ইরানে সঠিক নিয়মে হিজাব না পরার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভে নির্বিচারে শক্তি প্রয়োগের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশের নারী সাংবাদিকরা।
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে বাধ্যতামূলক হিজাবের বিরুদ্ধে ইরানের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন তারা।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক বলেন, ‘ইরানজুড়ে বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষকে বন্দি করা হচ্ছে, ২০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে।’
নাসিমুন আরা বলেন, ‘পোশাকের ওপরে খবরদারি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, সেটা ইরান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশসহ কোনো দেশেই কাম্য নয়। আজকে যদি আমরা এই প্রতিবাদ না জানাই, তাহলে এই পরিস্থিতি যেকোনো দেশে হতে পারে, বাংলাদেশে হতে পারে।’
সংগঠনের নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহনাজ পারভীন এলিস বলেন, ‘ধর্মের নামে নারীর ওপর যে নির্যাতন করা হয়, ধর্মের লেবাস নারীর ওপর চাপিয়ে যে জুলুম করা হয়, সেটা কিন্তু শুধু ইরানে ঘটছে না, বিশ্বব্যাপী হচ্ছে। বাংলাদেশেও প্রায়ই পোশাকের কারণে নারীদের হেনস্তা হতে হচ্ছে। আমরা এর প্রতিবাদ করছি।’
মানববন্ধনে নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের দপ্তর সম্পাদক দিলরুবা খান, সদস্য আফরোজা সরকারসহ নারী সাংবাদিকরা বক্তব্য দেন। এ সময় তারা বলেন, পোশাকের জন্য নারীর ওপর খবরদারি নারীর মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। মানববন্ধন থেকে নারীর ওপর এ ধরনের খবরদারি ও জুলুম-নির্যাতন বন্ধসহ মাসা আমিনী হত্যা ঘটনার সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবি করা হয়।
‘গ্রামের মেয়েরা হাফ প্যান্ট পরে মাঠে ফুটবল খেলে’ – এ ‘অপরাধে’ হামলা করা হয়েছিল খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা গ্রামে সুপার কুইন ফুটবল অ্যাকাডেমির নারী খেলোয়াড়দের ওপর। যা নিয়ে সারা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। পরে তাদের পাশের দাঁড়িয়েছিল দেশের সরকার প্রধান থেকে শুরু করে জাতিসংঘের জরুরি শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) পর্যন্ত, তবে বছর না যেতে সেই কিশোরী ফুটবলারদের মাঠ ছাড়তে হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২২ সালে স্থানীয় কয়েকজন ক্রীড়া সংগঠক সুপার কুইন ফুটবল অ্যাকাডেমিটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে নিয়মিত স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ৩০ থেকে ৪০ জন কিশোরী অনুশীলন করতেন। ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে নারী ফুটবলারের ওপর হালমার ঘটনা ঘটে। যা নিয়ে পরদিন একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের হয়েছিল।
এ হামলায় যারা আহত হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল খেলোয়াড় মঙ্গলী বাগচী।
মঙ্গলী বলে, ‘আমাদের ওপর হামলার ঘটনায় ছয় মাস পার না হতে মাঠ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। পরিকল্পিতভাবে আমাদের কোচকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। যারা আমাদের যে আর্থিক সহায়তা করতেন, তারাও দূরে সরে যান। সামাজিক চাপ ও রাজনৈতিক কারণ দেখিয়ে আমাদের স্বপ্নগুলিকে শেষ করে দেয়া হয়।’
আক্ষেপ নিয়ে মঙ্গলী বলে, ‘হামলার পর আমাদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা নিয়ে জনপ্রতিনিধীরা এসেছিলেন। তারা বলেছিলেন আমাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ, থাকা খাওয়া খরচ ও একটি মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করে দেবেন প্রধানমন্ত্রী, তবে তারও মধ্যে আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেল।’
খেলোয়াড় মঙ্গলী বাগচীর মা সুচিত্রা বাগচী বলেন, ‘স্বপ্ন নিয়ে তো মেয়েকে মাঠে পাঠিয়েছিলাম। মার খাওয়ার পরেও তারা ফুটবল ছাড়েনি। এখন তো তাদের কৌশলে মাঠের বাইরে পাঠানো হল। মেয়েটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।
‘প্রতিবেশীরা তাকে এখন হেয় প্রতিপন্ন করছে। আমাদের মেয়েরা ফুটবলের যে সুনাম এনেছিল, তার ধারাবাহিকতা আমরা ধরে রাখতে পারলাম না।’
মঙ্গলী বাগচী ও তার খেলার সাথীরা এখনও সবাই মাঠের বাইরে। ইতোমধ্যে তাদের চারজন খেলোয়াড়ের বিয়ে হয়ে গেছে। কেউ কেউ দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে মাঠে কাজ করছে। বাকিরা বাড়িতে অলস সময় কাটাচ্ছে বলে জানায় সে।
মঙ্গলী বাগচী জানায়, এই ক্লাবের কিশোরীদের উপর নির্ভর করে খুলনা জেলা ও বিভাগীয় নারী ফুটবল দল গঠন করা হতো। তাদের পারফরমেন্সের ওপর নির্ভর করতো খুলনার দল বিজয়ী হবে কি না।
শুধু খুলনা জেলা নয় দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের অন্যান্য জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও কিশোরীরা প্রশিক্ষণ নিত ক্লাব থেকে। ক্লাবের খেলোয়াড় স্বর্ণা, পূজা রায়, জ্যোতি, ঋতু, প্রীতি, তারা, দেবী, সীমা ও সাদিয়া নাসরিন অনূর্ধ্ব ১৯ বিভাগীয় দলের নিয়মিত খেলোয়াড় ছিল। যারা সবাই এখন মাঠের বাইরে।
ক্লাবটি গঠনও করা হয়েছিল খুলনার নারী ফুটবলারদের অগ্রগতির জন্য। স্থানীয় তেঁতুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা বঙ্গমাতা প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে জেলা পর্যায়ে ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত
১০ বছর ও বিভাগীয় পর্যায়ে ৫ বার তারা বিজয়ী বা রানার্সআপ হওয়ার সাফল্য রেখেছিল, তবে তারা যখন প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিকে অধ্যয়ন শুরু করতো, তখন আর ফুটবলের প্রশিক্ষণ পেত না। এই কিশোরীদের ফুটবল খেলার সাথে ধরে রাখতে তেঁতুলতলা সুপার কুইন ফুটবল অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর মূল উদ্যোক্তা ছিলেন ওই বিদ্যালয়েরই শিক্ষক দেবাশীষ মন্ডল।
তিনি বলেন, ‘এতগুলো ফুটবলপ্রেমী মেয়ের কথা চিন্তা করেই আমরা কয়েকজন মিলে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করি। তবে এখন বন্ধ আছে আর্থিক সংকটের কারণে। যারা অর্থ প্রদান করতেন, তারা সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপে আর অর্থ দিচ্ছেন না।’
তিনি আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘এদের মাঠে টিকিয়ে রাখতে এখনও উদ্যোগ না নিলে মেয়েরা খেলা থেকে বের হয়ে যাবে। আর এরা মাঠে না থাকলে খুলনা বিভাগীয় নারী টিমে দুর্বল হয়ে যাবে।’
সুপার কুইন ফুটবল অ্যাকাডেমির কোচ মো. মোস্তাকুজ্জামান বলেন, ‘জেলা ও বিভাগীয় দলে যে নারী খেলোয়াড়রা খেলতেন, তারা প্রায় সবাই আমাদের শিক্ষার্থী। ক্লাবটির সাংগঠনিক দুর্বলতা ও আর্থিক সংকটে বন্ধ হয়ে গেল। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবার উচিত এ ক্লাবটাকে আবার সচল করা। মেয়েদেরকে মাঠে ফিরিয়ে আনা, কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।’
তবে ক্লাবটির এই দুরবস্থা সম্পর্কে জানে না বলে জানান খুলনা জেলা ফুটবলের অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘এই সম্পর্কে আসলে আমার জানা ছিল না। তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা এই নারী খেলোয়াড়রা আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পদ। আমি অতি দ্রুত ক্লাবটাকে সচল করে নারী খেলোয়াড়দেরকে মাঠে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করব।’
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র সদস্য আলেয়া সারোয়ার ডেইজি ইন্টারন্যাশনাল আইকনিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডের জন্য (আইআইইএ) মনোনীত হয়েছেন।
উদ্যোক্তা হিসেবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিশেষ অবদান ও অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ আইআইইএ দেয়া হয়ে থাকে।নেতৃত্বগুণ, বিশেষ কোনো অর্জন, কোম্পানি বা ব্যক্তিগত উদ্যোক্তা হিসেবে সুনাম অর্জন, উৎসাহ প্রদান ও ব্যবসায়িক সফলতার ভিত্তিতে এ মনোনয়ন ও পুরস্কার দেয়া হয়।
২৪ মে মালদ্বীপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে মনোনয়নের পাশাপাশি বিশেষ অতিথি হিসেবেও বক্তব্য রাখবেন তিনি।
আলেয়া সারওয়ার ডেইজি তার বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল আইকনিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৪’এ মনোনীত হয়েছি। বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে সেখানে বক্তব্যে রাখব। বক্তব্যে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ।’
বিভিন্ন সময় ‘ভালো চাকরির আসায়’ অবৈধ পথে ভারতে পাচারের শিকার আটজন বাংলাদেশি নারীকে দুই বছর পর বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনের কাছে হস্তান্তর করেছে ভারতীয় ইমিগ্রেশনের পুলিশ।
সোমবার বিকেলে নো ম্যানস ল্যান্ডে বিজিবি ও পুলিশ উপস্থিত থেকে তাদেরকে গ্রহণ করেন।
এ সময় ইমিগ্রেশনের ওসি আযহারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই নারীরা বিভিন্ন সময়ে ভারতে পাচার হয়ে যায়। পরে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগের মাধ্যমে তাদেরকে দেশে ফেরত আনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, এখানে দুটি এনজিও সংস্থাও কাজ করেছে তাদের দেশে আনার ব্যাপারে।
ইমিগ্রেশনে তাদের কার্যক্রম শেষে করে পোর্ট থানায় হস্তান্তর করা হবে বলে জানান ওসি।
মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশ করতে প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার পালন করা হয় ‘বিশ্ব মা দিবস’। সেই হিসেবে আজ ১২ মে রোববার সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে দিবসটি।
জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি মানুষের জীবনে যে মধুর শব্দটি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে, সেটি হলো মা। মাত্র এক অক্ষরে শব্দটি গঠিত হলেও এর ব্যাপকতা সাগরের চেয়েও বিশাল। এই শব্দের চেয়ে অতি আপন শব্দ আর নেই। জন্মের পর মানুষের মুখে এই শব্দই বেশি উচ্চারিত হয়।
এ পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি সম্মানীয় মানুষ মা। সন্তানের জন্য মায়েদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের দিনক্ষণের হয়ত প্রয়োজন হয় না, তবু এ দিনটিতে মায়ের জন্য বিশেষ কিছু করেন সন্তানরা, মাকে ধন্যবাদ জানান, ভালোবেসে জড়িয়েও ধরেন।
আধুনিক মা দিবসের প্রচলন হয় যুক্তরাষ্ট্রে। দিবসটির প্রবক্তা আনা মারিয়া রিভস জার্ভিস। তার মা অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস ছিলেন একজন শান্তিবাদী সমাজকর্মী। তিনি ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
১৯০৫ সালে অ্যান মারা যান। তার মৃত্যুর পর মেয়ে আনা মায়ের স্বপ্ন পূরণে কাজ শুরু করেন। সব মাকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি দিবসের প্রচলন করেন।
১৯০৮ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার একটি গির্জায় আনা তার মায়ের স্মরণে অনুষ্ঠান করেন। একই বছর যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস মা দিবসকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব নাকচ করে, তবে তাতে দমে যাননি আনা। তিনি তার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মা দিবস পালিত হতে থাকে।
অবশেষে আনার প্রচেষ্টা সফল হয়। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবেও ঘোষণা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের দেখাদেখি পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, রাশিয়া, জার্মানিসহ শতাধিক দেশে ‘মা দিবস’ পালন করা হয়।
টাইম ম্যাগাজিনের ২০২৪ সালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন মেরিনা তাবাসসুম। বাংলাদেশের এই খ্যাতনামা স্থপতি সেরা উদ্ভাবক ক্যাটাগরিতে তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
মঙ্গলবার এই তালিকা প্রকাশ করে টাইম ম্যাগাজিন। তাবাসসুমকে নিয়ে টাইম ম্যাগাজিনে লিখেছেন অ্যামেরিকান স্থপতি স্যারাহ হোয়াইটিং।
তাবাসসুমকে ‘নিঃস্বার্থ স্থপতি’ উল্লেখ করে স্যারাহ লিখেছেন, ‘‘তাবাসসুমের স্বার্থহীনতার পরিচয় তার নকশা করা ভবনগুলোর মাঝেও দেখা যায়। পৃথিবীর সম্পদে ভাগ বসানো প্রাণিকুলের অংশ হিসেবে তিনি তার নিজের সৃষ্টির প্রতি যত্নশীল।
“আগা খান পুরস্কারপ্রাপ্ত ঢাকার বাইত উর রউফ মসজিদ নিয়ে তাবাসসুম নিজে বলেছেন, ‘কৃত্রিম কোনো সাহায্য ছাড়াই একটা ভবনকে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে দিতে হবে।’ আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে বন্যা ঝুঁকি বাড়তে থাকা একটি দেশে তিনি এমন সব বাড়ির নকশা করেছেন যেগুলো কম খরচে নির্মাণ করা যায় ও সহজে সরিয়ে ফেলা যায়।’’
বাইত উর রউফ ছাড়াও বাংলাদেশের স্বাধীনতা জাদুঘর ও স্বাধীনতা স্তম্ভ মেরিনা তাবাসসুমের উল্লেখযোগ্য কীর্তি। আগা খান পুরস্কার ছাড়াও ২০২১ সালে সোন পুরস্কার পান এই স্থপতি।
টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় এবারে জায়গা করে নিয়েছেন এনএফএল সুপারস্টার প্যাট্রিক মাহোমস, অ্যানিমেটর হায়াও মিয়াজাকি, ফরমুলা ওয়ান ড্রাইভার ম্যাক্স ভেরস্টাপেন, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই, ভারতীয় অভিনেত্রী আলিয়া ভাট ও ব্রিটিশ পপ তারকা ডুয়া লিপা।
স্থূল হওয়ার কারণে নিউজিল্যান্ডের একটি ফ্লাইট থেকে দুই নারী যাত্রীকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এয়ার নিউজিল্যান্ডের এমন আচরণে মর্মাহত এবং অপমানিতবোধ করছেন তারা।
গত শুক্রবার দেশটির নেপিয়ার থেকে অকল্যান্ডে যাওয়ার উদ্দেশে ওঠা ফ্লাইটে এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মূখীন হন এঞ্জেলা হার্ডিং ও তার বন্ধু।
নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ওয়ান নিউজের প্রতিবদনে বলা হয়েছে, ফ্লাইটটিতে ওঠার পর হঠাৎ বাঁ হাতে ব্যথা অনুভব করেন এঞ্জেলা। এরপর একজন নারী ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্টকে ডেকে হাতের কব্জিটি নীচে নামিয়ে দিতে অনুরোধ করেন তিনি।
তা না করলে তিনি সিটে ঠিক করে বসতে পারছিলেন না। এদিকে তারা না বসা পর্যন্ত পাইলটও বিমান ওড়াতে পারছিলেন না।
এমন সময় বিমানের স্পিকারে ঘোষণা শোনার পর বিভ্রান্তি আরও বেড়ে যায়। ঘোষণায় বলা হয়, সমস্ত যাত্রীদের সুবিধার্থে এঞ্জেল হার্ডিং ও তার বন্ধুকে বিমান থেকে নেমে যেতে হবে।
পরে ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্ট এসে জানান, তাদের স্থূলতার কারণে দুজনের দুটি করে মোট চারটি আসন বুক করা উচিত ছিল।
এঞ্জেলের দাবি, এর আগে আকাশপথে ভ্রমণকালে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়নি তাদের। এমনকি তিনি বা তার বন্ধু কারোরই দুটি আসনের টিকিট কেনার সামর্থ্য নেই বলে অ্যাটেন্ড্যান্টকে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমার ভীষণ খারাপ লেগেছে। আমার চেহারার কারণে, আকারের কারণে তারা আমাকে নামিয়ে দিল। খোলসা করে না বললেও আসলে এটাই ছিল তাদের অসুবিধার কারণ।’
এ ঘটনার পর অবশ্য ওই যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে এয়ার নিউজিল্যান্ড।
এক বিবৃতিতে এয়ার নিউজিল্যান্ডের মহাব্যবস্থাপক অ্যালিশা আর্মস্ট্রং বলেছেন, ‘ওই দুই যাত্রীর সঙ্গে যা হয়েছে, তা নিয়ে আমরা দুঃখিত। সকল গ্রাহকের সম্মান রক্ষা এবং তাদের সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় আচরণ করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকির বিচার এবং নিজের নিরাপত্তা চেয়ে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ছাত্রী কাজী ফারজানা মীম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে মঙ্গলবার বঙ্গভবনে মীম একটি আবেদন জমা দেন। আবেদনে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া যৌন নিপীড়ন ও বুলিংয়ের তিনি বিচার চেয়েছেন। পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়ার কথাও আবেদনপত্রে তুলে ধরেছেন তিনি।
আবেদনে মিম তার একাডেমিক জীবনের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে উপাচার্যের কাছে বিচার চেয়ে আবেদন করে তিনি এখনও বিচার পাননি। তার বিভাগের অভিযুক্ত শিক্ষক তাকে যৌন নিপীড়ন করেন। ওই শিক্ষকের সমর্থনে বিভাগের চেয়ারম্যান তাকে স্নাতক পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে ফেল করিয়েছেন।
সহপাঠীদের কাছ থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। তারা মৃত্যুর হুমকি দিয়ে মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে তাকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। ফলে তিনি বিষয়টি গণমাধ্যমের সামনে নিয়ে আসেন।
সবশেষ আশা-ভরসা নিয়ে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছেন। বুলিং ও যৌন নিপীড়নের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান মিম। পাশাপাশি প্রশাসনের জবাবদিহির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণে তিনি আবেদন জানান। তাকে ফেল করানোর বিষয়গুলো বিশেষ কমিটির মাধ্যমে পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে তার জীবন পুনরুদ্ধারের আরজি জানান।
আবেদনপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম ওই সময়ে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলের দায়িত্বে থাকলেও তার কাছ থেকে তিনি বিচার পাননি।
এদিকে ভুক্তভোগী মীম তার আবেদনের অনুলিপি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেননি বলে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘সে হল থেকে বের হওয়ার পর আর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু তার কোনো সাড়া পাইনি। তাকে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাই। আবার অনেক সময় ফোন ঢুকলেও সে ধরে না।’
উপাচার্য যা বললেন
এ বিষয়ে চানতে চাইলে উপাচার্য সাদেকা হালিম বলেন, ‘আমি আসার আগের ঘটনার দায়ভার আমি নেব না। তবে আমি এখন সেগুলো নিয়ে সোচ্চার হব। পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় এসব বিষয় উত্থাপন হবে। সবার বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিভাগের চেয়ারম্যানের পরীক্ষায় কেন সে ৩ পেল এ বিষয়টি দেখার জন্য ওনার সঙ্গে মিটিংয়ে বসব। আর তার পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
এদিকে এক শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যেই যৌন নিপীড়ন ও বুলিংয়ের এই অভিযোগ সামনে এনেছেন মিম।
এছাড়াও অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় যৌন হয়রানিসহ নানা নিপীড়নের বিরুদ্ধে এই শিক্ষার্থী সোচ্চার হন। সেখানে অবন্তিকার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে নিজের প্রসঙ্গ টানেন তিনি।
শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ দেয়ায় হত্যাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেন মিম। এ অবস্থায় তিনি সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) গিয়ে নিজের জীবনের নিরাপত্তা চান।
ফারজানা মীমের অভিযোগে যা রয়েছে
শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ দেয়ায় হত্যাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন কাজী ফারজানা মীম।
তিনি বলেন, ‘আমার বিভাগের শিক্ষক আবু সাহেদ ইমন আমাকে যৌন হেনস্তা করেছেন। এই অভিযোগ দেৱয়ার পর থেকে বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিম ও অভিযুক্ত শিক্ষক আবু সাহেদ ইমন আমাকে সেটি তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিয়ে আসছেন।
‘আমি রাজি না হওয়ায় তারা আমাকে হত্যাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন। আমাকে একঘরে করে দেয়া হয়। আমাকে বিভিন্ন পরীক্ষায় ফেল করানো হয়। অনার্সের ফাইনাল ভাইভায় আমাকে ফেল করানো হয়।’
‘স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছি না’ উল্লেখ করে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘কখন আমাকে মেরে ফেলা হয় সেটা জানি না। শুধু আমি নই, তারা আমার পরিবারকেও নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন এবং হেনস্তা করছেন। বর্তমান এই অবস্থা থেকে বাঁচতে ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে এসেছি।’
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মীম সোমবার একটি অভিযোগ করেছেন। এর ভিত্তিতে আমাদের সাইবার টিম কাজ করছে। অভিযোগকারী মীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আমরা জবি ভিসির সঙ্গে কথা বলেছি। ভিসি অনেক কথা বলেছেন। এ অভিযোগের অনেক বিষয়ের অনেক কিছুই আমাদের হাতে নেই।’
তিনি বলেন, ‘ওই ছাত্রীর যে সমস্যা সেটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমেই সমাধান করা হবে। প্রশাসনিক বিষয়গুলো আমরা সমাধান করতে পারব না। তাকে কেন বার বার ফেল করানো হচ্ছে সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেখবে। তবে তাকে আটকে রাখা বা হুমকি দেয়ার বিষয়গুলো আমরা তদন্ত করছি।’
অভিযুক্ত দুই শিক্ষক যা বললেন
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন বলেন, ‘এসব অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। এখন অবন্তিকার মৃত্যুতে তার সহানুভূতিকে পুঁজি করে মীম গণমাধ্যমের মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করছে। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। মীম এসব বিষয়ে মিডিয়ায় কথা বলতে পারে না। এ ব্যাপারে আমি আর বেশি কিছু মন্তব্য করতে চাই না।’
প্রসঙ্গত, মিম অভিযোগ করার পর তদন্ত কমিটি আবু শাহেদ ইমনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছিল। তখন তিনি উচ্চ আদালতে যান।
অপর অভিযুক্ত বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক জুনায়েদ হালিম বলেন, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করিয়ে দেয়ার অভিযোগ মিথ্যা। মীম ঠিকমতো ক্লাসই করত না। ক্লাসে তার ৬০ ভাগ উপস্থিতিও ছিলো না। সেখানে আমরা তাকে পরীক্ষা দিতে দিয়েছি। ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে তাকে নম্বর দেয়ার তো কোনো সুযোগই নেই।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য