× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

রেস-জেন্ডার
Sufia Kamals example is an inspiration for women Prime Minister
google_news print-icon

সুফিয়া কামালের দৃষ্টান্ত নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা: প্রধানমন্ত্রী

সুফিয়া-কামালের-দৃষ্টান্ত-নারীদের-জন্য-অনুপ্রেরণা-প্রধানমন্ত্রী-
নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ বেগম সুফিয়া কামালের আদর্শ ও দৃষ্টান্ত বাঙালি নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে, জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি কোলাজ: নিউজবাংলা
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি বেগম সুফিয়া কামালের সাহিত্যে সৃজনশীলতা ছিল অবিস্মরণীয়। শিশুতোষ রচনা ছাড়াও দেশ, প্রকৃতি, গণতন্ত্র, সমাজ সংস্কার এবং নারীমুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার লেখনী আজও পাঠককে আলোড়িত ও অনুপ্রাণিত করে।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি ও নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ বেগম সুফিয়া কামাল যে আদর্শ ও দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন, তা যুগে যুগে বাঙালি নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে, এমনটি বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ সুফিয়া কামালের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯৯ সালের এই দিনে তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও নারীমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ কবি বেগম সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তিনি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

শনিবার রাতে দেয়া বাণীতে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি বেগম সুফিয়া কামালের সাহিত্যে সৃজনশীলতা ছিল অবিস্মরণীয়। শিশুতোষ রচনা ছাড়াও দেশ, প্রকৃতি, গণতন্ত্র, সমাজ সংস্কার, নারীমুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার লেখনী আজও পাঠককে আলোড়িত ও অনুপ্রাণিত করে।

নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার চিন্তাধারা কবি সুফিয়া কামালের জীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছিল, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা হোস্টেলকে ‘রোকেয়া হল’ নামকরণের দাবি জানান।

১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করলে এর প্রতিবাদে গঠিত আন্দোলনে কবি যোগ দেন। বেগম সুফিয়া কামাল শিশু সংগঠন ‘কচি-কাঁচার মেলা’ প্রতিষ্ঠা করেন। আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নামে ছাত্রী হল নির্মাণ করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সুফিয়া কামাল ছিলেন একদিকে আবহমান বাঙালি নারীর প্রতিকৃতি, মমতাময়ী মা, অন্যদিকে বাংলার প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল তার আপসহীন এবং দৃপ্ত পদচারণে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামসহ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তার প্রত্যক্ষ উপস্থিতি তাকে জনগণের ‘জননী সাহসিকা’ উপাধিতে অভিষিক্ত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে নির্মমভাবে হত্যা করে, যখন এ দেশের ইতিহাস বিকৃতির পালা শুরু হয়, তখনও তার সোচ্চার ভূমিকা বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণতান্ত্রিক শক্তিকে নতুন প্রেরণা যুগিয়েছিল।

তিনি আশা করেন, কবি বেগম সুফিয়া কামালের জীবনী চর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে। কবির ভাষায়-

‘তোমাদের ঘরে আলোর অভাব কভু নাহি হবে আর/ আকাশ-আলোক বাঁধি আনি দূর করিবে অন্ধকার।

শস্য-শ্যামল এই মাটি মা’র অঙ্গ পুষ্ট করে / আনিবে অটুট স্বাস্থ্য, সবল দেহ-মন ঘরে ঘরে।’

নারী জাগরণের পথিকৃৎ হিসেবে তাকে বেশির ভাগ সময় সম্বোধন করা হয়। এটা কিন্তু তার প্রতি অবিচার। কারণ নারী জাগরণের পথিকৃৎ বলতে আমরা যা বুঝি, সুফিয়া কামাল শুধু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, বরং যদি বলা যায় তিনি বাঙালি জাগরণের পথিকৃৎ, তবেই বরং তার প্রতি সুবিচার করা হয়। তিনি সুফিয়া কামাল। কেবল সাহিত্যচর্চার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে বাঙালি জাতির যেকোনো দুর্যোগের সময় তিনি হাজির হয়েছেন জননীর মতো।

১৯৬১ সাল থেকে পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্রসংগীত প্রচারের ওপর নেমে আসে পাকিস্তানি শাসকদের গোপন নিষেধাজ্ঞা। সে বছর পুরো বিশ্বে যেখানে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে, সেখানে রেডিও পাকিস্তান কোনো প্রচার করেনি। শুধু তা-ই নয়, কিছু ‘বাঙালি’ বুদ্ধিজীবী দিয়ে রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে বিষোদগারও করানো হয় নানাভাবে।

ব্যতিক্রম ছিলেন সুফিয়া কামালসহ আরও অনেক বাঙালি সংস্কৃতিকর্মী, বুদ্ধিজীবী ও লেখক। পাকিস্তানি শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার থমথমে পরিবেশের মধ্যেও ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান পালন করেন তারা। অনুষ্ঠান শেষে একটি দলের সদস্য হিসেবে জয়দেবপুরে বনভোজনে যান সুফিয়া কামাল। সেখানে ‘ছায়ানট’ নামের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠার কথা আলোচিত হয়। আর সেই সূত্রে ছায়ানটের সভাপতি করা হয় সুফিয়া কামালকে।

এমনটি উঠে এসেছে শিশুসাহিত্যিক ও কলাম লেখক সুলতানা লাবুর লেখায়।

১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় পাকিস্তান রেডিও ও টেলিভিশনে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার বন্ধ থাকে। এরপর ১৯৬৭ সালের জুনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। ওই বাজেট অধিবেশনে রাজশাহী থেকে নির্বাচিত বিরোধীদলীয় সদস্য মজিবর রহমান চৌধুরীর এক প্রশ্নের উত্তরে তথ্যমন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দিন মন্তব্য করেন, পাকিস্তানি আদর্শের সঙ্গে না মিললে রেডিও-টেলিভিশনে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার বন্ধ করে দেয়া হবে।

এ সংবাদ ঢাকার সংবাদপত্রে (দৈনিক পাকিস্তান ও অবজারভার, ২৩-২৮ জুন ১৯৬৭) প্রকাশিত হলে ২৫ জুন ১৯ জন বিশিষ্ট বাঙালি এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেন- রবীন্দ্রনাথ বাংলাভাষী পাকিস্তানির সাংস্কৃতিক সত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিবাদীদের একজন ছিলেন সুফিয়া কামাল।

ছোটবেলা থেকেই সুফিয়া কামাল ছিলেন প্রতিবাদী এবং সমাজ সেবকও। সুফিয়া কামাল নিজেই জানিয়েছেন, ‘চৌদ্দ বছর বয়সে বরিশালে প্রথমে সমাজ সেবার সুযোগ পাই। বাসন্তী দেবী ছিলেন অশ্বিনীকুমার দত্তের ভাইয়ের ছেলের বৌ। তার সঙ্গে দুস্থ মেয়েদের বিশেষ করে মা ও শিশুদের জন্য মাতৃসদনে আমি কাজ শুরু করি।’

এই হলেন সুফিয়া কামাল। কবি-লেখক, সমাজসেবক-সংস্কৃতিকর্মী, বুদ্ধিজীবী। বাঙালি জাতিসত্তার এক মহিরুহ। ১৯১১ সালের ২০ জুন সোমবার বরিশালের শায়েস্তাবাদে মামাবাড়িতে তার জন্ম। বাবা সৈয়দ আব্দুল বারী এবং মা সৈয়দা সাবেরা খাতুন। আরব্য উপন্যাসের হাতেম তাইয়ের কাহিনি থেকে নানি তার ডাক নাম রাখেন হাসনা বানু। আর দরবেশ নানা তার নাম রেখেছিলেন সুফিয়া খাতুন।

সুফিয়া খাতুনের বাবা পেশায় ছিলেন উকিল। কিন্তু তার সাত বছর বয়সে সুফি সাধক হওয়ার প্রেরণায় ঘর ছাড়েন বাবা। বাধ্য হয়ে মাসহ নানার বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয় তাকে। ওদিকে তার নানা বাড়ির সবাই ছিলেন রক্ষণশীল মুসলিম। শায়েস্তাবাদের নবাব পরিবার হওয়ায় তার নানার বাড়ির কথ্যভাষা ছিল উর্দু। এ কারণে অন্দরমহলে মেয়েদের আরবি, ফারসি শেখার ব্যবস্থা থাকলেও বাংলা শেখানো ছিল হারাম পর্যায়ে। তবে সেখানে ছিল বিশাল পাঠাগার। মায়ের উৎসাহ ও প্রেরণায় লুকিয়ে সেই পাঠাগার থেকে বই পড়তেন সুফিয়া কামাল।

মায়ের কাছে বাংলা শেখেন। রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েদের স্কুল-কলেজে পড়ার তো প্রশ্নই আসে না। কিন্তু সুফিয়া কামালের জেদের কাছে হার মেনে পায়জামা-আচকান আর মাথায় টুপি পরে ছেলের ছদ্মবেশে তাকে কিছুদিনের জন্য স্কুলে পাঠাতে বাধ্য হলো তার পরিবার। বাকিটা শিখেছেন নিজেই। তাকে সহায়তা করেছিলেন স্থানীয় পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার প্যারীলাল বাবু ও তার বড়ভাই সৈয়দ আবদুল ওয়ালী। মাত্র সাত বছর বয়সে কলকাতায় বেগম রোকেয়ার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। প্রথম সাক্ষাতেই সুফিয়াকে নিজের স্কুলে ভর্তি করে নিতে চেয়েছিলেন বেগম রোকেয়া। কিন্তু তার পরিবারের অতি রক্ষণশীলতার কারণে আর সে সুযোগ হয়নি।

মাত্র ১৪ বছর বয়সে মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। নেহাল হোসেন ছিলেন প্রগতিশীল ও নারী শিক্ষার সমর্থক। স্বামীর উৎসাহ, অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় সুফিয়া এন. হোসেন নামে (তখনও তার নাম সুফিয়া কামাল হয়নি) লেখা প্রকাশিত হতে লাগল বিভিন্ন পত্রিকায়। এজন্য পরিবার থেকে প্রচুর সমালোচনা ও গঞ্জনার শিকার হয়েছেন নেহাল।

১৯২৮ সালে পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে প্রথম বাঙালি মুসলমান নারী হিসেবে বিমানে উড্ডয়ন করেন সুফিয়া। এ জন্য বেগম রোকেয়া তাকে অভিনন্দন জানান বিশেষভাবে। ১৯২৯ সালে রবীন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে গেলে বিশ্বকবির হাত থেকে গোরা উপন্যাস পান উপহার হিসেবে।

১৯৩০ সালে ছবিসহ মহিলা ‘সওগাত’ পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেন মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন। স্বামীর অনুমতিক্রমে মহিলা সওগাত বঙ্গাব্দ ভাদ্র ১৩৩৬ সংখ্যায় ছবিসহ তার ‘বিড়ম্বিতা’ কবিতা প্রকাশিত হয়।

১৯৩২ সালে ক্ষয়রোগে স্বামীর মৃত্যুর পর চরম দুর্ভোগে পড়েন সুফিয়া। পরের বছর কলকাতা করপোরেশন স্কুলে শিক্ষকতার সুযোগ পান তৎকালীন এডুকেশন অফিসার ক্ষিতীশ প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের সহযোগিতায়। তিন মাসের মধ্যে যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে শিক্ষয়িত্রী পদে স্থায়ীভাবে নিয়োগ পান।

১৯৩৮ সালে প্রকাশিত তার কাব্যগ্রন্থ ‘সাঁঝের মায়া’র ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। চট্টগ্রামের চুনতীর কামালউদ্দিন খানের সঙ্গে তার বিয়ে হয় ১৯৩৯ সালে। এরপর থেকে তিনি সুফিয়া কামাল নামে পরিচিত হন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সুফিয়া কামাল।

১৯৪৬ সালে কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় নিজের এক মেয়েসহ কলকাতা ব্রেবোর্ন কলেজ সেন্টারে আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনা করেন। দাঙ্গার পর কংগ্রেস একজিবিশন পার্কের মধ্যে ‘রোকেয়া মেমোরিয়াল স্কুল’ নামে একটি কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির স্কুল চালু করেন।

১৯৪৭ সালের ২০ জুলাই কলকাতার ‘সওগাত’ অফিস থেকে ‘সাপ্তাহিক বেগম’ নামে নারীদের জন্য নতুন একটি সাহিত্যপত্রিকা প্রকাশ করেন মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন। নতুন এ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন সুফিয়া কামাল।

প্রথম মুসলমান নারী হিসেবে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তিও করেছিলেন সুফিয়া কামাল। আর এভাবেই তিনি একের পর সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে লাগলেন।

দেশ বিভাগের পর কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসেন সুফিয়া কামাল। নতুনভাবে শুরু করেন তার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। ১৯৫১ সালের শেষের দিকে সমাজ-সচেতন নারীদের এক সমাবেশে গঠিত হয় ‘ঢাকা শহর শিশু রক্ষা সমিতি।’ সুফিয়া কামাল এ সমিতির সভানেত্রী নির্বাচিত হন। তারপর জড়িয়ে পড়েন বাংলা ভাষা আন্দোলনে। ভাষা আন্দোলন নিয়ে অনেক কবিতা ও প্রবন্ধ লেখেন।

১৯৫৬ সালে দিল্লিতে সাহিত্য সম্মেলনে অংশ নেন সুফিয়া কামাল। ওই বছরের ৫ অক্টোবর ‘কচিকাঁচার মেলা’ নামে প্রগতিশীল শিশু সংগঠন প্রতিষ্ঠা হয় তার বাসভবনে। তিনি ছিলেন এর উপদেষ্টা।

বাংলার আরেক মহীয়সী বেগম রোকেয়া ছিলেন তার আদর্শ। ১৯৬০ সালে সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত স্মৃতি কমিটি’ গঠিত হয়। তার উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রীনিবাসের নাম ‘রোকেয়া হল’ রাখার প্রস্তাব করা হয়।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ১৯৬৫ সালে ঢাকায় আসেন। পাকিস্তানবিরোধী মনোভাবের কারণে বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে আলোচনায় সুফিয়া কামাল আইয়ুব খানকে বলেছিলেন, ‘আপনি সব শুনুন এবং এর একটা সমাধান করে দিয়ে যান।’ তখন আইয়ুব খানের জবাব ছিল, ‘ওধার তো সব ইনসান হ্যায়, এধার তো সব হাইওয়ান’। অর্থাৎ ওদিকে তো সব মানুষ, এদিকে সব জানোয়ার। আইয়ুব খানের মুখের উপর জবাব দিয়েছিলেন সুফিয়া কামাল, ‘আপ তো উও হাইওয়ানকৌ প্রেসিডেন্ট হ্যায়’। অর্থাৎ আপনি তো সেই জানোয়ারদেরই প্রেসিডেন্ট। ১৯৬৯ সালে আইয়ুববিরোধী মহিলাদের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সুফিয়া কামাল। মিছিলেরও নেতৃত্ব দেন। গঠন করেন ‘মহিলা সংগ্রম পরিষদ’।

পাকিস্তানের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ‘তঘমা-ই-ইমতিয়াজ’ পেয়েছিলেন ১৯৬১ সালে। ১৯৬৯ সালে বাঙালিদের ওপর নির্যাতনের কারণে তিনি সে পদক বর্জন করেন। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলে ত্রাণ বিতরণেও এগিয়ে আসেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই পাকিস্তানিরা তার ওপর কড়া নজর রেখেছিল। দুরবিন দিয়ে তার বাসায় গোয়েন্দাগিরি চালাত। তার বাসার সামনে কেউ এলে তল্লাশি চালাত, যানবাহনের নম্বর লিখে রাখত। এর মধ্যে মার্চে খবর রটে যায় সুফিয়া কামালকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হত্যা করেছে। বিদেশে এ খবর প্রচারিত হলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হলো। এ থেকে বাঁচতে পাকিস্তানি সরকারি প্রচার মাধ্যম তার সাক্ষাৎকার নিতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যেতে লাগলেন। তাদের চাপাচাপিতে শেষ পর্যন্ত তিনি যে বেঁচে আছেন শুধু এটুকু জানাতে রাজি হলেন। তাতেই ওরা রাজি হয়ে গেল।

তারপর তার সঙ্গে যা কথা হলো-

প্রশ্ন: আপনি কেমন আছেন?

সুফিয়া কামাল: আমি মরিনি।

প্রশ্ন: সাহিত্যকর্ম কেমন চলছে?

সুফিয়া কামাল: এ অবস্থায় যেমন চলে।

এরপর আরও অনেক প্রশ্ন করা হয়েছিল তাকে। তিনি জবাব দেননি।

তার নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিল সোভিয়েত সরকার। তাকে বিশেষ বিমানে সোভিয়েত ইউনিয়ন নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবে তিনি জানালেন, ‘এখন আমি এ দেশ ছেড়ে বেহেশতেও যেতে রাজি নই। আমার দেশের মানুষেরা শান্তি পাক, সোয়াস্তি লাভ করুক। এ দেখে যেন আমি এ মাটিতেই শুয়ে থাকতে পারি।’

মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টায় তিনি নিজের বাড়িতেই ছিলেন। তার অনেক প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজন তার কাছে রেশন কার্ড রেখে ঢাকা ছেড়েছিল। ওসব কার্ড দিয়ে চাল-ডাল তুলে নিজের বাসায় এনে রাখতেন। মুক্তিযোদ্ধারা সময় সুযোগ করে বাসার পিছনের দেয়াল ডিঙিয়ে এসে তার কাছ থেকে নিয়ে যেতেন সেগুলো।

মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতিত নারীদের নিরাপদ আশ্রয় দিতে সদা তৎপর ছিলেন এই মহীয়সী। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত সময় তাকে হত্যা করার জন্য ময়মনসিংহ থেকে আল বদরের বিশেষ ক্যাডার নিয়ে আসা হয়েছিল। মুক্তিবাহিনীর সতর্ক প্রহরার কারণে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। আর সেই ক্যাডাররা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ে নিহত হয়।

এটুকুতেই থেমে থাকেননি সুফিয়া কামাল। নিজের দুই মেয়েকে পাঠিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। ভারতের আগরতলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সেবার জন্য হাসাপাতাল গঠনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন তার দুই মেয়ে সুলতানা কামাল ও সাঈদা কামাল।

মুক্তিযুদ্ধের পর নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসনের কাজে জড়িয়ে পড়েন সুফিয়া কামাল। তিনি ছিলেন ‘নারী পুনর্বাসন সংস্থা’র সভানেত্রী। আর ‘মহিলা পরিষদ’-এর মাধ্যমে নারী সমাজের সার্বিক মুক্তির কাজ তার কখনও থেমে ছিল না।

বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে সুফিয়া কামালের ছিল অকৃত্রিম সম্পর্ক। চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে বঙ্গবন্ধু সেগুনবাগিচার ১১৫ নম্বর সরকারি বাড়িতে থাকার সময় ১৯৫৮ সালের ১২ অক্টোবর ওই বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হন। তিন দিনের নোটিসে বাড়িও ছাড়তে হয় বঙ্গবন্ধু পরিবারকে। বেগম মুজিব সিদ্ধেশ্বরীতে একটি বাড়ি ভাড়া নিলেও সরকারি হুমকি ধামকিতে ওই বাড়িটাও ছাড়তে বাধ্য হন। তখন এগিয়ে এসেছিলেন সুফিয়া কামাল। তার প্রচেষ্টায় সেগুনবাগিচার ৭৬ নম্বর বাড়িতে মাসিক ৩০০ টাকার ভাড়ায় ওঠেন বেগম মুজিব।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যার পর বৈরী পরিবেশেও তিনি এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করেন। আবার চরম বৈরী পরিবেশে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট গঠনে অন্যতম সহায়ক ছিলেন সুফিয়া কামাল। এই ট্রাস্টই ১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট বাড়িটিকে জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা করে সেটাকে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে’ রূপান্তর করে।

১৯৯০ সালে আশি বছর বয়সেও তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে দেশবাসীকে উজ্জীবিত করার জন্য রাজপথে মিছিলের নেতৃত্ব দেন, তা-ও কারফিউর মধ্যে।

দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার স্বাধীনতা পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন সুফিয়া কামাল। তবে তার সবচেয়ে বড় পুরস্কার মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। এটাও তিনি তার সেবা ও মহত্ত্ব দিয়ে অর্জন করেছেন। ১৯৮৪ সালে মস্কো থেকে তার ‘সাঁঝের মায়া’র রুশ সংস্করণ প্রকাশিত হয়। মস্কোতে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুফিয়া কামাল। তখনই এক রুশ তরুণ কবি তাকে বলেছিলেন, ‘আপনি গোর্কির মা উপন্যাসের জননী’।

সুফিয়া কামাল ছিলেন অসম্ভব সাহসী এক দেশপ্রেমিক। তার মানসিক শক্তি ছিল অতুলনীয়। তিনি জীবনে অনেকবার ভেঙেছেন, আবার উঠে শুধু দাঁড়ানইনি, ছুটেছেন। শুধু নিজের জন্য নয়, সকলের জন্য ভাবতেন। সকলের জন্য কিছু করার থাকলে করতেন। আর এ কারণেই সকলের মা হওয়ার গুণ ছিল তার। বাংলা, বাংলাদেশ ও বাঙালিদের জন্য তার অসংখ্য অবদান।

আজীবনের সংগ্রামী সুফিয়া কামাল ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর শনিবার সকালে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। বাঙালি মুসলমান নারী হিসেবে অনেকগুলো প্রথম কাজ করা সুফিয়া কামালও ছিলেন প্রথম বাংলাদেশি নারী, যাঁকে মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

সুফিয়া কামালের প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা।

মন্তব্য

আরও পড়ুন

রেস-জেন্ডার
Marina Tabassum on Time magazines list of influential people

টাইম ম্যাগাজিনের প্রভাবশালীদের তালিকায় মেরিনা তাবাসসুম

টাইম ম্যাগাজিনের প্রভাবশালীদের তালিকায় মেরিনা তাবাসসুম বাংলাদেশের খ্যাতনামা স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের এই খ্যাতনামা স্থপতি টাইম ম্যাগাজিনের ২০২৪ সালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন সেরা উদ্ভাবক ক্যাটাগরিতে।

টাইম ম্যাগাজিনের ২০২৪ সালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন মেরিনা তাবাসসুম। বাংলাদেশের এই খ্যাতনামা স্থপতি সেরা উদ্ভাবক ক্যাটাগরিতে তালিকায় স্থান পেয়েছেন।

মঙ্গলবার এই তালিকা প্রকাশ করে টাইম ম্যাগাজিন। তাবাসসুমকে নিয়ে টাইম ম্যাগাজিনে লিখেছেন অ্যামেরিকান স্থপতি স্যারাহ হোয়াইটিং।

তাবাসসুমকে ‘নিঃস্বার্থ স্থপতি’ উল্লেখ করে স্যারাহ লিখেছেন, ‘‘তাবাসসুমের স্বার্থহীনতার পরিচয় তার নকশা করা ভবনগুলোর মাঝেও দেখা যায়। পৃথিবীর সম্পদে ভাগ বসানো প্রাণিকুলের অংশ হিসেবে তিনি তার নিজের সৃষ্টির প্রতি যত্নশীল।

“আগা খান পুরস্কারপ্রাপ্ত ঢাকার বাইত উর রউফ মসজিদ নিয়ে তাবাসসুম নিজে বলেছেন, ‘কৃত্রিম কোনো সাহায্য ছাড়াই একটা ভবনকে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে দিতে হবে।’ আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে বন্যা ঝুঁকি বাড়তে থাকা একটি দেশে তিনি এমন সব বাড়ির নকশা করেছেন যেগুলো কম খরচে নির্মাণ করা যায় ও সহজে সরিয়ে ফেলা যায়।’’

বাইত উর রউফ ছাড়াও বাংলাদেশের স্বাধীনতা জাদুঘর ও স্বাধীনতা স্তম্ভ মেরিনা তাবাসসুমের উল্লেখযোগ্য কীর্তি। আগা খান পুরস্কার ছাড়াও ২০২১ সালে সোন পুরস্কার পান এই স্থপতি।

টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় এবারে জায়গা করে নিয়েছেন এনএফএল সুপারস্টার প্যাট্রিক মাহোমস, অ্যানিমেটর হায়াও মিয়াজাকি, ফরমুলা ওয়ান ড্রাইভার ম্যাক্স ভেরস্টাপেন, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই, ভারতীয় অভিনেত্রী আলিয়া ভাট ও ব্রিটিশ পপ তারকা ডুয়া লিপা।

মন্তব্য

রেস-জেন্ডার
Refusal to board a plane because of obesity

স্থূল হওয়ার কারণে বিমানে নিতে অস্বীকৃতি

স্থূল হওয়ার কারণে বিমানে নিতে অস্বীকৃতি এয়ার নিউজিল্যান্ডে হয়রানির শিকার হওয়া এঞ্জেলা হার্ডিং। ছবি: ওয়ান নিউজ
ভুক্তভোগী এঞ্জেল হার্ডিং বলেন, ‘আমার ভীষণ খারাপ লেগেছে। আমার চেহারার কারণে, আকারের কারণে তারা আমাকে নামিয়ে দিল। খোলসা করে না বললেও আসলে এটাই ছিল তাদের অসুবিধার কারণ।’

স্থূল হওয়ার কারণে নিউজিল্যান্ডের একটি ফ্লাইট থেকে দুই নারী যাত্রীকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এয়ার নিউজিল্যান্ডের এমন আচরণে মর্মাহত এবং অপমানিতবোধ করছেন তারা।

গত শুক্রবার দেশটির নেপিয়ার থেকে অকল্যান্ডে যাওয়ার উদ্দেশে ওঠা ফ্লাইটে এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মূখীন হন এঞ্জেলা হার্ডিং ও তার বন্ধু।

নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ওয়ান নিউজের প্রতিবদনে বলা হয়েছে, ফ্লাইটটিতে ওঠার পর হঠাৎ বাঁ হাতে ব্যথা অনুভব করেন এঞ্জেলা। এরপর একজন নারী ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্টকে ডেকে হাতের কব্জিটি নীচে নামিয়ে দিতে অনুরোধ করেন তিনি।

তা না করলে তিনি সিটে ঠিক করে বসতে পারছিলেন না। এদিকে তারা না বসা পর্যন্ত পাইলটও বিমান ওড়াতে পারছিলেন না।

এমন সময় বিমানের স্পিকারে ঘোষণা শোনার পর বিভ্রান্তি আরও বেড়ে যায়। ঘোষণায় বলা হয়, সমস্ত যাত্রীদের সুবিধার্থে এঞ্জেল হার্ডিং ও তার বন্ধুকে বিমান থেকে নেমে যেতে হবে।

পরে ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্ট এসে জানান, তাদের স্থূলতার কারণে দুজনের দুটি করে মোট চারটি আসন বুক করা উচিত ছিল।

এঞ্জেলের দাবি, এর আগে আকাশপথে ভ্রমণকালে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়নি তাদের। এমনকি তিনি বা তার বন্ধু কারোরই দুটি আসনের টিকিট কেনার সামর্থ্য নেই বলে অ্যাটেন্ড্যান্টকে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমার ভীষণ খারাপ লেগেছে। আমার চেহারার কারণে, আকারের কারণে তারা আমাকে নামিয়ে দিল। খোলসা করে না বললেও আসলে এটাই ছিল তাদের অসুবিধার কারণ।’

এ ঘটনার পর অবশ্য ওই যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে এয়ার নিউজিল্যান্ড।

এক বিবৃতিতে এয়ার নিউজিল্যান্ডের মহাব্যবস্থাপক অ্যালিশা আর্মস্ট্রং বলেছেন, ‘ওই দুই যাত্রীর সঙ্গে যা হয়েছে, তা নিয়ে আমরা দুঃখিত। সকল গ্রাহকের সম্মান রক্ষা এবং তাদের সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় আচরণ করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

মন্তব্য

রেস-জেন্ডার
Mim a job student asked the president for justice

যৌন হয়রানির বিচার চেয়ে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ জবি ছাত্রী মীম

যৌন হয়রানির বিচার চেয়ে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ জবি ছাত্রী মীম বুধবার বঙ্গভবনের সামনে আবেদনপত্র হাতে জবি শিক্ষার্থী মিম। ছবি: নিউজবাংলা
শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মিম বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষকরা আমাকে বহিষ্কারের ভয়ভীতি, পরীক্ষায় ফেল করানো, অন্য শিক্ষার্থীদের থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করে মানসিকভাবে নির্যাতন এবং মৃত্যুর হুমকি দিচ্ছেন। আমাকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিচ্ছেন।’

শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকির বিচার এবং নিজের নিরাপত্তা চেয়ে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ছাত্রী কাজী ফারজানা মীম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে মঙ্গলবার বঙ্গভবনে মীম একটি আবেদন জমা দেন। আবেদনে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া যৌন নিপীড়ন ও বুলিংয়ের তিনি বিচার চেয়েছেন। পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়ার কথাও আবেদনপত্রে তুলে ধরেছেন তিনি।

আবেদনে মিম তার একাডেমিক জীবনের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে উপাচার্যের কাছে বিচার চেয়ে আবেদন করে তিনি এখনও বিচার পাননি। তার বিভাগের অভিযুক্ত শিক্ষক তাকে যৌন নিপীড়ন করেন। ওই শিক্ষকের সমর্থনে বিভাগের চেয়ারম্যান তাকে স্নাতক পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে ফেল করিয়েছেন।

সহপাঠীদের কাছ থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। তারা মৃত্যুর হুমকি দিয়ে মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে তাকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। ফলে তিনি বিষয়টি গণমাধ্যমের সামনে নিয়ে আসেন।

যৌন হয়রানির বিচার চেয়ে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ জবি ছাত্রী মীম
রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ চেয়ে বঙ্গভবনে জমা দেয়া মিমের আবেদনপত্রের অনুলিপি।

সবশেষ আশা-ভরসা নিয়ে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছেন। বুলিং ও যৌন নিপীড়নের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান মিম। পাশাপাশি প্রশাসনের জবাবদিহির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণে তিনি আবেদন জানান। তাকে ফেল করানোর বিষয়গুলো বিশেষ কমিটির মাধ্যমে পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে তার জীবন পুনরুদ্ধারের আরজি জানান।

আবেদনপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম ওই সময়ে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলের দায়িত্বে থাকলেও তার কাছ থেকে তিনি বিচার পাননি।

এদিকে ভুক্তভোগী মীম তার আবেদনের অনুলিপি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেননি বলে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘সে হল থেকে বের হওয়ার পর আর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু তার কোনো সাড়া পাইনি। তাকে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাই। আবার অনেক সময় ফোন ঢুকলেও সে ধরে না।’

উপাচার্য যা বললেন

এ বিষয়ে চানতে চাইলে উপাচার্য সাদেকা হালিম বলেন, ‘আমি আসার আগের ঘটনার দায়ভার আমি নেব না। তবে আমি এখন সেগুলো নিয়ে সোচ্চার হব। পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় এসব বিষয় উত্থাপন হবে। সবার বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিভাগের চেয়ারম্যানের পরীক্ষায় কেন সে ৩ পেল এ বিষয়টি দেখার জন্য ওনার সঙ্গে মিটিংয়ে বসব। আর তার পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

এদিকে এক শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যেই যৌন নিপীড়ন ও বুলিংয়ের এই অভিযোগ সামনে এনেছেন মিম।

এছাড়াও অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় যৌন হয়রানিসহ নানা নিপীড়নের বিরুদ্ধে এই শিক্ষার্থী সোচ্চার হন। সেখানে অবন্তিকার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে নিজের প্রসঙ্গ টানেন তিনি।

শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ দেয়ায় হত্যাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেন মিম। এ অবস্থায় তিনি সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) গিয়ে নিজের জীবনের নিরাপত্তা চান।

ফারজানা মীমের অভিযোগে যা রয়েছে

শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ দেয়ায় হত্যাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন কাজী ফারজানা মীম।

তিনি বলেন, ‘আমার বিভাগের শিক্ষক আবু সাহেদ ইমন আমাকে যৌন হেনস্তা করেছেন। এই অভিযোগ দেৱয়ার পর থেকে বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিম ও অভিযুক্ত শিক্ষক আবু সাহেদ ইমন আমাকে সেটি তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিয়ে আসছেন।

‘আমি রাজি না হওয়ায় তারা আমাকে হত্যাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন। আমাকে একঘরে করে দেয়া হয়। আমাকে বিভিন্ন পরীক্ষায় ফেল করানো হয়। অনার্সের ফাইনাল ভাইভায় আমাকে ফেল করানো হয়।’

‘স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছি না’ উল্লেখ করে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘কখন আমাকে মেরে ফেলা হয় সেটা জানি না। শুধু আমি নই, তারা আমার পরিবারকেও নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন এবং হেনস্তা করছেন। বর্তমান এই অবস্থা থেকে বাঁচতে ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে এসেছি।’

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মীম সোমবার একটি অভিযোগ করেছেন। এর ভিত্তিতে আমাদের সাইবার টিম কাজ করছে। অভিযোগকারী মীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আমরা জবি ভিসির সঙ্গে কথা বলেছি। ভিসি অনেক কথা বলেছেন। এ অভিযোগের অনেক বিষয়ের অনেক কিছুই আমাদের হাতে নেই।’

তিনি বলেন, ‘ওই ছাত্রীর যে সমস্যা সেটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমেই সমাধান করা হবে। প্রশাসনিক বিষয়গুলো আমরা সমাধান করতে পারব না। তাকে কেন বার বার ফেল করানো হচ্ছে সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেখবে। তবে তাকে আটকে রাখা বা হুমকি দেয়ার বিষয়গুলো আমরা তদন্ত করছি।’

অভিযুক্ত দুই শিক্ষক যা বললেন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন বলেন, ‘এসব অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। এখন অবন্তিকার মৃত্যুতে তার সহানুভূতিকে পুঁজি করে মীম গণমাধ্যমের মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করছে। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। মীম এসব বিষয়ে মিডিয়ায় কথা বলতে পারে না। এ ব্যাপারে আমি আর বেশি কিছু মন্তব্য করতে চাই না।’

প্রসঙ্গত, মিম অভিযোগ করার পর তদন্ত কমিটি আবু শাহেদ ইমনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছিল। তখন তিনি উচ্চ আদালতে যান।

অপর অভিযুক্ত বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক জুনায়েদ হালিম বলেন, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করিয়ে দেয়ার অভিযোগ মিথ্যা। মীম ঠিকমতো ক্লাসই করত না। ক্লাসে তার ৬০ ভাগ উপস্থিতিও ছিলো না। সেখানে আমরা তাকে পরীক্ষা দিতে দিয়েছি। ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে তাকে নম্বর দেয়ার তো কোনো সুযোগই নেই।’

আরও পড়ুন:
জবিতে শিক্ষার্থীবান্ধব সক্রিয় যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকরের দাবি
জবি ছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা: সহকারী প্রক্টরের জামিন নাকচ
অবন্তিকার আত্মহনন: জবি প্রশাসনকে শিক্ষার্থীদের লালকার্ড
জবি ছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা: সহপাঠী, সহকারী প্রক্টর রিমান্ডে

মন্তব্য

রেস-জেন্ডার
Bangabandhukanya created the environment for womens progress Food Minister

নারীদের অগ্রযাত্রার পরিবেশ তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা: খাদ্যমন্ত্রী

নারীদের অগ্রযাত্রার পরিবেশ তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা: খাদ্যমন্ত্রী আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সকালে নওগাঁর সাপাহার উপজেলা মিলনায়তনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। ছবি: নিউজবাংলা
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে নারীর সংখ্যা অর্ধেক নয়, বরং অর্ধেকেরও বেশি। ভোটার তালিকা দেখলে সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়। নারীরা তাদের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে নারীদের অগ্রযাত্রার পরিবেশ তৈরি করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সকালে নওগাঁর সাপাহার উপজেলা মিলনায়তনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য নারীদের স্বাবলম্বী হতে হবে। নারীর ক্ষমতায়নের মূল শক্তি তারা নিজেরাই।

নারীদের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বর্তমান সরকারের মন্ত্রিপরিষদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আটজন নারী রয়েছেন। বর্তমানে নয়জন নারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জাতীয় সংসদে স্পিকারের দায়িত্বও পালন করছেন একজন নারী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে নারীর সংখ্যা অর্ধেক নয়, বরং অর্ধেকেরও বেশি। ভোটার তালিকা দেখলে সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়। নারীরা তাদের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

‘বাংলাদেশে নারীদের অগ্রযাত্রার পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কিন্তু কিছু অশুভ শক্তি নারীদের পিছিয়ে দিতে চায়।’

আরও পড়ুন:
স্ত্রী চা বানানোর সময় স্বামী সন্তানদের দেখলে সময় বাঁচে: প্রধানমন্ত্রী
‘কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নয়’
‘নারীদের ওপর বিনিয়োগ করুন, দ্রুত উন্নতি আনুন’
পাচারের আগ মুহূর্তে উদ্ধার দুই তরুণী, আটক ৬
নারীর প্রতিবাদের ভাষা বাঁকা টিপের সেলফি

মন্তব্য

রেস-জেন্ডার
Husband watches kids while wife makes tea saves time PM

স্ত্রী চা বানানোর সময় স্বামী সন্তানদের দেখলে সময় বাঁচে: প্রধানমন্ত্রী

স্ত্রী চা বানানোর সময় স্বামী সন্তানদের দেখলে সময় বাঁচে: প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা
ঘরে-বাইরে নারীদের কাজের বিষয়ে বলতে গিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘মেয়েরা কিন্তু অফিস-আদালত বা যেখানেই কাজ করে, কাজ করার পরে কিন্তু তার আরেকটা কাজ থাকে ঘরে এসে সংসার সামলানো। সেটা আবার হিসাবে ধরা হয় না। সেটা যদি হিসাবে ধরা হয়, তখন দেখা যাবে যে, কর্মক্ষেত্রে মেয়েরা কিন্তু অনেক অনেক বেশি শ্রম দিচ্ছে তারা। এটাও তো শ্রম।’

ঘরের কাজে নারীদের সহায়তার জন্য পুরুষদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বামী ও স্ত্রী মিলেমিশে কাজ করলে সময় বেঁচে যায়।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ঘরে-বাইরে নারীদের কাজের বিষয়ে বলতে গিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “মেয়েরা কিন্তু অফিস-আদালত বা যেখানেই কাজ করে, কাজ করার পরে কিন্তু তার আরেকটা কাজ থাকে ঘরে এসে সংসার সামলানো। সেটা আবার হিসাবে ধরা হয় না। সেটা যদি হিসাবে ধরা হয়, তখন দেখা যাবে যে, কর্মক্ষেত্রে মেয়েরা কিন্তু অনেক অনেক বেশি শ্রম দিচ্ছে তারা। এটাও তো শ্রম।

“ধরেন একজন পুরুষ অফিসার, নারী অফিসার; স্বামী, স্ত্রী। দুইজন একই সাথে ঘরে ফিরল। আমরা কী দেখব যে, যিনি পুরুষ, তিনি চেয়ারে বসে পড়লেন বা ইজি চেয়ারেই বসে পড়লেন বা সোফায় বসে পড়লেন। বলে, ‘এক কাপ চা দাও তো।’ আর যিনি মেয়ে অফিসার, তিনি ঘরে যেয়েই আগে পাকের ঘরে ঢুকলেন। চা বানানো, বাচ্চাদের খাওয়ানো, বাচ্চাদের গোসল করানো, বাচ্চাদের দেখা—সবকিছু ব্যবস্থা করা। এই ক্ষেত্রে যদি সবাই একটু একসাথে কাজ করে। কেউ চা বানাল, কেউ বাচ্চাদের দেখল, তাহলে পরে সময়ও বাঁচে।”

ঘরের কাজে নারীদের সহায়তা করতে পুরুষদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেয়েদের রান্নাও করতে হবে। কারণ এখন তো আসলে আমরা এই যে ভাতা দেয়ার জন্য এখন কাজের লোক তো কম পাওয়া যায়। কাজেই সে দিক থেকে মনে করি, দুজনে মিলে কাজ করলে পরে দ্রুত কাজগুলো শেষ হলো।

‘তারপরে একটু একসাথে বসে গল্প করা যাবে। টেলিভিশন দেখা যায়। সেটা করতে পারে। তো আমাদের পুরুষরা যদি একটু ওই দিকে নজর দেয়, তাহলে জীবনটা কিন্তু আরও সুন্দর হবে।’

আরও পড়ুন:
পাচারের আগ মুহূর্তে উদ্ধার দুই তরুণী, আটক ৬
অবৈধ মুনাফাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে অভিন্ন মুদ্রা চালুর পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর
মিয়ানমারে সংঘাত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কঠিন করে তুলেছে: প্রধানমন্ত্রী
বিশ্বমানের চৌকস বাহিনী হবে বিজিবি: প্রধানমন্ত্রী

মন্তব্য

রেস-জেন্ডার
Prime Minister Modi announced to reduce the price of cylinders by 100 rupees on womens day

নারী দিবসে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ১০০ রুপি কমানোর ঘোষণা মোদির

নারী দিবসে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ১০০ রুপি কমানোর ঘোষণা মোদির এলপিজি সিলিন্ডার। ছবি: এনডিটিভি
পোস্টে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লিখেন, ‘আজ নারী দিবসে আমাদের (বিজেপি নেতৃত্বাধীন) সরকার এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১০০ রুপি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি সারা দেশে লাখ লাখ পরিবারের আর্থিক বোঝাকে কমাবে, বিশেষ করে আমাদের নারী শক্তিকে উপকৃত করবে।’

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রান্নায় ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ১০০ রুপি কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (একসময়ের টুইটার) শুক্রবার সকালে এক পোস্টে তিনি এ ঘোষণা দেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

পোস্টে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লিখেন, ‘আজ নারী দিবসে আমাদের (বিজেপি নেতৃত্বাধীন) সরকার এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১০০ রুপি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি সারা দেশে লাখ লাখ পরিবারের আর্থিক বোঝাকে কমাবে, বিশেষ করে আমাদের নারী শক্তিকে উপকৃত করবে।’

তিনি আরও লিখেন, ‘রান্নার গ্যাসকে আরও সাশ্রয়ী করে আমরা বিভিন্ন পরিবারের কল্যাণের জন্য সহায়তার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে চেয়েছি। নারীর ক্ষমতায়ন ও তাদের জীবনযাপন সহজ করতে আমাদের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এটি করা হয়েছে।’

এনডিটিভির খবরে বলা হয়, ভারতের রাজধানী শহর দিল্লিতে ১৪ দশমিক ২ কেজির গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে খরচ পড়ে প্রায় ৯০০ রুপি।

নারী দিবসের আগের দিন বৃহস্পতিবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রীর ‘উজ্জ্বলা ইয়োজানা’ প্রকল্পের আওতায় এলপিজি সিলিন্ডারপ্রতি দরিদ্র নারীদের ৩০০ রুপি ভর্তুকির মেয়াদ আগামী অর্থবছর পর্যন্ত বাড়িয়েছে, যা শুরু হচ্ছে আগামী ১ এপ্রিল।

বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২৩ সালের অক্টোবরে ১২টি রিফিল পর্যন্ত ১৪ দশমিক ২ কেজির গ্যাস সিলিন্ডারপ্রতি ভর্তুকি ২০০ রুপি থেকে বাড়িয়ে ৩০০ রুপিতে উন্নীত করে। সিলিন্ডারপ্রতি ৩০০ রুপি ভর্তুকির মেয়াদ ছিল চলতি অর্থবছরের শেষ দিন ৩১ মার্চ পর্যন্ত।

এক্সে অপর এক পোস্টে নাগরিকদের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে মোদি লিখেন, ‘আমরা আমাদের নারী শক্তির শক্তিমত্তা, সাহস ও সহনশীলতাকে স্যালুট জানাই এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অবদানের প্রশংসা করি।

‘আমাদের সরকার শিক্ষা, শিল্পোদ্যোগ, কৃষি, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ।’

আরও পড়ুন:
মুসলিম বিয়ে ও তালাক আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত আসামের
দুর্ঘটনার ১০ দিন না যেতে সড়কেই প্রাণ গেল তেলেঙ্গানার বিধায়কের
ক্যানসারের উপাদান পাওয়ায় তামিলনাড়ুতে নিষিদ্ধ হাওয়াই মিঠাই
ভোটের প্রচারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গর্ভনিরোধক বিতরণ
ঐশ্বরিয়াকে নিয়ে রাহুলের মন্তব্যের নিন্দা সংগীতশিল্পীর

মন্তব্য

রেস-জেন্ডার
Womens participation has increased in the workplace but not in decision making

‘কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নয়’

‘কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নয়’ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। ফাইল ছবি
‘সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীত্ব নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। সেটা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাঙ্গন, ভাগ-বাটোয়ারার ক্ষেত্র, এমনকি ধর্মীয়ভাবেও। পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীকে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে।’

‘কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদা বাড়েনি। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন জরুরি।

‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতে নারীদের কথা বলার জায়গাটা তৈরি করে দিতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গাগুলোতে নারীদের নিয়ে আসতে হবে।’

আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।

তিনি বলেন, ‘নারী পরিচয়ের আগে আমার বড় পরিচয় হলো আমি একজন মানুষ। নারী-পুরুষ ভেদাভেদ তৈরি, নারীকে হেয় করা, শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরুষের চেয়ে দুর্বল মনে করা হয় আজও।’

পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সাদেকা হালিম বলেন, ‘সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এমন হয়েছে যে সমাজে নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখা হয়; যদিও বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও পুরুষ সমান। কিন্তু বাস্তবে কোনো দেশই খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে নারীকে পুরুষের সমান ভাবা হয়।’

‘সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীত্ব নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। সেটা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাঙ্গন, ভাগ-বাটোয়ারার ক্ষেত্র, এমনকি ধর্মীয়ভাবেও। পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীকে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে।’

‘এমনকি নারীর সন্তান জন্ম দেয়ার বিষয় নিয়েও রাজনীতি করা হয়। সন্তান জন্মের পর পরই সন্তানের অধিকার কিভাবে হবে সেটা আমরা ধর্মীয়ভাবে নির্ধারণ করি। বাবা ও মায়ের অধিকার কতটুকু, আমাদের সিভিল ল’তে কতটুকু, শরিয়া ল’তে কতটুকু- এসব বিষয় অনেকটাই পুরুষকেন্দ্রিক। পুরুষকে সব সময় প্রাধান্য দেয়া হয়। পুরুষরাই এ সমাজে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে।’

এই উপমহাদেশে নারীদের ভূমিকা সম্পর্কে ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘ভারত উপমহাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন যে এখন হয়েছে তা নয়। অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশে নারীরা কিন্তু ইউরোপের নারীদের আগেই ভোটাধিকার পেয়েছিল। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় নারীরা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, রানি হয়েছে, ট্যাক্স সংগ্রহ করেছে।

‘আধুনিক রাষ্ট্রে পুঁজিবাদের বিস্তার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের কাজের পরিধি বেড়েছে, কিন্তু নারীদের পণ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার কাজকে কাজ হিসেবে আমরা দেখিনি। নারীরা স্ত্রী, মা বা মেয়ে হিসেবে যে ভূমিকা পালন করে সেটিকেও অবমূল্যায়ন করা হয়।

‘কোনো নারী চাকরি করলেও তাকে আমরা প্রশ্ন করি তার স্বামী কী করে। সে যদি স্বামীর থেকে বেশি বেতন পায়, তাহলে পুরুষও হীনম্মন্যতায় ভোগে।’

সমাজের সাধারণ নারীদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে জবি উপাচার্য বলেন, ‘অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন তো নারীদের অনেকেরই হয়েছে। গার্মেন্ট সেক্টর, চিংড়ি মাছের ঘের, কল-কারখানায় নারীরা কাজ করছে। এটি ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু নারীর সামাজিক মর্যাদা কি বেড়েছে? এটা খুবই জটিল একটি বিষয়।

‘চরম দারিদ্র্যের শিকার নারীরা কোনো কিছু ভাবে না, বা ভাবার সুযোগ পায় না। তারা জানে তাদেরই কাজ করতে হবে, ক্ষুধা মেটাতে হবে। তারাই শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। সাধারণ নারীরা অনেক পরিশ্রমী। সামাজিক সমালোচনা গ্রাহ্য না করে তারা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাদের বাদ দেয়া হচ্ছে।’

নারীর সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে সাদেক হালিম বলেন, ‘আমরা নারীর নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে পারিনি। বাংলাদেশে বা প্রবাসে যে পরিমাণ নারী কাজ করে সেখানেও আমরা দেখি যে নারীরা নিরাপদ নয়। এমনকি খুব নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে তারা ধর্ষণের শিকার হয়।’

তিনি বলেন, ‘তবে বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী। এবারকার কেবিনেটে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নারী মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হয়ে আসছেন। এটা ইতিবাচক দিক।

‘সংখ্যার দিক থেকে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেশি, কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদার জায়গায় গুণগত মানের দিক থেকে কতটা বদলেছে সেটি বড় বিষয়। যখন নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে আসবে, নেতৃত্ব দেবে, তখনই বদলাবে সমাজ।’

আরও পড়ুন:
‘নারীদের ওপর বিনিয়োগ করুন, দ্রুত উন্নতি আনুন’

মন্তব্য

p
উপরে