সন্তান জন্মদানের মধ্য দিয়ে মাতৃত্বের জটিল অধ্যায় শুরু হয় নারীর। প্রক্রিয়াটি প্রাকৃতিক হলেও গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদান-পরবর্তী সময়গুলো একজন নারীর সামনে তৈরি করে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে প্রথমবার মা হওয়া নারীর জন্য জটিলতাগুলো বেশি প্রকট।
নতুন মা হওয়া নারীরা তাদের স্বজন, বন্ধু এমনকি অপরিচিতজনের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত পান নানান পরামর্শ ও উপদেশ। এগুলো তাদের আরও ভারাক্রান্ত করে ফেলতে পারে। নিজের মাতৃত্বের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সভিত্তিক সাইট ভাইসে এ বিষয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন ওয়ানা নিনেচিউ। আন্তর্জাতিক মা দিবস উপলক্ষে নিবন্ধটি বাংলায় ভাষান্তর করেছেন নুসরাত জাবীন বিভা।
সন্তান জন্মদান একটি ভীষণ একান্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। আমি আগে এ বিষয়ে প্রচুর পড়েছি, কথা বলেছি। এর পরও সন্তান জন্ম দেয়ার দিনটিতে আচ্ছন্ন করে রাখা উত্তেজনা, ভয় ও পরম মমতাবোধের অনুভূতির জন্য আমি তৈরি ছিলাম না। বিষয়টি চমৎকার, কিন্তু একই সঙ্গে ভীতিকর ও তীব্র একাকিত্বের।
প্রথমবার মা হওয়ার সময় আপনার প্রচুর বন্ধুসুলভ সমর্থন প্রয়োজন। কারণ আপনাকে তখন অনেক কিছু মোকাবিলা করতে হবে। তবে বাস্তবে এমনটি ঘটে না। প্রচুর মানুষ আপনাকে বলবে কী করা উচিত এবং কী উচিত নয়। তাদের অনেকে হয়তো আপনার পরিস্থিতি জানেনও না।
রাস্তার অপরিচিত লোক থেকে শুরু করে আপনার ভালো চান এমন বন্ধু, আত্মীয়, ফেসবুকের প্যারেন্টিং গ্রুপের অপরিচিত সদস্য- সবার কাছ থেকে সন্তানের পরিচর্যা, খেলনা, খাবার চিকিৎসা, অভ্যাস নিয়ে প্রচুর পরামর্শ পাবেন। আমি যখন এমন অতিরিক্ত উপদেশ পাচ্ছিলাম তখন সেগুলোর মানে বুঝতে সমস্যা হচ্ছিল। সঠিক কাজটা করতে আমাকে প্রচুর ধকলও পোহাতে হয়েছে।
আমার ক্ষেত্রে তখন থেরাপি ছিল একমাত্র সমাধান। এটি সন্তান জন্মদান-পরবর্তী সময়ে আমার ও আমার সন্তানের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। আমি বুঝতে শিখেছি পারফেক্ট মা বলে কিছু নেই, বরং সন্তানের জন্য ভালো মা হওয়াটিই বেশি জরুরি। ভালো মা হওয়া মানে হলো সন্তান ও নিজের মধ্যে একটি ছন্দময় জীবন গড়ে তোলা।
মাতৃত্বের এই সময়ে আমি বেশ কিছু বিষয় শিখেছি, যা আমাকে সেই ছন্দ তৈরিতে সাহায্য করেছে।
গর্ভাবস্থা এবং সুন্দরের মানদণ্ড
গর্ভাবস্থা চলার সময় আমি মোটামুটি ভালোই ছিলাম। কোনো বমি বমি ভাব বা ব্যথা ছিল না। আমার সন্তান যখন পেটে লাথি দেয়া শুরু করল তখন শারীরিকভাবে বুঝতে পারি আমি গর্ভবতী। পুরোটা সময় খুব সক্রিয় ছিলাম। খেলাধুলা করেছি, প্রচুর হেঁটেছি, প্রায় সবকিছু খেয়েছি এবং কখনও কখনও এক গ্লাস রেড ওয়াইনও খেয়েছি। একটি জিনিসই আমি বাদ দিয়েছিলাম, সেটি হলো সিগারেট। আমি খুব ভাগ্যবান ছিলাম, কারণ আমার অতিরিক্ত ওজন বাড়েনি। যদিও মানুষ আমাকে প্রথম প্রশ্নই করত, ওজন কত বেড়েছে?
আমার ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষের মন্তব্য ছিল তুষ্টিমূলক। মানুষ বলেছে আমাকে কতটা সুন্দর দেখাচ্ছে, আর এই কথা শুনে আমার মুখ আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠত। তবে দয়া করে আপনারা একজন গর্ভবতী নারীর শারীরিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে মন্তব্য করবেন না।
স্বাভাবিকভাবে জন্মদান বনাম সিজার
গর্ভে আমার সন্তানের অবস্থান বদলে যাওয়ায় প্রাকৃতিকভাবে প্রসব সম্ভব ছিল না। তাই সিজার করতে হয়েছিল। এটি আমার কাছে ছিল একটি ধাক্কা। আমি স্বাভাবিকভাবে প্রসবের জন্য সংকল্পবদ্ধ ছিলাম। সবাই আমাকে বলত এটি একটি চমৎকার সিদ্ধান্ত, অনেক সহজ এবং সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো। তাই যখন শুনলাম এটি সম্ভব নয় তখন ভেঙে পড়েছিলাম। আমি কেঁদেছি এবং প্রচুর দুশ্চিন্তা করেছি। তবে আসলে এটি কোনো বিষয়ই ছিল না। অপারেশন ঠিকঠাক হয়েছিল, আমি দ্রুত সেরে উঠেছিলাম এবং সন্তান সুস্থ ছিল।
কে কীভাবে সন্তানের জন্ম দেবে, সেটি আপনার বলার কথা নয়। ‘প্রাকৃতিকভাবে জন্মদানের আশ্চর্য’ অভিজ্ঞতা না পেলে খারাপ কিছু ঘটবে না। বিষয়টি নিয়ে আমারও একদম কোনো অনুশোচনা ছিল না।
স্তন্যদান
আমার কাছে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো জাদুর মতো ছিল। ছোট্ট মেয়েটার ওজন বাড়ছিল না, কারণ সে আমার স্তন চুষতে পারত না। তাই ডাক্তার আমাকে কৌটার দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেন।
আমি সবভাবে অনেক চেষ্টা করেছি, তবে ওর বয়স যখন পাঁচ মাস তখন একেবারে চোষা বন্ধ করে দেয়। আমার শরীরে দুধ তৈরিও বন্ধ হয়ে যায়। আমি আমার ডাক্তারকে এর জন্য দোষ দিই, আমার কম বয়সকে দোষ দিই। মাথায় গেঁথে যাওয়া তথাকথিত ব্যর্থতাকে ব্যাখ্যা করার সব রকম চেষ্টা করেছি। তবে বিষয়টির সমাপ্তি ঘটায় গোপনে খুশিও হয়েছিলাম।
ওই সময়টা আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। নিজেকে ভীষণ অসম্পূর্ণ মনে হতো। তবে ছয় মাস বয়সে যখন বাচ্চাকে নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবার খাওয়ানোর কথা, তখন ওকে যা খেতে দিয়েছি তাই খেয়েছে। সে কখনোই বুকের দুধের ওপর নির্ভরশীল ছিল না।
আমি একা নই। আমার অনেক বন্ধু এবং পরিচিতজনও একই সমস্যার মধ্য দিয়ে গেছেন। তাদের সবসময় বলা হয়েছে, ‘স্তন্যদান বিশেষজ্ঞকে ডাকো’, ‘হাল ছেড়ে দিয়ো না’, ‘দুধ ফ্রিজে রেখে দাও’ এবং ‘আরও অত্যাধুনিক ব্রেস্ট পাম্প কেনো।’
যেসব মা তাদের সন্তানদের অন্তত ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ান না, মানুষ তাদের ধিক্কার জানান এবং গুঁড়া দুধ সম্পর্কে ভীতির জন্ম দেন। এসব মানুষের উদ্দেশে আমার একটাই কথা, আপনারা নিজের চরকায় তেল দিন।
বুকের দুধ খাওয়ানো বাধ্যতামূলক নয়। এটি সেসব মায়েদের জন্য যারা বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন এবং খাওয়াতে চান। আমরা জানি বিষয়টি স্বাস্থ্যকর। আমরা এটাও জানি, গবেষণায় দেখা গেছে, এতে শিশুরা কিছু বাড়তি সুবিধা পায়। তবে অনেক সময় এটি সম্ভব হয় না এবং কৌটার দুধ খাওয়াতে সমস্যা নেই।
শিশুর খাবার
সবজির ভেতরে আমি আমার বাচ্চাকে প্রথমে গাজর খেতে দিয়েছিলাম। সে আধ চামচ খেয়ে ফেলেছিল। তবে ঘটনাটি বলার পর সবার যেন প্রশ্নের শেষ ছিল না। ‘গাজরগুলো কোথায় থেকে কিনেছিলে?’, ‘এগুলো কি অর্গানিক ছিল?’, ‘তুমি কি এগুলো গ্রামের দিক থেকে এনেছিলে?’
কেউ কেউ যেকোনো খাবার নিয়েই খোঁচার ভঙ্গিতে এসব বলেছেন। সত্যি বলতে, আমার দামি অর্গানিক দোকানে দোকানে যাওয়ার মতো সময় ছিল না। আর আমি বেশিদিন এগুলো কিনতেও পারতাম না। এই আলোচনাগুলো খুবই অর্থহীন এবং এগুলো কোনো কাজে আসে না।
আমার এক বন্ধু একবার ফেসবুকে পোস্ট করেছিল, ‘যদি একজন দরিদ্র গর্ভবতী নারী কলের পানি খায় এবং তার কোনো ক্ষতি না হয় তাহলে আমি বোতলের পানি কেন কিনব?’ কেউ যখন বিরক্তিকরভাবে অযাচিত বড়লোকি উপদেশ দিত তখন আমি এটি নিয়ে ভাবতাম। এটি আমাকে বাস্তবে টিকে থাকতে সাহায্য করত।
শিশুর পোশাক
আপনি নতুন মা হিসেবে অনলাইনে ঢোকামাত্র বাচ্চাদের হালকা বাদামি, সাদা ও প্যাস্টেল রঙের পোশাক পরা হাজারও ছবি দেখবেন। কিন্তু আপনি তিন মাসের একটি বাচ্চার জন্য উলের দামি টাইটস কেন কিনবেন, যা কি না আর তিন মাস পরই ছোট হয়ে যাবে? তার ওপর হালকা বাদামি! এটি তো এক মিনিটেই নোংরা হয়ে যাবে।
আরেকটি কথা, কিছু মানুষ আছে যাদের জীবনের সম্ভবত একমাত্র লক্ষ্য আপনি আপনার বাচ্চাকে কী পরাচ্ছেন তা দেখভাল করা। ‘মাথায় একটি টুপি পরাও,’ ‘এখন শীতকাল, মুখ আর গলা অবশ্যই ঢাকতে হবে,’ ‘মেয়ে বাবু? গোলাপি রঙের জামা পরাওনি কেন?’
দয়া করে এ ধরনের অযাচিত উপদেশ থামান।
শিশুর ঘুম
আমার বাচ্চার বয়স এখন ছয় বছর। সে সবসময় মোটামুটি একাই ঘুমায়, আঙুল চোষে না। পার্কের বেঞ্চে অথবা তার স্কুলে সহজেই দুই ঘণ্টা ঘুমিয়ে নিতে পারে। অথচ ওর বেড়ে ওঠার সময় দোল দিয়ে ঘুম পাড়ানো থেকে শুরু করে, চুষনি দেয়া অথবা বিছানায় ঘুম পাড়িয়ে একা রাখলে ভয় পাবে এবং সারা জীবনের মতো ঘুমের স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যাবে- এমন নানান বিষয় আমাকে বিশ্বাস করানো হয়েছিল।
ঠিক আছে, যখন আমরা শিশু ছিলাম তখন এই সাধারণ অভ্যাসগুলো আমাদের করানো হয়েছে। তবে ঘুম বিষয়টি জটিল। দুটি বাচ্চা যেমন এক নয়, তেমন অভ্যাসও নয়। আমাদের খুঁজে বের করতে হবে কোন অভ্যাসটি বাচ্চার জন্য উপযোগী। কীভাবে ঘুম পাড়ানো হচ্ছে সেটি নয়, বরং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাচ্চার যতটা প্রয়োজন ততটা ঘুমাতে দেয়া।
শুরুতে আমার বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানো কঠিন ছিল। মাঝে মাঝে আমাকে রাত ৩টার সময় মেয়েকে প্র্যামে শুইয়ে ঘুম পাড়ানোর জন্য নিয়ে বের হতে হতো। শিশুর ঘুমের ধরন একজন মায়ের জীবনে প্রচুর সমস্যা তৈরি করতে পারে, তাই এ বিষয়ে নাক গলাতে আসবেন না। নতুন বাবা-মা হিসেবে আপনি নানা রকম চেষ্টা করুন। যদি বিষয়গুলো কঠিন হয়ে ওঠে তাহলে মনে রাখতে হবে আপনার পেশাদার কারও কাছে যেতে হতে পারে।
অযাচিত উপদেশ বন্ধের বিষয়টি আমাকেও শিখতে হয়েছে
সম্প্রতি এক বন্ধুর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। মাত্র সন্তান প্রসব করায় সে তখনও হাসপাতালে। আমি তাকে বলছিলাম বাচ্চাকে নার্সদের কাছে দিয়ে পেইনকিলার খেতে। তাহলে সে অন্তত দুই ঘণ্টা ঘুমাতে পারবে। তাকে এমন বলার কারণ হলো, আমি ভেবেছিলাম হাসপাতাল ছাড়ার পর সে ঘুমানোর সুযোগ পাবে না। আমি এটা বলেছিলাম কারণ ওই পরিস্থিতিতে আমিও এটা করতাম বলে মনে হয়েছিল।
তারপর আমার মনে হলো হয়তো সে বাচ্চাকে পাশে শুইয়ে তার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে চায়, যেমনটা আমি করেছিলাম। হয়তো আমি যা বলেছি তা নির্বোধের মতো ছিল। সম্ভবত সে আমার উপদেশে খুশি হয়নি। আমার এই নতুন উপলব্ধিটি তৈরি হয়েছে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে।
মানুষের নিজের সিদ্ধান্ত নিজের নেয়ার স্বাধীনতা আছে। সেগুলো সবচেয়ে ভালো যদি নাও হয় বা অন্যদের থেকে আলাদা কিছুও যদি হয়, তাহলেও এই ব্যক্তির স্বাধীনতা বজায় থাকা উচিত। আমরা মায়েদের এত বেশি চাপ দেই যে, মাঝে মাঝে এই সত্যটি আমরা ভুলে যাই।
চলতি বছরের ‘ওয়ার্ল্ড ইনফ্লুয়েন্সার্স অ্যান্ড ব্লগার্স অ্যাওয়ার্ডস’ নামের আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছে ইউক্রেনের আলোচিত সেই বিড়াল স্টেপান। ইউক্রেনের পশু-পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিতে তহবিল সংগ্রহের জন্য এই খেতাব জিতে নেয় খারকিভের বিড়ালটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে স্টেপানের পুরস্কার জেতার ভিডিও।
গত এপ্রিলে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল ইউক্রেনের খারকিভ শহরের তারকা বিড়াল স্টেপান। ব্লগারদের জন্য বিশ্বে প্রথমবারের মতো ফ্রান্সের কান শহরে এই আয়োজন করা হয়।
শহরের পাঁচ তারকা হোটেল মার্টিনেজে অনাড়ম্বর আয়োজনে উপস্থিত ছিল বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সংস্থা ও প্রভাবক (ইনফ্লুয়েন্সার)। আয়োজনের গড় প্রবেশ মূল্য ছিল এক হাজার ইউরো (প্রায় ৯ লাখ ২৭ হাজার টাকা)!
উপস্থিত ছিলেন টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে ২০ কোটিরও বেশি ফলোয়ারের খাবি লেমও। যেসব ভিডিও দিয়ে তিনি এত জনপ্রিয় হয়েছেন, সেসব ভিডিওতে কোনো কথা বলেন না খাবি।
তিনি বলেন, ‘ধন্যবাদ সবাইকে! আমি অনেক খুশী, অনেক খুশী!’
ইউক্রেন যুদ্ধ পুরোদমে শুরু হলে, দুই সপ্তাহের জন্য নেট দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল ১৩ বছরের স্টেপান। সে সময়ে অনেকেই নানা আশঙ্কা করেছিল। পরে অবশ্য তার মালিক ভক্তদের আশ্বস্ত করেন। জানান, খারকিভে ক্রমাগত চলা গোলা হামলার কারণে ইন্টারনেট থেকে দূরে ছিল সে। পরে সুযোগ বুঝে এক সময়ে স্টেপানকে নিয়ে ফ্রান্সে চলে যান তার মালিক আন্না।
‘লাভইউস্টেপান’ নামের ইন্সটাগ্রাম পেজ চালান স্টেপান। ইনস্টাগ্রামে তার ফলোয়ার ১১ লাখের কাছাকাছি। অ্যাকাউন্টটি অবশ্য চালান স্টেপানের মালিক আন্না।
ইয়াহু নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্টেপানকে এক মাস বয়সে রাস্তা থেকে উদ্ধার করেছিলেন আন্না। ২০১৯ সালে খ্যাতি অর্জন করেছিল, যখন টিকটকে তার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। স্টেভি ওয়ান্ডারের ‘আই জাস্ট কলড টু সে আই লাভ ইউ’ গানটিতে এক গ্লাস ওয়াইন নিয়ে নানা কারসাজি করেছিল স্টেপান, যা ২৭ মিলিয়নের বেশিবার দেখা হয়েছিল।
স্টেপানের মালিক আন্না জানিয়েছেন, ইনস্টাগ্রাম থেকে আয় অর্থ ইউক্রেনের পশু-পাখির সহায়তায় ব্যবহার করা হয়। এরই মধ্যে ১০ হাজার ডলার এ কাজে ব্যয় করেছে তারা।
আরও পড়ুন:দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসানের হাতে আবারও উঠল পুরস্কার। কলকাতার আনন্দলোক পুরস্কার-২০২২ এ সেরা কেন্দ্রীয় চরিত্রের অভিনেত্রীর খেতাব পেয়েছেন তিনি।
অতনু ঘোষ পরিচালিত বিনিসুতোয় সিনেমায় অভিনয়ের জন্য এ স্বীকৃতি পেলেন জয়া আহসান। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জয়া।
ফেসবুকে প্রতিক্রিয়ায় তিনি লেখেন, ‘বিনিসুতোয় সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর আনন্দলোক পুরস্কার হাতে এল। দীর্ঘ ১০ বছর পর আবার টলিপাড়ার আনন্দ লোকে পুরস্কারের পসরা সাজালো আনন্দলোক। এই পুরস্কার অনেক দিক থেকে ভীষণ স্পেশাল আমার কাছে। অতনু ঘোষের সিনেমা বিনিসুতোয় আসলে স্বপ্ন দেখতে শেখায়, ইচ্ছে মতোন বাঁচার সমীকরণ জানিয়ে যায় অচিরেই।
শ্রাবণীর পরতে পরতে স্বপ্নের সেই বুনন। ধন্যবাদ বড় ছোট কথা অতনু দা, এমনি করেই বার বার আলো করে রেখো আমাদের। আর আনন্দলোক, আপনাদের কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞতা যে শ্রাবণীর ইচ্ছে মতো বাঁচার কাহিনী ঘিরেই আমায় সেরা অভিনেত্রী নির্বাচন করলেন আপনারা। সামনের যাত্রাপথ স্বপ্নময় হোক। সঙ্গে থেকে যাক মায়ার বাঁধন বিনিসুতোয়…’
পশ্চিমবঙ্গের আইটিসি রয়্যাল বেঙ্গল মিলনায়তনে বুধবার এ আয়োজন শুরু হয়। চলচ্চিত্র, টেলি সিরিয়াল, ওয়েব সিরিজের বিভিন্ন শাখায় দেয়া হয় এ পুরস্কার।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের মৃত্যুতে বাংলাদেশে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
শনিবার এই শোক পালন করা হবে বলে শুক্রবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ‘শনিবার বাংলাদেশের সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোয় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।’
প্রেসিডেন্ট শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে একই দিন বাংলাদেশের সব মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এ ছাড়া তার আত্মার শান্তি কামনায় অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট এবং আবুধাবির শাসক শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ৭৩ বছর বয়সে শুক্রবার মারা গেছেন।
দেশটির প্রেসিডেন্টবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মৃত্যুতে দেশজুড়ে ৪০ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে জাতীয় পতাকা রাখা হবে অর্ধনমিত। মন্ত্রণালয়সহ সব ধরনের অফিস বন্ধ থাকবে তিন দিন।
জায়েদ আল নাহিয়ান সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট। তিনি ২০০৪ সালের ৩ নভেম্বর থেকে প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি আবুধাবির শাসকের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
আমিরাতের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন:ডিভাইস-নির্ভর হয়ে ঢাকা শহরে ফ্ল্যাটে বসবাসরত শিশুরা দিনে দিনে ‘ফার্মের মুরগি’ হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য তাদের মাঠে খেলার সুযোগ করে দিতে মা-বাবা, অভিভাবকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
প্রতিটি এলাকায় খেলার মাঠ থাকা ‘একান্তভাবে প্রয়োজন’ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যেখানে খালি জায়গা পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেই মাঠ করে দেয়া হচ্ছে।
ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বুধবার সকালে ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ক্রীড়া ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ৮৫ সংগঠক ও ক্রীড়াবিদের মাঝে ক্রীড়া পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবচেয়ে দুর্ভাগ্য হলো, ঢাকা শহরে খেলাধুলার জায়গা সবচেয়ে কম। ইতোমধ্যে আমরা কিছুটা উদ্যোগ নিয়েছি, প্রতিটি এলাকায় যেন খেলার মাঠ থাকে। আমাদের শিশুরা এখন তো সবাই ফ্ল্যাটে বাস করে, ফ্ল্যাটে বাস করে করে ফার্মের মুরগির মতো হয়ে যাচ্ছে।
‘এখন তো মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, আইপ্যাড এগুলো ব্যবহার করে সারাক্ষণ ওর মধ্যে পড়ে থাকা, এটা আসলে মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে সুস্থতার লক্ষণ নয়। সে জন্যই বাবা-মা, যারা গার্ডিয়ান, অভিভাবক, তাদের আমি অনুরোধ করব কিছু সময়ের জন্য হলেও ছেলেমেয়েরা যাতে হাত-পা ছোঁড়ে খেলতে পারে, সেটা আপনাদের উদ্যোগ নেয়া উচিত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেক এলাকায় খেলার মাঠ থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন। ইতোমধ্যে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, যেখানে খালি জায়গা পাচ্ছি, খেলার মাঠ করে দিচ্ছি।’
প্রতিটি উপজেলায় খেলার মাঠ
দেশের প্রতিটি উপজেলায় ছোটো পরিসরে খেলার মাঠ নির্মাণে সরকারের নেয়া উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু নির্মাণকাজে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে বলে সতর্ক করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সারা দেশে প্রতিটি উপজেলায় খেলার মাঠ, সেই খেলার মাঠগুলো খুব বড় স্টেডিয়াম না, ছোটো করে, মিনি স্টেডিয়াম আমি নাম দিয়েছি। কাজেই সেটার নির্মাণকাজ চলছে। এটা সময় নিচ্ছে। আমি মনে করি, এটা আরও দ্রুত শেষ করা দরকার। এ পর্যন্ত ১৮৬টি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছে।’
আরও ১৭১টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তবে আমি মনে করি, এ ব্যাপারে যথেষ্ট সময় নেয়া হচ্ছে, যাতে আর সময় নেয়া না হয়, সেটা দেখতে হবে।’
প্রতি জেলায় জেলায় স্টেডিয়ামগুলোকে শুধু ক্রিকেটের জন্য নির্দিষ্ট না করে, সব খেলার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এই স্টেডিয়ামগুলো সব খেলার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। ক্রিকেটের জন্য পিচ তৈরি থাকবে, সেটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
‘স্টেডিয়ামগুলো যদি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, শুধু ক্রিকেট নয় সব ধরনের খেলাধুলা, স্পোর্টস সেখানে চলবে, নইলে ওটা পড়ে থাকে, নইলে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। সেটা যাতে না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে খেলাধুলার দিকে আমাদের ছেলেমেয়েরা আরও বেশি আগ্রহী হবে।’
খেলাধুলাকে এক ধরনের শরীরচর্চা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এতে শারীরিক, মানসিকভাবেও আমাদের ছেলেমেয়েরা যথেষ্ট উন্নত হবে।’
মাঠে নামতে হবে জয়ের মানসিকতা নিয়ে
প্রতিটি খেলায় জয়ের মানসিকতা নিয়ে ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে মাঠে নামতে খেলোয়াড়দের প্রতি পরামর্শ রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ক্রীড়াঙ্গনে আমাদের প্রতিটি খেলোয়াড়, সংগঠক, যারা আনুষঙ্গিক থাকেন, প্রত্যেকেই যদি মনে মনে সব সময় এই চিন্তাটা করেন যে আমরা যুদ্ধে বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা কখনো পরাজিত হব না, পরাজয় মেনে নেব না।
‘আমাদের জয়ী হতেই হবে। এই আত্মবিশ্বাসটা নিয়ে যদি মাঠে থাকা যায় যেকোনো খেলায়, যেকোনো ইসে আমরা জয়ী হতে পারি। কাজেই আমাদের মাঝে সেই আত্মবিশ্বাসটা সব সময় থাকতে হবে। সেটাই আমার আহ্বান।’
২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্রীড়া ক্ষেত্রে সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ও ক্রীড়াবিদদের সাফল্যের কথা উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে।
ক্রীড়া খাতে দেশের নারীরাও পিছিয়ে নেই বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্পোর্টস মিনিস্টারকে বলতে পারি, ফুটবল-ক্রিকেট সব ক্ষেত্রে নারীরা, কিন্তু অনেক পারদর্শিতা দেখাচ্ছে। তাদের একটু বেশি করে সুযোগ দিতে হবে এবং আরো উৎসাহিত করতে হবে।’
বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য আলাদা মাঠ
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, তাদের প্রশিক্ষণের জন্য সংসদ ভবনের পাশে যে মাঠ, সেটা আমরা নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করেছি। বিশেষ চাহিদাসম্পন্নরা সেখানে খেলাধুলা করবে। সেখানে তাদের জন্য একটা অ্যাকাডেমি আমরা তৈরি করে দিচ্ছি।’
তাদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতেও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কারণ তারাই সব থেকে বেশি সম্মান আমাদের জন্য নিয়ে এসেছে। তারা তাদের যথেষ্ট পারদর্শিতা দেখাতে সক্ষম হয়েছে।’
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ২১৬টি স্বর্ণ, ১০৯টি রৌপ্য ও ৮৪টি ব্রোঞ্জ পদক দেশের জন্য জিতেছেন বলে জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা।
প্রধানমন্ত্রীর মতে, ‘তারা কিন্তু তাদের পারদর্শিতা আরও বেশি দেখাচ্ছে। আমাদের যারা সুস্থ, তারা যা পারছেন না, এরা কিন্তু আরও বেশি পারে। এটাই আমার ধারণা, আমি দেখতে পাচ্ছি।’
রক্ষা করতে হবে গ্রামীণ খেলা
দেশীয় ও গ্রামীণ জনপদের খেলাগুলোকে সংরক্ষণে পদক্ষেপ নিতেও তাগিদ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামে অনেক খেলা আছে। গ্রামীণ খেলাগুলো কিছুটা চালু করা হয়েছে। সেগুলো সচল করতে হবে। যেগুলো খুব বেশি খরচ লাগে না, তারা নিজেরা খেলবে।
‘স্কুল প্রতিযোগিতা, আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতা, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতা- এই প্রতিযোগিতাগুলো যাতে ব্যাপকভাবে চলে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে যথেষ্ট সহযোগিতা করে যাচ্ছি। যা যা প্রয়োজন সব করে দিচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশীয় খেলাগুলো ডাংগুলি থেকে শুরু করে সাত ছাড়া থেকে শুরু করে হাডুডু- সব খেলাই তো আমাদের দেশে ছিল। স্কুলে স্কুলে খেলা হতো। সেই খেলাগুলো এবং আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা এগুলো করতে হবে।’
আহত ও অসচ্ছ্বল ক্রীড়াবিদের পাশে সরকার
বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী আইন ২০১৫ প্রণয়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের যারা অসচ্ছল বা কেউ খেলতে গিয়ে আহত হন বা অসুস্থ হন তাদের যেভাবেই হোক আমরা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি এবং যতক্ষণ আমি আছি সেটা দিয়ে যাব। কিন্তু একটা প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতার ব্যবস্থায় ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমরা করতে চাই।’
আরও পড়ুন:ছোট্ট একটি শব্দ মা, অথচ কী বিশাল তার দায়িত্ব। মমতা, আশ্রয়, নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা ও নির্ভরতা সবই রয়েছে এই একটি শব্দের মাঝে। এই মা-ই কঠোর পরিশ্রম এবং নিজের স্বপ্নের মাঝেই সুশিক্ষা দিয়ে সন্তানকে গড়ে তোলেন। এতে সন্তানরা দেশে-বিদেশে হয় আলোকিত। আন্তর্জাতিক মা দিবস উপলক্ষে এ বছর এমন ৩৮ সফল মাকে ‘রত্নগর্ভা মা’ অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়েছে।
রোববার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে রত্নগর্ভা মা-২০২১-এর পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আজাদ প্রোডাক্টস প্রাইভেট লিমিটেড এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘এই দিনে সব মায়ের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। মায়ের কথা মনে করলেই চোখে পানি চলে আসে, কেন আসে আমি তা জানি না। এখানে আপনাদের মা আছে, আমার মা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘নারীদের অগ্রযাত্রায় কাজ করে যাচ্ছেন আরেক মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগে স্কুল-কলেজে ছেলেরা প্রথম হতো, এখন মেয়েরা হচ্ছে। মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।’
৩৮ জনের মধ্যে ১৩ জনকে বিশেষ ও ২৫ জনকে সাধারণ ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
বিশেষ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাওয়া রত্নগর্ভা ১৩ মা হলেন হামিদা বেগম, মাহমুদা বেগম, জাহানারা বেগম, সফুরা খাতুন, মাহমুদা খাতুন, মাইমুনা আক্তার খাতুন, মাজেদা বেগম, আশা বড়ুয়া, খালেদা খানম, মাফিয়া বেগম, জাহানারা হোসেন, নাজিমা বেগম ও জান্নাতুল ফেরদৌসী।
সাধারণ ক্যাটাগরিতে এবার পুরস্কার পেয়েছেন ২৫ মা। তারা হলেন আমেনা বেগম, লতিফা খানম, পুনুয়ারা বেগম, মর্জিনা সাখাওয়াত, সামসুন নাহার, আয়েশা খাতুন, রোকশানা আহম্মেদ, নাফিসা বেগম, ফারমিদা সাত্তার, সেলিমা খাতুন, রেহানা শফিক, অ্যাডভোকেট হাজেরা পারভীন, সুরাইয়া খানম, মাফিয়া আখতার, খোশনূর, পারুল বেগম, নাজমা আনিস, ফরিদা ইয়াসমিন, রওশনয়ারা বেগম, ওয়াজিফা খাতুন, সিদ্দিকা বেগম, শাতিল আবেদা, ফয়জুন্নেছা বেগম, মমতাজ খানম ও মমতাজ বেগম। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী মুস্তফা মনোয়ারকে মাই ড্যাড ওয়ান্ডারফুল সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে অনুভূতি ব্যক্ত করেন রত্নগর্ভা মা সামসুন নাহারের মেয়ে নাঈনা তাবাসসুম, সফুরা খাতুনের মেয়ে উম্মে মুসলিমা, মাইমুনা আক্তার খাতুনের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার মো. এনায়েতুর রহমান, রওশন আরা বেগমের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান, ২০১৮ সালে রত্নগর্ভা পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. পারভীন হাকিম আনোয়ারসহ অনেকে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশেষ অতিথি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান, চিত্রশিল্পী মুস্তফা মনোয়ার, ঢাকা ক্লাবের সভাপতি খন্দকার মশিউজ্জামান ও আজাদ প্রোডাক্টস প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ।
আরও পড়ুন:নিজেদের দেশের বা নিজের কারখানার সমস্যা নিয়ে বিদেশিদের কাছে নালিশ দেয়ার প্রবণতায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ কারও কাছে হাত পেতে নয় বরং আত্মমর্যাদা নিয়ে চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান করতে পারি।’
শ্রমিকনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘বিদেশিদের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি না করে আপনাদের যদি সমস্যা থাকে আমার কাছে আসবেন। আমি শুনব। মালিকদের দিয়ে যদি কিছু আদায় করতে হয়, তা আমি আদায় করে দেব। আমি পারব, এ কথা আমি বলতে পারি।’
শ্রমিক কল্যাণে গঠিত শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে অনেক মালিক নিয়মিত অর্থ জমা না দেয়াকেও ‘দুঃখজনক’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রোববার সকালে ‘মহান মে দিবস ২০২২’ উদযাপনে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন সরকারপ্রধান। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যে শ্রমিকদের জন্য এত কাজ করেছি, তারপরেও আমরা দেখি যে আমাদের দেশে কিছু কিছু শ্রমিকনেতা আছেন, তারা কোনো বিদেশি বা সাদা চামড়া দেখলেই তাদের কাছে নালিশ করতে খুব পছন্দ করেন। আমি জানি না এই মানসিক দৈন্যতাটা কেন?
‘এর সঙ্গে কি অন্য কোনো স্বার্থ জড়িত আছে? কোনো দেনাপাওনার ব্যবস্থা আছে? সেটা আমি জানি না।’
নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধানের সুযোগ আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে কোনো সমস্যা হলে অন্তত আওয়ামী লীগ সরকার যতক্ষণ ক্ষমতায় আছে, অন্তত আমি যতক্ষণ ক্ষমতায় আছি, এই নিশ্চয়তা দিতে পারি যেকোনো সমস্যা আমরা সমাধান করতে পারি নিজেরা।
‘আর এটা আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দেশে মালিক এবং শ্রমিক তারা নিজেরা বসে আলোচনা করে সমস্যাগুলো সমাধান করবেন। আমরা নিজের দেশের বিরুদ্ধে বা নিজের দেশের সম্পর্কে অন্যের কাছে কেন কাঁদতে যাব, বলতে যাব। আমরা তো এটা চাই না।’
বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্প, যে সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্প একসময় সম্পূর্ণ বিদেশি অনুদানে বা বিদেশি সহযোগিতায় নির্ভরশীল ছিল আজকে আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৯০ ভাগ আমরা নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে পদ্মা সেতু। নিজেদের অর্থায়নে সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের টাকায় এই পদ্মা সেতু আমরা নির্মাণ করেছি।’
কল্যাণ ফাউন্ডেশনে অর্থ জমা না দেয়া দুঃখজনক
শ্রমিকের কল্যাণে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে আমি বলব, মালিকদের যেটা এখানে নির্দিষ্ট রয়েছে যে, একটা পার্সেন্টেজ তারা এখানে জমা দেবেন। এটা অনেকে দেন না, এটা খুব দুঃখজনক।
‘আমি মনে করি এটা যথাযথভাবে দেয়া উচিত। কারণ একজন যখন কেউ বিপদে পড়ে, তার পাশে দাঁড়াতে হবে। যার শ্রমের ফসল ভোগ করবেন, অথচ তার দুর্দিনে পাশে থাকবেন না, এটা হতে পারে না। কাজেই সেই বিষয়টা সবাইকে দেখতে হবে।’
শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো, কর্মপরিবেশ উন্নত ও নিরাপদ করা, শ্রমিক কল্যাণে নানা উদ্যোগসহ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। খেটে খাওয়া মানুষের জীবনমান উন্নয়নই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য বলে জানান তিনি।
উন্নয়নে দরকার মালিক-শ্রমিক সৌহার্দ্য
‘শ্রমিক-মালিক একতা, উন্নয়নের নিশ্চয়তা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার পালিত হয়েছে মহান মে দিবস।
এ প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ‘শ্রমিক-মালিক উভয়ই সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলবেন, সেটাই আমি চাই। আপনারা যে প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়েছেন, সেটা আমি মনে করি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই এই প্রতিপাদ্যকে নিয়ে কিন্তু আপনারা এগিয়ে যেতে পারবেন, সেটাই আমি মনে করি। শ্রমিক-মালিক একতা, উন্নয়নের নিশ্চয়তা। কাজেই শ্রমিক-মালিকদের মধ্যে যদি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক না থাকে তাহলে কখনই উন্নয়ন হয় না।’
সারা বিশ্বের ১০টি গ্রিন কারখানার মধ্যে সাতটি বাংলাদেশের জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশকে উন্নত করতে হলে আমি মনে করি শ্রমিকশ্রেণির অবদানটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
মালিকের পুঁজি এবং শ্রমিকের শ্রমে কারখানা চালু থাকে এবং উৎপাদন বাড়ে, দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধশালী হয় বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে আমি বলব যে, কোনো একটি প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে সবার একটা দায়িত্ব থাকে। মালিকের যেমন দায়িত্ব থাকবে শ্রমিকের ওপর, শ্রমিকের দায়িত্ব থাকবে মালিকের ওপর।
‘যে কারখানা তাদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে, খাদ্যের ব্যবস্থা করে, জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে, সেগুলো যেন ভালোভাবে সচল থাকে সেটা যেমন শ্রমিকের দেখার দায়িত্ব, আবার মালিকদেরও এটা দেখার দায়িত্ব, শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন কি না, তাদের জীবনমান উন্নত হচ্ছে কি না বা তারা ভালোভাবে কাজ করতে পারছেন কি না বা কাজের পরিবেশটা তারা পাচ্ছে কি না, সেটাও কিন্তু দেখতে হবে। তাহলে উৎপাদন বাড়বে, মালিক লাভবান হবেন, দেশও লাভবান হবে, শ্রমিকরাও লাভবান হবেন। এটা সব সময় সবার মনে রাখা উচিত বলে আমি মনে করি।’
পরিবেশ সুরক্ষিত রেখে দেশে শিল্পায়ন করা হচ্ছে বলে জানান সরকারপ্রধান। বলেন, ‘ভৌগোলিক সীমারেখায় বাংলাদেশটা ছোট। কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে বড়। কাজেই সবার জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ সব ব্যবস্থাই আমাদের করতে হবে। সেটা আমরা করে যাচ্ছি।’
তিন বছরে দূর করা হবে শিশুশ্রম
২০২৫ সালের মধ্যে দেশে কোনো শিশুশ্রম থাকবে না বলে অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এখানে একটু ব্যতিক্রম আছে। সেটা হচ্ছে, কিছু কিছু ট্র্যাডিশনাল কাজ থাকে সেগুলো যদি ছোটবেলা থেকে রপ্ত না করে, তাহলে তাদের পৈতৃক যে কাজগুলো, ব্যবসাগুলো সেগুলো চালু থাকবে না।’
তবে সেগুলো কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে হাতে-কলমে কিছু শিক্ষা, কিন্তু সেটা কোনো ঝুঁকিপূর্ণ না। ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কাজে কোনো শিশুকে ব্যবহার করা যাবে না। সেটা আমরা বন্ধ করেছি। কিন্তু তাদের ট্র্যাডিশনাল ট্রেনিং যেগুলো, সেগুলো তাদের বাবা-মার সঙ্গে বসে বসে তারা করতে পারে।’
উদাহরণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী সামনে আনেন তাঁতে শাড়ি বোনার কথা। তিনি বলেন, ‘এই শাড়ি বুনন যদি ছোটবেলা থেকে না শেখে, বড় হলে কিন্তু পারবে না। কারণ, এসব সুতা কিন্তু একটা একটা করে গোনা যায় না। তারা কিন্তু আঙুলের অনুভূতি দিয়ে এই হিসাবটা নেয়। এ রকম ট্র্যাডিশনাল কাজগুলো তারা শিখুক, কিন্তু সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ না।’
নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রায় সন্তুষ্টি
ঈদে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের বাড়িমুখো হওয়ার প্রসঙ্গটিও উঠে আসে সরকারপ্রধানের বক্তব্যে।
তিনি বলেন, ‘এবার নিরবচ্ছিন্নভাবে সবাই যার যার বাড়ি যেতে পেরেছেন এবং ফিরে আসতে পেরেছেন। আমরা যোগাযোগব্যবস্থায় সে রকমই উন্নতি করে দিয়েছি।
‘প্রত্যেকটা শ্রমিক মজুরিটা ঠিকমতো পেয়েছেন। যারা হয়তো দিতে পারেননি, কিছু দিয়েছেন, আগামীতে দেবেন।’
পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জে শ্রমজীবী নারী হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
বলেন, ‘আমরা আরেকটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত যত হাসপাতাল আছে, সেখানে যারা আমাদের ডাক্তাররা যোগ দেন, তাদের জন্য কিন্তু ডরমেটরি নির্মাণ করা হচ্ছে বা তাদের ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে যাতে ভালোভাবে থাকতে পারেন, সে ব্যবস্থাটাও আমরা নিচ্ছি।’
আর্থিক সহায়তা
মে দিবসের আয়োজনে ১০ শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে দেয়া হয় আর্থিক সহায়তা। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সবার হাতে চেক তুলে দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।
জটিল কিডনি রোগের চিকিৎসায় শ্রমিক রমিজ উদ্দিন আহমেদকে দেয়া হয় ১ লাখ টাকার আর্থিক সহযোগিতা। দুই মৃত শ্রমিকের পরিবারকে দেয়া হয় দুই লাখ টাকা করে। দুই শ্রমিকের মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাসহায়তা হিসেবে দেয়া হয় ৫০ হাজার টাকা করে। রপ্তানিমুখী শিল্পের মৃত ৫ শ্রমিকের পরিবারকে দেয়া হয় ২ লাখ টাকা করে।
আরও পড়ুন:২৫শে বৈশাখ মানেই গ্রীষ্মের উত্তপ্ত দিনে নানা আয়োজনে কবিগুরুকে স্মরণ। এবারে দেশের নানা জায়গায় বৃষ্টির কারণে খরতাপ নেই। তবে বৃষ্টি বন্ধ করতে পারেনি কোনো আয়োজন।
নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মনিয়ারী ইউনিয়নের পতিসরে এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুই কাচারিবাড়িতে উদযাপিত হচ্ছে তার ১৬১তম জন্মবার্ষিকী।
নওগাঁয় কাচারিবাড়ি প্রাঙ্গণে রোববার সকাল ১০টার দিকে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং ফেস্টুন ও কবুতর উড়িয়ে জন্মোৎসব উদ্বোধন করেন।
কয়েকটি পর্বে সাজানো হয়েছে পুরো দিনের আয়োজনকে। এর মধ্যে আছে চিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
প্রথম পর্বে ‘রং-তুলিতে রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন মন্ত্রী। এই প্রদর্শনীতে অংশ নেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও নওগাঁ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা।
এরপর দেবেন্দ্র মঞ্চে ‘মানবতার সংকট ও রবীন্দ্রনাথ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন নওগাঁ ৩ আসনের সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার, ৬ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন হেলাল ও জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান মিয়া।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের একজন দিকপাল। বাঙালির জীবনে নানা অনুষঙ্গে রবীন্দ্রনাথ এখনও প্রাসঙ্গিক। বাঙালি জীবনের যত বৈচিত্র্য আছে তার পুরোটাই উঠে এসেছে কবিগুরুর কবিতা, গান, গল্প, প্রবন্ধ ও উপন্যাসে।
‘কবিগুরু তার লেখনীতে মানবতার সংকট থেকে উত্তরণের নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। রবীন্দ্র সাহিত্য চর্চা করলে মানবজীবনের নানা সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।’
শাহজাদপুরে কাচারিবাড়ি মিলনায়তনে আয়োজন করা হয়েছে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু একজন কবি নন, তিনি একজন মহাপুরুষ। আমার মতো মানুষের কবিকে নিয়ে বক্তব্য দেয়া দুঃসাধ্য ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথ একজন জমিদার বংশের লোক হয়ে সাধারণ মানুষের জন্য ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ।
‘আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বকবিকে বুকে ধারণ করেছিলেন বলেই তিনি সাধারণ মানুষকে ভালোবাসতেন, গান ভালোবাসতেন, কবিতাকে ভালোবাসতেন। আমরা যদি রবীন্দ্রনাথকে মনেপ্রাণে ধারণ করতে পারতাম তাহলে আমাদের অবস্থান আরও উন্নত শিখরে থাকত।’
আমাদেরও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনকে অনুসরণ করে জীবন গড়ে তোলা উচিত বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী।
এই আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ফারুক আহাম্মদ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন সিরাজগঞ্জ ৬ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক মেরিনা জাহান কবিতা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য