২০২২ সালের জুলাইয়ে তেহরানের একটি বাসে দুই নারীর মধ্যে ঝগড়ার একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, পুরোপুরি হিজাব করা নারীটি হিজাব ছাড়া অপর নারীর ওপর হামলে পড়েছেন। হিজাবহীন ওই নারীর নাম সেপিদেহ রাশনো, বয়স ২৮। ইরানের আইনে হিজাব করা বাধ্যতামূলক। তা না করলে জরিমানা গুনতে হয়, এমনকি জেলেও ঢুকানো হয়।
ভিডিওটি ভাইরাল হলে রাশনোকে গ্রেপ্তার করে ইরানের পুলিশ। পরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তাকে ক্ষমা চাইতে দেখা যায়।
পরের কয়েক সপ্তাহে ইরানে নারীর স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে ওঠেন সেপিদেহ রাশনো। ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সাংবাদিক নেগার মুর্তজাভি বলেন, ‘রাশনোর গ্রেপ্তার অনেক নারীর কাছে টার্নিং পয়েন্ট ছিল। এসব নারী নৈতিকতা পুলিশ এবং বাধ্যতামূলক হিজাবের বিরুদ্ধে অনেক বছর ধরেই লড়াই করছিলেন।
‘আসলে রাশনোকে গ্রেপ্তার করে সরকার হিজাব বিরোধীদের শক্ত বার্তা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়েছে। নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে ২২ বছরের মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর কয়েক দশক ধরে জমতে থাকা ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে।’
কুর্দি নারী মাহসা আমিনিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেপ্তার করে। ইরানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি।
পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়েই মাহসা অসুস্থ হয়ে পড়েন, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়। সেদিন হাসপাতালের সামনে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ছড়িয়ে পড়ে গোটা ইরানে।
নারীরা তাদের মাথার স্কার্ফ পুড়িয়ে, চুল কেটে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কেবল তা-ই নয়, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির শাসনের অবসানের দাবিতে রাজপথে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন হাজার হাজার নারী; যা বিরল।
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর থিঙ্কট্যাঙ্ক টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউটের ইরান প্রোগ্রামের প্রধান কাসরা আরাবি বলেন, ‘মাহসার নির্মম হত্যাকাণ্ড ইসলামি প্রজাতন্ত্রের অধীনে জীবনের নির্মম বাস্তবতাকে উন্মোচিত করেছে।
‘ইরানে এর আগেও নারীরা বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে এবারের প্রতিবাদ কোনো সংস্কারের বিষয়ে নয়, এটি সরাসরি শাসন পরিবর্তনের বিষয়ে। কারণ ইসলামি প্রজাতন্ত্রে বাধ্যতামূলক হিজাব কেবল এক টুকরো কাপড় নয়। এটি এই শাসনের আদর্শের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ।’
চলমান বিক্ষোভের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর একটি হলো, স্কুলছাত্রীদের হিজাববিরোধী আন্দোলনে সামিল হওয়া। বাধ্যতামূলক হিজাব করার প্রতিবাদে স্কুলপ্রাঙ্গণ থেকে কর্তৃপক্ষকে বের দেয়া, ক্লাসরুমে ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ লেখা ঝুলানো...সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
সাংবাদিক মুর্তজাভি বলেন, ‘স্কুল থেকে বহিস্কার কিংবা মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে স্কুলছাত্রীদের এমন কর্মকাণ্ডের জন্য অনেক সাহস লাগে। ছাত্রীরা সেটি করে দেখাচ্ছে।’
Protesting students, chasing away an #Iranian official from their school, shouting: Shame on you…October 3rd… #MahsaAmini pic.twitter.com/eFmRhvaN2H
— Rana Rahimpour (@ranarahimpour) October 3, 2022
এই বিক্ষোভে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত শত শত ইরানির একজন নিকা শাকারামি। ১৬ বছর বয়সী কিশোরীর মৃত্যু নিয়ে অবশ্য ধোঁয়াশা রয়েছে। কীভাবে এবং কখন সে মারা গেছে তা নিয়ে বিভ্রান্তিকর এবং পরস্পরবিরোধী খবর ছড়াচ্ছে। শাকারামির মৃত্যুর বিষয়ে মুখ না খুলতে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
শাকারামির মা বলেন, ‘ও ফোন করে জানিয়েছিল নিরাপত্তা বাহিনী তাকে ধাওয়া করেছে। এরপর তার ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। আমরা তাকে হাসপাতাল এবং থানায় খুঁজতে গিয়েছিলাম। তারা সবাই আমাদের জানায়, এই নামের কেউ নেই। এর মধ্যেই তার গান আর কৌতুকগুলো গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।’
৯ দিন পর, পুলিশ তার মাকে ছবি দেখিয়ে নিশ্চিত করে যে ছবিতে মরদেহটি শাকারামির। শাকারামির মা বলেন, ‘ওর গাল ভেঙে গেছে, দাঁত ভেঙে গেছে। মাথার পেছনে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছিল, খুলি ফেটে গিয়েছিল।’
ইরান সরকার জানায়, শাকারামিকে একটি ভবনের ওপর থেকে ফেলে দেয়া হয়েছিল। এতেই তার মৃত্যু হয়। এটি একটি অপরাধমূলক ঘটনা; বিক্ষোভ বা নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। শাকারামি মৃত্যুর সনদে লেখা হয়, শক্ত কিছুতে একাধিক আঘতের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আলী আনসারির বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে তরুণ বিক্ষোভকারীদের মৃত্যু কিংবা গ্রেপ্তারের মধ্যেই স্কুলভবন থেকে ছাত্রীরা হিজাবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছে। এটা শাসক গোষ্ঠীর মধ্যে ‘বড় ধরনের দ্বিধা’ তৈরি করেছে। নিরাপত্তা বাহিনী ওইসব স্কুল ছাত্রীর সঙ্গে কি করতে যাচ্ছে? এতোগুলো স্কুলছাত্রীকে তারা গুলিও করতে পারছে না।
আরাবি বলেন, ‘গত ৪৩ বছর ধরে ইসলামি প্রজাতন্ত্র তার কট্টরপন্থী মতাদর্শ লালন করার একটি উপায় হিসেবে স্কুলগুলোকে ব্যবহার করেছে। শাসনকে সমর্থন করার জন্য ভবিষ্যত প্রজন্মের মগজ ধোলাই করা হয়েছে। তবে স্কুলছাত্রীদের প্রতিবাদ এটাই প্রমাণ করেছে যে তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।’
আরও পড়ুন:After unrest at many universities, school protests are now spreading in Iran. In Shiraz, schoolgirls wave their head coverings in the air today chanting "death to the dictator" on day 18 of protests over the death of #MahsaAmini.#مهسا_امینیpic.twitter.com/rCIhihzR7U
— Shayan Sardarizadeh (@Shayan86) October 3, 2022
টাইম ম্যাগাজিনের ২০২৪ সালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন মেরিনা তাবাসসুম। বাংলাদেশের এই খ্যাতনামা স্থপতি সেরা উদ্ভাবক ক্যাটাগরিতে তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
মঙ্গলবার এই তালিকা প্রকাশ করে টাইম ম্যাগাজিন। তাবাসসুমকে নিয়ে টাইম ম্যাগাজিনে লিখেছেন অ্যামেরিকান স্থপতি স্যারাহ হোয়াইটিং।
তাবাসসুমকে ‘নিঃস্বার্থ স্থপতি’ উল্লেখ করে স্যারাহ লিখেছেন, ‘‘তাবাসসুমের স্বার্থহীনতার পরিচয় তার নকশা করা ভবনগুলোর মাঝেও দেখা যায়। পৃথিবীর সম্পদে ভাগ বসানো প্রাণিকুলের অংশ হিসেবে তিনি তার নিজের সৃষ্টির প্রতি যত্নশীল।
“আগা খান পুরস্কারপ্রাপ্ত ঢাকার বাইত উর রউফ মসজিদ নিয়ে তাবাসসুম নিজে বলেছেন, ‘কৃত্রিম কোনো সাহায্য ছাড়াই একটা ভবনকে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে দিতে হবে।’ আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে বন্যা ঝুঁকি বাড়তে থাকা একটি দেশে তিনি এমন সব বাড়ির নকশা করেছেন যেগুলো কম খরচে নির্মাণ করা যায় ও সহজে সরিয়ে ফেলা যায়।’’
বাইত উর রউফ ছাড়াও বাংলাদেশের স্বাধীনতা জাদুঘর ও স্বাধীনতা স্তম্ভ মেরিনা তাবাসসুমের উল্লেখযোগ্য কীর্তি। আগা খান পুরস্কার ছাড়াও ২০২১ সালে সোন পুরস্কার পান এই স্থপতি।
টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় এবারে জায়গা করে নিয়েছেন এনএফএল সুপারস্টার প্যাট্রিক মাহোমস, অ্যানিমেটর হায়াও মিয়াজাকি, ফরমুলা ওয়ান ড্রাইভার ম্যাক্স ভেরস্টাপেন, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই, ভারতীয় অভিনেত্রী আলিয়া ভাট ও ব্রিটিশ পপ তারকা ডুয়া লিপা।
স্থূল হওয়ার কারণে নিউজিল্যান্ডের একটি ফ্লাইট থেকে দুই নারী যাত্রীকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এয়ার নিউজিল্যান্ডের এমন আচরণে মর্মাহত এবং অপমানিতবোধ করছেন তারা।
গত শুক্রবার দেশটির নেপিয়ার থেকে অকল্যান্ডে যাওয়ার উদ্দেশে ওঠা ফ্লাইটে এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মূখীন হন এঞ্জেলা হার্ডিং ও তার বন্ধু।
নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ওয়ান নিউজের প্রতিবদনে বলা হয়েছে, ফ্লাইটটিতে ওঠার পর হঠাৎ বাঁ হাতে ব্যথা অনুভব করেন এঞ্জেলা। এরপর একজন নারী ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্টকে ডেকে হাতের কব্জিটি নীচে নামিয়ে দিতে অনুরোধ করেন তিনি।
তা না করলে তিনি সিটে ঠিক করে বসতে পারছিলেন না। এদিকে তারা না বসা পর্যন্ত পাইলটও বিমান ওড়াতে পারছিলেন না।
এমন সময় বিমানের স্পিকারে ঘোষণা শোনার পর বিভ্রান্তি আরও বেড়ে যায়। ঘোষণায় বলা হয়, সমস্ত যাত্রীদের সুবিধার্থে এঞ্জেল হার্ডিং ও তার বন্ধুকে বিমান থেকে নেমে যেতে হবে।
পরে ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্ট এসে জানান, তাদের স্থূলতার কারণে দুজনের দুটি করে মোট চারটি আসন বুক করা উচিত ছিল।
এঞ্জেলের দাবি, এর আগে আকাশপথে ভ্রমণকালে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়নি তাদের। এমনকি তিনি বা তার বন্ধু কারোরই দুটি আসনের টিকিট কেনার সামর্থ্য নেই বলে অ্যাটেন্ড্যান্টকে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমার ভীষণ খারাপ লেগেছে। আমার চেহারার কারণে, আকারের কারণে তারা আমাকে নামিয়ে দিল। খোলসা করে না বললেও আসলে এটাই ছিল তাদের অসুবিধার কারণ।’
এ ঘটনার পর অবশ্য ওই যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে এয়ার নিউজিল্যান্ড।
এক বিবৃতিতে এয়ার নিউজিল্যান্ডের মহাব্যবস্থাপক অ্যালিশা আর্মস্ট্রং বলেছেন, ‘ওই দুই যাত্রীর সঙ্গে যা হয়েছে, তা নিয়ে আমরা দুঃখিত। সকল গ্রাহকের সম্মান রক্ষা এবং তাদের সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় আচরণ করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকির বিচার এবং নিজের নিরাপত্তা চেয়ে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ছাত্রী কাজী ফারজানা মীম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে মঙ্গলবার বঙ্গভবনে মীম একটি আবেদন জমা দেন। আবেদনে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া যৌন নিপীড়ন ও বুলিংয়ের তিনি বিচার চেয়েছেন। পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়ার কথাও আবেদনপত্রে তুলে ধরেছেন তিনি।
আবেদনে মিম তার একাডেমিক জীবনের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে উপাচার্যের কাছে বিচার চেয়ে আবেদন করে তিনি এখনও বিচার পাননি। তার বিভাগের অভিযুক্ত শিক্ষক তাকে যৌন নিপীড়ন করেন। ওই শিক্ষকের সমর্থনে বিভাগের চেয়ারম্যান তাকে স্নাতক পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে ফেল করিয়েছেন।
সহপাঠীদের কাছ থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। তারা মৃত্যুর হুমকি দিয়ে মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে তাকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। ফলে তিনি বিষয়টি গণমাধ্যমের সামনে নিয়ে আসেন।
সবশেষ আশা-ভরসা নিয়ে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছেন। বুলিং ও যৌন নিপীড়নের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান মিম। পাশাপাশি প্রশাসনের জবাবদিহির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণে তিনি আবেদন জানান। তাকে ফেল করানোর বিষয়গুলো বিশেষ কমিটির মাধ্যমে পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে তার জীবন পুনরুদ্ধারের আরজি জানান।
আবেদনপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম ওই সময়ে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলের দায়িত্বে থাকলেও তার কাছ থেকে তিনি বিচার পাননি।
এদিকে ভুক্তভোগী মীম তার আবেদনের অনুলিপি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেননি বলে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘সে হল থেকে বের হওয়ার পর আর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু তার কোনো সাড়া পাইনি। তাকে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাই। আবার অনেক সময় ফোন ঢুকলেও সে ধরে না।’
উপাচার্য যা বললেন
এ বিষয়ে চানতে চাইলে উপাচার্য সাদেকা হালিম বলেন, ‘আমি আসার আগের ঘটনার দায়ভার আমি নেব না। তবে আমি এখন সেগুলো নিয়ে সোচ্চার হব। পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় এসব বিষয় উত্থাপন হবে। সবার বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিভাগের চেয়ারম্যানের পরীক্ষায় কেন সে ৩ পেল এ বিষয়টি দেখার জন্য ওনার সঙ্গে মিটিংয়ে বসব। আর তার পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
এদিকে এক শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যেই যৌন নিপীড়ন ও বুলিংয়ের এই অভিযোগ সামনে এনেছেন মিম।
এছাড়াও অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় যৌন হয়রানিসহ নানা নিপীড়নের বিরুদ্ধে এই শিক্ষার্থী সোচ্চার হন। সেখানে অবন্তিকার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে নিজের প্রসঙ্গ টানেন তিনি।
শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ দেয়ায় হত্যাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেন মিম। এ অবস্থায় তিনি সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) গিয়ে নিজের জীবনের নিরাপত্তা চান।
ফারজানা মীমের অভিযোগে যা রয়েছে
শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ দেয়ায় হত্যাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন কাজী ফারজানা মীম।
তিনি বলেন, ‘আমার বিভাগের শিক্ষক আবু সাহেদ ইমন আমাকে যৌন হেনস্তা করেছেন। এই অভিযোগ দেৱয়ার পর থেকে বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিম ও অভিযুক্ত শিক্ষক আবু সাহেদ ইমন আমাকে সেটি তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিয়ে আসছেন।
‘আমি রাজি না হওয়ায় তারা আমাকে হত্যাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন। আমাকে একঘরে করে দেয়া হয়। আমাকে বিভিন্ন পরীক্ষায় ফেল করানো হয়। অনার্সের ফাইনাল ভাইভায় আমাকে ফেল করানো হয়।’
‘স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছি না’ উল্লেখ করে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘কখন আমাকে মেরে ফেলা হয় সেটা জানি না। শুধু আমি নই, তারা আমার পরিবারকেও নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন এবং হেনস্তা করছেন। বর্তমান এই অবস্থা থেকে বাঁচতে ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে এসেছি।’
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মীম সোমবার একটি অভিযোগ করেছেন। এর ভিত্তিতে আমাদের সাইবার টিম কাজ করছে। অভিযোগকারী মীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আমরা জবি ভিসির সঙ্গে কথা বলেছি। ভিসি অনেক কথা বলেছেন। এ অভিযোগের অনেক বিষয়ের অনেক কিছুই আমাদের হাতে নেই।’
তিনি বলেন, ‘ওই ছাত্রীর যে সমস্যা সেটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমেই সমাধান করা হবে। প্রশাসনিক বিষয়গুলো আমরা সমাধান করতে পারব না। তাকে কেন বার বার ফেল করানো হচ্ছে সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেখবে। তবে তাকে আটকে রাখা বা হুমকি দেয়ার বিষয়গুলো আমরা তদন্ত করছি।’
অভিযুক্ত দুই শিক্ষক যা বললেন
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন বলেন, ‘এসব অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। এখন অবন্তিকার মৃত্যুতে তার সহানুভূতিকে পুঁজি করে মীম গণমাধ্যমের মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করছে। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। মীম এসব বিষয়ে মিডিয়ায় কথা বলতে পারে না। এ ব্যাপারে আমি আর বেশি কিছু মন্তব্য করতে চাই না।’
প্রসঙ্গত, মিম অভিযোগ করার পর তদন্ত কমিটি আবু শাহেদ ইমনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছিল। তখন তিনি উচ্চ আদালতে যান।
অপর অভিযুক্ত বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক জুনায়েদ হালিম বলেন, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করিয়ে দেয়ার অভিযোগ মিথ্যা। মীম ঠিকমতো ক্লাসই করত না। ক্লাসে তার ৬০ ভাগ উপস্থিতিও ছিলো না। সেখানে আমরা তাকে পরীক্ষা দিতে দিয়েছি। ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে তাকে নম্বর দেয়ার তো কোনো সুযোগই নেই।’
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে নারীদের অগ্রযাত্রার পরিবেশ তৈরি করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সকালে নওগাঁর সাপাহার উপজেলা মিলনায়তনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য নারীদের স্বাবলম্বী হতে হবে। নারীর ক্ষমতায়নের মূল শক্তি তারা নিজেরাই।
নারীদের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বর্তমান সরকারের মন্ত্রিপরিষদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আটজন নারী রয়েছেন। বর্তমানে নয়জন নারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জাতীয় সংসদে স্পিকারের দায়িত্বও পালন করছেন একজন নারী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে নারীর সংখ্যা অর্ধেক নয়, বরং অর্ধেকেরও বেশি। ভোটার তালিকা দেখলে সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়। নারীরা তাদের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
‘বাংলাদেশে নারীদের অগ্রযাত্রার পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কিন্তু কিছু অশুভ শক্তি নারীদের পিছিয়ে দিতে চায়।’
আরও পড়ুন:ঘরের কাজে নারীদের সহায়তার জন্য পুরুষদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বামী ও স্ত্রী মিলেমিশে কাজ করলে সময় বেঁচে যায়।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ঘরে-বাইরে নারীদের কাজের বিষয়ে বলতে গিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “মেয়েরা কিন্তু অফিস-আদালত বা যেখানেই কাজ করে, কাজ করার পরে কিন্তু তার আরেকটা কাজ থাকে ঘরে এসে সংসার সামলানো। সেটা আবার হিসাবে ধরা হয় না। সেটা যদি হিসাবে ধরা হয়, তখন দেখা যাবে যে, কর্মক্ষেত্রে মেয়েরা কিন্তু অনেক অনেক বেশি শ্রম দিচ্ছে তারা। এটাও তো শ্রম।
“ধরেন একজন পুরুষ অফিসার, নারী অফিসার; স্বামী, স্ত্রী। দুইজন একই সাথে ঘরে ফিরল। আমরা কী দেখব যে, যিনি পুরুষ, তিনি চেয়ারে বসে পড়লেন বা ইজি চেয়ারেই বসে পড়লেন বা সোফায় বসে পড়লেন। বলে, ‘এক কাপ চা দাও তো।’ আর যিনি মেয়ে অফিসার, তিনি ঘরে যেয়েই আগে পাকের ঘরে ঢুকলেন। চা বানানো, বাচ্চাদের খাওয়ানো, বাচ্চাদের গোসল করানো, বাচ্চাদের দেখা—সবকিছু ব্যবস্থা করা। এই ক্ষেত্রে যদি সবাই একটু একসাথে কাজ করে। কেউ চা বানাল, কেউ বাচ্চাদের দেখল, তাহলে পরে সময়ও বাঁচে।”
ঘরের কাজে নারীদের সহায়তা করতে পুরুষদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেয়েদের রান্নাও করতে হবে। কারণ এখন তো আসলে আমরা এই যে ভাতা দেয়ার জন্য এখন কাজের লোক তো কম পাওয়া যায়। কাজেই সে দিক থেকে মনে করি, দুজনে মিলে কাজ করলে পরে দ্রুত কাজগুলো শেষ হলো।
‘তারপরে একটু একসাথে বসে গল্প করা যাবে। টেলিভিশন দেখা যায়। সেটা করতে পারে। তো আমাদের পুরুষরা যদি একটু ওই দিকে নজর দেয়, তাহলে জীবনটা কিন্তু আরও সুন্দর হবে।’
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রান্নায় ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ১০০ রুপি কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (একসময়ের টুইটার) শুক্রবার সকালে এক পোস্টে তিনি এ ঘোষণা দেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
পোস্টে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লিখেন, ‘আজ নারী দিবসে আমাদের (বিজেপি নেতৃত্বাধীন) সরকার এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১০০ রুপি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি সারা দেশে লাখ লাখ পরিবারের আর্থিক বোঝাকে কমাবে, বিশেষ করে আমাদের নারী শক্তিকে উপকৃত করবে।’
তিনি আরও লিখেন, ‘রান্নার গ্যাসকে আরও সাশ্রয়ী করে আমরা বিভিন্ন পরিবারের কল্যাণের জন্য সহায়তার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে চেয়েছি। নারীর ক্ষমতায়ন ও তাদের জীবনযাপন সহজ করতে আমাদের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এটি করা হয়েছে।’
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, ভারতের রাজধানী শহর দিল্লিতে ১৪ দশমিক ২ কেজির গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে খরচ পড়ে প্রায় ৯০০ রুপি।
নারী দিবসের আগের দিন বৃহস্পতিবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রীর ‘উজ্জ্বলা ইয়োজানা’ প্রকল্পের আওতায় এলপিজি সিলিন্ডারপ্রতি দরিদ্র নারীদের ৩০০ রুপি ভর্তুকির মেয়াদ আগামী অর্থবছর পর্যন্ত বাড়িয়েছে, যা শুরু হচ্ছে আগামী ১ এপ্রিল।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২৩ সালের অক্টোবরে ১২টি রিফিল পর্যন্ত ১৪ দশমিক ২ কেজির গ্যাস সিলিন্ডারপ্রতি ভর্তুকি ২০০ রুপি থেকে বাড়িয়ে ৩০০ রুপিতে উন্নীত করে। সিলিন্ডারপ্রতি ৩০০ রুপি ভর্তুকির মেয়াদ ছিল চলতি অর্থবছরের শেষ দিন ৩১ মার্চ পর্যন্ত।
এক্সে অপর এক পোস্টে নাগরিকদের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে মোদি লিখেন, ‘আমরা আমাদের নারী শক্তির শক্তিমত্তা, সাহস ও সহনশীলতাকে স্যালুট জানাই এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অবদানের প্রশংসা করি।
‘আমাদের সরকার শিক্ষা, শিল্পোদ্যোগ, কৃষি, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
আরও পড়ুন:‘কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদা বাড়েনি। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন জরুরি।
‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতে নারীদের কথা বলার জায়গাটা তৈরি করে দিতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গাগুলোতে নারীদের নিয়ে আসতে হবে।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।
তিনি বলেন, ‘নারী পরিচয়ের আগে আমার বড় পরিচয় হলো আমি একজন মানুষ। নারী-পুরুষ ভেদাভেদ তৈরি, নারীকে হেয় করা, শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরুষের চেয়ে দুর্বল মনে করা হয় আজও।’
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সাদেকা হালিম বলেন, ‘সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এমন হয়েছে যে সমাজে নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখা হয়; যদিও বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও পুরুষ সমান। কিন্তু বাস্তবে কোনো দেশই খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে নারীকে পুরুষের সমান ভাবা হয়।’
‘সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীত্ব নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। সেটা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাঙ্গন, ভাগ-বাটোয়ারার ক্ষেত্র, এমনকি ধর্মীয়ভাবেও। পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীকে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে।’
‘এমনকি নারীর সন্তান জন্ম দেয়ার বিষয় নিয়েও রাজনীতি করা হয়। সন্তান জন্মের পর পরই সন্তানের অধিকার কিভাবে হবে সেটা আমরা ধর্মীয়ভাবে নির্ধারণ করি। বাবা ও মায়ের অধিকার কতটুকু, আমাদের সিভিল ল’তে কতটুকু, শরিয়া ল’তে কতটুকু- এসব বিষয় অনেকটাই পুরুষকেন্দ্রিক। পুরুষকে সব সময় প্রাধান্য দেয়া হয়। পুরুষরাই এ সমাজে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে।’
এই উপমহাদেশে নারীদের ভূমিকা সম্পর্কে ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘ভারত উপমহাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন যে এখন হয়েছে তা নয়। অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশে নারীরা কিন্তু ইউরোপের নারীদের আগেই ভোটাধিকার পেয়েছিল। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় নারীরা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, রানি হয়েছে, ট্যাক্স সংগ্রহ করেছে।
‘আধুনিক রাষ্ট্রে পুঁজিবাদের বিস্তার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের কাজের পরিধি বেড়েছে, কিন্তু নারীদের পণ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার কাজকে কাজ হিসেবে আমরা দেখিনি। নারীরা স্ত্রী, মা বা মেয়ে হিসেবে যে ভূমিকা পালন করে সেটিকেও অবমূল্যায়ন করা হয়।
‘কোনো নারী চাকরি করলেও তাকে আমরা প্রশ্ন করি তার স্বামী কী করে। সে যদি স্বামীর থেকে বেশি বেতন পায়, তাহলে পুরুষও হীনম্মন্যতায় ভোগে।’
সমাজের সাধারণ নারীদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে জবি উপাচার্য বলেন, ‘অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন তো নারীদের অনেকেরই হয়েছে। গার্মেন্ট সেক্টর, চিংড়ি মাছের ঘের, কল-কারখানায় নারীরা কাজ করছে। এটি ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু নারীর সামাজিক মর্যাদা কি বেড়েছে? এটা খুবই জটিল একটি বিষয়।
‘চরম দারিদ্র্যের শিকার নারীরা কোনো কিছু ভাবে না, বা ভাবার সুযোগ পায় না। তারা জানে তাদেরই কাজ করতে হবে, ক্ষুধা মেটাতে হবে। তারাই শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। সাধারণ নারীরা অনেক পরিশ্রমী। সামাজিক সমালোচনা গ্রাহ্য না করে তারা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাদের বাদ দেয়া হচ্ছে।’
নারীর সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে সাদেক হালিম বলেন, ‘আমরা নারীর নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে পারিনি। বাংলাদেশে বা প্রবাসে যে পরিমাণ নারী কাজ করে সেখানেও আমরা দেখি যে নারীরা নিরাপদ নয়। এমনকি খুব নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে তারা ধর্ষণের শিকার হয়।’
তিনি বলেন, ‘তবে বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী। এবারকার কেবিনেটে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নারী মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হয়ে আসছেন। এটা ইতিবাচক দিক।
‘সংখ্যার দিক থেকে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেশি, কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদার জায়গায় গুণগত মানের দিক থেকে কতটা বদলেছে সেটি বড় বিষয়। যখন নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে আসবে, নেতৃত্ব দেবে, তখনই বদলাবে সমাজ।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য