মেয়েদের প্রতিভার যথাযথ বিকাশের জন্য সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
তিনি বলেছেন ‘মেয়েদের মাথার ওপরে থাকবে মুক্ত আকাশ। তারা সবখানে নিরাপদে, সম্মান নিয়ে, তাদের সমস্ত সৌন্দর্য ও মেধা নিয়ে বিরাজ করবে। নারী-পুরুষ সবাইকে নিয়েই পৃথিবী। কাউকে বাধা দিলে তার বিকাশ ঘটে না।’
আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে শনিবার বাংলা একাডেমির ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
আন্তর্জাতিক সংস্থা রুম টু রিড আয়োজিত অনুষ্ঠানে নিজের জীবনে ইচ্ছাপূরণের গল্পও শোনান দীপু মনি।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, ছোটবেলায় যুক্তি দিয়ে কথা বলার কারণে তাকে অনেকেই ব্যারিস্টার হওয়ার পরামর্শ দিতেন। তবে নিজের ইচ্ছা ছিল রাজনীতি করার।
দীপু মনি বলেন, ‘উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করে চিন্তা করলাম কী করব। হয় সাহিত্যিক হব, না হয় পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়ব বা শিক্ষকতা করব। আমার মা খুব জোরেশোরে বলেছিলেন পেশাজীবী হতে হবে। তখন বাবা তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে বলেছিলেন চিকিৎসক হতে। এরপর মেডিক্যাল কলেজে রাজনীতি শুরু করি।’
দীপু মনি বলেন, ‘ছেলে আর মেয়েদের চাওয়া ও প্রয়োজন ভিন্ন হয়ে থাকে৷ এই ভিন্নতাকে মাথায় রেখে প্রত্যেকের যা প্রয়োজন তা যেন সে পায়। আমরা যেন সেই পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারি৷ যার যে সুযোগ প্রয়োজন সে সেটাই পাবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমার সামনে যারা বাধার দেয়াল তৈরি করেছেন তাদের প্রতি মনোভাব কখনও নেতিবাচক হয়নি। মূলত তারা আমাকে সহায়তা করেছেন সেই বাধা অতিক্রম করতে।’
অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘আমার কাছে কন্যাশিশু বলে কিছু নেই। সবাই আমার সন্তান ও সব শিশুই সমান।
‘দেশে এখন মেয়েদের শিক্ষার হার বেশি ও তারা সবকিছুতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা দেখেছি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে মেয়েদের অংশগ্রহণ ৫৩ ভাগের মতো। আমার তো মনে হয় এরপর ছেলেরা কোটার দাবি তুলবে।’
রুম টু রিড-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর রাখী সরকার বলেন, ‘আমাদের সমাজে এমনিতেই মেয়েদের প্রতি অবহেলা থাকে, আর করোনার সময়ে সেটা আরও বেড়েছে। আমরা চাই সবাই সমান অধিকার নিয়ে বড় হোক।’
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে নারীদের অগ্রযাত্রার পরিবেশ তৈরি করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সকালে নওগাঁর সাপাহার উপজেলা মিলনায়তনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য নারীদের স্বাবলম্বী হতে হবে। নারীর ক্ষমতায়নের মূল শক্তি তারা নিজেরাই।
নারীদের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বর্তমান সরকারের মন্ত্রিপরিষদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আটজন নারী রয়েছেন। বর্তমানে নয়জন নারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জাতীয় সংসদে স্পিকারের দায়িত্বও পালন করছেন একজন নারী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে নারীর সংখ্যা অর্ধেক নয়, বরং অর্ধেকেরও বেশি। ভোটার তালিকা দেখলে সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়। নারীরা তাদের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
‘বাংলাদেশে নারীদের অগ্রযাত্রার পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কিন্তু কিছু অশুভ শক্তি নারীদের পিছিয়ে দিতে চায়।’
আরও পড়ুন:ঘরের কাজে নারীদের সহায়তার জন্য পুরুষদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বামী ও স্ত্রী মিলেমিশে কাজ করলে সময় বেঁচে যায়।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ঘরে-বাইরে নারীদের কাজের বিষয়ে বলতে গিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “মেয়েরা কিন্তু অফিস-আদালত বা যেখানেই কাজ করে, কাজ করার পরে কিন্তু তার আরেকটা কাজ থাকে ঘরে এসে সংসার সামলানো। সেটা আবার হিসাবে ধরা হয় না। সেটা যদি হিসাবে ধরা হয়, তখন দেখা যাবে যে, কর্মক্ষেত্রে মেয়েরা কিন্তু অনেক অনেক বেশি শ্রম দিচ্ছে তারা। এটাও তো শ্রম।
“ধরেন একজন পুরুষ অফিসার, নারী অফিসার; স্বামী, স্ত্রী। দুইজন একই সাথে ঘরে ফিরল। আমরা কী দেখব যে, যিনি পুরুষ, তিনি চেয়ারে বসে পড়লেন বা ইজি চেয়ারেই বসে পড়লেন বা সোফায় বসে পড়লেন। বলে, ‘এক কাপ চা দাও তো।’ আর যিনি মেয়ে অফিসার, তিনি ঘরে যেয়েই আগে পাকের ঘরে ঢুকলেন। চা বানানো, বাচ্চাদের খাওয়ানো, বাচ্চাদের গোসল করানো, বাচ্চাদের দেখা—সবকিছু ব্যবস্থা করা। এই ক্ষেত্রে যদি সবাই একটু একসাথে কাজ করে। কেউ চা বানাল, কেউ বাচ্চাদের দেখল, তাহলে পরে সময়ও বাঁচে।”
ঘরের কাজে নারীদের সহায়তা করতে পুরুষদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেয়েদের রান্নাও করতে হবে। কারণ এখন তো আসলে আমরা এই যে ভাতা দেয়ার জন্য এখন কাজের লোক তো কম পাওয়া যায়। কাজেই সে দিক থেকে মনে করি, দুজনে মিলে কাজ করলে পরে দ্রুত কাজগুলো শেষ হলো।
‘তারপরে একটু একসাথে বসে গল্প করা যাবে। টেলিভিশন দেখা যায়। সেটা করতে পারে। তো আমাদের পুরুষরা যদি একটু ওই দিকে নজর দেয়, তাহলে জীবনটা কিন্তু আরও সুন্দর হবে।’
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রান্নায় ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ১০০ রুপি কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (একসময়ের টুইটার) শুক্রবার সকালে এক পোস্টে তিনি এ ঘোষণা দেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
পোস্টে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লিখেন, ‘আজ নারী দিবসে আমাদের (বিজেপি নেতৃত্বাধীন) সরকার এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১০০ রুপি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি সারা দেশে লাখ লাখ পরিবারের আর্থিক বোঝাকে কমাবে, বিশেষ করে আমাদের নারী শক্তিকে উপকৃত করবে।’
তিনি আরও লিখেন, ‘রান্নার গ্যাসকে আরও সাশ্রয়ী করে আমরা বিভিন্ন পরিবারের কল্যাণের জন্য সহায়তার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে চেয়েছি। নারীর ক্ষমতায়ন ও তাদের জীবনযাপন সহজ করতে আমাদের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এটি করা হয়েছে।’
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, ভারতের রাজধানী শহর দিল্লিতে ১৪ দশমিক ২ কেজির গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে খরচ পড়ে প্রায় ৯০০ রুপি।
নারী দিবসের আগের দিন বৃহস্পতিবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রীর ‘উজ্জ্বলা ইয়োজানা’ প্রকল্পের আওতায় এলপিজি সিলিন্ডারপ্রতি দরিদ্র নারীদের ৩০০ রুপি ভর্তুকির মেয়াদ আগামী অর্থবছর পর্যন্ত বাড়িয়েছে, যা শুরু হচ্ছে আগামী ১ এপ্রিল।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২৩ সালের অক্টোবরে ১২টি রিফিল পর্যন্ত ১৪ দশমিক ২ কেজির গ্যাস সিলিন্ডারপ্রতি ভর্তুকি ২০০ রুপি থেকে বাড়িয়ে ৩০০ রুপিতে উন্নীত করে। সিলিন্ডারপ্রতি ৩০০ রুপি ভর্তুকির মেয়াদ ছিল চলতি অর্থবছরের শেষ দিন ৩১ মার্চ পর্যন্ত।
এক্সে অপর এক পোস্টে নাগরিকদের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে মোদি লিখেন, ‘আমরা আমাদের নারী শক্তির শক্তিমত্তা, সাহস ও সহনশীলতাকে স্যালুট জানাই এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অবদানের প্রশংসা করি।
‘আমাদের সরকার শিক্ষা, শিল্পোদ্যোগ, কৃষি, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
আরও পড়ুন:‘কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদা বাড়েনি। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন জরুরি।
‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতে নারীদের কথা বলার জায়গাটা তৈরি করে দিতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গাগুলোতে নারীদের নিয়ে আসতে হবে।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।
তিনি বলেন, ‘নারী পরিচয়ের আগে আমার বড় পরিচয় হলো আমি একজন মানুষ। নারী-পুরুষ ভেদাভেদ তৈরি, নারীকে হেয় করা, শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরুষের চেয়ে দুর্বল মনে করা হয় আজও।’
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সাদেকা হালিম বলেন, ‘সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এমন হয়েছে যে সমাজে নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখা হয়; যদিও বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও পুরুষ সমান। কিন্তু বাস্তবে কোনো দেশই খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে নারীকে পুরুষের সমান ভাবা হয়।’
‘সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীত্ব নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। সেটা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাঙ্গন, ভাগ-বাটোয়ারার ক্ষেত্র, এমনকি ধর্মীয়ভাবেও। পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীকে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে।’
‘এমনকি নারীর সন্তান জন্ম দেয়ার বিষয় নিয়েও রাজনীতি করা হয়। সন্তান জন্মের পর পরই সন্তানের অধিকার কিভাবে হবে সেটা আমরা ধর্মীয়ভাবে নির্ধারণ করি। বাবা ও মায়ের অধিকার কতটুকু, আমাদের সিভিল ল’তে কতটুকু, শরিয়া ল’তে কতটুকু- এসব বিষয় অনেকটাই পুরুষকেন্দ্রিক। পুরুষকে সব সময় প্রাধান্য দেয়া হয়। পুরুষরাই এ সমাজে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে।’
এই উপমহাদেশে নারীদের ভূমিকা সম্পর্কে ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘ভারত উপমহাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন যে এখন হয়েছে তা নয়। অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশে নারীরা কিন্তু ইউরোপের নারীদের আগেই ভোটাধিকার পেয়েছিল। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় নারীরা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, রানি হয়েছে, ট্যাক্স সংগ্রহ করেছে।
‘আধুনিক রাষ্ট্রে পুঁজিবাদের বিস্তার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের কাজের পরিধি বেড়েছে, কিন্তু নারীদের পণ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার কাজকে কাজ হিসেবে আমরা দেখিনি। নারীরা স্ত্রী, মা বা মেয়ে হিসেবে যে ভূমিকা পালন করে সেটিকেও অবমূল্যায়ন করা হয়।
‘কোনো নারী চাকরি করলেও তাকে আমরা প্রশ্ন করি তার স্বামী কী করে। সে যদি স্বামীর থেকে বেশি বেতন পায়, তাহলে পুরুষও হীনম্মন্যতায় ভোগে।’
সমাজের সাধারণ নারীদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে জবি উপাচার্য বলেন, ‘অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন তো নারীদের অনেকেরই হয়েছে। গার্মেন্ট সেক্টর, চিংড়ি মাছের ঘের, কল-কারখানায় নারীরা কাজ করছে। এটি ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু নারীর সামাজিক মর্যাদা কি বেড়েছে? এটা খুবই জটিল একটি বিষয়।
‘চরম দারিদ্র্যের শিকার নারীরা কোনো কিছু ভাবে না, বা ভাবার সুযোগ পায় না। তারা জানে তাদেরই কাজ করতে হবে, ক্ষুধা মেটাতে হবে। তারাই শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। সাধারণ নারীরা অনেক পরিশ্রমী। সামাজিক সমালোচনা গ্রাহ্য না করে তারা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাদের বাদ দেয়া হচ্ছে।’
নারীর সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে সাদেক হালিম বলেন, ‘আমরা নারীর নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে পারিনি। বাংলাদেশে বা প্রবাসে যে পরিমাণ নারী কাজ করে সেখানেও আমরা দেখি যে নারীরা নিরাপদ নয়। এমনকি খুব নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে তারা ধর্ষণের শিকার হয়।’
তিনি বলেন, ‘তবে বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী। এবারকার কেবিনেটে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নারী মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হয়ে আসছেন। এটা ইতিবাচক দিক।
‘সংখ্যার দিক থেকে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেশি, কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদার জায়গায় গুণগত মানের দিক থেকে কতটা বদলেছে সেটি বড় বিষয়। যখন নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে আসবে, নেতৃত্ব দেবে, তখনই বদলাবে সমাজ।’
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ। প্রতি বছর ৮ মার্চ নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়।
এ বছর নারী দিবসে জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য হল ‘নারীদের ওপর বিনিয়োগ করুন, দ্রুত উন্নতি আনুন।’ এর মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা আনতে যে যথেষ্ট অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে না সেই বিষয়টাতে মনোযোগ দেয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এ বছরের থিম ‘ইনস্পায়ার ইনক্লুশন’, যার লক্ষ্য হচ্ছে নারীদের জন্য এমন পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে তারা সমাজে নিজের জায়গা সম্পর্কে জানতে পারে। এর সঙ্গে এ গল্পগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ।
দিবসটির উৎপত্তি ২০ শতকের গোড়ার দিকে, যা উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের শ্রমিক আন্দোলন থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম জাতীয় নারী দিবস পালন করা হয়।
পরবর্তীতে ১৯১০ সালে মার্কসবাদী তাত্ত্বিক এবং ‘নারী অধিকার’ আন্দোলনের বিশিষ্ট নেত্রী ক্লারা জেটকিন কোপেনহেগেনে আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রস্তাব করেন। ধারণাটি সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়েছিল ১৯১১ সালে। যেখানে ১০ লাখেরও বেশি অংশগ্রহণকারী নারীর অধিকারের পক্ষে ছিলেন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস শুধু নারীদের অর্জন উদযাপনের দিন নয়, এটি লিঙ্গ সমতা, এর প্রতিফলন, সমর্থন, এবং বিশ্বজুড়ে নারী এবং মেয়েদের জন্য বাধাগুলো ভেঙে ফেলার পদক্ষেপকে উৎসাহিত করে।
আরও পড়ুন:যুগ যুগ ধরে অনেক প্রতিভাবান শিল্পীর অবদানে সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গন। মূলধারার গণমাধ্যম ও দর্শকদের কাছে এ শিল্পীদের অনেকেই অচেনা, তবে নিজস্ব পরিসরে তাদের রয়েছে বেশ পরিচিতি।
কয়েক বছর ধরে কিছু জনপ্রিয় সংগীত প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন এমন অনেক শিল্পী। গত বছরও এমন দুজন শিল্পীকে পেয়েছে দেশ, যারা আলো ছড়িয়েছেন সংগীতাঙ্গনে।
এ দুজন হলেন আলেয়া বেগম এবং হামিদা বানু। তাদের মধ্যে ‘বাউল মাতা’ হিসেবে পরিচিত লোকসংগীত শিল্পী আলেয়া বেগমের রয়েছে দীর্ঘ ৫০ বছরের ক্যারিয়ার। বিচ্ছেদ, পালাগান, জারিগান ও আধ্যাত্মিক গানের জন্য বিখ্যাত এ শিল্পী লিখেছেন হাজারের বেশি গান। ‘গুণিন’-এর মতো জনপ্রিয় চলচ্চিত্রেও তিনি গেয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা থাকলেও তিনি মূলত তার আশেপাশের মানুষজন ও এলাকাবাসীর মধ্যেই পরিচিত ছিলেন।
গত বছর কোক স্টুডিও বাংলার ‘কথা কইয়ো না’ গানে আলেয়ার হৃদয়স্পর্শী পারফরম্যান্স তাকে মূলধারার সংবাদমাধ্যমের নজরে নিয়ে আসে। হঠাৎই সংগীতপ্রেমীদের মধ্যে তাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। স্থানীয় এ শিল্পী রাতারাতি হয়ে ওঠেন দেশের সবার প্রিয়।
গানটির সাফল্য শুধু আলেয়া বেগমকেই নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করিয়ে দেয়নি, বরং বাংলাদেশি লোকসংগীতের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকেও তুলে ধরেছে।
একই ঘটনা ঘটেছে সিলেটের লোকসংগীত শিল্পী হামিদা বানুর ক্ষেত্রে। দীর্ঘদিন ধরে হাসন রাজার পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হামিদা বানুর পেশাদার হিসেবে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল না।
কোক স্টুডিও বাংলার দ্বিতীয় সিজনে ‘দিলারাম’ গান দিয়ে তিনি মঞ্চে ওঠেন। তার শ্রুতিমধুর কণ্ঠের গান সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আলেয়া বেগমের মতোই হামিদা বানুও তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
আলেয়া বেগম ও হামিদা বানুর মতোই দর্শক-শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন আরেক গ্রামীণ প্রতিভা জহুরা বাউল। ‘বনবিবি’ গানে তার শক্তিশালী ও সুরেলা কণ্ঠে মুগ্ধ হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। তিনি এখন নারী শিল্পীদের জন্য অনুপ্রেরণা। গ্রামের নারীদের ওপর তার প্রভাবের বিষয়টি ‘বনবিবি’ গানে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়।
এ গানে তার নেতৃত্বে বাউল নারীদের দল মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। ‘মেঘদল’-এর মতো জনপ্রিয় ব্যান্ডের সঙ্গে একই মঞ্চে গান করলেও তার শক্তিশালী পরিবেশনা বিশেষভাবে দর্শক-শ্রোতার মন জয় করে নিয়েছে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এ বছরের থিম ‘ইনস্পায়ার ইনক্লুশন’, যার লক্ষ্য হচ্ছে নারীদের জন্য এমন পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে তারা সমাজে নিজের জায়গা সম্পর্কে জানতে পারে। এর সঙ্গে এ গল্পগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ।
কোক স্টুডিও বাংলা আলেয়া, হামিদা ও জহুরার মতো নারীদের প্রতিভা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। এর লক্ষ্য নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি অনুপ্রেরণা সৃষ্টি।
ফরেনসিক প্রতিবেদনের জন্য বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো কিশোরী পালিয়ে গেছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল জলিল হাওলাদার জানান, বুধবার সকালে ওই কিশোরী ওসিসি থেকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
এ বিষয়ে গৌরনদী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল জলিল হাওলাদার বলেন, ‘গৌরনদী মডেল থানার একটি অপহরণ মামলার অপহৃত কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। তার ফরেনসিক প্রতিবেদনের জন্য ২৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গৌরনদী মডেল থানার পুলিশ তাকে ওসিসিতে দেয়।
‘পরে সকালে ফরেনসিক পরীক্ষায় নেয়ার জন্য অনেক খোঁজার পরও তাকে আর কোথাও পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় জিডি করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিশোরী প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করেছে। সে খুব চালাক। তাকে ওসিসিতে দেয়ার সময় তার সঙ্গে অভিভাবক দেয়া উচিত ছিল, কিন্তু তা না দিয়ে শুধু কিশোরীকে দিয়ে গেছে। ওই কিশোরী সুযোগ পেয়ে পালিয়েছে।’
কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমানুল্লাহ আল বারী জানান, ওসিসি থেকে এক কিশোরী পালিয়েছে। এ ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, যতটুকু তথ্য রয়েছে, কিশোরী তার প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গেছে। তাকে উদ্ধার ও প্রেমিককে গ্রেপ্তার প্রক্রিয়াধীন।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা ভিকটিমকে উদ্ধার করে নিয়ম অনুযায়ী ওসিসিতে দিয়েছি। সেখান থেকে পালিয়ে গেলে দোষ তো আমাদের নয়।’
মন্তব্য