স্বাভাবিক সময়ে বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে দৈনিক অক্সিজেনের চাহিদা ১২০ মেট্রিক টনের মতো।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় গত এক মাসে চাহিদা বেড়ে হয়েছে ১৮০ মেট্রিক টন। এর পুরোটা বাংলাদেশ উৎপাদন করতে পারে না।
দেশে অক্সিজেন উৎপাদন ক্ষমতা সর্বোচ্চ ১৭০ মেট্রিক টন। তবে নানা কারণে উৎপাদন হয় সর্বোচ্চ ১৬০ মেট্রিক টন। বাকি ২০ মেট্রিক টন ভারত, চীন ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করে চাহিদা পূরণ করা হয়।
কিন্তু ভারত থেকে আমদানি এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। আর চীন ও পাকিস্তান থেকে আমদানি সময়সাপেক্ষ।
বাংলাদেশের অক্সিজেন উৎপাদনক্ষমতা, সরবরাহব্যবস্থা নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে ভারতের অভিজ্ঞতা থেকে।
সে দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলা আর সেখানে নতুন স্ট্রেইনে অক্সিজেন সংকটের বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে। শত শত রোগীর মৃত্যু হচ্ছে কেবল এ কারণে। এই অবস্থায় হন্যে ভারত বিদেশ থেকে বিমানে করে উড়িয়ে এনেছে অক্সিজেন উৎপাদনকারী সরঞ্জাম।
ভারতের এই করুণ দশায় বাংলাদেশে অক্সিজেন পরিস্থিতি কী, উৎপাদনক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ্চ কী পরিমাণ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব, মজুত পরিস্থিতি কী, তা নিয়ে কথা হচ্ছে।
দেশের অক্সিজেন উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যা বলছে, সেটি সুখকর নয় কোনোভাবেই। তারা বলছে, এখন যে পরিস্থিতি, তাতেই চাহিদা পূরণ করা কঠিন। ভবিষ্যতে চাহিদা বাড়লে তা পূরণে আরও সমস্যায় পড়তে হবে।
অক্সিজেনের উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানো সহজ নয়। এটি সময়সাপেক্ষ আবার বিপুল অর্থেরও বিষয় আছে।
রোগী বাড়লে অক্সিজেন সংকট সামাল দেয়া নিয়ে চিন্তিত সরকারও। ২২ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দেশের অক্সিজেনের চাহিদা এবং সরবরাহ বিষয়ে একটি সভা হয়। সেখানেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
শঙ্কায় খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ফরিদ হোসেন মিয়া বলেন, ‘অক্সিজেন উৎপাদন ও সরবরাহকারী দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লিনডে বিডির ১১০ মেট্রিক টন এবং স্পেকট্রার ৫০ মেট্রিক টন উৎপাদন করার সক্ষমতা আছে। এ ছাড়া আরও কিছু ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন উৎপাদন করে।
‘তারপরও প্রায় ২০ মেট্রিক টন অক্সিজেনের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ফলে করোনা সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে এই সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাড়তি চাহিদা পূরণে মূলত অক্সিজেন ভারত, চীন, পাকিস্তান থেকে আমদানি করা হয়। ভারতে হঠাৎ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তারা অক্সিজেন দেয়া বন্ধ করেছে।’
ভারত থেকে অক্সিজেন আসে মূলত যশোরের বেনাপোল বন্দর দিয়ে। সেখান দিয়ে ২১ এপ্রিলের পর আর কোনো গাড়ি ঢোকেনি বলে জানিয়েছেন বন্দরের কর্মকর্তা ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা।
‘তাহলে চাহিদা বাড়লে কী করবে সরকার?’
জবাবে ফরিদ হোসেন মিয়া বলেন, ‘তখন হয়তো কিছুদিনের জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন উৎপাদন বন্ধ করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেডিক্যাল অক্সিজেন উৎপাদন করতে বলা হবে।’
সংকট নিরসনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সারা দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে অক্সিজেন উৎপাদনে কারখানা স্থাপন করতে চান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তবে সেটাও হয়তো চলতি বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।
করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ মনে করেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেন অক্সিজেনের হাহাকারের মতো পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেদিকে নজর দেয়া উচিত।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অক্সিজেনের চাহিদা নিশ্চিতে একটি পরিকল্পনা দরকার। তবে আগামী এক মাসে কী পরিমাণ অক্সিজেন লাগতে পারে, এর জোগান কীভাবে হবে, এটা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু আরও বেশি জোর দিতে হবে সংক্রমণ প্রতিরোধে।
‘লকডাউন শিথিল করে বিধিনিষেধের মাধ্যমে সংক্রমণটাকে যদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তাহলে হয়তো আমাদের সেই সংকটে পড়তে হবে না।’
প্রায় তিন সপ্তাহের লকডাউনে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হবে বলেই আশা করছেন এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, ‘লকডাউনের পর দুই বা তিন সপ্তাহের মাথায় মূল চিত্র ফুটে ওঠে। সেই বিবেচনায় মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অবশ্যই আমরা আশা করছি এবং যেটা বিজ্ঞানসম্মত সেটা হলো (সংক্রমণের) হার অনেক কমে যাবে।’
৫ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশে লকডাউন চলছে। আর ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয় সর্বাত্মক লডকাউন। এর মধ্যে সংক্রমণ কমেছে বটে। তবে সেটা যাতায়াত সমস্যায় পরীক্ষা করাতে না পারার কারণে কি না, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।
কী বলছেন উৎপাদকরা
দেশে অক্সিজেন চাহিদার ৯০ শতাংশই পূরণ করে লিনডে বিডি। প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র সাইকা মাজেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেডিক্যাল অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ায় প্রায় দুই মাস দ্বিগুণেরও বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। বন্ধ রাখা হয়েছে শিল্প কারখানার অক্সিজেন উৎপাদন।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যে চাহিদা সেটা সরবরাহ করা সম্ভব। তবে ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি দীর্ঘসময় ধরে বন্ধ থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে সরকারকে জানানো হয়েছে।’
উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানোর সম্ভাবনা কতটা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বড় প্ল্যান্ট স্থাপন এক বছরের আগে সম্ভব নয়।
অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে ভারতে যে প্ল্যান্ট বসাচ্ছে, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, সেটি তরল অক্সিজেনের ক্ষেত্রে নয়। সেখানে ছোট ছোট কিছু গ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করছে কয়েকটি হাসপাতাল। এ নিয়ে সংকট সামাল দেয়া কঠিন।
ভারত সিঙ্গাপুর থেকে সরাসরি বড় বড় ট্যাংকে করে তরল অক্সিজেন আমদানি করছে জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা সরকারকে বলেছেন, সরকার যদি আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়, তাহলে তারাও অক্সিজেন আমদানি করে দিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে সরকার টু সরকার কথা বলতে হবে।’
অক্সিজেন সংরক্ষণের কোনো সুযোগ আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চার থেকে পাঁচ দিন সংরক্ষণের সক্ষমতা আছে দেশে।
আরেক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইসলাম অক্সিজেন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুস্তাইন বিল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চাহিদা বাড়লেই উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয় না। এ ছাড়া আরও সমস্যা রয়েছে। বিদ্যুতের কারণে উৎপাদন সক্ষমতার পুরোটা কাজে লাগাতে পারছি না।’
কী বলছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
সংকট মোকাবিলার জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন সরবরাহ করছে, তাদের আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে যে কয়টা প্রতিষ্ঠান আছে, তারা হান্ড্রেড পারসেন্ট ক্যাপাসিটিতে চলছে। তারপরও কুল পাচ্ছে না।
‘আমরা তাদের অ্যালাউ করেছি চীন, পাকিস্তান থেকে কিছু ইমপোর্ট করার জন্য। সেই ইমপোর্ট কাজও চলছে। কাজেই ওইভাবেই আমরা অক্সিজেনটা মিটআপ করছি।’
আরও পড়ুন:বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বরগুনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মনি বলেছেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে কুচক্রী মহল নানাবিধ কার্যক্রম করতে পারে। দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা হতে পারে, সেদিকে সবার বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।
সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় বরগুনায় ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাড়ি পরিদর্শনকালে এ কথা বলেন তিনি।
নুরুল ইসলাম মনি বলেন, নির্যাতিত কিশোরী এবং নিহত মন্টু দাসের পরিবারকে সব ধরনের আইনি সহযোগিতা করার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশ দিয়েছেন। মন্টু দাসের পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়া হবে, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াসহ ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। সর্বোপরি বিএনপি এই পরিবারের সঙ্গে আছে এবং থাকবে।
এ সময় তারেক রহমানের পক্ষে নিহত মন্টু দাসের পরিবারকে নগদ এক লাখ টাকা অনুদান প্রদান করেন তিনি। এর আগে তারেক রহমান নিজে লন্ডন থেকে ফোনে মন্টু দাসের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তার সার্বিক খোঁজখবর নিয়েছিলেন ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা, বরগুনা জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাড. নুরুল আমিন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ফয়জুল মালেক সজিব, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম রনিসহ দলের অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
আরও পড়ুন:আগামী রবিবারের মধ্যে বকেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের অস্থায়ী (টিএলআর) শ্রমিকরা তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছেন।
রাজধানীর রেলভবনে সোমবার টিএলআর কর্মচারীদের পক্ষ থেকে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
এর আগে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলাম আন্দোলনরত টিএলআর শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ২৩ মার্চের মধ্যে পরিশোধের আশ্বাস দেন।
সাংবাদিকদের ব্রিফকালে তিনি বলেন, ইন্টিগ্রেটিড বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম (আইবাস) সংক্রান্ত জটিলতার কারণে রেলওয়ের টিএলআর শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে সমস্যা ছিল। সে সমস্যা সমাধানে অর্থ বিভাগ ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আশা করা যাচ্ছে, আগামী রবিবারের মধ্যে টিএলআর শ্রমিকদের বকেয়া বেতন তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে।’
এপ্রিল থেকে তাদের বেতন প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করা সম্ভব হবে বলেও জানান সচিব ফাহিমুল।
তার এ আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে টিএলআর শ্রমিকরা তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তবে রবিবারের মধ্যে বকেয়া বেতন পরিশোধ করা না হলে তারা পুনরায় আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে জানান।
ব্রিফিংকালে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেনসহ রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং টিএলআর শ্রমিকদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান উপদেষ্টা মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গনি এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বক্তব্য দেন।
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ এবং রাজশাহীর পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম।
সহকর্মীদের এমআরটি পুলিশের মারধরের অভিযোগে কর্মবিরতি ঘোষণা করেছিলেন মেট্রোরেলের কর্মীরা।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস সোমবার সকাল সাতটায় তারা কর্মবিরতি ঘোষণা করেন। আড়াই ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ৯টায় ফের একক যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু হয়।
সকালে সরেজমিনে মিরপুর-১০ ও সচিবালয় স্টেশনে কোনো মেট্রোরেল কর্মী দেখা যায়নি। কেবল কয়েকজন আনসার সদস্য ছিলেন সেখানে।
এমআরটি পুলিশ সদস্যরা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) চারজন কর্মীকে মৌখিক ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনার প্রতিবাদে এ কর্মবিরতি ডাকেন মেট্রোরেলের কর্মীরা। পরে এমআরটি পুলিশের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগের পর কাজে ফিরেছেন তারা।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় একটি কমিটি করেছে। যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
‘এরইমধ্যে এমআরটি পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কর্মবিরতি যারা করছেন, তাদের সঙ্গে আমার একটু আগেই কথা হয়েছে। তারা কাজে ফিরবেন।’
গতকাল রাতে ‘ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ’ ব্যানারে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আনুমানিক বিকেল সোয়া ৫টায় দুজন নারী কোনো পরিচয়পত্র না দেখিয়ে সিভিল ড্রেসে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করে এসে ইএফও অফিসের পাশে থাকা সুইং গেট ব্যবহার করে পেইড জোন থেকে বের হতে চান। যেহেতু তারা নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরিহিত ছিলেন না ও তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি, তাই দায়িত্বপ্রাপ্ত সিআরএ নিয়ম অনুযায়ী তাদের সেখান থেকে পিজি গেট ব্যতীত সুইং গেট দিয়ে বের হওয়ার কারণ জানতে চান।
‘তবে সংশ্লিষ্ট পুলিশের কর্মকর্তারা এতে উত্তেজিত হয়ে তর্কে লিপ্ত হন এবং একপর্যায়ে এমআরটি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে চলে যান। পরবর্তীতে ঠিক একইভাবে দুজন এপিবিএন সদস্য সুইং গেট ব্যবহার করে সুইং গেট না লাগিয়ে চলে যান, এর কারণ তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা পূর্বের ঘটনার জের ধরে তর্কে জড়িয়ে পড়েন।’
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘কিছুক্ষণ পরে পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে আরও কয়েকজন পুলিশ এসে দায়িত্বে থাকা সিআরএর সঙ্গে ইএফওতে তর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং ইএফও থেকে বের হওয়ার সময় কর্মরত সিআরএর কাঁধে বন্দুক দিয়ে আঘাত করেন এবং কর্মরত আরেকজন টিএমওয়ের শার্টের কলার ধরে জোরপূর্বক এমআরটি পুলিশ বক্সে নিয়ে গিয়ে মারধর করেন এবং গুলি করার জন্য বন্দুক তাক করেন।
‘উপস্থিত স্টেশন স্টাফ ও যাত্রীরা বিষয়টি অনুধাবন করে এমআরটি পুলিশের হাত থেকে কর্মরত টিএমওকে পুলিশের কাছ থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসে।’
আরও পড়ুন:বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাড্ডা থানা এলাকায় রফিকুল নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
শাজাহান খানকে সোমবার কারাগার থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ।
পরে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ড মঞ্জুরের আবেদন করা হয়। অন্যদিকে সাবেক মন্ত্রীর আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজাহারুল ইসলাম জামিন আবেদন নাকচ করে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৯ জুলাই দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর বাড্ডা থানাধীন বিসমিল্লাহ আবাসিক হোটেলের সামনের রাস্তায় আন্দোলন করছিলেন ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম (৩৭)। ওই সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গুলিতে আহত হন তিনি। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বছরের ২৭ আগস্ট মৃত্যু হয় তার।
এ ঘটনায় রফিকুলের মামা মুহাম্মদ লুৎফর রহমান বাড্ডা থানায় মামলাটি করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৭ জনকে আসামি করা হয়।
গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে শাজাহান খানকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে তাকে একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। রিমান্ডেও নেওয়া হয় একাধিক মামলায়।
আরও পড়ুন:সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় হওয়া মামলা ৩০ দিনের মধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরে হাইকোর্টের রায় বহাল রয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তৎকালীন সময়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলটি রাষ্ট্রপক্ষ সোমবার প্রত্যাহারের আবেদন করে।
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বিভাগ লিভ টু আপিলটি খারিজের আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ। রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আবদুল কাইয়ুম, ব্যারিস্টার ওমর ফারুক ও ব্যারিস্টার কামারুন মাহমুদ দীপা।
আজকের এ আদেশের ফলে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলা ৩০ দিনের মধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করে বিচারে বাধা রইল না বলে জানান ব্যারিস্টার আবদুল কাইয়ুম।
প্রেক্ষাপট
এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর স্বামীকে আটকে রেখে নারীকে (২০) ধর্ষণের ঘটনায় ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং দুজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেন।
ঘটনার পর আসামিরা পালিয়ে যান। তবে তিন দিনের মধ্যে ছয় আসামি ও সন্দেহভাজন দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ও র্যাব।
আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার দায় স্বীকার করেন। তাদের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষায় আটজন আসামির মধ্যে ছয়জনের ডিএনএর মিল পাওয়া যায়। ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পুলিশ।
সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি অপহরণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণে সহায়তার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযোগ গঠন করেন।
একই আদালতে ২০২২ সালের ১১ মে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় করা চাঁদাবাজি ও ছিনতাই মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়।
একপর্যায়ে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এ মামলার বিচার চেয়ে বাদী হাইকোর্টে রিট করেন। সে রিটের রুলের শুনানি শেষে ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর এক হাইকোর্ট বেঞ্চ ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলা ৩০ দিনের মধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
আরও পড়ুন:চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের (ডিএফপি) নিবন্ধিত তালিকা থেকে ২০১৩ সালে সাপ্তাহিক ‘একতা’ পত্রিকার নাম বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে জারি করা রুল শুনানি চলাকালে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের এবং বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ রবিবার এ আদেশ দেন।
এ আদেশের ফলে কয়েক দশকের পুরোনো সাপ্তাহিকটি প্রকাশে আর কোনো আইনি বাধা থাকল না।
রিটকারীর পক্ষে আইনজীবী হাসান তারিক চৌধুরী আদেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।
তিনি বলেন, “২০১৩ সালে ডিএফপির তালিকাভুক্ত গণমাধ্যমের তালিকা থেকে সাপ্তাহিক ‘একতা’ পত্রিকার নাম বাদ দেওয়া হয়। মূলত সমালোচনা সহ্য করতে না পেরে অন্যায়ভাবে ওই সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।”
আইনজীবী আরও বলেন, ‘গত ১৭ নভেম্বর পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেন। রুলে ডিএফপির ওই সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
‘রুল শুনানি চলাকালে আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই স্থগিতাদেশ জারি করেছেন। এর ফলে সাপ্তাহিক একতা প্রকাশে বাধা কাটল।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য