উপকূলীয় এলাকায় নদীতে লবণাক্ততা আর স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড ব্যবহার না করা শেষ পর্যন্ত বাল্যবিয়ের একটি কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বয়োসন্ধিকালের শুরুর দিকে ঋতুস্রাব বা মাসিক চলাকালে অশোধিত নদীর লবণ পানি এবং প্যাডের বদলে অপরিষ্কার কাপড় ব্যবহারে কিশোরীদের যৌনাঙ্গে নানা রোগ হচ্ছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে কম বয়সেই তাদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন অভিভাবকরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, নোংরা কাপড় বা লবণ পানির কারণে যেসব সমস্যা হচ্ছে, তার সমাধান বিয়ে হতে পারে না। বরং বাল্য বয়সে বিয়ে হলে যৌন রোগের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
খুলনা শহর থেকে ৫২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত দাকোপ উপজেলার কালাবগি গ্রাম। ত্রিভুজ আকৃতির ওই গ্রামটির দুই দিক থেকে বয়ে গেছে শিবসা ও সুতারখালি নদী। বারবার নদী ভাঙন, জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের কশাঘাতে গ্রামটির মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে।
প্যাডের বদলে পুরোনো কাপড় ব্যবহার
বাংলাদেশের নারী এবং কিশোরীরা তাদের মাসিকের সময় পুরোনো কাপড়ের টুকরা ব্যবহার করেন বলে উঠে এসেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হাইজিন বেসলাইন রিপোর্টে।
ওই সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৮০ শতাংশেরও বেশি নারী এবং কিশোরী মাসিকের সময় পুরোনো কাপড়ের টুকরা ব্যবহারের কথা জানিয়েছে।
উপকূলীয় এলাকায় কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, উপকূলের কিশোরীরা পুরোনো কাপড় ব্যবহারের পর তা লবণ ও নোংরা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে। সেটাও ঠিকমতো পরিষ্কার হয় না। লজ্জায় তা বাইরে শুকানোও যায় না।
তাছাড়া তারা মাসিকের সময়েও লবণ পানিতে গোসল, নদীতে নেট জাল টানার মতো কাজ করে। যার ফলে সহজে তাদের যৌনাঙ্গে জীবাণুর আক্রমণ হয়।
চিকিৎসকরা জানান, নারীর যৌনাঙ্গে নানা রকমের ব্যাকটেরিয়ার বসবাস। নোংরা পরিবেশ না হলে ক্ষতিকরগুলো বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। মাসিকের সময়ে নোংরা কাপড় ব্যবহার, একই কাপড় বারবার ব্যবহার, লবণ পানিতে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করলে ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
সেসব ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণেই যৌনাঙ্গে ঘা-পাচড়া বা চর্মজাতীয় রোগ হয়। এতে যৌনাঙ্গের ভেতরেও ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে, যা মাসিকের সময়ে কিশোরীদের পেটে ও যৌনাঙ্গে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি করে।
যৌনাঙ্গে ঘায়ের ‘সমাধান’ বিয়ে
গ্রামটির পশ্চিমপাড়া এলাকার একটি মেয়ে পড়ত স্থানীয় নলিয়ান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাকে বিয়ে দেয়া হয়।
মেয়েটি বলে, ‘তখন আমার বয়স ছিল ১৪ বছর। বিয়েতে রাজি ছিলাম না। তবে পরিবারের চাপে করতে হয়েছে। এক বছরের মধ্যেই আমার ছেলেসন্তান হয়। আমি যাদের সঙ্গে লেখাপড়া করতাম, তাদের মধ্যে অনেকের পঞ্চম বা যষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়েই বিয়ে হয়ে যায়।
বিয়ের আগে লেখাপড়ার পাশাপাশি নদীতে নেটজাল টেনে বাগদা ও গলদার রেণু আহরণ করতাম আমি। মাসিকের সময়েও অনেক দিন নদীতে নেমে জাল টানতাম।
প্রথম দিকে মাসিকের ব্যাপারে সচেতন ছিলাম না। একপর্যায়ে আমার যৌনাঙ্গে ঘা হয়ে যায়। তখন মাসিকের সময়ে অনেক কষ্ট হতো। এতেই আমার বিয়ে নিয়ে মা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। বাবার সঙ্গে আলোচনা করেন বিয়ে দেয়ার জন্য।
‘মা আমাকে বোঝায়, এখনই বিয়ে না হলে ভবিষ্যতে রোগ বাড়তে পারে, এমনকি আমার জরায়ুও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই আমি বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম।’
একই গ্রামের আরেক কিশোরীর বিয়ে হয়েছে ১২ বছর বয়সে। সে কখনও নদীতে নেমে জাল টানেনি। তবে তার যৌনাঙ্গেও ঘা হয়েছিল। মাসিকের সময়ে পেটে ও যৌনাঙ্গের ব্যথা বেড়ে যেত।
মেয়েটি বলে, ‘তখন মাসিকের সময়ে আমার পরিত্যক্ত কাপড় ব্যবহার করতে হতো। একই কাপড় বারবার নদীর পানি দিয়ে ধুয়ে আবারও ব্যবহার করতাম। লজ্জায় পরিবারের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতাম না। তবে যৌনাঙ্গে ঘা হলে মাকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তারপর পরিবার আমার বিয়ে দিতে আর দেরি করেনি।’
কালাবগি এলাকায় ৭ বছর ধরে পরিবার পরিকল্পনা কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন অনিমা রায়। তার জন্মও ওই গ্রামে। তিনি বলেন, ‘বয়সন্ধিকালে এখানের কিশোরীরা বেশ উদাসীন থাকে। মাসিকের সময়ে অপরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করে। আর একই কাপড় ময়লা ও লবণাক্ত পানি দিয়ে ধুয়ে বারবার ব্যবহার করে। এতে তাদের যৌনাঙ্গে ঘা-পাচড়া জাতীয় রোগ বেশি হয়।
‘সেখানে স্যানিটারি ন্যাপকিন দোকান বা ফার্মেসিতে কিনতেও পাওয়া যায় না। আবার মাসিকের সময়ে মেয়েশিশুদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার দরকার হয়। বাড়তি পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হয়। তাদের অভিভাবকদের এ বিষয়ে কোনো খেয়াল নেই। তাদের সমাধান হলো মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়া।’
তিনি বলেন, ‘আমার প্রাথমিকের সমাপনীর পর সাত কিলোমিটার দূরে নলিয়ানের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়েছি। তবে সেই সময়ে আমার সহপাঠীরা কেউই ওই গ্রাম থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যায়নি। সবার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। এখন সেই পরিস্থিতির কিছুটা কমেছে, তবে অধিকাংশেরই বাল্যবিয়ে হচ্ছে।’
ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি ৩৫, দশমে ছাত্রী ২০, তাদেরও অনেকে বিবাহিত
বাল্যবিয়ের ফলে উপকূলের স্কুলগুলোতে ছাত্রীদের উপস্থিতি কম। নলিয়ান ম্যধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ছে ২০ জন। অথচ স্কুলটিতে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় ৩৫ জন। চার বছরের মধ্যে লেখাপড়ার থেকে ঝরে গেছে ১৫ জন।
এই ২০ জন ছাত্রীর কেউ কেউ বিবাহিত বলে জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোতাহার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘মেয়েশিশুদের শিক্ষায় রাখতে আমাদের এক রকম যুদ্ধ করতে হয়। একটু বড় হলেই অভিভাবকরা তাদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। প্রতি বছরই ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। অনেকের বিয়ে হয়ে গেলেও আমরা তাদের বাড়িতে গিয়ে বুঝিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করি। কেউ কেউ আমাদের অনুরোধ রাখে, তবে অধিকাংশই রাখে না।’
স্থানীয় সুতারখালী ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য জাহিদা বেগম বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমি ১১ বছরের একটি মেয়ের বিয়ে ঠেকিয়েছি। প্রতি বছর এভাবে প্রায় ১০টি বিয়ে আমি আটকে দিই। তবে অধিকাংশ সময়ে তারা কোনো আয়োজন করে বিয়ে করে না। তাই আমরা জানতে পারি না।’
তিনি বলেন, ‘অনেক সময় অনেক অভিভাবক আমার কাছে অনুরোধ করেন, জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করে মেয়ের বয়স বাড়িয়ে দিতে। তারা রেজিস্ট্রি করে মেয়েদের বিয়ে দিতে চান। তবে আমরা সেটা করি না।’
কিশোরীদের বিয়ে দিতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থানীয় কাজিদের দিয়ে নিবন্ধন করা হচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিয়ের ৫ থেকে ৭ বছর পর বয়স বাড়লে নিবন্ধন করা হয়।
উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা সুরাইয়া সিদ্দীকা বলেন, ‘প্রত্যন্ত ওই এলাকাটি আমাদের উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরে। অধিকাংশ সময়ে বাল্যবিয়ের ঘটনাটি আমরা কিছুই জানতে পারি না। তাই সেখানে বাল্যবিয়ে আমরা এখনও কমাতে পারিনি।’
‘পেট চলে না, প্যাড কিনব কীভাবে’
কম বয়সে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেয়ার বিষয়ে এক কিশোরীর মা বলেন, ‘আমাদের এলাকার মানুষের আয়-রোজগার নদীর পানির ওপর নির্ভারশীল, যা রোজগার হয় তা দিয়ে পেটে চলে না। তাই মেয়েদের মাসিকের সময়ে প্যাড কেনার মতো টাকা আমাদের কাছে থাকে না। তাই পুরোনো কাপড় ব্যবহার করতে হয়।’
মেয়েকে বাল্যবিয়ে দেয়ার পেছনে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘মেয়েকে তো একদিন বিয়ে দিতে হবে, তাকে রোগব্যাধির যন্ত্রণা দিয়ে বিয়ে দিব কেন? বরং বিয়ে হলে নিজের গোপনাঙ্গ নিয়ে মেয়েরা বেশ সতর্ক হয়। রোগব্যাধি হয় না।’
বিনা মূল্যে প্যাড বিতরণের পরামর্শ
উপকূলীয় এলাকায় মেয়েশিশুদের বাল্যবিয়ে রোধ করতে হলে সরকারকে ভর্তুর্কি দিয়ে স্বাস্থ্য সরঞ্জাম দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কোস্টাল ভয়েজ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক কৌশিক দে বাপ্পী।
তিনি বলেন, ‘কালাবগি এলাকার মানুষের যে আয় হয় তা দিয়ে তারা ঠিকমতো খেতেও পারে না। মাসিকের সময়ে মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিন দরকার হয়। ১০ পিসের এক প্যাকেটের দাম ১৩০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। একজন কিশোরীর মাসিক চলাকালে ৩ থেকে ৪ প্যাকেটও দরকার হয়। কিন্তু পরিবারের সে রকম আয় নেই।
‘সরকারের উচিত সেখানের মেয়েশিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য বিনা মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহ করা। একই সঙ্গে বাল্যবিয়ে রোধে ওই এলাকার মা ও কিশোরীদের সচেতনতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।’
বাল্যবিয়ের স্বাস্থ্যঝুঁকি
খুলনা সিভিল সার্জন সুজাত আহমেদ বলেন, ‘বাল্যবিয়ে মেয়েদের স্বাস্থ্য ও জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। অল্প বয়সে বিয়ে হলে তাদের যৌন সংক্রমিত রোগের আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। এমনকি গর্ভধারণ ও সন্তান ধারণের জটিলতা মৃত্যুও হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘লবণাক্ততার প্রভাবে উপকূলের কিশোরীদের যেসব রোগ হচ্ছে, তার সমাধান বিয়েতে হতে তো পারেই না। এতে ওই কিশোরীর জীবন আরও ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পটি শুক্রবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে অনুভূত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ডেটা অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের সাগাইংয়ের ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে।
এ ভূমিকম্পে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত বৃহত্তম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সাহায্য কমে যাওয়ার ফলে সংকট আরও গভীর হওয়ার উদ্বেগের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন (সাত কোটি ৩০ লাখ) ডলার নতুন আর্থিক সহায়তা দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক্সে একটি পোস্টে বলেন, ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিওইএফ) মাধ্যমে এ খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা ১০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করবে।
‘এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা এ ধরনের জীবন রক্ষাকারী সহায়তার মাধ্যমে বোঝা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত।’
সিনহুয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডার অংশ হিসেবে বিদেশি সহায়তায় ব্যাপক কাটছাঁট এবং ফেডারেল ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কিছু অংশ ভেঙে ফেলার বিস্তৃত প্রচেষ্টার মধ্যেই এ অনুদান দেওয়া হলো।
জাতিসংঘের দুটি সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছিল যে, তহবিলের ঘাটতি গত আট বছর ধরে প্রতিবেশী মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য রেশনের পরিমাণ কমিয়ে দেবে।
রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন, তহবিল হ্রাসের ফলে ক্ষুধা পরিস্থিতির অবনতি হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা এবং জ্বালানি হ্রাস পাবে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় সহায়তা প্রদানকারী দেশ ছিল। প্রায় ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে আসছে দেশটি। কিন্তু জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর সাম্প্রতিক তহবিল স্থগিত করার ফলে কমপক্ষে পাঁচটি হাসপাতাল তাদের সেবা কমিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে।
ট্রাম্প ও বিলিয়নেয়ার মিত্র ইলন মাস্ক প্রধান মার্কিন বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি বন্ধ করে দিয়েছেন এবং এর অবশিষ্টাংশগুলোকে পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে একীভূত করেছেন। শত শত কর্মী এবং ঠিকাদারকে বরখাস্ত করেছেন এবং কোটি কোটি ডলারের পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছেন, যার ওপর বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ নির্ভরশীল।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফেব্রুয়ারিতে সমস্ত জীবন রক্ষাকারী সহায়তা এবং এ ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় যুক্তিসঙ্গত প্রশাসনিক খরচ মওকুফ করেছিলেন।
ওয়াশিংটন টাইমস জানায়, এ মাসের শুরুতে ইউএসএআইডি ভেঙে দেওয়ার তত্ত্বাবধানকারী ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যায়ক্রমে সাহায্য বন্ধের প্রস্তাব করেছিলেন।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা হ্রাস করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে।
কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন শিবিরের বাসিন্দারা এখন জনপ্রতি মাসিক ১২ ডলার করে খাদ্য বরাদ্দ পাবেন, যা আগের ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কম।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ডব্লিউএফপি একটি চিঠিতে এই সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানিয়েছে, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।’
তিনি আরও বলেন, ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ১৩ ডলার করে পাবে, যা কক্সবাজারের তুলনায় এক ডলার বেশি।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমানোর পরিকল্পনা ডব্লিউএফপি পূর্বে জানানোর পর এ পরিবর্তন এসেছে।
গত ৫ মার্চ বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশন ডব্লিউএফপি থেকে একটি চিঠি পায়, যেখানে বলা হয়, তহবিল সংকটের কারণে এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাদ্য বরাদ্দ জনপ্রতি ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলার করা হবে।
চিঠিতে শরণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন।
তার সফরের সময় তাকে ছয় ডলারে রোহিঙ্গারা কী খাবার পাবে তার বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছিল। সে সময় অপর্যাপ্ত পরিমাণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার আন্তরিক ও একমত বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাদিসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক ও একমত। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড মনিটর করা হচ্ছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক দাবির নামে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি, অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ, নৈরাজ্য ও সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং তা কখনোই মেনে নেয়া হবে না।
‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সরকার তা কঠোরভাবে প্রতিহত করবে। গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানায় সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সরকার এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ উভয়ের সহযোগিতা কামনা করছে।’
আরও পড়ুন:পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আন্তসীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় কার্যকর আঞ্চলিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের বায়ুদূষণের ৩০-৩৫ শতাংশ আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। তাই এ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক আলোচনার গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব পদক্ষেপ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জরুরি।
তিনি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর কাঠমান্ডু রোডম্যাপ ও অন্যান্য সমঝোতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এগুলো যথেষ্ট নয়, আরও জোরালো উদ্যোগ প্রয়োজন।
কলম্বিয়ার কার্টাগেনায় অনুষ্ঠিত ডব্লিউএইচওর দ্বিতীয় বৈশ্বিক সম্মেলনের বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া সাইড ইভেন্টে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ঢাকাস্থ বাসভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে তিনি বাংলাদেশের বায়ুদূষণ সমস্যা, বিশেষ করে ঢাকার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন।
উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের বহুমাত্রিক বায়ুদূষণ সমস্যা মোকাবিলায় বায়ুমান নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা ডব্লিউএইচওর অন্তর্বর্তীকালীন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ আইনি বিধিমালায় দূষণকারী খাতগুলোর জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
তিনি জানান, ২০২৪ সালে চূড়ান্ত হওয়া জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পিছিয়ে ছিল, তবে এখন তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো মানুষের দূষণজনিত ঝুঁকি কমানো ও পরিষ্কার বায়ুর দিন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে শিগগিরই বাস্তবায়ন শুরু হবে। এ প্রকল্প নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করা, আইন প্রয়োগ জোরদার করা, শিল্প কারখানায় দূষণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং গণপরিবহন খাত আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দেবে।
তিনি ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলোকে ইটভাটামুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনার কথা জানান, যেখানে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকবে।
এ ছাড়া ২০২৫ সালের মে থেকে পুরনো বাস ধাপে ধাপে তুলে দেওয়া হবে, যা পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ ধুলাবালি দূষণ রোধে ঢাকা শহরের খোলা সড়কগুলোতে সবুজায়নের উদ্যোগ এবং রাস্তা পরিস্কারে আরও শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানান।
উপদেষ্টা জানান, অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের ফলে এরই মধ্যে বায়ুমানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এ অগ্রগতি ধরে রাখতে কঠোর নজরদারি ও খাতগুলোর আধুনিকায়ন জরুরি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায় এবং ঢাকার মতো দূষিত শহরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৫-৭ বছর কমে যাচ্ছে। এই সংকট আমাদের সবার জন্য, আমাদের শিশু, বাবা-মা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি। নিষ্ক্রিয়তার মূল্য অনেক বেশি। আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী। কারণ আমি বিশ্বাস করি, এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রযুক্তি ও বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের হাতে রয়েছে, শুধু প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন দরকার।
‘বায়ুদূষণ শুধুই পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি মানবিক সংকট।’
সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি, পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, গবেষক, স্থানীয় প্রশাসন, পরিবহন ও শিল্প খাতের বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তারা দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ রোধে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
আরও পড়ুন:পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর বৃহস্পতিবার। এর অর্থ ‘অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত’ বা ‘পবিত্র রজনী’।
আজ সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে কদরের রজনী।
যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সারা দেশে রাতটি পালন করা হবে।
মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম।
এ রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষণ করা হয়। নির্ধারণ করা হয় মানবজাতির ভাগ্য।
৬১০ সালে কদরের রাতেই মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) কাছে সর্বপ্রথম সুরা আলাকের পাঁচ আয়াত নাজিল হয়। এরপর আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর বহনকৃত ওহির মাধ্যমে পরবর্তী ২৩ বছর ধরে মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে বিভিন্ন সুরা নাজিল করা হয়।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে।
‘শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরা আল- কদর, আয়াত ১-৫)।’
হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে লাইলাতুল কদর সন্ধান করো (বুখারি ও মুসলিম)।’
মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় পবিত্র রাতটি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে দেন। কামনা করেন মহান রবের অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফিরাত।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ রাত থেকে পরের দিন ভোররাত পর্যন্ত মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত করবেন তারা।
এই উপলক্ষে শুক্রবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে রাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের সব মসজিদেই তারাবির নামাজের পর থেকে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন থাকবে।
পবিত্র লাইলাতুল কদর/শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।
এ ছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে।
এশীয় দেশগুলোকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও যৌথ সমৃদ্ধির জন্য সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
চীনের হাইনানে বৃহস্পতিবার বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পরিবর্তনশীল এ বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে যা অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং যৌথ সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।’
আর্থিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোর এ প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন নির্ভরযোগ্য তহবিল দরকার যা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে।’
বাণিজ্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এশিয়া এখনও বিশ্বের অন্যতম কম সংযুক্ত অঞ্চল।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এ দুর্বল সংযুক্তি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবশ্যই বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।’
খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এশীয় দেশগুলোকে অবশ্যই সম্পদ-সাশ্রয়ী কৃষিকে উৎসাহিত এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। টেকসই প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি সমাধান ও জলবায়ুবান্ধব চাষাবাদের ক্ষেত্রে উদ্ভাবন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, যা পুনর্গঠনমূলক, সমবণ্টনমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।
তিনি বলেন,‘আমাদের জ্ঞান, তথ্য ভাগ করে নিতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানে সহযোগিতা আমাদের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিশেষে বলব আমাদের সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে মেধা সম্পদ ও যুবশক্তিকে রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে—একটি আত্মরক্ষা ও আত্মস্থায়ী সমাজ। আমাদের শূন্য-বর্জ্যের জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে একটি পাল্টা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। ভোগ সীমিত রাখতে হবে মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে।
‘আমাদের অর্থনীতিকে সামাজিক ব্যবসার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে হবে, যা ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক কাঠামো হিসেবে উদ্ভাসিত হবে, যেখানে উদ্ভাবন, লক্ষ্য ও দায়িত্ববোধ একীভূত থাকবে।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, বোয়াও ফোরাম ও অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগগুলোকে যুবসমাজ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে হবে, যেন আগামী প্রজন্মের জন্য এশিয়াকে আরও উন্নত করা যায়।
আরও পড়ুন:প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের সরকারি সফরে মঙ্গলবার চীনের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে জানান, অধ্যাপক ইউনূস ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী চায়না সাদার্ন এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ফ্লাইট আজ দুপুর একটায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়ে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর চীনে এটি হলো অধ্যাপক ইউনূসের প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর।
মন্তব্য