করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে পর্যুদস্ত ভারত। প্রতিদিনই হচ্ছে শনাক্তের বিশ্ব রেকর্ড। মৃত্যুর তালিকা হচ্ছে দীর্ঘ। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির পাশে থাকার প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিবেশী পাকিস্তান। ‘শত্রুতা’ ভুলে ইসলামাবাদ বলছে, ‘মানবতাই প্রথম’।
গত কয়েক দিন ধরে তিন লাখের বেশি মানুষের শরীরে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ছে ভারতে। কঠিন সংকটের মুখে দেশটির চিকিৎসা ব্যবস্থা। হাসপাতালগুলো তীব্র অক্সিজেন-সংকটে পড়েছে। খালি নেই সাধারণ ও আইসিইউ শয্যাগুলো। উপচে পড়ছে করোনার রোগী।
রাজধানী দিল্লির হাসপাতালগুলোর অবস্থা বেশি করুণ। সেখানকার প্রত্যেকটি হাসপাতাল তীব্র অক্সিজেন-সংকটে রয়েছে। মেডিক্যাল অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু হচ্ছে অনেকের। অন্যান্য রাজ্য থেকে অক্সিজেন নিয়ে আসার জন্য সেনাবাহিনীর বিমান ও ট্রেন মোতায়েন করেছে সরকার।
মেডিক্যাল অক্সিজেন সহায়তা পেতে আকুতি জানিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘দয়া করে অক্সিজেন পেতে আমাদের সহায়তা করুন।’
করোনায় নাকাল ভারতের চলমান অবস্থায় সহমর্মী পাকিস্তান। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ভারতের জনগণের পাশে থাকার অংশ হিসেবে ভারতকে ভেন্টিলেটর, বাইপ্যাপ, ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন, পিপিপি ও সম্পর্কিত অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তান।
ত্রাণগুলো দ্রুত সরবরাহের জন্য পাকিস্তান ও ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উপায় বের করার তাগিদ দেয়া হয়েছে বিবৃতিতে। আরও বলা হয়, এর মাধ্যমে করোনা মহামারির কারণে যেসব চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনে পারস্পরিক সহায়তার সম্ভাব্য উপায়গুলো আরও বিকশিত হতে পারে।
চলমান পরিস্থিতিতে ভারতের পাশে দাঁড়ানো আশ্বাস দিয়ে টুইট করেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি। বলেছেন, সবার আগে মানবতা।
ভারতের জনগণের সঙ্গে সংহতির ডাক দিয়েছেন পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘কোভিড-১৯-এর ভয়াবহ ঢেউয়ে লড়াইয়ে থাকা ভারতের জনগণের প্রতি সংহতি জানাতে চাই। আমাদের প্রতিবেশী ও বিশ্বের যারা এই মহামারিতে ভুগছেন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনায় আমাদের দোয়া। আমাদের অবশ্যই মানবতাকে সামনে রেখে বৈশ্বিক এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।’
ভারতের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে টুইট করেছেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরীও। তিনি লিখেছেন, ‘কঠিন এই সময়ে ভারতের জনগণের প্রতি আমাদের দোয়া রয়েছে। সৃষ্টিকর্তা তাদের প্রতি সহায় হোক, আশা করি কঠিন এই সময় দ্রুত কেটে যাবে।’
ভারতের জনগণের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন পাকিস্তানি জনগণও।
করোনায় পাকিস্তানের অবস্থাও ভালো নয়। সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে কঠোর হওয়ার কথা বলছে দেশটির সরকার।
আরও পড়ুন:I want to express our solidarity with the people of India as they battle a dangerous wave of COVID-19. Our prayers for a speedy recovery go to all those suffering from the pandemic in our neighbourhood & the world. We must fight this global challenge confronting humanity together
— Imran Khan (@ImranKhanPTI) April 24, 2021
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রীর বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে, ১৩ জুন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৬০৬ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। বর্তমানে তারা চিকিৎসাধীন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ রেজা জাফারঘানি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টাই ছিল হামলার দিক থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ। এই একদিনেই প্রাণ গেছে ১০৭ জনের।
তবে ইরানের ভেতর থেকে স্বাধীনভাবে তথ্য সংগ্রহ কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারি নিয়ন্ত্রণের কারণে বিবিসি-সহ বিদেশি সংবাদমাধ্যমের পক্ষে নিশ্চিতভাবে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।
এদিকে ইরানে মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস অ্যাকটিভিস্ট ইন ইরান’ জানিয়েছে, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা সরকারের ঘোষিত সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে।
বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলকে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। তিনি ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘ইসরায়েল, বোমা ফেলো না। যদি ফেলো, এটা হবে এক বিশাল লঙ্ঘন। তোমাদের পাইলটদের এখনই ঘরে ফিরিয়ে নাও।’
এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার সকালে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এ অবস্থায় ইসরায়েল জানিয়েছিল, তারা ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। আর ইরান বলেছে, যদি ইসরায়েল হামলা বন্ধ রাখে, তারাও হামলা বন্ধ করবে।
তবে ওই ঘোষণার পরও ইসরায়েলের সেনাবাহিনী দাবি করে, তারা ইরান থেকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র মাঝপথে ধ্বংস করেছে। কিন্তু তেহরান নতুন করে কোনো হামলা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বহু বিশ্লেষক বলছেন, যুদ্ধবিরতির ঘোষণার মধ্যেও হামলা ও পাল্টা অভিযোগ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
মাটি থেকে উড্ডয়নের কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ভেঙে পড়েছিল বিমান। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭-এর দুর্ঘটনার কথা এখনো ভুলতে পারেনি ভারতবাসী। গত ১২ জুন এই বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু ২৭০ জনের। এখনো সব মানুষের দেহ শনাক্তও করা হয়নি। কিন্তু সদ্য এমন একটি তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে, যা জেনে কার্যত চমকে ওঠেছেন সবাই। সদ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও ঘিরে তাই দেশজুড়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, সংস্থার গুরুগ্রামের দপ্তরে ডিজে পার্টিতে উদ্দাম নাচে মেতেছেন এয়ার ইন্ডিয়া স্যাটস (এআইএসএটিএসের) শীর্ষ কর্তারা। ঘটনাটি ২০ জুনের। যার মাত্র আটদিন আগেই আমেদাবাদে দুর্ঘটনা ঘটেছিল। (এআইএসএটিএস) হলো এমন একটি কোম্পানি যারা বিমানকে গ্রাউন্ড সার্ভিসের সুবিধাগুলো প্রদান করে। এই কোম্পানির অর্ধেক মালিকানা এয়ার ইন্ডিয়া লিমিটেড অর্থাৎ টাটা গ্রুপের। বাকি অর্ধেকের মালিকানা স্যাটস লিমিটেডের। বিমানবন্দরের খাবারের ব্যবস্থা ও অন্যান্য বিভিন্ন ব্যবস্থার দেখাশোনা করে এই কোম্পানি। বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭-এর গ্রাউন্ড সার্ভিসের দায়িত্ব ছিল এই সংস্থারই হাতে। ভিডিওতে দেখা গেছে, গুরুগ্রামের দপ্তরে ডিজে বাজছে। নাচে ব্যস্ত নানা স্তরের কর্মী-আধিকারীরা। যাদের মধ্যে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে (এআইএসএটিএসের) চিফ অপারেটিং অফিসার আব্রাহাম জাকারিয়া, সংস্থার চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার এবং বেঙ্গালুরু ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট লিমিটেডের জিএম সম্প্রীতি কোটিয়ানকে। এই ভিডিও ক্ষোভ তৈরি করেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। যখন নিহতদের পরিবারের পাশাপাশি গোটা দেশ গভীর শোকে রয়েছে, তখন বিমানবন্দরের কর্মীদের এই ধরনের উদ্যাপন দৃষ্টিকটূ লেগেছে সবারই। ভিডিও সামনে আসতেই এক সংস্থার তরফ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, (এআইএসএটিএস) সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত একটি ভিডিও সম্পর্কে অবগত, যা দুর্ভাগ্যবশত সম্পূর্ণরূপে প্রাসঙ্গিক নয়। তবুও ফলে যে মানসিক অস্বস্তির সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। যদিও তাতে চিড়ে ভিজছে না। অনেকেরই মত, এই ক্ষমা চাওয়া হাস্যকর ও মূল্যহীন। কেউ কেউ বলছেন, এই বিমান দুর্ঘটনায় যারা তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাদের কাছে এই ভিডিও প্রহসন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলো ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। পাশাপাশি, জ্বালানি তেলের বাজারে বড় ধরনের সংকটের আশঙ্কা হ্রাস পাওয়ায় তেলের দাম কিছুটা কমে গেছে।
টোকিও থেকে এএফপি জানায়, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রতিশোধ নিতে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালীতে তেল পরিবহন বন্ধ না করায় বিনিয়োগকারীরা স্বস্তি পেয়েছেন। ইরান গত সোমবার কাতারে একটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার দাবি করে। যদিও কাতার পরিস্থিতিকে ‘স্থিতিশীল’ বলে আখ্যা দেয়।
বিশ্লেষকরা জানান, এতে তেলক্ষেত্র বা জ্বালানি অবকাঠামোর কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এসপিআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের স্টিফেন ইনেস বলেন, ‘তেহরান অনেকটা ঠাণ্ডা মাথায় প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। তাদের ‘প্রতিশোধ’ কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে আঘাত করেছে। শিরোনাম পাওয়ার জন্য যথেষ্ট জোরে, কিন্তু তেলবাজারকে না নাড়িয়ে দেওয়ার মতোই শান্তভাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘যখন এটা পরিষ্কার হয়ে গেল, তখনই যুদ্ধজনিত প্রিমিয়াম হঠাৎ করেই তেলের দাম থেকে ঝরে পড়ে। ফলে গত সোমবার রাতে ব্রেন্ট ও ডব্লিউটিআই দুই চুক্তির দামই ৭ শতাংশের বেশি হ্রাস পায়।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল নাগাদ উভয় তেল চুক্তির দাম ২ শতাংশের বেশি হ্রাসে ছিল।
এশিয়ান বাজারে বিনিয়োগকারীদের মনোভাব ছিল ইতিবাচক। টোকিও ও হংকং সূচক বেড়েছে ১.৪ শতাংশ করে।
সাংহাই ০.৮ শতাংশ এবং সিউল ২.৭ শতাংশ উত্থানে ছিল। সিঙ্গাপুর ০.৭ শতাংশ, সিডনি ১.১ শতাংশ এবং তাইপেই ১.৮ শতাংশ বেড়েছে, তবে জাকার্তা ১.৭ শতাংশ কমেছে।
ট্রাম্প জানান, ইরান ও ইসরাইল একটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়নযোগ্য যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। যা তাদের সংঘাতের ‘আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি’ নিয়ে আসবে। যদিও তেহরানে এখনও কিছু হামলা চলছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবার বলেন, ইসরায়েল যদি হামলা বন্ধ করে, তবে তেহরানও আর আঘাত চালাবে না।
এমইউএফিজ-এর বিশ্লেষক মাইকেল ওয়ান লিখেছেন, যুদ্ধবিরতির সুনির্দিষ্ট বিবরণ এখনো পরিষ্কার নয়। তাই, শান্তি ও উত্তেজনা প্রশমনের বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়।
তিনি আরও বলেন, ‘তবে সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলো ইঙ্গিত করছে যে ইরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। যদি তা সত্য হয়, তাহলে সম্ভাব্য তেল সরবরাহ বিঘ্নের ভয়াবহ ঝুঁকিগুলো অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে, ডলারের দরপতন হয়েছে। কারণ, ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর মিশেল বোম্যান জানিয়েছেন, জুলাই মাসের বৈঠকে মুদ্রাস্ফীতি স্থির থাকলে তিনি সুদের হার কমাতে সমর্থন দেবেন। বর্তমানে বাজারে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে যে সেপ্টেম্বরে সুদের হার হ্রাস আবার শুরু হতে পারে।
ওয়ান বলেন, বোম্যান ইঙ্গিত দিয়েছেন যে শুল্ক আলোচনায় চলমান অগ্রগতি নীতিমালা সামঞ্জস্য করার জন্য একটি কম ঝুঁকিপূর্ণ অর্থনৈতিক পরিবেশ প্রদান করছে’ এবং ডলারকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। উভয় পক্ষই লক্ষ্য অর্জনের দাবি করছে। এই ১২ দিনের যুদ্ধের জয়-পরাজয় ও বিভিন্ন পক্ষের অর্জন নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত এখন আলোচনার কেন্দ্রে।
তেহরানের সেন্টার ফর মিডল ইস্ট স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষণা ফেলো আবাস আসলানি সতর্ক করে বলেছেন, ইরান এই যুদ্ধ বিরতিকে সতর্কতার সঙ্গে দেখছে, কারণ গাজা ও লেবাননে যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলার ক্ষেত্রে ইসরায়েলের অতীত রেকর্ড ভালো নয়।
আল-জাজিরাকে আসলানি বলেন, ‘এ কারণেই তেহরান সতর্ক এবং কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এটি নিশ্চিত করতে আসেননি। যদি সময় মতো কোনো লঙ্ঘন না হয়, আমি মনে করি ইরান যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে।’
আসলানি আরও বলেন, এটি ছিল ইরান এবং ইসরায়েল ও তার সহযোগী যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি যুদ্ধ। দুই মিত্র তাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা এবং ইরানে ‘শাসন পরিবর্তন’, যা অর্জন করা যায়নি।
তিনি বলেন, ‘আমরা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর কিছু ক্ষতি দেখেছি, কিন্তু দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি কেবল সেই স্থাপনা এবং সরঞ্জামই নয়। ইরান তার পারমাণবিক উপাদান একটি সুরক্ষিত স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা তো অক্ষত রয়েছে!’ আসলানি আরও যোগ করেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাও ধ্বংস হয়নি, তারা যুদ্ধবিরতি ঘোষণার ঠিক আগেও ইসরায়েলে আঘাত হেনেছে।
আসলানি বলেন, স্বল্পমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘অর্থপূর্ণ’ আলোচনা হতে পারে না, কারণ পারমাণবিক আলোচনা চলাকালীনই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ইরানে আক্রমণ করেছে।
ইসরায়েলের দাবি: লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের পক্ষে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক সাফল্যের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নিয়েছে।
যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে ইসরায়েলের প্রথম আনুষ্ঠানিক মন্তব্যে বলা হয়েছে, প্রায় দুই সপ্তাহ ইরান আক্রমণের পর ইসরায়েল তার সমস্ত লক্ষ্য এবং ‘তার চেয়েও বেশি’ অর্জন করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েল একটি তাৎক্ষণিক এবং দ্বৈত অস্তিত্বের হুমকি দূর করেছে। পারমাণবিক এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র—এই দুই হুমকির দিকে ইঙ্গিত করেছে ইসরায়েল।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, যুদ্ধের মধ্যে আইডিএফ তেহরানের আকাশের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছে, ইরানি সামরিক নেতৃত্বের ওপর তীব্র আঘাত হেনেছে এবং ইরানের ডজনখানেক মূল শাসন লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করেছে।
ইসরায়েল ‘ইরানি পরমাণু হুমকি দূর করতে’ সামরিক সহযোগিতার জন্য ট্রাম্প এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
অতি-ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ বলেছেন, ইসরায়েল ‘ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানে একটি অসাধারণ বিজয়’ অর্জন করেছে যা ইসরায়েল রাষ্ট্রের ইতিহাসের পাতায় গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকবে। স্মোত্রিচ বলেন, ‘একটি সম্যক হুমকি’ দূর করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে গাজায় যেতে হবে, হামাসকে ধ্বংস করতে এবং আমাদের জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে হবে।’
হুমকিতে ট্রাম্পের ভাবমূর্তি
আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের বিবাদের সবচেয়ে খারাপ সংকটকাল থেকে একটি জয় নিয়ে বেরিয়ে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন হামলার জবাবে কাতার মার্কিন ঘাঁটিতে তেহরানের মাঝারি মাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে উত্তেজনা প্রশমনের একটি লক্ষণ হিসেবে ধরে নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সোমবার তিনি ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করেছেন: ‘অভিনন্দন বিশ্ব, এখন শান্তির সময়!’
ট্রাম্পের এই উচ্ছ্বাস ইঙ্গিত দেয়, তিনি এই সংঘাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুক্ত থাকার প্রয়োজন আপাতত শেষ বলে মনে করছেন।
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিরতি প্রায়শই ভঙ্গুর এবং ক্ষণস্থায়ী হয়। যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেও ইসরায়েল এবং ইরান উভয় পক্ষের ভয়াবহ হামলা সেদিকেই ইঙ্গিত করে। কিন্তু মার্কিন স্টিলথ বোমারু বিমানগুলো ইরানে আঘাত করার মাত্র ৪৮ ঘণ্টা পরেই প্রেসিডেন্ট নিজেকে একজন শান্তি স্থাপনকারী এবং দক্ষ চুক্তি সম্পাদনকারী হিসেবে জাহির করতে শুরু করেন।
গত সোমবার রাতে এনবিসি নিউজকে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি যুদ্ধবিরতি অনির্দিষ্টকাল থাকবে। এটি চিরকাল চলবে।’ তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন, ইসরায়েল এবং ইরান আর কখনো পরস্পরের দিকে গোলা ছুড়বে না।
মধ্যপ্রাচ্যকে ‘আমেরিকান প্রেসিডেন্টের জন্য কবরস্থান’ বলা হয়। যেই অঞ্চলের এমন কুখ্যাতি আছে, সেখানে ট্রাম্পের এমন দাবি সত্যিই সাহসী! ট্রাম্পের সমস্ত বিপণন দক্ষতা সত্ত্বেও, আগামী দিনের ঘটনাপ্রবাহই শেষ পর্যন্ত বলে দেবে, ট্রাম্পের এই যুগান্তকারী পদক্ষেপটি বাস্তব নাকি কেবল আরেকটি বিভ্রম।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইসরায়েলের ওপর আমি সন্তুষ্ট নই।
নির্ধারিত সময়সীমার পরও দুই দেশের হামলা বন্ধ না হওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে মঙ্গলবার (২৪ জুন) ভোরে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘ইসরায়েল ও ইরান উভয় দেশই যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করেছে।’
ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিতে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে রওনা হওয়ার আগে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ‘তারা (ইরান) লঙ্ঘন করেছে, একইভাবে ইসরায়েলও লঙ্ঘন করেছে।’
এর আগে, সোমবার (২৩ জুন) সামাজিকমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুইদেশের সংঘাতকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ দাবি করে বলেন, ‘ইরান ও ইসরায়েল সম্পূর্ণ ও পুরোপুরি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে।’
যুদ্ধবিরতির প্রাথমিক ঘোষণায় তিনি বলেছিলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া ঘোষণার প্রায় ছয় ঘণ্টা পর যুদ্ধবিরতি শুরু হবে, সে অনুযায়ী যুদ্ধবিরতির সময় আনুমানিক রাত ১২টা (ইস্টার্ন টাইম)।
তবে, ইরান-ইসরায়েল দুইদেশই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে।
এ দিন, ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংবাদ সংস্থা ইরনার তথ্য মতে, রাজধানী তেহরানের নিকটবর্তী কারাজ শহরে ইসরায়েলের ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় ইরানের অভিজাত বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) দুই জেনারেলসহ বাহিনীটির মোট ৭ জন নিহত হয়েছেন।
এদিকে, ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় কাস্পিয়ান সাগরতীরবর্তী গিলান প্রদেশে ইসরায়েলি হামলায় ৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। প্রদেশের এক উপ-গভর্নরের বরাতে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইরানে হামলায় চালিয়েছে ইসরায়েল। মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাজধানী তেহরানের নিকটবর্তী কারাজ শহরে এ হামলায় চালানো হয়।
ইরানের রাষ্ট্রাত্ত্ব সংবাদ সংস্থা ইরনার তথ্য মতে, এ দিন ইসরায়েলের ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় ইরানের অভিজাত বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) দুই জেনারেলসহ বাহিনীটির মোট ৭ জন নিহত হয়েছেন।
এর আগে, ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে আবারও হামলা শুরুর নির্দেশ দেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ। আজ (মঙ্গলবার) সকালে তিনি বলেন, ‘তেহরানের কেন্দ্রবিন্দুতে বিভিন্ন নিশানায় তীব্র হামলা চালাতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে, ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় কাস্পিয়ান সাগরতীরবর্তী গিলান প্রদেশে ইসরায়েলি হামলায় ৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। প্রদেশের এক উপ-গভর্নরের বরাতে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।
তবে হামলার নির্দিষ্ট সময় ও স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়নি দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী (আইডিএফ) অভিযোগ করে, ‘যুদ্ধবিরতির মারাত্মক লঙ্ঘন করেছে ইরানি সরকার। আমরা তার জোরালো জবাব দেব।’
তবে, যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের কথা অস্বীকার করেছে ইরান। তবে ফের ইসরায়েল আগ্রাসন চালালে, চূড়ান্ত, দৃঢ় ও যথাযথ জবাব দেওয়া হবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল।
এর আগে, সোমবার (২৩ জুন) সামাজিকমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুইদেশের সংঘাতকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ দাবি করে বলেন, ‘ইরান ও ইসরায়েল সম্পূর্ণ ও পুরোপুরি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে।’
যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলার মধ্যেই ইসরায়েলে ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল ইরান। দক্ষিণ ইসরায়েলের বেয়ার শেভা শহরের একটি আবাসিক ভবনে তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে চারজন নিহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে ইসরায়েলের দিকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে তারা এবং বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
ইরান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে অভিযোগ তুলে তার জোরালো জবাব দিতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) তিনি বলেন, ‘তেহরানের কেন্দ্রবিন্দুতে বিভিন্ন নিশানায় তীব্র হামলা চালাতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ‘যুদ্ধবিরতির মারাত্মক লঙ্ঘন করেছে ইরানি সরকার। আমরা তার জোরালো জবাব দেব।’
যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের কথা অস্বীকার করেছে ইরান। তবে ফের যদি ইসরায়েল কোনো আগ্রাসন চালায়, তাহলে চূড়ান্ত, দৃঢ় ও যথাযথ জবাব দেওয়া হবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল।
এ সময়ে সচেতনতা, সহনশীলতা ও ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য ইরানের জনগণের প্রশংসা করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ইরানীয়দের অবিচল সংকল্প, কৌশলগত ধৈর্য, অবমাননা কিংবা একতরফা অবমাননা মেনে নিতে অস্বীকৃতি থেকে সরিয়ে আনতে পারেনি শত্রুরা।
মন্তব্য