সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা তিন্নি (ছদ্মনাম)। স্বামী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ভালোবাসার বিয়ের দুই-তিন বছর পরই বদলে যায় স্বামীর আচরণ।
ছোটোখাটো বিষয়ে অকথ্য গালাগালি দিয়ে শুরু, দিনে দিনে তা গড়ায় মারধরে। ততদিনে তিন্নি দুই কন্যাসন্তানের জননী।
একপর্যায়ে তিন্নিকে চাকরি ছেড়ে দিতে চাপ দেন স্বামী। বলা হয় শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে ‘ভালো গৃহিণী’ হিসেবে সংসার করতে হবে। তবে ঘুরে দাঁড়ান তিন্নি। দুই সন্তানকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন সংসার ছেড়ে।
তিন্নি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই মেয়েকে একসঙ্গে ভালো স্কুলে পড়ানোর সামর্থ্য না থাকায় বড় মেয়েকে বাবার কাছে রেখেছি। সে ভিকারুননেসা নূন স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ে। সুযোগ পেলেই সে আমার কাছে আসে।’
আর ছোট মেয়ে তিন্নির স্কুলেই তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।
তিন্নি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুরুষতান্ত্রিকতার কাছে একটা জায়গায় হার মেনেছি। তবে সংসার ছাড়লেও নিজের পরিচয় ছাড়িনি।’
মিরপুরের একটি এলাকায় সাবলেট বাসায় থাকেন রোজিনা আক্তার (ছদ্মনাম)। স্বামীর আগে বিয়ের কথা না জেনেই ভালোবেসে তাকে বিয়ে করেন। এরপর স্বামীর আগের স্ত্রীর সঙ্গে একই বাসায় থাকতে হচ্ছে রোজিনাকে।
স্বল্পশিক্ষিত এই নারী হাসপাতালে আয়ার চাকরি করেন। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয় স্বামীর মারধর। আগের স্ত্রীও নিয়মিত স্বামীর মারধরের শিকার। এসব মেনে নিয়েই সংসার করছেন রোজিনা।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুরুষ মানুষ, রাগ উঠলে একটু আকটু গায়ে হাত তুলবোই। খাওন পড়োন তো দিতাছে।’
সোহানা আর মিথুনের (ছদ্মনাম) তিন বছরের প্রেমের সম্পর্ক। প্রায় এক বছর আগে মিথুন দেশের বাইরে চলে যান। সোহানার সঙ্গে কাটানো কিছু ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি এবং ভিডিও রয়েছে তার কাছে।
সোহানা এই সম্পর্ক থেকে বের হতে চাইলে মিথুন ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন। এই নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে সোহানার।
নারী সহিংসতা প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে প্রতি বছর ২৫ নভেম্বর পালন করা হয় নারীর প্রতি সহিংসতা নির্মূল দিবস। দেশের অধিকারকর্মী ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাজে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বাড়লেও নারীর প্রতি সহিংস আচরণ উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়ে গেছে।
এ অবস্থা দূর করতে পুরুষের মানসিকতায় পরিবর্তন আনার ওপর জোর দিচ্ছেন তারা। একই সঙ্গে নারীর জন্য মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতের তাগিদও দেয়া হয়েছে।
'আমরাই পারি' জোটের প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা কমছে- এটা বলা যাবে না। সহিংসতার ধরনে হয়তো কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। এখন ফেসবুকের মতো বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া এসেছে এবং এগুলোভিত্তিক সহিংসতা বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আগে এক ধরনের সহিংসতা ছিল যে মেয়েদের লেখাপড়া করতে দেয়া হতো না, বাইরে যেতে দেয়া হতো না অথবা অনেক ছোট বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়া হতো। ওই জায়গাগুলোতে পরিবর্তন হয়েছে। তবে মেয়েদের ওপর নির্দেশনা চাপিয়ে দেয়ার ব্যাপারটি রয়েই গেছে। একেক সময় একেক ধরনের নির্দেশনা সমাজ বা পরিবার মেয়েদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। সিস্টেমের তো চেঞ্জ হয়নি।’
জিনাত আরা বলেন, ‘আমাদের শিকড়েই সমস্যা রেখে দেয়া হলে ডাল কেটে বা ডাল ছেঁটে কোনো লাভ নেই। কারণ শিকড় থেকে আবার সেই জিনিসটাই বের হচ্ছে। এ কারণে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি কমছে না। এখন যখন মেয়েদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, তারা বাইরে যাচ্ছে, চাকরি করছে। এত চাপের পরও মেয়েরা প্রতিবাদ করছে। তখন আরও বেশি শারীরিকভাবে তাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি করেও যখন দেখছে কিছু হচ্ছে না, তখন তাদের মানসিক, সামাজিকভাবে বয়কটের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের কোণঠাসা করে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলা ভবনের সামনের রাস্তায় এক তরুণীকে হেনস্তার ঘটনায় গত ১২ জুন প্রতিবাদ সমাবেশ করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে রোববার বিকেলে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। ফাইল ছবি
তিনি বলেন, ‘আগের দিনে মেয়েদের রান্নার জন্য মসলা বাটতে হতো। আধুনিকায়নের কারণে এখন গুঁড়া মসলা পাওয়া যাচ্ছে। সেটা সময় বাঁচিয়েছে, কিন্তু সেই মসলার নাম দেয়া হয়েছে রাঁধুনী। অর্থাৎ মেয়েরাই রান্না করবে- এটাই যেন নির্ধারিত। আধুনিকায়নের সঙ্গে মানসিকতার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।’
পুরুষ ও নারীর মানসিকতায় পরিবর্তন ঘটানোর ওপর জোর দিয়ে জিনাত আরা বলেন, ‘ছেলেরা ঘরের কাজ করলে মেয়েরা সারপ্রাইজড হয়ে যায়। মেয়েরা কিন্তু বাইরে ঠিকই যাচ্ছে, আবার সমানভাবে ঘর সামলাচ্ছে। বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্কদের খেয়াল রাখছে।
‘তবে পুরুষ ঘরে আসেনি। তারা শুধু বাইরেই রয়ে গেছে। ঘরের কাজ যে শুধু মেয়েদের নয়- এই মানসিকতা পুরোপুরি তৈরি হয়নি। তাই মেয়েদের ঘরের কাজের মূল্যায়ন হয়নি। অন্যদিকে নারীকে এখনও নারী হিসেবেই দেখতে চায় পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। মেয়েরা অফিসে কাজ করছেন ঠিকই, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জিং কাজ তাদের দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নারীদের অবস্থার পরিবর্তনে অনেক কাজ করছি, কিন্তু পুরুষের মানসিকতা পরিবর্তনে খুবই কম কাজ করেছি। পুরুষের পরিবর্তন হওয়াটা খুব জরুরি। দক্ষতা ও যোগ্যতার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমানভাবে কাজ করতে পারে- এমন মানসিকতা পুরুষের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে আনা গেলেই নারীর প্রতি সহিংসতা কমানো যাবে।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার শুভ্রা চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতার মূলে রয়েছে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের মধ্যে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি।’
তিনি বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের অনেক উদ্যোগ ও আইন রয়েছে; কিন্তু সেগুলো প্রয়োগের ক্ষেত্রে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। জামিন অযোগ্য মামলার আসামি কোনো না কোনো প্রভাব খাটিয়ে জামিনে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া তদন্তে গাফিলতি, উপযুক্ত প্রমাণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণে ব্যর্থতা, সাক্ষীর অপর্যাপ্ততা, পারিপার্শ্বিক চাপ ইত্যাদি কারণে মামলাগুলো গতি হারাচ্ছে।’
নারীর প্রতি সহিংসতা দূর করতে আইনের যথাযথ প্রয়োগের ওপর জোর দিয়ে ব্যারিস্টার শুভ্রা বলেন, ‘এ জন্য সবার নজরদারি বাড়াতে হবে। শিক্ষাঙ্গন ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ঠেকাতে হাইকোর্টের রায়ের আলোকে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির অভিযোগ গ্রহণ সংক্রান্ত কমিটি করতে হবে। একই সঙ্গে সুষ্ঠু ও পক্ষপাতহীন তদন্তসাপেক্ষে দ্রুত অপরাধীর বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো সহিংস ঘটনা ঘটলে কিছুদিন প্রতিবাদ, শোভাযাত্রা করে সাময়িকভাবে থামানো গেলেও এটি তো শেষ হয়ে যায় না। কারণ সহিংসতার প্যাটার্নে পরিবর্তন এসেছে, মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি। আমরা মানসিকভাবে মানবিক পরিবর্তন ঘটাতে না পারলে এসব ঘটতেই থাকবে।
‘শুধু পুরুষতান্ত্রিক সমাজের দোষ দিয়ে তো লাভ নেই। জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন বা লিঙ্গবৈষম্যের মানসিকতা পরিবার থেকেই শিখে বড় হয় অনেক শিশু। ভালোবাসা, বন্ধন, সমতা- এই শিক্ষাগুলো পরিবার থেকেই আসতে হবে।’
সহিংসতার পেছনে আধুনিক সময়ের প্রযুক্তিও কিছুটা দায় রয়েছে বলে মনে করেন ড. তানিয়া। তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তির অপব্যবহার মানুষকে পরিবার থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে। সবাই ভার্চুয়ালি যোগাযোগ বাড়াচ্ছে। এতে তো বন্ধন তৈরি হয় না। পরিবার থেকেই মানুষ সামাজিকতা শেখে। আর সঠিক সামাজিকতা নিয়ে বড় হলে সহিংস মনোভাব অনেক কমে আসবে।’
পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে করণীয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমত কোনো একটি সহিংস ঘটনা কেন হলো সেটা নিয়ে গবেষণা করতে হবে। একটা মানুষ এ রকম ঘটনা কেন ঘটাল, তার গোড়া পর্যন্ত যেতে হবে। প্রতিবাদ করেই থেমে যাওয়া যাবে না।
‘একেকটি ঘটনা একেকভাবে ঘটে। সেগুলো বিশ্লেষণ করে মূল জায়গাটিতে পৌঁছাতে হবে। তারপর একেকটি কারণ ধরে সমস্যা সমাধানের পথ বের করতে হবে। আর পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা, আন্তরিকতা বাড়ানোর বিষয়গুলো নিয়েও কাজ করতে হবে।’
আরও পড়ুন:মেডিক্যাল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে ভারত জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গসহ দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে কঠোর শাস্তির আহ্বান জানিয়েছে।
মোমবাতি ও পোস্টার হাতে নিয়ে নারীরা ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় শহর কলকাতাসহ বিভিন্ন শহরে মিছিল করেছে। কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর করে বিক্ষোভকারীরা। সেখানে গত সপ্তাহে একজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় সহকর্মী চিকিৎসকরা আরও ভাল ও নিরাপদ কর্মপরিবেশের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছেন।
জুনিয়র ডাক্তাররা নির্যাতিতার ন্যায়বিচারের দাবিতে বাইরে বসে প্রতিবাদ করায় ভারতের বিভিন্ন শহরে অনেক সরকারি হাসপাতালে জরুরি বিভাগ ছাড়া সব চিকিৎসাসেবা স্থগিত রয়েছে।
শুক্রবার ৩১ বছর বয়সী ওই চিকিৎসককে কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পুলিশ জানিয়েছে যে তাকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে। এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত একজন পুলিশ স্বেচ্ছাসেবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভারতের ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আমি এই ক্ষোভের মাধ্যমে অনুভব করতে পারছি যে সমাজে আমাদের মা, কন্যা ও বোনদের ওপর যে অত্যাচার চালানো হচ্ছে তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। এ নিয়ে দেশে ক্ষোভ বিরাজ করছে।’
এই ধর্ষণ ঘটনা ২০১২ সালে নয়াদিল্লির একটি ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। সেখানে একদল লোক দিল্লির চলন্ত বাসে ২৩ বছর বয়সী এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে গুরুতর আহত অবস্থায় ফেলে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত সেই ছাত্রীর মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন:সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পিতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা করার নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়েছে। রিটে বাদী হয়েছেন ছয় মাস বয়সী এক শিশু ও তার মা। তবে শিশুটির পক্ষে আইনগত অভিভাবক হিসেবে হলফনামায় সই করেছেন তার বাবা।
বুধবার এই রিট করা হয় বলে জানান শিশুটির মা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান।
রিট আবেদনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, আইন সচিব, সংসদবিষয়ক সচিব, নারী ও শিশুবিষয়ক সচিব, সমাজ কল্যাণ সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, শ্রম সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
রিটে বলা হয়েছে, নবজাতকের যত্নে কেবল মায়ের ভূমিকা মুখ্য- এ ধারণার পরিবর্তন হয়েছে। বাবার ভূমিকাও দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে ঢাকার মতো ব্যস্ত শহরে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাহায্য নেয়ার সুযোগ সীমিত।
এ ছাড়া সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে শিশু জন্মের হার বাংলাদেশে অনেক বেশি। সিজারের পর মায়ের সুস্থ হয়ে উঠতে সময় লাগে। এ সময়ে নবজাতক ও মায়ের নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন হয়।
পিতৃত্বকালীন ছুটির সুযোগ না থাকায় যারা নতুন বাবা হন, তাদের স্ত্রী ও নবজাতকের দেখাশোনা করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়। বিশ্বের ৭৮টিরও বেশি দেশে পিতৃত্বকালীন ছুটির বিধান রয়েছে।
২০১৯ সালে ওই শিশুর বড় ভাই নয় মাস বয়সে কর্মক্ষেত্র, শপিংমল, বিমানবন্দর, বাস স্টেশন, রেলওয়ে স্টেশনসহ জনসমাগমস্থওলে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনের নির্দেশনা চেয়ে রিট করেছিল। ওই রুলের শুনানি শেষে গত বছরের ২ এপ্রিল হাইকোর্ট এ বিষয়ে রায় দেয়।
বেকারত্ব, সামাজিক ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা এবং যৌন হয়রানির মতো সমস্যার সমাধান এবং সম্ভাব্য সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে শিশু ও কিশোরীদের সুরক্ষার লক্ষ্যে জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের উদ্যোগে কক্সবাজারে ‘স্বপ্নের সারথি- সী-শোর গার্লস প্রজেক্ট’ শুরু হয়েছে।
ইউনিসেফের সহযোগিতা ও অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পটির অবহিতকরণ সভা বুধবার কক্সবাজারের বেস্ট ওয়েস্টার্ন অ্যান্ড হেরিটেজ হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রকল্পটি মূলত কক্সবাজার এলাকায় শিশু ও কিশোরীকেন্দ্রিক সুরক্ষা ব্যবস্থা তথা সেইফগার্ড মেকানিজম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে। এজন্য ইউনিসেফের চাইল্ড প্রটেকশনস স্পোর্টস ফর ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ-এর অধীনে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকায় একটি সী-শোর গার্লস হাব চালু করা হয়েছে।
প্রকল্পটির আওতায় খেলাধুলা, বিশেষ করে সার্ফিংয়ের মাধ্যমে মেয়েদের মানসিক বিকাশ, জীবন দক্ষতা এবং কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা সরবরাহ করবে। তিন বছরের মধ্যে মোট ৩০০ কিশোরী ও তরুণীকে এই প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ দেয়া হবে, যাতে তারা নিরাপদ এবং সহায়ক পরিবেশে নিজেদের ক্ষমতায়ন করতে পারে।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জেনারেশন আনলিমিটেডের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারিয়ান ওয়েলার্স বলেন, ‘মেয়েদেকে শোষণ এবং সহিংসতা থেকে রক্ষার জন্য তাদের ক্ষমতায়ন করতে হবে। স্বপ্নের সারথি প্রকল্পটি সার্ফিং, লাইফগার্ড প্রশিক্ষণ, প্রাথমিক চিকিৎসা, সাঁতার এবং সফট স্কিলসের মাধ্যমে মেয়েদের দক্ষতা ও ক্ষমতায়ণ বৃদ্ধি করতে কাজ করছে। প্রকল্পটিতে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলার আসামি সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন আবেদন বাতিল করেছে আদালত।
দুই পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লার মুখ্য বিচারিক আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দিকী জামিন আবেদন বাতিল করেন।
অবন্তিকার আইনজীবী সৈয়দ নুরুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
একদিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে কারাগারে পাঠায় আদালত।
এদিকে অবন্তিকার সহপাঠী রায়হান সিদ্দিক আম্মানের দুই দিনের রিমান্ড শেষে আজ তাকে কুমিল্লার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়েছে। বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে প্রিজনভ্যানে করে আম্মানকে কুমিল্লা জেল হাজতে নিয়ে যায় পুলিশ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আত্মহত্যা নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রী অবন্তিকাকে ১৫ মার্চ রাতে মৃত ঘোষণা করেন কুমিল্লা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক।
ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা নামের ওই ছাত্রী জবির আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিক্ষার্থী।
কুমিল্লা সদর হাসপাতালের রাত্রিকালীন দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক মো. জুবায়ের বলেন, ‘হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তার (অবন্তিকা) গলায় একটি দাগ দেখতে পাই। তার দেহ নিথর অবস্থায় ছিল। আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি।’
মৃত্যুর আগে জবির এ ছাত্রী ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন, যাতে তিনি আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন বলে জানান। আত্মহত্যার জন্য সহপাঠী আম্মান ও জাবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে দায়ী করেন এ শিক্ষার্থী।
অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় আম্মান ও দ্বীন ইসলামকে পুলিশ আটক করার কথা শনিবার রাতে জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান।
জবির এ ছাত্রী কুমিল্লা নগরের শাসনগাছা এলাকার প্রয়াত জামাল উদ্দিনের মেয়ে। তার বাবা কুমিল্লা সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন। তার মা তাহমিনা শবনম কুমিল্লা পুলিশ লাইনস উচ্চ বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক।
কুমিল্লায় ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার বেলা তিনটার দিকে অবন্তিকার প্রথম জানাজা ও বেলা পৌনে চারটার দিকে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
আরও পড়ুন:‘কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদা বাড়েনি। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন জরুরি।
‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতে নারীদের কথা বলার জায়গাটা তৈরি করে দিতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গাগুলোতে নারীদের নিয়ে আসতে হবে।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।
তিনি বলেন, ‘নারী পরিচয়ের আগে আমার বড় পরিচয় হলো আমি একজন মানুষ। নারী-পুরুষ ভেদাভেদ তৈরি, নারীকে হেয় করা, শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরুষের চেয়ে দুর্বল মনে করা হয় আজও।’
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সাদেকা হালিম বলেন, ‘সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এমন হয়েছে যে সমাজে নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখা হয়; যদিও বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও পুরুষ সমান। কিন্তু বাস্তবে কোনো দেশই খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে নারীকে পুরুষের সমান ভাবা হয়।’
‘সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীত্ব নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। সেটা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাঙ্গন, ভাগ-বাটোয়ারার ক্ষেত্র, এমনকি ধর্মীয়ভাবেও। পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীকে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে।’
‘এমনকি নারীর সন্তান জন্ম দেয়ার বিষয় নিয়েও রাজনীতি করা হয়। সন্তান জন্মের পর পরই সন্তানের অধিকার কিভাবে হবে সেটা আমরা ধর্মীয়ভাবে নির্ধারণ করি। বাবা ও মায়ের অধিকার কতটুকু, আমাদের সিভিল ল’তে কতটুকু, শরিয়া ল’তে কতটুকু- এসব বিষয় অনেকটাই পুরুষকেন্দ্রিক। পুরুষকে সব সময় প্রাধান্য দেয়া হয়। পুরুষরাই এ সমাজে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে।’
এই উপমহাদেশে নারীদের ভূমিকা সম্পর্কে ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘ভারত উপমহাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন যে এখন হয়েছে তা নয়। অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশে নারীরা কিন্তু ইউরোপের নারীদের আগেই ভোটাধিকার পেয়েছিল। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় নারীরা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, রানি হয়েছে, ট্যাক্স সংগ্রহ করেছে।
‘আধুনিক রাষ্ট্রে পুঁজিবাদের বিস্তার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের কাজের পরিধি বেড়েছে, কিন্তু নারীদের পণ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার কাজকে কাজ হিসেবে আমরা দেখিনি। নারীরা স্ত্রী, মা বা মেয়ে হিসেবে যে ভূমিকা পালন করে সেটিকেও অবমূল্যায়ন করা হয়।
‘কোনো নারী চাকরি করলেও তাকে আমরা প্রশ্ন করি তার স্বামী কী করে। সে যদি স্বামীর থেকে বেশি বেতন পায়, তাহলে পুরুষও হীনম্মন্যতায় ভোগে।’
সমাজের সাধারণ নারীদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে জবি উপাচার্য বলেন, ‘অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন তো নারীদের অনেকেরই হয়েছে। গার্মেন্ট সেক্টর, চিংড়ি মাছের ঘের, কল-কারখানায় নারীরা কাজ করছে। এটি ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু নারীর সামাজিক মর্যাদা কি বেড়েছে? এটা খুবই জটিল একটি বিষয়।
‘চরম দারিদ্র্যের শিকার নারীরা কোনো কিছু ভাবে না, বা ভাবার সুযোগ পায় না। তারা জানে তাদেরই কাজ করতে হবে, ক্ষুধা মেটাতে হবে। তারাই শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। সাধারণ নারীরা অনেক পরিশ্রমী। সামাজিক সমালোচনা গ্রাহ্য না করে তারা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাদের বাদ দেয়া হচ্ছে।’
নারীর সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে সাদেক হালিম বলেন, ‘আমরা নারীর নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে পারিনি। বাংলাদেশে বা প্রবাসে যে পরিমাণ নারী কাজ করে সেখানেও আমরা দেখি যে নারীরা নিরাপদ নয়। এমনকি খুব নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে তারা ধর্ষণের শিকার হয়।’
তিনি বলেন, ‘তবে বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী। এবারকার কেবিনেটে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নারী মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হয়ে আসছেন। এটা ইতিবাচক দিক।
‘সংখ্যার দিক থেকে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেশি, কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদার জায়গায় গুণগত মানের দিক থেকে কতটা বদলেছে সেটি বড় বিষয়। যখন নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে আসবে, নেতৃত্ব দেবে, তখনই বদলাবে সমাজ।’
আরও পড়ুন:দেশের ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠী শিশুদের মাতৃভাষায় পাঠদানের জন্য বই বিতরণ করে আসছে সরকার। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী কেবল তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্তই মাতৃভাষায় পড়তে পারবে দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা।
এতদিন চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, আচিক ও সাদ্রি- এই পাঁচটি ভাষায় বই বিতরণ হলেও প্রথমবারের মতো এবার গারো শিক্ষার্থীদের জন্য আচিক ভাষায় পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়েছে। মাতৃভাষায় পাঠ্যবই পেয়ে আনন্দিত সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার গারো শিশুরা।
বুধবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত আচিক ভাষার পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, মধ্যনগরে ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের বাঙালভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঙালভিটা মিশন প্রাইমারি স্কুল, কাইটাকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাইটাকোনা মিশন প্রাইমারি স্কুল ও ইছামারী মিশন প্রাইমারি স্কুল- এই পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠরত গারো শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় শতাধিক। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৮৪ জন গারো শিক্ষার্থীর মধ্যে আচিক ভাষার পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়েছে।
কাইটাকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তূর্ণা মানকিন বলেন, ‘আজকে শিক্ষার্থীদের মাঝে আচিক ভাষায় প্রণীত বই বিতরণ করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। মনে নতুন আলোর সঞ্চার হলো। আমরা আমাদের অর্থাৎ গারো আদিবাসীর অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার একটা উপায় পেয়েছি।’
এতে আচিক ভাষার শুদ্ধ ও সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই ধারণা লাভ করতে পারবে বলে জানান তিনি।
বাঙালভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়ূস দাজেল বলেন, ‘আমি নিজেও একজন গারো। দেরিতে হলেও এই প্রথম শিশুদের হাতে মাতৃভাষায় সরকারি পাঠ্যবই তুলে দিতে পেরে আমি গর্ববোধ করছি।’
প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় গারোদের মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মানবেন্দ্র দাস বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠীর গারো শিশু শিক্ষার্থীদের হাতে সরকারি পাঠ্যবই পৌঁছে দিতে পেরে আমি আনন্দিত ও গর্বিত। আমার নিজ খরচে জেলা শহর থেকে এসব বই এনে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করেছি।’
আরও পড়ুন:গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় স্ত্রীর দাবি নিয়ে আহাদ মোল্লা নামে এক প্রকৌশলীর বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন এক নারী। স্ত্রীর স্বীকৃতি না দিলে এখানেই আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি।
অভিযুক্ত আহাদ মোল্লা কোটালীপাড়া উপজেলার সিতাইকুন্ড গ্রামের মোস্তফা মোল্লার ছেলে। তিনি হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের প্রকৌশলী বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই নারী।
বুধবার সন্ধ্যা থেকে ওই নারী প্রকৌশলী আহাদ মোল্লার বাড়ির উঠোনে একটি গাছের নিচে অবস্থান নিয়েছেন।
ওই নারী বলেন, ‘দীর্ঘদিন প্রেম করার পর ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর আমার সঙ্গে প্রকৌশলী আহাদ মোল্লার বিয়ে হয়। বিয়ের পর আমরা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ঢাকায় বসবাস করতে থাকি। এ খবর দুই পরিবারে জানাজানি হলে ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুনরায় সামাজিকভাবে আমাদের বিয়ে হয়।
‘কিন্তু দ্বিতীয়বার বিয়ের কিছুদিন পর হঠাৎ করে আহাদ আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে সে কোনো যোগাযোগ করছে না। নিরুপায় হয়ে স্ত্রীর দাবি নিয়ে আহাদের বাড়িতে এসে উঠেছি। সে আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা না দিলে এ বাড়িতেই আত্মহত্যা করব।’
এদিকে ওই নারী বাড়িতে এসে ওঠার খবর পেয়ে প্রকৌশলী আহাদ মোল্লা ও তার পরিবারের লোকজন অন্যত্র চলে যান।
প্রতিবেশী নেয়ামুল ফকির ও খলিল শেখ বলেন, ‘আহাদ মোল্লার সঙ্গে ওই নারীর সামাজিকভাবে যে বিয়ে হয়েছে তা আমরা সবাই জানি। বিয়ের পর আহাদ মোল্লা তার স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করত। এখন তাদের মাঝে কী হয়েছে তা আমাদের জানা নেই।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য আহাদ মোল্লার বাড়িতে গিয়ে তাদের পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। আর আহাদ মোল্লা ঢাকায় থাকায় তার সঙ্গে একাধিক বার মোবাইল ফোনে যোগযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
মন্তব্য