ভারত থেকে করোনাভাইরাসের টিকা কেনার বিষয়ে সমঝোতায় সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রটোকল মেনে এসব টিকা বিতরণ করা হবে। প্রথম দফায় আসা তিন কোটি টিকা বিনা মূল্যে পাবে দেশবাসী।
সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিষয়টিতে অনুমোদন দেয়া হয়।
ভার্চুয়াল বৈঠকে গণভবন প্রান্ত থেকে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। আর মন্ত্রিসভার সদস্যরা যুক্ত ছিলেন সচিবালয় প্রান্ত থেকে।
পরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
বৈঠকে আলোচনার বরাত দিয়ে সচিব জানান, অর্থ মন্ত্রণালয় করোনার টিকা কিনতে ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে।
বৈঠকে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবিলা ও টিকা সংগ্রহের সবশেষ অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সচিব জানান, মাস্ক না পরলে সর্বোচ্চ জরিমানা করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে জরিমানার পরিমাণ কত, তা নিশ্চিত করা হয়নি।
জরিমানার বিষয়টি এক সপ্তাহ দেখার পর কারাদণ্ড দেয়ার মতো কঠোর অবস্থানে যেতে পারে সরকার।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে মানুষের নিরাপদ জীবন নিশ্চিতে ৯৯৯ নীতিমালা-২০২০ এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে আনোয়ারুল ইসলাম জানান, মানুষের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
নীতিমালার আলোকে আলাদা ইউনিট গঠন করা হবে। পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দায়িত্বে থাকবেন।
নীতিমালা অনুযায়ী, তথ্য দেয়ার নামে প্রতারণা করলে দণ্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তি হবে। এটা দ্রুত বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:সিয়াম সাধনার মাস রমজানে অন্য অনেকের মতো রোজা রাখেন ডায়াবেটিস রোগীরা। এ ক্ষেত্রে মাসজুড়ে তাদের বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
রোজার মাসে ডায়াবেটিস রোগীরা কী করবেন, সে বিষয়ে একটি নির্দেশনা দিয়েছে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ ডায়াবেটিস প্রিভেনশন থ্রো রিলিজিয়াস লিডারস তথা ডিপিআরএল।
এটি বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের যৌথ প্রয়াস। এতে আর্থিক সহযোগিতা করেছে ওয়ার্ল্ড ডায়াবেটিস ফাউন্ডেশন।
ডিপিআরএলের নির্দেশনা
ডিপিআরএল বলেছে, শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় ডায়াবেটিস রোগী রোজা রাখতে পারবেন কি না, সুস্বাস্থ্যকর খাবার কীভাবে খেতে হবে, দৈনন্দিন কায়িক পরিশ্রম কীভাবে করতে হবে, কীভাবে ঘরে বসে নিজের রক্ত পরীক্ষা করতে হবে, খাবার বড়ি বা ইনসুলিনের মাত্রা কী হবে, শর্করা কমে গেলে ও অন্যান্য অসুস্থতা হলে কী করণীয়, এই বিষয়গুলো চিকিৎসকের কাছ থেকে বিশদভাবে জেনে নিতে হবে। এর বাইরেও ১০টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ডিপিআরএলের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে ডায়াবেটিসের ওষুধ ও রোজা ভেঙে ফেলার প্রস্তুতিতে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে।
১. সারা দিন রোজা রাখার পর এমন খাবার খেতে হবে, যাতে শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
২. ইফতারের সময় চিনিজাতীয় খাবার খাবেন না। চিনিুমক্ত পানীয় বেছে নিন। পানীয়র সঙ্গে চিনি মেশাবেন না। যদি মিষ্টি পানীয় পছন্দ করে থাকেন, তবে আর্টিফিশিয়াল (ডায়াবেটিসের চিনি) সু্ইটনার, যেমন: ক্যানডেরেল বা সুইটেক্স ব্যবহার করতে পারেন।
৩. ভাজা খাবার পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। যেমন: পরোটা, সমুচা, কাবাব ইত্যাদি।
৪. খাদ্যতালিকায় অবশ্যই ফলমূল, শাকসবজি, আঁশযুক্ত খাবার রাখুন।
৫. সেহরির খাবার শেষ সময়ের অল্প কিছু আগে খাওয়া বাঞ্ছনীয়। সেহরির সময় নামমাত্র পরিমাণে খাবার খেয়ে রোজা রাখা উচিত নয়। এমনটি করলে আপনার গ্লুকোজের সঠিক ভারসাম্য বজায় থাকবে না।
৬. রোজার দিনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অতিরিক্ত ব্যায়াম করার প্রয়োজন নেই, তবে দৈনন্দিন কাজকর্ম করা উচিত। রোজার সময় তারাবিহর নামাজে যে শারীরিক শ্রম হয়, নিয়মিত হাঁটার সমান হওয়ায় রোজার মধ্যে আলাদা করে হাঁটার প্রয়োজন নেই।
৭. রোজার দিনে বিকেলে দৈহিক পরিশ্রমের কাজ না করে বিশ্রাম নেয়া ভালো।
৮. রোজা রেখে ইনসুলিন নেয়া যাবে।
৯. ডায়াবেটিস রোগীর সকালের ওষুধ ইফতারের সময় খেতে হবে। রাতের ওষুধ খেতে হবে সেহরির সময় (রাতের ওষুধের ৫০ শতাংশ বা অর্ধেক কমিয়ে সেহরির সময় খেতে হবে)। মুখে খাবার ওষুধ ও ইনসুলিনের মাত্রা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঠিক করে নিতে হবে এবং তা অবশ্যই রোজার আগেই করতে হবে।
১০. নিম্নের বিশেষ অবস্থায় রোজা ভেঙে ফেলতে হতে পারে।
(ক) রক্তের গ্লুকোজ ৭০ মিগ্রা/ডিএল (৩.৯ মিমো/লি)-এর কম হলে
(খ) রক্তের গ্লুকোজ ৩০০ মিগ্রা/ডিএল (১৬.৭ মিমো/লি.)-এর বেশি হলে
(গ) যেকোনো অসুস্থতায়
আরও পড়ুন:সিয়াম সাধনার মাস রমজানে ভোররাতে সেহরি খেয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার বর্জন করেন মুসলিমরা। এ সময়ে পাকস্থলীসহ শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিশ্রাম পায়। এতে করে শরীরে নানাবিধ ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
রোজার স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন উপকারিতার কথা এক ভিডিওতে তুলে ধরেছেন মনোদৈহিক ও জীবনযাপনবিষয়ক রোগের থেরাপিস্ট এবং কোয়ান্টাম হার্ট ক্লাবের কোঅর্ডিনেটর ডা. মনিরুজ্জামান। পরামর্শগুলো তার ভাষায় উপস্থাপন করা হলো নিউজবাংলার পাঠকদের সামনে।
শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিশ্রাম
রমজান আসল, রমজান চলে গেল। ৩০টি রোজা আমি রাখলামও। ৩০টি রোজার পরেও আমার ওজনের একটুও কম-বেশি হলো না। এইটুকু খোলা চোখে বলে দেয়া যায়, রোজা থেকে আমি কোনো কিছু ফায়দা নিতে পারলাম না। আমি ব্যর্থ হয়েছি রোজার মূল উদ্দেশ্য অর্জন করতে। বিজ্ঞান কী বলে?
সর্বপ্রথম ১৯৯৪ সালে মরক্কোর ক্যাসাব্লাঙ্কা শহরে সারা বিশ্ব থেকে বিজ্ঞানীরা একত্রিত হয়ে ৫০টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র তারা উপস্থাপন করেন। সেই সম্মেলনের নাম ছিল হেলথ অ্যান্ড রামাদান; সুস্থতা এবং রমজান। সেই সেমিনারে বক্তারা বলেন, রমজানের ৩০টি রোজা আমাদের শরীরের জন্য একটা বিশাল অপরচুনিটি; একটা বিশাল সুযোগ। তারা এভাবে তুলনা করে বলছেন, একটা জটিল মেশিন থেকে যদি সারা বছর পূর্ণ সার্ভিস চান, তাহলে অবশ্যই মাঝে মাঝে তাকে কিছু সময়ের জন্য হলেও তাকে বিশ্রামে রাখতে হবে। তো আমাদের শরীরটাও একটা মেশিন। এর মধ্যে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র রয়েছে; হার্ট, লাং, লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক, পরিপাকতন্ত্র…কত ধরনের হার্ড ডিস্ক। এইসব মেশিনপত্র থেকে যদি আপনি সারা বছর পুরো সার্ভিস চান, তাহলে তাকে বছরের একটি মাস বিশ্রাম দিতে হবে। তাহলে বাকি ১১টা মাস সে পূর্ণোদ্যমে কাজ করে আপনাকে পূর্ণ সাপোর্ট দিতে পারবে। আপনি তার থেকে পুরো আউটপুট পাবেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আপনি যদি সঠিক পদ্ধতিতে রোজা রাখতে পারেন, তাহলে অবশ্যই আপনার বাড়তি ওজন কমবে। বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেলে আপনি একজন স্লিম, স্মার্ট মানুষে রূপান্তরিত হবেন। আর যদি রোজার পরেও আপনার বাড়তি ওজন থেকে যায়, এইটুকু পরিষ্কারভাবে বলা যায়, যে পদ্ধতিতে রোজা রাখার কথা ছিল, সেই পদ্ধতিতে রোজা রাখতে পারেন নাই; রোজা রাখা হয় নাই। ফলে আপনি আপনার ওজন কমাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
মস্তিষ্ককে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা
আমেরিকার সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের (এনআইএইচ) একটি শাখা হচ্ছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন এজিং। সেখানকার প্রখ্যাত নিউরোসায়েন্টিস্ট ড. মার্ক ম্যাটসন এবং তার সহযোগীরা দীর্ঘ গবেষণা করেন ফাস্টিং নিয়ে। এরপর তারা পাবলিশ করেন এর ফলাফল। সেখানে তারা পরিষ্কার করে বলছেন যে, একজন মানুষ যদি মাঝে মাঝেই ফাস্টিং থাকে, নিজেকে সকল ধরনের খাবার এবং পানীয় থেকে বিরত রাখে, তবে তিনি তার ব্রেনের যে এজিং, সে এজিংটাকে প্রতিরোধ করতে পারবে। ব্রেনকে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবে এবং বৃদ্ধ বয়সে এখন যে রোগগুলো খুব দেখা যাচ্ছে, বৃদ্ধ বয়সে এসে আমাদের স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং যেসব রোগগুলোতে স্মৃতি হারিয়ে যাচ্ছে, সেই রোগগুলোকে বলা হয় আলঝেইমারস, ডিমেনশিয়া, হান্টিংটন, পারকিনসনের মতো রোগগুলো আপনি প্রতিরোধ করতে পারবেন।
রক্ত পরিশোধন
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের রক্তে নানা রকম বর্জ্য পদার্থ এবং ক্ষতিকর পদার্থ ঘুরে বেড়ায়। এই রক্তকে পরিশোধন করার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে রোজা।
কোষ পরিষ্কার
আমাদের শরীরে ৩০ ট্রিলিয়ন সেল বা কোষ আছে। এই কোষের ভিতরে প্রতিনিয়ত নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তৈরি হচ্ছে বিপাকক্রিয়ার ফলে এবং নানা ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফলে। শক্তি তৈরি হচ্ছে, হরমোন তৈরি হচ্ছে, এনজাইম তৈরি হচ্ছে। এগুলো তৈরির পাশাপাশি কিছু বর্জ্য পদার্থ বা টক্সিন তৈরি হচ্ছে। এইসব বর্জ্য পদার্থ বা টক্সিন দূর করার অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে ফাস্টিং বা রোজা। এটা নিয়ে গবেষণা করে যিনি নোবেল প্রাইজ পান, তিনি হচ্ছেন ড. ইয়োশিনোরি ওহসুমি। তিনিসহ অন্য বিজ্ঞানীরা এটার নাম দিয়েছেন অটোফেজি। এটি (অটোফেজি) যখন ১২ ঘণ্টা থেকে ১৬ ঘণ্টা হবে, এটি চমৎকার কাজ করবে। এটি যখন ১৮ ঘণ্টা, ২০ ঘণ্টা, ২২ ঘণ্টা, ২৪ ঘণ্টা হবে এক্সিলেন্ট।
টাইপ টু ডায়াবেটিস রোধে সহায়ক
আমরা জানি টাইপ টু ডায়াবেটিসের মূল কারণ হচ্ছে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। সম্প্রতি দুটো গবেষণা বলছে, টাইপ টু ডায়াবেটিস রিভার্স করতে চাইলে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন ২৪ ঘণ্টার ফাস্টিং করতে হবে। ২৪ ঘণ্টার ফাস্টিং কেউ যদি সপ্তাহে তিন দিন করেন, তবে তিনি টাইপ টু ডায়াবেটিস নিরাময় করতে সক্ষম হবেন। সেই সময় তার স্থূলতাও তার শরীর থেকে চলে যাবে।
দীর্ঘায়ু হওয়ায় সহায়তা
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাঝে মাঝে রোজা, উপবাস বা ফাস্টিং একজন মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করে তাকে দীর্ঘজীবী করে। এই যে দেখেন না, হজরত শাহজালাল (র.) ১৫০ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনি স্বল্পাহারি ছিলেন এবং প্রায়ই রোজা রাখতেন। তিনি এক বেলা খেতেন। এই যে ঢাকা থেকে কাছে সোনারগাঁয়ে ছিলেন বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী। ১৬০ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনিও স্বল্পাহারি ছিলেন। প্রায়ই উপবাস করতেন।
আমাদের প্রিয় মহানবী (সা.) সপ্তাহে দুই দিন রোজা রাখতেন; সোমবার এবং বৃহস্পতিবার। এ ছাড়াও তিনি প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে রোজা রাখতেন।
রোজা রাখলে কী ঘটে শরীরে
রোজায় দীর্ঘ সময় পাকস্থলী খালি থাকায় নানা ধরনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় শরীর। ধাপে ধাপে সেটি কীভাবে হয়, তা প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে সুস্থতা নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট মাইন্ডবডিগ্রিন ডটকম।
প্রথম চার ঘণ্টা
খাওয়ার পর প্রথম চার ঘণ্টায় অভ্যন্তরীণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সচল রাখার পাশাপাশি কোষ ও টিস্যুর বিকাশ ঘটায় শরীর। এ সময়ে দরকারি হরমোন ইনসুলিন উৎপন্ন করে অগ্ন্যাশয়। এর মধ্য দিয়ে রক্তে নিঃসৃত গ্লুকোজ ব্যবহারের পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে ব্যবহারের জন্য কোষে বাড়তি শক্তিও মজুত করা যায়।
চার থেকে ১৬ ঘণ্টা
দেশভেদে সেহরি থেকে ইফতারের মধ্যকার সময়ে তারতম্য হয়। কোনো কোনো দেশে ১৬ ঘণ্টার বেশি সময় উপবাস থাকতে হয় রোজাদারদের।
১৬ ঘণ্টার মতো যারা রোজা রাখবেন, তাদের শারীরিক ক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে চতুর্থ ঘণ্টা থেকে। এ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় শক্তি জোগাতে সঞ্চিত অতিরিক্ত পুষ্টি ব্যবহার করা শুরু করে শরীর।
কোষে থাকা শক্তি ফুরিয়ে গেলে শরীর নজর দেয় সঞ্চিত চর্বি বা ফ্যাটে। শরীর থেকে চর্বি নির্গমন এবং শক্তি জোগাতে এগুলো পুড়িয়ে ফেলার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘কিটন বডিজ ফর এনার্জি’। এটি সাধারণত ঘটে ১৬তম ঘণ্টার কাছাকাছি সময়ে।
শরীর সঞ্চিত চর্বি পোড়ানোর পর্যায়ে কখন যাবে, সেটি নির্ভর করে রোজা বা উপবাস শুরুর আগে গ্রহণ করা খাদ্যের ধরনের ওপর। কেউ প্রচুর পরিমাণে শর্করা ও শ্বেতসার খাবার খেলে এ পর্যায় দেরিতে শুরু হবে। বিপরীতে কেউ চর্বি ও প্রোটিনজাতীয় খাবার খেলে আগেই সে পর্যায়ে পৌঁছাবে।
রোজা বা উপবাসের সবচেয়ে শক্তিশালী বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি অটোফেজি। ১৬ ঘণ্টার আশপাশের সময়ে এটি শুরু হয়।
অটোফেজি হলো এমন এক প্রক্রিয়া যার মধ্য দিয়ে কোষে থাকা মৃত বা ক্ষতিগ্রস্ত বস্তুগুলো সরিয়ে দেয় শরীর। এসব বস্তু বার্ধক্য, ক্যানসার ও দীর্ঘমেয়াদি রোগের কারণ হতে পারে।
১৬ থেকে ২৪ ঘণ্টা
রোজার সময় ১৬ ঘণ্টার বেশি হলে কোষে থাকা গ্লুকোজ ও লিভারে থাকা গ্লাইকোজেন এবং পেশিগুলো দ্রুত ক্ষীণ হতে থাকে। ফলে শক্তি জোগাতে জমানো চর্বি গলাতে হয় শরীরকে।
এ পর্যায়ে এসে শরীরে শক্তির চাহিদার অনেক বেশি পরিবর্তন দেখা যায় না। রোজাদার বা উপবাসে থাকা ব্যক্তি তখনও জেগে থাকা, দৈনন্দিন কাজ করা, লোকজনের সঙ্গে লেনদেন করা কিংবা ব্যায়াম করতে পারেন। এ কারণে উল্লেখযোগ্য মাত্রার শক্তির দরকার হতে পারে।
১৬ ঘণ্টার পরে শরীরে এএমপিকে নামের আরেকটি রাসায়নিক উৎপন্ন হয়। এটি শরীরজুড়ে অটোফেজি আরও বাড়িয়ে দেয়।
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সাংসদের সহধর্মিণী সালমা ওসমান লিপি ও ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন বৃহস্পতিবার এ খবর জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে শামীম ওসমানের সুস্থতা কামনায় পরিবারের পক্ষ থেকে সবার দোয়া কামনা করা হয়েছে।
অয়ন নিউজবাংলাকে জানান, তার বাবা (শামীম ওসমান) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি সবার কাছে তার বাবার দ্রুত সুস্থতা কামনায় দোয়া চেয়েছেন৷
এর আগে সালমা ওসমান লিপি ফেসবুকে লিখেন, ‘সংসদ সদস্য শামীম ওসমান গতকাল (বুধবার) রাত থেকে অসুস্থ। তিনি বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আপনারা সবাই ওনার দ্রুত সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন। সবার কাছে দোয়া কামনা করছি।
শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম নিউজবাংলাকে জানান, ‘খাদ্য গ্রহণে অনিয়ম, ঠিকমতো না ঘুমানোর কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। তিনি এখন অনেকটা সুস্থ বোধ করছেন।’
নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফেরদৌস জুয়েল জানান, ‘বর্তমানে শামীম ওসমান শারীরিকভাবে অনেকটা ভালো আছেন। তিনি এখনও হাসপাতালে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে আছেন৷’
আরও পড়ুন:সিয়াম সাধনার মাস রমজানে ভোররাতে সেহরি খেয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকেন মুসলিমরা। দীর্ঘ এ সময়ে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ না করায় পাকস্থলীসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিশ্রাম পায়। এতে শরীরে নানাবিধ ইতিবাচক পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়, কিন্তু সেহরি ও ইফতারে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণসহ ভুল জীবনাচরণের কারণে অনেকে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন।
রমজান মাসজুড়ে সুস্থ থাকতে করণীয় ও বর্জনীয়গুলো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তুলে ধরেছে বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান)। সেগুলো নিউজবাংলার পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করা হলো।
সেহরিতে করণীয়
১. সামর্থ্য অনুযায়ী আঁশজাতীয় খাবার (লাল চাল, লাল আটা, শাকসবজি, বিচিজাতীয় শস্য তথা শিমের বিচি, মটরশুটি) গ্রহণ করা প্রয়োজন। আঁশজাতীয় খাবার ধীরে হজম হয়। ফলে ক্ষুধা অনুভব কম হয় এবং পর্যাপ্ত শক্তি পাওয়া যায়।
২. বেশি খাওয়ার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। ভাতের পরিমাণ কমিয়ে শাকসবজি এবং মাছ, মাংস ও অন্যান্য তরকারি গ্রহণ করা উচিত হবে।
৩. প্রতিদিনের আমিষের চাহিদা পূরণ ও দেহের ক্ষতিপূরণে ছোট-বড় মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, দুধ ও দুধজাতীয় খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন।
৪. রোজায় পানিশূন্যতা রোধে সহজে হজম হয় এমন শাকসবজিকে (যেমন: লাউ, ঝিঙে, পটল, চিচিঙ্গা, চালকুমড়া) অগ্রাধিকার দেয়া যেতে পারে।
৫. সেহরি খাওয়ার পর টক বা মিষ্টি জাতীয় ফল রাখা ভালো।
সেহরিতে বর্জনীয়
১. সেহরিতে চা ও কফি পান না করাই ভালো। এগুলোতে থাকা ক্যাফেইন তৃষ্ণার সৃষ্টি করে, অ্যাসিডিটি উৎপন্ন করে এবং খাদ্যের পুষ্টি পরিশোষণে বাধা দেয়।
২. অতিরিক্ত তেল, মসলা ও চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা বাঞ্ছনীয়।
৩. তেহারি, খিচুড়ি, বিরিয়ানির মতো খাবার সেহরিতে না খাওয়াই ভালো। এসব খাবার হজম করতে দেহকে প্রচুর পানি খরচ করতে হয়, যা রোজাদারকে তৃষ্ণার্ত করে।
ইফতারে করণীয়
১. ইফতারে পানীয় হিসেবে ঘরে তৈরি তাজা ফলের শরবত, ডাবের পানি, তোকমা, ইসবগুল প্রভৃতি গ্রহণ করা যেতে পারে, যা দেহের পানি ও লবণের (ইলেকট্রোলাইট) ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়তা করবে ও কোষ্ঠ্যকাঠিন্য প্রতিরোধে কাজ করবে।
২. যেকোনো মিষ্টি ফল (যেমন: খেজুর, তরমুজ, কলা প্রভৃতি) গ্রহণ করা যেতে পারে, যা দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদা পূরণ করতে সহায়তা করবে।
৩. পুষ্টিসমৃদ্ধ ও সহজে হজম হয় এমন খাবার ইফতারে রাখা যেতে পারে। যেমন: সিদ্ধ ছোলা, দই-চিড়া, সবজি খিচুড়ি, বিভিন্ন ধরনের বাদাম এবং শসা-টমেটোর মিশ্রণে তৈরি সালাদ।
৪. ইফতারে আমিষের চাহিদা পূরণের জন্য ডিম বা ডিমের তৈরি খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে।
৫. ইফতারে খাবার খেতে হবে ধীরে ও ভালোভাবে চিবিয়ে, যা খাবার সহজে হজমে সহায়ক হবে।
ইফতারে বর্জনীয়
১. অধিক মসলা ও কৃত্রিম রংযুক্ত খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চললে ইফতার পরবর্তী বদহজম, অস্বস্তি ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
২. ইফতারে অতিরিক্ত ভাজাপোড়া বা গ্রিল করা খাবার, যেমন: মাংসের ফ্রাই, গ্রিল বা শিক কাবাব পরিহার করা প্রয়োজন। এসব খাবারে তৈরি হওয়া ট্রান্সফ্যাট হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী অসংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ।
৩. অতিরিক্ত লবণ ও চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় (যেমন: চিপস, জিলাপি, কার্বোনেটেড সফট ড্রিংকস, শিঙাড়া, সমুচা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, কেক-পেস্ট্রি, পিৎজা, বার্গারসহ যাবতীয় জাংক ফুড) এড়িয়ে চলা ভালো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার গ্রহণের জন্য ২০৩০ সাল নাগাদ ৭০ লাখ মানুষ হৃদরোগ বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে।
ইফতার ও সেহরির মধ্যবর্তী সময়ে করণীয়
১. দেহের পানির চাহিদা পূরণে ইফতার ও সেহরির মাঝের সময়ে আড়াই থেকে তিন লিটার বা ৬ থেকে ১৪ গ্লাস নিরাপদ পানি পান করতে হবে। রোজায় পর্যাপ্ত পানি পান করলে মাথাব্যথা, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়েও সহায়ক হবে।
ইফতার ও সেহরির মধ্যবর্তী সময়ে বর্জনীয়
১. রাতের খাবার গ্রহণের পরে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমাতে যাওয়া পরিহার করতে হবে।
২. সেহরি পর্যন্ত রাত জেগে থাকা পরিহার করুন। পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিশ্চিত করুন।
আরও পড়ুন:সিয়াম সাধনার মাস রমজানে ভোররাতে সেহরি খেয়ে দিনভর খাদ্য ও পানীয় বর্জন করে সংযম পালন করবেন বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিমরা। এ সময়টা যেহেতু অনেক লম্বা, সে ক্ষেত্রে কী খেলে দিনটা ভালো কাটবে, তা জানা জরুরি।
সেহরিতে কোন ধরনের খাবার গ্রহণ ও কোনগুলো বর্জন করা উচিত, তা এক ভিডিওতে জানিয়েছেন মনোদৈহিক ও জীবনযাপনবিষয়ক রোগের থেরাপিস্ট এবং কোয়ান্টাম হার্ট ক্লাবের কোঅর্ডিনেটর ডা. মনিরুজ্জামান। পরামর্শগুলো তার ভাষায় উপস্থাপন করা হলো নিউজবাংলার পাঠকদের সামনে।
অতিভোজন নয়
সেহরিতে উঠে আমাদের প্রথম মনে হয়, ওরে সর্বনাশ! সারা দিন কিছু খাব না! একটু বেশি করে খেয়ে নিই। না হলে না জানি কত কষ্ট হবে। অতএব গলা পর্যন্ত আমরা খেয়ে ফেলি। ভাত বা রুটি, সাথে প্রচুর শাকসবজি থাকে। মাছ-মাংস থাকে, ডিম থাকে, এটা সেটা থাকে, ভাজাপোড়া থাকে। শরীরের প্রথম কষ্ট শুরু করলেন আপনি এই পুরো ক্ষতিকর খাবার দিয়ে।
খাদ্যতালিকা
তো সেহরিতে কী করবেন? সেহরিতে আপনি এমন খাবার খাবেন যেন সারা দিন আপনি ঝরঝরে থাকতে পারেন, তরতরে থাকতে পারেন এবং প্রাণবন্ত থাকেন। সারা দিন পিপাসার কষ্ট যদি আপন না পেতে চান, সারা দিন যদি ঝরঝরে থাকতে চান, তাহলে সেহরিতে আমিষ বা প্রোটিন খাওয়া বন্ধ করুন। মাছ, মাংস, ডিম বন্ধ রাখুন। খাবেন এগুলো; ইফতারে খাবেন।
তাহলে কী খাবেন সেহরিতে আর কী বর্জন করবেন? কোনো রকম ভাজাপোড়া, ফাস্ট ফুড এগুলো খাবেন না। তাহলে সেহরিতে আমরা কী খাব?
খুব হালকা খাবার। স্টোমাকের (পাকস্থলি) জন্য সফট, দেহের জন্য সফট এবং আপনার জন্য হেলদি। কী খাবার? আপনি অল্প একটু ভাত নেন এবং সবজি নেন। ব্যস। তারপর পানি পান করুন। হয়ে গেল আপনার সেহরি অথবা আপনি দুই-তিনটা খেজুর নিন। একটা বা দুটো কলা নিন। ব্যস। তারপর পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
এর বাইরে এক মুঠো বা দুই মুঠো চিড়া ভিজিয়ে রাখুন। এর সাথে টক দই দিয়ে, খেজুরের গুড় দিয়ে মিশিয়ে চমৎকারভাবে চিড়া, টক দই খেয়ে ফেলুন।
সারা বছর যেন আমার ইমিউন সিস্টেম (রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা) তরতাজা থাকে, ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ যেন করতে পারি, সেই জন্য সেহরিতে প্রত্যেক রাত্রে এক কোয়া কাঁচা রসুন এবং আদা চা চামচ কালোজিরা খাবারের সাথে মিশিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলেন। আর পর্যাপ্ত পানি পান করুন সাথে।
আপনার যদি অনেক ওজন বেশি থাকে, আপনার যদি টাইপ টু ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে আপনি কী করতে পারেন? ২৪ ঘণ্টার ফাস্টিং আপনি রাখতে পারেন সপ্তাহে তিন দিন। তাহলে পুরো রমজানজুড়ে ১২ কে ১৪ দিন আপনি ২৪ ঘণ্টার ফাস্টিং। কীভাবে? সেই ক্ষেত্রে আপনি সেহরি করবেন শুধু পানি দিয়ে। পর্যাপ্ত পানি পান করবেন। এটাই হলো আপনার জন্য সেহরি, আবার ইফতার। পরের দিন ভোররাত্রে পানি, আবার ইফতার। এই ২৪ ঘণ্টা ফাস্টিং সপ্তাহে তিন দিন। পরপর তিন দিন। আবার চার দিন নরমালি। নরমাল সেহরি ইফতার। আবার পরপর তিন দিন ২৪ ঘণ্টার ফাস্টিং।
সম্প্রতি দুটি গবেষণা বলছে, সপ্তাহে তিন দিন ২৪ ঘণ্টার ফাস্টিং আপনার ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স রিভার্স করে আপনার টাইপ টু ডায়াবেটিস নিরাময় করতে সক্ষম হবে।
আরও পড়ুন:চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। এ মাসে অন্য অনেকের মতো ডায়াবেটিস রোগীরাও রোজা রাখবেন। সে ক্ষেত্রে তাদের করণীয় ও বর্জনীয়গুলো এক ভিডিওতে তুলে ধরেছেন ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাকলায়েন রাসেল। পরামর্শগুলো তার ভাষায় পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো।
প্রস্তুতি
সবাই যারা সামর্থ্যবান মুসলিম, যাদের ওপর রোজা ফরজ হয়েছে, আমরা সবাই আসলে চাই এ সময়ে রোজা রেখে ওপরওয়ালার নৈকট্য লাভের যে সুযোগ, সেটা থেকে যেন আমরা কেউই বঞ্চিত না হই। এরই অংশ হিসেবে আমরা আসলে প্রতি বছর রোজা রাখি; রোজা রাখছি আমরা অনেকেই, কিন্তু যারা ডায়াবেটিস রোগী, তাদের মধ্যে অনেকগুলো প্রস্তুতির বিষয় আছে। তাদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অনেকগুলো গাইডলাইন প্রয়োজন।
যেমন: প্রথম কথাই হচ্ছে আপনি রোজা রাখবেন রমজান মাসে টানা এক মাস। আপনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী। প্রস্তুতি শুরু করবেন কখন? উত্তরটা কিন্তু তিন মাস আগে। সেটা কী? আমি রোজা শুরু করার আগে আমার চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নেব যে, ‘আমি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত একজন রোগী। আমি রোজা রাখব। আমার জন্য কী কী উপদেশ আছে?’
উনি (চিকিৎসক) তখন আপনাকে চেকআপ করবেন এবং আপনার রেকর্ডগুলো দেখবেন, আপনার ডায়াবেটিস লেভেলটা ফ্লাকচুয়েট করে কি না, ওপরে-নিচে হয় কি না। আপনার কিডনিটা ভালো আছে কি না, আপনার অন্য কোনো রোগ আছে কি না। এগুলো যদি দেখে মনে হয় আপনি স্ট্যাবল (স্থিতিশীল) আছেন, সে ক্ষেত্রে আপনাকে কিন্তু উপারা সাজেস্ট করবেন যে, ‘হ্যাঁ, আপনি রোজা রাখেন। সে ক্ষেত্রে আপনার কোনো সমস্যা নাই।’
এখন যেহেতু হাতে আর সময় নেই, এই ভিডিওটি প্রথমবার যারা দেখলেন, তাদের হাতে মাত্র কয়েক দিন, কয়েক ঘণ্টা বাকি আছে। আমি তাদের ক্ষেত্রে বলব, আপনি তো জানেন আপনার রিসেন্টলি ডাটাগুলো কেমন, আপনার ডায়াবেটিস কেমন থাকছে, কমছে না বাড়ছে, ফ্লাকচুয়েশনটা কেমন হয়, এটা আপনি যদি মাথায় রাখেন, আমার মনে হয় টেনশন করার কোনো কারণ নাই।
সেহরি
এখন আসেন যে, কিছু টিপস দিব, খুব গভীরে যাব না। একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি মনে করেন যে, আমি সুস্থ আছি, আমার সব ঠিক আছে, আমি রাখতে চাই, কোনো বাধা নেই। আপনার যদি অন্য কোনো খারাপ কন্ডিশন না থাকে, রাখতে পারেন। রাখার ক্ষেত্রে যদি আমরা সেহরির কথা চিন্তা করি, সেহরিতে কী খাব? একদম সরাসরি কথা।
সোজা কথা হচ্ছে আপনি সেহরিতে যে খাবারটি গ্রহণ করবেন, আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যে, আমি ১৪/১৫ ঘণ্টা একেবারেই না খেয়ে থাকব। তার মানে সেহরির সময় আমি এমন একটা খাবার গ্রহণ করব, যেটা মোটামুটি আমাকে লম্বা সময় এনার্জি দেয়।
সে ক্ষেত্রে কিন্তু দেখবেন যে, ভাতের থেকে রুটি কিন্তু বেশি সময় মানুষের শরীরে শক্তির জোগান দেয়। ভাত কিন্তু খুব দ্রুত শক্তি দেয় এবং খুব দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যায়। সে কারণে আমরা ভাতকে খুব একটা সাজেস্ট করি না।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আমরা সেহরির ক্ষেত্রে বলি আপনি একটু অপেক্ষা করেন। একেবারে আজান হওয়ার, অর্থাৎ সেহরির সময় শেষ হওয়ার একেবারে শেষ মুহূর্তে গিয়ে খাবেন। তাহলে আপনার জন্য সারা দিন রোজা রাখতে কষ্ট হবে না। তখন ডিউরেশনটা কম হবে। অনেকে রাত একটা-দুইটার মধ্যে খেয়ে ফেলেন। এটা ঠিক না। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিস রোগী।
সে ক্ষেত্রে খাবারের আইটেমের ক্ষেত্রে যদি সকালবেলা প্রবলেম না হয়, তারা যদি ফলমূল রাখতে পারেন, যদি খেজুর রাখেন, রুটিটা রাখেন, আমার মনে হয় যে, তিনি অনেক বেশি পুষ্টি বা এনার্জি নেয়ার একটা অবস্থায় থাকবেন।
সারা দিন না খেয়ে থাকব, সে জন্য কোনো অবস্থাতেই পেট ভরে খাব, চান্স পেয়েছি খেয়ে নিই, এমনটা যেন না হয়। তাতে দেখা যাবে যে, আপনার সকালবেলা পেট খারাপ হবে। তখন কিন্তু আপনি রোজাটাও রাখতে পারবেন না; প্রবলেমটা আরও বাড়বে। এমনিতেই অনেকের পেট খারাপ হয়। কারণ খাবারের প্যাটার্নটা চেঞ্জ হচ্ছে।
সকালবেলা আপনি ঘুম থেকে উঠবেন। সারা দিন থাকলেন। ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ভয় কখন? ভয়টা হচ্ছে বিকেলের দিকে।
তার কিন্তু হঠাৎ করে হাইপো (রক্তে শর্করা কমে যাওয়া) হয়ে যেতে পারে। অনেক কমে যেতে পারে। কমে গিয়ে তিনি কিন্তু অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। যদি মাথা ঘোরায়, চোখে অন্ধকার দেখেন, পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়, ঘাম হয়, এ সময় তো আল্লাহর বিধানই আছে। রোজা না রাখা আপনার জন্য সেই সময় দায়িত্ব। সেটা আপনি মেনে নিলেন।
টেস্ট
এখন সারা দিনে আপনি রোজা রাখছেন। মনে রাখতে হবে যে, আমি যে রোজা রাখলাম, আমার এখন তাহলে করণীয়টা কী? আমার তো পরীক্ষা করতে হবে। গ্লুকোজ টেস্ট করতে হবে। আমি রোজা রেখেছি। আমি কি পারব? এটার জন্য বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি অনেক আগেই সমাধান দিয়েছে। তারা বিশ্বের আলেম, বাংলাদেশের আলেমদের সাথে কথা বলে একটা চুক্তিনামা করেছে এবং তারা প্রমাণ করে দেখিয়েছে যে, ডায়াবেটিস রোগী যদি শুধু নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য ব্লাড টেস্ট করে, রক্ত গড়িয়ে পড়ে না, তাহলে কিন্তু রোজার ক্ষতি হয় না। ফলে আমাদের সম্মিলিত আলেম সমাজের যে মতামত, সেটা অনুযায়ী কিন্তু যদি আপনার প্রয়োজন হয় জীবন রক্ষার্থে এবং একই সঙ্গে রোজা রাখার স্বার্থে, টেস্ট করতে পারেন। তাতে কোনো ক্ষতি নাই।
ইফতার
ইফতারের সময় আপনি কীভাবে কী করবেন? এটা জটিলতর একটা বিষয় যে, ইফতারের সময় তো আমার একটু ভাজাপোড়া না খেলে হবে না। আবার ওষুধ নিতে হবে। আবার একটু শরবত না খেলে কী রকম হয়? বলা হয়ে থাকে, যারা ডায়াবেটিস রোগী চেষ্টা করেন, যত কমসংখ্যক, একেবারে না খেলে আরও ভালো। ভাজাপোড়াটা অ্যাভয়েড করাটা সবচেয়ে ভালো।
যদি শরবতের দিকে আসি, চিনির শরবত কোনো দরকারই নাই। আপনি যদি ডাব একটা ম্যানেজ করতে পারেন, খুবই ভালো। যদি ডাব ম্যানেজ করতে না পারেন, একটু ফ্রুটগুলোকে জুস করে নিলেন, খুব বেশি সেখানে চিনি যোগ করলেন না, তাহলে কিন্তু আপনি অনেকটা ভালো খাবার গ্রহণ করলেন। চেষ্টা করবেন যে, ইফতারের পরপর কিছুটা বিশ্রাম নিতে।
রাতের খাবার
এখন নেক্সট কোশ্চেন আসে যে, আমি রাতের খাবারটা খাব কি খাব না? এটা আপনার ওপর নির্ভর করে। আপনি যদি মনে করেন যে, আমি ভালোভাবে ইফতার করেছি, আমি আর খেতে চাই না, ওকে; নো প্রবলেম। এটা নিয়ে টেনশন করার কোনো দরকার নাই।
এরপর কোশ্চেন আসে যে, ডায়াবেটিস রোগীর তো একটা হাইপো হওয়ার ভয়। আরেকটা কী ভয়? আরেকটা ভয় হচ্ছে তার শরীরে পানিশূন্যতা হতে পারে। সারা দিন তিনি পানি গ্রহণ করেননি। সেই ক্ষেত্রে তাদের জন্য টিপস হচ্ছে আপনি ইফতারের পর থেকে একবারে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় পানি গ্রহণ করবেন। তাতে কী হবে? আপনার ডিহাইড্রেশনটা ফিলআপ (পানিশূন্যতার ঘাটতি পূরণ) হয়ে যাবে এবং সকালবেলা (ভোররাত) আপনি যখন সেহরি করতে আবার উঠবেন, তার আগে কিন্তু টোটালি ফিলআপ। আপনি একদম ফিল ফ্রি।
ব্যায়াম
এবার আসল ব্যায়ামের কথা। সব মানুষেরই ব্যায়ামের প্রয়োজন। ডায়াবেটিস রোগীরা বাধ্য হন ব্যায়াম করতে। এ কারণে আমাদের শ্রদ্ধেয় ইব্রাহিম স্যার বলতেন, ‘আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে। তার মানে আপনি ভাগ্যবান। কারণ আপনার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে গেল। কারণ সাধারণ মানুষ নিয়ম মানতে চায় না। ডায়াবেটিস হলে তখন সবাই নিয়ম মানে। তার আয়ু আল্লাহ হয়তো বা বাড়িয়ে দেন অথবা যতদিন তার আয়ু আছে, তিনি সুস্থ থাকেন।’ সো এটা এক দিক থেকে গুড নিউজ, ডায়াবেটিস আছে।
ব্যায়ামের ক্ষেত্রে যেটা করণীয়, সেটি হলো যে আপনার ব্যায়ামের সময় মনে রাখতে হবে যে, আমি অবশ্যই রাতের দিকে ব্যায়াম আমি করতে পারি, কিন্তু যদি আপনি চিন্তা করেন আমি ২০ রাকাত নামাজ, তারাবির নামাজ একেবারে ২০ রাকাতই প্রতিদিন পড়ব, কোনো দরকার নেই তাহলে (বাড়তি ব্যায়ামের)।
ওইটাই বড় ব্যায়াম। নতুন করে ব্যায়ামের আর কোনো প্রয়োজন নেই। সো যিনি ২০ রাকাত নামাজ পড়ছেন, তার কোনো দরকার নাই আলাদা করে ব্যায়াম করার।
কেউ যদি না মনে করেন যে, না আমার আলাদা করে করতেই হবে, তাহলে ইফতারের পরে হালকা রেস্ট নিয়ে উঠে একটু হালকা হাঁটাহাঁটি করলেন। এটাই এনাফ। এখন তো আমরা সবাই ঘরেই থাকছি; ঘরেই নিয়ে নিলে হবে।
ওষুধ
ওষুধ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আমরা যেটা বলি যে, আপনার সকালটা। আপনি সকালবেলাতে একটা ওষুধ গ্রহণ করতেন, ওইটা হয়ে যাবে আপনার ইফতারের সময়। তাই না? আর রাতেরটা হয়ে যাবে সেহরির সময়। তাইলে ধরেন যে, আপনি সেহরির সময় যে ডোজটা নেবেন, সেটা আপনি অরিজিনাল যে ডোজটা নিতেন, তার অর্ধেক নেবেন। অর্ধেক নেবেন কী কারণে? সেহরির সময় যদি আপনি ফুল ডোজ নিয়ে নেন, তাহলে কী হবে? সারা দিনে খুব দ্রুতই কিন্তু সুগারটা ফল করতে পারে। আমরা হাফ ডোজ দিচ্ছি তাইলে কী কারণে, যাতে বিকালের দিকে আপনি হাইপো না হন।
আপনার গ্লুকোজ লেভেল যাতে ফল না করে। সে কারণে আপনি রিগুলার ডোজ যেটা রাতে নিচ্ছেন, সেটার আপনি অর্ধেক নেবেন।
আর ইফতারে...আপনারা জানেন যে, কিছু কিছু ওষুধ আমরা ইফতারের, মানে খাওয়ার আধা ঘণ্টা পরে নিই। যেমন: সকালের নাশতাটাই তো আপনার ইফতার, তাই না? সকালের নাশতাটা ইজ ইকোয়াল টু ইফতার। তাহলে সকালে নাশতার আধা ঘণ্টা আগে আপনি ওষুধ খেতেন অন্য সময়। এখন কী করবেন?
খুবই সহজ। সেটা হলো আপনি পানিটা মুখে দিয়েই ওষুধটা নিলেন বা ইনসুলিনটা নিলেন, নিয়ে আপনি ইফতারটা দ্রুতই করে ফেলুন। এখানে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার কোনো দরকার নাই।
আরও পড়ুন:ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া স্কুল-কলেজে ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম আয়োজন থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এক চিঠিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের এই ‘বিশেষ অনুরোধ’ জানানো হয়েছে।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৬ হাজার নারীকে জরায়ু ক্যানসারের নকল ভ্যাকসিন দেয়ার খবর প্রকাশের পর ১৯ মার্চ চিঠিটি দেয়া হয়। এর আগের দিন অভিযান চালিয়ে রাজধানীর দারুসসালামে ডা. এ আর খান ফাউন্ডেশন থেকে নকল ভ্যাকসিনের আলামত উদ্ধার করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ স্বাক্ষরিত চিঠির অনুলিপি দেয়া হয়েছে সব জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সব জেলার ঔষধ প্রশাসনকে।
তাতে বলা হয়েছে, সেরাভিক্স ভ্যাকসিন নকল পাওয়া গেছে। আন-রেজিস্টার্ড হেপাটাইটিস-বি’র ভ্যাকসিনের ভায়াল থেকে খালি ভায়ালে আংশিক ভরে সেরাভিক্স ভ্যাকসিনের লেবেল লাগিয়ে একটি চক্র নকল করছে।
গত ১৮ মার্চ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর দারুসসালামের ডা. এ আর খান ফাউন্ডেশন থেকে নকল ভ্যাকসিনের আলামত পেয়েছে। গাজীপুর জেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজে নকল ভ্যাকসিনের প্রচারণা করা হয়েছে।
চিঠিতে বিশেষ অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়েছে, স্কুল-কলেজ ও বেসরকারি পর্যায়ে কোনো ধরনের ভ্যাকসিনেশন করতে হলে এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পূর্বানুমোদন থাকা আবশ্যক। ঔষধ প্রশাসন বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পূর্বানুমতি ছাড়া এ ধরনের ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম স্কুল-কলেজে না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৮ মার্চ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর দারুস সালাামের ডা. এ আর খান ফাউন্ডেশনে অভিযান চালিয়ে নকল ভ্যাকসিনের আলামত পেয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়েছে অধিদপ্তর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা গত কয়েকদিনে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়েছি। কিছু সন্দেহভাজন প্রতিষ্ঠান নকল ভ্যাকসিন উদ্ধারের খবর পেয়ে সতর্ক হয়ে গেছে।
‘আমরা এখন নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। আমাদের অভিযান চলাকালেও এ ধরনের মাইকিং শুনতে পেয়ে ধাওয়া করেছিলাম। কিন্তু তারা পালিয়ে যায়।’
গত ১৫ মার্চ নকল ভ্যাকসিন তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে সাইফুল ইসলাম শিপন, ফয়সাল আহম্মেদ, আল আমিন, নুরুজ্জামান সাগর ও আতিকুল ইসলাম নামে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের প্রত্যেককে দুইদিন করে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।
তিন বছর ধরে জরায়ু ক্যানসারের ভ্যাকসিন সেরাভিক্স বাংলাদেশে আমদানি বন্ধ রয়েছে। আর এটাকে সুযোগ হিসিবে কাজে লাগায় প্রতারক চক্রটি। হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিনের একটি অ্যাম্পুল খুলে অন্তত ১০টি জরায়ু ক্যানসারের নকল ভ্যাকসিন বানিয়ে বিক্রি করছে চক্রটি।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের বরাত দিয়ে ডিবি তেজগাঁও বিভাগের গোয়েন্দারা জানান, চোরাইপথে ভারত থেকে এই ভ্যাকসিন আনতে অ্যাম্পুল প্রতি খরচ হয় ৩৫০ টাকা। একটি অ্যাম্পুল খুলে ১০টি অ্যাম্পুল বানানো হয়। পরে সেগুলোতে লাগিয়ে দেয়া হয় জরায়ু ক্যানসারের ভ্যাকসিন সেরাভিক্সের লেবেল।
লেভেল লাগানোর পর জরায়ু ক্যানসারের ভ্যাকসিন সেরাভিক্সের প্রতিটি অ্যাম্পুল বিক্রি করা হয় আড়াই হাজার টাকা করে। গাজীপুরের প্রায় ৬ হাজার নারীর কাছে জনপ্রতি তিনটি করে ১৮ হাজার অ্যাম্পুল ভ্যাকসিন বিক্রি করে চক্রের সদস্যরা। এর মাধ্যমে তারা হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা।
পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকা ও আশপাশের প্রায় ১৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প করে নকল টিকা বিক্রির তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী, শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের কাছে নকল ভ্যাকসিনের তিনটি করে ডোজ বিক্রি করেছে ওই প্রতারক চক্র।
নকল ভ্যাকসিন তৈরির কারখানা মালিক গ্রেপ্তার
নকল ভ্যাকসিন তৈরির কারখানা মালিক হিমেলকে রোববার গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগ। তাকে দু’দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। এর আগে নকল ভ্যাকসিন তৈরি ও বিক্রির অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. গোলাম সবুর বলেন, ‘কারখানা মালিক হিমেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই নকল ভ্যাকসিন তৈরি ও বিপণনে জড়িত অন্যদের বিষয়ে জানা সম্ভব হবে বলে মনে করছি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য