রাজধানীর শ্যামলীর একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে ছেলেকে ভর্তি করেছিলেন ‘ফ’ অদ্যাক্ষরের এক অভিভাবক। মাদক থেকে মুক্তি মেলেনি, উল্টো পিটুনির কারণে হাত ভেঙে যাওয়ায় ছেলের চিকিৎসা করাতে হয়েছে অন্য জায়গায়। পরে সেখান থেকে নিয়ে ছেলেকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করেন ওই ব্যক্তি।
সম্প্রতি আদাবরের মাইন্ড কেয়ার ইনস্টিটিউট নামে একটি মানসিক হাসপাতাল ও মাদক নিরাময় কেন্দ্রে এক এএসপিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
কেন সেখানে পেটানো হলো পুলিশ কর্মকর্তাকে? খোঁজ নিতে গিয়ে উঠে এসেছে এই ধরনের হাসপাতালগুলোতে এ রকম পিটুনি চলে নিয়মিত।
চিকিৎসা করে সুস্থ হওয়া রোগী, রোগীর অভিভাবক, এমনকি সরকারি মানসিক হাসপাতালের একজন কর্মীও জানিয়েছেন একই অভিযোগ।
পাবনা মানসিক হাসপাতালের একজন সাইকোলজিস্ট সোশ্যাল ওয়ার্কার জানিয়েছেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত লোকবল থাকে না। রোগীরা কথা না শুনলেই পিটুনি দিয়ে তাদের ভয় দেখানো হয়। তারা ভয়ে কথা শুনবে বলে ধারণা থেকে এই কাজ করা হয়। যদিও এতে হিতে বিপরীত হয়। রোগীরা সুস্থ হওয়ার বদলে নতুন বিপত্তি তৈরি হয়।
আদাবরে একটি মাদকসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছেন শ্যামলীর একজন বাসিন্দা। তার অভিযোগ, সেখানে অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স ছিলেন না। স্টাফরাও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। অল্পতেই তারা রেগে যেতেন। রোগীদের মারধর করতেন। অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হতো তাকে।
ওই প্রতিষ্ঠানটিতে ৭০ জন রোগীর চিকিৎসায় স্টাফ ছিলেন মাত্র তিনজন। মাসে একবার অভিজ্ঞ একজন চিকিৎসক আসলেও তিনি ঠিকভাবে রোগীদের দেখতেন না বলে জানিয়েছেন এই অভিভাবক। ছেলের এক মাস চিকিৎসার জন্য লক্ষাধিক টাকা পরিশোধ করতে হয় ওই অভিভাবককে। পরে সেখান থেকে ছেলেকে নিয়ে আসেন তিনি।
যদিও স্বাস্থ্য নীতি ২০১৭ বলছে, মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পাশাপাশি থাকতে হবে বিশেষজ্ঞ নার্স। বোর্ড গঠন করে সমস্যা আগে চিহ্নিত করে চিকিৎসা দিতে হবে। কারণ, মানসিক সমস্যা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। রোগী কী ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত প্রথমে তা বের করতে হবে।
তবে আসলে কী হয়, সেটা জানা গেল একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়া একজন রোগীর কাছ থেকে।
সন্তান প্রসবের পরে পোস্ট পার্টাম সাইকোসিসে আক্রান্ত হন একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত নাদিয়া সারওয়াত। এমন অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর শ্যামলীর একটি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে।
সে সময়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে নাদিয়া সম্প্রতি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘রাতে হাসপাতালের সব লাইট নেভানো থাকলেও, নার্সের ঘরে আলো জ্বলত। আমি বারবার ঘুরে ঘুরে ওই ঘরে চলে যেতাম, আমার বাচ্চাটাকে খুঁজতে। তখনই বিরক্ত হয়ে একদিন গায়ে হাত তুলেছিল নার্স। গালে কালশিটে দাগ ছিল ছাড়া পাওয়ার পরেও।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘হাসপাতালে প্রথম দিন থেকেই ইনজেকশন দিতে চাইতাম না, হাত পা ছুঁড়তাম, তখন জোর করে চেপে ধরত নিয়মিতই, সেটাকে মার হিসেবে মনে রাখিনি। কিন্তু ওই ঘটনা মনে রেখেছি, পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে না পারলেও অপমানটা ঠিকই আঘাত করেছে।’
এ প্রতিবেদনে নাম প্রকাশ কোনো আপত্তি নেই জানিয়ে নাদিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাসপাতালের অনেকেই আন্তরিক ছিলেন। তবে সেই সময়ের কিছু বাজে অভিজ্ঞতা এখনও আমি ভুলতে পারিনি। ’
মাইন্ড এইডে পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুর পর প্রশাসনের চালানো অভিযানেও উঠে এসেছে বিভিন্ন অনিয়ম। পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক-নার্স ছিল না সেখানে। স্টাফদের দুর্ব্যবহার, মারধর, নির্যাতন, নিয়মিত খাবার না দেয়া, মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ দেয়ার প্রমাণ পেয়েছে প্রশাসন।
অন্য হাসপাতালগুলোতেও পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা আর নীতিমালা অনুযায়ী চিকিৎসক, কর্মী আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আর হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে পিটুনির শিকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে ব্যাপক হারে।
মানসিক সমস্যায় থাকা মেয়েকে বারিধারার প্রমিসেস মেডিক্যাল লিমিটেডে হাসপাতালে ভর্তি করান মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মুন্নি (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ‘ওরা (হাসপাতাল স্টাফ) রোগীদের ওপর কথায় কথায় নির্যাতন করে। এখানে যারা সেবা দেন, তারা কেউই পারদর্শী না।’
এই নির্যাতনের কথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো কেন অভিযোগ করা হয়েছে, সেজন্য আরও নির্যাতন সহ্য করতে হয়।
নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে হাসপাতালের চেয়ারম্যান শাহিদুল ইসলাম হেলাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যদি কোনো রোগী অভিযোগ করে থাকে, তাহলে অবশ্যই ঠিক বলেছেন। কারণ, প্রত্যেক রোগী এমন কথা বলেন। তবে অভিভাবক যদি অভিযোগ করে থাকে, তাহলে আমি বলব, এটি ভিত্তিহীন। আমাদের বিশেষজ্ঞরা অনেক দক্ষ।’
পাবনা মানসিক হাসপাতালের সাইকোলজিস্ট সোশ্যাল ওয়ার্কার মকবুল হোসেন পাশাও শুনেছেন রোগীকে বেধড়ক মারধরের কথা।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকাসহ সারাদেশে অনেক মানসিক রোগ নিরাময় কেন্দ্র গড়ে উঠছে। যেগুলোতে ডাক্তার না হয়েও, মানসিক বিশেষজ্ঞ না হয়েও চিকিৎসা দিচ্ছেন অনেকে। বিভিন্নভাবে নির্যাতন করছেন রোগীদের।’
‘দীর্ঘ সময় ভুল চিকিৎসা ও অত্যাচারের পর রোগী সুস্থ না হওয়ায় অভিভাবক ডাকা হয়। অভিভাবক এসে দেখছে রোগীর হাত ভাঙা, পা ভাঙা, শরীরে বিভিন্ন ধরনের আঘাতের চিহ্ন। নির্যাতন করা কোনোভাবেই চিকিৎসা পদ্ধতি হতে পারে না’- বলেন মানসিক রোগীর চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ মকবুল পাশা।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালে সারোয়ার আলমও বহু হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে এই অনিয়ম দেখেছেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নার্স সংকট, অভিজ্ঞ ডাক্তার সংকট, এই রোগীদের জন্য যে ধরনের পরিবেশ থাকা দরকার তার কিছুই দেখিনি আমি। মানহীন অনেকগুলো হাসপাতাল বন্ধ করেছি। তবে মানে উন্নতি করতে পারিনি।’
অবৈধ হাসপাতাল কত, জানে না অধিদফতর
যাদের হাসপাতালগুলো দেখভাল করার কথা, সেই স্বাস্থ্য অধিদফতর জানেই না লাইসেন্স না নিয়ে কতগুলো হাসপাতাল চলছে রাজধানীতে।
অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ উদ্দিন মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনুমোদন নিয়েছে ১৫টি হাসপাতাল। তবে লাইসেন্স ছাড়া মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যান জানা নেই।’
অনুমোদনহীন হাসপাতালগুলো কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে? এমন প্রশ্নে ডা. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘জনবল সংকট থাকার কারণে যেভাবে ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন, সেভাবে নেয়া যাচ্ছে না।’
ঢাকা বিভাগের সিভিল সার্জন মঈনুল আহসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। তবে অধিকাংশ হাসপাতাল এই অনুমোদন ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন সময় অভিযান করছি।’
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য