অপরকে চিনতে না পারার আক্ষেপ আমাদের প্রায় সবার। অথচ আমরা নিজেরাই কি নিজেদের পরিপূর্ণভাবে চিনি? গবেষণা বলছে, মন তো অনেক দূরের কথা, মানুষ এখনো নিজের শরীরকেই ঠিকমতো চিনে উঠতে পারেনি। এই অজ্ঞতা তাকে নিয়মিত ঠেলে দেয় নানা জটিলতার দিকে।
ভ্যাজাইনা অবসকিউরা নামের নতুন এক বইয়ে এসেছে অধিকাংশ মানুষ নারীর যোনি নিয়ে কতটা কম জানে। এটা কেবল পুরুষের জন্যই প্রযোজ্য নয়, অনেক নারীও তাদের প্রধানতম প্রজনন অঙ্গ সম্পর্কে অন্ধকারে থাকেন। বইয়ের লেখক র্যাচেল ই. গ্রস বর্ণনা করেছেন কীভাবে চিকিৎসাসংক্রান্ত ভুল তথ্য দীর্ঘদিন ধরে প্রজনন অ্যানাটমি (শরীরতত্ত্ব) সম্পর্কে ভুল-বোঝাবুঝিতে ভূমিকা রাখছে।
গ্রসের বই ও পুরো বিষয়টি নিয়ে আমেরিকান সাময়িকী ফোর্বস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেটি ভাষান্তর করেছেন রুবাইদ ইফতেখার।
২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যে গবেষকরা ২০০০ ব্যক্তিকে নিয়ে যৌনতাবিষয়ক একটি কুইজের আয়োজন করেন। ডেটা সায়েন্টিস্টরা অংশগ্রহণকারীদের একটি শরীরতত্ত্বের চার্ট দেখিয়ে নারীর ক্লিটোরিস (ভগাঙ্কুর), ল্যাবিয়া (যোনির উভয় পাশে ভালভার ভেতরের এবং বাইরের ভাঁজ), ভ্যাজাইনা (যোনি) ইউরেথ্রা (মূত্রনালি) চিহ্নিত করতে বলেন। এরপর কখন ট্যাম্পন (স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিকল্প হিসেবে অনেক নারী মাসিকের সময় ট্যাম্পন ব্যবহার করেন) বদল করতে হয় এবং যোনি পরিষ্কার রাখার উপায় সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের কিছু প্রশ্ন করা হয়।
কুইজে অংশ নেয়া বেশির ভাগ পুরুষ (ও নারীদের একটি বড় অংশ) সঠিক উত্তর দিতে ব্যর্থ হন। গ্রসের কাছে এটা অবাক করা কোনো বিষয় মনে হয়নি। ডেটা সাংবাদিক ভিক্টোরিয়া ওয়াল্ডারসির মতে, ‘নারী ও পুরুষ উভয়ের তিন ভাগের এক ভাগই জানেন না ভগাঙ্কুর কী।’
৫৯ শতাংশ পুরুষ যোনির অবস্থান সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারেননি। ৬১ শতাংশ পুরুষ সঠিকভাবে মূত্রনালি চিহ্নিত করতে পারেননি। ৫২ শতাংশ পুরুষ ল্যাবিয়া খুঁজে পাননি।
ওয়াল্ডারসির হতাশার মূল কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক নারীরও তাদের নিজের শরীর সম্বন্ধে ধারণা নেই।
তিনি বলেন, ‘আমরা নারীদের তাদের নিজস্ব দেহ সম্পর্কে বোঝার বিষয়েও জরিপ করেছি। নারীদের মধ্যে তাদের যৌনাঙ্গ কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে জ্ঞানের একটি উদ্বেগজনক অভাব লক্ষ করা গেছে।’
কুইজে অংশ নেয়া ৪৫ শতাংশ নারী যোনি শনাক্ত করতে পারেননি। ৫৫ শতাংশ জানেন না যে মূত্রনালির অবস্থান কোথায়। ৪৩ শতাংশ ল্যাবিয়া শনাক্ত করতে পারেননি।
যোনি সম্বন্ধে এত অজ্ঞতা কেন?
এই প্রশ্নের উত্তরটি বেশ জটিল। শত শত বছর আগে, শল্যবিদদের শারীরবৃত্তীয় গবেষণার জন্য দেহব্যবচ্ছেদের পরিসর সীমাবদ্ধ ছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৪ শতকে ফ্রান্সে চিকিৎসকরা অধিকাংশ সময় ব্যবচ্ছেদের প্রয়োজনে মৃত্যুদণ্ড বা জেল থেকে আসা মৃতদেহ ব্যবহার করতেন।
তখন নারীদের মৃত্যুদণ্ড বিরল হওয়ায় ইউরোপে প্রাথমিক শারীরবৃত্তীয় গবেষণা পুরুষ দেহ নিয়েই চলেছে। ফলে চিকিৎসকদের পক্ষে পুরুষাঙ্গ শারীরিকভাবে দেখা ও চিত্রিত করা সহজ ছিল। বিপরীতে নারীর পেটের ভেতর ডিম্বাশয়ের মতো অভ্যন্তরীণ প্রজনন কাঠামো তাদের দীর্ঘদিন বিভ্রান্তিতে রেখেছে। চিকিৎসকরা পুরুষ দেহ অধ্যয়নে সিদ্ধহস্ত হওয়ায় তারা দীর্ঘ সময় নারী দেহকে পুরুষের দেহের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
কয়েকজন শল্যবিদের যুক্তি ছিল, গর্ভ ও ডিম্বাশয় একটি উল্টানো লিঙ্গ, যেটা অণ্ডকোষের মতো। তাদের আশঙ্কা ছিল, নারীরা ঘোড়ায় চড়লে বা যুদ্ধের মতো ‘কঠিন’ অথবা ‘পুরুষালি’ কার্যকলাপ করলে অভ্যন্তরীণ এ অঙ্গগুলো শরীর থেকে বেরিয়ে আসতে পারে!
এই ভুল-বোঝাবুঝি দীর্ঘ সময় অব্যাহত ছিল। কোনো নারী তার বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, জ্বর বা অন্য যেকোনো উপসর্গের কথা জানালে চিকিৎসকরা সেটিকে ‘হিস্টিরিয়া’ বলে নির্ণয় করতে থাকেন। হিস্টিরিয়া এসেছে গ্রিক শব্দ হিস্টিরিয়া থেকে, যার অর্থ জরায়ু। কিছু চিকিৎসকের যুক্তি ছিল, নারীর জরায়ু শারীরিকভাবে নড়াচড়া করতে পারে বা শরীরের মধ্যে ভেসে বেড়াতে পারে। এ কারণে তার মানসিক ও শারীরিক অস্বস্তি হয়।
অনেক চিকিৎসক এমনও বিশ্বাস করতেন, একজন নারী খুব বেশি যৌন আকর্ষণ, উত্তেজনা বা দুঃখ অনুভব করলে আবেগগুলো তার শরীরের কোমল অংশকে ধ্বংস করে দিতে পারে। নারীর শরীরতত্ত্ব নিয়ে এসব ভুল ধারণার কারণে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অগণিত নারী ভুল চিকিৎসা ও দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন। হিস্টিরিয়াকে একপর্যায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকাল ম্যানুয়াল অফ মেন্টাল ডিজ-অর্ডার থেকে সরিয়ে ফেলা হয়।
২১ শতকে চিকিৎসা ও গবেষণা উন্নত হয়েছে। এর পরও সীমিত যৌন শিক্ষা ও যৌনতা সম্পর্কে নারীর লজ্জা অনেককে যোনি সম্বন্ধে সঠিক তথ্য শিখতে বাধা দিচ্ছে। নারী ও জেন্ডার বিষয়ক লেখিকা সাংবাদিক শ্যানেল ডুবফস্কি বলেন, “যখন খুব ছোট ছিলাম, তখন থেকে আমার মা আমার যৌনাঙ্গকে ‘তোমার সামনের অংশ’ হিসেবে উল্লেখ করতেন।”
এই অস্পষ্টতা নিজের যোনির স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোলামেলা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে ডুবফস্কিকে বাধা দেয়।
তিনি বলেন, ‘এই পরোক্ষতার কাজ হলো যাকে খুব ভোঁতা বলে মনে করা হয় তা এড়িয়ে যাওয়া, ফল যতই বিপজ্জনক হোক না কেন। যোনি ও ভালভার সঙ্গে জড়িত নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া শৈশব-কৈশোর থেকে বেড়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব।’
শারীরবৃত্তীয় জ্ঞানের এই ব্যাপক ঘাটতির পরিণতি বিপজ্জনক হতে পারে। কেউ শরীরতত্ত্ব ও রজঃসম্বন্ধীয় স্বাস্থ্যের মূল বিষয়গুলো না জানলে যৌনসঙ্গীর সঙ্গে বা একজন চিকিৎসকের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করতে দ্বিধান্বিত হতে পারেন।
শারীরবৃত্তীয় জ্ঞান কীভাবে যৌনতাকে পরিপূর্ণ করতে পারে
শরীর কীভাবে কাজ করে সে সম্বন্ধে ভালো ধারণা থাকলে মানুষ নিজের যৌন চাহিদা ও আনন্দ সম্বন্ধেও শিখতে পারে। দ্য জার্নাল অফ সেক্স অ্যান্ড ম্যারিটাল থেরাপিতে প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৩৭ শতাংশ নারীর অর্গাজমের জন্য ক্লিটোরাল স্টিমুলেশন (ভগাঙ্কুরের উদ্দীপনা) প্রয়োজন। যখন একজন নারী বা তার সঙ্গীকে ভগাঙ্কুর খুঁজে পেতে সংগ্রাম করতে হয় তখন তিনি যৌনতার সময় ধারাবাহিক আনন্দ বঞ্চিত হন।
প্রজনন শরীরবিদ্যা সম্পর্কে জানার অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো, আপনি সঙ্গীর সঙ্গে গর্ভনিরোধ ও যৌনতার আনন্দ বিষয়ে কথা বলতে আরও আত্মবিশ্বাসী বোধ করবেন। সেক্স কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ বাবিনের মতে, ভালো যোগাযোগের ফলে যৌন সম্পর্ক চমকপ্রদ হয়।
বাবিন সংবাদমাধ্যম টুডেকে বলেন, ‘যৌনতার বিষয়ে আলোচনা বা যোগাযোগ নিয়ে নিজের মধ্যে সামান্য উদ্বেগ থাকলেও সেটি বড় প্রভাব ফেলে। এটি সরাসরি কোনো জুটির যৌন সন্তুষ্টিকে প্রভাবিত করতে পারে।
‘যেমন- ভগাঙ্কুরের অবস্থান সঠিকভাবে জানা থাকলে সঙ্গীকে আপনি সেটি উদ্দীপ্ত করার আহ্বান জানানোয় আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন। একই সঙ্গে যৌন উদ্দীপনামূলক অন্য অংশগুলো সম্পর্কে নিজের জানাশোনাও ভাগাভাগি করতে পারবেন।’
শারীরবৃত্তীয় তথ্য আপনার স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধিরও সহায়ক
নিজের যৌনাঙ্গের বিন্যাস সম্বন্ধে যদি পরিষ্কার ধারণা থাকে তখন নিজের স্বাস্থ্যের সঠিক যত্ন নেয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যে হওয়া এক গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে ভিক্টোরিয়া ওয়াল্ডারসি তার সম্ভাব্য স্বাস্থ্য জটিলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এ জটিলতাগুলো তখনই দেখা দিতে পারে, যখন নারীরা নিজেদের যৌনাঙ্গ সম্পর্কে জানেন না।
ওয়াল্ডারসি বলেন, ‘যোনিতে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া থাকে, তবে ভালো ধরনের। পুরো এলাকাটা এরা সুস্থ রাখে। যোনির ভেতর শুধু পানি দিয়ে ধুলেও ব্যাকটেরিয়ার প্রাকৃতিক ভারসাম্য হতে পারে এবং সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। জরিপ করা নারীদের অর্ধেক (৪৬ শতাংশ) জানেন না যে, যোনির ভেতরের অংশ ধোয়া উচিত নয়। এক-তৃতীয়াংশ (৩৩ শতাংশ) মনে করেন এটি প্রতিদিন ধোয়া উচিত।’
যৌনাঙ্গে বা তার আশপাশে জ্বালাপোড়া বা চুলকানির মতো উপসর্গগুলো চিকিৎসকের পক্ষে ব্যাখ্যা করাটা সহজ নয়। ৭৫ শতাংশ নারী তাদের জীবনের কোনো না কোনো সময়ে ইস্ট ইনফেকশনের শিকার হয়েছেন। এ ধরনের ইনফেকশন সাধারণ বিষয়, তবে চিকিৎসা ছাড়া খুব কম সময়েই এ রোগ ভালো হয়। দুর্ভাগ্যবশত, যেসব নারী তাদের যৌনাঙ্গ সম্পর্কে জানেন না তারা উপসর্গগুলো খারাপ পর্যায়ে না যাওয়া পর্যন্ত ইস্ট ইনফেকশন চিহ্নিত করতে পারেন না।
যৌনাঙ্গ সম্পর্কে পরিষ্কার জানা থাকলে নিজের যত্ন সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া সম্ভব। ফলে সক্রিয়ভাবে ইস্ট বা ত্বকের ইনফেকশন, এসটিআই ও টিএসএস (বিষাক্ত শক সিন্ড্রোম) এড়ানো যায়।
ফ্যামিলি রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় অল্পবয়সী নারীদের যোনি সম্বন্ধে জ্ঞানের স্বাস্থ্য সুবিধাগুলো বলা হয়েছে। যোনিপথের পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে ক্লাস নেয়ার পর কিশোরীরা তাদের মাসিকের প্যাড ও প্যান্টি ধারাবাহিকভাবে পরিবর্তন করেছে, অতিরিক্ত পানির ব্যবহার এড়িয়েছে এবং যৌনাঙ্গ স্পর্শ করার আগে হাত ধুয়েছে।
জনন স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সঠিক তথ্য কোথায় পাওয়া যায়
যোনির স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরও জানতে বা নির্ভরযোগ্য তথ্য খোঁজার জন্য আপনাকে সেক্স এড ক্লাসে নাম লেখাতে হবে না।
র্যাচেল ই. গ্রসের ভ্যাজাইনা অবসকিউরা বইটি যোনি সম্পর্কে মানুষের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ভ্রান্ত ধারণা সামনে তুলে ধরে। মা-বাবা ও শিক্ষকরা ‘দ্য ফ্যাক্টস অফ লাইফ’ কেনার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন। এটি জোনাথন মিলার ও ডেভিড পেলহাম রচিত একটি ত্রিমাত্রিক, পপ-আপ বই যা যৌনাঙ্গ ও যৌনাঙ্গের সঠিক চিত্র দেখায়।
আপনি ল্যাবিয়া, ভালভা, যোনি ও ভগাঙ্কুর দেখার জন্য একটি আয়না ব্যবহার করতে পারেন। স্থানীয় স্বাস্থ্য ক্লিনিক ও পরিকল্পিত মাতৃত্ব আপনাকে যোনি ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সহায়ক তথ্য দিতে পারে।
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে হুয়াওয়ে নারী কর্মীদের জন্য একটি স্বাস্থ্য সচেতনতাবিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করেছে।
ঢাকায় হুয়াওয়ের সাউথ এশিয়া রিপ্রেজেনটেটিভ অফিসে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
এ বিশেষ উদ্যোগ কর্মীদের সুস্থতা ও একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে হুয়াওয়ের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।
হুয়াওয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই কর্মশালার লক্ষ্য ছিলো নারী কর্মীদের ইউরিনারি হেলথের ওপর কাউন্সেলিং প্রদান করা। কাউন্সেলিংয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব পায় ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই), যা নারীদের একটি সাধারণ সমস্যা।
ইউনাইটেড হসপিটালের চিকিৎসক সরকার কামরুন জাহান ঝিনুক এ সমস্যার ঝুঁকি, লক্ষণ, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও চিকিৎসার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘ইউরিনারি ট্র্যাক্টের ইনফেকশন জীবনযাপনের কিছু সাধারণ অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রচুর পরিমাণে পানি পান, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, আটসাট পোশাক পরিহারের মাধ্যমে আর্দ্রতা ও ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে ইউটিআই হওয়ার সম্ভাবনা কমানো সম্ভব।’
হুয়াওয়ের এইচআর ডিরেক্টর লিনজিয়াও এ কর্মশালার সূচনা করেন। হুয়াওয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
লিনজিয়াও বলেন, “হুয়াওয়েতে আমরা কর্মদক্ষতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। একজন কর্মী পুরুষ বা নারী যাই হোক না কেন, আমরা তাকে তার দায়িত্বশীলতা ও কর্মদক্ষতার মানদণ্ড দিয়েই বিচার করি। আমরা দেখেছি যে, পুরুষ এবং নারী উভয়ই দক্ষতার সাথে কাজ করতে সক্ষম। হুয়াওয়ের কর্মীদের সুস্থতার দিকেও আমরা মনোযোগ দিয়ে থাকি।
‘তাই আমাদের কর্মীদের জন্য ওপিডি ও আইপিডি বিমার সুবিধা রয়েছে। আমরা কর্মীদের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য সচেতনতাবিষয়ক কর্মশালারও আয়োজন করি। আজকের কর্মশালা নারী কর্মীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।’
হুয়াওয়ের ভাষ্য, প্রতিষ্ঠানটি অন্তর্ভুক্তি ও ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে কর্মক্ষেত্রে বায়ু, পানি ও খাবারের গুণমান পরীক্ষা করার মতো উদ্যোগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করে। এ ছাড়া হুয়াওয়ের পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাবিয়ষক নীতি অনুযায়ী নিয়মিত ফায়ার ড্রিলসেরও আয়োজন করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সম্প্রতি নারীদের ওপর যে জঘন্য হামলার খবর আসছে, তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক। এটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের সম্পূর্ণ বিপরীত।
তিনি বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে নারী-পুরুষ সকলের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা আমাদের সকল শক্তি প্রয়োগ করব।'
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘অদম্য নারী পুরস্কার’ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের ছাত্র-শ্রমিক-জনতা মিলে যে অসাধ্য সাধন করেছে, তার সম্মুখসারির ভূমিকায় ছিল এ দেশের নারীরা। ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রাণঘাতী অস্ত্রের সামনে হিমালয়ের মতো দাঁড়িয়েছিল আমাদের মেয়েরা।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী ও অংশগ্রণকারী ও আহত নারীদের স্মরণ করে তাদের দ্রুত সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন কামনা করেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানে সম্মুখসারিতে থাকলেও আমাদের সমাজে এখনও অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা পিছিয়ে আছে। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে সরকার সবসময় সচেষ্ট। এ জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ চলমান।
‘দুস্থ মায়েদের আর্থিক সহায়তা প্রদান, নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, কর্মজীবী নারীদের থাকার হোস্টেল, ডে কেয়ার সেন্টার সুবিধাসহ নানান ধরনের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকার নিচ্ছে। এ সংক্রান্ত আরও উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা চলছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। অনেক সময় নারীরা নির্যাতনের শিকার হলেও তারা বুঝতে পারেন না কোথায় অভিযোগ জানাবেন। নারীরা যেন তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন, সে জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে।
‘আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য আমরা পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিয়েছি। যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০২৫ প্রণয়নের কাজও আমরা হাতে নিয়েছি। আমরা একটি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন করেছি। তারাও তাদের সুপারিশগুলো দেবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মেয়েরা অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শত বাধা পেরিয়ে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সার্বিকভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখছে।’
আরও পড়ুন:বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মেয়ে ও নারীর ক্ষমতায়ন ও সমর্থন পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের তরুণী ও নারীরা তাদের চারপাশের মানুষদের কাছ থেকে ক্ষমতায়ন ও সমর্থন পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। প্রত্যেক নারীকেও পুরুষের সমান মর্যাদা, নিরাপত্তা ও সুযোগ পাওয়া উচিত।’
তিনি উল্লেখ করেন, তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনজন অসাধারণ ব্যক্তি হলেন তার মা, স্ত্রী ও কন্যা।
তারেক রহমান ফেসবুক পেজে স্ত্রী জোবাইদা রহমান, মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছবিও শেয়ার করেন।
পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আমি সবসময় তাদের জন্য প্রতিটি সুযোগ, সাফল্য এবং সুখ চেয়েছি। আমি নিশ্চিত যে আপনারা যারা এটি পড়ছেন তাদের অনেকেরই একই অনুভূতির সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তারেক রহমান বলেন, ‘আমি আবারও দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের মতো আমাদেরও উচিত একটি ন্যায়পরায়ণ, সহিষ্ণু ও শ্রদ্ধাশীল সমাজ গঠনে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া, যেখানে ধর্ম, লিঙ্গ, বর্ণ, ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করা হবে না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সব মেয়ের ছেলেদের সমান সুযোগ থাকা উচিত এবং তাদের বাড়ির বাইরে পা রাখা উচিত। হয়রানি ছাড়াই ইন্টারনেট ব্যবহার করা উচিত এবং নির্ভয়ে তাদের কণ্ঠস্বর প্রকাশের সুযোগ নেওয়া উচিত।’
তারেক রহমান আরও বলেন, “বিএনপির নীতি প্রণয়নে একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত সমাজে নারীর অব্যবহৃত সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দেয়, যেখানে দলের ‘ফ্যামিলি কার্ড’ কর্মসূচি, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই ঋণ, তরুণীদের শিক্ষার জন্য অ্যাকাডেমিক ও বৃত্তিমূলক প্রকল্পের মতো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
উপসংহারে তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা একসঙ্গে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করি।’
আরও পড়ুন:নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম নির্ধারক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে শুক্রবার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একটি আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম নির্ধারক হচ্ছে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আসুন, আমরা নারীদের প্রতি উগ্রতা, বিদ্বেষ এবং অশ্রদ্ধামূলক সকল আচরণকে না বলি এবং এই লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা সুসংহত করার জন্য আহ্বান জানাই।’
গত ১৫ বছরে হাজার হাজার পুরুষ, নারী গুম, খুন, অত্যাচারিত হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে অমানবিক সংগ্রাম করেছে ওই পরিবারগুলোর নারীরা। জুলাইতেও আন্দোলনের শুরু এই বাংলাদেশের নারীদের হাতেই। শহীদ হয়েছে আমাদের সন্তানরা, ছোট শিশুকন্যাও। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্ট্রান, বৌদ্ধ, সকলেই এই আন্দোলনের শরিক।’
মির্জা ফখরুল আশা করেন, ‘আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়াই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ লক্ষ্য থাকবে। লিঙ্গ, বয়স, পেশা নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিক যেন রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করে, এমন বাংলাদেশই আমাদের কাম্য। বাড়ি থেকে রাস্তায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে, অফিসে, সর্বত্র তাদের আত্মসম্মানকে মূল্যায়ন করা উচিত।’
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আজকের ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে উগ্রবাদের কোনো জায়গা নেই।’
তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (শনিবার) আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীরা আমাদের উন্নয়ন এবং অগ্রগতির অংশীদার। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রাক্কালে আসুন আমাদের অগ্রগতি দ্রুততর করতে পদক্ষেপ নিই।’
আরও পড়ুন:পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নারীর ক্ষমতায়নে সবার আগে পরিবার থেকে নারীকে সাহস দিতে হবে। যেকোনো সংকটে নারীর পাশে ঢাল হয়ে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, পরিবার পাশে না থাকলে রাষ্ট্রের পক্ষে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবার নারীকে সাহস দিলে রাষ্ট্রও নারীর পাশে থেকে সাহস জোগাতে পারে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীর প্রতিবন্ধকতা কখনও শেষ হয় না। সমাজে একটা গোষ্ঠী আছে, যারা নারীকে ক্ষমতায়িত করতে চায় না। দুর্বল নারীকে যত পছন্দ করে, সবলচিত্তের নারীকে তারা পছন্দ করে না। এটাই বাস্তবতা।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে (৮ মার্চ) সামনে রেখে জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন।
এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।
উপদেষ্টা বলেন, ‘একজন নারীকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলা হলে সে দেশের কাজে ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও পরিবারের পাশাপাশি সমাজেরও দায় রয়েছে। নারীর চলার পথ পুরুষের পাশাপাশি নির্বিঘ্ন ও নির্ভরতার হতে হবে।’
তিনি বলেন, “নারী এখন যে অবস্থানে রয়েছে, সে অবস্থানে থেকে নারী বলে বিতর্কিত নয়, কাজে সে বিতর্কিত হোক, অদক্ষ বলে বিতর্কিত হোক, শুধু নারী বলেই ভূল, নারী বলেই অদক্ষ, এ কথাটা বলা যাবে না। আমি বলব ‘স্কাই ইজ দ্য লিমিট।
“তাই তার চিন্তার গন্ডিটাকে তার পারিপার্শ্বিকতার নেতিবাচক মনোভাবে আটকে না রেখে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তাদের পাশে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অভিভাবককে বুঝতে হবে, ছেলে ও মেয়ে দুজনই পরিবারের সম্পদ। পরিবারের উচিত নারীকে ক্ষমতায়িত করা।”
আরও পড়ুন:বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে একটা দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক বলেছেন, দেশের সব ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে কাজ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে শিরীন হক বলেন, ‘আমাদের মূল ধারা হবে সকল ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্যের নিরসন এবং নারী-পুরুষের জেন্ডার বৈষম্য কমাতে কাজ করতে হবে। নারীর উন্নয়ন বিকাশে বাধাগুলো নিয়ে বিষয় চিহ্নিত করা।
‘অন্য সকল সংস্কার কমিশনে নারী অধিকারের প্রাধান্য নিশ্চিত করতে হবে। এটা আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছি। ক্রান্তিকালে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও অগ্রগতির জন্য কাজ করার সর্বোত্তম সুযোগ।’
অনুষ্ঠানে সমাজে যৌন হয়রানি, সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে বন্ধ এবং জলবায়ু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও সবুজায়ন এবং ক্রীড়াঙ্গনে নারী নেতৃত্ব বিকাশে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তিন ক্যাটাগরিতে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের তিনজনকে ‘নাসরীন স্মৃতিপদক ২০২৫’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ বছর পদক গ্রহণ করেন ডনাইপ্রু নেলী, রিনা খাতুন ও আফরোজা খন্দকার।
দিবস উদ্যাপন আয়োজনে নারীদের সাফল্য প্রদর্শন ও পুরস্কার প্রদানসহ ছিল আলোচনা সেশন।
একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবিরের সঞ্চালনায় এ আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা। ওই সময় দেশের সব ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তাদের একজন বলেন, দেশে নারীর ক্ষমতায়নে সামগ্রিক চিত্রের অগ্রগতি হলেও তা উল্লেখযোগ্য নয়। এখনও অনেক পিছিয়ে আছেন নারীরা। ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে বিভিন্ন স্তরের নারীদের সামনে থাকা কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা এবং সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণকে উৎসাহিত করাসহ নারী ও কন্যাশিশুরা যেন সমান সুযোগ পায় এবং উন্নতি করতে পারে, সে লক্ষ্যে সব ক্ষেত্রে পদক্ষেপের গতি বাড়াতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নারীদের উল্লেখযোগ্য নেতৃত্বের কথা স্বীকার করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভীন হক বলেন, ‘নারীদের অগ্রগতিতে পেছনে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা কারা করছে, কেন করছে সেটা বের করা দরকার। জুলাইয়ের আন্দোলনে মেয়েরাই রোকেয়া হল থেকে সবার আগে বের হলো। কিন্তু পরে এত দ্রুত মেয়েরা সরে গেল কেন?
‘জায়গা কেউ ইচ্ছে করে ছেড়ে দেয়নি। চাপ সৃষ্টি করে জায়গা ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নারীদের অন্তর্ভুক্তি আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। মেয়েদের পেছনে রাখার প্রবণতা দেখা গেছে।
‘আমরা দেখেছি আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে নারীরা দারুণ সাহস দেখিয়েছে। এত তাড়াতাড়ি মেয়েদের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে আশা করিনি।’
নারীদের ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে কমিউনিটি উন্নয়নে একশনএইড কীভাবে অবদান রেখে চলেছে তা তুলে ধরেন ফারাহ কবির।
তিনি বলেন, ‘দেশের নারীদের অগ্রগতিতে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে চলেছে একশনএইড বাংলাদেশ। নারী সুরক্ষা, অবৈতনিক কাজের স্বীকৃতি, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে অবস্থান ও নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নসহ সমানাধিকারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছি আমরা। আমরা চাই, নারী ক্ষমতায়ন কার্যক্রমে আরও গতি আসুক।’
ওই সময় নারী উন্নয়নে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত ও বৃদ্ধির আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন:বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বেগম রোকেয়া এ দেশের নারী জাগরণের পথিকৃৎ। নারী সমাজে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে তিনি যে ভূমিকা পালন করেছেন তা বৈপ্লবিক।
বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তার রুহের মাগফিরাত কামনা করি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারী সমাজে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে যে ভূমিকা পালন করেছেন তা বৈপ্লবিক।
‘বেগম রোকেয়ার জীবন ও তার আদর্শ বাস্তবায়ন এদেশের নারী সমাজকে আলোকিত ও আত্মনির্ভরশীল করতে প্রেরণা যোগাবে।’
মন্তব্য