১০ বছর আগে আজকের দিনে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে একটি বাসে এক তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং নির্মমভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল। গুরুতর আহত তরুণী এর কয়েক দিন পর মারা যান।
ভারতীয় আইনে ধর্ষণের শিকারদের নাম উল্লেখ করা হয় না। এ কারণে মেয়েটি যখন হাসপাতালের বিছানায় জীবনের জন্য যুদ্ধ করছিল, তখন সংবাদমাধ্যম মেয়েটির নাম দেয় ‘নির্ভয়া’- মানে অকুতোভয়।
আলোচিত ঘটনাটি ভারতের পাশাপাশি গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। দেশজুড়ে প্রবল বিক্ষোভের মুখে নারী নির্যাতনের আইন কঠোর করতে বাধ্য হয় ভারত সরকার।
মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ওই বাসের চালক। তবে ঘটনার কয়েক মাস পর জেলে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ মামলায় ২০২০ সালের মার্চ মাসে আরও চারজনকে ফাঁসি দেয়া হয়; অপ্রাপ্ত থাকায় একজনকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত।
অপরাধটি ভারতে লিঙ্গ সহিংসতাকে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে আসে। ঘটনাটি নির্ভয়ার মা আশা দেবীর জীবনে বড় পরিবর্তন এনেছিল।
আশা দেবীর জীবনের বড় একটা অংশ কেটেছে একজন ‘আদর্শ’ গৃহবধূ হয়ে। রান্না আর সন্তানদের দেখভাল ছিল তার জীবনের মূল লক্ষ্য। গত এক দশকে এই আশা দেবী হয়ে উঠেছেন একজন নারী অধিকারকর্মী। শুরুতে নিজের মেয়ের জন্য... এখন পুরো ভারতের মেয়েদের ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করছেন তিনি।
আশা দেবীর বেদনাকাতর চেহারা প্রায়ই টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ত, যা অনেক ভারতীয়কে নাড়া দেয়
দুই বছর আগে ২০২০ সালে মেয়ের ওপর হামলার অষ্টম বার্ষিকীতে ধর্ষণের শিকার সব নারীর ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করার অঙ্গীকার করেছিলেন আশা। ঘটনার কয়েক মাস পর ফাঁসিতে ঝুলানো হয় অপরাধীদের।
তিনি বলেছিলেন, ‘এভাবেই আমি আমার মেয়ের প্রতি সম্মান জানাতে পারব।’
৫৬ বছরের আশা দেবীর একটি পা বিকল। প্রতিদিনই তাকে ছুটতে হয় ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে। এ অবস্থা নিয়ে পাঁচ সপ্তাহ ধরে প্রতি সন্ধ্যায় তিনি দিল্লির দ্বারকা জেলায় একটি মোমবাতি প্রজ্বলন সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন।
তারা ১৯ বছর বয়সী এক তরুণীর জন্য ন্যায়বিচার দাবি করছেন; যাকে ১০ বছর আগে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছিল। এই অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিকে সম্প্রতি ভারতের শীর্ষ আদালত মুক্ত করে দিয়েছে। আদালত জানায়, আসামিরা যে দোষী তার কোনো প্রমাণ নেই। যদিও শীর্ষ আদালতে একটি রিভিউ পিটিশন দাখিল করা হয়েছে, তার পরও ‘ছাওলা ধর্ষণ’ মামলাটি কেউ যেন ভুলে না যায়, সেটি নিশ্চিতের জন্য আরও অনেকের সঙ্গে আশা দেবী প্রতিবাদ করছেন।
আশা দেবী বলেন, ‘কোনো দিন ১০ আবার কোনো দিন ১৫ জন হয় মিছিলে। এভাবেই আমরা প্রতিদিন প্রতিবাদ করি।
‘আমরা চাই আদালতের আদেশ প্রত্যাহার করা হোক। তাদের (কথিত ধর্ষকদের) আবার জেলে যেতে হবে।’
আসামিদের ছেড়ে দেয়ার পরদিন আশা দেবী নির্যাতিতার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমার তো এখন চুপ থাকার কথা ছিল। কিন্তু আমি তা পারিনি। আমার কেবল মনে হতো কীভাবে কোর্টরুমের বাইরে বসে কাঁদতাম, মাঝে মাঝে ভীষণ একা লাগত। সে জন্য আমি তার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করি এবং তাদের সঙ্গে বসে কাঁদি।’
গুজরাটের আরেকটি আলোচিত ধর্ষণ ঘটনা ছিল বিলকিস বানুর মামলাটি। অভিযুক্তরা বিলকিস বানুর পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে হত্যাও করেছিল। তবে অভিযুক্ত ১১ জনকে খালাস করে দেয় রাজ্য সরকার। এই বিলকিস বানুর প্রতি ন্যায়বিচারের আহ্বান জানিয়ে একটি অনলাইন পিটিশনে সম্প্রতি আশা দেবী তার সমর্থন দেন।
ধর্ষিতাদের পাশে দাঁড়ানো এবং পারিবারিক সহিংসতার শিকারদের পরামর্শ দিতে আশা দেবী তার মেয়ের নামে একটি ট্রাস্ট গড়ে তুলেছেন। এতে আছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ কর্মকর্তা এবং অনেক স্বেচ্ছাসেবক। গত কয়েক বছরে তারা কয়েক ডজন পরিবারের সঙ্গে কাজ করেছে।
আশা দেবী এখন বেশ প্রভাবশালী ব্যক্তি। তার উপস্থিতি প্রায় পুলিশ এবং কর্তৃপক্ষকে তৎপর হতে উদ্বুদ্ধ করে। তবে আশা দেবী জানান, তার মেয়ে মারা যাওয়ার ১০ বছর কেটে গেলেও ভারতের মাটিতে কিছুই বদলায়নি।
নির্ভয়ার ওপর হামলা হয় ২০১২ সালে। সে বছর ভারতে ২৪ হাজার ৯২৩টি ধর্ষণের মামলা রেকর্ড করা হয়েছিল। ২০২০ সালে সংখ্যাটি ৩ হাজার ৬৭৭-এ দাঁড়িয়েছে।
আশা দেবী বলেন, ‘কাগজে আইন তৈরি হয়, প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়। তবে তার বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে।
‘এমনটা চলতে থাকলে ন্যায়বিচারের প্রতি আমাদের বিশ্বাস উঠে যাবে।’
নির্ভয়ার ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ হয়
আশা দেবীর এমন তৎপর হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে তার নিজের অভিজ্ঞতা, ন্যায়বিচারের জন্য তার দীর্ঘ লড়াই। ১০ বছর আগের স্মৃতি এখনও তার চোখে পানি আনে।
তিনি বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বরের মতো দিন আর কাউকে যেন দেখতে না হয়।’
নির্ভয়ার বয়স ছিল কেবল ২৩। সবে ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে প্রশিক্ষণ শেষ করছিল; একটি হাসপাতালে ইন্টার্নশিপের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল।
ছলছল চোখে নির্ভয়ার মা বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে একটি আইডি কার্ড পেয়েছিল। দু-এক দিনের মধ্যে এ কাজে যোগ দিত।’
নির্ভয়ার ওপর নৃশংসতার দিনটি ছিল রোববার। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সে মাকে বলেছিল, ২-৩ ঘণ্টার মধ্যেই ফিরে আসবে।
কয়েক ঘণ্টা পর আশা দেবী মেয়েকে হাসপাতালে রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পান। সে সময় একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে আশা বলেছিলেন, ‘মনে হচ্ছিল যেন তাকে জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ডাক্তার বলেছিলেন, কীভাবে কী করবেন তারা সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না।
নির্ভয়াকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন বাসচালকসহ আরও পাঁচজন। এ সময় নির্ভয়ার পাশে ছিল তার বয়ফ্রেন্ড। তাকেও চরম মারধর করা হয়েছিল। নগ্ন ও রক্তাক্ত যুগলকে তারা রাস্তার ধারে ফেলে দিয়েছিল। কয়েকজন পথচারী তাদের পেয়ে পুলিশ ডাকে। পরে তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়।
আশা দেবী বলেন, ‘আমার মেয়ের সঙ্গে যা ঘটেছিল তা এতটাই নৃশংস ছিল যে সে মরে গিয়ে যেন বেঁচে গেছে। তার পরও সে ১২ দিন বেঁচে ছিল। সবাই তার নাম রেখেছিল নির্ভয়া। সে সত্যিই সাহসী ছিল।’
চোখের পানি মুছতে মুছতে আশা বলেন, ‘হাসপাতালে সে পানির জন্য ছটফট করত। কিন্তু আমরা তাকে এক চামচ পানিও দিতে পারিনি।
‘কেবল মনে হতো কী দোষ ছিল আমার মেয়ের? কেন তাকে এত যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু হলো? আমি তাকে তীব্র যন্ত্রণা পেতে দেখেছি। সেই যন্ত্রণা থেকেই আমি শক্তি সঞ্চার করেছি। তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে আমি তার ন্যায়বিচারের জন্য লড়ব।’
বিচার শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই আশা দেবীকে আদালতে দেখা যেত। তিনি বলেন, ‘একটি শুনানিও মিস করিনি। বাড়িঘর তখন ছেড়েই দিয়েছিলাম।’
লড়াই না ছাড়ার সংকল্পের কথা জানাচ্ছেন আশা দেবী
এসব সত্ত্বেও মামলাটি শেষ হতে এবং ধর্ষকদের ফাঁসিতে ঝুলতে ৭ বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল।
আশা দেবী বলেন, ‘সংকল্প নিয়েছিলাম, যাই হোক হাল ছাড়ব না।’
উত্তর প্রদেশের একটি পিছিয়ে পড়া জেলায় বেড়ে ওঠেন আশা দেবী। হাই স্কুলটি বাড়ি থেকে অনেক দূরে থাকায় অষ্টম শ্রেণির পর স্কুল ছেড়ে দিতে হয়েছিল তাকে। আইনের ভাষা বোঝার জন্য তাই আশাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে প্রায়ই আসতে হতো আশাকে। টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যেত তাকে। আশার এমন অদম্য শক্তি দেখে অনেক ভারতীয় অনুপ্রেরণা পেয়েছিল। আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, সেলিব্রিটি এবং রাজনীতিবিদরা একসময় তার পাশে দাঁড়ান। এ সময়ের মধ্যে ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের মৃত্যুদণ্ড দিলে আসামিদের পরিবার এবং তাদের আইনজীবীরা রিভিউ পিটিশন দাখিল করে এবং শেষ মুহূর্তে সরকারের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চায়।
অধিকারকর্মীরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে গবেষণায় দেখা গেছে মৃত্যুদণ্ড আদতে অপরাধ কমায় না। এটির ফলে আরও বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটে। কারণ অপরাধীরা প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা করে।
তবে আশা দেবী মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে একজন জোরালো সমর্থক। জোর গলায় তিনি বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ড হচ্ছে উচিত বিচার।
‘কিছু মানুষ আছে যারা অভিযুক্তদের মানবাধিকারের কথা বলে। কিন্তু যে মেয়েটিকে ধর্ষণ এবং নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, তার মানবাধিকারের কথা কে বলে? মানুষের মধ্যে ভয় না কাজ করলে কিছুই বদলাবে না।’
আরও পড়ুন:সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির যুবরাজ (ক্রাউন প্রিন্স) হিসেবে দেশটির প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান তার বড় ছেলে শেখ খালেদ বিন মোহাম্মদ আল নাহিয়ানের নাম ঘোষণা করেছেন।
গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট আল নাহিয়ান তার বড় ছেলে শেখ খালেদকে দেশটির রাজধানী আবুধাবির যুবরাজ ঘোষণা করেছেন। শেখ খালেদ বিন মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ১৯৮২ সালের ৮ জানুয়ারি আবুধাবিতে জন্মগ্রহণ করেন।
শেখ খালেদ আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অফ শারজাহ থেকে স্নাতক এবং ২০১৪ সালে কিংস কলেজ লন্ডন থেকে যুদ্ধ অধ্যয়ন নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
৪১ বছর বয়সী নতুন যুবরাজ শেখ খালিদ আবুধাবি এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য। তিনি আবুধাবি এক্সিকিউটিভ অফিসের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করছেন । এছাড়া আমিরাতের সাম্প্রতিক বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দেখা শোনা করছেন তিনি।
আমিরাতের যুবরাজ হিসেবে শেখ খালেদের নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছে সৌদি আরব ও কাতার। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাকি আমিরাতগুলোও যুবরাজ হিসেবে তার নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্ষমতা আবুধাবিতে আরও কেন্দ্রীভূত করতে ছেলেকে সেখানকার যুবরাজ বানিয়েছেন শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ । অঢেল তেল সম্পদের কারণে আবুধাবি সাতটি আমিরাত নিয়ে গঠিত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজনৈতিক রাজধানী।
শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ক্যাথলিক চার্চের প্রধান পোপ ফ্রান্সিস। তাকে সেখানে কয়েক দিন থাকতে হবে।
স্থানীয় সময় বুধবার ভ্যাটিকানের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতির বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮৬ বছর বয়সী পোপ কিছুদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, তবে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি।
বিবৃতিতে বলা হয়, হাসপাতালে কয়েক দিন তাকে উপযুক্ত মেডিক্যাল থেরাপি নিতে হবে।
এতে উল্লেখ করা হয়, রোগমুক্তি কামনা করে অনেকের বার্তা পেয়েছেন পোপ। তিনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বিবিসিকে জানায়, ইতালির রোমের গেমেলি হাসপাতালে পোপের সঙ্গে রাত্রিযাপন করার কথা রয়েছে তার ঘনিষ্ঠতম কর্মীদের।
বছরের ব্যস্ততম সময়ে অসুস্থ হয়েছেন পোপ। ইস্টারের ছুটির আগে তাকে বেশ কিছু অনুষ্ঠান ও সার্ভিসে অংশ নিতে হবে।
এ সপ্তাহান্তে পাম সানডে ম্যাস রয়েছে। এ ছাড়া আগামী সপ্তাহে রয়েছে হলি উইক ও ইস্টার উদযাপন।
চলতি বছরের এপ্রিলের শেষের দিকে হাঙ্গেরি সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে পোপ ফ্রান্সিসের।
আরও পড়ুন:বিশ্ব অর্থনীতির একটি প্রধান চালিকা শক্তি এশিয়া অঞ্চল। ২০২৩ সালে এশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। আগের বছর ২০২২ সালে যা ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। সে সুবাদে এই অঞ্চলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি ত্বরান্বিত হবে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার বাস্তবতায় এটি একটি আশার খবর।
বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া থেকে প্রকাশিত ‘এশিয়ান ইকোনমিক আউটলুক অ্যান্ড ইন্টিগ্রেশন প্রগ্রেস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য, ‘একটি অনিশ্চিত বিশ্ব: চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে উন্নয়নের জন্য সংহতি ও সহযোগিতা’।
চীনের হাইনান প্রদেশে মঙ্গলবার শুরু হয়েছে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া-২০২৩ এর বার্ষিক সম্মেলন। ছিয়ংহাই সিটির বোয়াও শহরে ৩১ মার্চ পর্যন্ত তা চলবে। বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান ব্যক্তি, ব্যবসায়ী নেতাসহ প্রায় দুই হাজার ব্যক্তি অংশ নিচ্ছেন এই সম্মেলনে।
ফোরামে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং পারস্পরিক ঐকমত্যকে সুসংহত করার লক্ষ্যে উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিকরণ, দক্ষতা ও নিরাপত্তা, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি বর্তমান ও ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা হয়।
মূল প্রতিবেদনে আশা করা হয়েছে, ‘এ বছর অঞ্চলটি বিশ্বকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের দিকে নিয়ে যাবে। বৈশ্বিক চাহিদা দুর্বল হওয়া এবং অনিশ্চয়তার চাপ সত্ত্বেও এশীয় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে। যদিও বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ায় এশিয়ান রপ্তানিকারকদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু চীনের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক পরিবর্তন এশিয়ার বাকি অংশ এবং বিশ্বের জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত পাঠাচ্ছে।’
বোয়াও ফোরামের সেক্রেটারি জেনারেল লি বাওডং বলেছেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনীতি অনিশ্চয়তা থেকে উত্তরণে এশিয়া মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে। বিশ্বব্যাপী মন্দার মধ্যে এশিয়া সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিকে ত্বরান্বিত করবে। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক উৎপাদন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও আর্থিক একীকরণ এবং সংহতির অগ্রগতি অব্যাহত রাখবে।’
প্যানেল আলোচনায় বলা হয়, আগামী দিনের অনিশ্চয়তা ও চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও চীনের দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে এশিয়ার অর্থনীতি এ বছর শক্তিশালী অবস্থানে যাবে।
বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া একটি বেসরকারি অলাভজনক আন্তর্জাতিক সংস্থা। এশিয়ার ২৮টি দেশ নিয়ে ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি এশিয়ায় আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রচার এবং আঞ্চলিক অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করে আসছে।
চীন তার পুরো হাইনান দ্বীপকে বিশ্বব্যাপী প্রভাবশালী এবং উচ্চ স্তরের ফ্রি ট্রেড পোর্ট বা এফটিপিতে পরিণত করার লক্ষ্যে ২০২০ সালে একটি মাস্টার প্ল্যান প্রকাশ করে। তারপর থেকে হাইনান এফটিপি-র উন্নয়নে সহায়তার জন্য শূন্য শুল্ক এবং সহজ বাজার ও বিদেশি বিনিয়োগ সহজ করাসহ নীতি সহজীকরণ করেছে।
বলা হয়, হাইনানে ২০২৩ সালের মধ্যে স্বতন্ত্র কাস্টমস ব্যবস্থা চালুর জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে চীন। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ দ্বীপ জুড়ে নিজস্ব কাস্টমস কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে বোয়াও ফোরাম এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সংলাপ ও ঐকমত্য তৈরি করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চে পরিণত হয়েছে।
সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে বাস উল্টে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২২ জনে দাঁড়িয়েছে। প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
স্থানীয় সময় সোমবার বিকেলে পবিত্র নগরী মক্কায় যাওয়ার পথে সৌদি আরবের আসির অঞ্চলের আবহা জেলায় ৪৭ জন যাত্রী নিয়ে একটি বাস ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়ে। ওইসব যাত্রীর মধ্যে ৩৫ জন বাংলাদেশি রয়েছেন।
জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট জানিয়েছে, দুর্ঘটনাস্থলটি জেদ্দা থেকে আনুমানিক ৬০০ কিলোমিটার দূরে। সবশেষ পাওয়া খবরে এই দুর্ঘটনায় ২২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ৮ বাংলাদেশি রয়েছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
কনস্যুলেটের কর্মকর্তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৮ জন বাংলাদেশিকে শনাক্ত করেছেন।
দূতাবাসের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দূতাবাস কর্মকর্তারা সার্বিক বিষয় তদারকি করছেন।
এর আগে আরব নিউজ জানায়, সৌদি আরবে বাস উল্টে আগুন ধরে যাওয়ায় অন্তত ২০ ওমরাহ যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ২৯জন।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আল-খাবারিয়া জানায়, আসির প্রদেশের আকাবা শার এলাকায় সোমবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার দিকে একটি সেতুর ওপর বাসটি উল্টে আগুন ধরে যায়। বাসের যাত্রীরা ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা নগরীতে যাচ্ছিলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রেক কাজ না করায় সেতুর এক পাশে গিয়ে ধাক্কা খায় বাসটি। এতেই হতাহতের ঘটনা ঘটে। মরদেহ ও আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা।
সৌদি প্রেসের তথ্যানুযায়ী, ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ আকাবা শারের সড়কটি প্রায় ৪০ বছর আগে পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বিনিয়ামিন নেতানিয়াহু চাপের মুখে পড়েছেন। বিচারবিভাগে সংস্কারের এক বিতর্কিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে গিয়ে এই চাপে পড়েছেন তিনি।
নেতানিয়াহু এবং তার ডানপন্থি সরকার এ চাপ সামাল দিতে পারবে কি না- সে প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে প্রতিবেদেন জানিয়েছে বিবিসি।
দেশটিতে প্রায় সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বিক্ষোভ করছেন, সারা দেশ জুড়ে ডাকা ধর্মঘটের কারণে বিমান ও সমুদ্র বন্দর অচল হয়ে পড়েছে, ব্যাংক ও দোকানপাটও বন্ধ। ডাক্তার ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারাও ধর্মঘটে যোগ দিচ্ছে।
এর আগে সংস্কারের উদ্যোগ বন্ধ করার ডাক দিয়ে বরখাস্ত হনসরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। দেশটির শক্তিশালী সামরিক বাহিনীও এর বিরোধিতা করছে, এমনকি ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এই পরিকল্পনা পরিত্যাগ করার জন্য।
এই বিরোধিতাকারীরা বলছেন, বিচার বিভাগে যেসব পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে- তা ইসরায়েলের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেবে।
সূত্র বলছে, তীব্র বিক্ষোভের মুখে নেতানিয়াহু শিগগিরই এ পরিকল্পনা কয়েক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করার করার কথা ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। তবে এ খবর নিশ্চিত করা যায়নি।
সোমবার সকালের দিকে, এক টুইটারে এক বার্তা পোস্ট করে নেতানিয়াহু সব পক্ষের প্রতিবাদকারীদের দায়িত্বশীল আচরণ করা এবং সহিংসতা থেকে বিরত থাকার ডাক দিয়েছেন।
এমন এক সময় তার এই আহ্বানের কথা জানা গেল যখন ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ পুলিশ কর্মকর্তাদের বরাতে বলেছে, খুব শিগগিরই তারা উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পাবার আশঙ্কা আছে, কারণ উগ্র দক্ষিণপন্থি কর্মীরাও সোমবার কেনেসেটে বিক্ষোভ করবে বলে ঘোষণা করেছে।
নেতানিয়াহুর বিতর্কিত পরিকল্পনায় সরকারকে বিচারক নিয়োগকারী কমিটির উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।এ ছাড়া আইনপ্রণেতাদের কেউ দায়িত্ব পালনের জন্য অযোগ্য হলে, তাকে অপসারণ করাটা আদালতের জন্য আগের চাইতে কঠিন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ হয়েছে। তারা মনে করেন, এ বিধানটি ক্ষমতাসীন নেতা নেতানিয়াহুর স্বার্থ বিবেচনা করে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:বিচারিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনার বিরোধিতা করায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, যার প্রতিবাদে সড়কে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার ইসরায়েলি।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইসরায়েলের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র তেল আবিবে স্থানীয় সময় রোববার গভীর রাতে গায়ে নীল, সাদা রঙের পতাকা জড়ানো বিক্ষোভকারীরা প্রধান একটি মহাসড়ক অবরোধ করেন। তারা সেখানে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ জানান।
অন্যদিকে জেরুজালেমে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত বাসভবনের সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় পুলিশের।
বিচারিক ব্যবস্থায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে নেতানিয়াহু যে পরিকল্পনা করেছেন, তা নিয়ে দেশটিতে কয়েক মাস ধরে সংকট চলছে। এ পরিকল্পনার প্রতিবাদে প্রতিনিয়ত বিক্ষোভ হচ্ছে দেশটিতে।
ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি, সাবেক একাধিক নিরাপত্তাপ্রধান নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা নিয়ে শঙ্কিত। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্ররা এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে জানিয়েছে উদ্বেগ।
এতকিছুর পরও পরিকল্পনা থেকে সরে আসার কোনো ইঙ্গিত দেননি নেতানিয়াহু। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওয়েভ গ্যালান্তকে বরখাস্ত করার মধ্য দিয়ে নেতানিয়াহু ও তার মিত্ররা বিচার ব্যবস্থায় বদল আনার পরিকল্পনাটি চলতি সপ্তাহেই বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:জেরুজালেমে মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান আল-আকসা মসজিদে রমজানের প্রথম জুমার নামাজ আদায় করেছেন হাজার হাজার মুসল্লি।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, এই অঞ্চলে ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনের উত্তেজনার মধ্যেই শুক্রবার রমজান মাসের প্রথম জুমা আদায় করেন মুসল্লিরা।
মসজিদ প্রাঙ্গণের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছে জর্ডানীয় ওয়াকফ ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল।
কাউন্সিলের প্রধান আজম আল খতিব বলেন, শুক্রবার আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ হয় এবং পরিস্থিতি ভালো রয়েছে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেন, জুমায় ৮০ হাজার মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। তবে জর্ডানীয় ওয়াকফ ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল জানায়, এক লাখ মুসল্লি জুমার নামাজ আদায় করেছেন ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম পবিত্র মসজিদটিতে।
ইসরায়েলি পুলিশ জানায়, রমজানের প্রথম জুমার কথা বিবেচনায় এদিন শহরজুড়ে ২৩০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
পশ্চিম তীরের নাবলুস শহর থেকে আল-আকসায় নামাজ পড়তে আসেন ৬২ বছরের আবুদ হাসান। তিনি বলেন, মুসলিমদের জন্য বছরের গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস রমজান। তাই আল-আকসায় নামাজ আদায় করতে এসেছি।
শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ আদায় করতে পেরে তিনি মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
রমজানে সহিংসতা হ্রাসে চলতি মাসে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলি প্রতিনিধি দল মিসরে বৈঠকে সম্মত হয়েছে। তবে পশ্চিমতীরে গত বৃহস্পতিবার রমজানের শুরুতেই ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এক ফিলিস্তিনি যুবক নিহত হন। গত জানুয়ারি থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সহিংসতায় ৮৭ ফিলিস্তিনি নিহত হন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য