করোনাভাইরাসে কম জটিলতায় ভোগা রোগীদের পাঁচ তারকা হোটেলে চিকিৎসাসেবা দিতে যাচ্ছে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের মুম্বাই শহর। বেসরকারি হাসপাতালের সংযোজন হিসেবে দুটি হোটেল বৃহস্পতিবার থেকে কাজ শুরু করার কথা।
শহরটির কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার এসব তথ্য দেয়।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে চার বা পাঁচ তারকা হোটেলের সঙ্গে কাজ করবে মুম্বাইয়ের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল। যেসব রোগীর জরুরি চিকিৎসাসেবার দরকার নেই, তাদের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে হোটেলে স্থানান্তর করা হবে। এ বিষয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকের অনুমোদন লাগবে।
মুম্বাইয়ের নাগরিক সংগঠন বৃহনমুম্বাই মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের (বিএমসি) তথ্য অনুযায়ী, করোনায় আক্রান্তদের জন্য পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতে কমপক্ষে ২০টি রুম থাকতে হবে। পাশাপাশি সেখানে ২৪ ঘণ্টার চিকিৎসক, নার্স, ওষুধ ও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা থাকা লাগবে।
এসব হোটেলগুলোতে চিকিৎসা সেবার জন্য হাসপাতালগুলো চার হাজার রুপি পর্যন্ত মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে। এ ছাড়া রোগীর সঙ্গে হোটেল রুমে কেউ থাকলে ছয় হাজার রুপি পর্যন্ত ফি দিতে হতে পারে।
বিএমসি আরও জানায়, উপসর্গহীন করোনা পজিটিভ ব্যক্তিরাও হোটেলে থেকে চিকিৎসা নিতে পারবে। বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে বেসরকারি হাসপাতাল ও হোটেলের মধ্যে বোঝাপড়া ও নির্বিঘ্ন সমন্বয় অবশ্যই থাকতে হবে। যেসব রোগীর হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা সেবা নেয়া জরুরি, তাদের স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে হাসপাতালে শয্যা সংকট দূর হবে।
ভারতের মহারাষ্ট্রের মুম্বাইসহ অন্যান্য শহরে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। বুধবার রাজ্যটিতে ৯ হাজার ৯৩১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয় ও এতে মৃত্যু হয় ৫৪ জনের। এমন বাস্তবতায় মুম্বাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত এসেছে।
রাজ্যের জনস্বাস্থ্য দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বেসরকারি হাসপাতালের অনেক শয্যায় এমন রোগী রয়েছেন, যাদের জরুরি চিকিৎসাসেবার প্রয়োজন নেই। এ ধরনের রোগীদের কার্যকর ও পর্যাপ্তভাবে বিকল্প ব্যবস্থায় সেবা দেয়া যেতে পারে।
ইরানে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ বোমা হামলা, যুদ্ধবিরতি, কূটনৈতিক আলোচনা- সব কিছুতেই উত্তাল মধ্যপ্রাচ্য। এর মধ্যেই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির এক সপ্তাহেরও বেশি সময় জনসমক্ষে অনুপস্থিত থাকা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা, উদ্বেগ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক উপস্থাপক পর্যন্ত সম্প্রচারে প্রশ্ন তুলে দেন: মানুষ খুব উদ্বিগ্ন, তারা জানতে চায়- আয়াতুল্লাহ খামেনি কেমন আছেন? এই প্রশ্ন আজ ইরানের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে ক্ষমতার মঞ্চেও ঘুরপাক খাচ্ছে।
খামেনির দপ্তরের আর্কাইভ প্রধান মেহেদি ফাজায়েলি এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য না দিয়ে বলেন, আমার কাছেও অনেক ফোন এসেছে, সবাই চিন্তিত। আমরা সবাই দোয়া করছি। নিরাপত্তা বাহিনী আমাদের সর্বোচ্চ নেতার সুরক্ষায় যথাযথ কাজ করছে। ইনশাআল্লাহ, জনগণ তার পাশে দাঁড়িয়ে বিজয় উদযাপন করবে।
বিস্ময়করভাবে, ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলা, কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও ট্রাম্প-উত্থাপিত যুদ্ধবিরতির পুরো সময়জুড়ে খামেনির কোনো ভিডিও, অডিও বা লিখিত বক্তব্য আসেনি।
সরকারি সূত্র বলছে, খামেনি একটি সুরক্ষিত বাঙ্কারে অবস্থান করছেন ও যেকোনো সম্ভাব্য ইসরায়েলি গুপ্তহত্যা রোধে ইলেকট্রনিক যোগাযোগ থেকেও বিরত রয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও খামেনির উপদেষ্টা হামজেহ সাফাভি বলেন, ইরানি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন, ইসরায়েল এখনো খামেনিকে হত্যা করার চেষ্টা করতে পারে, এমনকি যুদ্ধবিরতির সময়েও। তাই এখন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বাইরের জগৎ থেকে যোগাযোগে কঠিন বিধিনিষেধ। কিন্তু এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় রাজনৈতিক অভ্যন্তরীণ মহল।
খানেমান পত্রিকার সম্পাদক মোহসেন খালিফে বলেন, কয়েকদিন ধরে খামেনির অনুপস্থিতি আমাদের, যারা তাকে ভালোবাসি, তাদের সবাইকে খুবই চিন্তিত করে তুলেছে। যদি সত্যি তিনি মারা যান, তবে তার জানাজা হবে ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময়।
যেহেতু খামেনিই সামরিক সিদ্ধান্তে চূড়ান্ত স্বাক্ষরকারী, তাই ইসরায়েল বা আমেরিকার সঙ্গে যুদ্ধ বা যুদ্ধবিরতির মতো বড় সিদ্ধান্ত তার অনুমোদন ছাড়া হওয়া অসম্ভব। প্রশ্ন উঠছে- এই সিদ্ধান্তগুলোতে তিনি আদৌ যুক্ত ছিলেন কি না?
আশুরায় খামেনির উপস্থিতির গুরুত্ব
চ্যাটহ্যাম হাউজের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক পরিচালক সানাম ভাকিল বলেন, খামেনির অনুপস্থিতি প্রমাণ করে ইরানের নেতৃত্ব নিরাপত্তা বিষয়ে কতটা সতর্ক। তবে আশুরার দিনে তিনি যদি না আসেন, তা হবে খুবই খারাপ বার্তা।
আসন্ন আশুরা (জুলাইয়ের শুরু) অনেকাংশেই হয়ে উঠেছে খামেনির রাজনৈতিক জীবিত-বোধের পরীক্ষামূলক দিন। কারণ বহু সমর্থক বলছে, তারা ততক্ষণ যুদ্ধজয়ের আনন্দ উদযাপন করবে না, যতক্ষণ না খামেনিকে নিজের চোখে দেখে বা কণ্ঠে শোনেন।
পরিবর্তনের ডাক ও রাজনৈতিক বিভক্তি
ইরানের চারজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, খামেনির অনুপস্থিতিতে রাজনৈতিক ও সামরিক অভিজাতদের মধ্যে জোট গঠনের চেষ্টা চলছে। অনেকে কূটনৈতিক সমঝোতার পথে হাঁটতে চাইলেও, কেউ কেউ কঠোর অবস্থান বজায় রাখতে চাইছেন। এই মুহূর্তে মধ্যপন্থি একটি পক্ষ এগিয়ে আছে। এদের নেতৃত্বে আছেন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। তিনি বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার পক্ষে ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এই পক্ষের মিত্রদের মধ্যে রয়েছেন বিচার বিভাগের প্রধান গোলাম-হোসেইন মোহসেনি-এজেই ও সেনাবাহিনীর নতুন প্রধান মেজর জেনারেল আবদুর রহিম মুসাভি। গত বুধবার এক মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান বলেন, যুদ্ধ ও জনগণের ঐক্য আমাদের শাসনব্যবস্থা এবং কর্মকর্তাদের আচরণে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা দেখিয়েছে। এটি একটি স্বর্ণালী সুযোগ।
সরকার যুদ্ধকালে উদ্ভূত জাতীয়তাবাদী আবেগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। উদাহরণ স্বরূপ, আজাদি স্কয়ারে জাতীয় সিম্ফনি অর্কেস্ট্রার পারফরম্যান্স ও জরুরি সেবাকর্মীদের সম্মানে লাইট শো অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে পেজেশকিয়ানের এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন কট্টর রক্ষণশীল রাজনীতিক সাঈদ জালিলি। তার নেতৃত্বাধীন একটি গোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পেজেশকিয়ানের আলোচনার আগ্রহকে ‘রাজনৈতিক অযোগ্যতা’ আখ্যা দিয়েছেন। সামরিক বাহিনীর কিছু অংশ ও সংসদের বেশিরভাগ সদস্য এই কট্টরপন্থি শিবিরের ঘনিষ্ঠ।
জালিলির ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফোয়াদ ইজাদি সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, এই মুহূর্তে আলোচনা শুরু করার কথা বলায় প্রেসিডেন্ট প্রমাণ করেছেন, তার হাতে দেশের শাসনভার দেওয়ার মতো রাজনৈতিক দক্ষতা নেই। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র আলি আহমাদনিয়া পাল্টা জবাবে বলেন, আমরা ১২ দিন ধরে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি, এখন আপনাদের মতো লোকদের সঙ্গে যুদ্ধ করতেই হবে? আপনারা কলম দিয়ে শত্রুর কাজ সহজ করছেন।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ভবিষ্যৎ
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ও পারমাণবিক সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ এসলামি বলেছেন, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরায় গড়ে তুলবে ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখবে।
ইসরাইলি কমান্ডোরা ১২ দিনের যুদ্ধ চলাকালে ইরানের অভ্যন্তরে গোপনে কাজ করেছে। ইসরাইলের সেনা প্রধান বুধবার এ কথা বলেন।
জেরুজালেম থেকে এএফপি জানায়, ইসরাইলি সেনা প্রধান ইয়াল জামির টেলিভিশনে এক ভাষণে বলেন, ‘আমরা ইরানের আকাশসীমা ও আমাদের পছন্দের প্রতিটি স্থানে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছি।’ তিনি বলেন, আর তা সম্ভব হওয়ার কারণ হলো, আমাদের বিমান বাহিনী ও স্থল কমান্ডো ইউনিটগুলোর সমন্বয় ও তাদের কৌশল।
‘বাহিনীগুলো শত্রু অঞ্চলের গভীরে গোপনে কাজ করে আমাদের অবাধ কর্মক্ষমতা প্রয়োগের পথ তৈরি করে।’
মঙ্গলবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে উভয় দেশই সংঘাতে বিজয়ের দাবি করেছে।
১৩ জুন ইসরাইল একটি আকস্মিক বোমা হামলার মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু করে, যার লক্ষ্য ছিল ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা থেকে বিরত রাখা। তবে ইরান ধারাবাহিকভাবে এই উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা অস্বীকার করে।
জামির প্রথম ইসরাইলি কর্মকর্তা যিনি প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ইসরাইলি সৈন্যরা ইরানের স্থলভাগে অভিযান চালিয়েছে।
তিনি আরও বলেন ‘অভিযান এখনও শেষ হয়নি।’ ‘অনেক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
ইসরায়েল অধিকৃত জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরের ঐতিহ্যবাহী ফিলিস্তিনি জনপদ থেকে ব্যাপক হারে জোরপূর্বক ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তর (ওএইচসিএইচআর)। এটিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী জাতিসংঘ যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
ওএইচসিএইচআরের তথ্যমতে, মাসাফের ইয়াত্তা অঞ্চল থেকে ১২০০ ফিলিস্তিনি নাগরিকের জোরপূর্বক স্থানান্তরের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জাতিসংঘের দপ্তরটি এক বিবৃতিতে জানায়, দক্ষিণ হেবরনের মাসাফের ইয়াত্তা এলাকায় ফিলিস্তিনিদের সব ধরনের নির্মাণ ও পরিকল্পনার অনুমতি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক প্রশাসন।
তাদের দাবি, ওই এলাকাটি সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হবে।
ওএইচসিএইচআর আরও জানায়, গত কয়েক মাসে ইসরায়েল ব্যাপকভাবে বাড়িঘর ভাঙচুর, ফিলিস্তিনি নাগরিক ও মানবাধিকারকর্মীদের নির্বিচার গ্রেপ্তার ও নির্যাতন, পাশাপাশি মাসাফের ইয়াত্তার ভেতর ও আশপাশে চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে, যার মাধ্যমে সেখানকার ফিলিস্তিনিদের বাধ্যতামূলকভাবে উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে ওই এলাকায় বসবাসরত অবৈধ ইহুদি বসতি থেকে আসা দখলদাররা প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনি নারী, শিশু ও প্রবীণদের ওপর হামলা ও হয়রানি চালাচ্ছে যেন তারা বাধ্য হয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধের দাবি ইসরায়েলি মন্ত্রীর
এদিকে, ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির গাজায় চলমান মানবিক সহায়তাকে ‘সম্পূর্ণ লজ্জাজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং এই সহায়তা অস্থায়ীভাবে নয় বরং সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।
সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে কট্টর ডানপন্থি এই মন্ত্রী দাবি করেন, হামাসই গাজায় খাদ্য ও পণ্যের নিয়ন্ত্রণ করছে। সহায়তা বন্ধ করলেই দ্রুত বিজয় অর্জন সম্ভব।
ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় বেন-গভিরের মতো কট্টর ডানপন্থি নেতারা শুরু থেকেই গাজায় সহায়তা পাঠানোর বিরোধিতা করে আসছেন। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মানবিক বিপর্যয় রোধে সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে আসছে।
ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধ থামলেও দীর্ঘদিনের ফিলিস্তিন সংকটে কোন অগ্রগতি নেই। এ অঞ্চলে ইসরায়েলি হামলা ও আগ্রাসন চলমান।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৯০ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
মন্ত্রণালয় অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৫৬ হাজার ১৫৬ জন হাজার নিহত ও ১ লাখ ৩২ হাজার ২৩৯ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক আহত বা পঙ্গুত্ববরণ করেছেন।
সদ্য সমাপ্ত যুদ্ধে ইসরাইলকে সহযোগিতার অভিযোগে ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার ক’দিন পর তাদের গ্রেপ্তার করা হল। তেহরান থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বুধবার ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ফার্স বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, ‘গোয়েন্দা সংস্থা হযরত ওয়ালি আছর কোর এই ব্যক্তিদের ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থার পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি এবং বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করেছে।’
সংস্থার এক বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে এটি আরও জানায়, ‘তাদের বেশিরভাগই নিরাপত্তা বিরোধী কার্যকলাপ, জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে দেওয়া ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে।’
ইসরাইলের সামরিক প্রধান বুধবার বলেন, ১২ দিনের যুদ্ধের সময় তাদের কমান্ডোরা ইরানের অভ্যন্তরে গোপনে কাজ করে এবং এর গোয়েন্দা প্রধানও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তার প্রশংসা করেছেন।
ইসরাইলি সামরিক প্রধান ইয়াল জামির টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে বলেন, ‘আমরা ইরানের আকাশসীমা এবং আমাদের পছন্দের প্রতিটি স্থানে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘এটি সম্ভব হওয়ার অন্যান্য কারণ হলো আমাদের বিমান বাহিনী ও স্থল কমান্ডো ইউনিটগুলোর সমন্বয় ও কৌশল।’
‘বাহিনীগুলো শত্রু অঞ্চলের গভীরে গোপনে অভিযান চালায় এবং আমাদের কর্মক্ষমতার স্বাধীনতা তৈরি করে।’
ইরান বুধবার জানিয়েছে, তারা ইসরাইলের সহযোগিতায় গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।
তেহরান নিয়মিত ভাবে চিরশত্রু ইসরাইলসহ বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় কাজ করায় সন্দেহভাজন এজেন্টদের গ্রেপ্তার করে এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘোষণা দেয়।
মঙ্গলবার থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে উভয় দেশই সংঘাতে জয়ের দাবি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী বা স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গোপনীয়তা ‘পাবলিক’ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাংস্কৃতিক বিনিময় ভিসার ক্ষেত্রেও এই নির্দেশনা কার্যকর হবে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার অ্যাফেয়ার্স বিভাগের বরাতে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে।
ওই পোস্ট অনুযায়ী, যারা ‘এফ’, ‘এম’ বা ‘জে’ ক্যাটাগরির ভিসার জন্য আবেদন করেছেন, তাদের নিজের সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টের প্রাইভেসি (গোপনীয়তা) ‘পাবলিক’ অর্থাৎ সর্বজনীন অবস্থায় রাখার অনুরোধ করা হয়েছে।
পোস্টে বলা হয়, কর্তৃপক্ষ যেন আপনার পরিচয় এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশযোগ্যতা যাচাই করতে সহজে প্রয়োজনীয় তথ্য পর্যালোচনা করতে পারে, তাই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভিসা আবেদনকারীদের জন্য তাদের সোশ্যাল মিডিয়া আইডেন্টিফায়ার বা ব্যবহারকারীর নাম বাধ্যতামূলক করেছে, যা অভিবাসী ও অধিবাসী (ইমিগ্র্যান্ট ও নন-ইমিগ্র্যান্ট)—উভয় ভিসার আবেদনপত্রে দিতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের আইনের আওতায় ভিসা যাচাই এবং নিরাপত্তা পরীক্ষার জন্য সকল উপলব্ধ তথ্য ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে দেশটিতে প্রবেশে অযোগ্য ব্যক্তি, বিশেষ করে যারা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে, তাদের শনাক্ত করা সহজ হয়।
গত ১২ দিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা বাজার পর অবশেষে পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। ইরান-ইসরায়েল এগিয়েছে একটি ভঙ্গুর অস্ত্রবিরতির দিকে।
ইরানের পারমাণু কর্মসূচি বন্ধের নামে গত ১৩ জুন ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। ইরানও শুরু করে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। এরপর তেল আবিবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রতিশোধ নিতে কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালায় তেহরান।
এরপর পরিস্থিতি যেন আরও খারাপ না হয়, এজন্য এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা। অবশেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিহিত ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ আপাতত বন্ধ হয় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে।
যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় থাকলেও আপাতদৃষ্টিতে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সেই সংঘাত আপাতত শেষ হয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ইরানের নেতারা সবাই এ যুদ্ধে নিজেদের জয়ী দেখাতে উঠে পড়ে লেগেছেন। তাছাড়া ট্রাম্পসহ সবার দাবি, যুদ্ধবিরতির এই মুহূর্তটি ঘটেছে তাদের নিজ নিজ শর্তে।
এখন প্রশ্ন হলো— বাস্তবতা আসলে কী? ইসরায়েল কী অর্জন করল? ইরান কি তাদের কৌশলগত সম্পদ রক্ষা করতে পারল? আর এই যুদ্ধবিরতি কি সত্যিই শান্তির পথে নিয়ে যেতে পারে?
ঘটনাগুলো কীভাবে ঘটল?
রবিবার (২২ জুন) ভোরে ইসরায়েলের অনুরোধে ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্পের ভাষ্যে, তাদের হামলায় এসব স্থাপনা ‘সম্পূর্ণভাবে’ ধ্বংস করা হয়েছে।
এর জবাবে, সোমবার (২৩ জুন) কাতারের আল-উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। এটি মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি।
মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় ও দীর্ঘ যুদ্ধের আশঙ্কা তখন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। তবে এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন, ‘ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।’
তিনি এটিকে ১২ দিনের যুদ্ধ বলে অভিহিত করেন। এই যুদ্ধ বছরের পর বছর চলতে পারত এবং পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংস করে দিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণার চার ঘণ্টা পরই ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর দাবি করে ইসরায়েল। পাল্টা হামলায় তেহরানের কাছে একটি রাডার স্টেশন ধ্বংস করে তেলর আবিব।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘ইসরায়েল যে আজ সকালেই বেরিয়ে পড়েছে, তাতে আমি খুবই অসন্তুষ্ট। দুটি দেশ যারা এতদিন ধরে লড়াই করেছে, তারা জানে না কী করছে!’
ইরান অবশ্য ওই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করে। এরপর স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টায় যুদ্ধবিরতি পুনরায় কার্যকর হয় এবং ট্রাম্প নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেন।
পরে ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, “ইসরায়েল আর ইরানে হামলা করবে না। সব বিমান ফিরে আসবে এবং ইরানকে একটি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ উড়ন্ত অভিবাদন’ জানাবে। কেউ আহত হবে না, যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে!”
ইসরায়েল কী অর্জন করল?
ইসরায়েল বহুদিন ধরে দাবি করে আসছে, ইরান তাদের অস্তিত্বের জন্য প্রধান হুমকি। তবে এর আগে কখনো ইরানের মূল পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়নি তেল আবিব।
১৩ জুন ইসরায়েল সেই সীমারেখা অতিক্রম করে নাতাঞ্জের ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট ও ইসফাহান পারমাণবিক প্রযুক্তি কমপ্লেক্সে হামলা চালায়। জবাবে ইরানও ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইসরায়েলের দিকে।
এর ফলে সিরিয়া ও ইরাকে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালালেও এবার আরও দূরবর্তী ও জটিল অভিযানে সফল হয়েছে ইসরায়েল।
আন্তর্জাতিক আইনি বৈধতা নিয়ে সমালোচনার মুখেও নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থেকেছে তারা। ইসরায়েল দাবি ছিল, এই হামলা একটি আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ।
যদিও ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে বা সেটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে যাচ্ছিল বলে অভিযোগ করেছে তেল আবিব, তবে অনেকেই তা বিশ্বাস করেন না।
এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, তা হলো— এই অভিযানে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, ইসরায়েল চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে এমন অভিযানেও জড়াতে পারে যেখানে তারাই প্রথম আঘাত হেনেছে।
১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র শুধু উপকরণ সরবরাহ করেছিল; সরাসরি অংশ নেয়নি।
ট্রাম্পের এই ভূমিকার জন্য অবশ্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেও কার্পণ্য করেনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নেতানিয়াহু।
ইসরায়েল ইরানে পরিচালিত ওই হামলার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’। এমন এক সময় এই অপারেশেন চালানো হয়, যখন ইসরায়েল ইতোমধ্যে ইরানের আঞ্চলিক মিত্র—হুথি, হামাস ও হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে।
ইরান কি পারমাণবিক কর্মসূচি রক্ষা করতে পেরেছে?
ইসরায়েল দৃশ্যত ইরানের ভূ-উপরিভাগের স্থাপনাগুলোতে বড় ক্ষতি করেছে, আর যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে তারা ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করেছে।
উপগ্রহ চিত্রে ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার চিহ্ন দেখা গেলেও, সত্যিকারের ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে তা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি। এর জন্য ওইসব স্থাপনা পরিদর্শনের প্রয়োজন হবে।
সোমবার আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, ‘এই মুহূর্তে কেউ, এমনকি আইএইএ-ও ফোরদোয় ভূগর্ভস্থ ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ মূল্যায়ন করতে পারেনি। তবে বিস্ফোরণের মাত্রা ও সেন্ট্রিফিউজের স্পর্শকাতরতা বিবেচনায় যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।’
এই ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে আরও একটি প্রশ্ন রয়ে গেল— ইরানের ৪০০ কেজি উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম কোথায় আছে?
আইএইএ বলেছে, এই মজুদের অবস্থান তারা জানে না।
ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামি দাবি করেছেন, তাদের কর্মসূচিতে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না এবং কারণ হামলার আগেই তাদের প্রস্তুতি নেওয়া ছিল।
এদিকে, যুদ্ধবিরতির সাড়ে তিন ঘণ্টা পর ইসরায়েল যে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের কথা বলেছে, সেগুলোর উৎস নিয়েও ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। কারণ ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে এর দায় অস্বীকার করেছে।
তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়— কে ছুঁড়ল সেগুলো? সেগুলো কি ভুলবশত ছোড়া হয়েছিল?
কিন্তু এখন পর্যন্ত ইরান কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
সোমবার (২৩ জুন) ইরানের সংসদের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি একটি বিল অনুমোদন করেছে, যেখানে আইএইএয়ের সঙ্গে তেহরানের সহযোগিতা সম্পূর্ণভাবে স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিলটি এখন প্লেনারি অধিবেশনে অনুমোদনের অপেক্ষায়।
তবে মঙ্গলবার ট্রাম্প ফের ঘোষণা দিয়েছেন, ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরায় শুরু করতে দেওয়া হবে না।’
এ পরিস্থিতিতে বলা চলে, মূল উত্তেজনা যদি বজায় থাকে, তবে নতুন করে পাল্টা-পাল্টি হামলা কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র।
টানা ১২ দিনের সংঘাতে ইসরায়েলজুড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কতটা ভয়াবহ তা তেমনভাবে সামনে আসেনি। কারণ, ইসরায়েল সরকার ক্ষয়ক্ষতির তথ্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছিল। তবে দখলদার দেশটিতে যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটি অনেকটাই অনুধাবন করা যায় সম্প্রতি সামনে আশা ইসরায়েলিদের ক্ষতিপূরণ চাওয়ার তথ্যের ভিত্তিতে।
গত মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংঘাত শুরুর পর থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর পর্যন্ত ১২ দিনে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির জন্য জনগণের কাছ থেকে ৩৯ হাজার ক্ষতিপূরণের আবেদন পেয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের পত্রিকা ইয়েদিয়থ আহারোনোথের মতে, ১৩ জুন ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি কর কর্তৃপক্ষের প্রায় ৩৮ হাজার ৭০০টি ক্ষতিপূরণের দাবি পেয়েছে। এই দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ভবনের ক্ষতির জন্য ৩০ হাজার ৮০৯টি, যানবাহনের ক্ষতির জন্য ৩ হাজার ৭১৩টি এবং সরঞ্জাম ও অন্যান্য জিনিসপত্রের ক্ষতির জন্য ৪ হাজার ৮৫টি।
ইসরায়েলের দৈনিক সংবাদপত্রটি আরও জানিয়েছে, অনুমান করা হচ্ছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বহু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত সেগুলোর ক্ষতিপূরণ দাবি করে আবেদন জমা পরেনি।
ইতোমধ্যে, ইসরায়েলি ওয়েবসাইট বেহাদ্রেই হারেদিম জানিয়েছে, শুধুমাত্র মধ্য ইসরায়েলের তেল আবিবেই ২৪ হাজার ৯৩২টিরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আশকেলনে জমা পড়েছে ১০ হাজার ৭৯৩টি আবেদন। তবে প্রত্যাশিত ক্ষতিপূরণের আর্থিক পরিমাণ কত হতে পারে সে বিষয়ে বিস্তারিত হিসাব দেয়া হয়নি।
প্রসঙ্গত, তেহরান পারমাণবিক বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে এমন অভিযোগে গত ১৩ জুন ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তবে সেই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে ইরান। এরপর ইসরায়েল ভূখণ্ডে তেহরানের প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা শুরু হয়। পরে তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রও সংঘাতে যোগ দেয়।
দুই আঞ্চলিক শত্রুর মধ্যে ১২ দিনের সংঘাতের পর অবশেষে গত মঙ্গলবার সকালে উভয় পক্ষের সম্মতিতে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মন্তব্য