করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দেশে আত্মহত্যা বেড়েছে বলে একটি জরিপ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
গত বছরের ৮ মার্চ থেকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে করা এই জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সময়ে আত্মহত্যা করেছে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন।
করোনা শুরুর আগের বছর ২০১৯ সালে ১০ হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে বলে জানিয়েছিল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। ওই দিন থেকেই জরিপ শুরু করে আঁচল ফাউন্ডেশন নামের বেসরকারি সংস্থা।
জরিপের অংশ হিসেবে তারা দেশের দৈনিক সংবাদপত্র, হাসপাতাল ও পুলিশের কাছ থেকে তথ্য নিয়েছে।
সংস্থাটি ৩২২টি আত্মহত্যার কেস স্টাডি বিশ্লেষণ করে আত্মহত্যাকারীদের বয়স, জেন্ডার ও আত্মহত্যার কারণ তুলে ধরেছে।
শনিবার ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে আঁচল ফাউন্ডেশন তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
জরিপে গত বছরের মার্চ থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত সময়কে এক বছর ধরা হয়েছে। সে হিসাবে ২০১৯ সালের তুলনায় এক বছরে আত্মহত্যা বেড়েছে ৪ হাজার ৪৩৬ জন। আত্মহত্যা বাড়ার এ হার ৪০ শতাংশ।
জরিপে উঠে এসেছে, দেশে আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ পুরুষ ও ৪৩ শতাংশ নারী। ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে। যেসব কারণে আত্মহত্যা করেছে, তার মধ্যে আর্থিক, পড়াশোনা, পারিবারিক সম্পর্কজনিত জটিলতা, হতাশা ও বিষণ্নতা অন্যতম।
আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা তানসেন রোজ বলেন, ‘তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে আমি একজন তরুণ হিসেবে শঙ্কিত। যে হারে মানসিক সমস্যা বাড়ছে সে হারে বাড়ছে না সচেতনতা। যে কারো আত্মহত্যা করার পিছনে আমাদের পরিবার, সমাজ ও দেশেরও দায় রয়েছে। একটা মানুষ কেন আত্মহত্যা করে তা নিয়ে নির্মোহ বিশ্লেষণ করা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আত্মহত্যা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার আগেই দেশের নীতিনির্ধারকসহ সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা যারা তরুণ আছি, সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখার দায়িত্ব তাদেরই। আমাদের একটা কথা মাথায় রাখতে হবে আত্মহত্যার কারণগুলো আমাদের কাছে যত তুচ্ছই হোক না কেন, আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তির কাছে তা অনেক বড় একটি ব্যাপার।
‘তাই মানসিক স্বাস্থ্যকেও গুরুত্ব দিয়ে প্রত্যেকটা নাগরিকের বেঁচে থাকার পরিবেশ নিশ্চিত রাষ্ট্রসহ প্রত্যেকেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য।’
রোজ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে আমাদের জোর দাবি, প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিশ্চিত করা হয়। পাশাপাশি পরিবার কীভাবে আত্মহত্যা কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়ে রূপরেখা দাঁড় করানো দরকার। সবাইকে সচেতন না করতে পারলে ফলাফল অধরাই থেকে যাবে।’
চিকিৎসকরা বলছেন, করোনাকালে জেন্ডার, সামাজিক শ্রেণির ভিন্নতায় আলাদা আলাদা রকমের মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। কারও চাকরি নেই, কেউ স্বামী-সন্তানকে নিয়ে চিন্তিত, কেউ ব্যবসায়িক কারণে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। কেউ আবার নিজের শরীর, স্বাস্থ্য নিয়ে এতটাই চিন্তিত হয়ে পড়ছেন যে, তাদের মধ্যে মানসিক অবসাদ দেখা দিচ্ছে। আর সেই অবসাদই ঠেলে দিচ্ছে আত্মহত্যার দিকে।
এ বিষয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। অনেকের আয় কমে আসছে। অনেকে নিজের ব্যবসা হারিয়ে হতাশায় ভুগছেন। এ কারণে বিষণ্নতা ও মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। তবে রোগী বাড়লেও চিকিৎসার বাইরে থাকছেন অনেকে।
‘মানসিক সমস্যা দেখা দিলে বিষয়টি রোগী প্রথমে বন্ধু বা পরিবারের লোকের সঙ্গে শেয়ার করে। অনেকেই সচেতন না হওয়ার কারণে তার অস্বাভাবিক আচরণকে গুরুত্ব না দিয়ে তার সঙ্গেই দুর্ব্যবহার করেন। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই হতাশা, উদ্বেগ, বিষণ্নতা থেকে আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠে।’
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মোহিত কামাল বলেন, ‘আত্মহত্যা ও আত্মহত্যার প্রবণতা একটি অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিষণ্নতার কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে। দৈনন্দিন জীবনের জটিলতা ও প্রযুক্তির প্রতি মানুষের আসক্তি বেড়েছে। ফলে প্রায় দুই দশকে আত্মহত্যার চিত্রের খুব একটা পরিবর্তন হয়নি (কমেনি)।
‘অনেক সময় সামাজিক কারণে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন, যা মোটেও উচিত নয়। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।’
আত্মহত্যা রোধে আঁচলের সুপারিশ
প্রতিবেদনে আত্মহত্যা রোধে আঁচল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে মানসিক রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো; আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে সাবধানে রাখা, হাতের কাছে ছুরি, কাঁচি, ওষুধ না রাখা; আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে একা না রাখা; আত্মহত্যার সতর্ক সংকেত সম্পর্কে জানা; গণমাধ্যমে দায়িত্বশীল প্রতিবেদন লেখা ও প্রকাশ করা, যথাসম্ভব আত্মহত্যার বিস্তারিত বিবরণ ও ধরন বর্ণনা থেকে বিরত থাকা; ক্রাইসিস সেন্টার ও টেলিফোন হটলাইন সারা দেশে চালু করা; আত্মহত্যা রোধে সমাজের সব স্তরের মানুষের এগিয়ে আসা; আত্মহত্যায় ব্যবহৃত জিনিস সহজলভ্য না করা; সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর নিয়োগ নিশ্চিত করা ও সরকারি উদ্যোগে আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিদের সহযোগিতার ব্যবস্থা করা।
আরও পড়ুন:খুলনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন। দুই বছর আগে বিএনপির দলীয় কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় এ মামলা করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বেলা ১২টার দিকে খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার আবেদন জমা দেন বাদীর আইনজীবী সৈয়দ শামীম হাসান।
আবেদনের বিষয়ে আদালত আজ আদেশ দেবেন বলেও জানান তিনি।
শামীম হাসান বলেন, ‘২০২৩ সালের ১৯ মে খুলনা প্রেসক্লাবে বিএনপির কর্মসূচিতে লাঠিচার্জ ও গুলি করে পণ্ড করে দিয়েছিল পুলিশ। এ ঘটনায় বাদী শফিকুল আলম তুহিনসহ ৫০ থেকে ৬০ জন আহত হন এবং ৯ জনকে আটক করা হয়। মামলায় শেখ হাসিনাকে হামলার নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।’
এ ছাড়া, মামলার আবেদনে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, সাবেক এমপি, মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ ১৫৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
কারও অন্যায় তদবির মেনে না নিলেই সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হয় বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি কথা বলেন। ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির আইনি কাঠামোর পর্যালোচনা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘বিশ্বাস করবেন, আমার কাছে বহুত (অনেক) অন্যায় তদবির আসে। যে মুহূর্তে তদবিরগুলো মানি না; দেখা যায় যার তদবির, অন্যায় তদবির রাখিনি, কিছুদিন পর সে আমাকে ভারতের দালাল বলা শুরু করে দেয়। ৪০-৫০ বছর আগে আমার সঙ্গে কার কোন সম্পর্ক ছিল, তা নিয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রাম বানানো শুরু করে দেয়। যা ইচ্ছা বলে। ওই যে ঝিনুক, নীরবে সও, সহ্য করে যাই। কিচ্ছু করি না। মামলা তো দূরের কথা, কোনো উত্তরও দেই না।’
তিনি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি হচ্ছে, জীবনে কখনো এত শক্তিহীন, দুর্বল এবং অবরুদ্ধ অনুভব করিনি। সরকারে যোগ দিয়ে যা ফিল করছি। এই সমালোচনার ক্ষেত্রে বলছি। সোশ্যাল মিডিয়ায়, মেইন স্ট্রিম মিডিয়ায় নয়।’
উপদেষ্টাদের মধ্যে যারা বেশি পরিচিত, তারা গণমাধ্যমের বেশি নোংরামির শিকার হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন আসিফ নজরুল। অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক দুর্বলতা থাকলেও প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টারা সেবকের মতো কাজ করার চেষ্টা করছেন বলেও জানান এই উপদেষ্টা।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা মিনিমাম আন্ডারস্ট্যান্ড থাকতে হবে, পুলিশ রিলেটেড (সম্পর্কিত) কোনো কিছুর ব্যাপারে আমার কোনো কিছু করার নেই। সাংবিধানিকভাবে কোনো কিছু করার নেই। যতই আমার গুড উইশ থাকুক, যতই রক্তক্ষরণ থাকুক, কেউ ফলস (মিথ্যা) মামলা করলে আমার কিছু করার নেই। তাহলে আমি কীভাবে কিছু করব?’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের নিয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য ছড়ানো হয় উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, ‘ইউনূস স্যার, শফিক, আমিসহ আমাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অকল্পনীয়, গাঁজাখুরি, অবিশ্বাস্য, নির্মম, মিথ্যাচার দিনের পর দিন চলছে। আমরা একটা মামলাও করিনি। এটি বাংলাদেশের মানুষের বিবেকের ওপর ছেড়ে দিয়েছি।’
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, একশ্রেণির মানুষ মামলা করার মধ্যে যদি ব্যবসার প্রবণতা খুঁজে পান, আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ যদি এর সঙ্গে শামিল হন, পুলিশ যদি দায়িত্বশীল না হয়, তাহলে এটি বন্ধ করা যাবে না।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, সাবসটেনটিভ ও সাবসটেনশিয়াল এভিডেন্স পাওয়া না গেলে কাউকে যাতে গ্রেপ্তার করা না হয়। তারপরও হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে হয়ে থাকতে পারে। আমাদের অনেক ব্যর্থতা আছে। আমরা প্রতিনিয়ত শেখার চেষ্টা করছি।’
একাত্তর টিভির দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি জানি, গ্রেপ্তার নিয়ে অনেকের আপত্তি হচ্ছে। আমি যেটুকু জানি, তাদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, সেটি সাংবাদিকতা করার জন্য হয়নি। তারা জামিন পেতে পারে কি না, সেই প্রশ্নও তোলা যায়। কিন্তু মামলার ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। কারণ, মামলা করেছে সাধারণ মানুষ।’
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। সভায় আরও বক্তব্য দেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান বদিউল আলম মজুমদার, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক ও শিক্ষক পারভেজ করিম আব্বাসী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এম এ আজিজ, বিএসএম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাখাওয়াৎ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান, বিদেশে গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক পারভীন এফ চৌধুরী, ফ্যাক্টচেকার কদরুদ্দিন শিশির প্রমুখ।
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে দেশব্যাপী যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৩৮৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
আজ আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে দেশব্যাপী পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করে চলেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায়, গত ১৯ জুন থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদাতিক ডিভিশন ও স্বতন্ত্র ব্রিগেডের অধীনস্থ ইউনিটসমূহ কর্তৃক অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেশকিছু যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।’
এ সকল যৌথ অভিযানে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, অবৈধ অস্ত্রধারী, চোরাকারবারী, কিশোর গ্যাং সদস্য, চাঁদাবাজ, অপহরণকারী, অবৈধ দখলদার, ডাকাত সদস্য, টিসিবির পণ্য আত্মসাতকারী, অবৈধ রিক্রুটমেন্টের সাথে জড়িত দালাল, ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের ব্যবসায়ী, অবৈধ বালি উত্তোলনকারী, মব ভায়োলেন্স সৃষ্টিকারী, মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদকাসক্তসহ মোট ৩৮৫ জন অপরাধীকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত অপরাধীদের কাছ থেকে ২৬টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ৭০টি বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ, ১১টি ককটেল বোমা, বিভিন্ন মাদকদ্রব্য, সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার দেশীয় অস্ত্র, চোরাই মালামাল, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে। আটককৃতদের প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ এবং আইনি কার্যক্রম সম্পন্নের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
দেশব্যাপী জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত টহল ও নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়াও, বিভিন্ন স্থানে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রমে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করা হচ্ছে।
দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সাধারণ জনগণকে যেকোন সন্দেহজনক কার্যকলাপের বিষয়ে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পে তথ্য প্রদান করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময়ে নতুন করে ১৯৫ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মৃতদের মধ্যে একজন ১৪ বছর বয়সী কিশোর ও অন্যজন ৪৮ বছর বয়সী নারী রয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যায় বরিশাল বিভাগ শীর্ষে , যেখানে ৭৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে এ সংখ্যা ৬০ জন, অন্যদিকে ঢাকা বিভাগের (সিটি করপোরেশন বাদে) হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৩০ জন। রাজশাহী বিভাগে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ জন, চট্টগ্রামে ৮ জন, সিলেটে ৩ জন এবং ময়মনসিংহে ২ জন।
চলতি বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হযে এ পর্যন্ত মোট ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ২০ জন পুরুষ ও ১৮ জন নারী । এছাড়া দেশে এবছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯,০৬৫ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে বরিশালে আক্রান্তের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়ায় সেখানে বিশেষ নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জনগণকে বাড়ির আশেপাশে পানি জমতে না দেওয়া, মশারি ব্যবহার এবং জ্বর দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
দেশের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল বসিয়ে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ‘জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি’ শীর্ষক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ নির্দেশ দেন।
বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, ইন্টারন্যাশনাল রিনিউবেল এনার্জি এজেন্সির ২০২৪ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌরবিদ্যুৎ প্রসার ও ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ভারতে মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ২৪ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৭.১৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৩৯.৭ শতাংশ সৌরবিদ্যুৎ থেকে পূরণ হলেও বাংলাদেশে মোট বিদ্যুৎ চাহিদার মাত্র ৫.৬ শতাংশ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে থাকে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ২০২৫ অনুযায়ী, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ২০ শতাংশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ইতোমধ্যেই ৫ হাজার ২৩৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার স্থলভিত্তিক ৫৫টি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের টেন্ডার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নে ২০২৮ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য ‘জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি’ গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন। এর অংশ হিসেবে তিনি সকল সরকারি ভবন, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও সকল সরকারি হাসপাতালের ছাদে রুফটপ সোলার সিস্টেম স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারি ভবনে সোলার প্যানেল বসানোর কাজটি বেসরকারি উদ্যোগে করা যায় কি না, সে ব্যাপারে বিবেচনা করুন। যারা বসাবে, তারা নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থেই এটার রক্ষণাবেক্ষণ করবে ও কার্যকরভাবে এটা পরিচালনা করবে। সরকারের পক্ষ থেকে শুধু ছাদটা দেওয়া হবে, বাকি কাজ তারাই করবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে সকল প্রতিষ্ঠান রুফটপ সোলার প্যানেল করেছে, তাদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। তারা কী ধরনের সমস্যায় পড়েছে, সেগুলো জানতে হবে। সেই সমস্যাগুলো সমাধানের দিকে যেতে হবে।’
এ প্রক্রিয়ায় সরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য কোনো বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হবে না এবং সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত ছাদের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো ভাড়া পাবে।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনসহ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ এবং মাধ্যমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউসনের কাছে জমা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এতে ৩০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম প্রতিবেদন পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনে ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এই প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাই করে আগামী রবিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-২-এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হিসেবে উপস্থাপন করা হবে বলে আশা করছি।’
এর আগে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালে এই মামলার চার আসামিকে ট্র্যাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এরপর আসামিদের মধ্যে পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন ও সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়কে ১৮ জুন এবং বেরোবির সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী আকাশকে ১৯ জুন জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন ট্র্যাইব্যুনাল-১।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সারা দেশে যখন আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে, তার মধ্যে ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন আবু সাঈদ।
২৫ বছর বয়সী আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বাদশ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিরস্ত্র আবু সাঈদের পুলিশ কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদেই সোচ্চার হন বহু মানুষ, যাতে আরও গতিশীল হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।
মাদকাসক্তদের জন্য সরকার বিভাগীয় পর্যায়ে পৃথক কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এ ছাড়া দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে ‘মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র’ নির্মাণ প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস ২০২৫’ উদযাপন উপলক্ষ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সম্প্রতি সাতটি বিভাগীয় শহরে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সাতটি বিভাগীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। এ ছাড়া মাদকাসক্তদের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে পৃথক কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে।
তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (কর্মকর্তা-কর্মচারী) অস্ত্র সংগ্রহ ও ব্যবহার নীতিমালা-২০২৪’ প্রণয়ন করেছে। এই নীতিমালার আওতায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রথম ব্যাচের অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ প্রদান সম্পন্ন হয়েছে।’
এর ফলে আভিযানিক ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি অধিদপ্তরের মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনায় আরও সাফল্য আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে হলে তরুণ সমাজকে অবশ্যই মাদকমুক্ত রাখতে হবে মন্তব্য করে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘যেকোনো দেশের উন্নতির প্রধান নিয়ামক হলো কর্মক্ষম বিপুল যুবশক্তি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যখনই বৈষম্য, বঞ্চনা, অবিচার ও মূল্যবোধের সংকট তৈরি হয়েছে, তখনই যুব সমাজ সংকল্প ও ঐক্যের মাধ্যমে তা প্রতিহত করেছে। জুলাই ছাত্র-যুব-জনতার গণঅভ্যুখান যুব সমাজ এবং তারুণ্যেরই বিজয়। উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে হলে তরুণ সমাজকে অবশ্যই মাদকমুক্ত রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে মাদক চোরাচালানের একটি ভয়াবহ বিষয় হলো নারী, শিশু ও কিশোরদের এ গর্হিত কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।’
এ সমস্যা সমাধানের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার একটি বহুমাত্রিক সমস্যা। শুধু আইনের প্রয়োগে এর সমাধান করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে সর্বস্তরের জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।’
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন সিনথেটিক ও সেমি-সিনথেটিক ড্রাগস বা নতুন ধরনের মানসিক প্রভাবসৃষ্টিকারী মাদকদ্রব্যের (এনপিএস) আবির্ভাবের ফলে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারজনিত সমস্যা আরও ঘনীভূত হয়েছে।’
‘এসব মাদক নিয়ে নতুনভাবে কর্মকৌশল তৈরি করতে হচ্ছে। এসব নতুন মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে এগুলোকে আইনের তফসিলভুক্ত করার পাশাপাশি কৌশলগত নজরদারি বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হাসান মারুফ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি।
খোদা বখস চৌধুরী বলেন, ‘যে পরিবারের সদস্য মাদকাসক্ত হন, কেবল তারাই এর গভীরতা, ভয়াবহতা ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বুঝতে পারে। মাদকের বিষয়ে সামাজিক প্রতিরোধের দিকটি ইদানীং কমে গেছে। এটিকে বাড়িয়ে মাদকের পারিবারিক, ব্যক্তিক ও রাষ্ট্রীয় কুফল থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্টদের আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’
নাসিমুল গনি বলেন, ‘মাদকের উৎপাদন বাংলাদেশে হয় না। পাশ্ববর্তী দেশ থেকে পাচারের মাধ্যমে আমাদের দেশে এসে এটি যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাই মাদকের সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। আর এটিকে সফল করতে হলে আমাদের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে এবং জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।’
অনুষ্ঠানে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী কার্যক্রমের ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থী, সেরা তিনটি বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের প্রতিনিধি এবং মাদকবিরোধী প্রচারণা, উদ্বুদ্ধকরণ ও গবেষণায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সেরা দুইটি প্রতিষ্ঠানের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। তাছাড়া দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রকাশিত স্যুভেনির ও বার্ষিক মাদক প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করেন তিনি।
এর আগে, বেলুন উড়িয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন উপদেষ্টা। এরপর তিনি বিভিন্ন বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের অংশগ্রহণে নির্মিত মাদকবিরোধী স্টল পরিদর্শন করেন।
মন্তব্য