এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। প্রায় প্রতিদিনই সংক্রমণ নতুন রেকর্ড ছুঁচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালেও বেড সংকট দেখা দিয়েছে। কঠিন হয়ে গেছে সেবা পাওয়া।
সংকটাপন্ন রোগীদের স্বজনেরা ছুটছেন এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে। অনেক সময় অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
রাজধানীর বড় বড় পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতালে খোঁজ নিয়েছে নিউজবাংলা। হাসপাতালে দেওয়া তথ্য উঠে এসেছে উদ্বেগজনক চিত্র।
রাজধানীর বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা চিকিৎসায় গঠিত বিশেষায়িত ইউনিটে সাধারণ বেড ও নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) সবই পরিপূর্ণ।
এমন পরিস্থিতিতে রোগীর স্বজনেরা বলছেন, চিকিৎসা পেতে একদিকে যেমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে, অন্যদিকে চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর মৃত্যুর শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
হিমশিম ইউনাইটেড হাসপাতাল
চার সপ্তাহ ধরে ইউনাইটেড হাসপাতালে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনা রোগীদের সেবায় গঠিত ইউনিটে ১৫০ বেড রয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে এসব বেড রোগীতে পূর্ণ। এই হাসপাতালে ২২টি আইসিইউ গত ১৪ দিন ধরে পরিপূর্ণ। করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে রয়েছে শতাধিক চিকিৎসক। বাড়তি চাপ সামলাতে তারা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন।
হাসপাতালটির চিফ অফিসার সাগুফতা আনোয়ার বলেন, ‘পরিস্থিতি অনেক জটিল। রোগীর সংখ্যা বিপুল বেড়েছে। সাধারণ বেডে ভর্তি করা হয়েছে আসলাম নামক রোগীকে। হঠাৎ করে তার অক্সিজেন লেভেল কমে যাওয়ায় তার এক আত্মীয় আমেরিকা থেকে আমাকে ১০০ বার ফোন করেছেন আইসিইউয়ের জন্য। তবে আমাদের হাসপাতালে আইসিইউ ফাঁকা না থাকায় আমরা দিতে পারিনি।’
সাগুফতা আনোয়ার জানান, আইসিইউ-এর ব্যবস্থা না করে দিতে পারায় অনেকের খারাপ হচ্ছে।
রোগী ফিরিয়ে দিচ্ছে এভারকেয়ার
এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনার বিশেষায়িত ইউনিটে কোনো আইসিইউ বেড ফাঁকা নেই দু সপ্তাহ ধরে। বাধ্য হয়েই রোগী ফিরিয়ে দিচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এভারকেয়ার হাসপাতালের উপব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কাইয়ুম খান রাজু বলেন, ‘তিন-চারদিন ধরে আমরা নতুন রোগী ভর্তি করতে পারছি না। ভর্তির জন্য আগতদের প্রতিদিনই ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। হাসপাতালে বর্তমান যারা ভর্তি রয়েছেন, তাদের সবার অবস্থা সংকটাপন্ন। রোগী ভর্তির জন্য অনুরোধ এলেও আমরা ভর্তি করতে পারছি না।’
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এই হাসপাতালে এখন দুটি আইসিইউ ও ২টি সাধারণ বেড খালি। এই হাসপাতালে সাধারণ বেড ২৮টি ও আইসিইউ আছে ১৯টি।
রোগীতে পরিপূর্ণ ইবনে সিনা হাসপাতাল
মহামারি করোনা সংক্রমণ দেখা দিলে ইবনে সিনা হাসপাতালে করোনার একটি বিশেষ ইউনিট খোলা হয়। এখানে ৫২টি বেড রয়েছে, সবগুলো ভর্তি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী আসছেন। খালি না থাকার কারণে তাদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। অনেকেই মনে কষ্ট নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
হাসপাতালটির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার তাবিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাসপাতালের ৫২টা বেড ও ৭টি আইসিইউ রোগীতে পূর্ণ। প্রতিদিন হাসপাতালে রোগী আসছেন। ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শুধু শুধু রোগী ভর্তি করে কী লাভ, যদি চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না হয়? যেসব রোগী আসছেন, তাদের অধিকাংশেরই আইসিউ প্রয়োজন হচ্ছে।’
নতুন রোগী নিচ্ছে না আনোয়ার খান মডার্ন
মহামারির শুরু থেকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল। গত এক মাস ধরে রোগীর চাপ বেড়েছে। ১৫ দিন ধরে এই হাসপাতালে নতুন করে করোনা রোগী ভর্তি বন্ধ।
করোনায় গঠিত ইউনিটে সব বেড রোগীতে পূর্ণ। হাসপাতালটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা নিতে ৮৩ বেড ও ২২টি আইসিইউ রয়েছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে নতুন রোগীর জায়গা দেওয়ার মতো অবস্থা নেই। চিকিৎসকেরা আন্তরিকতার সাথে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। তবে পরিস্থিতি এভাবে চললে অনেক রোগী চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবেন।’
বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটাল
বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ৬২টি সাধারণ বেড ও ৯টি আইসিইউ এক মাস ধরে ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে না।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, প্রতিদিনই রোগী ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের সবাই সংকটাপন্ন।
হাসপাতালের পরিচালক মোরশেদ ইমরান নিউজবাংলাকে, ‘মানুষের অনুরোধের কারণে অনেক সময় ফোন বন্ধ করে রাখি। এর মধ্যে নিজেদের আত্মীয়-স্বজনও করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। কষ্ট লাগছে তাদের চিকিৎসায় কিছু করতে পারছি না। আইসিইউ ফাঁকা না থাকলে কীভাবে ম্যানেজ করব? পরিস্থিতি এমন, একজন করোনা রোগী সাধারণ বেডে ভর্তি হলো, দুইদিন পর তার আইসিউ প্রয়োজন হচ্ছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আইসিইউ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই কারণে আমরা একটা তালিকা তৈরি করেছি। এভাবেই চলছে গত এক মাস।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে শয্যা বৃদ্ধি করেও লাভ হবে না। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধেই গুরুত্ব বেশি দিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, রাজধানীর নয়টি বেসরকারি হাসপাতালের সাধারণ বেড রয়েছে ৭৭২টি। এর মধ্যে ফাঁকা রয়েছে ১৪৫টি। ১৮০টি আইসিইউয়ের মধ্যে ফাঁকা রয়েছে মাত্র ১৪টি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, চব্বিশের জুলাই মাসে ফ্যাসিবাদবিরোধী যে সংগ্রাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মাধ্যমে সূচনা হয়েছিল, ১৪ জুলাইয়ের ঘটনাপ্রবাহ সে আন্দোলনকে নতুন মোড় দেয়।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীদের প্রতি অবমাননাকর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা মধ্যরাতেই পথে নেমে এসেছিলেন। নারীদের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর সেই অপমানের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে বেগবান করেছিল এবং সকলের প্রতিরোধের মুখে ফ্যাসিবাদী শাসন ক্রমাগত পশ্চাদপসরণে বাধ্য হয়েছিল।
সোমবার (১৪ জুলাই) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৩তম দিনের আলোচনার শুরুতে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন।
এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণকে মর্যাদা দিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে ১৪ জুলাইকে ‘জুলাই নারী দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে উল্লেখ করে কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, রাষ্ট্র বিনির্মাণে নারীদের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। এই প্রাতিষ্ঠানিক রূপের মাধ্যমেই রাজনীতিতে, রাষ্ট্র গঠনে এবং আইন প্রণয়নে নারীদের মর্যাদার সঙ্গে অংশগ্রহণের পথ তৈরি হবে। তিনি এ বিষয়ে এক জায়গায় পৌঁছে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। আজ নারী প্রতিনিধিত্ব এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা—এই দুইটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) সামনে নৃশংস হত্যার শিকার ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে হিন্দু দাবি করে ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
রোববার রাতে প্রেস উইং ফ্যাক্ট চেক তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে প্রকাশিত বিবৃতিতে এসব তথ্য জানায়। সেখানে বলা হয়, ‘এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে এবং ডব্লিউআইওএনসহ ভারতের একাধিক গণমাধ্যম নিহত মো. সোহাগ ওরফে লাল চাঁদকে হিন্দু হিসেবে হিসেবে উপস্থাপন করেছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বাস্তবে তিনি একজন মুসলিম ব্যবসায়ী।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, লাল চাঁদের পিতার নাম মো. আইয়ুব আলী এবং মায়ের নাম আলেয়া বেগম। তার স্ত্রীর নাম স্ত্রী লাকি বেগম। এই দম্পতির দুই সন্তান। ফাতেমা ও সোহান।
গত ৯ জুলাই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে দুর্বৃত্তরা লাল চাঁদকে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। মৃত্যুর পরও তার মরদেহে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। মর্মস্পর্শী এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
হত্যার ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ৭ জনকে হেফাজতে নিয়েছে। নিহত সোহাগকে গত শুক্রবার তার গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের বান্দারগাছিয়া গ্রামে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়।
প্রেস উইং আরো জানায়, ‘ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো শিরোনামে সোহাগকে হিন্দু বলে উল্লেখ করলেও প্রতিবেদনে তার ধর্ম বা ব্যক্তিগত পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়নি।’
বিবৃতিতে প্রেস উইং অভিযোগ করেছে, ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করছে।
চলতি বছর দেশে অপরাধ ব্যাপক হারে বেড়েছে—এমন দাবি পরিসংখ্যান দিয়ে পুরোপুরি সমর্থিত নয় বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ পুলিশের সদর দপ্তরের তথ্য উদ্ধৃত করে বলেন, “আসলে গত ১০ মাসে বড় ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক গণমাধ্যম প্রতিবেদনে চলতি বছরে অপরাধের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে বলে তুলে ধরা হয়েছে, যা নাগরিকদের মধ্যে ভয় ও অনিরাপত্তা বাড়িয়েছে।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক অপরাধ পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বলা যায়, দেশে অপরাধের তীব্র বৃদ্ধি ঘটেছে—এই দাবি পুরোপুরি তথ্যনির্ভর নয়, বলেন আজাদ।
তিনি বলেন, “এগুলো কোনো অপরাধ–জোয়ারের লক্ষণ নয়; বরং সবচেয়ে গুরুতর কিছু অপরাধ হয় কমেছে বা স্থিতিশীল রয়েছে।”
উপ-প্রেস সচিব আরও বলেন, “শুধু কিছু নির্দিষ্ট অপরাধের হার বেড়েছে।”
“নাগরিকদের সতর্ক থাকা উচিত, তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে—পরিসংখ্যানে এরই প্রতিফলন দেখা যায়,” বলেন আজাদ।
তিনি বিগত পাঁচ বছর এবং গত ১০ মাসের অপরাধ পরিসংখ্যানের দুটি ছকও উপস্থাপন করেন।
সব পরিসংখ্যান পুলিশের সদর দপ্তরের সরবরাহকৃত।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, শহীদ পরিবারের সদস্যরা পাশে দাঁড়ালে অনুপ্রেরণা পাই।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শহীদ পরিবারের সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করে এ মন্তব্য করেন চিফ প্রসিকিউটর।
পোস্টে চিফ প্রসিকিউটর লিখেছেন, ‘শহীদ পরিবারের সদস্যরা যখন আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান, তখন আমাদের কঠিন দায়িত্ব পালনে আমরা অনেক বেশি শক্তি ও অনুপ্রেরণা পাই।’
ছবির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘ছবিতে শহীদ মীর মুগ্ধের পিতা মীর মোস্তাফিজুর রহমান ও শহীদ ফারহান ফাইয়াজের পিতা শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ পরিবারের সদস্যরা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলের সঞ্জু বড়াইক নামে এক শিক্ষার্থী হলের ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। সোমবার (১৪ জুলাই) ভোর সাড়ে ৫টায় তিনি জগন্নাথ হলের ১০ তলা বিশিষ্ট রবীন্দ্র ভবনের ছাদ থেকে নিচে লাফ দেন বলে জানিয়েছেন তার হলের সহপাঠীরা।
নিহত সঞ্জু ঢাবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এবং জগন্নাথ হলের আবাসিক ছাত্র। তার বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায়। তার বাবা-মা চা–শ্রমিক।
জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ দেবাশীষ পাল বলেন, ‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজ অনুযায়ী, ভোর ৪টা ১ মিনিটে সঞ্জু হলের পূর্ব পাশের গেট দিয়ে হলে প্রবেশ করেন। তারপর রবীন্দ্র ভবনের লিফটে করে ছাদে যান। এরপর ৫টা ৩৬ মিনিটে তিনি ভবনের পশ্চিম পাশে, পুকুরপাড়ের রাস্তার দিকে লাফ দেন। পরে হলের প্রহরীরা রিকশায় করে তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান এবং চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
প্রাধ্যক্ষ আরও জানান, সঞ্জু গত কয়েক দিন ধরে প্রেমঘটিত কারণে কিছুটা মানসিক কষ্টে ছিলেন এবং গত দুই দিন হলে ছিলেন না। তিনি বকশীবাজার এলাকায় সরল নামের এক বাল্যবন্ধুর কাছে ছিলেন।
দেবাশীষ পাল আরও জানান, সরল জানিয়েছেন গতরাতে তারা একসঙ্গে ঘুমিয়েছিলেন। কিন্তু সকালে সরল কল পেয়ে ঘুম থেকে উঠে দেখেন, সঞ্জু তার পাশে নেই এবং পরে আত্মহত্যার খবর পান।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মুনসুর বলেন, প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে। তিনি জানান, সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তার সহপাঠীরা জানান, আত্মহত্যার আগে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সঞ্জু লেখেন—‘আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আমি দিনের পর দিন কাউকে ডিস্টার্ব করে গেছি। উল্টো মানুষকে দোষারোপ করা আমার একদম ঠিক হয়নি। আমি সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি দিনের পর দিন অন্যায় করেছি। নিজের দোষ ঢেকে অপরজনকে দোষ দেওয়া আমার ঠিক হয়নি। আমি সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমার কারণে কারও কোনো ক্ষতি হয়ে থাকলে, সে দায় একান্তই আমার। আমি ক্ষমা চাচ্ছি।’
গাজায় রোববার ইসরাইল বিমান হামলা চালিয়েছে। হামালায় শিশুসহ ৪৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনা অচলাবস্থার মধ্যে ইসরাইল এ হামলা চালায়। গাজার নাগরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে।
গাজা সিটি থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ২১ মাস ধরে চলা ভয়াবহ যুদ্ধবিরতি বন্ধে একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একমত হওয়ার চেষ্টায় ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা এখন এক সপ্তাহ ধরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গাজার নাগরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেছেন, গাজায় একটি পানি বিতরণ কেন্দ্রে ইসরাইলের ড্রোন হামলায় আট শিশুসহ ১০ জন নিহত হয়েছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের এই হামলার জন্য ‘কারিগরি ত্রুটি’কে দায়ী করেছে। সেনাবাহিনী আরো জানিয়েছে, একজন যোদ্বাকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালানোর সময় কারিগরি ত্রুটির কারণে লক্ষ্যবস্তু থেকে কয়েক ডজন মিটার দূরে গোলাটি পড়ে।
রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি একটি গাজা যুদ্ধবিরতির চুক্তির বিষয়ে আশাবাদী। ওয়াশিংটন ইসরাইলের শীর্ষ মিত্র এবং ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিচ্ছেন।
বাসাল বলেন, কিন্তু যুদ্ধ বন্ধের কোনও তাৎক্ষণিক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। রোববার ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড জুড়ে হামলায় গাজা সিটির একটি বাজারে ১১ জনসহ কমপক্ষে ৪৩ জন নিহত হয়েছেন।
নুসাইরাতের বাসিন্দা খালেদ রায়ান এএফপিকে বলেন, দুটি বড় বিস্ফোরণের শব্দে তিনি ঘুম থেকে উঠেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী এবং তার সন্তানরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছিল’।
আরেক বাসিন্দা, মাহমুদ আল-শামি, আলোচকদের যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সাথে যা ঘটেছে তা মানবতার ইতিহাসে কখনও ঘটেনি’। ‘যথেষ্ট হয়েছে।’
মেহেরপুর কলেজ মোড়ে “জুলাই শহিদ স্মৃতি স্তম্ভ” নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগের প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য এই স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণ কাজের সূচনা হয় সোমবার সকালে, জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজের নামফলক উন্মোচনের মাধ্যমে। উদ্বোধন শেষে সেখানে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. নজরুল কবীর, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রফিকুল হাসান, সিভিল সার্জন ডা. এস এম আবু সাঈদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিনুর রহমান, এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী শাখাওয়াত হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার খায়রুল ইসলাম, তথ্য অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন, সমাজসেবা উপ-পরিচালক আসাদুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ উপ-পরিচালক শামসুল আলম, জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ ওয়ালিউল্লাহসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার শেখ তৌহিদুল কবির, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র প্রতিনিধি তামিম ইসলাম ও খন্দকার মুহিত, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসিমা খাতুন, সরকারি কলেজের শিক্ষক হেজমত আলী মালীথ্যা ও ফুয়াদ খান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মনিরুল ইসলাম, ফায়ার সার্ভিস অফিসার শামীম রেজা, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান, জেলা জামায়াতের রাজনৈতিক সেক্রেটারি কাজী রুহুল আমিন ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মিন্টু প্রমুখ।
স্মৃতি সংরক্ষণ ও প্রজন্মকে ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন করতে নির্মাণ হচ্ছে এই স্মৃতি স্তম্ভ।
মন্তব্য