সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী নারী ফুটবল দলকে নিয়ে সারা দেশ যখন উচ্ছ্বসিত, তখন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আগের দিন ফ্রেঞ্চ বেণি করে ছবি তোলা চট্টগ্রামের একটি স্কুলের ছাত্রীদের মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে মাথা ন্যাড়া করার কথা জানিয়েছেন ওই স্কুলের শিক্ষক জাহিদা পারভীন।
এ শিক্ষকের অভিযোগ, তার প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম নগরীর এয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর ছাত্রীদের মারধর ও বকা দেন প্রধান শিক্ষক নিপা চৌধুরী, তবে নিপা এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কী অভিযোগ জাহিদার
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বৃহস্পতিবার রাতে ব্যক্তিগত আইডি থেকে নিজের মাথা ন্যাড়া করা ছবি পোস্ট করেন জাহিদা। এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি মাথা ন্যাড়া করেন।
ওই ছবির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘স্কুলের মেয়েদের মাসখানেক কষ্ট করে খেলা শিখিয়ে মাঠে নিতে যাওয়ার আগের দিন তাদের ফেঞ্চ বেণি করে ছবি তোলা ও খেলতে যাওয়ার অপরাধে আমার স্কুলের হেডমাস্টার মেয়েদের চুল ধরে মারা ও বকার প্রতিবাদে নিজের মাথার চুল ফেলে দিয়েছি। খুব কি খারাপ দেখা যাচ্ছে?
‘পুনশ্চ: আমার মেয়েরা খেলার মাঠে খেলতে নামার অনুমতি পায়নি। স্কুলের সভাপতি আবার বর্তমানে চট্টগ্রামের সিডিএর চেয়ারম্যান এবং স্কুলটি উনার বড় আব্বার নামে।’
জাহিদা নিউজবাংলাকে জানান, গত ৮ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানা জোনে ৪৯তম গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় কাবাডি খেলার সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। স্কুলের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক হিসেবে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য টিম তৈরি তার দায়িত্ব। অংশগ্রহণের নিয়ম অনুযায়ী খেলার এক দিন আগে অংশগ্রহণকারী দলের ছবি তোলে কো-অর্ডিনেটরকে জমা দিতে হয়।
তার ভাষ্য, ওই দিন (৭ সেপ্টেম্বর) ছাত্রীদের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষে ছবি তোলার জন্য তিনি তাদের জার্সি পরে তৈরি হতে বলেন। কাবাডি খেলায় চুলে কোনো অলংকার বা ক্লিপ থাকতে পারে না। তাই বেণি করতে হয়। সে কারণে সবাই বেণি করেছিল। ছবি তোলার জন্য মেয়েদের ডেকে তিনি টয়লেটে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে চিৎকার শোনেন যে, প্রধান শিক্ষক তাদের বকাবকি করছেন।
তিনি আরও জানান, ছাত্রীরা দ্বিতীয় তলায় ছিল। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক তাদের নিচে ডেকে নিয়ে চুল ধরে মারছিলেন। তিনি (জাহিদা) বের হয়ে ছাত্রীদের মারতে ও বকতে দেখে প্রধান শিক্ষিকাকে নিবৃত্ত করেন।
জাহিদা পারভীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বেণি কেন করছে সেটা বলে তিনি তাদের মারছিলেন, বকাবকিও করছিলেন। এর মধ্যে কাবাডি টিমের মীম নামের একজনকে বলছিলেন যে, সে-ই সব নষ্টের মূল, সে সব মেয়েদের নষ্ট করছে। আমি বের হয়ে উনাকে থামাই। বলি যে, আমিই তাদের বেণি করত বলেছি।
‘তিনি তখন আমাকেও বলেন যে, এভাবে বেণি করতে পারবে না। তা ছাড়া খেলার দিন মাঠে যাওয়ার আগে নানা ছুতোয় আমাদের দেরি করছিলেন। যেমন: মেয়েদের খাবার-দাবারের হিসাব দিয়ে যেতে বাধ্য করেছিলেন, এটা তো এসেও দেয়া যায়, কিন্তু উনি হিসাব দিয়ে তবেই যেতে বলেছেন।’
শিক্ষক জাহিদার অভিযোগ অস্বীকার করেন এয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিপা চৌধুরী। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি ওই দিন শিক্ষার্থীদের মারধর বা বকাবকি কোনোটাই করিনি; বরং আমিও তাদের সঙ্গে ছবি তুলেছিলাম।’
এই বিষয়ে জাহিদা পারভীন বলেন, ‘উনি মারধর ও বকাবকির পর নিয়ম রক্ষার ছবি উঠিয়েছেন।’
খেলার দিন প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মডেল টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণে বাধ্য করায় ভেন্যুতে যেতে দেরি হয়েছে বলে অভিযোগ জাহিদার। তার ভাষ্য, দেরি হওয়ার কারণে আগে জানিয়ে রাখা সত্ত্বেও কো-অর্ডিনেটর শিক্ষার্থীদের মাঠে নামতে দেননি।
জাহিদা বলেন, ‘৩ তারিখ এই সম্পর্কিত একটা মিটিং হয়েছিল। আমি মিটিংয়ে সবার সামনে স্কুলে মডেল টেস্ট চলায় আমার একটু দেরি হবে বলে জানিয়েছিলাম। থানা শিক্ষা কর্মকর্তাকেও জানিয়েছিলাম, কিন্তু খেলার দিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট দেরিতে যাওয়ার অজুহাতে কো-অর্ডিনেটর খাস্তগীর স্কুলের কাজল স্যার আমার মেয়েদের মাঠে নামতে দেননি। আমি এটার প্রতিবাদ জানানো সত্ত্বেও তারা কর্ণপাত করেনি।’
শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে বাধ্য করা এবং নানা ছুতোয় দেরি করানোর অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক নিপা চৌধুরী বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা; বরং আমি বলেছি যে, মডেল টেস্ট পরীক্ষা না দিলে কিছু হবে না। তিনি বলেছেন, পরীক্ষা দিক, তিনি কো-অর্ডিনেটরকে বলে রেখেছেন। তা ছাড়া খেলার দিন সকালে আমি উনাকে (জাহিদা) বলেছিলাম যে, আপনার দেরি হয়ে যাচ্ছে। উনি সেটা গুরুত্ব দেননি।’
এই বিষয়ে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কাজল চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া মেলেনি।
কোতোয়ালি থানা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হুদা ছিদ্দিকী বলেন, ‘দেরি হবে বলে আমাকে খেলার আগে তো জানায়ইনি। খেলতে না দেয়ার বিষয়েও কিছু জানায়নি; বরং উনার সময়ের চেয়ে দুই ঘণ্টা দেরিতে অন্যান্য স্কুলের টিচারদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ এসেছে জাহিদা পারভীনের বিরুদ্ধে। তিনি নাকি কাজল স্যারসহ আরও কয়েকজনকে খুব বাজেভাবে গালাগাল করেছেন।
‘তা ছাড়া উনি দুই ঘণ্টা দেরিতে এসেছেন বলে দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা জানিয়েছেন। এতক্ষণ অপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না। কারণ ২০ মিনিটের ওই খেলা এক দিনেই শেষ করতে হয়েছে। ওই এক দিনে মোট ২০টা খেলা শেষ করতে হয়েছে।’
চাপ দিয়ে পদত্যাগপত্র নেয়ার অভিযোগ
ওই ঘটনার পর প্রধান শিক্ষক চাপ দিয়ে পদত্যাগপত্র দিতে বাধ্য করে বৃহস্পতিবার থেকে আর স্কুলে ঢুকতে দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন জাহিদা পারভীন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খেলার দিন বিকেলে বাসায় ফিরে আমি ডায়াবেটিসজনিত সমস্যায় অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন থেকে তিন দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। তিন দিন পর আমি প্রধান শিক্ষককে বিষয়টি জানিয়েছিলাম।
‘তিনি আমার অসুস্থতার বিষয়টি গুরুত্বই দেননি; বরং আমার ভাইকে ফোন দিয়ে আমার ওপর চাপ তৈরি করেছেন। আমার নামে খুব বাজে কথা বলেছেন। এমনকি আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে টি-শার্ট পরে ছবি তুলেছিলাম। সেটা নিয়ে বাজে কথা বলেছে। আমাকে পদত্যাগপত্র দিতে বাধ্য করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৩ বা ১৪ তারিখ নিজের ভেতর জমে থাকা ক্ষোভ থেকে বাসার সামনের সেলুনে গিয়ে আমি আমার মাথা ন্যাড়া করেছি প্রতিবাদস্বরূপ। কারও প্রতি অভিযোগ থেকে না।’
চাপ দেয়ার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক নিপা চৌধুরী বলেন, ‘এটা আসলে মিথ্যা কথা, আমি কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ করিনি; বরং তিনি শিক্ষদানের যোগ্য নন উল্লেখ করে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। আমার স্কুলে সিসিটিভি ফুটেজ আছে। তাকে ঢুকতে না দেয়ার বিষয়টাও মিথ্যা।’
স্কুলের শিক্ষককে চাপ দিয়ে পদত্যাগপত্র নেয়ার আইনি কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হুদা ছিদ্দিকী।
তিনি বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের এ রকম কোনো সুযোগ নেই। এটা তিনি কোনোভাবেই পারবেন না। বিদ্যালয়ের কমিটি হলে অন্য বিষয়।’
আরও পড়ুন:আসন্ন ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলে নেয়া হয়নি তামিম ইকবালকে। এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ মানুষদের মাঝে। শুধু তাই নয়, চলচ্চিত্র তারকা ওমর সানি তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বুধবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে তিনি এই প্রতিবাদ জানান।
ওমর সানি লিখেছেন, ‘আপনারা যারা নির্বাচক, আপনাদের খেলা আমি দেখেছি। স্টেডিয়ামে বসে বলুন আর টিভির পর্দায় বলুন, ভীষণ পুরুষত্ব ফুটে উঠতো। আজকে এমন কী হলো, কাপুরুষের মতো ঘোষণা করতে হবে তামিম ইকবাল বাংলাদেশ দলেই নেই!’
এই অভিনেতা আরও লেখেন, ‘মানলাম একজন সুপারস্টারের কথায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আপনাদের জায়গায় যদি আমার মতো রাষ্ট্রের প্রজা থাকতো তাহলে বলতাম- আমি পদত্যাগ করলাম। সরি, একজন খেলোয়ার তামিম ইকবাল।’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডে শেষেই বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা করা হবে- তা আগেই জানিয়েছিল বিসিবি। তাই খেলা শেষ হতেই মঙ্গলবার বিসিবির অফিশিয়াল ফেসবুক ও ইউটিউব পেজে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করা হয়।
গুঞ্জন সত্যি করে শেষ পর্যন্ত ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশের ওপেনিংয়ের দায়িত্ব সামলানো অভিজ্ঞ ব্যাটার তামিমকে ছাড়াই বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়। এর কারণ দেখানো হয়েছে তিনি আনফিট। তবে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন নিউজিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে ওয়ানডে দলে ফেরা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ঢাকায় আমেরিকান দূতাবাস পরিদর্শন করেছেন ও রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ক্রিকেট খেলেছেন।
আমেরিকান দূতাবাস তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও শেয়ার করেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে সাকিব আল হাসান ব্যাটিং করছেন ও পিটার হাস সাকিবকে বোলিং করছেন। একইভাবে তারা নিজেদের মধ্যে জায়গাও বদল করেছেন।খবর ইউএনবির
ভিডিওটিতে সাকিব ও রাষ্ট্রদূতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং খেলায় অংশ নেয়া অন্যদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ দৃশ্য দেখা গেছে। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে পিটাটের সঙ্গে ছবিও তোলেন সাকিব।
সাকিবের স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশির তাদের সন্তানদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ও ক্রিকেটের ব্যস্ততার মধ্যে বিরতি পেলেই প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রে যান সাকিব।
বর্তমানে ক্রিকেট থেকে বিরতিতে আছেন সাকিব। তিনি বিশ্বকাপে অংশ নিতে শিগগিরই জাতীয় দলে যোগ দিয়ে ভারতে যাবেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) দুর্নীতির অভিযোগের পর ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে সাময়িক নিষিদ্ধ করা হয়েছে অলরাউন্ডার নাসির হোসেনকে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সূত্র বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্রটি জানায়, ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরতে নাসিরকে অবশ্যই আইসিসির ছাড়পত্রের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) আসন্ন আসরের প্লেয়ার্স ড্রাফট ২৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, তবে বিসিবি প্রকাশিত খেলোয়াড়দের তালিকায় নাসিরের নাম নেই।
আইসিসির তথ্য অনুযায়ী, ডানহাতি এ অলরাউন্ডার ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে একটি টি-টোয়েন্টি লিগে অংশ নিয়েছিলেন, যেখানে তিনি অন্যান্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে অনৈতিক অনুশীলনে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠছে।
নাসির হোসেন সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশ নেন ২০১৮ সালে, যার পর থেকে তিনি জাতীয় দলে অনুপস্থিত ছিলেন। টাইগারদের হয়ে ১৯টি টেস্ট, ৬৫টি ওয়ানডে ও ৩১টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তিনি।
আরও পড়ুন:মিরপুরে চলছে বৃষ্টির লুকোচুরি। প্রথম ধাপে প্রায় দুই ঘণ্টা বৃষ্টি নামার পর দ্বিতীয় ধাপে এক ঘণ্টা ৪০ মিনিটের মতো। মধ্যখানে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে একবার খেলা শুরুর কথা থাকলেও বেরসিক বৃষ্টি আবার অপেক্ষা বাড়ায়। এতে আর মাঠে নামা হয়নি ক্রিকেটারদের, তবে শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির কাছে হার মানে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ। ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে রেফারি। রাত ৮টা ২৬ মিনিটের দিকে আসে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের প্রথম কোনো ম্যাচ পরিত্যক্ত হলো। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পরিত্যক্ত হওয়া মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে এটি।
ক্রিকেটের চিরচেনা শত্রু বৃষ্টির শঙ্কা মাথায় নিয়েই আজ শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুপুর ২টায় দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। বরাবরের মতো টসের দিকে চোখ থাকবে দুই দলের। দুই দলই চায় আজকের ম্যাচটা জিতে সিরিজ জয়ের দিকে এগিয়ে যেতে। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন কুমার দাস।
বাংলাদেশ এবং নিউজিল্যান্ড উভয় দল তিন ম্যাচের এই সিরিজটিকে রিজার্ভ বেঞ্চ পরখ করে দেখার মিশন হিসেবে নিয়েছে। উভয় দলই নিজেদের সেরা খেলোয়াড়দের বিশ্রামে রেখে নামছে ম্যাচে। নিউজিল্যান্ড দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটার অপরিচিত হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা নয়। ১৫ জনের সবারই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এদিক থেকে বাংলাদেশ দলকে এগিয়ে রাখতে হবে। এই সিরিজ দিয়ে তামিম ইকবাল ফিরছেন। আফগানিস্তান সিরিজে হঠাৎ অবসর ঘোষণা, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, কোমরের চোটের কারণে এশিয়া কাপ থেকে ছুটি নেয়া এবং পুনর্বাসন সম্পন্ন করে নিউজিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন বাঁহাতি এ ওপেনার। নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্য বাংলাদেশ স্কোয়াডে ফিরে এসেছেন অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। মাহমুদউল্লাহ দীর্ঘ অফ ফর্মের কারণে দলের বাইরে ছিলেন।
নিউজিল্যান্ড সিরিজে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মেহেদি হাসান মিরাজ এবং তিন পেসার তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ ও শরিফুল ইসলামকে। সাকিবের অনুপস্থিতিতে প্রথম ওয়ানডের মতো দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব ব্যাটার লিটন দাস। বাংলাদেশ দল এবং তার জন্য এ সিরিজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ টাইগার রিজার্ভ বেঞ্চে একজনও ভালো মানের বিকল্প ওপেনার নেই। নাঈম শেখ টানা ম্যাচ খেলে রান করতে পারেননি। এনামুল হক বিজয় টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনায় নেই।
প্রথম ম্যাচ যেহেতু বৃষ্টিতে ভেসে গেছে। তাই আজকের ম্যাচ দিয়ে এশিয়া কাপের ব্যর্থতা ভুলে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বাংলাদেশ। আর সে লক্ষ্যে ব্যাটসম্যানদেরকেই দায়িত্বটা নিতে হবে। উইকেট কামড়ে পড়ে থাকলে রান আসবেই এই উইকেটে- আগের দিন তা দেখিয়েছেন ইয়াং-নিকোলস। পরিকল্পনা হয়ে গেছে, এখন প্রয়োগ করতে হবে মাঠে। বড় পার্টনারশিপ গড়ে তুলতে পারলে হয়তো যেকোনো কিছুই সম্ভব।
এবার একটু পরিসংখ্যানের দিকে মনোযোগ দেয়া যাক। বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড এ পর্যন্ত ৩৯টি এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের জয় ১০টিতে অন্যদিকে ব্ল্যাক ক্যাপসদের জয় ২৮টিতে। আর এই সিরিজের প্রথম ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের ১০ জয়ের মধ্যে ৮ জয় দেশের মাটিতে। আর দুটি জয় নিরপেক্ষ ভেন্যুতে। অ্যাওয়েতে বাংলাদেশ কোনো ম্যাচ জয়লাভ করতে পারেনি।
নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশের এই কন্ডিশনে ধাতস্থ হওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ পায়নি। এ কন্ডিশনে খেলাটা বরাবরই কঠিন তাদের জন্য। প্রথম ওয়ানডেতে কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেনি তারা। তাই নজর থাকবে আজকের ম্যাচে। ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে, তবে কন্ডিশন যাই হোক না কেন, কিউই ফাস্ট বোলাররা কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে, সেটি সবসময় হাড়ে হাড়েই টের পেয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ১৫০ কিলোমিটার গতিবেগের বল ও সুইং সামলাতে তালগোল পাকিয়ে হিমশিম খেয়েছেন সবাই।
যদিও মিরপুরে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে খেলা হওয়ায় কিউইদের বিপক্ষে ‘হোম অ্যাডভান্টেজ’ নেয়ার চেষ্টা থাকবে বাংলাদেশের। তিনজন স্পিনার আর দুই পেসার রেখে একাদশ সাজাতে পারেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান কোচ নিক পোথাস। ডান ও বাঁহাতি অফ স্পিনারের সঙ্গে রাখা হতে পারে লেগি রিশাদ হোসেনকে। কারণ, তাকেও ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। বিশ্বকাপেও বিকল্প বোলার কোটায় রাখা হতে পারে তাকে। বৃষ্টিভেজা কন্ডিশনে তিন পেসার নিয়েও খেলতে পারেন স্বাগতিকরা। পরীক্ষা আর পরখ করে দেখার সিরিজ হলেও ফলাফল কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের জয় চাই-ই চাই।
আর প্রেডিকশনের কথা যদিও বলতেই হয়, তাহলে আমি বাংলাদেশের জয় দেখছি। যদিও মাঠের কাজটা টাইগারদের করে দেখাতে হবে। মাঠে সব বিভাগ ঠিকঠাক পারফর্ম না করলে অতীত পরিসংখ্যান, চেনা দর্শক আর কন্ডিশনের কিছুই যায়-আসে না।
আসলে দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে গত ১৩ বছরে কোনো ওয়ানডে ম্যাচে হারেনি বাংলাদেশ। কিংবদন্তি ড্যানিয়েল ভেট্টরিকে দিয়ে হোয়াইটওয়াশের শুরু, পরে কাইল মিলসেকে একই ফল উপহার দিয়েছেন মুশফিকুর রহিমরা। বিশ্বকাপ দলের আট ক্রিকেটারকে বিশ্রামে রেখে খেলতে আসা নিউজিল্যান্ড দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লকি ফার্গুসনকেও কি সেই ঐতিহ্যের স্বাদ দিতে চলেছে বাংলাদেশ? সেটি আজ দেখার পালা।
লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক বাংলা
আরও পড়ুন:মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত সিক্স-এ-সাইড ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২৩-এ ফার্মেসি বিভাগের দল মেডজুন চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশান ক্যাম্পাসের খেলার মাঠে টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়। এতে রানার-আপ হয় ইংরেজি বিভাগের দল ইএনবি রেনেসা।
এমআইইউ স্পোর্টস ক্লাব এ টুর্নামেন্টের আয়োজন করে।
দুই সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠিত খেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ থেকে ৮টি দল অংশ নেয়। এর মাঝে ফার্মেসি ও ইংরেজি বিভাগের দল আলাদা সেমিফাইনালে বিজয়ী হয়ে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে। খেলা উপলক্ষে ক্যাম্পাসজুড়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়।
ফাইনাল খেলার উদ্বোধনী পর্বের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ডিন ও ফার্মেসি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. নারগিস সুলতানা চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন রেজিস্ট্রার ড. মোয়াজ্জম হোসেন। সভাপতিত্ব করেন ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও এমআইইউ স্পোর্টস ক্লাবের মডারেটর ড. শেখ হাবিবুর রহমান।
ফাইনাল খেলার প্রথমার্ধ ও দ্বিতীয়ার্ধ গোলশূন্য ড্র হওয়ায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এতেও ফলাফল গোলশূন্য ড্র হওয়ায় ট্রাইবেকারের মাধ্যমে খেলার ফলাফল চূড়ান্ত করা হয়। ট্রাইবেকারে ইংরেজি বিভাগের দল ইএনবি রেনেসাকে হারিয়ে টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন ট্রফি নিজেদের করে নেয় ফার্মেসি বিভাগের দল মেডজুন।
খেলা শেষে চ্যাম্পিয়ন ও রানারাআপ দলের খেলোয়ারদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পুরস্কার বিতরণ করেন ব্যবসায় প্রশাসন ও অর্থনীতি অনুষদের ডিন সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব আলম, রেজিস্ট্রার ড. মোয়াজ্জম হোসেন, ইংরেজি বিভাগের প্রধান আহমেদ মাহবুব-উল-আলম, সিজিইডির কো-অর্ডিনেটর ড. মোহাম্মাদ আবুল কালাম আজাদ, এমআইইউ স্পোর্টস ক্লাবের মডারেটর ড. শেখ হাবিবুর রহমান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক ও স্পোর্টস ক্লাবের সহকরী মডারেটর ড. মোহাম্মদ ফয়জুল হক, ফার্মেসি বিভাগের প্রভাষক নাহিদ হাসান, স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্সের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর আবদুল মতিন, অ্যাডশিন অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্সের ডেপুটি ডিরেক্টর জামাল হোসেইন, স্পোর্টস ক্লাবের (গুলশান ক্যাম্পাস) প্রেসিডেন্ট শামিম আহমেদ, স্পোর্টস ক্লাবের (আশুলিয়া ক্যাম্পাস) প্রেসিডেন্ট আবদুল হাই প্রমুখ।
আরও পড়ুন:নানা নাটকীয়তায় ভরা এশিয়া কাপের ১৬তম আসরের ফাইনাল থেকে আর মাত্র ১ দিন বাকি। শিরোপা ঘরে তোলা লড়াইয়ে আগামীকাল ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা। বলতে গেলে ফাইনাল নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের যে উচ্ছ্বাস ছিল তা অনেকটাই কমে গেছে পাকিস্তান ফাইনালে না ওঠায়।
এশিয়া কাপের ৩৯ বছরের ইতিহাসে যা হয়নি তা এবার দেখতে চেয়েছিল পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। সেটি হলো ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল। এক ম্যাচ হাতে রেখে ভারত ফাইনাল নিশ্চিত করতে পারলেও অঘোষিত সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে আবার ফাইনালে ওঠা হয়নি পাকিস্তানের, তবে ফাইনাল যে ফাইনালের মতোই হবে সেটা নিশ্চয়ই দেখতে পারবেন দর্শকরা। কেননা লড়াইটা হবে এশিয়া কাপের সর্বোচ্চ চ্যাম্পিয়ন ভারত ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার মধ্যে।
এশিয়া কাপে সবসময় ফেভারিট হিসেবে খেলতে নামা ভারত এবারও শিরোপার অন্যতম দাবিদার। তাদের আছে বিশ্বমানের ব্যাটিং লাইন। আইসিসির সর্বশেষ হালনাগাদকৃত র্যাঙ্কিংয়ে সেরা দশে আছে ভারতের তিন ব্যাটার। দুই নম্বরে শুভমান গিল, আটে বিরাট কোহলি আর নয় নম্বরে রোহিত শর্মা। তাছাড়া দারুণ ছন্দে আছেন চোট থেকে ফেরা উইকেটরক্ষক ব্যাটার লোকেশ রাহুল। আছেন মারমুখী ব্যাটার ইশান কিশান। তাদের কেউ একজন দাঁড়াতে পারলে প্রতিপক্ষের জন্য তা হবে ভয়ংকর।
মিডল অর্ডারে আছেন অভিজ্ঞ দুই অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া ও রবীন্দ্র জাদেজা। তারা ব্যাট কিংবা বল হাতে জ্বলে উঠতে পারেন যেকোনো ম্যাচে। তাদের সঙ্গে বোলিং লাইন সামলাবেন জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ, কুলদ্বীপ যাদবের মতো বিশ্বমানের বোলার। তাই সবদিক দিয়েই ফাইনালে এগিয়ে থাকবে ভারত।
অন্যদিকে শ্রীলঙ্কাকেও কোনোভাবে পিছিয়ে রাখা যাবে না। কেননা গত আসরের চ্যাম্পিয়ন তারা। এ ফরম্যাটে সর্বশেষ ১৩ ম্যাচের একটিতে হেরেছে তারা। গত আসরের প্রথম ম্যাচ হারলেও বাকি ম্যাচগুলোতে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। এবারের এশিয়া কাপে তাদের একমাত্র হার সুপার ফোরে ভারতের বিপক্ষে। তাই তারা চাইবে ফাইনালে এই হারের প্রতিশোধ নিতে।
লঙ্কানদের ব্যাটিং লাইনকেও খুব একটা মন্দ বলা যায় না। তাদের আছে কুশল মেন্ডিস, পাথুম নিশাঙ্কা, সাদিরা সামারবিক্রমা, চারিথ আশালাঙ্কার মতো টপ অর্ডার। মিডল অর্ডারে অধিনায়ক দাসুন শানাকা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা কিংবা দুনিথ ওয়েলালাগের মতো অলরাউন্ডার। তারাও যেকোনো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম।
শ্রীলঙ্কার বোলিং লাইন সব সময়ই প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ংকর, তবে চোটের কারণে এবার নেই অভিজ্ঞ ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাসহ আরও দুই পেসার। তাদের অবর্তমানে মহেশ থিকশিনা, মাথিশা পাথিরানা, প্রোমদ মাদুশানরা যেভাবে লঙ্কানদের এগিয়ে নিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তাই ভারতের বিপক্ষে তারাও যেকোনো অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে।
পরিসংখ্যানও সে কথাই বলে। এ পর্যন্ত এশিয়া কাপে ২২টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা। যেখানে ভারতের ১১ জয়ের বিপরীতে শ্রীলঙ্কাও জিতেছে ১১টি ম্যাচে। অর্থাৎ এবারের আসরের ফাইনাল যারা জিতবে তারাই এগিয়ে যাবে।
তাই বলা যায়, এই ফাইনাল দর্শকদের আনন্দ বাড়িয়ে দেবে। দুই দলই চাইবে তাদের সেরা খেলাটা উপহার দিতে। এখন যারা বেশি ভালো খেলবে তারাই জিতবে।
লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক বাংলা
আরও পড়ুন:এশিয়ার বিশ্বকাপখ্যাত ‘এশিয়া কাপ’ প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। টুর্নামেন্ট ভারত সব সময়ই ফেভারিটের তকমাটা নিজের করে রেখেছে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। ইতোমধ্যেই টুর্নামেন্টের ফাইনালে গিয়ে বসে রয়েছে সাতবারের চ্যাম্পিয়নরা। অন্যদিকে সুপার ফোরে বাংলাদেশ দুটি ম্যাচই হেরে লড়াই থেকে ছিটকে গেছে সাকিব বাহিনী। ভারতের বিরুদ্ধে শুক্রবারের ম্যাচটি শুধুই নিয়মরক্ষার।
বাংলাদেশ বিদায় নিলেও তুলনামূলক খর্ব শক্তির দল নিয়ে আলোচনা কিংবা হিসাবের বাইরে থেকেও ফাইনালের দৌড়ে টিকে রয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে সহ-আয়োজক শ্রীলঙ্কা। মনে করে দেখুনতো, এশিয়া কাপ শুরুর আগে একবারের জন্যও কেউ কি ভেবেছিল শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে। উত্তরটাও সবার জানা। অবশ্যই না, কেননা শ্রীলঙ্কার এই দলটা যেভাবে টুর্নামেন্ট শুরু করেছে তাতে এমন ভাবাটাও দোষের কিছু নয়।
আপনার-আমার ভাবনা-চিন্তায় যা-ই থাকুক না কেন শ্রীলঙ্কা টিকে আছে। শুধু টিকে আছেই নয়, ফাইনালে ওঠার যথেষ্ট সম্ভাবনাও রয়েছে ছয়বারের চ্যাম্পিয়নদের। সে লক্ষ্যেই আজ লঙ্কায় হতে চলেছে লঙ্কা কাণ্ড। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজ মাঠে নামছে পাক ফাইটাররা। শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান ম্যাচটি অঘোষিত সেমিফাইনালে পরিণত হয়েছে। কেননা ম্যাচের বিজয়ী দল ফাইনালে উঠবে, তবে যদি বৃষ্টি বা অন্য কোনো কারণে ম্যাচ বাতিল হয়ে যায়, তাহলে অঙ্কটা কী দাঁড়াবে?
এই ম্যাচের জন্য কোনো রিজার্ভ ডে নেই। আজ কলম্বোতে আবার বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের ৭৩ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টির কারণে কোনো ফলাফল না হলে কী হবে তখন? সেক্ষেত্রে দুই দলের মধ্যে পয়েন্ট ভাগাভাগি হবে এবং সমান পয়েন্টই থাকবে পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার। তখন দেখা হবে নিট রানরেট আর সেটা হলে পাকিস্তানের কপাল পুড়বে। কারণ বাবর আজমদের (-১.৮৯২) চেয়ে ভালো নিট রান রেট (-০.২০০) রয়েছে শ্রীলঙ্কার। তাই তারা ফাইনালে উঠে যাবে। আসলে ভারতের কাছে ২২৮ রানের বিশাল ব্যবধানে হারের পর পাকিস্তানের নিট রানরেট কমে গেছে। যেটা বড় ধাক্কা হয়েছে বাবরদের জন্য। পাকিস্তান তাই চাইবে, যেকোনো পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার যেন পুরো খেলাটাই হয়। খেলা না হলে লাভবান হবে শ্রীলঙ্কা। তাই আজ পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ শুধু শ্রীলঙ্কাই নয়, তার সঙ্গে বৃষ্টিও তাদের তৃতীয় এবং সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ।
যদিও ক্রিকেট বিশ্ব চাইবে ম্যাচটা পাকিস্তান জিতে আরও একবার পাক-ভারত যুদ্ধের দামামা বেজে উঠুক; কিন্তু আপনার-আমার চাওয়াতে কী আসে যায়। ভুলে গেলে চলবে না যে, গত আসরেও এই শ্রীলঙ্কা হিসাবের বাইরে থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কেননা এই আসর এলেই নিভু নিভু প্রদীপ শিখা থেকে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে ভারত মহাসাগরের দ্বীপ দেশটি।
কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে ম্যাচটি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে নামার আগে ইনজুরি আক্রান্ত দুই পেসার হারিস রউফ ও নাসিম শাহকে নিয়ে চিন্তায় পাকিস্তান। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে রউফ কোমর এবং নাসিম ডান কাঁধের ইনজুরিতে পড়েন। তাদের ব্যাকআপ হিসেবে দলে ডাকা হয়েছে অনভিজ্ঞ দুই পেসার শাহনাওয়াজ দাহানি ও জামান খানকে। ফলে আসরের শুরুতে পাকিস্তান যে বিধ্বংসী পেস অ্যাটাক নিয়ে যাত্রা করেছিল সেই বর্শা খানিকটা হলেও ভোঁতা হয়েছে।
যদিও পাকিস্তান স্বয়ংসম্পূর্ণ দল। তাদের যেমন আছে ব্যাটিং লাইন, তেমনি আছে বিশ্বমানের বোলিং লাইনও। ব্যাটিংয়ের অন্যতম ভরসা বাবর আজম। তাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য আছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। অন্যদিকে দুই ওপেনার ফাখার জামান ও ইমাম-উল-হক যদি শুরুটা ভালো করতে পারেন তাহলে রেজাল্ট তাদের পক্ষেও আসতে পারে।
এবার তাকাতে চাই দু’দলের পরিসংখ্যানের দিকে। পরিসংখ্যানে শ্রীলঙ্কার চেয়ে বেশ এগিয়ে পাকিস্তান। এখন পর্যন্ত ১৫৫ বার ৫০ ওভারের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে দু’দল। এতে এগিয়ে রয়েছে অবশ্য মেন ইন গ্রিনরাই। ১৫৫ ম্যাচের মধ্যে ৯২টিতে জয় পেয়েছে পাক ইউনিট। অন্যদিকে ৫৮ ম্যাচে জয় সাঙ্গাকারার উত্তরসূরিদের। লঙ্কানদের নিয়ে প্রতিটি লেখায় একটা কথা আমি সব সময়ই বলি আর সেটি হলো এশিয়ার বিশ্বকাপের মঞ্চটা বেশ পছন্দের শ্রীলঙ্কার। দেখুন না তাদের পাকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপের পরিসংখ্যান। দু’দল এখন পর্যন্ত ১৭ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ১২টিতে জিতেছে আর হেরেছে মাত্র ৫টিতে! কি, চোখ কপালে উঠে গেল। ওঠারই কথা। ব্যবধানটা কিন্তু কম নয়।
গুরুত্বপূর্ণ এ লড়াইটাও আবার লঙ্কানদের ঘরের মাঠে। চেনা কন্ডিশনে এবং আপন মানুষজনের উপস্থিতিতে। তাই বাড়তি সুবিধাও পাবে নিঃসন্দেহে। কলম্বোর গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে পিচ কন্ডিশন নিয়ে দু-চার কথা না বললেই নয়। যেহেতু টানা বৃষ্টির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে স্বাভাবিকভাবে আউটফিল্ড স্লো থাকবেই। আর এই পিচে ভারত-শ্রীলঙ্কার ম্যাচের মতো স্পিনাররাই থাকবেন চালকের আসনে। যদিও কলম্বোর পিচ আগে থেকেই স্পিন স্বর্গ, তবে বৃষ্টি সেটিকে আরও প্রকট করেছে। এই দিক থেকে দু’দলই সমানে সমানে। পাকিস্তান যখন পেসারদের ইনজুরি নিয়ে মাথায় হাত দিয়েছিল তখন এমন খবর তাদের জন্য স্বস্তিরই বটে। অন্যদিকে ভারতের বিপক্ষে লঙ্কার স্পিনাররা যেভাবে ম্যাচে ছড়ি ঘুরিয়েছে তাতে লড়াই জমে উঠবে বলার অপেক্ষায় রাখে না। তাই আজ হয়তো দু’দল বাড়তি স্পিনার নিয়েই মাঠে নামবে। এ ছাড়া মাঠে রান তাড়া করে জেতাটা কঠিন হবে, যা এবারের এশিয়া কাপে শতভাগ প্রমাণিত। বাংলাদেশ বলেন কিংবা পাকিস্তান অথবা শ্রীলঙ্কা- নিজেই ছোট লক্ষ্যও তাড়া করে জিততে পারেনি। তাই লক্ষ্য থাকবে টসের ওপরও। টস জেতাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এর ওপর নির্ভর করছে ম্যাচের পরিণতি।
গত এশিয়া কাপ শ্রীলঙ্কা যেখান থেকে শেষ করেছে। এবার যেন ঠিক সে জায়গা থেকেই শুরু করেছে। শিরোপার লক্ষ্যে বেশ ভালোভাবে এগোচ্ছে দলটি। দ্বিতীয় সারির এই বোলিং অ্যাটাক নিয়ে টুর্নামেন্টে অনেকটা পথ অতিক্রম করেছে তারা। এখন দেখার পালা, গতবারের প্রতিশোধ নিয়ে পাকিস্তান ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হতে পারে কি না?
লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক বাংলা
আরও পড়ুন:
মন্তব্য