করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় অক্সিজেনের জন্য মানুষের দুশ্চিন্তা যেমন বেড়েছে, তেমনি আবার অক্সিজেন সুবিধা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বেশ কিছু সংগঠন।
ফোন করলেই তারা বাসায় এসে দিয়ে যাচ্ছে সিলিন্ডার। এ জন্য বেশিরভাগই কোনো টাকাও নিচ্ছে না। তবে বহু প্রতিষ্ঠান আছে যারা সিলিন্ডার ভাড়া দিচ্ছে, কেউ চাইলে সিলিন্ডার কিনতেও পারেন।
তবে একজন বক্ষব্যাধি চিকিৎসক জানিয়েছেন, রোগীর অক্সিজেন লাগলে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নেয়া ভালো।
‘অক্সিজেন ব্যাংক’, ‘করোনায় তারুণ্য’, ‘জয় বাংলা অক্সিজেন’, ‘সংযোগ’, ‘মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’, ‘ব্লাড কানেকশন’, ‘পে ইট ফরোয়ার্ড বাংলাদেশ’, ‘সংযোগ কানেক্টিং পিপল’ নামে উদ্যোগ আর পুলিশ বাহিনীও দুশ্চিন্তার এই সময়ে মানুষের সহায় হয়েছে।
কেবল রাজধানী ঢাকা নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা শহরেও এই উদ্যোগ চালু হয়েছে।
এক বছর আগে বিনামূল্যে ছাত্রলীগের তিন জয়বাংলা অক্সিজেন সেবা চালু করেন। বর্তমানে ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, ময়মনসিংহ শহরে চলছে এই সেবা৷ তাদের ৯০টি সিলিন্ডার দিয়ে এ পর্যন্ত ছয় হাজার করোনা রোগীকে সেবা দেয়া হয়েছে।
সকাল-বিকাল বা মধ্য রাত নেই। যে কোনো সময় ফোন করলেই সিলিন্ডার নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব হাজির হয়ে যান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এর বিনিময়ে কোনো টাকা তারা নেন না, এমনকি ভাড়াও না।
আর্থিক সহযোগিতাও করা যায় না এই উদ্যোগে। তবে কেউ চাইলে অক্সিজেনের সিলিন্ডার ভরে দিলে আপত্তি করেন না উদ্যোক্তারা।
জয় বাংলা অক্সিজেন পেতে ফোন করতে হবে: ০১৭২৫৩৪৩০৩৮; ০১৮৩৬৩৭৪৯২১; ০১৭১১১৭৩৪০৫ নম্বরে।
স্বেচ্ছায় রক্তদানে সামাজিক উদ্যোগ ‘ব্লাড কানেকশন’ এক সপ্তাহ আগে নিয়ে এসেছে ‘অক্সিজেন ব্যাংক’। করোনা আক্রান্ত কোনো রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতে না পারলে নির্ধারিত নিয়মে আবেদন করলেই বাসায় পৌঁছে দেন স্বেচ্ছাসেবীরা।
সংগঠনের ফাউন্ডার ও প্রেসিডেন্ট কামরুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যাদের অক্সিজেন প্রয়োজন হয় হটলাইন নম্বরে ফোন দিলেই রাজধানীজুড়ে এই সেবা মিলছে।’
ব্লাড কানেকশন’ এর অক্সিজেন পেতে ফোন করতে হবে: ০১৬০৯২৯৩৪৬০ ও ০১৬০০১৯৩৫৬০ নম্বরে।
বেসরকারি সংগঠন ‘পে ইট ফরোয়ার্ড বাংলাদেশ’ এর উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী নিয়ে গত বছর চালু হয় ‘অক্সিজেন ব্যাংক’। তাদের কাছে ১৮০টি সিলিন্ডার রয়েছে। রাজধানীর ঢাকার মধ্যে এই সেবা দেয়া হয়।
তবে অন্য দুটির মতো এই সেবা সবার জন্য বিনা মূল্যে নয়। যারা সামর্থ্য রাখেন, তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন সংগঠনটি পরিচালক আবু বকর।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সেবা পেতে অক্সিজেনের ৫০০ টাকা মূল্য দিতে হয়। এটা তিন দিনের জন্য দেয়া হয়। তিন দিনের বেশি সময় থাকলে যাদের সামর্থ্য তাদের থেকে বাড়তি টাকা নেয়া হয়। তবে গরিব মানুষদের থেকে বাড়তি কোনো টাকা নেয়া হয় না।’
এখন পর্যন্ত ঢাকায় সেবা দেয়া হলেও সারা দেশেই সেবা দিতে চান বলেও জানিয়েছেন আবু বকর।
‘পে ইট ফরোয়ার্ড বাংলাদেশ’ এর অক্সিজেন পেতে ফোন করতে হবে: ০১৮৭৩৮৫২৩২০, ০১৮৭৩৮৫২৩২১ নম্বরে।
‘সংযোগ কানেক্টিং পিপল’ নামে সংগঠনটি রাজধানীর পাশাপাশি সাভার, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, পটুয়াখালী, নওগাঁ, পঞ্চগড়, বগুড়ায় রোগীদের বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছে।
করোনার সংক্রমণ শুরু হলে গত বছরের মার্চে জন্ম নেয় সংগঠনটি। বর্তমানে তারা ৩২০টা সিলিন্ডার দিয়ে সেবা দিচ্ছে। সঙ্গে আছে ১৫টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর মেশিন।
এই উদ্যোগ নিয়ে আসা আহমেদ জাভেদ জামাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্টে ভুগছে অসংখ্য মানুষ। মানুষকে যেন শ্বাসকষ্ট পেতে না হয়, তাই আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। সংযোগের এ কর্মসূচিতে যুক্ত হয়েছে প্রায় শতাধিক তরুণ, যাদের বেশিরভাগই করোনায় চাকরি হারিয়েছেন।
‘ভোর রাত পর্যন্ত তারা মানুষের বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছেন। আমরা এই সব তরুণকে অভিনন্দন জানাই। দেশের বিপদে দেশের পাশে দাঁড়ানোই সবচেয়ে বড় কাজ।’
সংযোগ কানেক্টিং পিপল’ এর অক্সিজেন পেতে ফোন করতে হবে: ০১৫১৫৬১৯৯১৪, ০১৭৭১৯৮২৬৬৯ নম্বরে।
সেবামূলক প্রতিষ্ঠান আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম ফাউন্ডেশন ৫০০ সিলিন্ডার নিয়ে চালু করেছে অক্সিজেন সেবা। এরা শুধু চট্টগ্রামে সেবা দেয়।
অক্সিজেন সিলিন্ডার নিতে প্রয়োজন হচ্ছে শুধু পরিচয়পত্র। রোগীর প্রয়োজন হলে একাধিকবার অক্সিজেন সিলিন্ডার দিচ্ছে তারা।
ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোহাম্মদ সরওয়ার আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের মতো এবারও এ সেবা চালু করেছি। আমাদের ৫০০ সিলিন্ডার আছে, যেগুলো আমাদের ফ্যাক্টরি থেকে রিফিল করা হয়। এছাড়া কেউ যদি সিলিন্ডার রিফিল করতে চান, তাদেরও বিনা মূল্যে রিফিল করে দেয়া হবে।’
আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম ফাউন্ডেশনের অক্সিজেন পেতে ফোন করতে হবে: ০১৭২০৮১৮৫০৯, ০১৮৪২৫৫২৫৯০ নম্বরে।
পুলিশের উদ্যোগ
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ ১৮ এপ্রিল থেকে নগরের ১৬টি থানায় বিনা মূল্যে অক্সিজেন সেবা চালু করেছে। এ সেবার জন্য থানাগুলোয় এখন ৪৮টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। সেটি আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
চট্টগ্রামে পুলিশের অক্সিজেন পেতে ফোন করতে হবে: ০১৭১৩-৩৭৪৬৫৩ নম্বরে।
১৫ এপ্রিল ২২টি সিলিন্ডার নিয়ে সেবা চালু করে বরিশাল মহানগর পুলিশ। সিলিন্ডারের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে বলে সেদিনই জানিয়েছেন মহানগর পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান।
ফোন করলে পুলিশ সদস্যরাই রোগীদের বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছেন। ব্যবহার শেষে পুলিশ সদস্যরাই তা সংগ্রহ করে নিচ্ছেন।
বরিশালে পুলিশের অক্সিজেন পেতে হলে সেবাকেন্দ্রের ০১৩২০০৬৪১০২ ও বিএমপি কন্টোল রুমের ০১৩২০০৬৬৯৯৮ এ নম্বরে ফোন করলেই হবে।
নোয়াখালীর ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক এসএম কামরুল হাসান ১০টি সিলিন্ডার দিয়ে চালু করেন ‘নোয়াখালী পুলিশ কোভিড অক্সিজেন ব্যাংক।’ পরে এগিয়ে আসেন পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন। এখন সিলিন্ডারের সংখ্যা বেড়ে এখন হয়েছে ৪৫টি। এ সংখ্যা আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
অক্সিজেন ব্যাংকের তত্ত্বাবধায়ক এস এম কামরুল হাসান বলেন, ‘মোবাইল কল দিলেই অর্থ ছাড়া আমরা পৌঁছে দিচ্ছি অক্সিজেনের সিলিন্ডার। বর্তমানে আমাদের এ সেবা জেলার গণ্ডি পেরিয়ে এখন পাশের জেলা লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লার রোগীরাও পাচ্ছেন।’
‘নোয়াখালী পুলিশ কোভিড অক্সিজেন ব্যাংক’এর অক্সিজেন পেতে হলে ফোন করতে হবে: ০১৭১১২০২০২৪, ০১৭৩৬০০০৫০৬ নম্বরে।
ভাড়ায় মিলছে সিলিন্ডার
কেউ চাইলে এক সপ্তাহের জন্য সিলিন্ডার ভাড়া নিতে পারেন। এ জন্য তাকে পরিশোধ করতে হয় সাড়ে তিন হাজার টাকা।
দুই সপ্তাহ রাখতে চাইলে টাকা একটু বেশি লাগে। তখন দিতে হয় সাড়ে সাত হাজার টাকা। মুলত এসব প্রতিষ্ঠান উৎপাদন কোম্পানির কাছ থেকে অক্সিজেন কিনে বিক্রি করে।
ঢাকায় এমন অনেক কোম্পানি রয়েছে যারা শুধু একটি পেজ খুলে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন। এছাড়া অ্যাজমা, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে অক্সিজেনের সিলিন্ডার ভাড়া দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। গত বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর এই খাতের পরিসর বেড়েছে।
ফেসবুক ও অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগ অক্সিজেনসিলিন্ডারবিডি, অক্সিজেনবিডি, মেডিশপ ডটকম, লিনডে ডটকমডটবিডি, সিসমার্ক লিমিটেডসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেয়া যায় এই সেবা।
এসব প্রতিষ্ঠানের দাবি, ঢাকা শহরের ভেতরে দুই ঘণ্টার মধ্যে অক্সিজেন সেবার ফুল প্যাকেজ বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
এই প্যাকেজের মধ্যে আছে বিওসি লিনডে অক্সিজেন সিলিন্ডার, অক্সিজেন ট্রলি, ফ্লো মিটার ও মেডিক্যাল মাস্ক।
এমনই একটি প্রতিষ্ঠান ইওরকেয়ার ডটকম। প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা নিজের নাম রায়হান জানিয়ে বলেন, তাদের ৫০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। তাদের মতো প্রায় শতাধিক কোম্পানি রয়েছে ঢাকা শহরে।
অক্সিজেনের ব্যবসায় কারা
দেশে দীর্ঘদিন ধরে সিলিন্ডার অক্সিজেন ও অন্য গ্যাসীয় পদার্থের ব্যবসায় যুক্ত আছে স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিডেট, লিনডে গ্রুপ লিমিটেড, মেঘনা গ্রুপ, ইসলাম গ্রুপসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, গ্যাসের সিলিন্ডার অনেকটাই আমদানি নির্ভর। অক্সিজেন সিলিন্ডার সাধারণত আমদানি হয় চীন ও ভারত থেকে।
ইসলাম অক্সিজেনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বদরুদ্দীন আল হোসাইন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাতেগোনা কিছু কোম্পানি অক্সিজেন সিলিন্ডার আমদানি করে সাধারণ চাহিদা মেটায়। তবে গত এক মাসে অক্সিজেনের চাহিদা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেড়েছে।’
চাহিদা বাড়লেও কোম্পানি পর্যায়ে আগের চেয়ে দাম বাড়েনি দাবি করে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে খুচরা বাজারে দাম বাড়ানো হয়েছে।’
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অক্সিজেন ব্যবহার নয়
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও সহায়তা ছাড়া অক্সিজেন ব্যবহার না করতে বলছেন বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আজিজুর রহমান।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেকে অক্সিজেন ভর্তি সিলিন্ডার কিনে বাড়িতে রেখেছেন। কখন, কীভাবে, কতটুকু অক্সিজেন দিতে হবে, তা সঠিকভাবে না জানা থাকলে বড় ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। অক্সিজেন অকারণ ও মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে বিপদ আরও বাড়তে পারে।’
তিনি জানান, একজন সুস্থ–সবল মানুষের রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ সাধারণত ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশের মধ্যে থাকে। করোনা আক্রান্ত কোনো কোনো রোগীর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। তখন অক্সিজেন দেয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে।
‘রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা দেখার জন্য পালস অক্সিমিটার যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এই যন্ত্রে যদি দেখা যায় অক্সিজেনের মাত্রা কম, তাহলে কাছের কোনো হাসপাতালে যেতে হবে বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কিছুতেই নিজে নিজে অক্সিজেন নেয়া যাবে না। কারণ, একেক রোগীর ক্ষেত্রে অক্সিজেনের মাত্রা ও প্রয়োগপদ্ধতি একেক রকম হতে পারে’-বলেন এই বিশেষজ্ঞ।
দাম বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি
অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে খুচরা পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে দাম। এক মাস আগেও ১৪ লিটারের একটি সিলিন্ডারের দাম ছিল ১০ হাজার টাকা। এখন তা বাজার ভেদে ২২ থেকে ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আনোয়ার হোসোন প্রায় দুই যুগ ধরে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবসায় জড়িত। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমন অনেক মানুষ অক্সিজেন কিনে রেখে দিচ্ছে, যাদের আসলে অক্সিজেনের প্রয়োজন নেই। এ কারণেই সংকট তৈরি হয়েছে। এক মাস আগেও আমি দিনে ৩০টির মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি করেছি, এখন প্রতিদিন অন্তত ১০০ মানুষ কিনতে আসছে।’
মিরপুরের বাসিন্দা আরিফ হোসেন তার করোনা আক্রান্ত বাবাকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত ৫ দিন বাবা করোনা আক্রান্ত হয়ে বাসায় আছেন। এ সময় করোনা আক্রান্ত হলে শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে। যে কারণে ভয় থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনতে এসেছি। তবে দাম অনেক বেশি, ১৪ লিটারের একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম রেখেছে ২৬ হাজার টাকা।’
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫' এর অধীনে 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর' প্রতিষ্ঠিত হবে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ মঙ্গলবার দিবাগত রাতে এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনসহ গণ-অভ্যুত্থানের মর্ম ও আদর্শকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করা এবং ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছে এ অধ্যাদেশ। অধ্যাদেশটি জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে প্রকাশ করা হয়।
এই অধ্যাদেশের দ্বিতীয় অধ্যায়ে অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা ও এর কার্যাবলীসহ নানাবিধ বিষয় অর্ন্তভূক্ত রয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ সাধন ও পুনর্বাসনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন 'জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর' প্রতিষ্ঠিত হবে।
অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থাকবে ঢাকায়। সরকার প্রয়োজনে ঢাকার বাইরে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অধিদপ্তরের শাখা কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
অধিদপ্তরের কার্যাবলী হচ্ছে- সরকারি গেজেটে প্রকাশিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা ও ডাটাবেজ সংরক্ষণ, প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন এবং হালনাগাদ আকারে সরকারি গেজেটে প্রকাশের জন্য সুপারিশ।
এছাড়া রয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ সাধন ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত এককালীন ও মাসিক আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ।
আরো রয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ পরিবার ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ সাধন ও পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন।
কার্যাবলীতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ সাধন ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দেশি-বিদেশী সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয়সাধনের কথা রয়েছে।
অধিদপ্তরের একজন মহাপরিচালক থাকবেন এবং তিনি অধিদপ্তরের প্রধান নির্বাহী হবেন।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, এটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনসহ গণ-অভ্যুত্থানের মর্ম ও আদর্শকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করা এবং ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছে।
অধ্যাদেশ আরো বলা হয়েছে, তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের বর্ণবাদী, নিপীড়নমূলক ও বৈষম্যমূলক নীতি এবং বাংলাদেশের জনগণকে নির্বিচারে হত্যার কারণে মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, জনগণের অব্যাহত সংগ্রাম ও ত্যাগ তিতিক্ষা সত্ত্বেও স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরও সুবিচার, মর্যাদাপূর্ণ গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। জানুয়ারি ২০০৯ সাল থেকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দলীয়করণ, দুর্নীতি ও পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ফলে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান অকার্যকর হয়। অন্যায়ভাবে শক্তি প্রয়োগ করে বিরোধীমত দমন, গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যা সংঘটিত হয়। দেশের অর্থ পাচার ও লুটপাট নীতির ফলে অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি, নারী ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী কাঠামোগত সহিংসতার শিকার হয়। জনগণের বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকার হরণ করে জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার সৃষ্ট প্রেক্ষাপট জনগণকে শঙ্কিত করে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, জুলাই ২০২৪ এ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে দল-মত-ধর্ম-বর্ণ-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আপামর জনতার দীর্ঘ পনেরো বৎসরের ফ্যাসিবাদ ও বিচারহীনতার ফলে পুঞ্জীভূত ক্ষোভে এক গণআন্দোলন হতে ক্রমান্বয়ে গণঅভ্যুত্থানে রূপ লাভ করে ৫ আগস্ট, ২০২৪ এ ফ্যাসিবাদী শাসককে জনগণের কাছে পরাজিত হয়ে দেশ ছেড়ে পলায়নে বাধ্য করে। এ গণঅভ্যুত্থানে ব্যাপক সংখ্যক নারী ও পুরুষ অংশগ্রহণ করেছেন এবং দেশব্যাপী সহস্রাধিক নিরস্ত্র দেশপ্রেমিক ছাত্রজনতা শহীদ হয়েছেন।
এছাড়া অসংখ্য মানুষ আহত, কেউ কেউ গুরুতর আহত হয়েছেন। অধিকাংশই আঘাত ও নৃশংসতার বিভীষিকায় পর্যুদস্ত এবং তাদের এই আত্মত্যাগকে যথার্থ সম্মান প্রদর্শন অপরিহার্য।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, জুলাই আন্দোলনে ত্যাগের দৃষ্টান্ত জাতির গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও রাষ্ট্র পুনর্গঠনের একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসাবে সমুন্নত রাখা কর্তব্য।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের যথোপযুক্ত স্বীকৃতি, সম্মান, কল্যাণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ সাধন ও পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়। এই অধ্যাদেশ 'জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫' নামে অভিহিত হবে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও গেজেটে বলা হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যদের জনবিচ্ছিন্ন না হয়ে বরং জনসংযোগ ও নিরাপত্তার মেলবন্ধনের মাধ্যমে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত 'প্রধান উপদেষ্টার দরবার' অনুষ্ঠানের বক্তব্যে এ কথা বলেন।
এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্যদের সকল রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে এসএসএফ মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুস সামাদ চৌধুরী বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, তিন বাহিনী প্রধান, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মাসুদপুর সীমান্ত দিয়ে নারী ও শিশুসহ ২০ জনকে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
বুধবার (১৮ জুন) ভোর পৌনে ৫টার দিকে ভারত থেকে তাদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দেওয়া হয়। এরপর মাসুদপুর বিজিবি ক্যাম্পের একটি টহল দল তাদের আটক করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ৫৩ বিজিবি ব্যাটালিনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফাহাদ মাহমুদ।
তিনি জানান, আটকদের মধ্যে ৩ জন পুরুষ, ৭ জন মহিলা ও ১০টি শিশু রয়েছে। তারা কুড়িগ্রামের বাসিন্দা বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে।
এ ছাড়া আটকদের নাম ও ঠিকানা যাচাইয়ের কাজ শেষে তাদের শিবগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।
কর্নেল ফাহাদ বলেন, ‘এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফের কাছে জোর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।’
এর আগে, গত ৩ জুন জেলার ভোলাহাট উপজেলার চাঁনশিকারি সীমান্ত দিয়ে ৮ জনকে ও ২৭ মে গোমস্তাপুর উপজেলার বিভীষণ সীমান্ত দিয়ে ১৭জনকে পুশইন করে বিএসএফ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার গোসাইপুর-জালশুকা সড়কের নির্মাণ কাজ ১১ মাসেও শেষ হয়নি। অথচ ঠিকাদারের শর্ত অনুসারে এ কাজ নয় মাসে শেষ করার কথা। অভিযোগ রয়েছে- ঠিকাদার লোকমান হোসেন এ সড়কের বক্সকাটিং করে ১১ মাস ধরে ফেলে রেখেছেন। তার স্বেচ্ছাচারিতা ও গাফিলতে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। উল্লেখ্য তিতাস নদীর উত্তর পাড়ে বড়াইল ইউনিয়নের একটি গ্রাম গোসাইপুর। গ্রামের পশ্চিম অংশে বাজার। বাজারের পূর্ব দিকে দিয়ে চলে গেছে গোসাইপুর-জালশুকা সড়কটি। এ বাজারের যাতায়াতের জন্য রাধানগর, চরগোসাইপুর, জালশুকা, বড়াইল, মেরাতুলী গ্রামের মানুষেরাও সড়কটি ব্যবহার করে।
গোসাইপুর বাজারের মুদি মালের ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেন বলেন-"আমার গ্রামের বাড়ি জালশুকা । প্রতিদিন এ সড়কে বাজারে আসি। সড়কটি বর্ষাকালে বৃষ্টি হলেই পানি ও কাঁদা মিলে চলাচলে অযোগ্য হয়ে যায়"। বড়াইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বাসার বলেন-"পূর্ব অঞ্চলের জনগণের জন্য এই রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গোসাইপুর বাজার ও রাধানগর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজে আসা-যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। সড়কটির কাজ শেষ না হওয়ার কারণে জনগণের যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে"। গোসাইপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার ডা. হুমায়ুন কবীর বলেন-"সড়কটি দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত চলাচলে ভোগান্তির শেষ নেই। নির্মাণ কাজ করতে এসে ঠিকাদার আর কাজ করছেন না। এখন বর্ষার বৃষ্টির কারনে মোড়ে মোড়ে রাস্তা ভেঙে মাটি পড়ে যাচ্ছে। যাত্রীরা পা পিছলে পড়ে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না শিক্ষার্থীরাও"। কাজ বন্ধ থাকার বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন- "সড়কটি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে আমি কয়েকবার তাগিদ দিয়েছি"। এ বিষয়ে ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব হোসেন বলেন-"এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে"। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব চৌধুরী বলেন-"এই সড়কের কাজ বন্ধ থাকার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি দ্রুত সময়ে কাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করব"।
শেরপুর জেলা কৃষকদলের সহ-সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিকী ওরফে বাচ্চু মেকারকে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ১২ বছর পূর্বে শেরপুরে ডিবি হেফাজতে হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শেরপুরের তৎকালীন হুইপ ও মহিলা এমপি এবং পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ডিবির পরিদর্শকসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে গত ১ জুন আদালতে ওই মামলাটি দায়ের করেন নিহতের ছেলে মোকারুল ইসলাম মোহন। ১৭ জুন মঙ্গলবার দুপুরে ওই মামলার শুনানী শেষে শেরপুর সদর সি,আর আমলী আদালতের বিচারক (সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) সুলতান মাহমুদ মিলন মামলাটি জামালপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপারকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। এর আগে
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদী পক্ষের আইনজীবী আব্দুল আজিজ সজীব রানা বলেন, নালিশী মামলাটি দায়েরের সময় আদালত একই ঘটনায় ইতিপূর্বে থানায় কোন মামলা হয়েছে কি না তৎমর্মে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে সদর থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক থানার প্রতিবেদন আসার প্রেক্ষিতে আদালতের বিচারক মামলার ঘটনার বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জামালপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন।
মামলার আসামিদের মধ্যে শেরপুরের সাবেক পুলিশ সুপার, বর্তমানে ডিআইজি মো. আনিছুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহিবুল ইসলাম খান, জেলা ডিবি পুলিশের সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম, সাবেক সেকেন্ড অফিসার মো. জহুরুল ইসলাম, সাবেক এসআই মো. রিয়াদ হোসেন, শহর পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক এসআই, মো. নজরুল ইসলাম, নিষিদ্ধ ঘোষিত শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, শেরপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক হুইপ মো. আতিউর রহমান আতিক, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ডিআইজি আনিসুর রহমানের স্ত্রী ফাতেমাতুজহুরা শ্যামলী, তার ছোট ভাই আওয়ামী লীগ নেতা মো. আরিফ রেজা ও মো. শুভ রেজা, শেরপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হাসান উৎপল, আওয়ামী লীগ নেতা চন্দন সাহা, আমিরুল ইসলাম, বেলাল হোসেন, মো. আব্দুল হামিদ, হাজী মোশারফ, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীম আরা বেগম, যুব মহিলা লীগ নেত্রী মাহবুবা রহমান শিমু, যুবলীগ নেতা তরিকুল ইসলাম রাজু, ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী, মো. শহিদুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, মো. আব্দুল আলিম, আশীষ কুমার সুর, সাংবাদিক শরিফুর রহমান শরিফ, মাসুদ রানা, মো. সাইদুল ইসলাম সাইদ, মনিরুজ্জামান মিলন তালুকদার, চানু মিয়া, সেতু দত্ত, গোপাল দত্তসহ ৩৪ জন স্বনামেসহ আরও অনেকের কথা বলা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে প্রকাশ, শেরপুরের তৎকালীন পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান ও ডিবির ওসি নজরুল ইসলামের সহযোগিতায় ডিবি পুলিশ ২০১২ সালের ৩ ডিসেম্বর সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শহরের সজবরখিলা মহল্লার বাসা থেকে বিএনপি নেতা আবু বক্কর সিদ্দিকী বাচ্চু ওরফে বাচ্চু মেকারকে ডিবি অফিসে নিয়ে যায়। পরদিন ৪ ডিসেম্বর রাত আড়াইটার দিকে আবু বকর সিদ্দিকী বাচ্চুর নিথর দেহটি তার বাড়িতে রেখে যায় পুলিশ। আর ওই ঘটনায় সাবেক হুইপ আতিউর রহমান আতিক ও সংরক্ষিত এমপি ফাতেমাতুজ্জহুরা শ্যামলীর বিরুদ্ধে পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়েছে।
পরিবারের অভিযোগ, আবু বক্কর সিদ্দিকী বাচ্চু ডিশ ক্যাবলের ব্যবসার পাশাপাশি বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। তার নামে কোন মামলা ছিল না। তাকে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও পুলিশ প্রশাসনের লোকজন পূর্বপরিকল্পিতভাবে ডিবি হেফাজতে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
নিহতের ছেলে মোকারুল ইসলাম মোহন সাংবাদিকদের বলেন, বাবাকে হত্যা করার পর পুলিশ পাহারায় জানাজা এবং দাফন সম্পন্ন করা হয়। আমরা তখন মামলা করতে পারিনি। মামলা না করার জন্য পুলিশ সবসময় আমাদেরকে ভয়ভীতি দেখাতো এবং আমাদের তিন ভাইকে বিভিন্ন মামলায় দিয়ে হয়রানী করেছে। আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাই।
ইরানের নাগরিকদের তাদের স্মার্টফোন থেকে মেসেজিং ও ফোন অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ মুছে ফেলার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকার। তেহরানের অভিযোগ, এই অ্যাপ ইসরায়েলে তথ্য পাঠানোর জন্য ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৭ জুন) বিকালে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে নাগরিকদের হোয়াটসঅ্যাপ মুছে ফেলার আহ্বান জানানো হয়। তবে নিজেদের অভিযোগের সপক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থান করেনি তেহরান কর্তৃপক্ষ।
তবে ইরানের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ।
এ ছাড়া ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ওই বার্তা সম্প্রচার হওয়ার পরপরই এক বিবৃতিতে হোয়াটসঅ্যাপ জানায়, যে সময়ে মানুষের এই ধরনের সেবা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, ঠিক সেই সময়ে এ ধরনের ভুয়া প্রতিবেদনের তথ্যকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে আমাদের সেবা বন্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
তাদের দাবি, হোয়াটসঅ্যাপে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবহৃত হয়। এর মানে হলো কোনো মধ্যবর্তী সেবা প্রদানকারী বার্তাগুলো পড়তে পারে না।
বিবৃতিতে হোয়াটসঅ্যাপ আরও জানায়, তারা ব্যবহারকারীদের সুনির্দিষ্ট অবস্থান অনুসরণ করে না; কাদের মধ্যে বার্তা আদান-প্রদান চলছে, তার তথ্যও রাখে না এবং ব্যক্তিগত বার্তাগুলোও অনুসরণ করে না। কোনো সরকারের কাছে গণহারে তথ্য সরবরাহ করে না বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে হোয়াটস্যাপ।
এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের অর্থ হচ্ছে, বার্তাগুলো এমনভাবে গোপন করা হয় যে কেবল প্রেরক ও প্রাপকই তা পড়তে পারে। কেউ যদি বার্তাটি মাঝপথে ধরে ফেলে, তবে তারা কেবল একটি অসংগঠিত অক্ষরের ঝাঁক দেখতে পাবে যা সঠিক নিরাপত্তা চাবি (Security Key) ছাড়া উদ্ধার (Decode) করা সম্ভব নয়।
তবে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ গ্রেগরি ফ্যালকো বলেন, ‘হোয়াটসঅ্যাপে এমন কিছু মেটাডেটা বোঝা সম্ভব যা এনক্রিপ্ট করা হয় না, এটি ইতোমধ্যেই প্রমাণিত। এতে বোঝা যায়, মানুষ কীভাবে অ্যাপটি ব্যবহার করছে। এই সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। এ কারণে অনেকেই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতে আগ্রহী হন না।’
গ্রেগরি আরও বলেন, “আরেকটি সমস্যা হলো ‘ডেটা সার্বভৌমত্ব’, যেখানে কোনো নির্দিষ্ট দেশের হোয়াটসঅ্যাপের তথ্য হোস্ট করা ডেটা সেন্টারগুলো প্রায়ই সেই দেশে থাকে না। উদাহরণস্বরূপ, এটি পুরোপুরি সম্ভব যে ইরানের হোয়াটসঅ্যাপ তথ্য ইরানে হোস্ট করা হচ্ছে না।”
প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব অ্যালগরিদম ব্যবহার করে তাদের তথ্য দেশেই সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ করা উচিত বলে পরামর্শ দেন তিনি। বৈশ্বিক তথ্য অবকাঠামোর ওপর বিশ্বাস রাখা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে বলেও মন্তব্য করেন এই বিশেষজ্ঞ।
হোয়াটসঅ্যাপের মালিক মেটা, যেটি ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মূল কোম্পানি। ইরানে ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপ অন্যতম জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ ছিল।
এর আগেও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইরান। তবে দেশটির অনেকেই এখনো প্রক্সি ও ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করে সেগুলো ব্যবহার করে থাকেন।
২০২২ সালে দেশটিতে নীতি পুলিশের হেফাজতে এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ চলাকালে হোয়াটসঅ্যাপ ও গুগল প্লে নিষিদ্ধ করা হয়। যদিও এই নিষেধাজ্ঞা গত বছরের শেষ দিকে তুলে নেওয়া হয়।
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সংযোগ সড়ক ও রাস্তা না থাকায় কাজে আসছে না প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজ। ফলে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয় ৫ গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের। এমন ব্রিজের দেখা মিলেছে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর আদ্রা গ্রামের ফসলের মাঠে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ব্রিজটি। ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও এখন পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচলের জন্য নির্মিত হয়নি সড়ক। ফলে কোনো কাজেই আসছে না সাতপোয়া ইউনিয়নের, চর রৌহা, আকন্দপাড়া, মাজারিয়া ও খামার মাগুরাসহ পার্শ্ববর্তী মাদারগঞ্জ উপজেলার আরও ২টি গ্রামের জনসাধারণসহ হাজারও মানুষের।
সংযোগ সড়ক না থাকায় প্রতিদিন এসব এলাকার ফসলের মাঠের আল দিয়ে দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করছেন স্থানীয়রা। ব্রিজটি নির্মাণের দীর্ঘদিন পার হলেও এটি এখনো জনগণের চলাচলের জন্য ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠেনি। ব্রিজের দুই পাশে কাঁদা ও অসমতল জমির কারণে শিশু, বৃদ্ধ এমনকি সাধারণ পথচারীদেরও চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া কৃষকদের আবাদি ফসল আনা-নেওয়া বা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতেও হয়েছে চরম দুর্ভোগ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হাসানুর কবীর স্বপন, মাসুদ রানা, চান মিয়া, ছমিরন বেওয়া বলেন, ব্রিজটি নির্মাণের খবরে আমরা এলাকাবাসীরা খুবই খুশি হয়েছিলাম। ভেবে ছিলাম আমাদের কয়েক গ্রামের দীর্ঘদিনের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘব হবে। কিন্তু ব্রিজটি নির্মাণের এতদিন পার হলেও সড়ক না থাকায় এটি আমাদের কোনো কাজে আসছে না। আমরা দাবি জানাই অতি দ্রুত আমাদের চলাচলের সুবিধার্থে ব্রিজটির দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী শওকত জামিল বলেন, ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই ব্রিজটি ও সড়কের কথা জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। ওই এলাকার মানুষদের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘবে মাটি কেটে রাস্তা উঁচু করে ব্রিজের সঙ্গে সংযোগ রাস্তা নির্মাণ করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
মন্তব্য