রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে থাকেন আলমগীর হোসেন। পেশায় বেসরকারি চাকরিজীবী। দিন দশেক আগে করোনা আক্রান্ত হন। নিজ ঘরে বিচ্ছিন্ন হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি।
দিন কয়েক পার হতেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তার। দেরি না করে চলে যান মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ১৯ মার্চ সেখানে ভর্তি হন আলমগীর। তার অবস্থা বিবেচনা করে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউতে ভর্তির পরামর্শ দেন চিকিৎসক। ওই সময় মুগদায় কোনো আইসিইউ ফাঁকা ছিল না।
রাজধানীর এভারকেয়ার, স্কয়ার, ইউনিভার্সাল, আনোয়ার খান মডার্ন, ইউনাইটেড- সবখানে হন্যে হয়ে আইসিইউ খুঁজতে থাকেন রোগীর স্বজনেরা। কিন্তু কোথাও আইসিইউ ফাঁকা নেই। সবকটিতে সংকটাপন্ন রোগী।
আলমগীরের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। অক্সিজেন সাপোর্ট নিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়ছিলেন তিনি। শেষমেশ সোমবার সকালে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউর ব্যবস্থা হয় তার। হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন তার স্বজনেরা।
রাজধানীতে এখন আইসিইউর জন্য হাহাকার। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি হুট করে অবনতি হওয়ার কারণ তৈরি হয়েছে এই অবস্থা। সংক্রমণ ঠেকাতে পারলে এই সংকট থাকবে না বলে মনে করেন তারা।
আইসিইউ সংকট বেশি রাজধানীতে
গোটা দেশের সঙ্গে তুলনা করলে রাজধানীতে আইসিইউ সংকট সবচেয়ে বেশি। রোগীর স্বজন হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরে হতাশ হয়ে ফিরছেন। আইসিইউ পেতে উচ্চপর্যায় থেকেও আসছে তদবির।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজধানীতে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বিশেষায়িত করোনা হাসপাতালের সংখ্যা ১৯। যেখানে সব মিলিয়ে আইসিইউর সংখ্যা ২৬৩। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রোগী ভর্তি আছে ২১১টিতে। আর ফাঁকা আছে ৫২টি আইসিইউ শয্যা।
পরিসংখ্যান বলছে, রাজধানীতে ৮০ দশমিক ২৩ শতাংশ আইসিইউতে ভর্তি আছেন রোগী। আর ঢাকা বাদে সারা দেশে ২৩২ আইসিইউতে রোগী ভর্তি আছে ৬৩ জন। ফাঁকা পড়ে আছে ১৬৯টি।
সব মিলিয়ে সারা দেশে ৫৪০ আইসিইউ শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ২৯৮টিতে। সে হিসেবে দেখা যাচ্ছে আইসিইউর কোনো সংকট নেই দেশে। অর্থাৎ সারা দেশে ৫৫ দশমিক ১৯ শতাংশ আইসিইউ শয্যায় রোগী ভর্তি আছে।
সরকারি হাসপাতালের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বার্ন ইউনিটে আইসিইউর কোনো শয্যা খালি নেই।
শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে শয্যার আটটির মধ্যে ছয়টিতে রোগী ভর্তি রয়েছে। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ১৫ শয্যার মধ্যে ১২টি এবং ১৬ শয্যার মধ্যে ১৩টিতে রোগী ভর্তি রয়েছে।
রাজধানীতে করোনা সংক্রান্ত বিশেষায়িত সরকারি ১০ হাসপাতালের মধ্যে দুটিতে কোনো আইসিইউর ব্যবস্থা নেই। বাকি আটির মধ্যে পাঁচটি হাসপাতালে এই মুহূর্তে শয্যা খালি নেই। মোট ৯৫টি শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ৯০ জন। আর খালি আছে মাত্র পাঁচিট শয্যা। অর্থাৎ ৯৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ আইসিইউ শয্যা রোগী ভর্তি। খালি রয়েছে ৫.২২ শতাংশ শয্যা।
এদিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ইবনে সিনা হাসপাতাল ও এএম জেড হাসপাতালে আইসিইউর কোনো শয্যা খালি নেই। আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ৩০ শয্যার মধ্যে ২২টি, আসগর আলী হাসপাতালে ৩২ শয্যার মধ্যে ২১টি, স্কয়ার হাসপাতালে ৯ শয্যার মধ্যে ৭টি, ইউনাইটেড হাসপাতালে ৯ শয্যার মধ্যে ৭টি, এভারকেয়ার হাসপাতালে ১২টার মধ্যে ১১টি, ইমপালস হাসপাতালে ৩৫ শয্যার মধ্যে ২৫টিতে রোগী ভর্তি রয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন বলেন, আইসিইউ সংকট শুধু ঢাকায়। ঢাকার বাইরে এই সংকট খুবই কম। রোগীরা আক্রান্ত হলেই ঢাকায় চলে আসছে, যে কারণে ঢাকায় একটি চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
করোনায় লাগাম পরাতে হবে
এমন বাস্তবতায় সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরার ওপর গুরুত্ব আরোপ করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অসীম কুমার বলেই ফেললেন, ‘করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ আইসিইউ সংকট নিরসনের একমাত্র পথ।’
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক মাস আগেও আইসিইউতে রোগীর চাপ অনেক কম ছিল। গত ৯ মার্চ থেকে আমাদের হাসপাতালের ১৪টি আইসিইউ বেড পরিপূর্ণ ছিল। এই সংকট শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের প্রতিটা দেশে। সংকট নিরসনে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।’
আইসিইউর চাহিদা বাড়তে থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও পাঁচটি আইসিইউ বেড যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানান এই পরিচালক। কিন্তু এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয় বলে মনে করেন তিনি।
অসীম কুমার বলেন, ‘আইসিইউ সংকট নিরসনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। গত এক মাস বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসছে আইসিইউ রোগীর জন্য, যা দুই মাস আগেও অনেক কম ছিল। আইসিইউর সঙ্গে করোনা পরীক্ষা বেড়েছে বিভিন্ন হাসপাতালে। মুগদা হাসপাতালে প্রতিদিন ২০০ জনের নমুনা টেস্ট করানো হয়। বেশ কিছু দিন ধরে রোগীর ভিড় বেশি থাকার কারণে টেস্ট করতে না পেরে অনেকেই ক্ষোভ নিয়ে ফিরে যান।
দুই সপ্তাহ ধরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অন্যান্য রোগীর সঙ্গে করোনা রোগী ৭ থেকে ১০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন এটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, এক সপ্তাহ ধরে আইসিইউ শয্যার চাহিদা বাড়ছে। আমাদের করোনা রোগীদের জন্য দুই পাশে আইসিইউ-এর ব্যবস্থা ছিল। তবে সম্প্রতি আগুন লাগার কারণে ১৪টি আইসিইউ শয্যা বন্ধ করা হয়েছে। যে কারণে অন্যান্য হাসপাতালের চেয়ে আমাদের হাসপাতালে চাপ আরও বেশি। আগামীকাল বা পরশু পাঁচটি আইসিইউ শয্যা যুক্ত করা হবে, যেগুলো আগুনে পুড়ে গেছে। সেগুলোও মেরামতের কাজ চলছে। হয়তো আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আরও ১০টি আইসিইউ শয্যা চালু করা হবে।’
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, প্রতিদিনই আইসিইউ শয্যার জন্য বিভিন্ন পর্যায় থেকে তার কাছে অনুরোধ আসে। অনেক ঘনিষ্ঠজন ফোন করে একটি আইসিইউ শয্যার জন্য সহায়তা চান। কিন্তু শয্যা ফাঁকা না থাকায় তারা রোগী ভর্তি করতে পারছেন না বলে জানান তিনি।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয় কী এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানা পূর্বশর্ত। যেটা আমাদের মধ্যে শিথিলতা দেখা দিয়েছে। আমরা মাস্ক পরছি না। বিয়েশাদি ও সামাজিক অনুষ্ঠানে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘সবার কাছে একটা পরিষ্কার তথ্য থাকা দরকার: স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। টিকা নিই আর না নিই, আমাদের মাস্ক পরতে হবে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। ৩০ মিনিট পরপর হাত ধুতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই করোনাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।’
যুক্তরাজ্যের নতুন স্ট্রেইনে সংক্রমিত হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ‘জিনোম সিকোয়েন্সিং করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে জানুয়ারি মাসে যুক্তরাজ্যফেরত ছয়জনের শরীরে নতুন ধরন শনাক্ত হওয়ার পর তাদের কোয়ারেন্টাইন করা হয়। তাদের সবাই সুস্থ আছেন। একই সঙ্গে ওই ছয়জনের কন্টাক্ট ট্রেসিংও করা হয়েছে। সে হিসাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কম। এরপরও জিনোম সিকোয়েন্সিং করার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।
বিশেষজ্ঞ যা বলছেন
নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলোতে জোরালো প্রস্তুতির তাগিদ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘দেশে টিকা আসায় জনগণ স্বাধীন হয়ে গেছে, এমন ভাব দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে করোনা সংক্রমণের হার ২ শতাংশ থেকে ১১ শতাংশে এসেছে। নতুন করে সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, তা উদ্বেগজনক। সুতরাং সবাইকে সতর্ক হতে হবে। একই সঙ্গে দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে হবে। না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।’
একই মত দিয়েছেন করোনা সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, আবার যেন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, কর্তৃপক্ষকে আগে থেকে সতর্ক হতে হবে। প্রতিনিয়ত যে হারে করোনা শনাক্তের হার বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে মানুষের উদাসীনতা দেখা দিয়েছে। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার জন্য আগের তুলনায় বেশি প্রস্তুতির প্রয়োজন হতে পারে। যে হারে আইসিইউর চাহিদা দেখা দিচ্ছে, সে জন্য জোরালো প্রস্তুতি নিতে হবে।
সংকট নিরসনে সরকারে প্রস্তুতি
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার জন্য হাসপাতালগুলো সর্বাত্মক প্রস্তুত রয়েছে, চিকিৎসা ও সুরক্ষা সামগ্রীর কোনো ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। তিনি বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ আসছে। এ বিষয়ে সারা দেশের সব সিভিল সার্জনকে জেলা পর্যায়ের কোভিড ডেডিকেটেড শয্যাগুলো প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিভাগীয় পরিচালক ও রাজধানীর সব হাসপাতালের পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) পরিচালক আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, ‘আগামী এক বছরও যদি করোনার প্রকোপ থাকে, আমরা তা মোকাবিলা করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।'
সিএমএসডি পরিচালক আরও বলেন, ‘করোনার প্রকোপ সারা দেশেই বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে সব ধরনের উপকরণ মজুত রয়েছে। যখনই হাসপাতালগুলো চাচ্ছে, তখনই আমরা সেগুলো সরবরাহ করছি।’
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য