১০ বছর আগে আজকের দিনে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে একটি বাসে এক তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং নির্মমভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল। গুরুতর আহত তরুণী এর কয়েক দিন পর মারা যান।
ভারতীয় আইনে ধর্ষণের শিকারদের নাম উল্লেখ করা হয় না। এ কারণে মেয়েটি যখন হাসপাতালের বিছানায় জীবনের জন্য যুদ্ধ করছিল, তখন সংবাদমাধ্যম মেয়েটির নাম দেয় ‘নির্ভয়া’- মানে অকুতোভয়।
আলোচিত ঘটনাটি ভারতের পাশাপাশি গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। দেশজুড়ে প্রবল বিক্ষোভের মুখে নারী নির্যাতনের আইন কঠোর করতে বাধ্য হয় ভারত সরকার।
মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ওই বাসের চালক। তবে ঘটনার কয়েক মাস পর জেলে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ মামলায় ২০২০ সালের মার্চ মাসে আরও চারজনকে ফাঁসি দেয়া হয়; অপ্রাপ্ত থাকায় একজনকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত।
অপরাধটি ভারতে লিঙ্গ সহিংসতাকে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে আসে। ঘটনাটি নির্ভয়ার মা আশা দেবীর জীবনে বড় পরিবর্তন এনেছিল।
আশা দেবীর জীবনের বড় একটা অংশ কেটেছে একজন ‘আদর্শ’ গৃহবধূ হয়ে। রান্না আর সন্তানদের দেখভাল ছিল তার জীবনের মূল লক্ষ্য। গত এক দশকে এই আশা দেবী হয়ে উঠেছেন একজন নারী অধিকারকর্মী। শুরুতে নিজের মেয়ের জন্য... এখন পুরো ভারতের মেয়েদের ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করছেন তিনি।
আশা দেবীর বেদনাকাতর চেহারা প্রায়ই টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ত, যা অনেক ভারতীয়কে নাড়া দেয়
দুই বছর আগে ২০২০ সালে মেয়ের ওপর হামলার অষ্টম বার্ষিকীতে ধর্ষণের শিকার সব নারীর ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করার অঙ্গীকার করেছিলেন আশা। ঘটনার কয়েক মাস পর ফাঁসিতে ঝুলানো হয় অপরাধীদের।
তিনি বলেছিলেন, ‘এভাবেই আমি আমার মেয়ের প্রতি সম্মান জানাতে পারব।’
৫৬ বছরের আশা দেবীর একটি পা বিকল। প্রতিদিনই তাকে ছুটতে হয় ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে। এ অবস্থা নিয়ে পাঁচ সপ্তাহ ধরে প্রতি সন্ধ্যায় তিনি দিল্লির দ্বারকা জেলায় একটি মোমবাতি প্রজ্বলন সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন।
তারা ১৯ বছর বয়সী এক তরুণীর জন্য ন্যায়বিচার দাবি করছেন; যাকে ১০ বছর আগে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছিল। এই অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিকে সম্প্রতি ভারতের শীর্ষ আদালত মুক্ত করে দিয়েছে। আদালত জানায়, আসামিরা যে দোষী তার কোনো প্রমাণ নেই। যদিও শীর্ষ আদালতে একটি রিভিউ পিটিশন দাখিল করা হয়েছে, তার পরও ‘ছাওলা ধর্ষণ’ মামলাটি কেউ যেন ভুলে না যায়, সেটি নিশ্চিতের জন্য আরও অনেকের সঙ্গে আশা দেবী প্রতিবাদ করছেন।
আশা দেবী বলেন, ‘কোনো দিন ১০ আবার কোনো দিন ১৫ জন হয় মিছিলে। এভাবেই আমরা প্রতিদিন প্রতিবাদ করি।
‘আমরা চাই আদালতের আদেশ প্রত্যাহার করা হোক। তাদের (কথিত ধর্ষকদের) আবার জেলে যেতে হবে।’
আসামিদের ছেড়ে দেয়ার পরদিন আশা দেবী নির্যাতিতার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমার তো এখন চুপ থাকার কথা ছিল। কিন্তু আমি তা পারিনি। আমার কেবল মনে হতো কীভাবে কোর্টরুমের বাইরে বসে কাঁদতাম, মাঝে মাঝে ভীষণ একা লাগত। সে জন্য আমি তার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করি এবং তাদের সঙ্গে বসে কাঁদি।’
গুজরাটের আরেকটি আলোচিত ধর্ষণ ঘটনা ছিল বিলকিস বানুর মামলাটি। অভিযুক্তরা বিলকিস বানুর পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে হত্যাও করেছিল। তবে অভিযুক্ত ১১ জনকে খালাস করে দেয় রাজ্য সরকার। এই বিলকিস বানুর প্রতি ন্যায়বিচারের আহ্বান জানিয়ে একটি অনলাইন পিটিশনে সম্প্রতি আশা দেবী তার সমর্থন দেন।
ধর্ষিতাদের পাশে দাঁড়ানো এবং পারিবারিক সহিংসতার শিকারদের পরামর্শ দিতে আশা দেবী তার মেয়ের নামে একটি ট্রাস্ট গড়ে তুলেছেন। এতে আছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ কর্মকর্তা এবং অনেক স্বেচ্ছাসেবক। গত কয়েক বছরে তারা কয়েক ডজন পরিবারের সঙ্গে কাজ করেছে।
আশা দেবী এখন বেশ প্রভাবশালী ব্যক্তি। তার উপস্থিতি প্রায় পুলিশ এবং কর্তৃপক্ষকে তৎপর হতে উদ্বুদ্ধ করে। তবে আশা দেবী জানান, তার মেয়ে মারা যাওয়ার ১০ বছর কেটে গেলেও ভারতের মাটিতে কিছুই বদলায়নি।
নির্ভয়ার ওপর হামলা হয় ২০১২ সালে। সে বছর ভারতে ২৪ হাজার ৯২৩টি ধর্ষণের মামলা রেকর্ড করা হয়েছিল। ২০২০ সালে সংখ্যাটি ৩ হাজার ৬৭৭-এ দাঁড়িয়েছে।
আশা দেবী বলেন, ‘কাগজে আইন তৈরি হয়, প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়। তবে তার বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে।
‘এমনটা চলতে থাকলে ন্যায়বিচারের প্রতি আমাদের বিশ্বাস উঠে যাবে।’
নির্ভয়ার ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ হয়
আশা দেবীর এমন তৎপর হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে তার নিজের অভিজ্ঞতা, ন্যায়বিচারের জন্য তার দীর্ঘ লড়াই। ১০ বছর আগের স্মৃতি এখনও তার চোখে পানি আনে।
তিনি বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বরের মতো দিন আর কাউকে যেন দেখতে না হয়।’
নির্ভয়ার বয়স ছিল কেবল ২৩। সবে ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে প্রশিক্ষণ শেষ করছিল; একটি হাসপাতালে ইন্টার্নশিপের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল।
ছলছল চোখে নির্ভয়ার মা বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে একটি আইডি কার্ড পেয়েছিল। দু-এক দিনের মধ্যে এ কাজে যোগ দিত।’
নির্ভয়ার ওপর নৃশংসতার দিনটি ছিল রোববার। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সে মাকে বলেছিল, ২-৩ ঘণ্টার মধ্যেই ফিরে আসবে।
কয়েক ঘণ্টা পর আশা দেবী মেয়েকে হাসপাতালে রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পান। সে সময় একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে আশা বলেছিলেন, ‘মনে হচ্ছিল যেন তাকে জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ডাক্তার বলেছিলেন, কীভাবে কী করবেন তারা সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না।
নির্ভয়াকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন বাসচালকসহ আরও পাঁচজন। এ সময় নির্ভয়ার পাশে ছিল তার বয়ফ্রেন্ড। তাকেও চরম মারধর করা হয়েছিল। নগ্ন ও রক্তাক্ত যুগলকে তারা রাস্তার ধারে ফেলে দিয়েছিল। কয়েকজন পথচারী তাদের পেয়ে পুলিশ ডাকে। পরে তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়।
আশা দেবী বলেন, ‘আমার মেয়ের সঙ্গে যা ঘটেছিল তা এতটাই নৃশংস ছিল যে সে মরে গিয়ে যেন বেঁচে গেছে। তার পরও সে ১২ দিন বেঁচে ছিল। সবাই তার নাম রেখেছিল নির্ভয়া। সে সত্যিই সাহসী ছিল।’
চোখের পানি মুছতে মুছতে আশা বলেন, ‘হাসপাতালে সে পানির জন্য ছটফট করত। কিন্তু আমরা তাকে এক চামচ পানিও দিতে পারিনি।
‘কেবল মনে হতো কী দোষ ছিল আমার মেয়ের? কেন তাকে এত যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু হলো? আমি তাকে তীব্র যন্ত্রণা পেতে দেখেছি। সেই যন্ত্রণা থেকেই আমি শক্তি সঞ্চার করেছি। তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে আমি তার ন্যায়বিচারের জন্য লড়ব।’
বিচার শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই আশা দেবীকে আদালতে দেখা যেত। তিনি বলেন, ‘একটি শুনানিও মিস করিনি। বাড়িঘর তখন ছেড়েই দিয়েছিলাম।’
লড়াই না ছাড়ার সংকল্পের কথা জানাচ্ছেন আশা দেবী
এসব সত্ত্বেও মামলাটি শেষ হতে এবং ধর্ষকদের ফাঁসিতে ঝুলতে ৭ বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল।
আশা দেবী বলেন, ‘সংকল্প নিয়েছিলাম, যাই হোক হাল ছাড়ব না।’
উত্তর প্রদেশের একটি পিছিয়ে পড়া জেলায় বেড়ে ওঠেন আশা দেবী। হাই স্কুলটি বাড়ি থেকে অনেক দূরে থাকায় অষ্টম শ্রেণির পর স্কুল ছেড়ে দিতে হয়েছিল তাকে। আইনের ভাষা বোঝার জন্য তাই আশাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে প্রায়ই আসতে হতো আশাকে। টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যেত তাকে। আশার এমন অদম্য শক্তি দেখে অনেক ভারতীয় অনুপ্রেরণা পেয়েছিল। আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, সেলিব্রিটি এবং রাজনীতিবিদরা একসময় তার পাশে দাঁড়ান। এ সময়ের মধ্যে ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের মৃত্যুদণ্ড দিলে আসামিদের পরিবার এবং তাদের আইনজীবীরা রিভিউ পিটিশন দাখিল করে এবং শেষ মুহূর্তে সরকারের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চায়।
অধিকারকর্মীরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে গবেষণায় দেখা গেছে মৃত্যুদণ্ড আদতে অপরাধ কমায় না। এটির ফলে আরও বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটে। কারণ অপরাধীরা প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা করে।
তবে আশা দেবী মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে একজন জোরালো সমর্থক। জোর গলায় তিনি বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ড হচ্ছে উচিত বিচার।
‘কিছু মানুষ আছে যারা অভিযুক্তদের মানবাধিকারের কথা বলে। কিন্তু যে মেয়েটিকে ধর্ষণ এবং নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, তার মানবাধিকারের কথা কে বলে? মানুষের মধ্যে ভয় না কাজ করলে কিছুই বদলাবে না।’
আরও পড়ুন:ইউক্রেনে তিন বছর ধরে চলা সংঘাত বন্ধে সৌদি আরবে সোমবার অনুষ্ঠেয় আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন রাশিয়ার একজন আলোচক।
তিনি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেন, এ বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র পৃথকভাবে ইউক্রেন ও রাশিয়ার উভয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
মস্কো থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রস্তাবিত পূর্ণ ও নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করেছে মস্কো। এর পরিবর্তে রাশিয়া শুধু জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর বিমান হামলা বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছে।
সেই প্রস্তাব সত্ত্বেও উভয় পক্ষই আলোচনার আগে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার রাতে দক্ষিণ ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া শহরে রাশিয়ার হামলায় একটি পরিবারের তিনজন নিহত হয়, যা ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবা রবিবার ভোরে জানায়, রাশিয়া কিয়েভে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এগুলো ভবনগুলোতে আঘাত করেছে এবং আগুন লেগে কমপক্ষে দুইজন নিহত হয়েছে।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো বলেন, শত্রুদের বিশাল আক্রমণে শহরের বেশ কয়েকটি জেলায় ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে এবং সাতজন আহত হয়েছেন।
সৌদি আরবে সোমবার ইউক্রেনীয় ও রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমেরিকান আলোচকরা আলাদাভাবে বৈঠক করবেন, যাকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত কিথ কেলগ হোটেলকক্ষের মধ্যে ’শাটল কূটনীতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
রুশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন রাশিয়ার সিনেটর গ্রেগরি কারাসিন।
তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তত কিছুটা অগ্রগতি আশা করছি।"
আরও পড়ুন:ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে শুক্রবার বরখাস্ত করা হয়েছে।
বরখাস্ত করার কয়েক দিন আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলাকে ঘিরে রোনেন বারের ব্যর্থতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, তাকে আর বিশ্বাস করা যায় না।
জেরুজালেম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ইসরায়েল সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আইএসএ পরিচালক রোনেন বারকে বরখাস্তে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রোনেন বারের উত্তরসূরি নিযুক্ত হওয়ার পর অথবা ১০ এপ্রিলের মধ্যে তিনি পদত্যাগ করবেন।
এর আগে গত রবিবার নেতানিয়াহু বলেন, তার ওপর আস্থার অভাব রয়েছে। তাকে এ পদে রাখা যাবে না। তাই বারকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বার ১৯৯৩ সালে শিন বেতে যোগ দিয়েছিলেন।
বারের মেয়াদ আগামী বছর শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০২১ সালের অক্টোবরে পূর্ববর্তী ইসরায়েলি সরকার শিন বেতের প্রধান হিসেবে তাকে নিযুক্ত করেছিল। কিন্তু নেতানিয়াহুর সরকার এক বছর আগেই তাকে পদ থেকে বরখাস্ত করল।
ইসরায়েলে হামাসের হামলা চালানোর আগে থেকেই রোনেন বারের সঙ্গে নেতানিয়াহুর সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। গত ৪ মার্চ হামাসের হামলার ওপর শিন বেতের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন প্রকাশের পর সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে।
আরও পড়ুন:মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) নির্দেশে ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ম্যানিলার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ফিলিপাইন সরকার তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোসের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, হংকং থেকে দেশে আসার পর আইসিসির নির্দেশে পুলিশ দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করেছে। অবৈধ মাদকের বিরুদ্ধে সাবেক এ প্রেসিডেন্টের চালানো অভিযানে ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে।
আইসিসি দুতার্তের শাসনামলে মাদক নির্মূলের নামে চালানো অভিযানে হত্যাকাণ্ডগুলোকে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে তদন্ত করছে। এর মধ্যে ২০১১ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৬ মার্চ পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ও দক্ষিণাঞ্চলের শহর দাভাওয়ের মেয়র থাকার সময় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে ২০১৯ সালে ফিলিপাইনকে রোম সংবিধি থেকে প্রত্যাহার করে নেন দুতার্তে।
দুতার্তে প্রশাসন ২০২১ সালের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক আদালতের তদন্ত স্থগিত করার পদক্ষেপ নিয়েছিল। আইসিসির আদালত হলো সর্বশেষ অবলম্বন।
আইসিসির আর বিচার করার এখতিয়ার নেই—এমন যুক্তি দিয়ে সে সময় তার প্রশাসন বলেছিল, ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে একই অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।
আরও পড়ুন:স্কটল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টার্নবেরি গলফ রিসোর্টে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরাতে ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনপন্থি ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন‘ নামের একটি সংগঠন এ হামলার দায় স্বীকার করেছে।
স্থানীয় সময় শনিবার এক বিবৃতির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করে সংগঠনটি।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবরে জানানো হয়, ট্রাম্পের গাজা নিয়ে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য ও পরিকল্পনার কারণে ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনি মানুষ ও তাদের সমর্থকরা। এরই জেরে এ হামলা ঘটিয়েছে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন সংগঠনের সদস্যরা।
টার্নবেরি রিসোর্টটি ভাঙচুর করার পাশাপাশি রিসোর্টের দেয়ালে লাল রং দিয়ে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিভিন্ন গ্রাফিতি অংকন করা হয়েছে। রিসোর্টের সবুজ মাঠে লাল রং দিয়ে লেখা হয়েছে ‘গাজা বিক্রির জন্য নয়’।
সংগঠনটির কর্মীরা জানান, ট্রাম্প গাজাকে নিজের সম্পত্তির মতো মনে করে, যা খুশি তাই করতে পারে না। তারই প্রতিবাদ এটা।
তারা বলেন, ‘আমরা ট্রাম্পকে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে চাই, আমাদের প্রতিরোধ থেকে তার নিজের সম্পত্তিও নিরাপদ নয়।’
ফিলিস্তিনিনের এই হামলাকে ট্রাম্প ‘শিশুসুলভ, অপরাধমূলক’ কার্যক্রম হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডে তার পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আসবে না।
আরও পড়ুন:দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক সমীকরণ ঢেলে সাজাতে উঠেপড়ে লেগেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এ উদ্যোগ পৌঁছেছে ইরানের দ্বারপ্রান্তেও।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে চিঠি পাঠিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। আলোচনায় না বসলে সামরিক অভিযানের হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্কে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি ইরানের নেতাদের উদ্দেশে চিঠি পাঠিয়েছেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির উদ্দেশে বলেছি, আশা করি আপনি আলোচনায় বসবেন। কারণ, এটি ইরানের জন্য ভালো হবে।’
একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে ট্রাম্প বলেন, আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানালে বিষয়টিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হবে যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় তেহরানের কল্যাণে সমঝোতাই যুক্তিসঙ্গত হবে।
যদিও ট্রাম্পের এই দাবি অস্বীকার করেছে জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী মিশন। তারা জানিয়েছে, এমন কোনো চিঠির বিষয়ে অবগত নয় তারা।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে ট্রাম্পের চিটি পাঠানোর বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
তিনি শুক্রবার এএফপিকে বলেন, শক্তি প্রয়োগ করলে তারা পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন না।
আরও পড়ুন:ইরান ও রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি বাড়াবে চীন।
নতুন টার্মিনাল ও জাহাজ চালু হওয়ায় মার্চ থেকে চীন তেল আমদানি বৃদ্ধি করবে বলে খবর পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি সত্ত্বেও চীন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে ‘অয়েল প্রাইস’ নামের ওয়েবসাইট।
অয়েল প্রাইসের তথ্য অনুযায়ী, ইরান ও রাশিয়া থেকে চীনের তেল আমদানি দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ওয়েবসাইটটির উদ্ধৃতি দিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া শনিবার এ খবর জানায়।
কয়েকজন বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ী বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে জানান, চীন তেল ট্যাংকারগুলোতে পরিবর্তন এনেছে যাতে সেগুলো আর নিষেধাজ্ঞার আওতায় না থাকে। এর ফলে রাশিয়া এবং ইরানের সঙ্গে তেল বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে পারবে বেইজিং। ফলে ২০২৫ সালের মার্চ মাসে এই দুই দেশ থেকে চীন বেশি পরিমাণে অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারবে। এ আমদানি ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল।
নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকা চীনা তেল ট্যাংকারগুলো এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু করেছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
ইরান ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন:ইরানের সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশের চবাহার কাউন্টিতে ইসলামি বিপ্লবী হাউজিং ফাউন্ডেশনের সদরদপ্তরে বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জয়শুল আজল।
স্থানীয় সময় শনিবার সকালে বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটে।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী হাউজিং ফাউন্ডেশন সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য আবাসন তৈরি এবং হাউজিং ইউনিট নির্মাণ করে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনার উদ্ধৃতি দিয়ে এএফপি এ খবর জানায়।
পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে ইসলামি বিপ্লবী হাউজিং ফাউন্ডেশনের দপ্তরে সাউন্ড বোমা বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করে।
প্রাদেশিক প্রসিকিউটর মেহদি শামসাবাদি জানান, শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই বিস্ফোরণ ঘটে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
তিনি জানান, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনীগুলো এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
বিস্ফোরণে ভবনটির একাংশের ক্ষতি হয়েছে।
পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী ইরানের সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশে বিগত বছরগুলোতে সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় অনেকবার সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। যেসব গোষ্ঠী এসব হামলা চালিয়েছে, তাদের সঙ্গে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সম্পর্ক রয়েছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বছরের ২৬ অক্টোবর সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশের তাফতান কাউন্টির গোহার কুহ এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় ১০ পুলিশ সদস্য নিহত হন। ওই হামলারও দায় এ সংগঠন স্বীকার করে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য