বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য অনেক বেশি ফি নেয়ার অভিযোগ ওঠে। এসব পরীক্ষার মূল্য ঠিক করে একটি তালিকা প্রত্যেক হাসপাতালে টানানোর ব্যাপারে আদালত ও সরকারের নির্দেশ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে বেশির ভাগেই এ তালিকা দেখা যায়নি।
পরীক্ষার ফি বেশি নেয়া নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অবহিত করে একটি চিঠি দেয়। সেখানে করোনাসহ ১০টি পরীক্ষার ফি নির্ধারণের জন্য তাগিদ দেয়া হয়। এ বিষয়ে একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মূল্য নির্ধারণ করে হাসপাতালে টানানোর নির্দেশ দেয়।
সে অনুযায়ী, গত ২১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। এতে বলা হয়, এসব পরীক্ষার মূল্য তালিকা হাসপাতালের দৃশ্যমান স্থানে টানাতে হবে।
গত ২৮ ডিসেম্বর অক্সিজেন ও করোনা সংক্রান্ত ১০টি পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করে দেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।
১৩ জানুয়ারি এ মূল্য তালিকা কার্যকর করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে পাঠানো হয়। ২১ জানুয়ারি জরুরি বিজ্ঞপ্তি আকারে মূল্য তালিকাটি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
রাজধানীর ছয়টি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে মাত্র একটিতে তালিকা টানানো পাওয়া গেছে। বাকিগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা মূল্য তালিকা বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে পারেননি।
ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে রোববার দুপুর পর্যন্ত মূল্য তালিকা টানানো দেখা যায়নি। এ বিষয়ে হাসপাতালটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা আজিজুল ইসলামের বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বক্তব্যের জন্য হাসপাতালের জনসংযোগ বিভাগে যোগাযোগ করতে বলেন।
হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা চৌধুরী মেহের-ই-খুদা (দ্বীপ) নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনা স্বাক্ষর হয়েছে ২১ জানুয়ারি। মাঝখানে দুই দিন শুক্র ও শনিবার হওয়ায় ওই তালিকা টানানো হয়নি। রোববার সকালবেলা আমরা ওই নির্দেশনা হাতে পেয়েছি।
‘এটা নিয়ে কাজ চলছে। আমরা আমাদের যে ব্যানার ডিজাইন আছে, সে অনুসারে যত দ্রুত সম্ভব তালিকা টানানোর ব্যবস্থা করব।’
এর আগে ল্যাবএইড হাসপাতালে এই প্রতিবেদক রোগীদের কাছ থেকে সঠিক মূল্য নেয়া হচ্ছে কি না তা যাচাই করতে কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশিত ১০টি টেস্টের ক্ষেত্রে বেঁধে দেয়া মূল্যই নিতে দেখা গেছে।
দুপুরে টেস্ট করতে আসা সামিরা নামে একজনের কাছে জানতে চাওয়া হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মূল্য তালিকা অনুসারে ওই হাসপাতালে মূল্য নেয়া হয়েছে কি না। তিনি বলেন, সেই মূল্যই রাখা হয়েছে। দুলাল নামের একজন রোগীও টেস্ট করতে একই মূল্য দিয়েছেন বলে জানান।
গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে রোববার দুপুর পর্যন্ত তালিকা টানানো দেখা যায়নি। তবে নিউজবাংলার প্রতিবেদক হাসপাতালটির মানবসম্পদ বিভাগে পৌঁছার পর মূল্য তালিকা টানানো নিয়ে তোড়জোর দেখা যায়। দৃশ্যমান স্থানে মূল্য তালিকা টানানোর বিষয়ে হাইকোর্ট ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশের কথা শুনেছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির উপপরিচালক ডা. এ টি এম নজরুল ইসলাম।
মিরপুর-১ থেকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে বাবার কম্পিউটেড টমোগ্রাফি (সিটি) স্ক্যান করতে এসেছেন শাহীন আহমেদ। তিনি জানান, সিটি স্ক্যানের জন্য হাসপাতালে পরিশোধ করতে হয়েছে ৪ হাজার টাকা।
সরকার নির্ধারিত মূল্য তালিকায় সিটি স্ক্যানের জন্য সর্বোচ্চ মূল্য স্থির করা হয়েছে ছয় হাজার টাকা। সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ মূল্যের থেকে কম নেয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন শাহীন আহমেদ।
তবে দৃশ্যমান স্থানে মূল্য তালিকা না থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন আব্দুর রাজ্জাক। চার বছর বয়সী ছেলের সিটি স্ক্যান করতে আসা এ ব্যক্তি বলেন, ‘আমি জানি না, কোন পরীক্ষার ফি কত। সরকার নির্ধারিত মূল্য তালিকা থাকলে আমি জানতে পারতাম, আমার কাছ থেকে কম না বেশি নিচ্ছে।’
হাসপাতালের মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, তাদের কাছে এমন কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে প্রতিবেদকের কাছে থাকা মূল্য তালিকা নিয়ে ফটোকপি করে রাখেন তিনি। এরপর হাসপাতালের নিচ তলায় নোটিশ বোর্ড ও দ্বিতীয় তলায় কাউন্টারের সামনে দুটি মূল্য তালিকা টানানো হয়।
সরকার নির্ধারিত মূল্য তালিকা অনুযায়ী ফি চালুর সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি বলে জানান হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. এ টি এম নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বোর্ড সভায় আজকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এরপর তা কার্যকর হবে।’
মগবাজারের আদ-দ্বীন হাসপাতালেও সরকার নির্ধারিত মূল্যতালিকা দৃশ্যমান স্থানে টানানো দেখা যায়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে বিভিন্ন টেস্ট করাচ্ছেন। তবে নিচে নির্মাণকাজ চলায় মূল্য তালিকা টানাতে পারেননি।
খিলগাঁও থেকে আদ দ্বীন হাসপাতালে এস ক্রিয়েটিনিন ও এস ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষা করাতে এসেছেন মঞ্জুরুল আহমেদ। তিনি জানান, এস ক্রিয়েটিনিনের জন্য ফি নেয়া হয়েছে ১৬০ টাকা। এস ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষার জন্য নেয়া হয়েছে ৭০০ টাকা, যা সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ মূল্য থেকে কম।
আদ দ্বীন হাসপাতালের এজিএম আবু সাইদ মোল্লা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা অনেক আগে থেকেই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মেনে ফি নিচ্ছি। তবে আমাদের কনস্ট্রাকশন চালু থাকায় তালিকা টানানো হয়নি। আমরা দ্রুতই টানানোর ব্যবস্থা করছি।’
ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েও হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী দৃশ্যমান স্থানে অক্সিজেনের ব্যবহার মূল্য ও ১০টি টেস্টের তালিকা দেখতে পাওয়া যায়নি। ওই তালিকার বিষয়ে অবগত রয়েছেন কি না জানতে চাইলে সেখানকার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কথা বলতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে আনোয়ার খান গ্রুপের রাজনৈতিক ও গণমাধ্যম সচিব সৈয়দ নাজমুল হক সৈকতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকার বাইরে আছি। আমি এ বিষয়ে এখনও জানি না। আমি আপনাকে পরে জেনে জানাচ্ছি।’
রোববার বিকেলে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো নির্দেশনা আমাদের হাতে আসেনি। আমরা পাইনি। এ কারণে আমাদের হাসপাতালে টাঙানোও হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘ডিসিশন হওয়ার পর একটি প্রক্রিয়া তো থাকেই।’
হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নতুন মূল্য তালিকা না পাওয়া গেলেও পুরনো একটি তালিকা টানানো পাওয়া গেছে। এতে তিনটি পরীক্ষার নির্ধারিত চার্জ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সরকার নির্ধারিত তালিকায় ১০টি পরীক্ষার মূল্য বলা আছে।
হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ থেকে জানানো হয়, তারা বেশি নিচ্ছেন না। কিন্তু তালিকার বিষয়ে তাদের কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
প্যাথলজি বিভাগের অফিস সহকারী আলী আজগর বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না। স্যারেরা বলতে পারবেন।’
হাসপাতালের পরিচালক ও উপপরিচালক কাউকে তখন উপস্থিত পাওয়া যায়নি।
রাজধানীতে একমাত্র স্কয়ার হাসপাতালে মূল্য তালিকা টানানো অবস্থায় পাওয়া যায় এবং নির্ধারিত মূল্যেই পরীক্ষা করাতে দেখা গেছে।
হাসপাতালের বিপণন বিভাগের কর্মকর্তা রেজা এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘হ্যাঁ, মূল্য তালিকা আমরা টানিয়েছি। আপনি চাইলে দেখতে পারেন।’
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ফরিদ হোসেন মিঞা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শনিবার হাইকোর্ট একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদেশ দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা ১০টি টেস্টের মূল্য নির্ধারণ করে তালিকা প্রকাশ করেছি। দৃশ্যমান স্থানে তালিকা টানিয়ে রাখারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যাতে জনসাধারণ সঠিক মূল্যে পরীক্ষা করাতে পারে।’
অধিকাংশ হাসপাতালে দৃশ্যমান স্থানে তালিকা না থাকা প্রসঙ্গে ফরিদ মিঞা বলেন, যারা এখনও তালিকা টানায়নি, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
দেশে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে আরও ১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। ১৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এই রোগী শনাক্ত হয়। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ৭৩ জনে। এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন করে করোনা আক্রান্ত ১০ জনসহ চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২৮ জনে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনের মৃত্যু হওয়ায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৯ হাজার ৫১৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে করোনাভাইরাস মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দুদিন করোনায় সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।
মন্তব্য