আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ। প্রতি বছর ৮ মার্চ নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়।
এ বছর নারী দিবসে জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য হল ‘নারীদের ওপর বিনিয়োগ করুন, দ্রুত উন্নতি আনুন।’ এর মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা আনতে যে যথেষ্ট অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে না সেই বিষয়টাতে মনোযোগ দেয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এ বছরের থিম ‘ইনস্পায়ার ইনক্লুশন’, যার লক্ষ্য হচ্ছে নারীদের জন্য এমন পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে তারা সমাজে নিজের জায়গা সম্পর্কে জানতে পারে। এর সঙ্গে এ গল্পগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ।
দিবসটির উৎপত্তি ২০ শতকের গোড়ার দিকে, যা উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের শ্রমিক আন্দোলন থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম জাতীয় নারী দিবস পালন করা হয়।
পরবর্তীতে ১৯১০ সালে মার্কসবাদী তাত্ত্বিক এবং ‘নারী অধিকার’ আন্দোলনের বিশিষ্ট নেত্রী ক্লারা জেটকিন কোপেনহেগেনে আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রস্তাব করেন। ধারণাটি সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়েছিল ১৯১১ সালে। যেখানে ১০ লাখেরও বেশি অংশগ্রহণকারী নারীর অধিকারের পক্ষে ছিলেন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস শুধু নারীদের অর্জন উদযাপনের দিন নয়, এটি লিঙ্গ সমতা, এর প্রতিফলন, সমর্থন, এবং বিশ্বজুড়ে নারী এবং মেয়েদের জন্য বাধাগুলো ভেঙে ফেলার পদক্ষেপকে উৎসাহিত করে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বেগম রোকেয়া এ দেশের নারী জাগরণের পথিকৃৎ। নারী সমাজে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে তিনি যে ভূমিকা পালন করেছেন তা বৈপ্লবিক।
বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তার রুহের মাগফিরাত কামনা করি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারী সমাজে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে যে ভূমিকা পালন করেছেন তা বৈপ্লবিক।
‘বেগম রোকেয়ার জীবন ও তার আদর্শ বাস্তবায়ন এদেশের নারী সমাজকে আলোকিত ও আত্মনির্ভরশীল করতে প্রেরণা যোগাবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, কঠোর রক্ষণশীল পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন এদেশের নারী জাগরণের অগ্রদূত।
সোমবার বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘আমি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
‘তিনি নিজ জীবনের বাস্তবতার মধ্যে উপলব্ধি করেছিলেন সমাজে নারীর পশ্চাদপদ অবস্থান। উপলব্ধি করেছিলেন শিক্ষাই নারীর আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রধান অবলম্বন।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, নারী শিক্ষার বিস্তারের মধ্য দিয়ে নারীমুক্তি ছিল বেগম রোকেয়ার জীবন-সংগ্রামের লক্ষ্য। বিশেষভাবে পিছিয়ে পড়া এদেশের মুসলিম নারী সমাজকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য তিনি সর্বপ্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
‘আর নারীমুক্তির বাণী বহন করতে গিয়ে তাকে সমাজের গোঁড়া রক্ষণশীলদের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন কর্তব্যকর্মে অদম্য ও অবিচল।’
বেগম রোকেয়া তার ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে নারীর প্রতি সমাজের অন্যায় ও বৈষম্যমূলক আচরণের মূলে আঘাত হেনেছিলেন বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, ‘সংসার, সমাজ ও অর্থনীতি- জীবনের এই তিনটি ক্ষেত্রে নারীকে স্বায়ত্তশাসিত ও আত্মমর্যাদাশীল হতে তিনি গভীরভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। আর এজন্য তিনি বিশ্বাস করতেন নারীকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।
‘শত কুপমণ্ডুকতার বাধা সত্ত্বেও নারী সমাজকে স্বাবলম্বী করতে তিনি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।’
তারেক রহমান বেগম রোকেয়ার কর্মময় জীবন ও আদর্শ নারী সমাজকে আরও উদ্যমী ও অনুপ্রাণিত করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন:ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসির ২০২৪ সালের বিশ্বের ১০০ অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের একমাত্র নারী রিক্তা আক্তার বানু। পেশায় নার্স হলেও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করে প্রতিবন্ধীদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখায় প্রশংসিত হয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার বিশ্বের ১০০ অনুপ্রেরণা জাগানো ও প্রভাবশালী নারীর তালিকা প্রকাশ করে বিবিসি।
পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ১০০ নারীকে বেছে নেয়া হয়েছে। বিভাগগুলো হলো- জলবায়ুকর্মী, সংস্কৃতি ও শিক্ষা, বিনোদন ও ক্রীড়া, রাজনীতি ও অ্যাডভোকেসি এবং বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি। এর মধ্যে বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি বিভাগে নির্বাচিত হয়েছেন রিক্তা আক্তার বানু।
বিবিসি বলেছে, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় বাস করেন নার্স রিক্তা আক্তার বানু। সেখানে অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী শিশুকে অভিশাপ হিসেবে দেখা হয়।
অটিস্টিক এবং সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত কন্যা সন্তানকে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে না পেরে নিজের জমি বিক্রি করে তিনি একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। স্কুলের নাম ‘রিক্তা আক্তার বানু লার্নিং ডিজেবিলিটি স্কুল’।
বর্তমানে ৩০০ শিক্ষার্থী ভর্তি রয়েছে সেখানে। এটি প্রতিবন্ধিতার প্রতি সমাজের মনোভাব পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। স্কুলটি প্রাথমিকভাবে অটিস্টিক বা শেখার প্রতিবন্ধকতা থাকা শিশুদের জন্য নির্মিত হলেও এখন এটি বিভিন্ন ধরনের বুদ্ধিমত্তা ও শারীরিক প্রতিবন্ধিতা থাকা শিশুদের জন্যও সেবা দিয়ে থাকে।
বিবিসির এ বছরের ১০০ অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর মধ্যে রয়েছেন- নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস, ধর্ষণ থেকে বেঁচে যাওয়া গিসেল পেলিকট, অভিনেত্রী শ্যারন স্টোন, অলিম্পিক ক্রীড়াবিদ রেবেকা আন্দ্রাদে ও অ্যালিসন ফেলিক্স, গায়িকা রে, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নাদিয়া মুরাদ, ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট ট্রেসি এমিন, জলবায়ু প্রচারক আদেনিকে ওলাদোসু এবং লেখক ক্রিস্টিনা রিভেরা গারজা।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজা, লেবানন, ইউক্রেন ও সুদানের প্রাণঘাতী সংঘাত এবং মানবিক সংকট থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী রেকর্ডসংখ্যক নির্বাচন-পরবর্তী সামাজিক বিভাজনের সাক্ষী হওয়া পর্যন্ত নিত্যনতুন উপায়ে দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হয়েছে নারীদের।
বিবিসির এই ১০০ নারী এ বছর নারীদের ওপর যে চাপ পড়েছে তা স্বীকার করেছেন। তারা তাদের দৃঢ়তার মাধ্যমে পরিবর্তনের জন্য কাজ করেছেন। কারণ বিশ্ব পরিবর্তিত হচ্ছে।
এই নারীদের অনেকেই জলবায়ুর জরুরি অবস্থার প্রভাব নিয়েও সচেতন। তাই এখানে জলবায়ুর অগ্রদূতদের তুলে ধরা হয়েছে যারা তাদের সম্প্রদায়কে এর প্রভাব মোকাবিলা করতে সহায়তা করছেন।
আরও পড়ুন:সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভিন হককে কমিশনের প্রধান করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, সোমবার এই কমিশন গঠন করা হয়।
কমিশনে নয়জনকে সদস্য করা হয়েছে। তারা হলেন- ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র ফেলো মাহীন সুলতান, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ফৌজিয়া করিম ফিরোজ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার, নারী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হালিদা হানুম আক্তার, বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক সিনিয়র সামাজিক উন্নয়ন উপদেষ্টা ফেরদৌসী সুলতানা এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিশিতা জামান নিহা।
গর্ভপাত নিষিদ্ধ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা মেক্সিকোকে বেছে নিয়েছেন গর্ভপাতের জন্য। দেশটির গাইনোকোলজিস্টদের পরামর্শে তারা গিয়ে ঢুকছেন অপারেশন থিয়েটারে।
টেক্সাসের হিউস্টন থেকে মেক্সিকোতে এসেছেন স্যান্ড্রা নামের এক নারী। যুক্তরাষ্ট্রের ওই রাজ্যে ইচ্ছাকৃত গর্ভপাত সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। তাই তিনি বাধ্য হয়ে গর্ভপাতের জন্য মেক্সিকো এসেছেন।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে মেক্সিকোর সুপ্রিম কোর্ট গর্ভপাতকে বৈধ ঘোষণা করে। এই ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত দেশটির ১৫টি রাজ্য গর্ভপাতকে বৈধতা দিয়েছে।
মেক্সিকোর নারীবাদী সংগঠনগুলো গর্ভপাত বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত থেকে দুশ’ কিলোমিটার দূরের জনপদ মন্টারের বাসিন্দা স্যান্ড্রা কারদোনা ও ভ্যানেসা গিমেনেয। এই দুই নারী গর্ভপাত করাতে আসা আমেরিকান নারীদের তাদের বাসায় স্বাগত জানান।
সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা এই নারীরা যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতে ইচ্ছুক নারীদের জন্য অবৈধ পথে গর্ভপাতে ব্যবহৃত কিট সরবরাহ করছেন। তবে এসব কিট মেইলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো অসম্ভব। তাই অবৈধ পথে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তারা এসব কিট যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে থাকেন। উদ্দেশ্য, এসব কিট ব্যবহার করে নারীরা যেন নিজ বাসায়ই সহজে গর্ভপাত করাতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলের প্রচারণায় উঠে এসেছে গর্ভপাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়টি। অনুমান করা যায়, বিশেষ করে নারী ভোটারদের কাছে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গর্ভপাতের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে বসতঘরে আটকে রেখে এক যুবতীকে জোরপূর্বক গর্ভপাত করানোর চেষ্টা এবং মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালানোর ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ঢাকা থেকে গর্ভপাত করতে আসা টিমের এক নারী সদস্যকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে শ্রীনগর উপজেলার পশ্চিম সিংপাড়া গ্রামের ইদ্রিস আলীর বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার পশ্চিম সিংপাড়া গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে রিপন শেখ চারদিন আগে ঢাকার মিরপুর থেকে এক যুবতীকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। ওই যুবতীকে রিপন নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেয়া হয়।
বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের জের ধরে তাদের শারীরিক সম্পর্ক এবং এক পর্যায়ে ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এরপর বিয়ের জন্য চাপ দেয়ায় চারদিন আগে ওই নারীকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন রিপন।
তারা জানান, দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীকে মঙ্গলবার দুপুরে জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটাতে ঢাকা থেকে একটি টিম নিয়ে আসেন রিপন। এ সময় তিনি গর্ভপাতে রাজি না হওয়ায় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তার হাত-পা ভেঙে জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটানোর চেষ্টা করা হয়।
এসময় ওই যুবতীর আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। পরে যুবতীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এছাড়া ওই সময় গর্ভপাত ঘটানোর টিমের আম্বিয়া নামে এক নারীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে রিপন শেখ পালিয়ে যান।
রিপনের প্রথম স্ত্রী তানিয়া বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী রিপন ওই নারীকে ঘরে আটকে রেখে অজ্ঞাত দুই নারীর সহায়তায় জোরপূর্বক গর্ভপাত করানোর চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তাকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়।’
প্রতিবেশী মো. মামুন জানান, রিপন স্ত্রী পরিচয়ে যে নারীকে বাড়িতে নিয়ে আসেন তিনি দুই মাসের গর্ভবতী। রিপন লোকজন নিয়ে জোরপূর্বক গর্ভপাতের চেষ্টার পাশাপাশি ওই নারীকে অমানবিক নির্যাতন করেছে।’
তন্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আকবর বলেন, ‘রিপন ওই যুবতীকে হাতুড়িপেটা করেছে। পরে যুবতীকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মো. কাশফি জানান, নির্যাতনের কারণে ওই নারী স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারছেন না। তার হাত ও পায়ের হাড় ভাঙা। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।
শ্রীনগর থানার ওসি মো. ইয়াসিন মুন্সী বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এক নারীকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
আরও পড়ুন:‘গ্রামের মেয়েরা হাফ প্যান্ট পরে মাঠে ফুটবল খেলে’ – এ ‘অপরাধে’ হামলা করা হয়েছিল খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা গ্রামে সুপার কুইন ফুটবল অ্যাকাডেমির নারী খেলোয়াড়দের ওপর। যা নিয়ে সারা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। পরে তাদের পাশের দাঁড়িয়েছিল দেশের সরকার প্রধান থেকে শুরু করে জাতিসংঘের জরুরি শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) পর্যন্ত, তবে বছর না যেতে সেই কিশোরী ফুটবলারদের মাঠ ছাড়তে হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২২ সালে স্থানীয় কয়েকজন ক্রীড়া সংগঠক সুপার কুইন ফুটবল অ্যাকাডেমিটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে নিয়মিত স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ৩০ থেকে ৪০ জন কিশোরী অনুশীলন করতেন। ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে নারী ফুটবলারের ওপর হালমার ঘটনা ঘটে। যা নিয়ে পরদিন একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের হয়েছিল।
এ হামলায় যারা আহত হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল খেলোয়াড় মঙ্গলী বাগচী।
মঙ্গলী বলে, ‘আমাদের ওপর হামলার ঘটনায় ছয় মাস পার না হতে মাঠ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। পরিকল্পিতভাবে আমাদের কোচকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। যারা আমাদের যে আর্থিক সহায়তা করতেন, তারাও দূরে সরে যান। সামাজিক চাপ ও রাজনৈতিক কারণ দেখিয়ে আমাদের স্বপ্নগুলিকে শেষ করে দেয়া হয়।’
আক্ষেপ নিয়ে মঙ্গলী বলে, ‘হামলার পর আমাদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা নিয়ে জনপ্রতিনিধীরা এসেছিলেন। তারা বলেছিলেন আমাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ, থাকা খাওয়া খরচ ও একটি মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করে দেবেন প্রধানমন্ত্রী, তবে তারও মধ্যে আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেল।’
খেলোয়াড় মঙ্গলী বাগচীর মা সুচিত্রা বাগচী বলেন, ‘স্বপ্ন নিয়ে তো মেয়েকে মাঠে পাঠিয়েছিলাম। মার খাওয়ার পরেও তারা ফুটবল ছাড়েনি। এখন তো তাদের কৌশলে মাঠের বাইরে পাঠানো হল। মেয়েটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।
‘প্রতিবেশীরা তাকে এখন হেয় প্রতিপন্ন করছে। আমাদের মেয়েরা ফুটবলের যে সুনাম এনেছিল, তার ধারাবাহিকতা আমরা ধরে রাখতে পারলাম না।’
মঙ্গলী বাগচী ও তার খেলার সাথীরা এখনও সবাই মাঠের বাইরে। ইতোমধ্যে তাদের চারজন খেলোয়াড়ের বিয়ে হয়ে গেছে। কেউ কেউ দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে মাঠে কাজ করছে। বাকিরা বাড়িতে অলস সময় কাটাচ্ছে বলে জানায় সে।
মঙ্গলী বাগচী জানায়, এই ক্লাবের কিশোরীদের উপর নির্ভর করে খুলনা জেলা ও বিভাগীয় নারী ফুটবল দল গঠন করা হতো। তাদের পারফরমেন্সের ওপর নির্ভর করতো খুলনার দল বিজয়ী হবে কি না।
শুধু খুলনা জেলা নয় দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের অন্যান্য জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও কিশোরীরা প্রশিক্ষণ নিত ক্লাব থেকে। ক্লাবের খেলোয়াড় স্বর্ণা, পূজা রায়, জ্যোতি, ঋতু, প্রীতি, তারা, দেবী, সীমা ও সাদিয়া নাসরিন অনূর্ধ্ব ১৯ বিভাগীয় দলের নিয়মিত খেলোয়াড় ছিল। যারা সবাই এখন মাঠের বাইরে।
ক্লাবটি গঠনও করা হয়েছিল খুলনার নারী ফুটবলারদের অগ্রগতির জন্য। স্থানীয় তেঁতুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা বঙ্গমাতা প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে জেলা পর্যায়ে ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত
১০ বছর ও বিভাগীয় পর্যায়ে ৫ বার তারা বিজয়ী বা রানার্সআপ হওয়ার সাফল্য রেখেছিল, তবে তারা যখন প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিকে অধ্যয়ন শুরু করতো, তখন আর ফুটবলের প্রশিক্ষণ পেত না। এই কিশোরীদের ফুটবল খেলার সাথে ধরে রাখতে তেঁতুলতলা সুপার কুইন ফুটবল অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর মূল উদ্যোক্তা ছিলেন ওই বিদ্যালয়েরই শিক্ষক দেবাশীষ মন্ডল।
তিনি বলেন, ‘এতগুলো ফুটবলপ্রেমী মেয়ের কথা চিন্তা করেই আমরা কয়েকজন মিলে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করি। তবে এখন বন্ধ আছে আর্থিক সংকটের কারণে। যারা অর্থ প্রদান করতেন, তারা সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপে আর অর্থ দিচ্ছেন না।’
তিনি আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘এদের মাঠে টিকিয়ে রাখতে এখনও উদ্যোগ না নিলে মেয়েরা খেলা থেকে বের হয়ে যাবে। আর এরা মাঠে না থাকলে খুলনা বিভাগীয় নারী টিমে দুর্বল হয়ে যাবে।’
সুপার কুইন ফুটবল অ্যাকাডেমির কোচ মো. মোস্তাকুজ্জামান বলেন, ‘জেলা ও বিভাগীয় দলে যে নারী খেলোয়াড়রা খেলতেন, তারা প্রায় সবাই আমাদের শিক্ষার্থী। ক্লাবটির সাংগঠনিক দুর্বলতা ও আর্থিক সংকটে বন্ধ হয়ে গেল। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবার উচিত এ ক্লাবটাকে আবার সচল করা। মেয়েদেরকে মাঠে ফিরিয়ে আনা, কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।’
তবে ক্লাবটির এই দুরবস্থা সম্পর্কে জানে না বলে জানান খুলনা জেলা ফুটবলের অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘এই সম্পর্কে আসলে আমার জানা ছিল না। তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা এই নারী খেলোয়াড়রা আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পদ। আমি অতি দ্রুত ক্লাবটাকে সচল করে নারী খেলোয়াড়দেরকে মাঠে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করব।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য