ভারতে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। ছবি: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার মধ্যে টিকাদান কর্মসূচি সম্প্রসারণ করেছে ভারত। বৃহস্পতিবার থেকে দেশটিতে ৪৫ বছরের বেশি বয়সীদের টিকা দেয়া শুরু হয়।
ভারতে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৭২ হাজার ৩৩০ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গত বছরের ১১ অক্টোবরের পর এটিই ছিল সর্বোচ্চ।
ওই দিন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৪৫৯ জনের।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।
বিশ্বে করোনা সংক্রমণের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পরই ভারতের অবস্থান।
পরিসংখ্যানবিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ২২ লাখ ২০ হাজার ৬৬৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এতে মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার ৯৬০ জনের।
এদিকে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার মধ্যে টিকাদান কর্মসূচি সম্প্রসারণ করেছে ভারত। বৃহস্পতিবার থেকে দেশটিতে ৪৫ বছরের বেশি বয়সীদের টিকা দেয়া শুরু হয়।
ভারতে এখন পর্যন্ত ৬ কোটি ৪০ লাখের মতো মানুষ করোনার টিকা নিয়েছে। তবে প্রায় একই পরিমাণ টিকা বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করায় নিজ দেশে সমালোচনার মুখে রয়েছে দেশটি। কারণ, অন্যান্য দেশের চেয়ে ভারতে মাথাপিছু টিকাদান অনেক কম।
শুরুতে সম্মুখসারির কর্মী, বৃদ্ধ ও নানা শারীরিক জটিলতায় ভোগা লোকজনদের টিকার আওতায় রাখে ভারত, যেখানে বিশ্বের অনেক দেশ প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিককেই টিকা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করে।
অবশ্য প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে ভারত। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন টুইটবার্তায় বলেন, ‘দেশে টিকার কোনো ঘাটতি নেই। কেন্দ্র থেকে রাজ্যে টিকা সরবরাহ অব্যাহত থাকবে। অতিরিক্ত মজুত বা কম মজুত থেকে বিরত থাকুন।’
এর আগে ২৪ মার্চ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে করোনা প্রতিরোধী অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত টিকা রপ্তানি সাময়িকভাবে স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড নামে উৎপাদন করছে বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া। তাদের কাছ থেকে টিকা কিনেছে বাংলাদেশও।
জানালা খোলা রাখলে করোনা সংক্রমণ ছড়ানো কমতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মত। ছবি: সংগৃহীত
নতুন ধরনের করোনায় স্বল্প বয়সীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। বাতাসের মাধ্যমে ছড়ানোর তথ্য জানার পর এ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেছে কেন্দ্র সরকার। সেখান থেকে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সংক্রমণ রোধে কিছু পরামর্শও দিয়েছেন।
কোভিড ১৯ এর জন্য দায়ী সার্স কোভ ২ প্রধানত বাতাসের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। এমন অবস্থায় ভারতের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ রোধে ঘরের জানালা খোলা রাখতে।
চিকিৎসাবিষয়ক প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে বৃহস্পতিবার গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশ হয়েছে। গবেষক দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ডের প্রাইমারি কেয়ার হেলথ সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ট্রিস গ্রিনহালজ।
প্রথমে ল্যানসেটের প্রকাশিত প্রবন্ধকে আমলে না নিলেও এবার সেই করোনা ঠেকাতে ভারতের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ঘরের জানালা খুলে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
নতুন ধরনের করোনায় স্বল্প বয়সীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। বাতাসের মাধ্যমে ছড়ানোর তথ্য জানার পর এ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেছে কেন্দ্র সরকার। সেখান থেকে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সংক্রমণ রোধে কিছু পরামর্শও দিয়েছেন।
নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পাল সোমবার জানান, করোনাভাইরাস সম্পর্কে নতুন তথ্য সামনে এসেছে। যার মধ্যে একটি হল, এটি বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে এবং সেই তথ্য কিছুটা হলেও ঠিক। তবে এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
ল্যানসেটে প্রকাশিত ওই গবেষণা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিনোদ বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ সারফেস বা পৃষ্ঠতলের চেয়ে বায়ুমাধ্যমে বেশি ছড়ায়। এ ধরনের সংক্রমণের আশংকা বদ্ধ ঘরে বেশি থাকে। বদ্ধ ঘরে যেখানে অনেক লোকের সমাগত হতে পারে এবং সেখানে শীতাতপ যন্ত্র চললে সংক্রমণের আশংকা থাকে। তাই এই পরিস্থিতিতে জানলা-দরজা খুলে রাখা শ্রেয়।’
এর বেশি আর এ নিয়ে ব্যাখ্যা করতে চাননি নীতি আয়োগ কর্তা।
বাতাসে ছড়ানোর প্রমাণ থাকলেও আগের জারি করা কোভিড সতর্কবিধিতে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি ল্যানসেটে প্রকাশ করা ওই গবেষণায় বলা হয়, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ছয় বিশেষজ্ঞ এই গবেষণার ভিত্তিতে বলছেন, করোনাভাইরাস বায়ুবাহিত হওয়ার কারণেই প্রচলিত প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলো মানুষকে রক্ষা করতে পারছে না।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম কোভিড ১৯ সংক্রমণ ধরা পরে। এর কয়েক মাসের মধ্যে মহামারি ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। বাংলাদেশেও কোভিড ১৯ সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হয়ে গত বছরের ৮ মার্চ।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা শুরু থেকেই বলছে, করোনাভাইরাস মূলত সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি, কাশির মাধ্যমে নিকটজনের কাছে ছড়ায়। এজন্য, হাঁচি-কাশি আক্রান্তদের কাছ থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, আক্রান্তদের চিহ্নিত করে আইসোলেশনসহ বেশকিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দিয়ে আসছে সংস্থাটি।
তবে গত মার্চের মাঝামাঝি থেকে হঠাৎ করেই বাড়তে থাকে ভারত, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ। ভারতে এখন দৈনিক গড়ে আড়াই লাখ সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে। তাতে মারা যাচ্ছে হাজারের বেশি করে।
বাংলাদেশে গত কয়েকদিনে দৈনিক মৃত্যু ছাড়িয়েছে ১০০ জন। আর আক্রান্ত শনাক্ত হচ্ছে পাঁচ হাজারের বেশি।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে চার হাজার ৫৫৯ জনের দেহে। এ নিয়ে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে সাত লাখ ২৭ হাজার ৭৮০ জনের দেহে। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজার ৫৮৮ জনের।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে আরও ৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫৮৮ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মঙ্গলবারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
দেশে টানা চার দিন দৈনিক শত মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে সংখ্যাটা ১০০-এর নিচে নামে বলে মঙ্গলবার জানায় অধিদপ্তর।
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় ১০১ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয় শুক্রবার। পরের দিন একইসংখ্যক মানুষের মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
রোববার আরও ১০২ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়। সোমবারও করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ১১২ জনের মৃত্যুর খবর জানায় অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে চার হাজার ৫৫৯ জনের দেহে। এ নিয়ে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে সাত লাখ ২৭ হাজার ৭৮০ জনের দেহে।
এতে উল্লেখ করা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬৫টি ল্যাবে ২৭ হাজার ৫৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৬.৮৫ শতাংশ। মোট শনাক্তের হার ১৩.৯৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ হাজার ৮১১ জন সুস্থ হয়েছে। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ৬ লাখ ২৮ হাজার ১১১ জন। সুস্থতার হার ৮৬.৩১ শতাংশ।
সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৯১ জনের মধ্যে ৫৮ পুরুষ ও ৩৩ নারী রয়েছে। তাদের মধ্যে ৩ জন বাদে সবাই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
বয়স বিবেচনায় মৃত ৯১ জনের মধ্যে এক শিশু রয়েছে। এ ছাড়া ত্রিশোর্ধ্ব ৭, চল্লিশোর্ধ্ব ১১, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১৮ ও ষাটোর্ধ্ব ৫৪ জন।
বিভাগ অনুযায়ী, ঢাকায় ৬০, চট্টগ্রামে ১৭, রাজশাহীতে ৩, খুলনায় ৫, বরিশালে ৪, রংপুরে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে গত বছরের ৮ মার্চ। ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এর আগে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের তথ্য প্রকাশ করা হয়। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের কথা ঘোষণা করে।
পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত বছরের ৪ জানুয়ারি থেকেই দেশের বিমানবন্দরসহ সব স্থল ও নৌবন্দরে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং শুরু করে। ওই বছরের ৪ মার্চ সমন্বিত করোনা কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়।
হাসপাতালে সামনের ওষুধের দোকানের মালিকরা বলছেন, স্যালাইনের দাম বেড়েছে। তবে নগরীর অন্য এলাকার দোকানের মালিকদের বক্তব্য, আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে স্যালাইন।
বরিশাল সদরের জাগুয়া ইউনিয়নের আব্দুর রব ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন রোববার। বেড না পেয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালের মাঠে।
ভ্যান চালক আব্দুর রবের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে দেয়া হচ্ছে না স্যালাইন, কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে।
তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল দিয়া একটা স্যালাইন দেছেল শরীরে দেয়ার লইগ্গা। স্যালাইন শেষ হওয়ার পর নার্সগো ধারে চাইছেলাম, হেরা কইছে এহানে নাই। কইলো ফার্মেসি দিয়া কিন্না আনেন।
‘সরকারি হাসপাতালে যদি স্যালাইন না থাহে তয় মোগো মতো গরীব মাইনষে কেমনে চিকিৎসা নিমু। পরে হেই কথা মত দুইটা স্যালাইন কেনা লাগছে।’
আব্দুর রবসহ হাসপাতালে ভর্তি অন্য ডায়রিয়া রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগে হাসপাতালের বাইরের ওষুধের দোকানগুলো বেশি দামে স্যালাইন বিক্রি করছে। ৯০ টাকার স্যালাইন কারও কাছে চাওয়া হচ্ছে ১২০ বা ১৩০ টাকা, কারও কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ২০০ টাকাও।
সরেজমিনে সোমবার সকালে সদর হাসপাতালের সামনে দেখা গেল, ডায়রিয়া রোগীর স্বজনরা স্যালাইনের জন্য ভিড় করে আছেন ওষুধের দোকানগুলোতে।
জাকিয়া বেগম নামে এক রোগীর স্বজন অভিযোগ করেন, ‘এমনেই কোনো সিট পাই নাই। হের উপর স্যালাইনডাও কেনা লাগে যদি তয় কি চিকিৎসা দেয় বুঝিনা।
‘স্যালাইনের আসল দাম ৯০ টাহা, আর হেই স্যালাইন ফার্মেসি ওয়ালারা সিন্ডিকেট কইরা ১৩০ টাহায় বেচে। এহানের ডাক্তার নার্সরা একটা বা দু্ইটা দিয়াই কয় নাই শেষ স্যালাইন।’
হাসপাতালের সামনের দি সেবা মেডিক্যাল হল নামের ওষুধের দোকানের কর্মচারি মো. বদরুদ্দোজার কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন স্যালাইনের দাম বেশি রাখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘হাজার মিলির কলেরা স্যালাইন রেট ৯০ টাকা করেই। তবে প্রোডাকশন কম থাকায় কোম্পানি অনেক বেশি দামে বিক্রি করেছে। তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়েছে।’
হাজরা মেডিক্যাল হলের মো. শুভ বলেন, ‘৫০০ মিলির কলেরা স্যালাইনের দাম ৭০ টাকা আর হাজার মিলির কোম্পানি রেট ৯০ টাকা। অনেকে বেশি দাম রেখেছে। কিন্তু আমরা তা করিনি।’
নগরীর অন্য এলাকার ওষুধের দোকানে গিয়ে জানা গেল, স্যালাইনের দাম বাড়েনি। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর বিএম কলেজ এলাকার মা মেডিক্যাল হলের মালিক মো. কাদের বলেন, ‘কলেরা স্যালাইনের দাম বাড়েনি। যারা বেশি দাম নিচ্ছে তারা অবৈধভাবে তা নিচ্ছে।’
এদিকে, রোগীদের স্যালাইন বেশি কিনতে হচ্ছে এমন অভিযোগের বিষয়ে জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে একজন রোগীকে তিন থেকে চারটি স্যালাইন আমরা দিয়ে থাকি। এর বেশি স্যালাইন লাগলে তাদের কিনতে হয় বাইরে থেকে। এমনিতে স্যালাইনের কোনো সংকট নেই আমাদের।’
ওষুধের দোকানের সঙ্গে যোগসাজশ করে স্যলাইনের সংকট দেখিয়ে নার্সরা রোগীদের তা কিনতে বাধ্য করছে কি না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে যান।
বরিশাল বিভাগে কয়েকদিন ধরেই বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। এতে খোদ স্বাস্থ্য বিভাগ উদ্বিগ্ন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, বরিশালে এর আগে এমন ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা যায়নি।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বাসুদেব কুমার দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হঠাৎ করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করেছি আমরা। শহরের মানুষ তেমন আক্রান্ত না হলেও, বেশি আক্রান্ত হচ্ছে উপকূল ও গ্রামাঞ্চলের মানুষ।’
তিনি জানান, অতিরিক্ত গরমে স্বস্তি পেতে মানুষ পান্তা কিংবা শরবত খাচ্ছে বেশি। এসব তৈরিতে দূষিত পানি ব্যবহারের কারণেই ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে বলে তার মত।
বাসুদেব কুমার দাস গত রোববার জানিয়েছিলেন, বরিশাল বিভাগে এ বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের ২০ তারিখ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩২ হাজার ছাড়িয়েছে। সব থেকে বেশি আক্রান্ত দ্বীপ জেলা ভোলায়। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ৪২১। পটুয়াখালীতে আক্রান্ত ৬ হাজার ৭৩৭, পিরোজপুরে ৩ হাজার ৭৫০, বরগুনায় ৪ হাজার ৩৫৩ এবং ঝালকাঠিতে আক্রান্ত ২ হাজার ৯৯৮ জন।
জেনারেল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৪ জন ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হন। জায়গা সল্পতার কারণে অনেককে মাঠে, ভ্যানে, গাছ তলায় বা ড্রেনের পাশে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।
রাজধানীর কলাবাগানে মঙ্গলবার দুপুরে করোনা রোগীদের জন্য বিনা মূল্যে অক্সিজেন সেবা উদ্বোধন করা হয়। ছবি: নিউজবাংলা
নাছিম বলেন, ‘রাজনৈতিক কার্যক্রমের পাশাপাশি মানবিক কাজকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ সবসময় প্রাধান্য দিয়ে থাকে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ এর আগে ১০টি ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স ও দুটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছে, ৪৩ জন ডাক্তার দিয়ে ২৪ ঘণ্টা টেলিমেডিসিন সার্ভিস দিচ্ছে। এর পরিধি প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে।’
করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের বিনা মূল্যে অক্সিজেন সেবা চালু করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ।
রাজধানীর কলাবাগানে মঙ্গলবার দুপুরে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নাছিম বলেন, ‘জামায়াত, বিএনপি ও হেফাজতে ইসলাম একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, আমাদের জাতীয় সংগীতের বিরুদ্ধে, জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে। তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়।
‘বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজত একসাথে হয়ে দানবীয় কায়দায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা করতে চায়। এরা বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের তকমা দিতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কেউ ধর্মকে ঢাল করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে পারবে না। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সরকার অবস্থান নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষ নীতি বাংলাদেশে থাকবে। বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাবো।’
এ সময় করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি। মহামারির সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা-কর্মীদের প্রশংসা করেন তিনি।
নাছিম বলেন, ‘রাজনৈতিক কার্যক্রমের পাশাপাশি মানবিক কাজকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ সবসময় প্রাধান্য দিয়ে থাকে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ এর আগে ১০টি ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স ও দুটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছে, ৪৩ জন ডাক্তার দিয়ে ২৪ ঘণ্টা টেলিমেডিসিন সার্ভিস দিচ্ছে। এর পরিধি প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে।
‘আজ ফ্রি অক্সিজেন সার্ভিসের মাধ্যমে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে স্বেচ্ছাসেবক লীগ যেভাবে দাঁড়াচ্ছে, এটি অত্যন্ত মহৎ উদ্যোগ। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা একে স্বাগত জানাই।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা-কর্মীরা জানান, যে কেউ ০৯৬১১৯৯৭৭৭ হটলাইন নম্বরে ফোন করলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিনা মূল্যের অক্সিজেন সিলিন্ডার সেবা নিতে পারবে।
ভারতকে ভ্রমণ নিষিদ্ধের তালিকায় যুক্ত করেছে যুক্তরাজ্য। ছবি: এএফপি
ভারতে কমপক্ষে ১০৩ জনের শরীরে করোনার নতুন ধরন শনাক্তের পর যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক সোমবার ভারতকে লাল তালিকায় যুক্ত করার কথা জানান। এতে ভারতের কেউ যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবেন না।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এবং নতুন একটি ভ্যারিয়েন্ট পাওয়ায় যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ নিষিদ্ধের তালিকায় নাম উঠেছে ভারতের।
দেশটিতে কমপক্ষে ১০৩ জনের শরীরে করোনার নতুন ধরন শনাক্তের পর যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক সোমবার এই ঘোষণা দেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ভারত সফরের কথা থাকলেও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তা বাতিল করা হয়েছে। এরপরই দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভারতকে লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্তির কথা জানান।
ম্যাট হ্যানকক জানান, গত ১০ দিন যারা ভারতে আছেন, তারা যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবেন না।
তবে ব্রিটিশ অথবা আইরিশ পাসপোর্ট ব্যবহারকারী কিংবা ব্রিটিশ নাগরিকরা দেশটিতে প্রবেশ করতে পারলেও তাদের সরকারিভাবে ১০ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
আগামী শুক্রবার থেকে এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করবে যুক্তরাজ্য।
ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২ লাখ ৫৯ হাজার ১৭০ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। আর এই সময়ে মারা গেছে ১ হাজার ৭৬১ জন।
এমন সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দেশটিতে ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্রও।
দেশটির স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারতে এখন সংক্রমণের চতুর্থ পর্যায় চলছে। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের যে কেউ দেশটিতে ভ্রমণে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। এমনকি টিকা নেয়া থাকলেও আক্রান্তের আশঙ্কা রয়েছে।
ভারতে দৈনিক সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালে অক্সিজেনের ঘাটতি, বেড ও ওষুধের অভাব চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
জুলাই পর্যন্ত টিকার অগ্রিম মূল্য হিসেবে সিরামকে তিন হাজার কোটি রুপি ও ভারত বায়োটেককে এক হাজার কোটি রুপি পরিশোধ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
ভারতে টিকা উৎপাদনকারী দুই প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটেককে শতভাগ অর্থ অগ্রিম পরিশোধ করে রেখেছে দেশটির সরকার।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই পর্যন্ত টিকার অগ্রিম মূল্য হিসেবে সিরামকে তিন হাজার কোটি রুপি ও ভারত বায়োটেককে এক হাজার কোটি রুপি পরিশোধ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
করোনাভাইরাসে ভারতে ২৪ ঘণ্টায় আবারও রেকর্ড মৃত্যুর মধ্যেই এলো এ খবর। দেশটিতে সোমবার এক দিনে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৭৫৭ জনের, মহামারিকালে যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ফলে এক বছরে ভারতে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে।
দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত ১ কোটি ৫৩ লাখের বেশি মানুষ। টানা ষষ্ঠ দিনের মতো দুই লাখের বেশি মানুষের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজারের বেশি। গত এক সপ্তাহে এ সংখ্যা ১৬ লাখের বেশি।
করোনাভাইরাসে সংক্রমণের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরের অবস্থানে আছে ভারত। প্রাণহানিতে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও মেক্সিকোর পরই অবস্থান দেশটির।
এমন পরিস্থিতিতে মহামারি নিয়ন্ত্রণে টিকা কার্যক্রমের গতি বাড়াতে তৎপর হয়েছে ভারত সরকার। গত সপ্তাহে ভারত বায়োটেকের বেঙ্গালুরু কারখানার জন্য ৬৫ কোটি রুপির তহবিলে অনুমোদন দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। কোভ্যাকসিনের উৎপাদন বাড়াতে নেয়া হয় এ পদক্ষেপ।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদন করছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা ফার্মাসিউটিক্যালসের গবেষণালব্ধ করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা কোভিশিল্ড। অন্যদিকে ভারতীয় গবেষকদের উদ্ভাবিত কোভ্যাকসিন উৎপাদন করছে ভারত বায়োটেক।
টিকা উৎপাদন অব্যাহত রাখতে এবং ধাপে ধাপে উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে প্রতিষ্ঠান দুটিকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে দেশটির সরকার। অর্থায়নের প্রাথমিক লক্ষ্য, টিকা প্রস্তুতে কাঁচামাল আমদানি, কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ ও টিকা উৎপাদন ও বণ্টন।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতে করোনার টিকার মজুত শেষ হয়ে আসছে বলে উদ্বেগের মধ্যেই এসব তথ্য প্রকাশ করল ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়।
সোমবার সকালেই পাঞ্জাব সরকার কেন্দ্রকে হুঁশিয়ার করে জানায়, রাজ্যটিতে আর মাত্র তিন দিন টিকা দেয়ার মতো ডোজ মজুত আছে। শুক্রবার অন্ধ্র প্রদেশ জানায়, রাজ্যটিতে টিকার মজুত সম্পূর্ণ শেষ।
টিকার সরবরাহ পর্যাপ্ত নয় বলে চলতি মাসের শুরুতেই মুম্বাই-পুনেসহ রাজ্যের শতাধিক টিকাকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয় মহারাষ্ট্রে।
চলতি সপ্তাহেই ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানায়, টিকা উৎপাদনে বিশ্বের সর্ববৃহৎ দেশটি অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে টিকা আমদানির কথাও ভাবছে।
যদিও এর আগ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি ছিল, করোনাভাইরাসের টিকার ঘাটতি নেই ভারতে।
এদিকে আগামী ১ মে থেকে ভারতে ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের প্রত্যেকের জন্য টিকা কার্যক্রম শুরু করছে ভারত। বর্তমানে টিকা নেয়ার জন্য দেশটিতে ন্যূনতম বয়স ৪৫ বছর।
গত ১৬ জানুয়ারি ভারতে টিকা কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে এক বা দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন সাড়ে ১২ কোটি মানুষ।
সিঙ্গাপুরে এক বছর ধরে ডরমেটরিতে আটক অভিবাসী শ্রমিকদের কম্পাউন্ড থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। ছবি: সংগৃহীত
৩০ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি শ্রমিক বলেন, ‘কর্মস্থলে নির্মাণ করা ডরমেটরিতেই এক বছর বন্দি অবস্থায় রয়েছি। সেখান থেকে আমার কাজের স্থানে কেবল যেতে পারি । এর বাইরে কোথাও যাওয়ার অধিকার নেই আমার। আমি এখনও টিকা পাইনি।’
সিঙ্গাপুরে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এক বছর ধরে কর্মস্থলে নির্মিত ডরমেটরিতে আটক অভিবাসী শ্রমিকদের কম্পাউন্ড থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না।
সংক্রমণ রোধে দেশটির সরকারের নেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী ৩ লাখ ২০ হাজার অভিবাসী এসব ডরমেটরিতে গাদাগাদি করে বসবাস করছেন।
অভিবাসী শ্রমিকদের মাঝে সংক্রমণের হার শূন্যের কোঠায় নেমে যাওয়ার পরও তাদের মুক্তভাবে কাজে ফেরা ও মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দিচ্ছে না দেশটির সরকার। কবে অনুমতি পেতে পারেন, সে বিষয়েও কোনো আশাও দেখছেন না শ্রমিকরা।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের সোমবারের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদক ফিলিপ হাইজমানসের সঙ্গে কথোপকথনে বাংলাদেশের এক শ্রমিক জানান, ‘আমার বাইরে যাওয়ার কোনো স্বাধীনতা নেই। শুধু ডরমেটরি থেকে কাজের স্থানে যেতে পারি। কাজ শেষে আবারও ডরমেটরিতে ফিরতে হয়।’
৩০ বছর বয়সী এই বাংলাদেশি শ্রমিক বলেন, ‘কর্মস্থলে নির্মাণ করা ডরমেটরিতেই বন্দি অবস্থায় রয়েছি। সেখান থেকে আমার কাজের স্থান নির্মাণাধীন ভবনেই কেবল যেতে পারি আমি। এর বাইরে কোথাও যাওয়ার অধিকার নেই আমার। আমি এখনও টিকা পাইনি।’
শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে বিভিন্ন সংগঠন অভিবাসী শ্রমিকদের এমন বন্দি জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছে।
হিউম্যানিটেরিয়ান অরগানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন ইকোনমিকসের অপারেশন ম্যানেজার লুক টান বলেন, ‘ডরমেটরিগুলোতে বসবাসকারী শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার।’
এক বছর আগে, ডরমেটরিগুলোতে ব্যাপকহারে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় কঠোর বিধিনিষেধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
সরকারের নেয়া এমন বিধিনিষেধ সংক্রমণ রোধে সফলতা দেখায়। গত নভেম্বরের পর থেকে এই ডরমেটরিগুলোতে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ২০ জনেরও কম।
দেশটির জনশক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, কমিউনিটির অন্যদের সঙ্গে মাসে একবার এই শ্রমিকদের দেখা করার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন তারা।
এই মুখপাত্র আরও বলেন ‘এই ডরমেটরিগুলোতে বসবাসকারী অন্তত ৯ হাজার শ্রমিককে টিকা দেয়া শুরু হয়েছে এ বছর মার্চে। আরও ৩০ হাজার শ্রমিককে দ্বিতীয় ধাপে টিকার আওতায় আনা হবে।’
গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটির পার্লামেন্টে জানানো হয়, ডরমেটরিগুলোর অভিবাসী শ্রমিকরা টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।
মন্তব্য