নারীর ‘ছোট পোশাকের’ বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সম্প্রতি আয়োজিত মানববন্ধন নিয়ে প্রবল সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কর্মসূচির ব্যানার-ফেস্টুনে ব্যবহৃত স্লোগান নারীর প্রতি প্রচণ্ড অমর্যাদার হিসেবে মন্তব্য করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অনেকে।
এসব কর্মসূচিতে ব্যবহৃত স্লোগানের একটিতে বলা হচ্ছে ‘ছোট পোশাক নারীকে বিজ্ঞানী বানায় না, পণ্য বানায়’। এই স্লোগানটি নিয়েও নানামুখী আলোচনা চলছে ফেসবুকে।
ইন্টারনেট ঘেঁটে নারীর বিজ্ঞানমনস্কতার সঙ্গে ছোট বা বড় পোশাকের কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। বরং বিজ্ঞান জগতের নারীরা মনে করছেন, কর্মক্ষেত্রে নিজের স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ যেকোনো পোশাক কাজের প্রতি মনোনিবেশ বাড়িয়ে দেয়।
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় যুক্ত নারীদের পোশাক কেমন হওয়া উচিত, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম বেঁধে দেয়ার সুযোগ নেই বলেও মনে করছেন নারী বিজ্ঞানীরা।
সুইজারল্যান্ডের ইকোল পলিটেকনিক ফেদারেল দ্যু লুসানের ক্যানসার বায়োলজির পোস্টডক্টরাল গবেষক কোর্টনি থমাস বলছেন, ‘বিজ্ঞানের জগতে বসবাস করা নারী হিসেবে আমরা নিজেদের এবং পুরুষ সহকর্মীদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করি: আমাদের আচরণ কী হবে, কীভাবে সেরা গবেষণা করা যাবে এবং কীভাবে নিজেদের উপস্থাপন করতে হবে।
‘একজন নারী বিজ্ঞানীর সৌন্দর্য সচেতনতা নিয়ে আমাদের সমাজে কিছু অন্ধবিশ্বাস রয়েছে। অনেকেই মনে করেন একজন নারী তার সৌন্দর্যের দিকে মনোযোগ দিলে বোধহয় স্টেম সেল বা কোয়ান্টামবিদ্যা সম্পর্কে গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা করার সময় পান না।’
নারী বিজ্ঞানীরা প্রায়ই সেক্সিস্ট (যৌনবিদ্বেষী) ও আপত্তিকর আচরণ এবং অযাচিত পরামর্শের মুখোমুখি হন বলেও মন্তব্য করেন কোর্টনি।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রায়ই মেয়েদের উপদেশ দেয়া হয়, ২ ইঞ্চির বেশি হিল পরবেন না। এর চেয়ে উঁচু হিল ভয়ঙ্কর এবং অ-পেশাদার। কিন্তু আমি একবার একটি সেমিনারে নিজের প্রিয় বেগুনি রংয়ের ৩ ইঞ্চি হিল জুতো পরে গিয়েছি।
‘যে জুতো আপনার জন্য আরামদায়ক সেটিই পরুন। এটি আপনাকে অনন্য আত্মবিশ্বাস দেবে। আপনি নিজেকে আরও ভালোভাবে প্রকাশে সক্ষম হবেন।’
কোর্টনি বলেন, ‘নারীর প্রতি আরেকটি (অযাচিত) উপদেশ হলো, মেকআপ করুন, তবে খুব বেশি নয়। বলা হয়, একজন নারীর শারীরিক সৌন্দর্য প্রকাশের একটি সীমা নির্ধারিত আছে।
‘এ সম্পর্কে আমার সাফ কথা, আমি কী গবেষণা করছি সেদিকে নজর দিন, আমার মুখ/হেয়ারস্টাইল/পোশাক নিয়ে আপনার মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। ল্যাবে চেহারার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনি যে পোশাক পরে কাজ করছেন সেটি নিরাপদ কিনা। আপনি যদি আরামদায়ক পোশাক পরে আরও ভালো কাজ করতে পারেন, তাহলে সেটাই বেছে নিন। চাইলে জিন্স ও সোয়েটশার্ট পরে ল্যাবে যান।’
‘আমি মেকআপ পছন্দ করি না, তাই বেশিরভাগ দিন এটা নিয়ে ল্যাবে যাই না। তবে আমার একজন সহকর্মী প্রতিদিন বিশ্বের সবচেয়ে নিখুঁত আইলাইনার নিয়ে আসেন। মূল কথা হলো, আমরা দুজনেই স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণভাবে কাজ করতে পছন্দ করি। নিজেকে আরামদায়ক রাখতে পারলে নিজের সমস্ত অভিনিবেশ নিয়ে দুর্দান্ত বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করতে পারবেন।‘
গবেষণার সময়ে নারীর সঙ্গে অন্তত একজন পুরুষ সহকর্মী রাখার মতো উপদেশ নিয়েও বিরক্ত কোর্টনি থমাস।
তিনি বলেন, ‘কত হাস্যকর এক উপদেশ! কাউকে একজন বিজ্ঞানীর মতো দেখানোর একক কোনো উপায় নেই। এসব পুরোনো ধ্যানধারণা ঝেটিয়ে বিদায় করে বাস্তবকে বুঝতে শিখুন।
‘বিজ্ঞানের জগতে বিচরণ করা প্রিয় নারীরা, আমরা সর্বত্র এবং কর্মজীবনের প্রতিটি পর্যায়ে যোগ্য! আমরা প্রতিটি জায়গায় সক্ষম। আমাদের আইডিয়াগুলো আমাদের পুরুষ সহকর্মীদের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।’
নাসার অনুষ্ঠানে ঝলমলে পোশাক নিয়েও উঠেছিল বিতর্ক
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার একটি আয়োজনে সোনালি রঙয়ের উজ্জ্বল গাউন পরে বক্তৃতা দিয়ে বিতর্কে পড়েন নিউ ইয়র্কভিত্তিক স্ট্রেটেজিক কনসালটেন্সি ফার্ম-সায়েন্স হাউজের সহ-পরিচালক রিটা জে কিং। ঘটনাটি ২০১১ সালের।
বিজ্ঞানের মতো ‘গম্ভীর’ বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার সময় ঝলমলে পোশাক পরার বিষয়টি বেশ আলোচিত হয়। বিষয়টি নিয়ে ২০১৯ সালে নভেম্বরে টুইটার হ্যান্ডেলে ওই পোশাকের ছবি শেয়ার করেন রিটা। ব্যাখ্যা দেন, আট বছর আগে এমন পোশাক পরার কারণ।
তিনি লেখেন, “অতীত নিয়ে ভাবছিলাম। তখন এ গাউনটি সামনে পাই। মনে পড়ল সেই ছোট্ট মেয়েদের কথা, যারা আমাকে নাসায় বক্তৃতা দেয়ার সময় উজ্জ্বল কিছু পরতে বলেছিল। ওরা এমনটা চেয়েছিল, কারণ তারা বিশ্বাস করছিল যে বিজ্ঞানীরাও উজ্জ্বল হতে পারেন।
Why should we have to chose between being a scientist and being sparkly? I was high heels shamed for years, "how can you work all day in the lab with those on your feet..." We present ourselves however we want to be, with or without lipstick. https://t.co/dKHYyZNQ6n
— Joana Lobo Antunes🔬💬 (@JoanaLoA) November 2, 2019
টুইটের পর ব্যাপক সমর্থন পান রিটা। তার টুইটে ৪১ হাজারের বেশি লাইক পড়ে। ঝলমলে পোশাকের সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনো বিরোধ নেই বলে মন্তব্য করেন অনেকে। পুরুষশাসিত কর্মক্ষেত্রে ‘নারীত্ব’ তুলে ধরায় রিটার প্রশংসাও করা হয়।
একজন লেখেন, “হ্যাঁ! এ কারণেই আমি অনেক মায়ের মনে থাকা অ্যান্টি-পিঙ্ক ব্যাকল্যাশকে ঘৃণা করি। মেয়ে মানুষ হওয়াতে কোনো ভুল নেই এবং এটা পুরুষশাসিত জায়গায় কাজ করা থেকে আপনাকে বিরত রাখতে পারে না!
আরেকজন লেখেন, “নারীত্ব একটি শক্তি, দুর্বলতা নয়। আমাদের মেয়েদের জন্য একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হওয়ার জন্য ধন্যবাদ।”
This is so important. The idea that masculine is serious and feminine is frivolous limits the options girls see for themselves and their future lives. This shows them that they don't have to pick between their interests and their identities. Science is for everyone. Thank you!
— katie kawaii (@katiekawaii) November 4, 2019
বাজফিড নিউজকে রিটা বলেন, ‘ওই অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষভাবে পোশাকটি কিনেছিলাম। এমন অবস্থান থেকে কখনোই সরে যাব না।
‘আমি সবচেয়ে ঝকমলে পোশাক বেছে নিই। আমি তাদের (যারা আমন্ত্রণ জানিয়েছিল) দেখাতে চেয়েছিলাম যে, স্কুলের বাচ্চাদের চাওয়াকে গুরুত্ব দিয়েছি।’
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে হুয়াওয়ে নারী কর্মীদের জন্য একটি স্বাস্থ্য সচেতনতাবিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করেছে।
ঢাকায় হুয়াওয়ের সাউথ এশিয়া রিপ্রেজেনটেটিভ অফিসে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
এ বিশেষ উদ্যোগ কর্মীদের সুস্থতা ও একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে হুয়াওয়ের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।
হুয়াওয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই কর্মশালার লক্ষ্য ছিলো নারী কর্মীদের ইউরিনারি হেলথের ওপর কাউন্সেলিং প্রদান করা। কাউন্সেলিংয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব পায় ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই), যা নারীদের একটি সাধারণ সমস্যা।
ইউনাইটেড হসপিটালের চিকিৎসক সরকার কামরুন জাহান ঝিনুক এ সমস্যার ঝুঁকি, লক্ষণ, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও চিকিৎসার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘ইউরিনারি ট্র্যাক্টের ইনফেকশন জীবনযাপনের কিছু সাধারণ অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রচুর পরিমাণে পানি পান, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, আটসাট পোশাক পরিহারের মাধ্যমে আর্দ্রতা ও ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে ইউটিআই হওয়ার সম্ভাবনা কমানো সম্ভব।’
হুয়াওয়ের এইচআর ডিরেক্টর লিনজিয়াও এ কর্মশালার সূচনা করেন। হুয়াওয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
লিনজিয়াও বলেন, “হুয়াওয়েতে আমরা কর্মদক্ষতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। একজন কর্মী পুরুষ বা নারী যাই হোক না কেন, আমরা তাকে তার দায়িত্বশীলতা ও কর্মদক্ষতার মানদণ্ড দিয়েই বিচার করি। আমরা দেখেছি যে, পুরুষ এবং নারী উভয়ই দক্ষতার সাথে কাজ করতে সক্ষম। হুয়াওয়ের কর্মীদের সুস্থতার দিকেও আমরা মনোযোগ দিয়ে থাকি।
‘তাই আমাদের কর্মীদের জন্য ওপিডি ও আইপিডি বিমার সুবিধা রয়েছে। আমরা কর্মীদের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য সচেতনতাবিষয়ক কর্মশালারও আয়োজন করি। আজকের কর্মশালা নারী কর্মীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।’
হুয়াওয়ের ভাষ্য, প্রতিষ্ঠানটি অন্তর্ভুক্তি ও ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে কর্মক্ষেত্রে বায়ু, পানি ও খাবারের গুণমান পরীক্ষা করার মতো উদ্যোগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করে। এ ছাড়া হুয়াওয়ের পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাবিয়ষক নীতি অনুযায়ী নিয়মিত ফায়ার ড্রিলসেরও আয়োজন করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সম্প্রতি নারীদের ওপর যে জঘন্য হামলার খবর আসছে, তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক। এটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের সম্পূর্ণ বিপরীত।
তিনি বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে নারী-পুরুষ সকলের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা আমাদের সকল শক্তি প্রয়োগ করব।'
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘অদম্য নারী পুরস্কার’ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের ছাত্র-শ্রমিক-জনতা মিলে যে অসাধ্য সাধন করেছে, তার সম্মুখসারির ভূমিকায় ছিল এ দেশের নারীরা। ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রাণঘাতী অস্ত্রের সামনে হিমালয়ের মতো দাঁড়িয়েছিল আমাদের মেয়েরা।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী ও অংশগ্রণকারী ও আহত নারীদের স্মরণ করে তাদের দ্রুত সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন কামনা করেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানে সম্মুখসারিতে থাকলেও আমাদের সমাজে এখনও অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা পিছিয়ে আছে। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে সরকার সবসময় সচেষ্ট। এ জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ চলমান।
‘দুস্থ মায়েদের আর্থিক সহায়তা প্রদান, নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, কর্মজীবী নারীদের থাকার হোস্টেল, ডে কেয়ার সেন্টার সুবিধাসহ নানান ধরনের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকার নিচ্ছে। এ সংক্রান্ত আরও উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা চলছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। অনেক সময় নারীরা নির্যাতনের শিকার হলেও তারা বুঝতে পারেন না কোথায় অভিযোগ জানাবেন। নারীরা যেন তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন, সে জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে।
‘আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য আমরা পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিয়েছি। যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০২৫ প্রণয়নের কাজও আমরা হাতে নিয়েছি। আমরা একটি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন করেছি। তারাও তাদের সুপারিশগুলো দেবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মেয়েরা অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শত বাধা পেরিয়ে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সার্বিকভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখছে।’
আরও পড়ুন:বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মেয়ে ও নারীর ক্ষমতায়ন ও সমর্থন পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের তরুণী ও নারীরা তাদের চারপাশের মানুষদের কাছ থেকে ক্ষমতায়ন ও সমর্থন পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। প্রত্যেক নারীকেও পুরুষের সমান মর্যাদা, নিরাপত্তা ও সুযোগ পাওয়া উচিত।’
তিনি উল্লেখ করেন, তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনজন অসাধারণ ব্যক্তি হলেন তার মা, স্ত্রী ও কন্যা।
তারেক রহমান ফেসবুক পেজে স্ত্রী জোবাইদা রহমান, মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছবিও শেয়ার করেন।
পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আমি সবসময় তাদের জন্য প্রতিটি সুযোগ, সাফল্য এবং সুখ চেয়েছি। আমি নিশ্চিত যে আপনারা যারা এটি পড়ছেন তাদের অনেকেরই একই অনুভূতির সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তারেক রহমান বলেন, ‘আমি আবারও দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের মতো আমাদেরও উচিত একটি ন্যায়পরায়ণ, সহিষ্ণু ও শ্রদ্ধাশীল সমাজ গঠনে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া, যেখানে ধর্ম, লিঙ্গ, বর্ণ, ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করা হবে না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সব মেয়ের ছেলেদের সমান সুযোগ থাকা উচিত এবং তাদের বাড়ির বাইরে পা রাখা উচিত। হয়রানি ছাড়াই ইন্টারনেট ব্যবহার করা উচিত এবং নির্ভয়ে তাদের কণ্ঠস্বর প্রকাশের সুযোগ নেওয়া উচিত।’
তারেক রহমান আরও বলেন, “বিএনপির নীতি প্রণয়নে একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত সমাজে নারীর অব্যবহৃত সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দেয়, যেখানে দলের ‘ফ্যামিলি কার্ড’ কর্মসূচি, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই ঋণ, তরুণীদের শিক্ষার জন্য অ্যাকাডেমিক ও বৃত্তিমূলক প্রকল্পের মতো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
উপসংহারে তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা একসঙ্গে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করি।’
আরও পড়ুন:নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম নির্ধারক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে শুক্রবার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একটি আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম নির্ধারক হচ্ছে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আসুন, আমরা নারীদের প্রতি উগ্রতা, বিদ্বেষ এবং অশ্রদ্ধামূলক সকল আচরণকে না বলি এবং এই লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা সুসংহত করার জন্য আহ্বান জানাই।’
গত ১৫ বছরে হাজার হাজার পুরুষ, নারী গুম, খুন, অত্যাচারিত হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে অমানবিক সংগ্রাম করেছে ওই পরিবারগুলোর নারীরা। জুলাইতেও আন্দোলনের শুরু এই বাংলাদেশের নারীদের হাতেই। শহীদ হয়েছে আমাদের সন্তানরা, ছোট শিশুকন্যাও। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্ট্রান, বৌদ্ধ, সকলেই এই আন্দোলনের শরিক।’
মির্জা ফখরুল আশা করেন, ‘আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়াই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ লক্ষ্য থাকবে। লিঙ্গ, বয়স, পেশা নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিক যেন রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করে, এমন বাংলাদেশই আমাদের কাম্য। বাড়ি থেকে রাস্তায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে, অফিসে, সর্বত্র তাদের আত্মসম্মানকে মূল্যায়ন করা উচিত।’
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আজকের ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে উগ্রবাদের কোনো জায়গা নেই।’
তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (শনিবার) আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীরা আমাদের উন্নয়ন এবং অগ্রগতির অংশীদার। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রাক্কালে আসুন আমাদের অগ্রগতি দ্রুততর করতে পদক্ষেপ নিই।’
আরও পড়ুন:পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নারীর ক্ষমতায়নে সবার আগে পরিবার থেকে নারীকে সাহস দিতে হবে। যেকোনো সংকটে নারীর পাশে ঢাল হয়ে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, পরিবার পাশে না থাকলে রাষ্ট্রের পক্ষে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবার নারীকে সাহস দিলে রাষ্ট্রও নারীর পাশে থেকে সাহস জোগাতে পারে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীর প্রতিবন্ধকতা কখনও শেষ হয় না। সমাজে একটা গোষ্ঠী আছে, যারা নারীকে ক্ষমতায়িত করতে চায় না। দুর্বল নারীকে যত পছন্দ করে, সবলচিত্তের নারীকে তারা পছন্দ করে না। এটাই বাস্তবতা।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে (৮ মার্চ) সামনে রেখে জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন।
এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।
উপদেষ্টা বলেন, ‘একজন নারীকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলা হলে সে দেশের কাজে ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও পরিবারের পাশাপাশি সমাজেরও দায় রয়েছে। নারীর চলার পথ পুরুষের পাশাপাশি নির্বিঘ্ন ও নির্ভরতার হতে হবে।’
তিনি বলেন, “নারী এখন যে অবস্থানে রয়েছে, সে অবস্থানে থেকে নারী বলে বিতর্কিত নয়, কাজে সে বিতর্কিত হোক, অদক্ষ বলে বিতর্কিত হোক, শুধু নারী বলেই ভূল, নারী বলেই অদক্ষ, এ কথাটা বলা যাবে না। আমি বলব ‘স্কাই ইজ দ্য লিমিট।
“তাই তার চিন্তার গন্ডিটাকে তার পারিপার্শ্বিকতার নেতিবাচক মনোভাবে আটকে না রেখে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তাদের পাশে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অভিভাবককে বুঝতে হবে, ছেলে ও মেয়ে দুজনই পরিবারের সম্পদ। পরিবারের উচিত নারীকে ক্ষমতায়িত করা।”
আরও পড়ুন:বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে একটা দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক বলেছেন, দেশের সব ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে কাজ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে শিরীন হক বলেন, ‘আমাদের মূল ধারা হবে সকল ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্যের নিরসন এবং নারী-পুরুষের জেন্ডার বৈষম্য কমাতে কাজ করতে হবে। নারীর উন্নয়ন বিকাশে বাধাগুলো নিয়ে বিষয় চিহ্নিত করা।
‘অন্য সকল সংস্কার কমিশনে নারী অধিকারের প্রাধান্য নিশ্চিত করতে হবে। এটা আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছি। ক্রান্তিকালে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও অগ্রগতির জন্য কাজ করার সর্বোত্তম সুযোগ।’
অনুষ্ঠানে সমাজে যৌন হয়রানি, সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে বন্ধ এবং জলবায়ু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও সবুজায়ন এবং ক্রীড়াঙ্গনে নারী নেতৃত্ব বিকাশে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তিন ক্যাটাগরিতে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের তিনজনকে ‘নাসরীন স্মৃতিপদক ২০২৫’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ বছর পদক গ্রহণ করেন ডনাইপ্রু নেলী, রিনা খাতুন ও আফরোজা খন্দকার।
দিবস উদ্যাপন আয়োজনে নারীদের সাফল্য প্রদর্শন ও পুরস্কার প্রদানসহ ছিল আলোচনা সেশন।
একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবিরের সঞ্চালনায় এ আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা। ওই সময় দেশের সব ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তাদের একজন বলেন, দেশে নারীর ক্ষমতায়নে সামগ্রিক চিত্রের অগ্রগতি হলেও তা উল্লেখযোগ্য নয়। এখনও অনেক পিছিয়ে আছেন নারীরা। ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে বিভিন্ন স্তরের নারীদের সামনে থাকা কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা এবং সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণকে উৎসাহিত করাসহ নারী ও কন্যাশিশুরা যেন সমান সুযোগ পায় এবং উন্নতি করতে পারে, সে লক্ষ্যে সব ক্ষেত্রে পদক্ষেপের গতি বাড়াতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নারীদের উল্লেখযোগ্য নেতৃত্বের কথা স্বীকার করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভীন হক বলেন, ‘নারীদের অগ্রগতিতে পেছনে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা কারা করছে, কেন করছে সেটা বের করা দরকার। জুলাইয়ের আন্দোলনে মেয়েরাই রোকেয়া হল থেকে সবার আগে বের হলো। কিন্তু পরে এত দ্রুত মেয়েরা সরে গেল কেন?
‘জায়গা কেউ ইচ্ছে করে ছেড়ে দেয়নি। চাপ সৃষ্টি করে জায়গা ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নারীদের অন্তর্ভুক্তি আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। মেয়েদের পেছনে রাখার প্রবণতা দেখা গেছে।
‘আমরা দেখেছি আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে নারীরা দারুণ সাহস দেখিয়েছে। এত তাড়াতাড়ি মেয়েদের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে আশা করিনি।’
নারীদের ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে কমিউনিটি উন্নয়নে একশনএইড কীভাবে অবদান রেখে চলেছে তা তুলে ধরেন ফারাহ কবির।
তিনি বলেন, ‘দেশের নারীদের অগ্রগতিতে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে চলেছে একশনএইড বাংলাদেশ। নারী সুরক্ষা, অবৈতনিক কাজের স্বীকৃতি, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে অবস্থান ও নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নসহ সমানাধিকারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছি আমরা। আমরা চাই, নারী ক্ষমতায়ন কার্যক্রমে আরও গতি আসুক।’
ওই সময় নারী উন্নয়নে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত ও বৃদ্ধির আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন:বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বেগম রোকেয়া এ দেশের নারী জাগরণের পথিকৃৎ। নারী সমাজে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে তিনি যে ভূমিকা পালন করেছেন তা বৈপ্লবিক।
বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তার রুহের মাগফিরাত কামনা করি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারী সমাজে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে যে ভূমিকা পালন করেছেন তা বৈপ্লবিক।
‘বেগম রোকেয়ার জীবন ও তার আদর্শ বাস্তবায়ন এদেশের নারী সমাজকে আলোকিত ও আত্মনির্ভরশীল করতে প্রেরণা যোগাবে।’
মন্তব্য