তা কমতে থাকে।
টানা দুই সপ্তাহ সংক্রমণ পাঁচ শতাংশের নিচে এসে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসে ২ ফেব্রুয়ারি। এরপর আরও তিন সপ্তাহের বেশি এই পরিস্থিতি বজায় থাকে। এক পর্যায়ে পরীক্ষার বিবেচনায় সংক্রমণের হার ২ শতাংশে নেমে আসে।
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য