ঘরবাড়ি মোছা বা বাথরুম ভালোভাবে পরিষ্কার করাসহ গেরস্থালি কাজগুলো বেশ বিরক্তিকর। তবে শরীরের ক্যালরি পোড়ানোর জন্য এটা ভালো একটা উপায় হতে পারে।
শরীরচর্চা নিয়ে কাজ করা সংস্থা কমপেনডিয়াম অফ ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটিস ট্র্যাকিং গাইড বলেছে, প্রায় ৩০ মিনিট ধরে ভ্যাকুয়াম দিয়ে ঘর পরিষ্কার করা বা ঝাড়ু দেওয়া ১৩০ ক্যালরি পর্যন্ত পোড়াতে পারে।
দৌড়ানো, সাইকেল চালানো বা সিঁড়ি দিয়ে ওঠার তুলনায় এসব কাজ তেমন একটা কিছু মনে নাও হতে পারে। তবে আপনি যদি কয়েক ধরনের গৃহস্থালি কাজ একসঙ্গে এবং দীর্ঘ সময় ধরে করেন তা হলে তা দেহের ক্যালরি পোড়ানোর ক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখবে।
মহামারি চলাকালীন ঘরের কাজ
মহামারির এই সময়ে জিমে গিয়ে ব্যায়াম করা খুব একটা নিরাপদ নয়। এই পরিস্থিতিতে ঘর পরিষ্কার করা এবং ঘরের জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত করার কাজ একদিকে যেমন আপনার দেহের ক্যালরি পোড়াবে, তেমনই কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ রোধের পাশাপাশি অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণও প্রতিরোধ করবে।
ঘরের যেসব কাজ আপনার দেহের ক্যালোরি পোড়ায়
ঘরের কাজকর্মের আরো যেসব উপকারিতা
সূত্র: নিউজ ১৮
দেশের জনসংখ্যার ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ বা ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ ধূমপানসহ বিভিন্ন তামাকজাত দ্রব্যে আসক্ত। তামাকজনিত রোগে বছরে এক লাখ ৬১ হাজার লোক মারা যায় এবং তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। এ ছাড়া দেশের মোট মৃত্যুর ৬৭% শতাংশ অসংক্রামক রোগের কারণে হয়। এই অসংক্রামক রোগের পেছনে তামাকের ব্যবহার বহুলাংশে দায়ী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন বাস্তবায়নে করণীয় বিষয়ে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের মাধ্যমে এ সব তথ্য জানান জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের কারিগরি উপদেষ্টা সৈয়দ মাহবুবুল আলম।
তিনি বলেন, “আইন অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ক্লিনিক, শিশুপার্ক ও খেলাধুলার স্থান থেকে এক শ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষেধ। তামাকজাত দ্রব্য অথবা সিগারেট ফেরি করে বা ভ্রাম্যমান দোকানের মাধ্যমে বিক্রি করা যাবে না। সিগারেটের বিজ্ঞাপন প্রচার ও নাটক-সিনেমার দৃশ্যে ধূমপান ও মাদক গ্রহণের দৃশ্য প্রদর্শন করা নিষিদ্ধ। পাবলিক প্লেস, গণপরিবহন, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে ‘ধূমপানমুক্ত এলাকা’ সাইন বোর্ড স্থাপনা না করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আর্থিক জরিমানার মুখোমুখি করা হয়।
“ধূমপান মানে জেনেশুনে বিষপান। তামাকজাত দ্রব্য অথবা ধূমপানের ইতিবাচক কোনো প্রাপ্তি নেই বরং ক্ষতির অনেক দিক রয়েছে। ধূমপায়ী ব্যক্তি নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আশপাশে থাকা মানুষদেরও ক্ষতি করে।”
কালের বিবর্তনে তামাকের ব্যবহারেও ভিন্নতা এসেছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তামাক, জর্দা, হুক্কা, বিড়ি, সিগারেট পেরিয়ে তরল নিকোটিন বহনকারী ক্ষতিকর ই-সিগারেটের ব্যবহারও এখন দৃশ্যমান।’
এ সময় তামাক চাষ বন্ধের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘তামাক চাষ কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট করে। সরকার ২০৪০ সালের মধ্যে বিড়ি, সিগারেট, জর্দার মতো তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে দেশের মানুষ তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পাবে।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সহযোগিতায় খুলনা বিভাগীয় প্রশাসন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. ফিরোজ শাহের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার দপ্তরের পরিচালক মো. হুসাইন শওকত।
সেমিনারে বিভাগীয় পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা ও এনজিও প্রতিনিধিরা অংশ গ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন:সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ সময় ১৩৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়। বুধবারও ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ১২২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২ জন ডেঙ্গু রোগী।
বর্তমানে সারা দেশে ৫০৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৩৭ ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ৬৯ জন।
এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে মোট ২১ জনের।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ২ হাজার ৮৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ২ হাজার ১১৯ জন ও ঢাকার বাইরে সারা দেশে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৭৩৫ জন।
ডেঙ্গু থেকে সেরে উঠে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২ হাজার ৩২৭ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ১ হাজার ৬৬৫ জন এবং ঢাকার বাইরে ৬৬২ জন।
আরও পড়ুন:গত বছরের তুলনায় স্বাস্থ্যখাতে বাজেটে বরাদ্দ ১২শ’ কোটি টাকা বাড়লেও তা দেশের জনসংখ্যার তুলনায় স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধিতে অপর্যাপ্ত বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। এটি জিডিপির তিন শতাংশ হলে ভালো হতো বলে জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনায় আমরা বুঝতে পেরেছি স্বাস্থ্যখাত কত জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত বিশ্বে মোট বাজেটের ১০ ভাগেরও বেশি রাখা হয় স্বাস্থ্যখাতের জন্য। আমাদের বর্তমান বাজেটের মাত্র প্রায় ১ শতাংশ রয়েছে স্বাস্থ্যখাতের জন্য। স্বাস্থ্যখাতের জন্য এবারের বাজেটে মোট বাজেটের ৩ শতাংশ বরাদ্দ করা হলে, দেশের মোট জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে আরও দ্বিগুণ স্বাস্থ্যসেবা দেয়া সম্ভব হতো।'
দেশে বর্তমানে ৪৫ হাজার নার্স ও মিডওয়াইফারি কর্মরত রয়েছে যা আগে মাত্র ২০ হাজার ছিল বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। করোনা মোকাবিলায় নার্সদের ব্যাপক ভূমিকার কথাও এসময় তুলে ধরেন মন্ত্রী।
তবে, হাসপাতাল আরও পরিচ্ছন্ন রাখা, রোগীর সেবা বৃদ্ধি করার কাজে নার্সদের আরও সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করতে হবে বলে জানান তিনি।
নার্সিং ও মিডওয়াইফ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূরের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আজিজুর রহমান, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি বর্দন জং রানা, জাইকার সিনিয়র প্রতিনিধি কমোটি তাকাশি, কানাডা হাইকমিশনারের প্রথম সচিব জোসেফ সেভাটুসহ অন্যান্য দেশি-বিদেশি প্রতিনিধিরা।
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে চলছে তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ। কোথাও সেটি মৃদু থেকে মাঝারি, কোথাও আবার তীব্র। এমন পরিস্থিতিতে হিট স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এটি প্রতিরোধে কী কী করা উচিত, তা ফেসবুকে ভেরিফায়েড পেজে এক পোস্টে জানিয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবি।
প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্য, হিট স্ট্রোকের সর্বোচ্চ ঝুঁকি আছে শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, শ্রমজীবী ব্যক্তি (যেমন: রিকশাচালক, কৃষক, নির্মাণশ্রমিক), অতিরিক্ত ওজন থাকা ব্যক্তি, শারীরিকভাবে অসুস্থ, বিশেষত হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপ থাকা ব্যক্তির।
করণীয়
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে কিছু করণীয় জানিয়েছে আইসিডিডিআরবি, যেগুলো নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
এডিস মশার প্রজনন মৌসুমের আগেই এবারে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছে। আর দিন যত যাচ্ছে, ততই প্রকোপ বাড়ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৪৭ জন। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত যা সর্বোচ্চ ভর্তি রোগীর সংখ্যা। চলতি মাসের প্রথম সাতদিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬৯৮ জন। এ সাতদিনে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ৬ জুন সকাল ৮টা থেকে ৭ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৪৭ জন; যা চলতি ডেঙ্গু মৌসুমে একদিনে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যায় সর্বোচ্চ। এর আগে গত ৩ জুন একদিনে ১৪১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হবার তথ্য দিয়েছিল অধিদপ্তর।
অধিদপ্তর জানায়, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১৪৭ জনের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১২৭ জন আর অন্যান্য বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি ২০ জন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৪৮০ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ৪১১ জন ও অন্যান্য বিভাগে ৬৯ জন।
চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৭২০ জন আর তাদের মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক হাজার ৯৯৭ জন।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে আরও দুইজনের। তাদের নিয়ে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হলো ১৯ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৫৬৬ জন। তাদের মধ্যে মারা যান ৬ জন। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন ভর্তি হন, মৃত্যু হয় তিনজনের।
মার্চে কারও মৃত্যু না হলেও হাসপাতালে ভর্তি হন ১১১ জন। এপ্রিলে ভর্তি হন ১৪৩ জন আর মৃত্যু হয় দুজনের।
চলতি মাসে ডেঙ্গুতে মারা যান দুজন। গত মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন আর চলতি মাসের প্রথম দুইদিনে কারও মৃত্যু না হলেও হাসপাতালে ভর্তি হন ২৫৭ জন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে রোগী অনুপাতে ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসার নূন্যতম আর্থিক মূল্য ৭৫ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা জানিয়ে হেপাটোলজি সোসাইটি বলেছে, এ অর্থ জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের দ্বিগুণ।
ষষ্ঠ আর্ন্তজাতিক ন্যাশ দিবস উপলক্ষে বুধবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে হেপাটোলজি সোসাইটি আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এ তথ্য জানিয়েছেন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহিনুল আলম।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন লিভার বিশেষজ্ঞ ও হেপাটোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মবিন খান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অধ্যাপক ডা. এ এস এম মতিউর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম হারুন উর রশিদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমির খসরু ও গ্লোবাল লিভার ইনস্টিটিউটের সভাপতি ডোনা ক্রাইয়ার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. মো. সাইফুল ইসলাম এলিন বাংলাদেশে ফ্যাটি লিভারে আক্রান্তের বিষয়ে বলেন, দেশে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি লোক ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। দিনে দিনে তা বেড়েই চলেছে। তাই ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে চিকিৎসকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ বিষয়ে আলোকপাত করে একই বিভাগের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বলেন, জীবনাচরণ পরিবর্তনের পাশাপাশি ৭ থেকে ১০ শতাংশ ওজন হ্রাস হচ্ছে ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধের মূলমন্ত্র।
ফ্যাটি লিভারের কারণে দেশে যে আর্থিক বোঝা তৈরি হচ্ছে তার একটি হিসাব দেখান হেপাটোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম। তার টিমের গবেষণালব্ধ উপাত্ত অনুযায়ী, প্রতিটি ফ্যাটি লিভার রোগীর হাসপাতালে একবার চিকিৎসা নিতে গড়ে ১৬ হাজার ৮১০ টাকা ব্যয় হয়। সে হিসাবে সব রোগী একবারের জন্য চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে গেলে মোট ব্যয় ৭৫ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা, যা জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের দ্বিগুণ।
অধ্যাপক আলম জানান, ফ্যাটি লিভারজনিত সিরোসিস ও লিভার ক্যানসারের রোগী ক্রমাগত বাড়ছে। এ সংক্রান্ত জটিলতার ক্ষেত্রে শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি।
১০ সুপারিশ
বাংলাদেশকে বিপুল আর্থিক বোঝা থেকে পরিত্রাণ দিতে ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ এবং দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ওপর জোর দিয়ে হেপাটোলজি সোসাইটি গোলটেবিল বৈঠকে ১০টি সুপারিশ উত্থাপন করে।
১. প্রত্যেক ব্যক্তির সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ৩০ মিনিট করে হাঁটতে হবে।
২. সম্ভব হলে দড়ি লাফ, সাইকেল চালানো ও সাঁতার কাটার মাধ্যমে শরীরচর্চা প্রয়োজন।
৩. হাঁটা ও শরীরচর্চার জন্য পর্যাপ্ত সবুজ জায়গার ব্যবস্থা করা আবশ্যক।
৪. ‘স্বাস্থ্যকর নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যকর নগর’ স্লোগানের আওতায় শহরগুলোকে সবুজ, পরিচ্ছন্ন এবং
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের উপযোগী করে তুলতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।
৫. প্রক্রিয়াজাত খাবার, ভাজাপোড়া কমাতে হবে এবং দুধ, ফল ও শাকসবজি খাওয়া বাড়াতে হবে।
৬. গণসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জাংক ফুড পরিহার এবং বাসায় বানানো স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
৭. প্রক্রিয়াজাত খাবারের ক্ষেত্রে প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠানকে পুষ্টিমাণ বজায় রাখার জন্য আদর্শমান সরবরাহ এবং আইন করে তা নিশ্চিত করতে হবে।
৮. দেশের প্রতিটি স্কুলে ‘স্কুল হেলথ প্রোগ্রাম’-এর আওতায় খেলার মাঠ বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং ক্লাসের শুরুতে শরীরচর্চার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৯. স্কুলভিত্তিক স্বাস্থ্যকর খাবার টিফিন হিসেবে প্রদান নিয়মে পরিণত করতে হবে।
১০. দেশি প্রতিটি বড় রাস্তার পাশে বাইসাইকেল চালানোর লেন করতে হবে এবং সবাইকে মোটরযানের পরিবর্তে বাইসাইকেল চালাতে উৎসাহিত করতে হবে।
আরও পড়ুন:এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার হিসাবে রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
চলতি বছর একদিনে এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু। এই সময়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৭ জন। আর চলতি মাসের প্রথম ৩ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৫৪ ডেঙ্গু রোগী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৯৭ জনের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৭ জন আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১০ জন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৩৮৭ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৫৩টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছে ৩৩৮ জন। ঢাকার বাইরের হাসপাতালে রয়েছেন ৪৯ জন। চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৩৭৬ জন আর বাড়ি ফিরে গেছেন এক হাজার ৯৭৩ জন।
অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া তিনজনসহ এ বছর মৃত্যু হলো ১৬ জনের। মারা যাওয়া তিনজন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রাজধানীর এই হাসপাতালেই ভর্তি ৪৮৭ জন। যা অন্য হাসপাতালের চেয়ে সর্বাধিক। সেখানে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১০৮ জন। বাকিরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
অন্যদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ৫৩ জন। এখানে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৪০ জন আর মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে বাকি ৩ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৫৬৬ জন। তাদের মধ্যে মারা যান ৬ জন। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন ভর্তি হয়, মৃত্যু হয় তিনজনের। মার্চে কারও মৃত্যু না হলেও হাসপাতালে ভর্তি হয় ১১১ জন। এপ্রিলে ভর্তি হয় ১৪৩ জন আর মৃত্যু হয় দুজনের। চলতি মাসে ডেঙ্গুতে মারা যান দুজন আর গত মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন।
সাধারণত দেশে জুন মাস থেকেই ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়, কিন্তু এবার মে মাসেই সর্বাধিক ডেঙ্গু রোগী সারা দেশে শনাক্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য