গত বছরের ৯ মে রংপুর ১০০ শয্যার শিশু হাসপাতালকে করোনা আইসোলেশন হাসপাতাল হিসেবে উদ্বোধন করেন তখনকার রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কে এম তারিকুল ইসলাম। ৬৪ জন জনবল দিয়ে হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রথম ধাপে ১০টি আইসিইউ শয্যা ও ১০টি ভেন্টিলেটর দিয়ে কার্যক্রম শুরু হলেও ধীরে ধীরে তা ৫০ শয্যায় উন্নীত করা করার কথা ছিল। কিন্তু এক বছরে ওই ১০টির বাইরে একটি আইসিইউ বেডও বাড়েনি।
এ হাসপাতাল উদ্বোধনের আগের মাসে গত বছরের এপ্রিলে এখানে ৫০টি আইসিইউ বেড স্থাপনের বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এক বছরে কেন আইসিইউ বেডসংখ্যা বাড়ল না, এমন প্রশ্নে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক আহাদ আলী নিউজবাংলাকে জানান, ‘আমরা বাড়ানোর প্রস্তাব দিইনি। এ নিয়ে সিভিল সার্জনরাও কোনো মিটিংয়ে কথা বলেননি। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হবে।’
রংপুরের এই বিশেষায়িত হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রোগী আছেন ৪২ জন। ১০টি আইসিইউতেই রোগী ভর্তি। রোগীর অবস্থা অনুযায়ী আরও ১৫টি আইসিইউ প্রয়োজন।
দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল কুদ্দুস নিউজবাংলাকে জানান, দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একটি অংশ করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল করা হয়েছে। ১০০ বেডের এই হাসপাতালটিতে ১৮টি আইসিইউ বেড। নতুন করে গত সপ্তাহে আরও ৩০টি বেড চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন তারা।
দিনাজপুরের এই হাসপাতালে ৫৩ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ আছেন ১৯ জন। তাদের ১৮ জনই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। এ কারণে সেখানে দ্রুত আইসিইউ বেড বাড়ানো জরুরি মনে করেছেন তিনি।
করোনায় সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য রংপুর বিভাগের আট জেলায় আইসিইউয়ের সংকট দেখা দিয়েছে। মুমূর্ষু রোগীদের জন্য স্বজনদের দৌড়ঝাঁপ করতে হচ্ছে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে।
কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা সদর হাসপাতালে এখন পর্যন্ত কোনো আইসিইউ বেড স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়নি। এই জেলাগুলোর মুমূর্ষু রোগীদের ভরসা এখন রংপুর আর দিনাজপুর হাসপাতাল।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, আট জেলায় বিশেষায়িত ১২টি হাসপাতাল রয়েছে। এসব হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ডে বেড ৫০৬টি। এ ছাড়া বিভাগের ৫৮টি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে করোনা রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে রংপুর বিভাগকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই বিভাগে এখন সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, এ বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৬০ জনের বেশি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার ৪৩০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
২০ এপ্রিল পর্যন্ত বিভাগে মারা গেছেন ৩৩১ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন দিনাজপুরে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর (মার্চ ২০২১ থেকে) সংক্রমণের হার ২ ভাগ থেকে ২৪ ভাগে উঠে এসেছে, যা আশঙ্কার কারণ। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের আইসোলেশনে রাখার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না স্বাস্থ্য বিভাগসহ প্রশাসন। ফলে সংক্রমণের হার বাড়ছে।
রংপুর বিভাগের আট জেলার কোথাও বুথ খুলে করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে না। ফলে নমুনা দেওয়ার জন্য মানুষকে বিভিন্ন স্থানে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। রিপোর্টও পাওয়া যাচ্ছে দেরিতে। করোনা হয়েছে কি হয়নি, এটা জানতে জানতেই সংক্রমিত হচ্ছে পুরো পরিবার।
রংপুর স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, চার জেলার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজে একটি পিসিআর বসানো হয়েছে। মঙ্গলবার সেখানে ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এখনও ১০০টির বেশি নমুনা পরীক্ষার জন্য অপেক্ষমাণ।
দিনাজপুর অঞ্চলের চার জেলার করোনায় আক্রান্ত মানুষদের নমুনা পরীক্ষার জন্য দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একটি পিসিআর মেশিন বসানো হয়েছে। সেখানে সর্বোচ্চ ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। এখনও সেখানে ১৫০টির বেশি নমুনা পরীক্ষা করা যায়নি।
প্রতিদিন নমুনার সংখ্যা বাড়লেও পরীক্ষা করা যাচ্ছে মাত্র ৩৭৬টি। ফলে নমুনা সংগ্রহ ও ফলাফলের দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরও একটি পিসিআর মেশিন বসানোর প্রস্তুতি চলছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এই পিসিআর চালুর আশা করছেন অধ্যক্ষ নুরুন্নবী লাইজু।
জানা গেছে, নমুনা সংগ্রহের বুথও কমে গেছে। রংপুর বিভাগে শুরুতে ৭৪টি বুথে করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হতো। এখন ৫৮টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রংপুর ও দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ আর রংপুর সিটি করপোরেশনের একটি বুথে নমুনা সংগ্রহ চলছে।
নমুনা দেওয়ার পর ফলাফল জানতে লেগে যাচ্ছে সপ্তাহখানেক। এর মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।
রংপুরের কামালকাছনা নতুন পাড়ার বাসিন্দা ফজলে রাব্বি শুভ জানান, তিনি ১০ এপ্রিল শনিবার নমুনা দিয়েছেন আর ১৭ এপ্রিল তাকে ফলাফল দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার সব উপসর্গই ছিল। খুব টেনশনে ছিলাম। পাঁচ দিন ফোন করার পর সাত দিনের দিন ফলাফল পাই। তাতে রেজাল্ট নেগেটিভ আসে।’
করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করে বলেন, মুমূর্ষু রোগী যাদের আইসিইউ দরকার তা পাওয়া যাচ্ছে না। দ্রুত আইসিইউ বেড ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তা না হলে মৃত্যুহার আরও বেড়ে যাবে।
রংপুর করোনা প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ‘নতুন করে নমুনা পরীক্ষার কোনো বুথ আমরা দেখছি না। ঠিকমতো নমুনা সংগ্রহ করা হলে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর যারা বাসায় অবস্থান করছেন তাদের বাড়িসহ আশপাশের এলাকা এর আগে যেভাবে লালপতাকা উড়িয়ে দিয়ে লকডাউন ঘোষণা করা হতো এবং পুলিশ দিয়ে খোঁজখবর নেয়া হতো, এবার তা করা হচ্ছে না। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
তিনি বলেন, আক্রান্তদের কঠোর নজরদারিতে রাখতে হবে। এতে করে কিছুটা হলে সংক্রমণ কমে যাবে।
রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. হেরম্ব কুমার বলেন, ‘রংপুর শহরে রংপুর সিটি করপোরেশন নমুনা সংগ্রহ করছে। আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে নমুনা সংগ্রহ করে পিসিআর ল্যাবে পাঠাচ্ছি। আমরা বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারাই দেখছে।’
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আহাদ আলী বলেন, ‘করোনা আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। অনেক আক্রান্ত রোগী হাসপাতালগুলোতে আসছেন। কিন্তু আইসিইউ বেডের সংকটের কারণে কোথাও কোথাও চিকিৎসা দিতে সমস্যা হচ্ছে। আমরা আইসিইউ বেড বাড়ানোসহ করোনা রোগীদের চিকিৎসার সব সুযোগসুবিধার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি আরও কিছু আইসিইউ বেড পাওয়া যাবে।’
আরও পড়ুন:অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের পর নিরাপত্তাহীনতায় পুনরায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় গারো পাহাড় সীমান্তে মানব পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যসহ ৭ জনকে আটক করেছে বিজিবি।
সোমবার (২৫ আগস্ট) সকাল পৌণে সাতটার দিকে শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার নকশি সীমান্ত পথে নকশি ক্যাম্পের টহলরত বজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে বিকেলে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
বিষয়টি ২৬ আগষ্ট সকালে বিজিবি পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়।
আটককৃতরা হলো মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুরুঙ্গা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে রমজান আলী (২৪) ও আসমত আলীর ছেলে রাসেল (১৬)। আটক অনুপ্রবেশকারীরা হলো, নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বোমবাঘ গ্রামের শামীম শেখ (২৩), আফসানা খানম (২২), রুমা বেগম (৩২), মিলিনা বিশ্বাস (২৮) ও তিন বছর বয়সী শিশু কাশেম বিশ্বাস।
বিজিবি এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, মাথাপিছু ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে গত ২৩ আগস্ট রাতের আধারে নালিতাবাড়ীর সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ পথে নারী এবং শিশুসহ ৫ বাংলাদেশীকে ভারতে পাঠায় মানব পাচারকারী রমজান আলী ও রাসেল। কিন্তু ভারতীয় পুলিশের তৎপরতায় নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে এ পাঁচ বাংলাদেশী। এ কারণে ২৫ আগষ্ট সোমবার সকাল পৌণে সাতটার দিকে ঝিনাইগাতির নকশি সীমান্তের কালিমন্দির এলাকা দিয়ে পুনরায় তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এসময় টহলরত বিজিবি সদস্যরা টের পেয়ে সবাইকে আটক করে। পরে মানব পাচারে জড়িত দুইজনের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে এবং অন্য ৫ জনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অপরাধে নালিতাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করা হয় এবং সবাইকে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ময়মনসিংহ বিজিবি’র ৩৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মেহেদী হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিজিবির পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে।
ঝালকাঠিতে গ্রাহকদের চাহিদা বিবেচনায় এনে ব্রান্ডশপ লোটো ও লি কুপার প্রতিষ্ঠানটি তাদের ১৩২তম ফ্লাগশিপ আউটলেট উদ্বোধন করেছে।
এক্সপ্রেস লেদার প্রোডাক্ট লিঃ এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর কাজী জাভেদ ইসলাম সহ কোম্পানির অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের সাথে নিয়ে ফিতা কেটে আউটলেটটি উদ্বোধন করেন ঝালকাঠির পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়।
পৌর শহরের সাধনার মোড়ে মঙ্গলবার ২৬ আগষ্ট সকাল ১০টায় লোটো ও লি কুপারের ফ্ল্যাগশিপ আউটলেটদ্বয়ের শুভ উদ্বোধন আনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহক ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ঝালকাঠিতে কোম্পানীর এ যাত্রার প্রথম দিনে স্থানীয় ফ্যাশন সচেতন তরুণ তরুণীরা তাদের পছন্দের পন্য কালেকশন বেছে নিতে ভীর জমায়।
কোম্পানীর পক্ষ থেকে জানানো হয় প্রথম তিনদিনের প্রতিদিন প্রথম ৩০ জন পাবেন ৫০% ছাড়, ২য় ৩০ জন পাবেন ৪০% ছাড়, ৩য় ৩০ জন পাবেন ৩০% ছাড়, ৪র্থ ৩০ জন পাবেন ২০% ছাড় এবং তৎপরবর্তী সকল কাস্টমার পাবেন ১০% ছাড়। এই বিশেষ ছাড় ২৬শে আগষ্ট থেকে শুরু হয়ে ২৮ তারিখ পর্যন্ত চলমান থাকবে
নওগাঁয় সপ্তম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে আটক রেখে ধর্ষণ মামলায় আ: সালাম (৩৮) নামে এক আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এ রায় দেন।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আ: সালাম সদর উপজেলার বর্ষাইল মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম ওই শিক্ষার্থীর পরিবার পত্নীতলা উপজেলায় ভাড়া থাকতেন। ভাঙ্গারী ব্যবসার সুবাদে আসামী আ: সালামও পাশাপাশি একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ভিকটিম মাদ্রাসায় যাওয়া আসার পথে আ: সালাম বিভিন্ন সময় কু-প্রস্তাব দিতো এবং রাস্তাঘাটে বিরক্ত করতো। বিষয়টি জানাজানি হলে আসামী আ: সালাম ওই ভিকটিমের পরিবারকে গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখাতো। এরই একপর্যায়ে ২০২২ সালের ১১ জুলাই বিকেল তিনটার দিকে আসামী আ: সালাম একটি বাজার এলাকা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নওগাঁ সদর উপজেলার ভবানীপুর দক্ষিন পাড়া গ্রামের মোজাফ্ফর রহমানের ভাড়া বাড়িতে আটক রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই শিক্ষার্থীর বাবা পত্নীতলা থানায় অভিযোগ করলে র্যাব ওই বাড়ি থেকে আসামিকে গ্রেফতার ও মেয়েকে উদ্ধার করে। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা থাকায় আসামী আ: সালামসহ চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আদালত ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে আজ আ: সালামকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়। বাকি আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস দেওয়া হয়।
মামলার এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রেজাউল করিম সন্তোষ প্রকাশ করেন। আসামী পক্ষের আইনজীবী ফাহমিদা কুলসুম উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানান।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের বালুকাপাড়া গ্রামে রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পুনরায় তাকে বিয়ে করায় এক দম্পতিকে দেড় বছর ধরে 'সমাজচ্যুত' করে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে নালিশ দেওয়ার জের ধরে পেটানো হয় দিনমজুর আব্দুল জলিল প্রামানিককে। প্রতিপক্ষের লোকজনের মারধরে এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে গেছে।
এঘটনায় তিনি একটি থানায় অভিযোগ করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে সেটি মামলাটি হিসেবে রের্কড করা হয়। তবে মামলার এজাহারে সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
সরেজমিনে বালুকাপাড়া গ্রামে গিয়ে আব্দুল জলিলকে ১৮ মাস ধরে সমাজচ্যুত করে রাখার তথ্য জানা গেছে। আব্দুল জলিলের সমাজচ্যুত করার ঘটনাটি স্থানীয় রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশীদ মন্ডলও অবগত আছেন। তিনি দুই পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকেও সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি সমাধান করতে পারেনি।
গ্রামবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক কলহের কারণে আব্দুল জলিল প্রামানিক রাগের মাথায় তার স্ত্রীকে তালাক দেন। এঘটনার ২৯ দিন পর তিনি আবারও স্ত্রীকে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় গ্রাম্য মাতব্বরেরা ক্ষুব্ধ হয়ে আব্দুল জলিল প্রামানিকের পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রাখেন। সেই সময় জলিল প্রামানিক বিষয়টি আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)কে জানান। ইউএনও রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মণ্ডলকে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দেন। ইউপি চেয়ারম্যান উভয়পক্ষকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। তবে কার্যত কোন কোনো সমাধান করতে পারেননি। এতে গ্রাম্য মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলের ওপর আরও ক্ষুব্ধ হন। সমাজচ্যুত করে রাখা আব্দুল জলিল গত ১৫ আগস্ট রাত আটটার দিকে গ্রামের মসজিদের দিকে রওনা হন। এসময় মাতব্বরেরা তাকে দুই দফায় প্রচন্ড মারধর করেন। এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে যায়। তিনি চিকিৎসা নিয়ে থানায় আট জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
বালুকাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেড় বছর আগে আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। কয়েক দিন পর আবার সংসার শুরু করেন। এনিয়ে গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিল প্রামানিককে সমাজচ্যুত করেন। এনিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় বৃদ্ধা লুৎফন নেছা বলেন, আমি কাজ করতে পারিনি। আব্দুল জলিলের বউ আমার বাড়িতে এসে জবাই করা মুরগির তরকারি রান্না করে দিয়েছিল। আমি জলিলের বাড়িতে গিয়ে এক বাটি মুরগির মাংসের তরকারি দিয়ে এসেছি। এতে আমাকেও সমাজচ্যুত করার হুমকি দিয়েছিল।
বালুকাপাড়া গ্রামের মোড়ের দোকানি হাফিজার রহমান বলেন, বউকে তালাক দেওয়ার ঘটনায় আব্দুল জলিল প্রামানিককে গ্রামের মাতব্বরেরা সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল গ্রামের সামাজিক কোন কর্মকান্ডে অংশ নিতে দেয় না।
আব্দুল জলিল প্রামানিক বলেন, আমি রাগের মাথায় স্ত্রী তালাক দিয়েছিলাম। ২৯ দিন পর আবার বিয়ে পড়ে নিয়েছি। একারণে গ্রামের মাতব্বর রকি খান, মিল্টন খাঁ, আবু সুফিয়ানসহ আরও ১০-১২ জন আমাকে সমাজচ্যুত করেছেন। রাগের মাথায় স্ত্রীক। তালাক দিলে পুনরায় বিয়ে করা যাবে ঢাকার একজন মুফতির মতামত নিয়ে আসার পরও তারা মানেনি। তারা বলছে হিল্লা বিয়ে ছাড়া আমার বিয়ে বৈধ হবে না। তারা আমাকে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে গ্রামের মসজিদে নামাজ আদায়ে করতে ও জানাজায় শরিক হতে বা দেননি। মিলাদ মাহফিল দাওয়াত দেওয়ার মাতব্বরদের চাপে পর ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি গ্রামের কারও জমিতে দিনমজুরি কাজও করতে পারব না বলে লোকজন জানিয়ে দেন। একারণে কেউ আমাকে কাজে নেয় না। সমাজচ্যুত করার জের ধরে মসজিদে যাওয়ার সময় মাতব্বরদের একাংশের লোকজন আমাকে মেরে হাত ভেঙে দিয়েছেন।
গ্রামের মাতব্বদের একজন মো. মিল্টন খাঁ। তিনি আব্দুল জলিলের দায়ের করা মামলার দুই নম্বর আসামি। তাকে তার বাড়িতে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কাজ করেছেন। একারণে গ্রামের লোকজন তাকে সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কি কাজ করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আবার স্ত্রীকে নিয়েছেন। এটা সমাজ বিরোধী কাজ।
আক্কেলপুর রায়কালী ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মন্ডল বলেন, আব্দুল জলিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তিনি রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। এঘটনায় গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলকে সমাজচ্যুত করেন। আব্দুল জলিল ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। ইউএনও স্যার আমাকে ঘটনাটি সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। উভয়পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বৈঠক করেছি। আব্দুল জলিল যেন সামাজিকভাবে মিশতে পারে সেটি বলেছি। সমাজচ্যুতের ঘটনার জের ধরে আব্দুল জলিলকে মারধর করা হয়েছে। এতে তার বাম হাত ভেঙেছে বলে জেনেছি।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, আব্দুল জলিল প্রামানিক থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগটি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সেটি মামলা হিসেবে রের্কড করা হয়েছে। আসামি আট জনের মধ্যে ইতিমধ্যে আদালত থেকে পাঁচজন আসামি জামিন নিয়েছেন, অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭,২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১,৯১৬ কোটি টাকা। জুলাই-২০২৫ মাসে বিগত জুলাই-২০২৪ মাসের তুলনায় ৫,৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩%।
জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮,৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫%।
আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬,২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫,১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১,১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫%।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮,১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২%।
রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সম্মানিত করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।
কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
মন্তব্য