উপকূলীয় এলাকায় নদীতে লবণাক্ততা আর স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড ব্যবহার না করা শেষ পর্যন্ত বাল্যবিয়ের একটি কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বয়োসন্ধিকালের শুরুর দিকে ঋতুস্রাব বা মাসিক চলাকালে অশোধিত নদীর লবণ পানি এবং প্যাডের বদলে অপরিষ্কার কাপড় ব্যবহারে কিশোরীদের যৌনাঙ্গে নানা রোগ হচ্ছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে কম বয়সেই তাদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন অভিভাবকরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, নোংরা কাপড় বা লবণ পানির কারণে যেসব সমস্যা হচ্ছে, তার সমাধান বিয়ে হতে পারে না। বরং বাল্য বয়সে বিয়ে হলে যৌন রোগের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
খুলনা শহর থেকে ৫২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত দাকোপ উপজেলার কালাবগি গ্রাম। ত্রিভুজ আকৃতির ওই গ্রামটির দুই দিক থেকে বয়ে গেছে শিবসা ও সুতারখালি নদী। বারবার নদী ভাঙন, জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের কশাঘাতে গ্রামটির মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে।
প্যাডের বদলে পুরোনো কাপড় ব্যবহার
বাংলাদেশের নারী এবং কিশোরীরা তাদের মাসিকের সময় পুরোনো কাপড়ের টুকরা ব্যবহার করেন বলে উঠে এসেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হাইজিন বেসলাইন রিপোর্টে।
ওই সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৮০ শতাংশেরও বেশি নারী এবং কিশোরী মাসিকের সময় পুরোনো কাপড়ের টুকরা ব্যবহারের কথা জানিয়েছে।
উপকূলীয় এলাকায় কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, উপকূলের কিশোরীরা পুরোনো কাপড় ব্যবহারের পর তা লবণ ও নোংরা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে। সেটাও ঠিকমতো পরিষ্কার হয় না। লজ্জায় তা বাইরে শুকানোও যায় না।
তাছাড়া তারা মাসিকের সময়েও লবণ পানিতে গোসল, নদীতে নেট জাল টানার মতো কাজ করে। যার ফলে সহজে তাদের যৌনাঙ্গে জীবাণুর আক্রমণ হয়।
চিকিৎসকরা জানান, নারীর যৌনাঙ্গে নানা রকমের ব্যাকটেরিয়ার বসবাস। নোংরা পরিবেশ না হলে ক্ষতিকরগুলো বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। মাসিকের সময়ে নোংরা কাপড় ব্যবহার, একই কাপড় বারবার ব্যবহার, লবণ পানিতে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করলে ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
সেসব ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণেই যৌনাঙ্গে ঘা-পাচড়া বা চর্মজাতীয় রোগ হয়। এতে যৌনাঙ্গের ভেতরেও ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে, যা মাসিকের সময়ে কিশোরীদের পেটে ও যৌনাঙ্গে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি করে।
যৌনাঙ্গে ঘায়ের ‘সমাধান’ বিয়ে
গ্রামটির পশ্চিমপাড়া এলাকার একটি মেয়ে পড়ত স্থানীয় নলিয়ান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাকে বিয়ে দেয়া হয়।
মেয়েটি বলে, ‘তখন আমার বয়স ছিল ১৪ বছর। বিয়েতে রাজি ছিলাম না। তবে পরিবারের চাপে করতে হয়েছে। এক বছরের মধ্যেই আমার ছেলেসন্তান হয়। আমি যাদের সঙ্গে লেখাপড়া করতাম, তাদের মধ্যে অনেকের পঞ্চম বা যষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়েই বিয়ে হয়ে যায়।
বিয়ের আগে লেখাপড়ার পাশাপাশি নদীতে নেটজাল টেনে বাগদা ও গলদার রেণু আহরণ করতাম আমি। মাসিকের সময়েও অনেক দিন নদীতে নেমে জাল টানতাম।
প্রথম দিকে মাসিকের ব্যাপারে সচেতন ছিলাম না। একপর্যায়ে আমার যৌনাঙ্গে ঘা হয়ে যায়। তখন মাসিকের সময়ে অনেক কষ্ট হতো। এতেই আমার বিয়ে নিয়ে মা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। বাবার সঙ্গে আলোচনা করেন বিয়ে দেয়ার জন্য।
‘মা আমাকে বোঝায়, এখনই বিয়ে না হলে ভবিষ্যতে রোগ বাড়তে পারে, এমনকি আমার জরায়ুও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই আমি বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম।’
একই গ্রামের আরেক কিশোরীর বিয়ে হয়েছে ১২ বছর বয়সে। সে কখনও নদীতে নেমে জাল টানেনি। তবে তার যৌনাঙ্গেও ঘা হয়েছিল। মাসিকের সময়ে পেটে ও যৌনাঙ্গের ব্যথা বেড়ে যেত।
মেয়েটি বলে, ‘তখন মাসিকের সময়ে আমার পরিত্যক্ত কাপড় ব্যবহার করতে হতো। একই কাপড় বারবার নদীর পানি দিয়ে ধুয়ে আবারও ব্যবহার করতাম। লজ্জায় পরিবারের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতাম না। তবে যৌনাঙ্গে ঘা হলে মাকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তারপর পরিবার আমার বিয়ে দিতে আর দেরি করেনি।’
কালাবগি এলাকায় ৭ বছর ধরে পরিবার পরিকল্পনা কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন অনিমা রায়। তার জন্মও ওই গ্রামে। তিনি বলেন, ‘বয়সন্ধিকালে এখানের কিশোরীরা বেশ উদাসীন থাকে। মাসিকের সময়ে অপরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করে। আর একই কাপড় ময়লা ও লবণাক্ত পানি দিয়ে ধুয়ে বারবার ব্যবহার করে। এতে তাদের যৌনাঙ্গে ঘা-পাচড়া জাতীয় রোগ বেশি হয়।
‘সেখানে স্যানিটারি ন্যাপকিন দোকান বা ফার্মেসিতে কিনতেও পাওয়া যায় না। আবার মাসিকের সময়ে মেয়েশিশুদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার দরকার হয়। বাড়তি পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হয়। তাদের অভিভাবকদের এ বিষয়ে কোনো খেয়াল নেই। তাদের সমাধান হলো মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়া।’
তিনি বলেন, ‘আমার প্রাথমিকের সমাপনীর পর সাত কিলোমিটার দূরে নলিয়ানের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়েছি। তবে সেই সময়ে আমার সহপাঠীরা কেউই ওই গ্রাম থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যায়নি। সবার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। এখন সেই পরিস্থিতির কিছুটা কমেছে, তবে অধিকাংশেরই বাল্যবিয়ে হচ্ছে।’
ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি ৩৫, দশমে ছাত্রী ২০, তাদেরও অনেকে বিবাহিত
বাল্যবিয়ের ফলে উপকূলের স্কুলগুলোতে ছাত্রীদের উপস্থিতি কম। নলিয়ান ম্যধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ছে ২০ জন। অথচ স্কুলটিতে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় ৩৫ জন। চার বছরের মধ্যে লেখাপড়ার থেকে ঝরে গেছে ১৫ জন।
এই ২০ জন ছাত্রীর কেউ কেউ বিবাহিত বলে জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোতাহার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘মেয়েশিশুদের শিক্ষায় রাখতে আমাদের এক রকম যুদ্ধ করতে হয়। একটু বড় হলেই অভিভাবকরা তাদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। প্রতি বছরই ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। অনেকের বিয়ে হয়ে গেলেও আমরা তাদের বাড়িতে গিয়ে বুঝিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করি। কেউ কেউ আমাদের অনুরোধ রাখে, তবে অধিকাংশই রাখে না।’
স্থানীয় সুতারখালী ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য জাহিদা বেগম বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমি ১১ বছরের একটি মেয়ের বিয়ে ঠেকিয়েছি। প্রতি বছর এভাবে প্রায় ১০টি বিয়ে আমি আটকে দিই। তবে অধিকাংশ সময়ে তারা কোনো আয়োজন করে বিয়ে করে না। তাই আমরা জানতে পারি না।’
তিনি বলেন, ‘অনেক সময় অনেক অভিভাবক আমার কাছে অনুরোধ করেন, জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করে মেয়ের বয়স বাড়িয়ে দিতে। তারা রেজিস্ট্রি করে মেয়েদের বিয়ে দিতে চান। তবে আমরা সেটা করি না।’
কিশোরীদের বিয়ে দিতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থানীয় কাজিদের দিয়ে নিবন্ধন করা হচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিয়ের ৫ থেকে ৭ বছর পর বয়স বাড়লে নিবন্ধন করা হয়।
উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা সুরাইয়া সিদ্দীকা বলেন, ‘প্রত্যন্ত ওই এলাকাটি আমাদের উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরে। অধিকাংশ সময়ে বাল্যবিয়ের ঘটনাটি আমরা কিছুই জানতে পারি না। তাই সেখানে বাল্যবিয়ে আমরা এখনও কমাতে পারিনি।’
‘পেট চলে না, প্যাড কিনব কীভাবে’
কম বয়সে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেয়ার বিষয়ে এক কিশোরীর মা বলেন, ‘আমাদের এলাকার মানুষের আয়-রোজগার নদীর পানির ওপর নির্ভারশীল, যা রোজগার হয় তা দিয়ে পেটে চলে না। তাই মেয়েদের মাসিকের সময়ে প্যাড কেনার মতো টাকা আমাদের কাছে থাকে না। তাই পুরোনো কাপড় ব্যবহার করতে হয়।’
মেয়েকে বাল্যবিয়ে দেয়ার পেছনে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘মেয়েকে তো একদিন বিয়ে দিতে হবে, তাকে রোগব্যাধির যন্ত্রণা দিয়ে বিয়ে দিব কেন? বরং বিয়ে হলে নিজের গোপনাঙ্গ নিয়ে মেয়েরা বেশ সতর্ক হয়। রোগব্যাধি হয় না।’
বিনা মূল্যে প্যাড বিতরণের পরামর্শ
উপকূলীয় এলাকায় মেয়েশিশুদের বাল্যবিয়ে রোধ করতে হলে সরকারকে ভর্তুর্কি দিয়ে স্বাস্থ্য সরঞ্জাম দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কোস্টাল ভয়েজ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক কৌশিক দে বাপ্পী।
তিনি বলেন, ‘কালাবগি এলাকার মানুষের যে আয় হয় তা দিয়ে তারা ঠিকমতো খেতেও পারে না। মাসিকের সময়ে মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিন দরকার হয়। ১০ পিসের এক প্যাকেটের দাম ১৩০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। একজন কিশোরীর মাসিক চলাকালে ৩ থেকে ৪ প্যাকেটও দরকার হয়। কিন্তু পরিবারের সে রকম আয় নেই।
‘সরকারের উচিত সেখানের মেয়েশিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য বিনা মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহ করা। একই সঙ্গে বাল্যবিয়ে রোধে ওই এলাকার মা ও কিশোরীদের সচেতনতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।’
বাল্যবিয়ের স্বাস্থ্যঝুঁকি
খুলনা সিভিল সার্জন সুজাত আহমেদ বলেন, ‘বাল্যবিয়ে মেয়েদের স্বাস্থ্য ও জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। অল্প বয়সে বিয়ে হলে তাদের যৌন সংক্রমিত রোগের আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। এমনকি গর্ভধারণ ও সন্তান ধারণের জটিলতা মৃত্যুও হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘লবণাক্ততার প্রভাবে উপকূলের কিশোরীদের যেসব রোগ হচ্ছে, তার সমাধান বিয়েতে হতে তো পারেই না। এতে ওই কিশোরীর জীবন আরও ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দিতে গভর্নমেন্ট হাউসে (থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) পৌঁছেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইউএনবি জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গভর্নমেন্ট হাউসে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান থাই প্রধানমন্ত্রী।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ও আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।
বৈঠকের পর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এশিয়ার দুই দেশের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় নথিতে সই করা হবে। দুই নেতার মধ্যে প্রায় ১৫ মিনিট একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
গভর্নমেন্ট হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাই সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দলের দেয়া গার্ড অফ অনার পরিদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভর্নমেন্ট হাউসের অতিথি বইয়ে সই করার আগে স্রেথা থাভিসিন তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন।
গভর্নমেন্ট হাউস ত্যাগ করার আগে শেখ হাসিনা সেখানে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ছয় দিনের সরকারি সফরে বুধবার ব্যাংককে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন:মেট্রোরেলের চলমান প্রকল্পটি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয় নাগরিক সমাজ।
বৃহস্পতিবার সকালে সাভার উপজেলা পরিষদের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় মেট্রোরেলের এমআরাটি-৫ ও এমআরটি-৬-এর চলমান প্রকল্পটি হেমায়েতপুর থেকে নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ অথবা দিয়াবাড়ি থেকে সাভারের রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এই প্রকল্পে সরকার যদি কোনোরকম জটিলতা মনে করে তাহলে এমআরটি-৬ প্রকল্প উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে বিরুলিয়া হয়ে সাভার রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে তা নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিও জানান তারা।
কর্মসূচিতে সড়কের উপর দিয়ে সম্ভব না হলে মাটির নিচ দিয়ে মেট্রোরেলের যে প্রকল্প রয়েছে, সেই প্রকল্পে সাভারকে যুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন সাভার নাগরিক কমিটির সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি কামরুজামান খান।
তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের প্রকল্প সাভার পৌর এলাকার শেষ সীমানা পর্যন্ত সম্প্রসারণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বরাবর আবেদন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবকে এ ব্যাপারে অবগতপত্র দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে রেলমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালকে পত্র দিয়ে এবং সরাসরি সবকিছু অবগত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত সাভারবাসী রেলসেবা পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছে। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাভারের লাখ লাখ মানুষ মেট্রেরেলের সুবিধা প্রত্যাশা করেন। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া হক, সাভার নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষানুরাগী সালাহউদ্দিন খান নঈম, সাভার পৌর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মিজানুর রহমান মাসুদ, সংস্কৃতিকর্মী স্বরণ সাহা, প্রভাত ডি রোজারিও, বন্ধুরহাট যুব সংগঠনের আলোকুর রহমান, জাগরণী থিয়েটারের সভাপতি আজিম উদ্দিনসহ আরও অনেকে।
বাংলাদেশকে নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনটি নিয়ে বাংলাদেশের বক্তব্য তুলে ধরেন। সূত্র: ইউএনবি
তাতে বলা হয়েছে, ‘প্রতিবেদনটি দেশের স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং নির্দিষ্ট কিছু সংবিধিবদ্ধ সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে মূল্যায়ন করতে শুধু ব্যর্থই হয়নি বরং অবমূল্যায়ন করেছে, যা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর মনোবল ও কার্যকারিতার জন্য ক্ষতিকর।’
সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মুখপাত্র বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে সরকারের অনেক উন্নতি ও অর্জন প্রতিবেদনে স্থান পায়নি। অন্যদিকে বিচ্ছিন্ন ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে।
‘প্রতিবেদনটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়লে স্পষ্ট হবে যে এতে পৃথকভাবে রিপোর্ট করা বা কথিত ঘটনাগুলোর পরিপূর্ণ রেফারেন্স দেয়া হয়নি। এটি সরলীকরণ অনুমাননির্ভর তথ্যে ভরপুর।’
ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী গাজায় অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করার বিষয়ে উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ সরকার। একইসঙ্গে আশা প্রকাশ করেছে, ফিলিস্তিনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, নিরপরাধ নারী ও শিশু হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চলমান প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করবে।
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘গত বছর অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন অজুহাতে এবং বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে অস্থিরতা, সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির বিষয়টি প্রতিবেদনে অনুপস্থিত।
‘বেশিরভাগই স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার (বেনামী উৎসসহ) কাছ থেকে পাওয়া অনুমাননির্ভর তথ্য দিয়ে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো যুক্তরাষ্ট্র সরকার বা সংশ্লিষ্ট সংস্থা সমর্থিত।’
‘প্রতিবেদনটি সহজাত পক্ষপাতদুষ্ট, এটি বেশ স্পষ্ট।’
বাংলাদেশ সরকার অবশ্য বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের অব্যাহত আগ্রহের প্রশংসা করেছে।
মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা যতই প্রত্যাশা করি না কেন, বিশ্বের কোথাও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিখুঁত নয়। মানবাধিকার কোনো শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তবে আর্থ-সামাজিক সীমাবদ্ধতা প্রায়ই এসব অধিকার আদায়ের গতিকে সীমাবদ্ধ করে।’
‘বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
‘যেসব ক্ষেত্রে আরও উন্নতি প্রয়োজন সেগুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে টানা মেয়াদে মানবাধিকার পরিস্থিতির অর্থবহ অগ্রগতি করতে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘যেকোনো বিচক্ষণ পর্যবেক্ষক লক্ষ্য করবেন, এ জাতীয় প্রচেষ্টার ফলে নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, শিশুদের অধিকার, প্রবীণদের অধিকার, শ্রমিকদের অধিকার, অভিযোগ নিষ্পত্তি, ন্যায়বিচারের সুবিধা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা এবং আরও অনেক কিছুতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘প্রতিবেদনে কিছু ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও এটি বিএনপি এবং তার রাজনৈতিক মিত্রদের সহিংসতা ও ভাঙচুরের বিষয়টি তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। ওইসব ঘটনা সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে এবং এর ফলে সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
‘এ ধরনের পরিকল্পিত প্রচারণা থেকে জনসাধারণের জীবন, শৃঙ্খলা ও সম্পত্তি রক্ষায় আইনানুগ পদক্ষেপ এবং প্রতিকারের চেষ্টা করার রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপকেও প্রতিবেদনে দায়ী করা হয়েছে। এটি খুবই হাস্যকর।’
তিনি বলেন, ‘এটা অবশ্যই উল্লেখ করা উচিত যে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করেছে এবং যেকোনো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পূর্ণ পেশাদারত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে।’
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনায় সরকারের আন্তরিক সমর্থন ও পেশাদারত্বের ভিত্তিতে ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৮টি দল দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। বিএনপি ও অন্যান্য দলের নির্বাচন বর্জন সত্ত্বেও ৪২ শতাংশ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে।’
মুখপাত্র বলেন, ‘মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবেদনে বার বার বেশকিছু অভিযোগ বা অনুযোগ উঠে এসেছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক।
‘উদাহরণস্বরূপ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শরণার্থী বা রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করা অব্যাহত রয়েছে, যা মিয়ানমারের নাগরিক বা বাসিন্দা হিসেবে স্বীকৃতির বৈধ দাবিকে ক্ষুণ্ন করছে।’
অন্য একটি উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে দেশের সাংবিধানিক বিধানের পরিপন্থী ‘আদিবাসী জনগণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা অব্যাহত রয়েছে, যা অযৌক্তিক উত্তেজনা ও বিভাজনকে উসকে দেয়ার প্রচেষ্টার নামান্তর।
“আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবেদনটি আলাদাভাবে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিনিময় করা অকাট্য প্রমাণ বা তথ্য বাদ দিয়েছে বা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
“উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শাহীন মিয়া ও মোহাম্মদ রাজু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচারিক কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়েছে, যাতে ঘটনাগুলো আইনের আওতাভুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। জেসমিন সুলতানার ক্ষেত্রে যে বিচারিক প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে তা প্রতিবেদনে যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়নি, বিশেষ করে চলমান যথাযথ প্রক্রিয়ার বিষয়টি।”
মুখপাত্র বলেন, ‘একইভাবে শ্রম অধিকার সম্পর্কিত বিষয়গুলো, বিশেষত ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধকরণ ও কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে, যা বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে সংশ্লিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।’
‘বরাবরের মতোই প্রতিবেদনে আইনগত কর্মকাণ্ডের চিত্র ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বরাবরের মতো এবারও কারখানা, প্রতিষ্ঠান, সরকারি সম্পত্তি বা ব্যবস্থাপনা কর্মীদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের নামে অযাচিত বাধা বা ভাঙচুরের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের গৃহীত আইনানুগ পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
‘প্রতিকার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে গৃহীত প্রশাসনিক ও বিচারিক পদক্ষেপের বিস্তারিত বিবরণ না দিয়ে প্রতিবেদনে মানবাধিকারের পদ্ধতিগত অপব্যবহারের অংশ হিসেবে বেসরকারি ব্যক্তি বা সংস্থার দ্বারা সংঘটিত ঘটনাগুলো প্রকাশের প্রবণতা বজায় রাখা হয়েছে।
মুখপাত্র আরও বলেন, ‘সাধারণভাবে বাংলাদেশ সরকার সামগ্রিক প্রতিবেদনটি নজরে নিয়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে সব নাগরিকের মানবাধিকারের পূর্ণ উপভোগ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি সমুন্নত রাখতে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রক্রিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদার ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রত্যাশায় রয়েছে।’
আরও পড়ুন:শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, ‘পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ একটি অমিত সম্ভাবনাময় দেশ। ষড়ঋতুর এ দেশকে প্রকৃতি যেমন দুহাত ভরে তার বৈচিত্র্যময় সম্পদ ঢেলে দিয়েছে, তেমনি এদেশের মেহনতি মানুষ তাদের আপন শৈল্পিক কারুকার্যের মাধ্যমে অনন্যসাধারণ সামগ্রী প্রস্তুত করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম ও খ্যাতি বৃদ্ধি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘মাটি, বায়ু, পানি, পরিবেশ, কারিগরদের দক্ষতা প্রভৃতি স্বতন্ত্র ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে ছোট এ ভূখণ্ডের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব পণ্যকে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি এর গুণগত মান ও টেকসই সংরক্ষণের দিকে নজর দিতে হবে।’
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বেইলি রোডে বাংলাদেশ ফরিন সার্ভিস অ্যাকাডেমির মাল্টিপারপাস হলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) আয়োজিত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ি, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা ও নরসিংদীর অমৃত সাগর কলাসহ ১৪টি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের নিবন্ধন সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জাকিয়া সুলতানা, ফরিন সার্ভিস অ্যাকাডেমির রেক্টর রাষ্ট্রদূত মাশফী বিনতে শামস ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার সিদ্দীকা।
মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জিআই পণ্যের প্রচার ও প্রসারে আমাদের এখনই কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশের বাংলাদেশ মিশনসমূহ, দেশের সকল আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কেন্দ্রীয়ভাবে এসব পণ্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মেলায় জিআই পণ্যসমূহ প্রদর্শন করা যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ডিপিডিটি, বিসিক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এসব পণ্যের উন্নয়ন ও প্রসারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।’
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন কোনো খালি বাস্কেট নয়, এটি একটি পরিপূর্ণ ভরা বাস্কেট। আমাদের সম্পদের কোনো অভাব নেই, শুধু প্রয়োজন এর সদ্ব্যবহারের। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা, কারিগরি সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব সম্পদ ও পণ্যের প্রচার-প্রসার ঘটাতে হবে।’
জ্যেষ্ঠ শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে এমন ৫০০টি পণ্যের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি। একটু দেরিতে হলেও আমরা এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় আমরা ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন প্রণয়ন করি এবং পরবর্তীতে ২০১৫ সালে এ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জিআই পণ্যকে সুরক্ষা দিতে হবে এবং একই সঙ্গে এর পেটেন্ট দিতে হবে। জিআই পণ্যের প্রচার-প্রসারে বিভিন্ন উৎসব, পালাপার্বণ ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এসব পণ্যকে আমরা উপহার হিসেবে প্রদান করতে পারি। তাছাড়া এসব পণ্য সম্পর্কে টিভিসি (বিজ্ঞাপন), ডকুমেন্টারি তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।’
অনুষ্ঠানে টাঙ্গাইল শাড়িসহ বাংলাদেশের মোট ১৪টি ঐতিহ্যবাহী পণ্যকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সনদ প্রদান করা হয়।
সেগুলো হলো যথাক্রমে- গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা, বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম, মৌলভীবাজারের আগর, মৌলভীবাজারের আগর আতর, মুক্তাগাছার মণ্ডা, যশোরের খেজুরের গুড়, রাজশাহীর মিষ্টি পান এবং জামালপুরের নকশিকাঁথা।
এ নিয়ে ডিপিডিটি কর্তৃক জিআই সনদপ্রাপ্ত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩১টিতে।
আরও পড়ুন:প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ব্যর্থ হলে ৭ জানুয়ারি (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন) যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি ব্যর্থ হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিষয় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘দেশের নির্বাচনে আবেগ-অনুভূতির জন্য কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। যেকোনো মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। এই নির্বাচনে ব্যর্থ হলে বিগত সংসদ নির্বাচনে যে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তা ক্ষুণ্ন হতে পারে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।’
সভায় দেশের সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর পাশাপাশি যুদ্ধকে ‘না’ বলতে বৃহস্পতিবার সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
থাইল্যান্ডে জাতিসংঘের কনফারেন্স সেন্টারে (ইউএনসিসি) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান বলে বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলতে হবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘শান্তির জন্য নতুন এজেন্ডা’র পক্ষে।”
ভাষণে সব ধরনের যুদ্ধ, আগ্রাসন ও নৃশংসতা বন্ধে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুধু হতাহতের সংখ্যা বাড়াচ্ছে, বিশেষত নারী ও শিশুরা এর বলি হচ্ছে। অথচ আলোচনায় আসতে পারে শান্তি।
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি যুদ্ধ ও গণহত্যা চলছে। এটি অবশ্যই বন্ধ হতে হবে। যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না।’
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা তার উদ্যোগ ও শাসনামলে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’র কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আঞ্চলিক বিরোধ ও উত্তেজনা নিষ্পত্তি করতে হবে।’
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে চলমান দাবদাহ আরও ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বৃহস্পতিবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন।
সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর চলমান তাপপ্রবাহ আজ (২৫ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে জানায়, খুলনা বিভাগসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগ এবং রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য