পোশাকশ্রমিকদের চিকিৎসাসেবা সহজ করতে ২০২৬ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ।
রোববার দুপুরে রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার আয়োজিত ‘তৈরি পোশাক খাতের (আরএমজি) শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিমা নীতিমালা ও প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করার সময় তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘পোশাকশিল্পকে কেন্দ্র করে প্রায় ৪২ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে। বিশেষত এর বড় অংশজুড়ে রয়েছেন নারীরা। এই বৃহৎ চালিকা শক্তির চিকিৎসাসেবা সহজ করতে ২০২৬ সালের মধ্যেই তাদের স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে ৫ লাখ, ২০২৩ সালে ১০ লাখ, ২০২৪ সালে ২০ লাখ, ২০২৫ সালে ৩০ লাখ এবং ২০২৬ সালের মধ্যে তৈরি পোশাকশিল্পের সব শ্রমিককে (প্রায় ৪২ লাখ) স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘তৈরি পোশাকশ্রমিকদের একটা উপযুক্ত সুবিধা প্যাকেজের আওতায় আনতে বছরে প্রতিজনের জন্য প্রায় ১ হাজার টাকা প্রিমিয়াম দরকার হবে। এই প্রিমিয়ামের ৩৬৫ টাকা শ্রমিক, ৩৬৫ টাকা মালিক এবং বাকি ২৭০ টাকা সরকারকে বহন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।’
‘স্বাস্থ্যবিমা ব্যবস্থাপনা ইউনিট’ বা ‘বিমা তহবিল ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান’ গঠন করে পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের বিমার আওতায় আনতে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক থেকে। এ খাতে প্রায় ৪২ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে নারীশ্রমিকই বেশি। এদের ৪৩ শতাংশ বছরে নানা অসুখে ভোগেন। মোট শ্রমিকের ১ শতাংশ আছেন স্বাস্থ্যবিমার আওতায়। শতকরা ৪০ জন শ্রমিক উচ্চমূল্যের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারেন না।’
গার্মেন্টসকর্মীদের স্বাস্থ্যবিমা প্রসঙ্গে বিজেএমইএ হেলথ সেন্টারের চেয়ারম্যান হানিফুর রহমান লোটাস বলেন, ‘মালিকদের এই তো এখনও স্বাস্থ্যবিমা করা হয়নি, তাহলে শ্রমিকদের কীভাবে স্বাস্থ্যবিমা হবে? তবে আমরা চেষ্টা করছি। যদিও বিষয়টা অনেক জটিল এবং কঠিন। আমরা চেষ্টা করছি সব মালিককে ঐক্যবদ্ধ করেই গার্মেন্টসকর্মীদের স্বাস্থ্যবিমার অধীনে নিয়ে আসতে।’
ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল এবং আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের ব্র্যাকের পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিমা সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যাও রয়েছে। চিকিৎসকরা যখন দেখে এটা স্বাস্থ্যবিমা-বিষয়ক কোনো রোগী তাহলে ওই রোগীকে তারা প্রায়োরিটি দিতে চান না। এ ক্ষেত্রে বিমায় সেবা গ্রহীতাকে কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়।’
অনুষ্ঠানে রিসার্চ, ট্রেনিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (আরটিএম) ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ জগলুল পাশা বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিমা প্রজেক্ট অবশ্যই সরকারি ব্যবস্থাপনায় হওয়া উচিত। না হলে এটি নিয়ে বড় ধরনের ব্যবসা হবে।’
গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তাহমিনা হক বলেন, ‘গার্মেন্টসকর্মীরা সাধারণত কেন যেন কম অসুস্থ হয়। তবে কিছু গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকরা অসুস্থ হয় অতিরিক্ত ডিউটির কারণে। নির্দিষ্ট আট ঘণ্টার বাইরেও তাদের অতিরিক্ত কাজের চাপ দেয়া হয়। শ্রমিকরাও চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে ডিউটি করতে বাধ্য হয়। এভাবে সব সময় মানসিক চাপে থাকায় তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন।’
গার্মেন্টসশ্রমিকদের পুরো পরিবারকে বিমার আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন শ্রমিকের ঘরে বাবা-মা জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত। এ সময়ে সেই শ্রমিক কি নিজের হেলথ ইনস্যুরেন্স করতে আসবে? সে কি তার বাবা-মা-সন্তানের চিকিৎসা বাদ দিয়ে নিজের জন্য টাকা জমাতে আসবে? সুতরাং মালিকপক্ষকে শুধু শ্রমিক নয় তাদের পুরো পরিবারের স্বাস্থ্যবিমা নিয়ে ভাবতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার মালিকপক্ষকে সহযোগিতা করতে পারে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সরকারের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহাদাত হোসাইন মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যবিমা কার্যকর করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এটিও অসম্ভব নয়, সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যবিমার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন একটি সমাজে বাস করছি যেখানে শতকরা ১৬ ভাগ লোকের চিকিৎসার প্রয়োজন থাকলেও করাতে পারে না। আর যারা চিকিৎসা করান, তাদের মধ্যে ১৫ ভাগ লোক চিকিৎসা করাতে গিয়ে দরিদ্র হয়ে পড়েন। এ কথাগুলো আমার নয়, বিভিন্ন গবেষণায় বিষয়গুলো উঠে উঠে এসেছে।’
গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের তাহমিনা হকের সঙ্গে একমত পোষণ করে তিনি বলেন, ‘গার্মেন্টসকর্মীদের পাশাপাশি তাদের পরিবারকেও স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা যেতে পারে। তবে এটা মনে রাখতে হবে এই টাকা শুধু সরকার বা মালিকের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। গার্মেন্টসকর্মীদেরকেও একটি প্রিমিয়াম দিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. নাসরিন সুলতানার সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন ইনস্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটির (ডিআইআরএ) সদস্য মইনুল ইসলাম, সেন্ট্রাল ফান্ডের ডিরেক্টর জেনারেল মো. আমির হোসাইন, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের পরিচালক ড. নুরুল আমিন নাহিদসহ অনেকে।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য