× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

রেস-জেন্ডার
The tendency of women to take drugs is increasing in well off families
google_news print-icon

মাদকে ঝোঁক বাড়ছে নারীর, বেশি ঝুঁকি সচ্ছল পরিবারে

মাদক
সচ্ছল পরিবারের অনেক নারীর মাদকের দিকে ঝোঁকার প্রবণতা বাড়ছে। গ্রাফিক্স: সংগৃহীত
ঢাকা আহ্‌ছানিয়া মিশন (নারী) মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের সাইকোসোশ্যাল কাউন্সিলর মমতাজ খাতুন নিউজবাংলাকে বলেন, আমাদের এখানে যারা আসছেন তাদের বড় অংশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের স্টুডেন্ট। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় আছেন গৃহবধূ।’

দেশে নারীদের মধ্যে মাদকের দিকে ঝোঁকার প্রবণতা বাড়ছে। কয়েকটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আর্থিক নিরাপত্তা ভোগ করা পেশাজীবী নারীদের অনেকেই ঝুঁকছেন মাদকের দিকে। আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে মাদকসেবী কিশোরীর সংখ্যা। গৃহবধূরাও হচ্ছেন মাদকাসক্ত।

ঢাকা আহছানিয়া মিশন (নারী) মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে ২০১৮ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৪০ জন নারী মাদকসেবী। তাদের মধ্যে শিক্ষার্থী ১২৫ জন, গৃহিণী ১৫১ জন, চিকিৎসক তিনজন, সাইকোথেরাপিস্ট একজন, বেসরকারি চাকরিজীবী ১৭ জন, শিক্ষক তিনজন, মডেল পাঁচজন, যৌনকর্মী চারজন, বেকার ১৬ জন, ব্যবসায়ী ১০ জন, ডিজে একজন এবং এয়ারহোস্টেস তিনজন।

ঢাকা আহছানিয়া মিশন (নারী) মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের সাইকোসোশ্যাল কাউন্সিলর মমতাজ খাতুন নিউজবাংলাকে বলেন, ’আমাদের এখানে যারা আসছেন তাদের বড় অংশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের স্টুডেন্ট। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় আছেন গৃহবধূ। আমরা চিকিৎসা পেশায় জড়িতদেরও পাচ্ছি। সেই সঙ্গে আছেন মডেল, অভিনেত্রী, এয়ার হোস্টেস।’

নারীদের মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর মধ্যে চিকিৎসা পেশায় জড়িতদের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক বলে জানান মমতাজ খাতুন। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা নিতে আসা ডাক্তাররা ড্রাগ নিতে নিতে অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে তাদের ট্রিটমেন্ট দেয়ার মতো অবস্থা থাকে না। তাদের শরীরের সব জায়গায় ইনজেকশনের ছিদ্র। ফলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রক্ত নেয়ার উপায়ও থাকে না।’

তিনি বলেন, ‘গত তিন বছরে আমরা চারজন ডাক্তার পেয়েছি। তার মধ্যে তিনজন মাল্টি ড্রাগ ইউজার। প্যাথেডিন, আইস, ইয়াবা, গাঁজা সব ধরনের ড্রাগ নিতেন তারা। এই তিনজন তিন মাস চিকিৎসা নিয়েছেন। আর একজন শুধু প্যাথেডিন ইউজার। তিনি খুব ভালো ফ্যামেলির এবং নামকরা একটি হাসপাতালের মালিকের মেয়ে। মেয়েটি নিজেও একজন ভালো মেডিসিন স্পেশালিস্ট।’

শুধু আহছানিয়া মিশন (নারী) মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নয়, সারা দেশের ৩৬১টি বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসা গ্রহণকারী নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্রে মোট শয্যা রয়েছে ৪ হাজার ৭২৬টি। এসব কেন্দ্রে সচ্ছল পরিবারের রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।

মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে সম্প্রতি চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরা এক নারী চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের মধ্যে ড্রাগ গ্রহণের প্রবণতা বেড়েছে। অনেকেই বিষয়টি ম্যানেজ করে চলেন। আমিও প্রথমে সেভাবে চলছিলাম। তবে একটা সময়ে সেটা আর সম্ভব হয়নি। এরপর চিকিৎসা নিয়ে আমি এখন অনেকটা ভালো।’

তিনি বলেন, ‘ডাক্তারদের তো ড্রাগ সম্পর্কে আইডিয়াটা অনেক বেশি। ওরা জানে কোন মাত্রায় কতদিন নিলে আমি ঠিক থাকতে পারব। আবার কোন মাত্রায় কতদিন বিরত রাখতে পারব। ডাক্তাররা অনেকে প্যাথেডিন নেয়, প্যাথেডিনের পর ন্যালবান ইনজেকশন নেয়, এরপর ন্যালবানের বিকল্প কী আছে সেটাও তারা জানে।’

প্যাথেডিন আর ন্যালবান একই গ্রুপের ড্রাগ। কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের আবাসিক সাইকিয়াট্রিস্ট রায়হানুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্যাথেডিন মূলত সিনথেটিক ব্যথানাশক। কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে বলে এটা সিনথেটিক। এটা সিজারিয়ান বা যেকোনো ধরনের অপারেশনের ক্ষেত্রে ব্যথানাশক হিসেবে চিকিৎসকেরা ব্যবহার করেন। মরফিন, হেরোইন, ফেনসিডিল, প্যাথেডিন, বিটুইনাফিন, ন্যালবান, ওমাসন এ সবই একই গোত্রের।

‘তবে এগুলোর মধ্যে একটু সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। কিছু সরাসরি গাছ থেকে হয়। কতগুলো গাছ থেকে আসার পর কারখানায় প্রসেস হয়। আবার কোনোটা কারখানায় উৎপাদন হয়, যেমন প্যাথেডিন। এগুলোর কার্যকারিতা কমবেশি একই ধরনের।’

নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলা ওই নারী চিকিৎসক মাদকে আসক্ত হয়ে নিরাময় কেন্দ্রে যাওয়া আরেক চিকিৎসকের বিষয়েও তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ওই ফিমেল ডক্টর আমার পরিচিত। মাদক নিয়ে যখন তার আলটিমেট পজিশন হলো, তখন পরিবারকে বলল আমার চিকিৎসা দাও। বাসায় থাকলে সে হয়তো সুইসাইড করত বা এমন কোনো শারীরিক সমস্যায় পড়ত যেখান থেকে সে আর হয়তো সাসটেইন করতে পারত না। এমন আলটিমেট পর্যায়েই সবাই চিকিৎসা নিতে আসে।’

আহছানিয়া মিশন (নারী) মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার উম্মে জান্নাত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডাক্তারদের মধ্যে পর্যায়ক্রমে নানা ধরনের ড্রাগ নিতে নিতে অনেকের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। কেউ কেউ শরীরে এত বেশি ছিদ্র করে ফেলেন যে শারীরিক চেকআপের জন্য আমরা রক্ত নেয়ার ভেইন খুঁজে পাই না। মানে তাদের চিকিৎসা দেয়ার মতো অবস্থাও থাকে না। অনেক সময় ইনজেকশন পুশ করার জায়গা খুঁজে পাওয়া যায় না।’

রাজধানীর একাধিক মাদক নিরাময় কেন্দ্র ঘুরে বেশ কয়েকজন নারী এয়ার হোস্টেসের মাদকাসক্তির তথ্যও পাওয়া গেছে।

চিকিৎসা নিয়ে ছয় মাস আগে বাসায় ফিরেছেন এমন একজন এয়ার হোস্টেসের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় কেবিন ক্রুরা কমপিটিশনে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকতে ড্রাগে আসক্ত হয়ে পড়েন। দেখা যাচ্ছে কারও শরীর খুব বেশি স্লিম, এ ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় হতে হয়তো একটু মোটা হওয়া দরকার। এই পরিবর্তন আনতে খাওয়া-দাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়েও অনেক সময় কাজ হয় না। তখন কেউ কেউ ড্রাগের সাহায্য নেন।

‘আবার লং ফ্লাইটে অনেক বেশি ডিউটি থাকে বলে নিজেকে ফিট রাখতে কেউ কেউ ড্রাগ নেন। প্রথম দিকে নিজেকে খুব উৎফুল্ল মনে হয়। তবে এক দিন, দুই দিন, পাঁচ দিন, দশ দিন নিতে নিতে ড্রাগের প্রতি আসক্তি জন্মে যায়। ড্রাগ বলতে আইস নেয়া হয় বেশি। ইয়াবাও চলে কোনো কোনো সময়।’

তিনি বলেন, ‘ড্রাগ নেয়া শুরুর সময়ে মনে করা হয় এতে ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে বা মানসিক ক্ষেত্রে উপকার হবে। তবে একপর্যায়ে সহজে আর ফিরে আসা যায় না।’

মাদকাসক্তির কারণে গত এক বছরে তিনজন মডেল চিকিৎসা নিয়েছেন আহছানিয়া মিশন (নারী) মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে।

তাদের মধ্যে একজন উঠতি মডেলের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘আমি ইয়াবা নিতাম। একটা পর্যায়ে আর ঘুম আসত না। সবকিছু অসহ্য লাগত। তখন বাধ্য হয়ে ঘুমের ওষুধ খেতে হতো। এই ঘুমের ওষুধের ডোজও দিনে দিনে বাড়াতে হয়েছে।

‘একটা পর্যায়ে পরিবারকে সব খুলে বলি। তারা আমাকে রিহ্যাবে নিয়ে যায়।’

সাইকোসোশ্যাল কাউন্সিলর মমতাজ খাতুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমফেটামিন মানে ইয়াবা আসক্তদের বিশেষ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দিতে হয়। ইয়াবার কারণে যে শারীরিক সমস্যাগুলো হয় সেটার বিপরীত মেডিসিন খেতে দেয়া হয়।’

মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নেয়া ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের এক শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি পরিবারকে বলে দিয়েছিলাম যে স্টাডির চাপ আর বন্ধুদের প্ররোচনায় ড্রাগ নেয়া শুরু করেছি। এখন ছাড়তে চাচ্ছি। তখন আমাকে পরিবার রিহ্যাবে নিয়ে যায়।’

আহছানিয়া মিশন (নারী) মাদক নিরাময় ও পুর্নবাসন কেন্দ্রের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার উম্মে জান্নাত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষিতরা মাদক নিয়ে অনেক কনফিডেন্ট থাকেন। তারা ভেবেই নেন যে এটা ভালোভাবে ম্যানেজ করা যাবে। আমরা ডাক্তারদের মধ্যে প্যাথেডিন নেয়ার প্রবণতা বেশি পেয়েছি। আর অন্যদের মধ্যে আইস, ইয়াবাসহ মেজর ড্রাগগুলো নেয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। আমাদের এখানে যেসব রোগী আসেন তাদের বেশির ভাগই ইয়াবা, গাঁজা আর ঘুমের ওষুধে আসক্ত।’

দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় জোর

কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের রেসিডেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট রায়হানুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সব পেশার লোকজনের মধ্যে কমবেশি মাদকসেবী আছেন। এটা জেনারালাইজড করা যাবে না। তবে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার।’

মাদকাসক্তির দূর করার চিকিৎসার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘নিরাময় শব্দটি আমরা বাদ দেয়ার প্রস্তাব করেছি। ১৯৯০ সালের আইনে আছে নিরাময় লিখতে হবে। তবে এটা তো নিরাময়যোগ্য না, চিকিৎসাযোগ্য।

‘আবার চিকিৎসাযোগ্য হলেও অনেকে যতটুকু ট্রিটমেন্ট নেয়া দরকার ততটুকু নেন না। যখন খুব ভালনারেবল পর্যায়ে যান তখন চিকিৎসা নিতে আসেন। তারপর আর খোঁজ থাকে না।’

দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার ওপর জোর দিয়ে রায়হানুল ইসলাম বলেন, ‘একবার ওষুধ খেলে কি ডায়াবেটিস বা হাইপারটেনশন ভালো হয়? হয় না। সে রকম এক মেয়াদে তিন মাস ভর্তি থেকে ট্রিটমেন্ট নিয়ে কোনো মাদকসেবী রোগী ভালো হন না। মুক্ত অবস্থায় যদি কেউ ১২ মাস মাদকের বাইরে থাকতে পারেন, তাহলে বলা যাবে মাদকের রোগী ভালো হয়েছেন। তবে বেশির ভাগ ভালো হয় না। ৬০-৮০ ভাগ পুরোপুরি রিকভার হয় না। এটা পুরো বিশ্বব্যাপী ডেটা, শুধু বাংলাদেশের জন্য না।’

পারিবারিক বন্ধন জোরদারের পরামর্শ

নারীদের মধ্যেও মাদকাসক্তির প্রবণতা বাড়ার পেছনে আধুনিক সময় দুর্বল পারিবারিক বন্ধনকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. মাহফুজা খানম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরিবারের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে মডেল ভাবতে পারেন না। সন্তান তার প্যারেন্টকে মডেল ভাবার অবকাশ পায় না। কারণ এখনকার অনেক বাবা-মাই তাদের সন্তানদের সময় দিতে পারেন না। এসব পরিবারের মা-বাবার কাছে টাকা ইনকাম করাটা নেশায় পরিণত হয়। আর বাচ্চারা পরিস্থিতির কারণে জড়ায় ড্রাগের নেশায়।

‘শুধু তা-ই নয়, পরিবারের অন্য যেকোনো সদস্যই একে অপরের মডেল হিসেবে নিতে পারে না। এরা মডেল হিসেবে নিচ্ছে বাইরের কাউকে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে মাদকে জড়াচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এ প্রবণতা এখন পুরুষের তুলনায় নারীদের বেশি। তারা আবার শিক্ষিত নারী, আর্থিকভাবে সচ্ছল নারী। কারণ ড্রাগ কেনার জন্য পর্যাপ্ত সোর্স তাদের আছে। ধীরে ধীরে তাদের সংখ্যা ভয়ানকভাবে বাড়ছে।’

ড. মাহফুজা খানম বলেন, ‘আগে একটা সময় ছিল নারীর পক্ষে টাকা জোগাড় করা অসম্ভব ছিল। এখন সময় পাল্টেছে। নারীরা স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেক বেশি। তাছাড়া পারিবারিকভাবে অনেকে প্রতিষ্ঠিত থাকায় মেয়েরা চাইলেই আর্থিক ব্যাপারে সুবিধা পাচ্ছে। তবে তারা মানসিক সহযোগিতা-সহমর্মিতা পাচ্ছে না। হতাশা বাড়ছে। এই হতাশা থেকে অনেকে মাদকে জড়াচ্ছে।

‘শো আপ করার টেনডেন্সি আমাদের এখন বেশি। দরদ, শেয়ার বা বোঝাপড়ার টেনডেন্সি কম। নেগেটিভ ইগোটা বেশি হওয়ায় মাদকে জড়ানোর ঝুঁকি বাড়ছে।’

আরও পড়ুন:
‘মাদক নিয়ে বিরোধে’ ছুরিকাঘাতে হত্যা
নারী ডেটে ডাকলে যৌনতার সম্ভাবনা বেশি
ময়মনসিংহ থেকে রোনালডোর দেশে যাচ্ছেন তিন নারী ফুটবলার
মাসিক নিয়ে ভ্রান্তি ও অধিকারহীনতার শৃঙ্খলে নারী
নারীর সুরক্ষায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে ‘জয়ীর দল’

মন্তব্য

আরও পড়ুন

রেস-জেন্ডার
Irregularity corruption through promotion without qualification
খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা

যোগ্যতা ছাড়াই পদোন্নতি বাগিয়ে ঢালাও অনিয়ম-দুর্নীতি

যোগ্যতা ছাড়াই পদোন্নতি বাগিয়ে ঢালাও অনিয়ম-দুর্নীতি খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম। ছবি: সংগৃহীত
রাজনৈতিক আশ্রয়ে নিজ জেলাতেই ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে অবস্থান করছেন খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিস্তর অভিযোগ শিক্ষকদের।

পদোন্নতি পাওয়ার মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা তার ছিল না। অবৈধ উপায়ে পদ বাগিয়ে দফায় দফায় শুরু করেন নানামুখী দুর্নীতি। বিগত কয়েক বছর ধরেই খেয়াল-খুশিমতো বিধিবহির্ভূত কর্মকাণ্ড ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলেছেন। পদে পদে তার স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হচ্ছেন জেলার প্রাথমিক শিক্ষকরা।

আলোচ্য ব্যক্তিটি হলেন রাজনৈতিক আশ্রয়ে নিজ জেলাতেই ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে অবস্থান করা খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম।

১৯৯৭ সালের ২৮ এপ্রিল উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন শেখ অহিদুল আলম। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও ২০১৬ সালের ২২ এপ্রিল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতি পান তিনি।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদ থেকে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য ১৯৮৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক গেজেটে কিছু যোগ্যতার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। ওই গেজেটের ৩২ (এ) ধারায় বলা হয়েছে, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসহ দ্বিতীয় শ্রেণীর বিএড ডইগ্র অথবা ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন ডিগ্রি থাকতে হবে।

খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে চলতি বছরের আগস্ট মাসে শেখ অহিদুল আলমের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. মোসলেম উদ্দিন।

তদন্তকালে শেখ অহিদুল আলম চাহিদা অনুযায়ী বিএড সার্টিফিকেট দিতে পারেননি। তার বদলে ২০০২ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) থেকে পাস করা এমএড সার্টিফিকেট দাখিল করেন।

তবে বিএড ও এমএড ডিগ্রি সমমান নয় বলে জানিয়েছেন বাউবির অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. মোহসীন উদ্দিন। গত ২৮ আগস্ট তদন্ত কমিটির কাছে পাঠানো চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, বিএড ডিগ্রির বিকল্প হিসেবে এমএড ডিগ্রিকে বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই।

বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে গত ২০ অক্টোবর বাউবির ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. হাবিবুল্যাহ মাহমুদ তদন্ত কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, বিএড ডিগ্রি অর্জনের জন্য শ্রেণীকক্ষে ৯০টি অনুশীলনী পাঠদানের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমের দক্ষতা, শিক্ষার্থী মূল্যয়নের দক্ষতা, শ্রেণী ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের ধারণা অর্জনের ব্যবস্থা নেয়া হয়।

একইসঙ্গে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের প্রাক-যোগ্যতা অর্জনের জন্য পরিসংখ্যানগত ধারণা, শিক্ষাক্রম ও শিক্ষা দর্শনের প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের কিছু বিষয় যুক্ত থাকে। কিন্তু এমএড ডিগ্রি প্রোগ্রামে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান-সংশ্লিষ্ট দক্ষতা অর্জনের কোনো সুযোগ নেই।

তবে বিএড ডিগ্রি নেই এরূপ শিক্ষার্থীদের এক সেমিস্টার পূর্ব-প্রস্তুতিমূলক চারটি কোর্স সম্পন্ন করে এমএড ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ ২০০০ সালে এমএড শিক্ষাক্রমে ছিল। এজন্য এমএড প্রোগ্রামকে বিএড-এর বিকল্প বিবেচনার সুযোগ নেই।

এছাড়া ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ৫৮ জন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিএড বা ডিপ্লোপা ইন এডুকেশন ডিগ্রি না থাকায় তাদের পদোন্নতি দেয়নি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তদন্তের সত্যতা জানিয়ে মো. মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘আমি গত ২৪ অক্টোবর অবসর-উত্তর ছুটিতে (পিআরএল) চলে এসেছি। তাই তদন্তের সব কাজ শেষ করে আসতে পারিনি। বাকি কাজটুকু বর্তমান উপ-পরিচালক সম্পন্ন করবেন।’

তবে খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো মানতে নারাজ। নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এমএড ডিগ্রি থাকলে বিএড আছে কিনা এটা কোনো বিষয় না। আমাদের ব্যাচে ১৩৭ জনের একযোগে পদোন্নতি হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে দেখেন সেখানে কতজনের বিএড ছিল না। আমার বিএড-এর থেকেও উচ্চতর এমএড ডিগ্রি তো আছেই। তাই আমার পদোন্নতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।’

শিক্ষক বদলিতে স্বেচ্ছাচারিতা

শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল একযোগে ১৭ জন শিক্ষকে বদলি করেন। তবে পরবর্তীতে অনলাইনে শিক্ষকরা দেখতে পান যে তাদের বদলি আদেশে আন্তঃজেলা বদলির নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর আবেদন করেন। একইসঙ্গে খোদ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা ওই শিক্ষকদের বদলির আদেশ বাতিলের জন্য আবেদন করেন। পরবর্তীতে তিনি নামমাত্র একটি সুপারিশ কমিটি করে তাদের বদলি বহাল রাখেন।

৩ জুন অধিদপ্তর বরাবর পাঠানো চিঠিতে অহিদুল আলম উল্লেখ করেন, যেহেতু অনলাইনে তাদের বদলির আদেশ অনুমোদন হয়ে গেছে, তাই এই আদেশ বহাল রাখা যায়।

ওইসব শিক্ষক জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের ২৯ মার্চ জারিকৃত পত্রে চলতি দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষকদের বদলিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও নীতিমালা লঙ্ঘন করে ১৭ জনের মধ্যে চারজন প্রধান শিক্ষককেও বদলি করা হয়েছিল। এটা তিনি করেছিলেন পছন্দের ব্যক্তিদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বানানোর জন্য।

প্রতিবাদ করলেই শাস্তি

এই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যারা শাস্তির সম্মুখীন হয়েছেন, তাদের একজন বটিয়াঘাটা উপজেলার বারোভূঁইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন রায়।

তিনি জানান, ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর পিআরএল-এ যাওয়ার দিন তাকে মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে লঘুদণ্ড দিয়ে বেতনের এক ধাপ অবনমিত করা হয়। এর বিরুদ্ধে তিনি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষা কর্মকর্তা অহিদুল আলমের সঙ্গে মতের মিল না হলেই বিপদে পড়তে হয়। তিনি ২০১২ সালে এক মাসের জন্য ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়ে ২৩ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিলেন।

একই জেলায় ১৪ বছর

শেখ অহিদুল আলম ইতোপূর্বে খুলনা সদর থানার শিক্ষা অফিসার পদে তিন বছর, খুলনা বিভাগীয় অফিসে ছয় বছর ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে তিন বছর কর্মরত ছিলনে।

২০২৩ সালের ২০ জুন আবারও খুলনাতে তার বদলি হয়। সে সুবাদে তিনি খুলনাতেই প্রায় ১৪ বছর কর্মরত রয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, খুলনাতেই তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ডাটাবেইজের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, শেখ অহিদুল আলমের স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার নলডাঙ্গা গ্রামের উল্লেখ রয়েছে। তবে তার জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থায়ী ঠিকানা পাওয়া গেছে খুলনা সিটি করপোরেশনের দৌলতপুরের কালিবাড়িতে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেখ অহিদুল আলম খুলনার বিএল কলেজে লেখাপড়া করেছেন। তার শ্বশুরবাড়ি দৌলতপুরের কালিবাড়িতে। দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। স্থানীয় সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সঙ্গে আঁতাত করেই তিনি দীর্ঘদিন খুলনায় থাকার সুযোগ পেয়েছেন।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে শেখ অহিদুল আলম বলেন, ‘একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। তারা নানারকম ষড়যন্ত্র করছে।’

আরও পড়ুন:
ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় উপপরিচালকের বিরুদ্ধে ডিলারকে মারধরের অভিযোগ
১৫ বছরে সেবা খাতে ঘুষ লেনদেন ১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকার: টিআইবি 

মন্তব্য

রেস-জেন্ডার
An allegation of embezzlement of crores of rupees against the agricultural officer in Kishoreganj

কিশোরগঞ্জে কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

কিশোরগঞ্জে কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অভিযুক্ত ফাহিমা আক্তার ২০২২ সালের ৭ নভেম্বর থেকে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় কর্মরত। ছবি: নিউজবাংলা 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার অভিযোগ, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ছয়টি প্রকল্প থেকে (ফ্রিপ প্রকল্প, ময়মনসিংহ প্রকল্প, পার্টনার, অনাবাদি, রাজস্ব প্রকল্প ও মাশরুম উৎপাদন প্রদর্শনী) কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেন ফাহিমা। 

কিশোরগঞ্জে বিভিন্ন প্রকল্পের কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

প্রকল্পগুলোর প্রদর্শনী নামমাত্র বাস্তবায়ন, কোথাও আবার বাস্তবায়ন না করেই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, পুরো উপজেলায় বেশির ভাগ প্রদর্শনীতে মোট বরাদ্দের ৩০ শতাংশও কৃষক পাননি।

অভিযুক্ত কর্মকর্তার নাম ফাহিমা আক্তার, যিনি ২০২২ সালের ৭ নভেম্বর থেকে সদর উপজেলায় কর্মরত।

এর আগে একই উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা পদে ছিলেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার অভিযোগ, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ছয়টি প্রকল্প থেকে (ফ্রিপ প্রকল্প, ময়মনসিংহ প্রকল্প, পার্টনার, অনাবাদি, রাজস্ব প্রকল্প ও মাশরুম উৎপাদন প্রদর্শনী) কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেন ফাহিমা।

ফ্রিপ প্রকল্প

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ফ্রিপ প্রকল্পে বিভিন্ন ফসলের মোট ৫০৯টি প্রদর্শনী ও কৃষক প্রশিক্ষণ বাবদ ১ কোটি ৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে।

এর মধ্যে বেশির ভাগ প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করেননি এ কর্মকর্তা। যেগুলো করেছেন, সেগুলোও নামমাত্র বাস্তবায়ন দেখানো হলেও কৃষকরা তার সুফল পাননি।

ফ্রিপ প্রকল্পের রোপা আমন ধানের প্রদর্শনী করেন কাটাবাড়িয়া এলাকার কৃষক খোকন মিয়া। পাঁচ কেজি বীজ, ১৫ কেজি ডিএপি, ২০ কেজি ইউরিয়া সার আর কিছু কীটনাশক পেয়েছেন তিনি। তার পাওয়া উপকরণের বাজার মূল্য সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ তার অনূকূলে বরাদ্দ ১০ হাজার টাকা। অর্থাৎ তার অনূকূলে মোট বরাদ্দের ১৫ শতাংশ উপকরণ পেয়েছেন খোকন।

হাজিরগল গ্রামের কৃষক মুখলেছ, কাদির, হাসেম ও আতাউর মিলে ৫ একর জমিতে করেন ফ্রিপ প্রকল্পের বীজ গ্রাম প্রদর্শনী।

৪০ কেজি বীজ, পাঁচ বস্তা ইউরিয়া, চার বস্তা পটাশ, তিন বস্তা ডিএপি ও ১০ বস্তা জৈব সার পেয়েছেন এসব কৃষক, যার বাজারমূল্য সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। অথচ তাদের অনূকূলে বরাদ্দ দেখানো হয় দেড় লাখ টাকা। তারা তাদের মোট বরাদ্দের ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ উপকরণ পেয়েছেন।

খোকন, মুখলেছদের মতো এমন শত শত কৃষককে এভাবেই নামেমাত্র উপকরণ দিয়ে প্রদর্শনী বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার।

তার অভিযোগ, ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর ফ্রিপ প্রকল্পে কৃষকের ৯৯টি গ্রুপ গঠনের জন্য চার লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে।

প্রতিটি গ্রুপের অনূকূলে পাঁচ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা দেড় হাজার করে টাকা পান বলে জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার অভিযোগ, শুধু গ্রুপ গঠন থেকেই আত্মসাৎ করা হয়েছে তিন লাখ ৪৬ হাজার টাকা।

ময়মনসিংহ প্রকল্প

বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পেও ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে কৃষি কর্মকর্তা ফাহিমার বিরুদ্ধে।

২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর একটি মডেল গ্রামের জন্য ২ লাখ ৬ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। এরপর ২০২৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আরেকটি মডেল গ্রামের জন্য বরাদ্দ আসে ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা।

এ দুটি প্রদর্শনীতে বরাদ্দের ৪ লাখ ২২ হাজার টাকা উত্তোলন করে কৃষি কর্মকর্তা একটিও বাস্তবায়ন করেননি বলে অভিযোগ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার।

পাঁচধা গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান। পার্টনার প্রকল্পের কমিউনিটি বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি প্রদর্শনী, ময়মনসিংহ প্রকল্পের ভার্মি কম্পোস্ট, অনাবাদি প্রকল্পের পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রদর্শনী রয়েছে তার বাড়িতে। আবার ময়মনসিংহ প্রকল্পের মডেল গ্রাম প্রদর্শনীর বরাদ্দ দেখানো হয়েছে তার নামে।

সরেজমিনে তার বাড়িতে গিয়ে মডেল গ্রামের কোনো সাইনবোর্ড বা অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি। তার দাবি, মডেল গ্রামের বরাদ্দটি তিনি পেয়েছেন, তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর অসুস্থতার কারণে করতে পারছেন না।

তিনি বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যেই কাজ শুরু করবেন।

সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়িতে থাকা অন্য প্রদর্শনীর সাইনবোর্ড সরানোর চেষ্টাও করেন এ কৃষক।

ময়মনসিংহ প্রকল্পের লতিকচু প্রদর্শনী করেছিলেন বেত্রাটী গ্রামের মিলন ভূঁইয়া। তার অনূকূলে ৩৩ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও এই প্রদর্শনীতে ১০ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি পটাশ, এক বস্তা ডিএপি সার ছাড়া কিছুই পাননি তিনি। মিলন যা পেয়েছেন তার বাজারমূল্য আনুমানিক ১ হাজার ২৪০ টাকা। মিলনের নামে প্রদর্শনীর সাইনবোর্ডটি আবার পাওয়া গেছে হৃদয় নামে আরেক লতিকচু চাষির বাড়িতে।

হৃদয়ের বাবা আবদুল হেকিম জানান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাদের এই সাইনবোর্ডটি দিয়ে ছবি তুলেছেন।

এ ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আফরোজা আক্তারের দাবি, মিলনকে কোনো প্রদর্শনী দেয়া হয়নি।

সদর উপজেলার বাগপাড়া এলাকায় রফিকুল ইসলাম সৈয়দও করেছিলেন লতিকচুর প্রদর্শনী। ইউরিয়া, পটাশ, ডিএপি জাতের ৪০ কেজি সার আর ২ হাজার ৫০০ টাকা ছাড়া আর কিছুই পাননি তিনি। অথচ তার অনূকূলে বরাদ্দ ছিল ৩৩ হাজার টাকা। বরাদ্দের ১০ শতাংশও পাননি এ কৃষক।

ময়মনসিংহ প্রকল্পের হলুদের প্রদর্শনী করেছিলেন কাশোরারচর এলাকার বাবলু মিয়া। তার অনূকূলে ২৩ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও তিনি পান বীজ কেনার জন্য ৪ হাজার টাকা, এক বস্তা জৈব সার, ১০ কেজি ইউরিয়া আর ১০ কেজি পটাশ।

৫০০ বস্তায় আদা চাষ প্রদর্শনী করেন সদর উপজেলার আগপাড়া এলাকার এমদাদুল হক রুবেল। কৃষি অফিস থেকে ২০ কেজি পটাশ, ২০ কেজি ডিএপি, ১৫ কেজি আদা আর ৩৫০টি বস্তা ছাড়া কিছুই পাননি তিনি। অথচ এ কৃষকের অনূকূলে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে ৪৪ হাজার টাকা।

এ কৃষক বলেন, ব্যক্তিগতভাবে যেগুলো করেছেন, সেগুলোতে সুফল পেলেও বিপাকে পড়েন প্রদর্শনী করে।

ফাহিমাঘনিষ্ঠ আবুল হাসেমের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ

২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর একটি কমিউনিটি বেজড ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন পিট স্থাপনের জন্য বরাদ্দ আসে ৭০ হাজার টাকা। সেটি বরাদ্দ দেয়া হয় কৃষি কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আবুল হাসেমের শ্বশুরবাড়িতে।

কিশোরগঞ্জে কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
অভিযুক্ত আকুল হাসেম। ছবি: নিউজবাংলা

এ আবুল হাসেম কৃষি কর্মকর্তার সব অনিয়মের ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলে অভিযোগ এক কর্মকর্তার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি অফিসের ওই কর্মকর্তা জানান, অফিসে উচ্চমান সহকারী থাকা সত্ত্বেও বেশির ভাগ আর্থিক ফাইল করেন আবুল হাসেম, যেটার কোনো বিধান নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিউনিটি বেজড ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন পিট স্থাপনের বিষয়টি স্বীকার করেন আবুল হাসেম।

অনিয়ম ও আর্থিক ফাইল করার বিষয়টি অস্বীকার করে দুর্নীতির অভিযোগগুলোকে মিথ্যা হিসেবে আখ্যা দেন তিনি।

অনাবাদি প্রকল্প

অনাবাদি প্রকল্পে আরও বেশি অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে কৃষি কর্মকর্তা ফাহিমার বিরুদ্ধে।

এ প্রকল্পের পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রদর্শনী করেছেন কাটাবাড়িয়া এলাকার আছমা খাতুন। প্রদর্শনীতে বিভিন্ন জাতের সবজির বীজ আর একটি সাধারণ নেট ছাড়া তেমন কিছুই পাননি তিনি। তার দাবি, সব মিলিয়ে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকার মতো উপকরণ পেয়েছেন।

এ কিষাণীর অভিযোগ, বাগানে পোকামাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতে বারবার কীটনাশক চেয়েও পাননি তিনি। আছমার প্রাপ্ত উপকরণের বাজারমূল্য মোট বরাদ্দের ২৫ শতাংশ।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় অনাবাদি প্রকল্পের মোট ৯৩২টি প্রদর্শনীতে বরাদ্দ আসে ২৮ লাখ ৪৯ হাজার ৪০০ টাকা। এর মধ্যে পারিবারিক পুষ্টি বাগান ৪১৯টি আর পুষ্টি বাগান পুনঃস্থাপন ৫১৩টি।

উপ-সহকারী এক কৃষি কর্মকর্তার অভিযোগ, এসব প্রদর্শনীতে আছমা খাতুনের মতো শত শত কৃষক/কিষাণীকে নামমাত্র উপকরণ দিয়ে বাস্তবায়ন করেন ফাহিমা।

পার্টনার প্রকল্প

চলতি বছরের ২৮ ফ্রেব্রুয়ারিতে আটটি এবং ৩ এপ্রিলে সাতটি (মোট ১৫) পার্টনার ফিল্ড স্কুলের জন্য ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে।

উপ-সহকারী এক কৃষি কর্মকর্তা জানান, যেখানে কৃষকদের নাশতার জন্য বরাদ্দ ছিল ৩ লাখ টাকা, সেখান থেকে নামেমাত্র বিস্কুট আর পানি খাইয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

মাশরুম উৎপাদন প্রদর্শনী

২০২৪ সালের ২৩ জানুয়ারি স্পন ও মাশরুম উৎপাদন প্রদর্শনীর জন্য ৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। বছরের শুরুতে বরাদ্দ আসলেও কাজ শুরুই করেন অক্টোবর শেষ সাপ্তাহে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি অফিসের একজন কর্মকর্তা জানান, মূলত প্রকল্পটিও আত্মসাৎ করার পাঁয়তারা করেছিলেন কৃষি কর্মকর্তা। পরে জানাজানি হয়ে যাওয়ায় বাস্তবায়ন শুরু করেন তিনি।

শহরের তারাপাশা এলাকার বাসিন্দা মারিয়াতুল কিপতিয়া পাপিয়া। বিগত তিন বছর ধরে নিজ উদ্যোগে মাশরুম উৎপাদন করছেন তিনি। অক্টোবরের শেষ দিকে কৃষি অফিস থেকে স্পন ও মাশরুম উৎপাদন প্রদর্শনী বরাদ্দ পান তিনি। ২০২৪ সালের ২৩ জানুয়ারি আসা প্রকল্পটির বরাদ্দ ৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকা হলেও এ কিষাণী পান আড়াই লাখ টাকা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সবেমাত্র ঘর নির্মাণকাজ শুরু করেছেন তিনি।

অভিযুক্ত কৃষি কর্মকর্তার ভাষ্য

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাহিমা আক্তারের দাবি, দুটি মডেল গ্রাম বাস্তবায়ন করেছেন, তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর কৃষকের অসুস্থতার জন্য খানিকটা বিলম্ব হয়েছে।

বাস্তবায়িত মডেল গ্রামে সাইনবোর্ড আছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেটি নষ্ট হয়ে গেছে।’

যদিও কৃষক জানিয়েছেন, তিনি এখনও সাইনবোর্ড পাননি।

মাশরুমের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি চলমান প্রক্রিয়া। বাস্তবায়নে কোনো অনিয়ম হয়নি।’

তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেন তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এর আগেও অভিযোগ পেয়েছেন। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।

আরও পড়ুন:
বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে জলমহাল দখলের অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতার 
নিহত লেফটেন্যান্ট তানজিমের বাড়িতে যাচ্ছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তারা
ইটনায় বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, যুবদল নেতা গ্রেপ্তার
কাশিমপুর কারাগার থেকে পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কিশোরগঞ্জে গ্রেপ্তার
কিশোরগঞ্জে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

মন্তব্য

রেস-জেন্ডার
Allegation of embezzlement of about crores against upazila agriculture officer

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে  কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সুমন কুমার সাহা ২০২৩ সালের ১৭ মে থেকে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায় কর্মরত। ছবি: নিউজবাংলা 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ফ্রিপ, ময়মনসিংহ, পার্টনার, রাজস্ব ও অনাবাদি প্রকল্প থেকে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার সাহা। 

প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে বিল ভাউচার, কোথাও কোথাও নামমাত্র বাস্তবায়ন, কোথাও আবার কৃষকের ফসলি জমিতে সাইনবোর্ড লাগিয়ে প্রদর্শনী দেখিয়ে বরাদ্দের অর্থ আত্মসাতের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে এক কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

এ অভিযোগ অস্বীকার করে কৃষি কর্মকর্তার দাবি, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের সব উপকরণ বিতরণ করেছেন তিনি।

যদিও তার এমন দাবি নাকচ করেছেন সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা।

তাদের ভাষ্য, কোনো প্রদর্শনীর বরাদ্দের পরিমাণ জানেন না তারা।

অভিযুক্ত কৃষি কর্মকর্তার নাম সুমন কুমার সাহা, যিনি ২০২৩ সালের ১৭ মে থেকে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায় কর্মরত।

এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে উপজেলার পাঁচটি প্রকল্পে প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা।

কোন প্রকল্পে কী ধরনের অনিয়মের অভিযোগ

বেশ কিছু প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে রোপা আমন/বোরো ধানের প্রদর্শনী, বীজ গ্রাম প্রদর্শনী, ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন প্রদর্শনী, পার্টনার প্রকল্প, বসতবাড়িতে সবজি চাষ ও একক ফল বাগান, মসলাজাতীয় ফসল উৎপাদন প্রদর্শনী ও গ্রুপ গঠন।

রোপা আমন/বোরো ধানের প্রদর্শনী

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ফ্রিপ প্রকল্পের রোপা আমন বীজ উৎপাদনের প্রদর্শনী করেন তাড়াইলের বাঁশাটি গ্রামের কামরুল ইসলাম। এর বিপরীতে তিনি উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ৩৩ শতক জমির জন্য পাঁচ কেজি বীজ, ১০ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি টিএসপি ও ১০ কেজি এমওপি সার পান। এসব উপকরণের সর্বোচ্চ বাজারমূল্য এক হাজার টাকা।

ওই কৃষক জানান, তার মতো এমন শত শত কৃষককে এ পরিমাণ সামগ্রীই দেয়া হয়। অথচ তার অনূকূলে বরাদ্দ দেখানো হয় ১০ হাজার টাকার উপকরণ।

ফ্রিপ প্রকল্পের অধীনে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৪০৬টি প্রদর্শনী বরাদ্দ আসে তাড়াইল উপজেলায়। এগুলোতে বরাদ্দের পরিমাণ ৭৯ লাখ ৮২ হাজার ৬০০ টাকা।

এ প্রকল্পের অর্ধেকেরও বেশি প্রদর্শনী বাস্তবায়ন না করার অভিযোগ পাওয়া যায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার সাহার বিরুদ্ধে।

কামরুলের মতো আরেক কৃষক ঘোষপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম। রাজস্ব খাতের অর্থায়নে একটি বোরো ধানের প্রদর্শনী করেন তিনি।

এ কৃষক উপকরণ হিসেবে পাঁচ কেজি বীজ ধান, ১০ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি এমওপি, ১০ কেজি টিএসপি সার ও একটি সাইনবোর্ড পান। এসব উপকরণের সর্বোচ্চ বাজারমূল্য এক হাজার টাকা।

রফিক বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে যেগুলো দেয়, এতে আমাদের কিছুই হয় না। কৃষি অফিসের প্রদর্শনী করে আমাদের নিজেদের হাত থেকে আরও অনেক খরচ হয়।’

এ প্রদর্শনীতে রফিকের অনূকূলে ১২ হাজার টাকার উপকরণ বরাদ্দ দেখায় উপজেলা কৃষি অফিস।

তাড়াইল উপজেলায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বোরো ধান, আউশ, আমন ও সরিষার ১০০টি প্রদর্শনী বরাদ্দ আসে। রাজস্ব খাতের এসব প্রদর্শনীতে বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ১২ লাখ টাকা।

১০০ প্রদর্শনীর মধ্যে প্রায় ৫০টি বাস্তবায়ন না করার অভিযোগ পাওয়া যায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

বীজ গ্রাম প্রদর্শনী

এডিবির অর্থায়নে ফ্রিপ প্রকল্পের বীজ গ্রামের প্রদর্শনী করেন তাড়াইল উপজেলার আড়াইউড়া গ্রামের শামীম, কাইয়ুম, শফিক, বাদল ও কামরুল। প্রদর্শনী এলাকার জমির পরিমাণ পাঁচ একর দেখানো হলেও তা এক থেকে দেড় একর।

সাইনবোর্ডে ধানের জাত বিনা-১৭ লেখা থাকলেও খানিকটা জায়গা ছাড়া বাকি জমিগুলো অন্যান্য কৃষকের। তারা সেখানে ভিন্ন ভিন্ন ধানের চাষ করেন।

বীজ গ্রামের নির্দেশনার কোনো কিছুই মানা হয়নি প্রদর্শনীতে। মূলত প্রদর্শনীতে নাম থাকা কৃষকদের কিছু বীজ, সার, ড্রাম দিয়ে বীজ গ্রাম প্রদর্শনী বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে।

কৃষকদের ভাষ্য, তারা সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার উপকরণ পান। অথচ এ প্রদর্শনীর ব্যয় ধরা হয় দেড় লাখ টাকা।

কৃষকদের মধ্যে শামীমের নামে ময়মনসিংহ প্রকল্পেরও একটি একক ধানের প্রদর্শনী রয়েছে। বীজ গ্রামের পশ্চিম পাশের জমিটি আবার ময়মনসিংহ প্রকল্পের প্রদর্শনী। সে জমিতে শামীম চাষাবাদ করেন।

শামীমের নামে ফ্রিপ ও ময়মনসিংহ প্রকল্পের প্রদর্শনী থাকার পরও তার স্ত্রী ফরিদার নামে দেয়া হয়েছে অনাবাদি প্রকল্পের একটি সবজি বাগান প্রদর্শনী।

শামীম-ফরিদা দম্পতির সঙ্গে কথা বলে জানায়, বরাদ্দকৃত অর্থ বা উপকরণের তেমন কিছুই পাননি তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, একই পরিবারের সদস্যদের ভিন্ন ভিন্ন প্রদর্শনী বরাদ্দ দিয়ে কৃষি উপকরণ বিতরণে অনিয়ম করেন কৃষি কর্মকর্তা।

ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) উৎপাদন প্রদর্শনী

তাড়াইল উপজেলায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ফ্রিপ প্রকল্পের দুটি ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন প্রদর্শনী বরাদ্দ আসে, যার একটি পান জাওয়ার ইউনিয়নের বেলংকা গ্রামের আবদুল হেকিম।

তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সবেমাত্র ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, তবে সেখানে কেঁচো সার উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। তা ছাড়া ভার্মী কম্পোস্ট স্থাপনের যেসব নির্দেশনা আছে, সেগুলোও মানা হয়নি।

বাড়িতে এ কৃষককে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মোবাইল ফোনে কথা হলে আবদুল হেকিম জানান, ছয় মাস ধরে গাজীপুরের কালীগঞ্জে অবস্থান করছেন তিনি। কিছুদিন আগে ঘর নির্মাণের সময় বাড়িতে এসেছিলেন। আবার ১৫ দিন পর এসে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করবেন তিনি।

কৃষি অফিস থেকে কী পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপাতত একটা ঘর ছাড়া আর কিছুই পাইনি।’

যে ঘরটি পেয়েছেন তাতে কী পরিমাণ খরচ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঘরটি করতে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে ধারণা তার।

এ কৃষকের প্রদর্শনীতে ব্যয় ধরা ছিল দুই লাখ টাকা। এর বিপরীতে একটি শেড তৈরি করা হয়। বাকি অর্থ ব্যয় করেননি কৃষি কর্মকর্তা।

দুটি ভার্মি কম্পোস্টের অপরটি পান সেকান্দরনগর গ্রামের বাসিন্দা রানা মিয়া। মোটামুটি সব প্রকল্পেরই একটি করে প্রদর্শনী পান তিনি। এর মধ্যে ফ্রিপ প্রকল্পের একটি ভার্মি কম্পোস্ট ও বস্তায় আদা চাষ প্রদর্শনী, ময়মনসিংহ প্রকল্পের একটি ভার্মি কম্পোস্ট, অনাবাদি প্রকল্পের একটি সবজি বাগান রয়েছে তার বাড়িতে।

রানা জানান, সার উৎপাদনের জন্য ঘর নির্মাণ করে তাকে কিছু কেঁচো দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা। এর বাইরে আর কিছুই জানেন না তিনি।

এ কৃষকের প্রকল্পের জায়গাতে ঘর পাওয়া গেলেও সেখানে কেঁচো উৎপাদন শুরুই হয়নি।

রানা মিয়ার দাবি, তাকে সবকিছু দেয়া হয়েছে।

প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ জানা নেই বলে দাবি করেন এ কৃষক।

প্রকল্পের প্রতিটি ভার্মি কম্পোস্ট প্রদর্শনীতে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও কৃষকেরা তার অর্ধেকও পাননি।

দুই কৃষকের বাড়িতে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন প্রদর্শনীর ঘরের কাজ সবে শেষ করা হলেও সাইনবোর্ডে স্থাপনের তারিখ দেয়া আছে চলতি বছরের ৩০ জুন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, এ দুটি ভার্মি কম্পোস্ট প্রদর্শনী স্থাপন না করে আত্মসাৎ করার পাঁয়তারা করছিলেন কৃষি কর্মকর্তা, কিন্তু উপ-পরিচালকের কার্যালয় থেকে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেয়া হলে তড়িঘড়ি করে বাস্তবায়ন করেন তিনি।

কৃষি অফিসের এ কর্মকর্তা আরও জানান, একই অর্থবছরে ময়মনসিংহ প্রকল্পের আরও ছয়টি ভার্মি কম্পোস্ট প্রদর্শনীর বরাদ্দ আসে তাড়াইল উপজেলায়। এগুলোরও বেশির ভাগ নামমাত্র বাস্তবায়ন করার অভিযোগ রয়েছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

পার্টনার প্রকল্প

তাড়াইলের নন্দীপুর গ্রামের মাসুদা বেগম, নায়না, রিনা, শিবলী আর জাহানারা বেগম মিলে করেন কমিউনিটি বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি প্রদর্শনী।

তারা জানান, প্রত্যেককে পাঁচ কেজি করে বীজ, পাঁচ কেজি করে ইউরিয়া সার, দুটি করে ড্রাম আর দুটি কীটনাশকের বোতল ছাড়া কিছুই দেয়া হয়নি। তারা যেগুলো পেয়েছেন, সেগুলোর বাজারমূল্য সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা। অথচ তাদের অনূকূলে বরাদ্দ দেখানো হয় ৫০ হাজার টাকা।

তাদের মধ্যে জাহানারা বেগমের নামে একটি রোপা আমন বীজ উৎপাদন প্রদর্শনী রয়েছে। সে প্রকল্পে একটি সাইনবোর্ড ছাড়া কিছুই পাননি জাহানারা।

শুধু তাড়াইল উপজেলাতেই ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে আটটি পার্টনার ফিল্ড স্কুলের জন্য আট লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। সেগুলোর বেশির ভাগ নামমাত্র বাস্তবায়নের পাশাপাশি কৃষকদের খাবার ও নাশতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

বসতবাড়িতে সবজি চাষ ও একক ফল বাগান

বাড়ির পাশে এক খণ্ড জমিতে অনাবাদি প্রকল্পের অধীনে মাচায় সবজি চাষ করেন তালজাঙ্গা ইউনিয়নের আড়াইউড়া গ্রামের ফরিদা বেগম। তার বাগানে টাঙানো ছিল কৃষি অফিসের সাইনবোর্ড।

ফরিদার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।

এ কিষাণী জানান, একটি সাইনবোর্ড, চারটি ফট (ফেরোমন ট্র্যাপ) আর কিছু কীটনাশক পেয়েছেন। এ ছাড়া বাগানের সবকিছুই তার নিজস্ব খরচে করা।

তার অভিযোগ, হাঁস-মুরগি বাগানের অনেক কিছু নষ্ট করে ফেলেছে। একটি নেট আবদার করেও পাননি। এমন পরিস্থিতিতে নিজের খরচে বাঁশ, নেট, মাচা তৈরি করেছেন এ নারী। অথচ তার অনূকূলে কৃষি অফিসের স্টক রেজিস্টারে বীজ ও চারা, রাসায়নিক সার, জৈব সার বরাদ্দ ও পরিবহন খরচ দেখানো হয়েছে।

একই ইউনিয়নের বাঁশাটি গ্রামের সাইফুল ইসলাম বিগত কয়েক বছর ধরে রাস্তার পাশের একটি জমিতে লাউ, কুমড়া চাষবাদ করেন। বছরখানেক আগে জমিটিতে কুমড়া লাগিয়েছিলেন। কুমড়া শেষ করে এখন চাষ করেছেন লাউ।

তিনি জানান, কয়েক দিন আগে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এসে তাকে বললেন, ‘আপনাকে একটা সাইনবোর্ড দিই।’ তিনিও তার কথায় রাজি হলেন।

সাইফুল জানান, সাইনবোর্ড লাগিয়ে তিনি পড়েন বিপদে। সারাক্ষণ লোকজন তাকে কী পেয়েছেন, তা জিজ্ঞাসা করেন।

ফরিদার মতো সাইফুলও ময়মনসিংহ প্রকল্পের একটি সাইনবোর্ড আর চারটি ফেরোমন ট্র্যাপ ছাড়া আর কিছুই পাননি। তার অনূকূলেও কৃষি অফিসের স্টক রেজিস্টারে বীজ ও চারা, রাসায়নিক সার, জৈব সার, পরিবহন খরচ বরাদ্দ দেখানো হয়েছে।

ফ্রিপ প্রকল্পের একক ফল বাগানের প্রদর্শনী করেন দড়ি জাহাঙ্গীরপুর এলাকার রহিমা আক্তার। সেখানে গিয়ে কথা হয় তার স্বামী আবুল খায়েরের সঙ্গে।

খায়ের জানান, এ প্রদর্শনীতে ৪০টি আমের চারা, কিছু সার আর অল্প কিছু কীটনাশক পান। তার অনূকুলে ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও তিনি সব মিলিয়ে পান ৪০টি আমের চারাসহ সাড়ে ৪ হাজার টাকার উপকরণ।

প্রদর্শনীতে বরাদ্দের পরিমাণ জানা ছিল না এ কৃষকের।

মসলাজাতীয় ফসল উৎপাদন প্রদর্শনী

বস্তায় আদা চাষের প্রদর্শনী করেন ঘোষপাড়া এলাকার শামসুল আলম রানা। কৃষি অফিস থেকে তার নামে ৪৪ হাজার টাকার উপকরণ বরাদ্দ দেখানো হলেও তিনি পান ৫ কেজি আদা আর ২০০ সাদা বস্তা।

তার অভিযোগ, কৃষি অফিস থেকে আদার যেসব বীজ পান, সেগুলো পচা। আর বস্তাগুলো ছেঁড়া। পরে নিজ উদ্যোগে সবকিছু কিনে বস্তায় আদা চাষ করেন তিনি।

তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্যাটার্নভিত্তিক একক প্রদর্শনী করেন বেলংকা গ্রামের জিয়াউর রহমান।

তিনি এ প্রদর্শনীতে পান পাঁচ কেজি বীজ ধান, এক বস্তা ডিপ সার, ১০ কেজি পটাশ আর ১৫ কেজি জৈব সার।

এ কৃষকের ভাষ্য, প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ জানা নেই তার। কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের কথা অনুযায়ী স্বাক্ষর করেন তিনি।

প্রকল্পটিতে প্রথমে ধানের প্রদর্শনী শেষে একই জমিতে একটি সরিষা এবং একটি ধানের প্রদর্শনী পাবেন তিনি। অর্থাৎ পরপর তিনটি প্রদর্শনী থাকবে তার নামে।

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের ৫০টি প্রদর্শনীতে সাত লাখ ৩১ হাজার ৮০০ টাকা বরাদ্দ দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এগুলোরও কয়েকটি নামমাত্র বাস্তবায়ন করে বাকি অর্থ নিজের কাছে রেখে দেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

গ্রুপ গঠন

কৃষকদের নিয়ে গ্রুপ গঠনেও বরাদ্দের টাকায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে কৃষি কর্মকর্তা সুমন সাহার বিরুদ্ধে।

বেশ কয়েকজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, এখানে প্রতিটি গ্রুপ গঠনে পাঁচ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও কৃষকদের বিকাশ নম্বরে ৪৫০ টাকা করে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি গ্রুপে ৩০ জন সদস্য রয়েছে, যাদের মধ্যে ২০ পুরুষ কৃষক ও ১০ নারী কৃষক।

চলতি অর্থবছরে ৬৩টি গ্রুপ গঠনে তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এখান থেকেও প্রায় পৌনে ৩ লাখ টাকা তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গ্রুপ গঠন প্রকল্পে ১ হাজার ৮৯০ জন কৃষকের খাতা, কলম ও নাশতার জন্য বরাদ্দ ছিল।

প্রান্তিক চাষিদের ক্ষোভ

তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন সাহার ওপর ক্ষুব্ধ ঘোষপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুল গাফফার।

বাবার আমল থেকে কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল ও নিজেকে কঠোর পরিশ্রমী দাবি করা এ কৃষকের অভিযোগ, ‘যারা নিজেরা জমি চাষাবাদ করেন না, চাষাবাদ কীভাবে করতে হয়, সেটাও জানেন না, সারা দিন প্যান্ট পরে ঘোরাফেরা করে, তারাই প্রদর্শনী পায়। অথচ সারা জীবনেও কৃষির কোনো প্রদর্শনী পাইনি।

‘নিজ খরচে যেগুলো চাষাবাদ করি, সেগুলোতে কোনো সমস্যা হলে কৃষি কর্মকর্তাদের ডেকেও পাই না।’

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক দামিহা এলাকার এক কৃষকের অভিযোগ, মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা ও অফিসের সঙ্গে যাদের নিয়মিত যোগাযোগ, ঘুরেফিরে সব প্রদর্শনী ও প্রশিক্ষণ তারাই পেয়ে থাকেন।

আবদুল গাফফারের মতো তারও অভিযোগ, প্রকৃতপক্ষে যারা কৃষক এবং কৃষিকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের কারও খোঁজখবরও নেন না কর্মকর্তারা, কিন্তু যারা নিয়মিত অফিসে দৌড়াদৌড়ি করেন, প্রদর্শনী পান তারাই।

তিনি বলেন, ‘কৃষি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেও আরেক সমস্যা।’

কী সমস্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে পরবর্তীতে (পরবর্তী সময়ে) আর কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।’

বরাদ্দের পরিমাণ জানেন না, দাবি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের

তাড়াইল উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দিলুফা আক্তার জানান, প্রথমে কৃষক নির্বাচন করে স্লিপ দিয়ে তাকে উপজেলা কৃষি অফিসে পাঠানো হয়। তারপর সেখান থেকে স্টক রেজিস্টারে স্বাক্ষর রেখে কৃষকের নামে বরাদ্দকৃত সব উপকরণ বুঝিয়ে দেয়া হয়।

দিলুফার ভাষ্য, কোন কৃষকের বরাদ্দের পরিমাণ কত, তা জানেন না তিনি। যা করার সবকিছু উপজেলা অফিস থেকেই সমন্বয় করা হয়।

একই বক্তব্য আরেক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা খলিলুর রহমান মিলনের।

তিনি জানান, তারা শুধু কৃষক নির্বাচন করে উপজেলা কৃষি অফিসে পাঠান। এর বাইরে কোনোকিছুতে তাদের হাতে নেই।

তাড়াইল উপজেলা কৃষি অফিসের সর্বজ্যেষ্ঠ উপ-সহকারী কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম। বিগত ৩৫ বছর ধরে কৃষকদের নিয়ে কাজ করছেন তিনি। এখন তার অবসরে যাওয়ার পালা।

এ কর্মকর্তার দাবি, তিনি জানেন না কোন প্রদর্শনীতে বরাদ্দের পরিমাণ কত।

তার ভাষ্য, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাদের সেটা জানান না। জানতে চাওয়ার সুযোগও নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ফ্রিপ, ময়মনসিংহ, পার্টনার, রাজস্ব ও অনাবাদি প্রকল্প থেকে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার সাহা।

কীভাবে আত্মসাৎ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের মোট প্রদর্শনীর প্রায় অর্ধেকের মতো বাস্তবায়ন করেননি সুমন। যেগুলো বাস্তবায়ন করেছেন, সেগুলোতে নামেমাত্র কিছু উপকরণ দিয়ে কৃষকদের বঞ্চিত করা হয়েছে।’

ফাঁকা রেজিস্টার খাতায় স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এবং কৃষকদের যেখানে স্বাক্ষর নেয়া হয়, সেই রেজিস্টার খাতাটি মূলত ফাঁকা থাকে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা সই করার পর অফিস সহকারী দিয়ে সেখানে বরাদ্দের পরিমাণ লিখে নেন কৃষি কর্মকর্তা। এর ফলে কোন খাতে বা কোন প্রদর্শনীতে কৃষকের অনূকূলে বরাদ্দের পরিমাণ কী, তা জানার সুযোগ থাকে না।

এ কর্মকর্তার বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায় স্টক রেজিস্টার দেখে।

অভিযুক্ত কৃষি কর্মকর্তার ভাষ্য

প্রকল্পে অনিয়মের সব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার সাহা বলেন, ‘কৃষক শনাক্ত করা থেকে শুরু করে সকল কিছু বাস্তবায়ন করেন উপ-সহকারী কর্মকর্তারা। যদি কোনো উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অনিয়ম করে থাকেন, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের বক্তব্যের বিষয়টি তুলে ধরা হলে তিনি বলেন, ‘উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই সবকিছু বাস্তবায়ন করা হয়। তারা সকল মালামাল বুঝে নিয়ে স্টক রেজিস্টারে সই করে থাকেন।’

মালামাল বুঝে নেয়ার আগে ফাঁকা খাতায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকদের সই নেয়ার বিধান আছে কি না, জানতে চাইলে সুমন চুপসে যান। এরপর একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘এমনটার সুযোগ নেই।’

কী বলছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এই কর্মকর্তার (সুমন সাহা) বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর তাকে শোকজ করা হয়েছে। সেই সাথে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

‘তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে তার অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে। তার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন:
‘বাপো, হামার বয়স্ক ভাতার ট্যাকা মেরে দিসে দোকানদার’
বন্যায় ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় যমুনা পাড়ের কৃষকরা
পরিচালকের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা ও এতিমখানার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
ঝালকাঠির দুই উপজেলায় জয়ী বাচ্চু ও মনির
আনসার সদস্যকে মারধর, চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মীর কারাদণ্ড

মন্তব্য

রেস-জেন্ডার
Relatives objection to the removal of the body hinders the investigation of the case
গোলাপগঞ্জে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ৬

মরদেহ তুলতে স্বজনদের ‘আপত্তি’, মামলার তদন্তে বিঘ্ন

মরদেহ তুলতে স্বজনদের ‘আপত্তি’, মামলার তদন্তে বিঘ্ন ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট গোলাপগঞ্জে গুলিতে নিহত ছয়জন- নাজমুল ইসলাম, হাসান আহমদ জয়, সানি আহমদ, তাজ উদ্দিন, মিনহাজ আহমদ ও গৌছ উদ্দিন। কোলাজ: নিউজবাংলা
সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানার ওসি মীর মো. আব্দুন নাসের বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা আমরা পেয়েছি। এ ব্যাপারে উদ্যোগও নেয়া হয়েছিল। তবে নিহতদের স্বজনরা কবর থেকে মরদেহ উত্তোলনে আগ্রহী নন। এ ব্যাপারে আদালতে তারা আবেদন করবেন বলেও জানিয়েছেন। এখন ময়না তদন্ত না হলে তদন্তে সমস্যা হবে।’

ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট সিলেটের গোলাপগঞ্জে গুলিতে ছয়জন প্রাণ হারান। সে সময়ের প্রেক্ষাপটে মরদেহের তদন্ত ছাড়াই এই ছয়জনের মরদেহ দাফন করা হয়। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ওই ঘটনায় মামলা করে নিহতদের পরিবার।

মামলার তদন্তে নেমে পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্তের জন্য নিহতদের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনের নির্দেশ দেয় আদালত।

আদালতের এই নির্দেশনা প্রায় দেড় মাসেও তামিল হয়নি। পুলিশের দাবি, মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনে নিহতদের স্বজনরা আগ্রহী নন। তাই আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে এসব মামলার ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, গত ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর পৃথকভাবে সিলেটের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আবিদা সুলতানা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয়জনের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনের আদেশ দেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট গোলাপগঞ্জে গুলিতে নিহত হন উপজেলার নিশ্চিন্ত গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে নাজমুল ইসলাম, দক্ষিণ রায়গড় গ্রামের মৃত সুরই মিয়ার ছেলে হাসান আহমদ জয়, শিলঘাট গ্রামের কয়ছর আহমদের ছেলে সানি আহমদ, বারকোট গ্রামের মৃত মকবুল আলীর ছেলে তাজ উদ্দিন, দত্তরাইল বাসাবাড়ি এলাকার আলাই মিয়ার ছেলে মিনহাজ আহমদ ও ঘোষগাঁও ফুলবাড়ি গ্রামের মোবারক আলীর ছেলে গৌছ উদ্দিন।

ওই হত্যার ঘটনায় গোলাপগঞ্জ থানায় পৃথকভাবে ছয়টি ও আদালতে একটি মামলা করা হয়। সবক’টি মামলায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়।

গোলাপগঞ্জ থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তৎকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায় নিহত ছয়জনের কারও মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়নি। পরবর্তী সময়ে মামলা হলে তদন্তকারী কর্মকর্তারা আদালতে মরদেহ ময়নাতদন্তের আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর থেকে মরদেহ তোলার আদেশ দেয় আদালত।

এ ব্যাপারে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আনোয়ার উজ জামান বলেন, ‘আদালতের আদেশ পাওয়ার পর চলতি মাসের শুরুতে চারটি মরদেহ কবর থেকে তোলার জন্য চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

‘এর মধ্যে নিহত গৌছ উদ্দিনের মরদেহ তোলার দায়িত্বে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার জনি রায়, নাজমুল ইসলামের মরদেহ উত্তোলনের দায়িত্বে জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার জর্জ মিত্র চাকমা, হাসান আহমদের মরদেহ তোলার দায়িত্বে জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ও সানি আহমদের মরদেহ উত্তোলনের দায়িত্বে রয়েছেন সহকারী কমিশনার মো. মাসুদ রানা।

গোলাপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মো. আব্দুন নাসের শনিবার বলেন, ‘মরদেহ উত্তোলনের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা আমরা পেয়েছি। এ ব্যাপারে উদ্যোগও নেয়া হয়েছিল। তবে নিহতদের স্বজনরা আমাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছেন যে তারা কবর থেকে মরদেহ উত্তোলনে আগ্রহী নন। এ ব্যাপারে আদালতে তারা আবেদন করবেন বলেও জানিয়েছেন। তাদের আপত্তির কারণে মরদেহ উত্তোলন কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘হত্যা মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে ময়না তদন্ত প্রতিবেদন খুবই গুরুত্বপূর্ণ দলিল। ঘটনার সময় ময়না তদন্ত ছাড়াই নিহতদের মরদেহ দাফন করা হয়েছিলো। এখন ময়না তদন্ত করা না গেলে মামলার তদন্তে সমস্যা হবে।’

ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোর একটির বাদী নিহত গৌছ উদ্দিনের ভাই মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘কবর থেকে লাশ না তুলতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেটের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আবিদা সুলতানার আদালতে আমি আবেদন করেছি। তবে আদালত এখনও এ ব্যাপারে কোনো আদেশ দেননি।’

আরও পড়ুন:
অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ঘটনা: ছাত্র-জনতাকে দায়মুক্তি দিল সরকার 
গণহত্যার সমর্থক-জড়িত সাংবাদিকদের বিচার হবে: নাহিদ
ঢামেক হাসপাতালে আহতদের পাশে দুই উপদেষ্টা, অর্থ সহায়তা
চলে গেলেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ জীবন
অভ্যুত্থানে নিহত প্রতিটি শিশুর পরিবার পাবে পঞ্চাশ হাজার টাকা

মন্তব্য

রেস-জেন্ডার
Madans Farmers League leader was caught trying to trap UNO

ইউএনওকে ফাঁসাতে গিয়ে ফাঁসলেন মদনের কৃষক লীগ নেতা

ইউএনওকে ফাঁসাতে গিয়ে ফাঁসলেন মদনের কৃষক লীগ নেতা কৃষক লীগ নেতার অভিযোগপত্র (ডানে); পাল্টা অভিযোগপত্র। কোলাজ: নিউজবাংলা
মদন উপজেলা শাখা কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল আলম কামাল মণ্ডল প্রতিবেশী খায়রুল ইসলামের নাম ব্যবহার করে ইউএনওর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ দেন জেলা প্রশাসকের কাছে। এ খবর জানতে পেরে খায়রুল উল্টো ওই কৃষক লীগ নেতার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে নালিশ দিয়েছেন।

নেত্রকোণার মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আলম মিয়াকে ফাঁসাতে গিয়ে ফেঁসে গেছেন নূরুল আলম কামাল মণ্ডল নামে এক কৃষক লীগ নেতা।

জানা গেছে, ওই কৃষক লীগ নেতা প্রতিবেশী খায়রুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে ইউএনওর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ দেন জেলা প্রশাসকের কাছে। পরে ওই অভিযোগের সূত্রে গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ হয়। এ নিয়ে এলাকায় শুরু হয় তোলপাড়।

প্রতারণা করে তার নাম ব্যবহার করে মিথ্যা অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরে খায়রুল ইসলাম চট্টগ্রাম থেকে সম্প্রতি এলাকায় এসেছেন। খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারেন যে তার নাম ব্যবহার করে কৃষক লীগ নেতা নূরুল আলম কামাল মণ্ডল ইউএনওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় ওই কৃষক লীগ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেন খায়রুল ইসলাম।

রোববার সকালে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস।

খায়রুল ইসলাম নেত্রকোণার মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের মৃত সুলতু মিয়ার ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই চট্টগ্রামে পরিবারসহ বসবাস করেন এবং সেখানে দিনমজুরের কাজ করেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত নূরুল আলম কামাল মণ্ডল মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের মাওলানা আব্দুল মন্নাফের ছেলে। তিনি মদন উপজেলা শাখা কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।

স্থানীয় লোকজন ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জলমহাল থেকে রাজস্ব আত্মসাতের কথা উল্লেখ করে গত ৪ সেপ্টেম্বর মদনের ইউএনওর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন গোবিন্দশ্রী গ্রামের খায়রুল ইসলাম। কিন্তু খায়রুল ইসলাম কয়েক বছর ধরে জীবিকার তাগিদে পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামে বসবাস করছেন। ইউএনওর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

খায়রুল ইসলাম নিরক্ষর। জাতীয় পরিচয়পত্রে তার টিপসহি থাকলেও অভিযোগে খায়রুল ইসলামের স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে খায়রুল ইসলামের সঙ্গে স্থানীয় সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা যোগাযোগ করেন। খবর পেয়ে তিনি চট্টগ্রাম থেকে মদনে আসেন। পরে জানতে পারেন তার নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে কৃষক লীগ নেতা গোবিন্দশ্রী গ্রামের প্রতিবেশী নূরুল আলম কামাল মণ্ডল ইউএনওর বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ দায়ের করেছেন।

প্রতারণা করে হয়রানি করার জন্য কামালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে ২ অক্টোবর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন খায়রুল ইসলাম।

খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাই। ছয় মাস আগে একবার বাড়িতে এসেছিলাম। এর পর আর বাড়ি আসা হয়নি। এখন আমার নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে ইউএনও স্যারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমি তো ইউএনও স্যারকে চিনি না। জীবনে কখনও তাকে দেখিনি। আমি জীবনে ডিসি স্যারের অফিসেও যাইনি।’

তিনি বলেন, ‘বাড়িতে এসে জানতে পারলাম প্রতিবেশী কৃষক লীগ নেতা কামাল মণ্ডল আমার নাম ব্যবহার করে ডিসি অফিসে অভিযোগ করেছেন। ওই ভুয়া অভিযোগপত্রে দেখলাম আমার স্বাক্ষর রয়েছে। অথচ আমি নিরক্ষর মানুষ, ভোটার আইডিতেও টিপসহি দিয়েছি। তাই এই ঘটনায় জড়িত কামাল মণ্ডলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ডিসি মহোদয়ের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। আমি চাই এমন প্রতারণা করার সাহস আর কেউ যেস না করে।’

গোবিন্দশ্রী গ্রামের মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘কৃষক লীগ নেতা কামাল মণ্ডল দলীয় প্রভাবে এলাকার খাল ও খাস জমি দখল করে বিক্রি করেছেন। প্রভাব টিকিয়ে রাখতে কয়েক মাস আগে তিনি সাংবাদিক পরিচয়ে কার্ডও নিয়েছেন। খায়রুল ইসলামের মতো একজন নিরীহ মানুষের নাম ব্যবহার করে ইউএনওর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করার আমরা প্রতিবাদ জানাই।’

অভিযুক্ত কৃষক লীগ নেতা কে এইচ এম নূরুল আলম কামাল বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এটা কাদা ছোড়াছুড়ি ছাড়া আর কিছু নয়।’

মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহ আলম মিয়া বলেন, ‘গত মাসে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ার খবর শুনেছি। আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে প্রশাসন অবশ্যই আমার বিরুদ্ধে যথাযথ নেবে। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কেউ এ কাজ করে থাকলে তদন্তের মাধ্যমে তা বের হয়ে আসুক। অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে যেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়।’

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, ‘দুটি অভিযোগই পেয়েছি। তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

আরও পড়ুন:
ছাত্র আন্দোলনে নাশকতার মামলায় নেত্রকোণার পৌর কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
শ্রম-সংক্রান্ত অভিযোগ পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন
নেত্রকোণার সাবেক পৌর মেয়র বিমানবন্দরে আটক
নেত্রকোণায় চাঁদাবাজির অভিযোগে বিএনপি নেতা বহিষ্কার
নেত্রকোণায় ‘ভুল বুঝিয়ে’ থানায় অপমৃত্যুর অভিযোগ, স্থানীয়দের ক্ষোভ 

মন্তব্য

রেস-জেন্ডার
Irregularity in allocation money against upazila agriculture officer

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বরাদ্দের টাকায় অনিয়মের অভিযোগ

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বরাদ্দের টাকায় অনিয়মের অভিযোগ নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন। ছবি: নিউজবাংলা
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনটি বরাদ্দে ১০০টি বেডের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ এলেও জানেন না কৃষকরা। আলাদা তিনটি স্মারকে বরাদ্দের তিনটি কপি এসেছে নিউজবাংলার প্রতিবেদকের হাতে, যেগুলোর একটিও বাস্তবায়ন করেননি এ কর্মকর্তা। 

কিশোরগঞ্জে কৃষকের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনটি বরাদ্দে ১০০টি বেডের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ এলেও জানেন না কৃষকরা।

আলাদা তিনটি স্মারকে বরাদ্দের তিনটি কপি এসেছে নিউজবাংলার প্রতিবেদকের হাতে, যেগুলোর একটিও বাস্তবায়ন করেননি এ কর্মকর্তা।

কৃষকদের জন্য ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বরাদ্দের পুরোটাই এ কর্মকর্তা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০২৪ সালে একটি স্পেশাল বরাদ্দ আসে কিশোরগঞ্জে। সেটিও এ কর্মকর্তা ভাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। এ বরাদ্দে ছিল চার লাখ ৬০ হাজার টাকা।

এসবের বাইরে কৃষকের মাঠ দিবস, প্রশিক্ষণের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত সাখাওয়াত হোসেন ২০২৩ সালের ২৮ মে থেকে নিকলী উপজেলায় কর্মরত।

প্রকল্পগুলো কী ও বরাদ্দের পরিমাণ কত

কৃষি সম্প্রসারণের আওতাধীন ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের অনুকূলে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ভাসমান বেডে মসলা, লতাজাতীয় ও লতাবিহীন সবজি প্রদর্শনী রাজস্ব ব্যয় বাবদ নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অনুকূলে ব্যয় মঞ্জুরিসহ চার লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। লতাজাতীয় ২৩টি প্রদর্শনীর জন্য দুই লাখ ৩০ হাজার (প্রতিটি প্রদর্শনীর ব্যয় ১০ হাজার) টাকা ও লতাবিহীন ২৩টি প্রদর্শনীর জন্য দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০২৪ সালের ২ মে পাওয়া এ বরাদ্দের একটি প্রদর্শনীও বাস্তবায়ন করা হয়নি।

ভাসমান বেডে লতাজাতীয় সবজি ও লতাবিহীন সবজি প্রদর্শনীর জন্য ২০২৪ সালের ২১ মে নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অনুকূলে ব্যয় মঞ্জুরিসহ বরাদ্দ দেয়া হয় তিন লাখ টাকা।

ভাসমান বেডে মসলা প্রদর্শনীতে পাঁচটিতে বরাদ্দ ৫০ হাজার টাকা (প্রতিটি প্রদর্শনীতে ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ)। ভাসমান বেডে লতাজাতীয় সবজি প্রদর্শনীর জন্য ১০টি প্রদর্শনীতে বরাদ্দ প্রদান করা হয় ১ লাখ টাকা। এ ছাড়াও ভাসমান বেডে লতাবিহীন সবজির ১৫টি প্রদর্শনীতে বরাদ্দ প্রদান করা হয় দেড় লাখ টাকা। এখানে ৩০টি প্রদর্শনীতে মোট তিন লাখ টাকা বরাদ্দের একটি প্রদর্শনীও বাস্তবায়ন করা হয়নি।

একই বছরের ৬ জুন ভাসমান বেডে মসলা প্রদর্শনীর ১১টিতে বরাদ্দ ১ লাখ ১০ হাজার টাকা (প্রতিটি প্রদর্শনীতে ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ)। ভাসমান বেডে লতাজাতীয় সবজি প্রদর্শনীর জন্য ৯টি প্রদর্শনীতে বরাদ্দ প্রদান করা হয় ৯০ হাজার টাকা।

এ ছাড়াও ভাসমান বেডে লতাবিহীন সবজি চারটি প্রদর্শনীতে বরাদ্দ প্রদান করা হয় ৪০ হাজার টাকা। এখানে ২৪টি প্রদর্শনীতে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দের একটি প্রদর্শনীও বাস্তবায়ন করা হয়নি।

কোন খাতে কী বরাদ্দ জানেন না উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, প্রদর্শনীর বিভিন্ন উপকরণ ক্রয় বাবদ সরকার বরাদ্দ দেয় উপজেলা কর্মকর্তা বরাবর। প্রদর্শনী অনুযায়ী কৃষক নির্বাচন করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে। তারা কৃষক নির্বাচন করে নিশ্চিত করেন উপজেলা কর্মকর্তাকে।

একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে উপসহকারীদের সঙ্গে সমন্বয় করার কথা।

নিয়ম অনুযায়ী, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষক নির্বাচন করে উপজেলা অফিসে জমা দেবেন। পরবর্তী সময়ে কৃষি কর্মকর্তা উপকরণ কিনে নির্ধারিত একটি তারিখে কৃষকদের অফিসে আসতে বলবেন। পরে সেখান থেকে উপকরণ বিতরণ রেজিস্ট্রারে (স্টক রেজিস্ট্রার) সাক্ষর রেখে মালামাল বুঝিয়ে দেয়া হয় কৃষককে। এ ক্ষেত্রে তিনি কোনো উপসহকারীর সঙ্গে সমন্বয় করেননি।

সমন্বয় না করলে প্রদর্শনীতে কী কী উপকরণ বরাদ্দ এসেছে সেগুলো উপসহকারী কর্মকর্তা কিংবা কৃষকদের জানারও সুযোগ থাকে না।

নিকলী সদর ইউনিয়নের ষাইটধার গ্রামের কৃষক মিয়া হোসেন জানান, বিগত দুই বছর পূর্বে ৮০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছিলেন তিনি। তখন ১০ কেজি বীজ, এক বস্তা ইউরিয়া আর এক বস্তা ডিএপি সার ছাড়া কিছুই পাননি। এরপর আর তার অনুকূলে কোনো বরাদ্দ আসেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিকলী উপজেলার গুরই, সিংপুর ও সদর ইউনিয়নের একাধিক কৃষক জানান, অন্যান্য বছর আগস্টের মধ্যেই তাদের ভাসমান বেড তৈরির বরাদ্দ দেয়া হতো। এবার তাদের কাউকেই কোনো প্রকার বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে তারা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করার পর তাদের জানানো হয়েছে, এ বছরের বরাদ্দ আসেনি।

কৃষকরা জানান, বরাদ্দ এলে তাদের দেয়া হবে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

প্রান্তিক কৃষকদের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান শুরু করে নিউজবাংলা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে কৃষি সম্প্রসারণের আওতাধীন ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের আওতায় আলাদা তিনটি বরাদ্দে ১০০টি বেডের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। আলাদা তিনটি স্মারকে বরাদ্দের তিনটি কপি আসে এ প্রতিবেদকের হাতে, যেগুলোর একটিও বাস্তবায়ন করেননি এ কর্মকর্তা।

অভিযুক্ত কৃষি কর্মকর্তার ভাষ্য

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বরাদ্দ আসার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করেন। খানিকটা পর বলেন, ‘কয়েকটা ছোট বরাদ্দ এসেছে। পানি বেশি থাকায় সেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। অচিরেই সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।’

একপর্যায়ে বরাদ্দের কপি দেখানোর পর বিশেষ বরাদ্দের টাকা উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, কৃষি সম্প্রসারণের আওতাধীন ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের তৎকালীন উপ প্রকল্প পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বিবেকানন্দ হীরা তার ব্যাচমেট। হঠাৎ একদিন হীরা তাকে ফোনে বলেন, ‘তোমার নামে একটি স্পেশাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তুমি বরাদ্দের টাকাটা উত্তোলন করে আমাকে পাঠিয়ে দাও। অফিসের বিভিন্ন আনুষঙ্গিক খরচে সেটি ব্যয় করা হবে।’ তিনিও তার কথামতো সেটি করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আপনারাও তো বোঝেন, অনেক সময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেক কিছুই করতে হয়। আমিও সেটি করেছি।

‘তারপরও বিষয়টি যেহেতু আপনাদের নজরে চলে এসেছে আমি তার সাথে কথা বলে অচিরেই বাস্তবায়ন করে নেব।’

এ কথার একপর্যায়ে তিনি ফোনে কথা বলেন হীরা নামের ওই কর্মকর্তার সঙ্গে।

সাখাওয়াত তাকে বলেন, ‘তুমি যে একটা স্পেশাল বরাদ্দ দিয়েছিলে, সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেছে।’

নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আরও আছে। এর আগে এ কর্মকর্তা কর্মরত ছিলেন নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায়। সেখানেও তার বিরুদ্ধে কৃষকের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ, সার, বীজসহ বিভিন্ন প্রণোদনার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠে।

এ বিষয়ে জাতীয় একটি পত্রিকায় প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়। পরে সেখান থেকে তাকে বদলি করা হয় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে, তবে সেখানে গিয়ে বেশি দিন থাকতে হয়নি তার। তিনি চলে আসেন কিশোরগঞ্জের নিকলীতে।

মোহনগঞ্জে থাকা অবস্থায় অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সেখানে কোনো প্রকার অনিয়ম দুর্নীতি করেননি বলে দাবি করেন সাখাওয়াত।

এ কর্মকর্তার দাবি, সেখানকার এক সাংবাদিক তার কাছে থেকে অনৈতিক সুবিধা নিতে চেয়েছিলেন। দেননি বলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন।

যা বললেন তৎকালীন উপ প্রকল্প পরিচালক

কৃষি সম্প্রসারণের আওতাধীন ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের তৎকালীন উপ প্রকল্প পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বিবেকানন্দ হীরার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ প্রকল্পের মেয়াদ আগস্টেই শেষ হয়ে যায়। এ প্রকল্পের সবকিছুই ক্লোজ হয়ে গেছে। তিনিও বর্তমানে এ প্রকল্পের দায়িত্বে নেই।

তিনি জানান, তার জানা মতে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রকল্পের বরাদ্দও কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। তারপরও যদি কোনো কর্মকর্তা সেটি বাস্তবায়ন না করে আত্মসাৎ করে থাকেন, তবে এর দায়ভার একান্তই তার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের উপপরিচালকের ভাষ্য

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘যদি কোনো কর্মকর্তা এ ধরনের অনিয়ম বা আত্মসাৎ করে থাকেন এবং তদন্তে এসবের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।’

আরও পড়ুন:
মিঠামইনে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে বৃক্ষরোপণ 
বিলে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে দুজন নিহত 
ভৈরবে গণজমায়েত প্রতিরোধে মহাসড়কে আওয়ামী লীগ
কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত

মন্তব্য

রেস-জেন্ডার
The police commissioner built a blackmail empire across Khulna

খুলনায় চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য গড়েছিলেন পুলিশ কমিশনার

খুলনায় চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য গড়েছিলেন পুলিশ কমিশনার খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদ্য সাবেক কমিশনার মোজাম্মেল হক। ছবি: সংগৃহীত
খুলনা মহানগর পুলিশের কমিশনার মোজাম্মেল হক চাঁদা আদায়ের টার্গেট নির্ধারণ করে দিতেন ওসি-ডিসিদের। তিনি দুর্নীতিবাজ সহকর্মীদের খুলনায় এনে সংগঠিত করেন চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য। আর ক্ষমতাসীনদের আশীর্বাদ পেতে তার প্রধান অস্ত্র ছিল চাটুকারিতা। বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো এই পুলিশ কর্মকর্তার অপরাধের বিচারের দাবি উঠেছে জোরেশোরে।

খুলনার বুকে মোজ্জামেল হক ছিলেন যেন এক অদৃশ্য সম্রাট, যার অধীনে গড়ে উঠেছিল চাঁদাবাজির এক অভিজাত সাম্রাজ্য। শহরের প্রতিটি কোণ- আবাসিক হোটেল, বাসস্ট্যান্ড, স্বর্ণ পাচার, জুয়ার আসর, ক্লাব, এমনকি পরিবহন ব্যবস্থাতেও ছিল তার নেটওয়ার্কের শক্তিশালী হাত।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) শীর্ষ পদটিতে বসে টাকার নেশায় বুঁদ হয়ে কমিশনার মোজাম্মেল হক প্রতি মাসে চাঁদা আদায়ের টার্গেট বেঁধে দিতেন থানার ওসি-ডিসিদের। বিশ্বস্ত দুর্নীতিবাজ সহকর্মীদের খুলনায় এনে, ধীরে ধীরে এই সংগঠিত চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি।

চাঁদাবাজির এই সাম্রাজ্য থেকে প্রতি মাসে খুলনার পুলিশ কমিশনারের কাছে জমা পড়ত বিপুল পরিমাণ অর্থ, যার অংশবিশেষ ভাগ-বাটোয়ারা হতো স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে।

রাজনৈতিক সুযোগ বুঝে আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা জামায়াত- সময়মতো সব দলের চাটুকারিতাও চালিয়ে গেছেন ওই দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তা। ‘জয় বাংলা’ থেকে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’- সব স্লোগানই নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন।

শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর খুলনার পুলিশ কমিশনারের সেই ক্ষমতার দম্ভ ধূলিসাৎ হয়েছে। টাকার মোহে অন্ধ মোজ্জামেল হককে অবশেষে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

এক সময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী পুলিশ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হকের বিদায়ের পর খুলনার সুশীল সমাজ মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তারা এখন দাবি জানাচ্ছেন, মোজ্জামেল হকের বিরুদ্ধে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত ও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হোক।

টার্গেট নির্ধারণ করে চাঁদা আদায়

কেএমপির পরিদর্শক পদমর্যাদার চারজন কর্মকতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি মাসে খুলনা সদর থানা থেকে পাঁচ লাখ টাকা আদায়ের টার্গেট নির্ধারণ করে দেন কমিশনার। এছাড়া অন্য সাতটি থানায় প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা করে মোট ২১ লাখ টাকা আদায়ের মাত্রা নির্ধারণ করে দেন তিনি।

মাসিক তিন লাখ টাকা জমা দিতে না পারায় ১০ মাস আগে এক থানার ওসিকে বিএনপির অনুসারী আখ্যা দিয়ে বদলি করে দেন কেএমপি কমিশনার মোজাম্মেল।

ওই ওসি বলেন, ‘আমাকে জমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে বলা হয়েছিল। তবে তিন লাখ টাকা বৈধভাবে আদায় করা সম্ভব নয়। পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে এই পুলিশ কমিশনারের আন্ডারে আর চাকরি করা সম্ভব ছিল না।

‘আমার ডেপুটি কমিশনার ভালো ছিলেন। তিনি আমাকে সেইভ করার চেষ্টা করেন। পরে কমিশনার আমাকে বদলি করে দিয়ে নতুন এক ওসিকে এনে সেই থানায় বসান।’

পরিদর্শকরা জানান, কমিশনারের সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস ছিল পরিবহন খাত। নগর ট্রাফিক বিভাগকে প্রতি মাসে ১৫ লাখ টাকা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। এই টাকা আদায় করার জন্য শহরের ইজিবাইকগুলো থেকে মাসিক চাঁদা আদায় শুরু করেছিলেন সার্জেটরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সার্জেট বলেন, ‘খুলনা শহরে প্রচুর সংখ্যক ইজিবাইক রয়েছে। এই কমিশনার দায়িত্ব গ্রহণের পর ইজিবাইক থেকে মাসিক চাঁদা আদায়ের নির্দেশ দেন। কিভাবে আদায় করতে হবে, সেই দিকনির্দেশনাও দিয়ে দেন তিনি।

‘ইজিবাইকগুলো নিয়ম না মেনে কোথাও পার্কিং করলে এক হাজার ৫০০ থেকে দু’হাজার টাকা করে জরিমানা করতে বলেন। তবে যদি কোনো ইজিবাইক মাসিক তিন হাজার টাকা করে সার্জেন্টদের পরিশোধ করতো, তবে সেই মাসে অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য তাকে কোন মামলা দেয়া হতো না।’

তিনি বলেন, ‘মাসিক চাঁদা দেয়া ইজি বাইকগুলোকে কোনো টোকেন বা রং দিয়ে চিহ্নিত করা হতো না। বরং চালকদের নামের তালিকা করে সার্জেন্টরা এই হিসাব রাখতেন। মাসিক চাঁদার টাকা আদায় করা হতো বিকাশের মাধ্যমে।’

থানার ওসিদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের পাশাপাশি কেএমপির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাত থেকেও টাকার ভাগ নিতেন কমিশনার।

এর পাশাপাশি নগর ডিসি অফিসেও তার চাঁদা আদায়ের টার্গেট নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। কোনো গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে বিশেষ মূল্যবান কোনো কিছু জব্দ করতে পারলে ওই টাকার ভাগ নিতেন কমিশনার।

এছাড়াও, পুলিশ লাইনের মেস থেকে মাসিক দুই লাখ, রেশন স্টোর থেকে এক লাখ ও কেএমপির গাড়িগুলোর জন্য প্রতি মাসে ইস্যুকৃত জ্বালানি তেল খাত থেকে তিন লাখ টাকা আদায় করতেন মোজাম্মেল হক। নগর পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে প্রতিটি পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য কমিশনারকে ২০০ টাকা করে দিতে হতো।

ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের এনে দল গঠন

একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মাত্র কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার কাছে পুরো নগর পুলিশ জিম্মি ছিল। কেএমপিতে যোগদানের পর নিজের বিশ্বস্ত সব কর্মকর্তাকে বিভিন্ন স্থান থেকে তিনি খুলনায় বদলি করে নিয়ে এসেছিলেন। এর মধ্যে রয়েছেন খালিশপুর থানার বর্তমান ওসি আনোয়ার হোসেন, যিনি পুলিশ কমিশনারের নিজ জেলা পাবনার সন্তান।

পরিদর্শকরা জানান, ওসি আনোয়ারের দায়িত্ব ছিল বিভিন্ন অপরাধে পর যেসব ওসি ও এসআইর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়, তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে মাফ পেয়ে যাওয়ার উপায় বের করে দেয়া।

এছাড়া থানার ওসিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের দায়িত্বে ছিলেন পুলিশ পরিদর্শক মো. হাফিজুর রহমান ও বিশেষ শাখার এএসআই মো. আব্দুর রাজ্জাক।

বর্তমানে কমিশনারের বাংলোর দায়িত্বে রয়েছেন এএসআই মো. আব্দুর রাজ্জাক। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি টাকা আদায়ের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, ‘এসবের সাথে আমি জড়িত ছিলাম না।’

অন্যদিকে ওসি আনোয়ার বলেন, ‘আমি মোবাইলে এই বিষয়ে কোনো কথা বলবো না।’

কমিশনারকে বিএনপির ‘গণদুশমন’ আখ্যা ও ছাত্রদের বয়কট

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারে পতনের পর বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে মিলে খুলনার যে পুলিশ সদস্যরা নানাভাবে প্রতারণা ও অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন, তাদের ‘গণদুশমন’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ৭ আগস্ট একটি তালিকা প্রকাশ করে মহানগর বিএনপি। ওই তালিকায় নাম ছিল কেএমপি কমিশনার মোজাম্মেল হকের।

এ প্রসঙ্গে খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘কেএমপি কমিশনার ছাত্র-জনতার বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করতে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারকে সহায়তা করেছিলেন।’

এরপর ৮ আগস্ট কেএমপির সম্মেলন কক্ষে শিক্ষাথীদের তোপের মুখে পড়েন কমিশনার মোজ্জামেল হক।

সেখানে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আল মুজাহিদ আকাশ। তিনি পুলিশ কমিশনারের কাছে প্রশ্ন করেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে কেন আপনারা আমাদের ওপর গুলি চালালেন? ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর আপনারা কে? কার নির্দেশে আপনারা আমাদের ওপর গুলি চালালেন?’

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক তানভীর বলেন, ‘আপনার মতো পুলিশ কমিশনারকে আমরা খুলনাতে চাই না। আপনি আমাদের নিরীহ ছাত্রদের ওপর গুলি চালিয়েছেন।’

সেই সময়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের কর্মকাণ্ডের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান কমিশনার মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কেন এগুলো করতে হয়েছিল তা এই সরকারের অধীনে চাকরিতে থাকলে তোমরা বুঝতে। এ নিয়ে আমি তোমাদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাই।’

‘জয়বাংলা’ থেকে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান

জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে ২০২৩ সালের ১৬ এক প্রজ্ঞাপনে মোজাম্মেল হককে কেএমপি কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। খুলনায় যোগদান করেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাইদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। একইসঙ্গে খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেকর ঘনিষ্ঠতা অর্জন করেন। কমিশনার যে কোনো সভায় যোগ দিয়ে তাদের পা ছুয়ে সালাম করতেন, পাশাপাশি আওয়ামী লীগের দলীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা’ বেশ জোরেশোরেই উচ্চারণ করতেন।

খুলনা মহানগর বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিলটন বলেন, ‘এই পুলিশ কমিশনার খুলনায় যোগদানের পর বিএনপির কোনো নেতা রাতে নিজ বাড়িতে ঘুমাতে পারতেন না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে তিনি নিয়মিত বিএনপির নেতাদের ওপর নির্যাতন শুরু করেছিলেন। প্রতিনিয়ত গায়েবি মামলা ও গণগ্রেপ্তার করাটা যেন তার নেশা ছিল।’

তিনি বলেন, ‘কমিশনার মোজাম্মেল আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তাদের পা ছুঁয়ে সালাম করতেন। পাশাপাশি চাঁদাবাজি করে নেয়া টাকার একটা অংশ তিনি ওই নেতাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিতেন।’

তবে ৫ আগস্ট সরকার পতদের পর কমিশনার মোজ্জামেল হক মিশে যান বিএনপি নেতাদের সঙ্গে। তাদের নানা সভায় অংশ নিয়ে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেয়া শুরু করেন। পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রশংসা শুরু করেন।

কমিশনার মোজাম্মেল হক ৮ আগস্ট ছাত্রদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে কেএমপিতে দাওয়াত দেন বিএনপি নেতাদের। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। সে সময় কমিশনারকে সংশোধন হতে হুঁশিয়ারি দিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক তানভীর বলেন, ‘আপনারা এতদিন একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করেছেন৷ এখন আরেক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে আমাদের সভা করার জন্য ডেকেছেন।

‘আপনাদের চাটুকারিতা কমে নাই। আমরা আপনাদের মতো চাটুকার পুলিশ কর্মকর্তাদের চাই না। আপনারা নিজ বিভাগের মধ্যে সংস্কার করেন। চাটুকারিতা বাদ দেন।’

তদন্তের দাবি সুশীল সমাজের

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মোজাম্মেল হককে ২৭ আগস্ট সরকারি চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ওই রাতেই তিনি খুলনা ছেড়ে চলে যান। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

তবে তার অন্যায় কর্মকাণ্ডের জন্য শুধু বাধ্যতামূলক অবসর নয়, তদন্ত করে শাস্তি নিশ্চিতের দাবি সুশীল সমাজের।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) খুলনা শাখার সভাপতি কুদরত-ই খুদা বলেন, ‘পুলিশের যে পর্যায়ের কর্মকর্তা হোক না কেন, তাকে শুধু অবসরে পাঠালে হবে না। অন্যায়ের জন্য শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

‘রাষ্ট্রে শাসন ফিরে এসেছে, সরকারি কর্মকর্তাদের রাষ্ট্র থেকে জনগণের রাষ্ট্র হয়েছে। এতদিন যারা অন্যায় করেছে, তদন্ত করে তাদের অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে।’

মন্তব্য

p
উপরে