‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’- কাজী নজরুল ইসলাম ‘নারী’ কবিতায় এভাবেই ‘মহান সৃষ্টি’র পেছনে নারী-পুরুষের যৌথ ভূমিকার কথা লিখেছেন।
তবে ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ছিমছাম নোইভা দো করদেইরো শহরে নারীরা পুরুষদের একদম পাত্তা দিতে রাজি নন। গোটা বিশ্বে পুরুষ দাপিয়ে বেড়ালেও এই শহর চলে নারীদের নিয়মে। সেই নিয়ম এতটাই কড়া যে, রীতিমতো মানবেতর জীবনের মধ্যে আছেন পুরুষ।
বিবাহিত পুরুষও সপ্তাহান্তে মাত্র এক দিন স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পান। বয়স ১৮ বছর পেরোলে ছেলে সন্তানদেরও সেখানে স্থায়ী বসবাস নিষিদ্ধ।
দক্ষিণ-পূর্ব ব্রাজিলের মিনাস গেরাইস রাজ্যের বেলো ভালে শহরের প্রত্যন্ত একটি অংশ নিয়ে গড়ে উঠেছে নারীদের এই ‘স্বর্গরাজ্য’। পর্তুগিজ ভাষায় নোইভা দো করদেইরোর অর্থ সুন্দর উপত্যকা। বাস্তবেও মনোরম শহরটি ছেয়ে আছে নানা ধরনের ফুল-ফলের গাছে।
শহরের অধিবাসীদের প্রায় ৯০ শতাংশই নারী, যাদের অনেকেই জীবনে কোনো পুরুষের সান্নিধ্যে আসেননি।
নোইভা দো করদেইরো শহরে পুরুষের এই দুর্বিপাকের জন্য অবশ্য তাদের পূর্বপুরুষেরাই দায়ী। ইতিহাস বলছে, শহরটির পত্তন ঘটান মারিয়া সেনোরিনিয়িা দে লিমা নামে এক তরুণী। মারিয়াকে জোর করে বিয়ে দিয়েছিল পরিবার।
১৮৯১ সালে মারিয়া ব্যভিচারের দায়ে অভিযুক্ত হওয়ার পরে নিজ শহর ছাড়তে বাধ্য হন। তিনিসহ তার পরিবারের পরবর্তী পাঁচ প্রজন্মকে ক্যাথলিক চার্চ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বিপর্যস্ত মারিয়া পালিয়ে গিয়ে নোইভা দো করদেইরোতে বসবাস শুরু করেন। সমাজে একইভাবে নিগৃহীত আরও বেশ কয়েকজন নারীও ধীরে ধীরে আশ্রয় নেন সেখানে। এভাবেই গড়ে ওঠে নারীদের এক শহর, যেখানে বসবাসের সব নিয়ম-কানুন তৈরি করেছেন নারীরাই।
পরের প্রায় ৫০ বছর সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল। তবে সমস্যা দেখা দেয় ১৯৪০ সালে। সে বছর অ্যানিসিও পেরেইরা নামে একজন ধর্মযাজক শহরের ১৬ বছরের এক কিশোরীকে বিয়ে করে পুরুষের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। শহরে তিনি গড়ে তোলেন একটি গির্জা, সেই সঙ্গে নারীদের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয় বিভিন্ন পদক্ষেপ। নারীদের মদ্যপান, গান শোনা, চুল কাটা বা গর্ভনিরোধক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
নারীদের ওপর এই খবরদারি একটানা চলে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত। ওই বছর অ্যানিসিও মারা গেলে নোইভা দো করদেইরোর অতিষ্ঠ নারীরা সিদ্ধান্ত নেন, তারা আর কখনও পুরুষের কাছে মাথা নোয়াবেন না।
প্রথম পদক্ষেপ হিসেবেই পুরুষের নেতৃত্বে গঠিত ধর্মীয় সংগঠন ভেঙে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে জারি হয় শহরে পুরুষদের স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ রহিত করে আইন।
নোইভা দো করদেইরোতে এখন সব মিলিয়ে ছয় শর মতো নারী আছেন। তাদের বেশির ভাগের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
কিছু নারী আছেন বিবাহিত, তাদের সন্তানও রয়েছে। তবে তাদের স্বামী এবং ১৮ বছরের বেশি ছেলে সন্তানদের সেখানে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি নেই। সপ্তাহে মাত্র একবার তারা যেতে পারেন নিজেদের বাড়িতে। বাকি দিনগুলো কাটাতে হয় শহরের বাইরে অন্য কোথাও।
ওই শহরের আইন-কানুন তৈরি করা থেকে শুরু করে কৃষিকাজ, নগর পরিকল্পনা, এমনকি ধর্মীয় রীতিনীতিও পরিচালনা করেন নারীরা।
নোইভা দো করদেইরোর নারীরা বলছেন, নিজেদের মতো থাকতে পেরে তারা ভালোই আছেন। রোজালি ফার্নান্দেস নামে এক নারী বলেন, 'নারীরা পুরুষের চেয়ে ভালোভাবে করতে পারে এমন অনেক কিছুই আছে। পুরুষেরা যখন ছিল তার চেয়ে আমাদের শহর এখন আরও সুন্দর ও ছিমছাম।
'নিজেদের মধ্যে কখনও মতভেদ হলে আমরা নিজেদের মতো করে মিটিয়ে নিই। ঝগড়া-ফ্যাসাদের পরিবর্তে ঐকমত্য খোঁজার চেষ্টা করি। আমরা সব কাজ ভাগ করে নিয়েছি। এখানে কেউ কারও সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে না।’
তবে এত শান্তির মধ্যেও ইদানীং কিছু নারীর আক্ষেপও দেখা যাচ্ছে। এই আক্ষেপ না থাকার কারণও অবশ্য নেই।
দারুণ রূপবতী নেলমা ফার্নান্দেস ২৩টি বসন্ত পার করে ফেলেছেন, অথচ এখনও কাউকে চুমু খেতে পারেননি।
নেলমা স্বীকার করছেন, শহরের নারীরা অসাধারণ সুন্দরী হলেও পছন্দের জীবনসঙ্গী অনেকেই খুঁজে পাচ্ছেন না। এতসব নিয়ম-কানুন মেনে শহরটিতে পা রাখার মতো সাহসী পুরুষের সংখ্যা নগণ্য।
নেলমা বলেন, ‘এখানে আমরা যারা অবিবাহিত নারী রয়েছি তাদের সঙ্গে যেসব পুরুষের দেখা হয়, তারা হয় বিবাহিত নয়তো কোনো না কোনোভাবে আত্মীয়। আমি জীবনের এতগুলো বছর কাটিয়েও কোনো পুরুষকে চুমু খাওয়ার সুযোগ পাইনি।
‘আমরা সবাই প্রেমে পড়তে চাই, বিয়ে করার স্বপ্ন দেখি। তবে স্বামী খুঁজতে এই শহর ছেড়ে চলে যেতে চাই না। আমরা এমন পুরুষের সান্নিধ্য চাই, যারা এখানকার নিয়ম মেনেই জীবনযাপনে রাজি হবে।’
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে হুয়াওয়ে নারী কর্মীদের জন্য একটি স্বাস্থ্য সচেতনতাবিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করেছে।
ঢাকায় হুয়াওয়ের সাউথ এশিয়া রিপ্রেজেনটেটিভ অফিসে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
এ বিশেষ উদ্যোগ কর্মীদের সুস্থতা ও একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে হুয়াওয়ের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।
হুয়াওয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই কর্মশালার লক্ষ্য ছিলো নারী কর্মীদের ইউরিনারি হেলথের ওপর কাউন্সেলিং প্রদান করা। কাউন্সেলিংয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব পায় ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই), যা নারীদের একটি সাধারণ সমস্যা।
ইউনাইটেড হসপিটালের চিকিৎসক সরকার কামরুন জাহান ঝিনুক এ সমস্যার ঝুঁকি, লক্ষণ, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও চিকিৎসার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘ইউরিনারি ট্র্যাক্টের ইনফেকশন জীবনযাপনের কিছু সাধারণ অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রচুর পরিমাণে পানি পান, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, আটসাট পোশাক পরিহারের মাধ্যমে আর্দ্রতা ও ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে ইউটিআই হওয়ার সম্ভাবনা কমানো সম্ভব।’
হুয়াওয়ের এইচআর ডিরেক্টর লিনজিয়াও এ কর্মশালার সূচনা করেন। হুয়াওয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
লিনজিয়াও বলেন, “হুয়াওয়েতে আমরা কর্মদক্ষতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। একজন কর্মী পুরুষ বা নারী যাই হোক না কেন, আমরা তাকে তার দায়িত্বশীলতা ও কর্মদক্ষতার মানদণ্ড দিয়েই বিচার করি। আমরা দেখেছি যে, পুরুষ এবং নারী উভয়ই দক্ষতার সাথে কাজ করতে সক্ষম। হুয়াওয়ের কর্মীদের সুস্থতার দিকেও আমরা মনোযোগ দিয়ে থাকি।
‘তাই আমাদের কর্মীদের জন্য ওপিডি ও আইপিডি বিমার সুবিধা রয়েছে। আমরা কর্মীদের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য সচেতনতাবিষয়ক কর্মশালারও আয়োজন করি। আজকের কর্মশালা নারী কর্মীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।’
হুয়াওয়ের ভাষ্য, প্রতিষ্ঠানটি অন্তর্ভুক্তি ও ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে কর্মক্ষেত্রে বায়ু, পানি ও খাবারের গুণমান পরীক্ষা করার মতো উদ্যোগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করে। এ ছাড়া হুয়াওয়ের পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাবিয়ষক নীতি অনুযায়ী নিয়মিত ফায়ার ড্রিলসেরও আয়োজন করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সম্প্রতি নারীদের ওপর যে জঘন্য হামলার খবর আসছে, তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক। এটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের সম্পূর্ণ বিপরীত।
তিনি বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে নারী-পুরুষ সকলের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা আমাদের সকল শক্তি প্রয়োগ করব।'
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘অদম্য নারী পুরস্কার’ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের ছাত্র-শ্রমিক-জনতা মিলে যে অসাধ্য সাধন করেছে, তার সম্মুখসারির ভূমিকায় ছিল এ দেশের নারীরা। ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রাণঘাতী অস্ত্রের সামনে হিমালয়ের মতো দাঁড়িয়েছিল আমাদের মেয়েরা।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী ও অংশগ্রণকারী ও আহত নারীদের স্মরণ করে তাদের দ্রুত সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন কামনা করেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানে সম্মুখসারিতে থাকলেও আমাদের সমাজে এখনও অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা পিছিয়ে আছে। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে সরকার সবসময় সচেষ্ট। এ জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ চলমান।
‘দুস্থ মায়েদের আর্থিক সহায়তা প্রদান, নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, কর্মজীবী নারীদের থাকার হোস্টেল, ডে কেয়ার সেন্টার সুবিধাসহ নানান ধরনের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকার নিচ্ছে। এ সংক্রান্ত আরও উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা চলছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। অনেক সময় নারীরা নির্যাতনের শিকার হলেও তারা বুঝতে পারেন না কোথায় অভিযোগ জানাবেন। নারীরা যেন তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন, সে জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে।
‘আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য আমরা পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিয়েছি। যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০২৫ প্রণয়নের কাজও আমরা হাতে নিয়েছি। আমরা একটি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন করেছি। তারাও তাদের সুপারিশগুলো দেবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মেয়েরা অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শত বাধা পেরিয়ে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সার্বিকভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখছে।’
আরও পড়ুন:বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মেয়ে ও নারীর ক্ষমতায়ন ও সমর্থন পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের তরুণী ও নারীরা তাদের চারপাশের মানুষদের কাছ থেকে ক্ষমতায়ন ও সমর্থন পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। প্রত্যেক নারীকেও পুরুষের সমান মর্যাদা, নিরাপত্তা ও সুযোগ পাওয়া উচিত।’
তিনি উল্লেখ করেন, তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনজন অসাধারণ ব্যক্তি হলেন তার মা, স্ত্রী ও কন্যা।
তারেক রহমান ফেসবুক পেজে স্ত্রী জোবাইদা রহমান, মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছবিও শেয়ার করেন।
পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আমি সবসময় তাদের জন্য প্রতিটি সুযোগ, সাফল্য এবং সুখ চেয়েছি। আমি নিশ্চিত যে আপনারা যারা এটি পড়ছেন তাদের অনেকেরই একই অনুভূতির সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তারেক রহমান বলেন, ‘আমি আবারও দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের মতো আমাদেরও উচিত একটি ন্যায়পরায়ণ, সহিষ্ণু ও শ্রদ্ধাশীল সমাজ গঠনে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া, যেখানে ধর্ম, লিঙ্গ, বর্ণ, ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করা হবে না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সব মেয়ের ছেলেদের সমান সুযোগ থাকা উচিত এবং তাদের বাড়ির বাইরে পা রাখা উচিত। হয়রানি ছাড়াই ইন্টারনেট ব্যবহার করা উচিত এবং নির্ভয়ে তাদের কণ্ঠস্বর প্রকাশের সুযোগ নেওয়া উচিত।’
তারেক রহমান আরও বলেন, “বিএনপির নীতি প্রণয়নে একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত সমাজে নারীর অব্যবহৃত সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দেয়, যেখানে দলের ‘ফ্যামিলি কার্ড’ কর্মসূচি, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই ঋণ, তরুণীদের শিক্ষার জন্য অ্যাকাডেমিক ও বৃত্তিমূলক প্রকল্পের মতো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
উপসংহারে তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা একসঙ্গে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করি।’
আরও পড়ুন:নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম নির্ধারক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে শুক্রবার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একটি আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম নির্ধারক হচ্ছে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আসুন, আমরা নারীদের প্রতি উগ্রতা, বিদ্বেষ এবং অশ্রদ্ধামূলক সকল আচরণকে না বলি এবং এই লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা সুসংহত করার জন্য আহ্বান জানাই।’
গত ১৫ বছরে হাজার হাজার পুরুষ, নারী গুম, খুন, অত্যাচারিত হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে অমানবিক সংগ্রাম করেছে ওই পরিবারগুলোর নারীরা। জুলাইতেও আন্দোলনের শুরু এই বাংলাদেশের নারীদের হাতেই। শহীদ হয়েছে আমাদের সন্তানরা, ছোট শিশুকন্যাও। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্ট্রান, বৌদ্ধ, সকলেই এই আন্দোলনের শরিক।’
মির্জা ফখরুল আশা করেন, ‘আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়াই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ লক্ষ্য থাকবে। লিঙ্গ, বয়স, পেশা নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিক যেন রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করে, এমন বাংলাদেশই আমাদের কাম্য। বাড়ি থেকে রাস্তায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে, অফিসে, সর্বত্র তাদের আত্মসম্মানকে মূল্যায়ন করা উচিত।’
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আজকের ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে উগ্রবাদের কোনো জায়গা নেই।’
তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (শনিবার) আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীরা আমাদের উন্নয়ন এবং অগ্রগতির অংশীদার। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রাক্কালে আসুন আমাদের অগ্রগতি দ্রুততর করতে পদক্ষেপ নিই।’
আরও পড়ুন:পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নারীর ক্ষমতায়নে সবার আগে পরিবার থেকে নারীকে সাহস দিতে হবে। যেকোনো সংকটে নারীর পাশে ঢাল হয়ে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, পরিবার পাশে না থাকলে রাষ্ট্রের পক্ষে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবার নারীকে সাহস দিলে রাষ্ট্রও নারীর পাশে থেকে সাহস জোগাতে পারে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীর প্রতিবন্ধকতা কখনও শেষ হয় না। সমাজে একটা গোষ্ঠী আছে, যারা নারীকে ক্ষমতায়িত করতে চায় না। দুর্বল নারীকে যত পছন্দ করে, সবলচিত্তের নারীকে তারা পছন্দ করে না। এটাই বাস্তবতা।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে (৮ মার্চ) সামনে রেখে জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন।
এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।
উপদেষ্টা বলেন, ‘একজন নারীকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলা হলে সে দেশের কাজে ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও পরিবারের পাশাপাশি সমাজেরও দায় রয়েছে। নারীর চলার পথ পুরুষের পাশাপাশি নির্বিঘ্ন ও নির্ভরতার হতে হবে।’
তিনি বলেন, “নারী এখন যে অবস্থানে রয়েছে, সে অবস্থানে থেকে নারী বলে বিতর্কিত নয়, কাজে সে বিতর্কিত হোক, অদক্ষ বলে বিতর্কিত হোক, শুধু নারী বলেই ভূল, নারী বলেই অদক্ষ, এ কথাটা বলা যাবে না। আমি বলব ‘স্কাই ইজ দ্য লিমিট।
“তাই তার চিন্তার গন্ডিটাকে তার পারিপার্শ্বিকতার নেতিবাচক মনোভাবে আটকে না রেখে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তাদের পাশে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অভিভাবককে বুঝতে হবে, ছেলে ও মেয়ে দুজনই পরিবারের সম্পদ। পরিবারের উচিত নারীকে ক্ষমতায়িত করা।”
আরও পড়ুন:বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে একটা দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক বলেছেন, দেশের সব ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে কাজ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে শিরীন হক বলেন, ‘আমাদের মূল ধারা হবে সকল ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্যের নিরসন এবং নারী-পুরুষের জেন্ডার বৈষম্য কমাতে কাজ করতে হবে। নারীর উন্নয়ন বিকাশে বাধাগুলো নিয়ে বিষয় চিহ্নিত করা।
‘অন্য সকল সংস্কার কমিশনে নারী অধিকারের প্রাধান্য নিশ্চিত করতে হবে। এটা আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছি। ক্রান্তিকালে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও অগ্রগতির জন্য কাজ করার সর্বোত্তম সুযোগ।’
অনুষ্ঠানে সমাজে যৌন হয়রানি, সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে বন্ধ এবং জলবায়ু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও সবুজায়ন এবং ক্রীড়াঙ্গনে নারী নেতৃত্ব বিকাশে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তিন ক্যাটাগরিতে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের তিনজনকে ‘নাসরীন স্মৃতিপদক ২০২৫’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ বছর পদক গ্রহণ করেন ডনাইপ্রু নেলী, রিনা খাতুন ও আফরোজা খন্দকার।
দিবস উদ্যাপন আয়োজনে নারীদের সাফল্য প্রদর্শন ও পুরস্কার প্রদানসহ ছিল আলোচনা সেশন।
একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবিরের সঞ্চালনায় এ আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা। ওই সময় দেশের সব ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তাদের একজন বলেন, দেশে নারীর ক্ষমতায়নে সামগ্রিক চিত্রের অগ্রগতি হলেও তা উল্লেখযোগ্য নয়। এখনও অনেক পিছিয়ে আছেন নারীরা। ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে বিভিন্ন স্তরের নারীদের সামনে থাকা কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা এবং সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণকে উৎসাহিত করাসহ নারী ও কন্যাশিশুরা যেন সমান সুযোগ পায় এবং উন্নতি করতে পারে, সে লক্ষ্যে সব ক্ষেত্রে পদক্ষেপের গতি বাড়াতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নারীদের উল্লেখযোগ্য নেতৃত্বের কথা স্বীকার করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভীন হক বলেন, ‘নারীদের অগ্রগতিতে পেছনে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা কারা করছে, কেন করছে সেটা বের করা দরকার। জুলাইয়ের আন্দোলনে মেয়েরাই রোকেয়া হল থেকে সবার আগে বের হলো। কিন্তু পরে এত দ্রুত মেয়েরা সরে গেল কেন?
‘জায়গা কেউ ইচ্ছে করে ছেড়ে দেয়নি। চাপ সৃষ্টি করে জায়গা ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নারীদের অন্তর্ভুক্তি আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। মেয়েদের পেছনে রাখার প্রবণতা দেখা গেছে।
‘আমরা দেখেছি আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে নারীরা দারুণ সাহস দেখিয়েছে। এত তাড়াতাড়ি মেয়েদের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে আশা করিনি।’
নারীদের ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে কমিউনিটি উন্নয়নে একশনএইড কীভাবে অবদান রেখে চলেছে তা তুলে ধরেন ফারাহ কবির।
তিনি বলেন, ‘দেশের নারীদের অগ্রগতিতে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে চলেছে একশনএইড বাংলাদেশ। নারী সুরক্ষা, অবৈতনিক কাজের স্বীকৃতি, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে অবস্থান ও নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নসহ সমানাধিকারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছি আমরা। আমরা চাই, নারী ক্ষমতায়ন কার্যক্রমে আরও গতি আসুক।’
ওই সময় নারী উন্নয়নে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত ও বৃদ্ধির আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন:বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বেগম রোকেয়া এ দেশের নারী জাগরণের পথিকৃৎ। নারী সমাজে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে তিনি যে ভূমিকা পালন করেছেন তা বৈপ্লবিক।
বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তার রুহের মাগফিরাত কামনা করি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারী সমাজে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে যে ভূমিকা পালন করেছেন তা বৈপ্লবিক।
‘বেগম রোকেয়ার জীবন ও তার আদর্শ বাস্তবায়ন এদেশের নারী সমাজকে আলোকিত ও আত্মনির্ভরশীল করতে প্রেরণা যোগাবে।’
মন্তব্য