ইরানের নৈতিকতা পুলিশের বিলুপ্তি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের এই বিভাগের হেফাজতে এক তরুণীর মৃত্যুর পর ইরানজুড়ে যে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়েছে তা সামলাতে সোমবার নৈতিকতা পুলিশকে বিলুপ্তির কথা জানান দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল।
ইরানে পুলিশের এই বিভাগটি ‘গশত-ই-এরশাদ’ নামে পরিচিত। ইসলামিক শাসনের দেশটিতে বিদ্যমান কঠোর পোশাকবিধি অমান্যকারীদের আটক করে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব এই নৈতিকতা পুলিশের ওপর। ইরানের সাবেক কট্টরপন্থি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের শাসনামলে বাহিনীটি গঠন করা হয়েছিল।
অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মাদ জাফর মোনতাজেরি বলেছিলেন, গশত-ই-এরশাদ নামে পরিচিত নৈতিকতা পুলিশের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। পোশাকবিধির বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে।
নৈতিকতা পুলিশ ব্যবস্থা কার্যকর আছে কি না, তা স্পষ্ট হওয়ার জন্য রোববার জানতে চাইলে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ান সরাসরি উত্তর দেননি।
সার্বিয়ার বেলগ্রেডে সফরে থাকা আমিরাবদুল্লাহিয়ান বলেছিলেন, ‘ইরানে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা নিয়ে কোনো আপস হয় না। এটা নিয়ে সন্দেহের কোনো সুযোগ নেই। সবকিছু খুব ভালোভাবে চলছে।’
সেপ্টেম্বরে ইরানের রাজধানী তেহরানে ২২ বছরের এক তরুণীকে গ্রেপ্তার করে নৈতিকতা পুলিশ। মাহসা আমিনি নামের ওই তরুণীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি। ১৬ সেপ্টেম্বর হেফাজতে থাকা অবস্থায় মাহসার মৃত্যু হয়। সেদিন সন্ধ্যা থেকে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ইরানের জনগণ। নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে গোটা ইরানে।
সোমবার সকাল পর্যন্ত নৈতিকতা পুলিশের দায়িত্বে থাকা ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কার্যক্রম স্থগিত করার কোনো নিশ্চিতকরণ পাওয়া যায়নি।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, নৈতিকতা পুলিশ বাহিনীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মনতাজেরি বা সরকারের বিচার বিভাগীয় শাখার নেই।
ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং অধিকারকর্মীরা সোমবারের প্রকাশিত খবর নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ এটিকে ইরানের জাতীয় ছাত্র দিবস ঘিরে ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি বানচালে শাসকদের চক্রান্ত বলে বর্ণনা করেছেন। আগামী বুধবার ইরানের জাতীয় ছাত্র দিবস।
টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল চেঞ্জের ইরানের প্রোগ্রামের প্রধান কাসরা আরাবি টুইটারে বলেছেন, “ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনির শাসন ‘নৈতিকতা পুলিশ’ বিলুপ্ত করেছে এমন প্রতিবেদনগুলো ভুয়া খবর।
“ইরানে আগামীকাল থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের বড় বিক্ষোভ থেকে মিডিয়ার মনোযোগকে বিভ্রান্ত করার জন্য এই বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালানো হয়েছে। কেন মূলধারার মিডিয়া এই প্রসঙ্গ উপেক্ষা করল?”
Reports that Khamenei’s regime has abolished the “morality police” are fake news (even regime now denies it). This disinfo was propagated today to distract media attention from the 3 days of major protests in #Iran which begin tomo. Why did mainstream media ignore this context?
— Kasra Aarabi (کسری اعرابی) (@KasraAarabi) December 4, 2022
আরব উপদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্কের জন্য ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলের চেয়ারওম্যান হান্না নিউম্যান রোববার প্রতিবেদনগুলোকেকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
নিউম্যান টুইটে লেখেন, “ইরান সরকারের ‘নৈতিকতা পুলিশ’-এর বিল্পপতি ঘোষণা করা ছিল একটি জনসংযোগ স্টান্ট। মৃত্যুদণ্ড, নির্বিচারে আটক এবং ধর্ষণ আজও দুঃখজনক বাস্তবতা।"
#ServiceTweet: #Iran|ian Regime announcing the end of “morality police” is a PR Stunt.#Executions, arbitrary #detention and #rape are the sad reality, also today.
— Hannah Neumann (@HNeumannMEP) December 4, 2022
So, I hope the latter will make it into our main news channels every day.
তেহরান নৈতিকতা পুলিশের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে…এ খবর যেদিন অ্যাটর্নি জেনারেল মনতাজেরি জানিয়েছিলেন, সেদিন পার্লামেন্টে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। কঠোর পোশাকবিধি শিথিল করতে সংবিধান পরিবর্তনে সংস্কারবাদী এবং বিক্ষোভকারীদের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন স্পিকার মোহাম্মদ গালিবাফ।
গালিবাফ শনিবার বলেছিলেন, ‘দেশে সংবিধান ছাড়া আমাদের আর কোনো বৈধ দলিল নেই। একটি নতুন শাসনের জন্য আলোচনায় আমাদের ফোকাস সংবিধান বাস্তবায়নের দিকে থাকা উচিত, বিধান পরিবর্তনের দিকে নয়।’
ইরানের সংবিধান সংস্কারের দাবিকে দুই-তৃতীয়াংশ আইনপ্রণেতা সমর্থন করলে অথবা সর্বোচ্চ নেতা খামেনি অনুরোধ করলে, গণভোটের আয়োজন করতে হবে।
রাষ্ট্রীয় ধর্মের মতো ইরানের ‘অ-সংশোধনযোগ্য নীতি’ ছাড়া যেকোনো বিষয়ে গণভোটের সুযোগ হয়েছে ইরানের সংবিধানে।
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যমান হচ্ছে তুরস্কে সোমবারের ভূমিকম্পে ভয়াবহতার চিত্র। সেই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে হৃদয়বিদারক কিছু ছবি।
সিএনএনের বুধবারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের কাছে কাহরামানমারাসে মর্মান্তিক একটি দৃশ্য ধরা পড়েছে এএফপির ক্যামেরায়। এতে দেখা যায়, কংক্রিটের নিচে চাপা পড়া মেয়ের নিথর হাতটি ধরে বসে আছেন এক ব্যক্তি।
ধ্বংসস্তূপে বসা ওই ব্যক্তির নাম মেসুত হানজার। তার মেয়েটির বয়স ছিল ১৫ বছর।
ভূমিকম্পের পর প্রায় জমে যাওয়া তাপমাত্রায় উদ্ধার তৎপরতার সময় পরিবারটির বাসার ভাঙা জানালা, তছনছ হয়ে যাওয়া ফার্নিচার চোখে পড়ে উদ্ধারকারীদের।
স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় এরই মধ্যে প্রায় ৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছে কমপক্ষে ৪০ হাজার মানুষ।
ভূমিকম্পের ৪৮ ঘণ্টা পরও ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিতদের উদ্ধার করা হচ্ছে। কাহরামানমারাসে মঙ্গলবার ১৪ বছর বয়সী এক শিশুকে উদ্ধারের অভিযান সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে আরও অনেককে জীবিত উদ্ধারের আশা করা হচ্ছিল, তবে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বেড়েই চলছে মৃতের সংখ্যা।
আরও পড়ুন:তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে সোমবার ভোররাতের ভয়াবহ ভূমিকম্পে দেশটি ও সীমান্তবর্তী সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১০ হাজারে পৌঁছেছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বুধবার এ তথ্য দিয়েছে সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই দেশে মৃতের সংখ্যা এখন ৯ হাজার ৭০০-এর বেশি। এখনও আটকা আছেন অনেক মানুষ। উদ্ধার তৎপরতা চলছে।
এখনও বিভিন্ন ভবনের নিচে আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধারে প্রচণ্ড শীতের মধ্যে কাজ করে যাচ্ছেন কর্মীরা। ব্যাপকতার কারণে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা অনেক বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা বলেছেন, কয়েক হাজার শিশুর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি প্রদেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। তবে ১৯৯৯ সাল থেকে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পের পর ধীর ও অপর্যাপ্ত উদ্ধার তৎপরতার অভিযোগ করে তুরস্কের ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন শহরের বাসিন্দারা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
বাড়ি ও স্বজন হারানো মালাতিয়ার বাসিন্দা মুরাত আলিনাক বলেন, ‘এখানে একজনও আসেনি। বরফের মধ্যে আমরা আছি। নেই ঘর কিংবা সহায়-সম্বল। আমি কী করব? কোথায় যাব?’
সোমবারের ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্পের কয়েক ঘণ্টা পরই প্রায় সমশক্তিশালী আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয় তুরস্কে। এতে ধসে পড়ে হাজারো বাড়ি, হাসপাতাল, স্কুলসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় হাজার হাজার মানুষ আহত হন; গৃহহীন হয়ে পড়েন অসংখ্য মানুষ।
ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, বাজে আবহাওয়া, প্রয়োজনীয় রসদ ও ভারী যন্ত্রপাতির অভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকায় প্রবেশে বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারকারীদের। কিছু কিছু এলাকা জ্বালানি ও বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন:ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্কে উদ্ধারকাজে সহায়তার জন্য ১৬টি বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর পাঠাচ্ছে মেক্সিকো।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এই কুকুরগুলো ২০১৭ সালে মেক্সিকোতে ভূমিকম্পের পর রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে উদ্ধারকাজে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। ওই ভূমিকম্পে দেশটিতে শত শত মানুষ প্রাণ হারান।
এই কুকুরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ফ্রিডা। ছয় বছর আগে হওয়া ভূমিকম্পে ১২ জন মানুষকে জীবন্ত উদ্ধারে সহায়তা করেছিল এটি । গত বছরের নভেম্বরে কুকুরটি মারা যায়।
তবে ফ্রিডা না থাকলেও তুরস্কে আসছে তার সঙ্গে থাকা বেশ কয়েকটি কুকুর।
মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্সেলো ইব্রার্ড কুকুরগুলোকে প্লেনে ওঠানোর আগের একটি ছবি টুইটারে পোস্ট করেছেন।
১৯৮৫ সালে মেক্সিকোতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে পাঁচ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
শক্তিশালী ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ১০টি প্রদেশে আগামী তিন মাসের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
মঙ্গলবার তুরস্কের এ প্রেসিডেন্ট এ ঘোষণা দেন।
এদিকে তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্ত এলাকায় তীব্র ঠান্ডার কারণে উদ্ধার কাজ ব্যহত হচ্ছে।
টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে এরদোয়ান বলেন, আমাদের উদ্ধার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি
প্রায় এক শতক পর এমন ভয়াবহ ভূমিকম্প দেখল তুরস্ক। এরইমধ্যে উদ্ধারকাজের ধীরগতি নিয়ে দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এরদোয়ান সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা হচ্ছে।
স্থানীয় সোমবার ভোররাতে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি আফটারশকও হয়েছে। ভয়াবহ এ দুর্যোগে তুরস্কে ৩ হাজার ৫৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি সিরিয়ায়ও মারা গেছে ১ হাজার ৬০২ জন।
আরও পড়ুন:ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া তুরস্কের বেশ কয়েকটি শহরের মতো একটি আদানা। সেখানে ধসে যাওয়া ভবনগুলোকে সরানো হচ্ছে ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে। ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত অথবা মৃত উদ্ধার হলেই আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে প্রকম্পতি হচ্ছে ওই শহর।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ধ্বংস্তূপে পরিণত হওয়া তুরস্কের শহরটিতে আন্তর্জাতিক উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত হয়েছে।
সোমবার স্থানীয় সময় ভোররাত ৩টা ২০ মিনিটে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার প্রথম ভূমিকম্প আঘাত হানে। প্রায় ৯০ সেকেন্ড ধরে কাঁপতে থাকে পুরো শহর। এসময় অনেকেই জুতা-জামা কাপড় না নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়েন। এরমধ্যেই শহরটির তাপমাত্রা আরও কমছে।
তুরস্কের চেয়ে অবস্থা আরও ভয়াবহ সিরিয়ার। দেশটির সীমান্তে কড়াকড়ি থাকায় সেখানে আন্তর্জাতিক উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছাতে পারেননি।
তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে প্রায় ১৭ লাখ বাস্তচ্যুত মানুষ বাস করে। তারা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে ওই এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিল।
তুরস্ক ও সিরিয়ায় আঘাত হানা ভয়াবহ ভূমিকম্পে হাজার হাজার মানুষ হতাহত হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান দেশে সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে সহযোগিতার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সর্বশেষ তুরস্কে ১৯৩৯ সালের ডিসেম্বরে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে, যাতে ৩৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন:
তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর উদ্ধার কাজের জন্য একটি দল পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ। ১০ সদস্যের এই উদ্ধারকারী দলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের পাঁচজন করে সদস্য থাকবেন। একইসঙ্গে জরুরি চিকিৎসা সেবা দিতে আরেকটি মেডিক্যাল টিম যাচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক সেহেলী সাবরীন মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানান।
দলে ফায়ার সার্ভিসের ১২ সদস্য থাকছেন
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে পাঠানো সম্মিলিত সাহায্যকারী দলের সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের ১২ সদস্যের একটি উদ্ধারকারী দল প্রস্তুত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স থেকে উদ্ধারকারী দলের সদস্য হিসেবে যারা যাচ্ছেন তারা ইন্টারন্যাশনাল সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ অ্যাডভাইজারি গ্রুপ-এর স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী বিধ্বস্ত ভবনে অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজ পরিচালনা বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্ধার কাজ পরিচালনার জন্য এটি ফায়ার সার্ভিসের প্রথম বিদেশ গমন। বর্তমান সরকারের সময়ে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধির এটি একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জন্য একটি অভাবনীয় স্বীকৃতি। আমি বিশ্বাস করি, ফায়ার সার্ভিসের সব সদস্য নিজের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আস্থার প্রতিদান দেবেন।’
ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান এক বার্তায় জানান, বাংলাদেশ সরকার তুরস্ককে এই দুর্যোগে সহায়তা দিতে চেয়েছে। তারা আজ অথবা আগামীকাল উদ্ধারকারী দল পাঠাতে পারে।
সোমবার তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে। ভূপৃষ্ঠের ১৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার গভীরে ছিল এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। ভূমিকম্পের কারণে তুরস্ক ও সিরিয়ায় মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। দুই দেশে মৃত্যুর সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সংখ্যাটি আরও অনেক বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভূমিকম্পের পরপরই বিভিন্ন দেশ এবং সংস্থা তুরস্ক ও সিরিয়ায় সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কাছে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন।
সূত্র বলছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকেই তুরস্ককে উদ্ধারকারী দল পাঠানোর বিষয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়। তুরস্ক দ্রুত এ বিষয়ে তাদের আগ্রহের কথা জানায়।
আরও পড়ুন:ভোর থেকে ধসে পড়া ভবনের নিচে আটকা পড়া ওমের এল কুনেদের বান্ধবী ও তার পরিবারের সদস্যরা এখন কেমন আছেন, কেউ তা জানে না। দুপুর পর্যন্তও ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল, তবে এরপর থেকে বন্ধ হয়ে যায় যোগাযোগের নম্বরটি।
তুরস্কের সানলিউরফা শহরের এক ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে যুবক ওমের বিষণ্ন হয়ে তার বান্ধবী ও তাদের স্বজনদের খবরের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন।
গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, ‘এই ধ্বংসস্তূপের নিচে একটি পরিবার আছে, আমি জানি।’
বান্ধবী ও তার পরিবারের সদস্যরা হয়তো বেঁচে ফিরবেন, উদ্ধারকর্মীরা তাদের বের করে আনবেন চূর্ণবিচূর্ণ হওয়া এই ভবন থেকে- এ আশায় কয়েক ঘণ্টা সময় কেটে গেছে তার।
ওমের বলেন, ‘সকাল ১১টা, পরে দুপুরেও তো ওকে আমি ফোনে পাচ্ছিলাম। এরপর থেকে নম্বর বন্ধ পাচ্ছি। ওদের কাউকে পাচ্ছি না। ও এখানেই আছে। হয়তো তার ফোনের ব্যাটারির চার্জ চলে গেছে।’
যেখানে ওমের দাঁড়িয়ে ছিলেন তার পাশেই ধ্বংসস্তূপ থেকে মরদেহ ও জীবিতদের উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছিল অসংখ্য গাড়ি। বিপর্যস্ত এক পরিবারকে বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে আশ্রয় খুঁজতে দেখা গেল।
শুধু ওমের না, এমন আরও বহু মানুষ অপেক্ষায় আছেন তাদের স্বজনদের। কেউ হারিয়েছেন স্বজন, কেউ বা বন্ধুবান্ধব। অবশ্য জীবিতও উদ্ধার হয়েছেন অনেকে।
স্থানীয় সময় সোমবার ভোররাত ৪টা ১৭ মিনিটে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয় সিরিয়া সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে, যার উৎপত্তিস্থল কাহরামানমারাস প্রদেশের পাজারসিক জেলায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) সংস্থার তথ্যমতে, প্রথমে আঘাত হানা ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। এরপর অন্তত ১০০ বার কেঁপে ওঠে (আফটার শক) এ দুই দেশ।
তবে এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল সোমবার দুপুর দেড়াটার দিকে আঘাত হানা ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পটি। এর উৎপত্তিস্থল ছিল তুর্কির কাহরামানমারাস শহর।
তুরস্ক ও সিরিয়ায় আঘাত হানা ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা ৪ হাজার ৩০০ ছাড়িয়েছে বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাতে মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছে বিবিসি, সিএনএন ও রয়টার্সের মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
এরই মধ্যে বিশ্বের ৬৫টি দেশ থেকে আর্থিকসহ নানা ধরনের সহায়তা পাঠানো হয়েছে তুরস্কে। উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছেন ১৩ হাজারের বেশি কর্মী।
বৃষ্টি, অতি ঠান্ডা এবং তুষারপাতের কারণে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। অনেক মানুষকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য