সারা বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বহু দেশ এখন চরম বিপর্যস্ত। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়।
মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন দেশে বাড়ছে শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা। এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ।
প্রথিতযশা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবিএম আব্দুল্লাহ নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এখন তিনি সুস্থ আছেন।
তার পরামর্শ, একজন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হলে অবশ্যই তাকে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে থাকতে হবে।
আর আইসোলেশন মানে হলো, এই ১৪ দিন তিনি নিজে ঘরের বাইরে যাবেন না, আবার বাড়িতে অন্য কারো সঙ্গে মিশবেন না। ঘরে অবস্থানকালে পরিবারের অন্যদের সংস্পর্শও এড়িয়ে চলতে হবে। কোয়ারেন্টিনে থাকা রোগীর খাবার ঘরের দরজার বাইরে রেখে আসতে হবে, কেউ ভেতরে ঢুকবেন না।
ঘরের বাইরের অন্য কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে নিজে না গিয়ে কারো সহায়তা নেয়াই ভালো। ঘরে পোষা প্রাণী থাকলে তাদের সংস্পর্শে না যাওয়াই ভালো। এক কথায় নিজে নিজেকেই অন্যদের থেকে পৃথক করে রাখা। এতে পরিবারের বা সমাজের অন্যরা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে না
আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় যদি কারোর জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা বেশি দেখা দেয়, তাহলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে।
করোনায় আক্রান্ত মানেই মৃত্যু নয়
করোনা মানেই কি মৃত্যু? করোনা মানেই মৃত্যু নয়। বরং সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে, আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলে শিশুসহ সবাই ক্রমে সুস্থ হয়ে ওঠে।
এজন্য দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করা উচিত। ভালো হবে প্রতিদিন সুষম খাবার, টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল খেতে পারলে। এ ছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। ধূমপান ও মদ্যপান একদম নয়। আপনার শরীরে যদি করোনাভাইরাস ধরা পড়ে, তাহলে দুশ্চিন্তা না করে চিকিৎসা নিন। ভাইরাস পজিটিভ মানে মৃত্যু নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রান্তদের শতকরা ৬ জনের মৃত্যু হয়।
আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজে একটি রুমে আবদ্ধ হয়ে যান। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করুন। যদি রুমে অ্যাটাস্ট বাথরুম থাকে তাহলে ভালো হয়।
পূর্বের কোনো রোগ থাকলে বা সেই রোগের জন্য ওষুধ খাচ্ছেন, এমন ওষুধসহ থালা-বাসন থেকে শুরু করে যা দরকারি জিনিস সঙ্গে রাখুন।
আসল কথা হলো সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে আপনি পরিবার থেকে দূরে থাকুন। এমন রুমে অবস্থান করুন যেখানে আপনার পরিবারের সদস্যরাও ঢুকবেন না। এমনকি আপনি ওই রুম থেকে বের হবেন না।
মনে রাখবেন, করোনায় আক্রান্ত হলেও অনেকের উপসর্গ দেখা যায় না। অনেকের আবার জ্বর জ্বর ভাব থাকে। কারো যদি জ্বর জ্বর ভাব থাকে থার্মোমিটার নিয়ে নিজেই পরিমাপ করে নিতে হবে। শুধু যদি জ্বর হয় তাহলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আপনি ঘরে বসেই চিকিৎসা নিতে পারবেন।
যে সব প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখবেন
আপনারা জানেন, কভিড-১৯-এর নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। চিকিৎসক লক্ষণ বুঝে উপসর্গ দেখে, নানা রকম চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। আপনার যদি এক শর ওপরে জ্বর থাকে; আর আপনি যদি পূর্ণবয়স্ক হন, তাহলে দিনে তিনবার প্যারাসিটামল খান। এভাবে কিছুদিন খেতে থাকেন, দেখবেন আপনার জ্বর, গলাব্যথা ও মাথাব্যথা এমনিতেই চলে যাবে।
যদি সর্দি, হাঁচি ও কাশি থাকে, তাহলে সিরাপ খেতে পারেন। ফেক্সোফেনাডিন প্রতিদিন একটা করে খান, দেখবেন কিছুদিন পর হাঁচি ও কাশি দূর হয়ে গেছে।
যদি কাশি বেশি হয় তাহলে তুসকা সিরাপ খেতে পারেন। তুসকা ছাড়াও বাজারে অনেক ধরনের সিরাপ রয়েছে; সেগুলো খেতে পারেন। শরীরে যদি ব্যথা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল খেতে পারেন।
মনোবল চাঙা রাখতে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকুন
করোনা আক্রান্ত হলে সবচেয়ে বড় চিকিৎসা হলো মনোবল শক্ত রাখা। যার যার সৃষ্টিকর্তাকে ডাকবেন। সৃষ্টিকর্তা আপনাকে এই রোগ থেকে নিশ্চয়ই মুক্তি দান করবেন।
আপনি যদি মনোবল দুর্বল করে ফেলেন, তাহলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে।
আপনি যদি মনোবল শক্ত রাখতে পারেন, তাহলে দেখবেন আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনি এমনি বৃদ্ধি পাবে। করোনাভাইরাস আপনাকে কিছু করতে পারবে না।
‘অনেক রিপোর্টেই আমরা দেখেছি, বয়স্ক কিংবা অন্য কোনো রোগ আছে, এমন ব্যক্তিরা করোনায় আক্রান্ত হলে মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি থাকে। এটি আসলে অনেক ক্ষেত্রেই ভুল।
‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যেকোনো রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। সেই রোগের চিকিৎসা আছে। আপনি করোনা আক্রান্ত, আপনার আগে থেকে ডায়াবেটিস আছে, তাহলে আপনি করোনার সঙ্গে ডায়াবেটিসের চিকিৎসাও নেবেন।’
যে সময় হাসপাতালে যেতে হবে
নতুন ধরনের ভেরিয়েন্ট দ্রুত মানুষকে দুর্বল করে ফেলছে। দ্রুত অক্সিজেন লেভেল কমে আসছে। তাই করোনায় আক্রান্তের পর যদি শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তাহলে আপনি এজমাসল ওষুধ ইউজ করবেন। ওষুধে যদি কাজ না হয়, করোনার চিকিৎসা দেয়, এমন হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন। তবে উন্নত দেশগুলোতে ঘরে বসেই বেশির ভাগ রোগী করোনার চিকিৎসা নিচ্ছেন।
অনেক সময় এমনও হয়েছে, হাসপাতালে গিয়ে অনেক রোগী বেকায়দায় পড়েছেন, এমনকি মারাও গেছেন। তীব্র শ্বাসকষ্টে অক্সিজেন প্রয়োজন হলে অবশ্যই হাসপাতালে যাবেন। তাৎক্ষণিক অক্সিজেনের ব্যবস্থা করবেন।
যে সব খাবার খাবেন
আপনি বাসায় বসে ভিটামিন সি জাতীয় পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করবেন। ঘনঘন চা পান করবেন। সব খাবার গরম খান। প্রচুর পরিমাণে রঙিন শাকসবজি খান। প্রোটিন খান।
ডিম খাবেন ও দুধ পান করবেন। করোনা আক্রান্ত হলে ঠান্ডাজাতীয় কোনো কিছুই আপনি খেতে পারবেন না।
আইসোলেশনে যেভাবে সময় কাটাবেন
এই অবসর সময়ে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকার সবচেয়ে মোক্ষম সময়। মুসলিম হলে নামাজ পড়বেন। অন্য ধর্মের হলে উপাসনা করতে পারেন। মোবাইলের মাধ্যমে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। সামাজিক দূরত্ব মেনটেইন করে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন। সকাল বিকেল এক সময় শরীর চর্চা করতে পারেন। সবচেয়ে বড় বিষয় সামাজিক দূরত্ব মেইনটেইন করা।
প্রয়োজন হলেও আপনি বাইরে যেতে পারবেন না। কোনো প্রয়োজনে আপনার ঘরেও কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আইসোলেশনে রাখতে হবে। আপনি আইসোলেশনে থাকবেন, মনোবল শক্ত করবেন, দেখবেন খুব দ্রুত এই ভাইরাস থেকে মুক্তি লাভ করেছেন।
আরও পড়ুন:রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানে খেলতে গিয়ে একটি ভবনের ছাদ থেকে পড়ে এক শিশু নিহত হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে পাঁচ তলা ভবনটির ছাদ থেকে পড়ে নিহত হয় সে।
নিহত শিশুর নাম খাদিজা আক্তার (৫)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশুটির ফুফা মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া (২০ বছর)।
খাদিজার বাবা মোহাম্মদ ফয়সাল আহমাদ জানান, দুপুরে পাঁচ তলার ছাদে খাদিজা খেলাধুলা করার সময় ছাদ থেকে নিচে পড়ে যায়। এ সময় খাদিজার ফুফা দৌড়ে ধরতে গেলে তিনিও নিচে পড়ে যান।
তিনি জানান, পরে তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খাদিজা রাত সাড়ে ৮টার দিকে মারা যায় এবং ফারিয়ার ফুফাকে ভর্তি রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া থানা এলাকায়। খিলগাঁওয়ের গোড়ান নবাবীর মোড় বতর্মানে১৪৮ /১ রায়হান সাহেবের বাড়ির ভাড়াটিয়া আমরা।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মহম্মদ বাচ্চু মিয়া বলেন, শিশুটির মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত ছাড়া স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে বলে খিলগাঁও থানার সাথে কথা হয়েছে।
তীব্র থেকে অতি তীব্র মাত্রায় পাবনা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। অসহনীয় দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত তিন-চার দিন তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও শুক্রবার চলতি মৌসুমে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
এদিন পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যা জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত রবিবার (২১ এপ্রিল) ঈশ্বরদীতে প্রথমবার ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন জানান, জেলার তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অতি তীব্র তাপদাহে পাবনার মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষক, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ইটভাটার শ্রমিকসহ দিনমজুরদের জন্য অসহ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও তীব্র গরমে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ।
গাইবান্ধায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন আশরাফ আলী নামের এক রিকশাচালক। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার সুন্দরগঞ্জ-কুপতলা সড়কের ৭৫ নম্বর রেলগেট নামক এলাকায় এ ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ড ঘটে। পরে শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে সাদেকুলকে কারাগারে পাঠানো হয়।
৫০ বছর বয়সী রিকশাচালক আশরাফ আলী সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের সাহার ভিটার গ্রামের মৃত ফয়জার রহমানের ছেলে। অন্যদিকে ছিনতাই ও হত্যায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলাম কুপতলা ইউনিয়নের রামপ্রসাদ গ্রামের বাসিন্দা।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদ রানা।
ওসি জানান, প্রতিদিনের মতোই বৃহস্পতিবার রাতে রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন আশরাফ আলী। তিনি কুপতলা এলাকার ৭৫ নম্বর রেলগেটে পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সাদেকুল ইসলাম তার পথ রোধ করে ছুরি ধরে রিকশা এবং চাবি কেড়ে নিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন। আশরাফ আলী এতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রথমে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত সাদেকুল আশরাফ আলীর পেটে ছুরিকাঘাত করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ওই রাতেই অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে রিকশাটিও উদ্ধার করা হয়। পরে আজ (শুক্রবার) দুপুরে সাদেকুলকে একমাত্র আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। মামলায় আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরেই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।’
দেশের বিভিন্ন স্থানে যেভাবে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে। এর মধ্যে কোথাও কোথাও বৃষ্টিরও সম্ভাবনা রয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এতে বলা হয়, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, বগুড়া, বাগেরহাট, যশোর, কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়োহাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। আগামী পাঁচ দিনেও আবহাওয়াও প্রায় একই থাকতে পারে।
শুক্রবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়া ২০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের কোথাও বৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ ও থাই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক থেকে বেরিয়ে ব্যাংককে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি শুক্রবার এ কথা জানান। খবর বাসসের
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং থাই প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এক সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’
দুপুরে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে গভর্নমেন্ট হাউজে উভয় নেতার মধ্যে অনুষ্ঠিত একান্ত বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এসব তথ্য জানান। সন্ধ্যায় ঢাকায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানানো হয়েছে।
ড. হাছান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিনের মধ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমে তারা একান্তে কথা বলেন, এরপর দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বহু বিষয়ে সবিস্তারে আলোচনা করেছেন।
থাইল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের যে ভ্রাতৃপ্রতিম ও বন্ধুপ্রতিম সম্পর্ক, সেটা আরও জোরদার, বহুমাত্রিক ও বিস্তৃত করার ব্যাপারে দুই প্রধানমন্ত্রী গভীর আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন, বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ সময় অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তি, জ্বালানি, পর্যটন ও শুল্ক সংক্রান্ত পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক এবং মুক্ত বণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরুর জন্য একটি লেটার অভ ইন্টেন্ট স্বাক্ষরিত হয়।
দেশের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ব্যাংককে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবদুল হাই এবং থাইল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. প্রাণপ্রী বাহিদ্ধা নুকারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি বর্ণনা করার পাশাপাশি বাংলাদেশের ১০০টি ইকোনমিক জোন ও আইটি ভিলেজে থাই বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা চাইলে প্রয়োজনে বাংলাদেশে তাদের জন্য বিশেষ ইকোনমিক জোন করার কথাও বলেছেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত হয়ে আসা প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। তাদের জন্য বাংলাদেশে যেসব সমস্যা উদ্ভূত হচ্ছে বৈঠকে সে বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলেও জানান ড. হাছান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, থাইল্যান্ডেও অনেক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন, এখনো অনেকে আসছেন। থাইল্যান্ডও এই পালিয়ে আসা মানুষদের ভারে জর্জরিত। এই সমস্যা সমাধানে উভয় প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের একসাথে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন।
এদিন গভর্নমেন্ট হাউজে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রদত্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অফ অনার প্রদানকালে থাই প্রধানমন্ত্রী সাথে ছিলেন। শেখ হাসিনা তার সৌজন্যে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর আয়োজিত রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে যোগ দিয়ে বক্তব্য রাখেন।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার ব্যাংককে পৌঁছান। তিনি বৃহস্পতিবার ব্যাংককে জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রে জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসকাপ) ৮০তম অধিবেশনে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী সেখানে দেওয়া ভাষণে সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান জানান।
সফর শেষে প্রধানমন্ত্রীর আগামী ২৯ এপ্রিল দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখায় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ ৩ কর্মকর্তাকে আটকের পর কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর। এদিন দুপুরে তাদের আদালতে প্রেরণ করে সাঁথিয়া থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের জিআরও এএসআই মাহবুবুর রহমান জানান, বিকেলে সাঁথিয়া থানা থেকে এনে তাদের আদালতে তোলা হয়। এ সময় কেউ তাদের জন্য জামিন আবেদন করেননি। ফলে আদালত তাদের জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আটককৃতরা হলেন- অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার বাসিন্দা আবু জাফর এবং ক্যাশিয়ার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত চক্রবর্তী।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী বিভাগীয় অফিস থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট অডিট টিম কাশিনাথপুর শাখায় অডিটে আসে। দিনভর অডিট করে তারা ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আর্থিক অনিয়ম পান। এ বিষয়ে সাঁথিয়া থানায় ওই শাখার ম্যানেজার (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী ও সিনিয়র অফিসার আবু জাফরকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দিলে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের তিনজনকে আটক করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অডিটে অনিয়ম ধরা পড়লে তাদের আটক করে সাঁথিয়া থানা পুলিশকে খবর দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ গিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আজ (শুক্রবার) দুপুরে জিডির ভিত্তিতে আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে দুদক আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করার পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি দেশ ও জনগণের উন্নয়নে আপনাদেরকে কাজ করতে হবে।
থাইল্যান্ড আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার অবস্থানকালীন আবাসস্থলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। খবর বাসসের
প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা লেখক মো. নজরুল ইসলাম সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
বঙ্গবন্ধু তার অনুপ্রেরণার উৎস উল্লেখ করে শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, জাতির পিতাকে অসময়ে হত্যা করা হলেও ‘তার আদর্শ আমাদের মধ্যে রয়ে গেছে এবং সে কারণেই আমি তার (বঙ্গবন্ধু) আদর্শ বাস্তবায়ন করতে কাজ করছি। বঙ্গবন্ধু দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন।
গত ১৫ বছরে দেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ও উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতায় থাকায় এ অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, অনেক বাংলাদেশি থাইল্যান্ডের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। তবে তারা দ্বৈত নাগরিকত্ব বজায় রাখতে চান। এই দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে থাই সরকারের সাথে কথা বলবেন।
মন্তব্য