রাজশাহী বিভাগের করোনা রোগীদের চিকিৎসা এখন রাজশাহীর একটি ও বগুড়ার দুটি হাসপাতাল ঘিরেই হচ্ছে। এই দুই জেলাতেই শুধু আইসিইউ সুবিধা রয়েছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ ও পাবনার রোগীদের আইসিইউর জন্য রাজশাহী ও বগুড়ায় নেয়া হয়। কিন্তু বগুড়া কিংবা রাজশাহী গেলেই আইসিইউ শয্যা পাওয়া যায় না। অনেক সময় পথেই মৃত্যু হচ্ছে অনেকের।
এ বিভাগের আট জেলার মধ্যে শুধু বগুড়া, রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জে করোনা নমুনা পরীক্ষার সুযোগ আছে। এর মধ্যে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের একটি ল্যাবে পরীক্ষা চলছে। বগুড়ায় আছে দুটি পিসিআর ল্যাব। এর একটি শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজে। অন্যটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান টিএমএসএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এ ছাড়া পরীক্ষা হচ্ছে সিরাজগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে।
রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা ও জয়পুরহাটের নমুনা পরীক্ষা করা হয় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে। এসব জেলা থেকে সিভিল সার্জন অফিসের তত্ত্বাবধানে নমুনা পাঠানো হয় করোনা পরীক্ষার ল্যাবে। বগুড়ায় নিজ জেলার নমুনা ছাড়াও জয়পুরহাট ও পাবনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সিরাজগঞ্জে নিজ জেলার নমুনা পরীক্ষার পাশাপাশি চাপ বেড়ে গেলে পাবনার নমুনাও পরীক্ষা করা হয়। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, যে জেলায় যখন সুযোগ হয়, সেখানে নমুনা পাঠানো হয়।
আট জেলার মধ্যে ছয়টির হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) নেই। যে দুই জেলায় আইসিইউ বেড আছে, তা-ও খুবই অপ্রতুল। এ কারণে করোনায় আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের বেশির ভাগই আইসিইউ সেবা পাচ্ছেন না। এ কারণে লম্বা হচ্ছে মৃতের তালিকা।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, বর্তমানে বিভাগে করোনা চিকিৎসার জন্য মোট ৫৩৩টি সাধারণ বেড আছে। আইসিইউ রয়েছে ৪১টি। এর মধ্যে রাজশাহী মেডিক্যালে কলেজ হাসপাতালে ১০টি, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৩টি, মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ৮টি এবং টিএমএসএস হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ বেড রয়েছে।
তিনি জানান, কোভিড রোগী মানেই আইসিইউ লাগবে, এমনটি নয়। এই ধারণা পরিবর্তন করতে হবে। আইসিইউ একেবারে শেষ পর্যায়ে লাগে। তবে আইসিইউ বাড়ানোর কার্যক্রম চলছে। চলতি মাসেই রাজশাহীতে আরও ১০টি এবং বগুড়ায় আরও ২০টি আইসিইউ চালু করার কাজ চলছে।
হাবিবুল আহসান বলেন, ‘আইসিইউর জন্য আমাদের সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাগবেই। কারণ, আমরা হাই ফ্লো নেজাল দিয়ে যখন অক্সিজেন দিতে যাব, তখন সিলিন্ডার অক্সিজেন ৫ মিনিটও চলবে না। সেন্টাল অক্সিজেন ছাড়া হবে না।’
গত এক বছরেও সীমাবদ্ধতাগুলো কেন দূর করা গেল না, জানতে চাইলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বলেন, ‘এটা আমাদের নীতিনির্ধারকদের বিষয়। আমি বলতে পারব না।’
করোনা রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এখানকার আইসিইউর কোনো শয্যাই ফাঁকা নেই। করোনা ইউনিটে বেড আছে ১৫৩টি। চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১১০ জন।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক সাইফুল ফেরদৌস জানিয়েছেন, ২০টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ১০টি কোভিড-১৯ রোগীদের দেয়া হয়েছে। বাকি ১০টি অন্যান্য মুমূর্ষু রোগীর জন্য সংরক্ষিত আছে। ফলে চাইলেও এই ১০টি শয্যা কোভিড রোগীদের দেয়া সম্ভব হয় না। রোগীদের সাধারণ ওয়ার্ডেই থাকতে হয়। এসব ওয়ার্ডে অবশ্য অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, রাজশাহী মেডিক্যালে করোনা রোগীর চাপ অনেক বেড়ে গেছে। এখানে এখন ১৬৩টি বেডে করোনার চিকিৎসা চলছে। আইসিইউ বেড আছে ১০টি। এখানকার ২২, ২৭, ২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ড এখন করোনা ওয়ার্ড। রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখানে করোনা ওয়ার্ড বা বেড আর বেশি বাড়ানোর সুযোগ নেই। আর সর্বোচ্চ দুটি ওয়ার্ড বাড়ানো যেতে পারে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে, এই হাসপাতালের পুরোটাই কোভিড চিকিৎসার জন্য ছেড়ে দিতে হবে, অথবা সদর হাসপাতালকেও কোভিড হাসপাতাল করার বিষয়ে ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে ৯০টি অক্সিজেন লাইন লাগানো হয়েছে। এক মাসের মধ্যে আমাদের অক্সিজেনের সমস্যা নেই। হাই ফ্লো অনেকগুলো আছে। তবে এগুলোর যন্ত্রাংশের ঘাটতি আছে। এগুলোর সার্কিটগুলো ব্যবহারের পর বদলাতে হয়। এগুলো পরবর্তী সময়ে পাওয়া যায় না। এ কারণে সেই হাই ফ্লো কাজ করে না।
‘এগুলোর দামও অনেক। আমাদের ১৮টি হাই ফ্লো আছে। আরও ২১টি পাচ্ছি। ডিভিশনাল কমিশনার স্যার ৩টি দিয়েছেন। এগুলো নিয়ে সমস্যা হবে না। একটি ওয়ার্ডে হাই ফ্লো প্রতিটি বেডে দেয়া যাবে না। ২০টি বেড থাকলে ৭-৮টিতে দেয়া যায়। কারণ, এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ।’
নাটোর প্রতিনিধি নাজমুল হাসান জানিয়েছেন, নাটোরে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে মোট ৩১টি বেড আছে। মোট চিকিৎসক ১৫ জন, ১৬ জন নার্সসহ আরও ৮ জন নিয়োজিত আছেন। অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে ১৭০টি।
নাটোর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক পরিতোষ রায় জানান, সদর হাসপাতালে আইসিইউ বেড ও পিসিআর ল্যাব নেই। সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট নেই। তবে সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট সংযুক্ত করা হয়েছে। রোগীর অবস্থা বুঝে সদর হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি করা হয়। অবস্থা বেশি জটিল হলে রাজশাহী মেডিক্যালের করোনা ইউনিটে পাঠানো হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি আব্দুর রব নাহিদ জানিয়েছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনার নমুনা পরীক্ষার সুযোগ নেই। নিয়মিত রাজশাহী মেডিক্যালের করোনা ল্যাব থেকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। নমুনা পাঠানোর ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল পাওয়া যায়। সদর হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য করোনা ইউনিট গত বছর শুরু করা হয়েছিল। সেটিতে দীর্ঘদিন রোগী ছিল না, বর্তমানে ৭ জন রোগী ভর্তি আছেন। ১০টি অবজারভেশন বেড ও করোনা রোগীদের জন্য ২০টি বেড রয়েছে।
সিভিল সার্জন জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, করোনা ইউনিট চালাতে যে বাড়তি খরচ হবে, সেই অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। অর্থ প্রাপ্তির আশ্বাসে ইউনিটটি চালু করা হয়েছে।
নওগাঁ প্রতিনিধি সবুজ হোসেন জানিয়েছেন, নওগাঁয় করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য মোট ২০১টি আইসোলেশন বেড রয়েছে। মোট ৭৪ জন চিকিৎসক, ৩৫ জন মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং ৮৫ জন নার্সসহ আরও ৪৯ জন স্টাফ করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত। অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ২০১টি।
সিভিল সার্জন অফিসের মেডিক্যাল অফিসার (ডিজিজ কন্ট্রোল) আশীষ কুমার সরকার জানান, ‘এখানে আইসিইউ বেড ও পিসিআর ল্যাব নেই। আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বরাবর চিঠি দিয়েছি। তবে সদর হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট সংযুক্ত করার কাজ চলছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে, আমাদের দেয়া হটলাইনে যোগাযোগ করলে রোগীদের প্রাথমিক পরামর্শ দেয়া হয়। পরীক্ষার পর যাদের রিপোর্ট পজিটিভ হয়, তাদের ফোনে পরামর্শ দেয়া হয়। তবে কোনো রোগীর জটিলতা দেখা দিলে, তাকে নির্ধারিত আইসোলেশন বেডে ভর্তি করে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। প্রয়োজনে রাজশাহী মেডিক্যালে পাঠানো হয়।
জয়পুরহাট প্রতিনিধি রাজীব হাসান জানিয়েছেন, ১৫০ শয্যার জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে ২০ শয্যার একটি করোনা ওয়ার্ড রয়েছে। পাশাপাশি চারটি উপজেলা স্ব্যস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০টি করে শয্যার করোনা ওয়ার্ড রয়েছে। জেলা হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন রয়েছে। তবে আইইসিইউ নেই। করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে ১০ থেকে ১২ দিন লেগে যায়।
বগুড়া প্রতিনিধি খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, বগুড়ায় করোনায় সংক্রমণের হার ৩৯। এখানে দুটি পিসিআর ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, গত শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ১১ হাজার ৩৫০। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৭২ জন। শনিবার পর্যন্ত জেলায় করোনা থেকে মোট সুস্থ হয়েছেন ১০ হাজার ৬৪ জন। করোনা রোগীর চিকিৎসায় বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে রয়েছে বগুড়ার ২৫০ শয্যার মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল। তবে এখানে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা গত এক বছরেও চালু করা যায়নি। মোহাম্মদ আলীতে সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন সহবরাহ করা হয়।
মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ৭৮টি বেড আছে। আইসিইউ বেড রয়েছে আটটি। গত বছর এই হাসপাতাল করোনা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত করা হলেও এবার এখনও তা করা সম্ভব হয়নি বলে জানান মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শফিক আমীন কাজল।
টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। এখানে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা আছে। কিন্তু এখানে চিকিৎসা ব্যয়বহুল। শহীদ জিয়াউর রহমান হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা রয়েছে।
গত ১৪ মার্চ বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান হাসপাতালে সৈয়দ রুহুল আমিন নামের এক করোনা রোগী মারা যান। তার ছেলে আরিফ হাসানের অভিযোগ, ‘বাবার মৃত্যুর দিন ভোরে লোডশেডিং হওয়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয় হাসপাতালে। ওই সময় বাবার অক্সিজেন বন্ধ থাকে। কারণ, ওই মেডিক্যালের দুজন অবেদনবিদ ছাড়া হাই ফ্লো অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা সম্পর্কে কারও ধারণা ছিল না। বিদ্যুৎ আসার পর হাসপাতালের অন্য চিকিৎসক ও নার্সরা হাই অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা চালুও করতে না পারায় বাবার মৃত্যু হয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যালের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘ওই রোগী হাই ফ্লো অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছেন হয়তো বিষয়টা এমন নয়। দুজন চিকিৎসক হাই ফ্লো অক্সিজেন সরবরাহের বিষয়ে বেশি দক্ষ। অন্য চিকিৎসক-নার্সরাও এখন ওই ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা পেয়ে গেছেন।’
পাবনা প্রতিনিধি আফ্রিদি খান মিঠু জানিয়েছেন, গুরুতর রোগীকে আইসিইউর জন্য ঢাকা বা রাজশাহীতে স্থানান্তর হয়। এ কারণে পথেই কেউ কেউ মারা যান। অন্যদিকে নমুনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব না থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে করোনা রোগীদের।
২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা নেই। কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। পাবনায় পিসিআর ল্যাবের কার্যক্রম শুরু হয়নি। পাবনা জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি আছেন ১৩ জন ও বেডসংখ্যা ১০০।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আইয়ুব হোসেন জানান, ‘আশা করছি, এক মাসের মধ্যেই আইসিইউ ইউনিট চালু করা সম্ভব হবে।’
আরও পড়ুন:ভারত ও পাকিস্তানের চলমান সংঘাতকে ঘিরে যশোরের ৭০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। তবে বিজিবি টহল জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোয় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
বিজিবির দেওয়া তথ্যমতে, যশোরে ৭০ কিলোমিটার এই সীমান্ত রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে সাতক্ষীরার ৭০ ব্যাটালিয়ন রয়েছে। সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নীরব নজরদারির সঙ্গে বিজিবি জোরদার করেছে টহল। এলাকাবাসীও সীমান্তের দিকে নজর রাখছেন।
সীমান্তবাসী আল মামুন জানিয়েছেন, এখনও যশোর সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বিএসএফের অপতৎপরতায় কোনো প্রকার অনুপ্রবেশ বা চোরাচালান বিজিবির কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিহত করতে প্রস্তুত এলাকাবাসী।
সীমান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তানের থাকলেও এই সীমান্ত এখন স্বাভাবিক। তবে আগে ৫০০ গজ অন্তর একজন বিএসএফ সদস্য দায়িত্ব পালন করলেও এখন ৩০০ গজ অন্তর দেখতে পাওয়া গেছে। এটা কিছুটা ভাবিয়ে তুলেছে। যদি বিএসএফ কোনোরকম তৎপরতা দেখায়, তাহলে বিজিবিকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে।’
৪৯ বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী জানান, সীমান্তে বিজিবিকে কঠোর আবস্থানে রাখা হয়েছে।
নিরাপওা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ভারত থেকে যাতে কোনো অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে, সেজন্য বিজিবিও টহল ব্যবস্থা জোরদার করেছে।
বঙ্গোপসাগরের মোহনা ও ৯০ কিলোমিটার পায়রা নদীতে অবাধে অবৈধ জাল দিয়ে রেণু পোনার সঙ্গে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা নিধন করছে জেলেরা। এতে অন্তত কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।
মৎস্য বিভাগ কর্তৃপক্ষ অবৈধ সুবিধা নিয়ে পোনা নিধনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না, এমন অভিযোগ সচেতন জেলেদের। এতে অসাধু রেণু পোনা ব্যবসায়ীরা আরও উৎসাহিত হচ্ছেন।
দ্রুত রেণু পোনা নিধনের সঙ্গে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সাগর ও পায়রা নদী থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন জেলেরা।
জানা গেছে, বছরের মধ্য ফাল্গুন থেকে শুরু করে মধ্য জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত চিংড়ি ও বাগদা মা-মাছ সাগরের মোহনা ও নদ-নদীর মিঠা পানিতে রেণু পোনার জন্ম হয়। বড় হওয়ার আগ পর্যন্ত রেণু পোনা মিঠা পানিতে থাকে। ওই সময় জেলেরা অবৈধ মশারি জাল ফেলে ওই পোনাগুলো শিকার করেন। এ রেণু পোনা শিকারের সঙ্গে আমতলী-তালতলী উপজেলার অন্তত ৩০ হাজার জেলে পরিবার জড়িত। প্রতিদিন তারা অন্তত এক কোটি রেণু পোনা আহরণ করেন। ওই রেণু পোনার সঙ্গে অন্তত ১০ গুণ বিভিন্ন প্রজাতির পোনা নিধন হচ্ছে। এতে অন্তত কয়েক হাজার কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ নষ্ট হচ্ছে।
দাদন ব্যবসায়ীরা জেলেদের থেকে ১০০ চিংড়ি ও বাগদা রেণু পোনা ১৫০-২০০ টাকা দরে ক্রয় করেন। ওই পোনা খুলনা, বাগেরহাট ও যশোরসহ বিভিন্ন এলাকার ঘের মালিকদের কাছে ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি করছেন। এতে গত আড়াই মাসে অন্তত কয়েকশ কোটি টাকার চিংড়ি ও বাগদার রেণু পোনা আহরণ করেছেন জেলেরা।
অভিযোগ রয়েছে দাদন ব্যবসায়ীরা উপজেলা মৎস্য অফিস, পুলিশ ও নৌপুলিশের সঙ্গে আঁতাত করে অবৈধ নেট মশারি জাল ফেলে জেলেদের দিয়ে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ রেণু পোনা শিকার করাচ্ছে। জোয়ার-ভাটার সঙ্গে মিল রেখে জেলেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে দাদন ব্যবসায়ীদের প্ররোচনায় পড়ে ওই রেণু পোনা শিকার করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দাদন ব্যবসায়ী বলেন, তালতলী উপজেলা মৎস্য অফিসার ভিক্টর বাইনকে প্রতি মাসে ৮০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। ফলে তারা অবাধে জেলেদের থেকে রেণু পোনা সংগ্রহ করে গাড়িতে রপ্তানি করতে পারছেন। তারা আরও বলেন, পুলিশ ও নৌপুলিশ সবাই এ বিষয়টি জানে।
আমতলী-তালতলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নারী-পুরুষ ও শিশুরা নেট মশারি জালের মাধ্যমে বাগদা ও চিংড়ির রেণু পোনা শিকার করছে। লাভজনক হওয়ায় জেলে পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশুরা এ পেশায় ঝুঁকে পড়েছেন।
আমতলী-তালতলী উপজেলার শতাধিক পয়েন্টে আড়তদাররা জেলেদের থেকে রেণু পোনা সংগ্রহ করে গভীর রাতে মিনি ট্রাক, মোটরসাইকেল ও বাসে করে খুলনা, বাগেরহাট, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করছে।
গতকাল দুপুরে তালতলী উপজেলার রেণু পোনার আড়তদার দুলাল মিয়ার আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, আড়ত ঘরের সামনের তালা দেওয়া, পেছনের দরজা দিয়ে জেলেরা পোনা নিয়ে আসেন। দুলালের কর্মচারী শহিদুল ইসলাম ওই পোনা গণনা করে পাত্রে রাখছেন।
জেলে মালেক ও জয়নাল বলেন, জোয়ার-ভাটার সঙ্গে মিল রেখে রেণু পোনা শিকার করতে হয়। রেণু পোনা শিকার করা অন্যায় কিন্তু কেউ তো নিষেধ করছে না। তারা আরও বলেন, মহাজনদের যন্ত্রণায় বাধ্য হয়ে রেণু পোনা আহরণে আসতে হয়।
শিশু নাদিম বলেন, ‘হুনছি পোনা ধরা নিষেধ কিন্তু স্যারেরা তো মোগো মানা হরে নাই।’
তালতলীর অবৈধ বাগদা রেণু পোনা ব্যবসায়ী বশির হাওলাদার বলেন, ‘বাগদা ও চিংড়ির রেণু আহরণ নিষিদ্ধ তা জানি। কিন্তু জেলেরা নিয়ে এলে আমরা তো ফেলে দিতে পারি না। তারা আরও বলেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, নৌপুলিশ ও থানা পুলিশ সবই জানেন, তারা তো কিছু বলেন না। শুধু আপনারাই (সাংবাদিক) মোদের ডিস্টার্ব করেন।’
তালতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘ইতোমধ্যে ১২টা অভিযান চালানো হয়েছে। বেশ কিছু জাল পুড়ে ফেলেছি।’ উপজেলা শহরের নিকটবর্তী দুলাল মিয়া ও বশির উদ্দিনের আড়তে রেণু পোনা জেলেদের থেকে সংগ্রহ করে গাড়িতে চালান করছে, এ বিষয়ে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন? এমন প্রশ্নের তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।
আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তন্ময় কুমার দাশ বলেন, অবৈধ রেণু পোনা নিধন বন্ধে অভিযান পরিচালনা করে শতাধিক নেট মশারি জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে এবং অভিযান অব্যাহত আছে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সামলা বলেন, রেণু পোনা আহরণ অবৈধ। রেণু পোনা নিধন বন্ধে প্রতিদিন অভিযান অব্যাহত আছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) তারেক হাসান বলেন, উপজেলা মৎস্য অফিসারকে নিয়ে প্রায়ই অভিযান চালানো হয়।
বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসিন বলেন, রেণু পোনা নিধন রোধে অভিযান অব্যাহত আছে। উপজেলার কোনো মৎস্য কর্মকর্তা রেণু পোনা নিধনের যোগসাজশের সঙ্গে জড়িত থাকলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম বলেন, ‘যারা অবৈধভাবে রেণু পোনা মজুত করে বিভিন্ন এলাকায় রপ্তানি ও পরিবহনের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, এ মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেব।’
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও আওয়ামী নেতা শেখ মো. নিজামের বালুর রাজ্যে হানা দিয়েছেন গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুর রহমান।
বুধবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার পশ্চিম উজানচর এলাকায় শেখ নিজামের মালিকানাধীন গোধূলি পার্কে অভিযান চালিয়ে সেখানকার বিশাল জলাশয় থেকে বালু উত্তোলনের দায়ে ৩টি ড্রেজার মেশিনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং ৫টি বালুবাহী ট্রাক জব্দ করেন ইউএনও।
বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে শেখ নিজাম সেখানে তার ক্রয়কৃত কয়েক শ বিঘা জমিতে মৎস্য প্রকল্পের পুকুর খননের নামে বিপুল পরিমাণ মাটি ও বালু উত্তোলন করে আসছিলেন। এভাবে সেখানে পুকুরের নামে বড় বড় দিঘির সৃষ্টি করে তিনি কোটি কোটি টাকার মাটি ও বালু বিক্রি করেন।
এ বিষয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধেও ছিল সহায়তার অভিযোগ। প্রকল্পের আশপাশের বহু লোকের কৃষি জমি ওই জলাশয়ে ধসে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। হয়েছে একাধিকবার মানববন্ধন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে অনেক সংবাদ।
কিন্তু শেখ নিজাম রাজবাড়ীর সাবেক এমপি ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীর একান্ত স্নেহধন্য হওয়ার সুবাদে সেখানে প্রশাসন কখনোই কোনো ধরনের অভিযান চালায়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। কাজী কেরামত আলী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিনে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে মোট ৪টি ড্রেজার মেশিন ধ্বংস এবং মাটি ও বালু পরিবহনের দায়ে ১০টি মাটি বহনকারী ড্রাম ট্রাক জব্দ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাহিদুর রহমান।
এদিকে গত ৬ মে মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের মাখন রায়ের পাড়া এলাকায় মরা পদ্মা নদী হতে বালু উত্তোলনের দায়ে শহিদ নামের এক বালু ব্যবসায়ীর একটি ড্রেজারের ৫০-৬০টি পাইপ ধ্বংস করে উপজেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে তথ্য দিয়ে সহায়তার অভিযোগ এনে স্থানীয় দুলাল বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তির উপর চড়াও হয়েছেন বালু ব্যবসায়ী সহিদ ও স্থানীয় ইউপি সদস্য লিপু মন্ডল।
তবে ইউএনও নাহিদুর রহমান জানান, লিপু মন্ডলের সেখানে একটি সরকারি রাস্তায় বালু ফেলার কথা থাকলেও আশপাশের বিভিন্ন স্থানে বালু ফেলা হচ্ছিল। সে জন্য সেখানে অভিযান চালানো হয়েছে। দুলাল বিশ্বাস বা এলাকার অন্য কেউ এ বিষয়ে তাকে কিছু বলেনি।
ইউএনও আরও জানান, অনুমতি ছাড়া অবৈধভাবে কৃষি জমি থেকে মাটি উত্তোলন কিংবা নদী ও জলাশয় হতে বালু উত্তোলন বন্ধ করে সড়কে জান-মালের নিরাপত্তা ও ক্ষতিরোধ নিশ্চিত করতে এ ধরনের অভিযান আগেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে। ভবিষ্যতেও চলবে।
অভিযানে আটক করা মাটিবাহী ড্রাম ট্রাকগুলোর চালকরা পলাতক রয়েছেন। মালিকরা এলে তাদের কাছ থেকে বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা আদায়সহ সতর্ক করা হবে।
বেগমগঞ্জ উপজেলা উপজেলা নির্বাচন অফিস অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ দুর্ব্যবহারসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। টাকা না দিলে পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এই অফিসের ঘুষ ও দুর্নীতির বিষয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) ভুক্তভোগীরা পোস্ট দিচ্ছেন।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ভোটার জটিলতার কারণে নাগরিক নানান সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। নতুন ভোটার হওয়া, জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল সংশোধন ও ভোটার স্থানান্তরসহ সব কাজেই গুনতে হয় টাকা। ২০২৫ সালের ২৬ জানুয়ারি রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলা থেকে নির্বাচন অফিসার বুলবুল আহমেদ এখানে যোগদান করেন। যোগদানের পরেই তিনি বিভিন্ন ঘুষ ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। প্রবাসীরা তাদের ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে এলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তিনি ঘুরাতে থাকেন। পরে জরুরী ভিত্তিতে করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মোট অংকের টাকা দাবি করেন ওই কর্মকর্তা। তার অফিসে প্রায় ১ হাজার সেবা প্রার্থীর ভোটার স্থানান্তর ও সংশোধনের তদন্ত প্রতিবেদন আটকে রয়েছে। এই কর্মকর্তাকে ৩ বছর আগে এ ধরনের অনিয়ম ও সেবাপ্রার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহার করায় কুমিল্লার সদর থেকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয় রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলায়।
সরেজমিনে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ঘুরে দেখা যায়, দুপুরের দিকে নির্বাচন অফিসের সামনে ও বিভিন্ন কক্ষের ভেতর সেবাগ্রহীতাদের ঘুরতে দেখা যায়। নির্বাচন কর্মকর্তা ভিড় ঠেকাতে অফিসের ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে রাখেন। নতুন আইডি কার্ড করতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে শতাধিক সেবাগ্রহীতা এসেছেন। বেশ কয়েকজন দালাল অফিসের ভেতরে অবস্থান করে। সেবা গ্রহীতারা দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই অফিসের পিয়ন শহীদ রুমে ঢুকতে দেন। পরে মেলে কাজের রাস্তা। দালালদের অধিকাংশই নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মচারীদের সাথে রয়েছে সখ্যতা।
ভুক্তভোগী শাহিদুর রহমান অভিযোগ করে জানান, গত ৩০ এপ্রিল বেলা ২ টার দিকে নতুন ভোটার হতে বেগমগঞ্জ নির্বাচন অফিসে যান। নির্বাচন কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ আবেদনে কাগজপত্রের ত্রুটির অজুহাত দেখিয়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। তিনি একইভাবে অন্যান্য নতুন ভোটারদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন।
বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর গ্রামের শাকিল তার ফেইসবুক আইডিতে লিখেছেন, তিনি এরআগে এনআইডি সংশোধন করতে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়েছিলেন। নির্বাচন কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ সংশোধন হবে না মর্মে জানিয়ে দেন। পরে তার কাছে সংশোধন করিয়ে দিতে ১০ হাজার টাকা ঘুষ করেন। দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় তার সাথে দুর্ব্যবহার করে ওই কর্মকর্তা তার রুম থেকে তাড়িয়ে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেগমগঞ্জ নির্বাচন অফিসের এক কর্মচারী অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ এই অফিসে যোগদান করার পর অনিয়ম ও দুর্নীতি বেড়েছে। তিনি নিজেই সেবা প্রার্থীদের কাছে এনআইডি সংশোধন, স্থানান্তর ও নতুন ভোটার হতে ঘুষ নেন। আর সেবা প্রার্থীদের সাথে প্রতিদিন দূর ব্যবহার করে থাকেন। বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, নতুন ভোটার হতে সেবা প্রার্থীরা ত্রুটিপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে আসেন। তাই তিনি একটু রাগান্বিত হন। এখান থেকে সেবা না পেয়ে ফিরে যাওয়া লোকজনই ফেইসবুকে দুর্নাম ছড়াচ্ছে।
ময়লা-আবর্জনা আর অবৈধ দখলের কারণে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ জারিরদোনা শাখা খালটি। এ জন্য যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাব ও প্রশাসনের উদাসীনতাকে দুষছেন এলাকাবাসী।
উপজেলা সদর হাজিরহাট বাজার অংশে জারিরদোনা খাল দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ছোট-বড় বহু দোকানপাট ও বহুতল ভবন। কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই খালের পানি বাধাগ্রস্ত করে ইচ্ছামতো সরু পুল, কালভার্ট নির্মাণ করেছেন প্রভাবশালীরা। সেই সঙ্গে গড়ে তুলেছেন অবৈধ দোকানপাট। এ ছাড়া এলাকার কিছু প্রভাবশালী বাজারের আবর্জনা দিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে খালটি ভর্তি করে ফেলেছেন। যাতে করে পরে সময় সুযোগ বুঝে ওই স্থান দখলে নেওয়া যায়।
এলাকাবাসী জানান, চরফলকন, চরলরেন্স, হাজিরহাট ও সাহেবেরহাট ইউনিয়নসহ উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কৃষিকাজ এ খালের পানি প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল। পানির স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে যেমন পানি সংকটে কৃষিকাজ ব্যাহত হয়, তেমনি বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনজনিত সমস্যায় সয়াবিন, ধান, মরিচ, বাদাম ও সবজীসহ বিভিন্ন ফসল ও বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বর্তমান এ অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা চলছে। খালটি দখলের কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ থাকায় জীবনযাত্রা চরম দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে মানুষের। বন্যার পানি না নামার কারণ হিসেবে খাল দখলকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
হাজিরহাট এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নূর সেলিম বলেন, জারিরদোনা শাখা খালটির সংযোগ সরাসরি মেঘনা নদীর সঙ্গে। আশির দশক পর্যন্ত এ খালটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ হিসেবেই বিবেচিত ছিল। এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যেও এর অবদান ছিল অনস্বীকার্য। ওই সময়ে কাঁচা রাস্তা দিয়ে বাস-ট্রাক যাতায়াত করা ছিল দুর্সাধ্য। এমনকি ৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এ অঞ্চলের সড়ক পথই ছিল না।
এদিকে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ৮০ দখলবাজের কবজা থেকে খালটি উদ্ধার করতে উচ্ছেদের আদেশ হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। তারা খাল উদ্ধারে গড়িমসি করে সময় পার করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
উপজেলা ভূমি অফিসের তথ্যমতে, পিএস জরিপে হাজিরহাট বাজার অংশে খালের প্রশস্ততা ছিল গড়ে প্রায় ৩২ ফুট। বর্তমান আরএস জরিপে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ২০ ফুটে। কিন্তু কিছু ইমারত (ভবন) এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে ওই সব অংশে খালের প্রশস্ততা বর্তমানে ২ থেকে ৩ ফুটের বেশি নেই।
হাজিরহাট বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুল হাছান বলেন, ‘এলাকার বৃহত্তর স্বার্থে খালটি সংস্কার করে পানির প্রবাহ ঠিক রাখা একান্ত জরুরি। পুরো খাল দখল করে যারা ইমারত তৈরি করেছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে খালটি দখলমুক্ত করা এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ আরাফাত হুসাইন বলেন, ‘জারিরদোনা খাল দখলমুক্ত করতে ইতোমধ্যে আদেশ হয়েছে। আমরা দ্রুত কাজ শুরু করব।’
এ বিষয়ে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহাত-উজ জামান বলেন, খালটি সংস্কার ও অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
গত মার্চের ১৯ তারিখে চাল না দেওয়া ও চাল সংগ্রহে চুক্তি না করায় রাজশাহী বিভাগে ৯১৩টি চালকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে খাদ্য বিভাগ। রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য বিভাগ থেকে চাল সংগ্রহ মৌসুম শেষ হওয়ার পর সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রণালয়ে এই সুপারিশ পাঠানো হয়। সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেও চাল সরবরাহ না দেওয়ায় রাজশাহী বিভাগের ৬১টি চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। চুক্তিবদ্ধ হয়েও কোনো চাল সরবরাহ করেনি এসব চালকল মালিকরা। এছাড়া চাল সংগ্রহ কার্যক্রমে অসহযোগিতাকারী ৯১৩টি চালকলকেও সাবধান করা হয়েছে।
খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের সাথে চুক্তি করেও ঠিকভাবে চাল সরবরাহ দেয়নি এমন চালকলের সংখ্যা ১৬২টি। এর মধ্যে চুক্তির ৮০ ভাগ চাল দিয়েছে এমন চালকলের সংখ্যা ৩০টি। ৫০ ভাগ চাল দিয়েছে- এমন চালকলের সংখ্যা ৭১টি। আর চুক্তিবদ্ধ হয়েও কোনো চালই দেয়নি এমন চালকলের সংখ্যা ৬১টি। এছাড়া, ব্যবসা করলেও চাল সরবরাহের চুক্তি না করা চালকলগুলোরও লাইসেন্স বাতিল করেছে খাদ্য বিভাগ।
রাজশাহী খাদ্য অফিসের তথ্যমতে, রাজশাহী বিভাগে আমন সংগ্রহ ২০২৪-২০২৫ মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৫৬,৩৫৯ টন, সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৩৯৫ টন (লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৭%), সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ২৬৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ৯৪ হাজার ৭০৭ মেট্রিক টন। আর আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১ হাজার ৮৯১ মেট্রিক টন। সংগ্রহ হয়েছে ১৯ হাজার ৫২৯ মেট্রিক টন।
৬১টি চালকলের মধ্যে যারা সিদ্ধচালের কোনো চালই প্রদান করেনি- এমন চালকল রাজশাহীর একটি, নওগাঁয় ৮টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ তিনটি, পাবনায় ১১টি, বগুড়ায় ৩৪টি ও জয়পুরহাটে তিনটি। আর আতব চাল দেয়নি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার একটি মিল। এর আগে এসব চালকল মালিকদের ব্যাখ্যা তলব করা হয়। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হওয়ায় এসব চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
রাজশাহী খাদ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারি উপপরিচালক ওমর ফারুক বলেন, সরকারি যেকোনো কাজে চুক্তিবদ্ধ হলে তা বাস্তবায়ন না করতে পারলে অপরাধ বলে গণ্য হবে। যেসব মিল চুক্তি করেও ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ চাল সরবরাহ করেছে, তাদের জামানত থেকে জরিমানা কেটে নেওয়ার আর যারা কোনো চাল সরবরাহ করেনি, তাদের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করেছিলাম। রাজশাহী বিভাগের যে সব মিল চাল দেয়নি বা চুক্তিযোগ্য ছিল কিন্তু চুক্তি করেনি- এমন মিল ৯১৩টি মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে দিয়েছিলাম। এদের মধ্যে ৬১টি চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। বাকিদের শোকজ করা হয়েছে। পরে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যারা চাল সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
নীলফামারীর জলঢাকায় ইজারাবিহীন খাসে যাওয়া মীরগঞ্জ হাট-বাজারে গরু-ছাগল ক্রেতা বিক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার সরেজমিনে গিয়ে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায়, সরকারি খাস খতিয়ানে যাওয়া মীরগঞ্জ হাট-বাজারের পশুরহাটে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে গরু ক্রেতার কাছ থেকে রশীদ ফি ৬০০ টাকা ও বিক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত ২০০ টাকা চাঁদাসহ গরু প্রতি মোট ৮০০ টাকা আদায় করছেন হাট-বাজারের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ। এ হাট-বাজারে প্রশাসনের কাউকে দেখা না গেলেও সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে দুইজন ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক হাট বাজারের অফিসে উপস্থিত হতে দেখা যায়। তারা হলেন গোলনা ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম ও কাঁঠালী ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। মীরগঞ্জ হাট-বাজারের টোল আদায়ের মুল দায়িত্বে ছিলেন ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা সঠিক সময়ে হাটে এসেছি। তারা আমাদের চাপে ফেলে হাটের টোল আদায় করছেন। আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করেছি।
তারা কারা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওরা বিএনপি-জামায়াতের লোকজন। সংবাদকর্মীদের দেখে হাট-বাজারের থাকা ক্রেতা বিক্রেতা এগিয়ে এসে বলেন, গত ৩টা হাটে শুধু গরু ক্রেতার কাছে রশীদের ফি বাবদ ৬০০ টাকা নিয়েছেন। আর যারা গরু বিক্রেতা ছিলাম আমাদের কাছ তেকে কোন প্রকার চাঁদা নেয়নি। কিন্তু আজকের হাটে গরু ক্রেতার কাছে রশীদের মাধ্যমে ৬০০ টাকা এবং বিক্রেতার কাছে বিধি পরিপন্থি অতিরিক্ত ২০০ টাকা চাঁদা নেয়। হাটের লোকজন আমাদের কাছে জোরপূর্বক ভয়ভীতি দেখিয়ে অতিরিক্ত ২০০ টাকা চাঁদা নিচ্ছেন। একপর্যায়ে একদল লোক দৌড়ে এসে সংবাদকর্মীদের ওপর চড়াও হয় এবং আক্রোশমুলক গালমন্দ করতে থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা এবং হত্যার হুমকি প্রদর্শন করেন।
লোকমুখে জানা যায়, তারা উপজেলা বিএনপির একাংশ একটি গ্রুপের বাহিনী। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থ বছরের বাংলা ১৪৩২ সালে উপজেলার ২৬টি হাট ইজারা দেওয়ার দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরমধ্যে ১৭টি হাটের দরপত্র জমা হলে বিধিমোতাবেক দরপত্র দর দাতাদের মধ্যে হাট-বাজার গুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে ৯টি হাটের কোন দরপত্র জমা না হওয়ায় হাট-বাজার গুলো খাস খতিয়ানে চলে যায়। খাস খতিয়ানে যাওয়া হাট-বাজার গুলো হলো, মীরগঞ্জ হাট-বাজার, পাঠানপাড়া হাট-বাজার, হলদিবাড়ী নালারপাড় হাট-বাজার, হলদিবাড়ী জয়বাংলা হাট-বাজার, নবাবগঞ্জ হাট-বাজার, ডিয়াবাড়ী হাট-বাজার, বালারপুকুর চৌধুরীর হাট-বাজার, হরিশ্চন্দ্রপাঠ হাট-বাজর, খুটামারা রহমানিয়া হাট-বাজার ইত্যাদি। এই হাটগুলো বর্তমানে উপজেলা প্রশাসন তাদের নিজেদের নিয়োগকৃত জনবল দিয়ে হাট-বাজারের টোল আদায় করছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জায়িদ ইমরুল মোজাক্কিন বলেন, লিখিতভাবে কাউকে হাট-বাজার দেওয়া হয়নি। কিন্তু খাস খতিয়ানের হাট-বাজারে কিছু লোকের সহযোগিতা নিয়ে টোল আদায় করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ২০০ টাকা টোল আদায়ের কোন এখতিয়ার নেই। যদি এরকম কোনো প্রমাণ আপনারা দিতে পারেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য