ট্রান্সজেন্ডার পুরুষেরা টেস্টোস্টেরন থেরাপি নেয়ার পরেও তাদের ডিম্বাশয়ের অপরিপক্ব ডিম্বাণু পরিপক্ব করার সহজ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা। এর ফলে ট্রান্সজেন্ডার পুরুষের সন্তান জন্ম দেয়ার জটিলতার অবসান ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ডিম্বাশয়ে হাজারও অপরিপক্ব ডিম অনেকটা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। এর মধ্যে প্রতি মাসে একটি পরিপক্ব হয়ে ডিম্বাশয় থেকে নির্গত হয়। এ সময় ডিমটি শুক্রাণুর মাধ্যমে নিষিক্ত হওয়ার সুযোগ পেলে তা ভ্রূণ তৈরি করে।
ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ জন্মগতভাবে নারীর দেহবৈশিষ্ট্য ধারণ করেন, তবে মানসিকভাবে তাদের যৌনবৈশিষ্ট্য পুরুষের। বিশ্বের অনেক দেশে টেস্টোস্টেরন হরমোন থেরাপির মাধ্যমে তারা নিজেদেরকে পুরুষালি বৈশিষ্ট্যের দিকে নিয়ে যান।
তবে এ ধরনের চিকিৎসা গ্রহণকারীদের জৈবিকভাবে সন্তান নেয়ার বিষয়টি বেশ জটিল। সন্তান নিতে চাইলে শুরুতেই টেস্টোস্টেরন থেরাপি বন্ধ করে মাসিক চক্র ফিরিয়ে আনেন চিকিৎসকেরা। এতে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এরপর নারীর বিভিন্ন হরমোনভিত্তিক ওষুধ প্রয়োগ করে ডিম্বাশয়কে উদ্দীপ্ত করা হয়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় পরিপক্ব ডিম। পরে সেই ডিম্বাণু ল্যাবরেটরিতে হিমায়িত অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয় এবং সুবিধাজনক সময়ে নিষিক্ত করা হয় শুক্রাণুর সঙ্গে।
অস্ত্রোপচারের পদ্ধতিটি বেশ জটিল। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে টেস্টোস্টেরন থেরাপি বন্ধ রাখলে অবসাদ, মেজাজে পরিবর্তন এবং ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
এই প্রথম একদল বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, তারা টেস্টোস্টেরন হরমোন থেরাপির মধ্যে থাকা ট্রান্স পুরুষদের ডিম্বাশয় থেকেই পরিপক্ব ডিম্বাণু তৈরির উপায় বের করেছেন।
এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজনন জীববিজ্ঞানী ইভলিন টেলফারের নেতৃত্বে পরিচালিত হয় গবেষণাটি। এতে দেখা গেছে, কয়েক বছর টেস্টোস্টেরন থেরাপি নেয়ার পরেও ট্রান্সজেন্ডার পুরুষের ডিম্বাশয় থেকে কার্যকর ডিম্বাণু পাওয়া সম্ভব।
টেলফারের নেতৃত্বে গবেষক দলটির প্রথম কাজ ছিল টেস্টোস্টেরন থেরাপি ডিম্বাশয়ে কী প্রভাব ফেলে তা খুঁজে বের করা। এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পেতে, যুক্তরাজ্যের দুটি লিঙ্গনির্ধারণী ক্লিনিকের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেছে দলটি।
ওই দুটি ক্লিনিকে টেস্টোস্টেরন গ্রহণকারী যেসব ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ ডিম্বাশয় অপসারণ করেছেন, সেগুলোর সঙ্গে নারীর স্বাভাবিক ডিম্বাশয়ের তুলনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গেছে টেস্টোস্টেরন থেরাপি গ্রহণকারী ট্রান্সজেন্ডার পুরুষদের ডিম্বাশয়ে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে। কোলাজেন বেশি এবং ইলাস্টিনের মাত্রা কমে যাওয়ায় ডিম্বাশয়ের টিস্যু শক্ত হতে শুরু করে। এর ফলে ফলিকলগুলোর পক্ষে পরিপক্ব, নিষিক্ত হওয়ার উপযোগী ডিম্বাণু তৈরির কাজটি জটিল হয়ে যায়।
গবেষণায় ট্রান্স পুরুষের ডিম্বাশয়ের প্রতিটি ফলিকলের চারপাশের শক্ত টিস্যু কেটে সাফল্য পাওয়া গেছে। এটি টিস্যুগুলোর মধ্যে সিগন্যালিংকে উদ্দীপ্ত করে ফলিকলগুলো পরিপক্ব ডিম মুক্ত করতে সাহায্য করে। গবেষকেরা প্রাথমিকভাবে একটি বিন্দুতে অল্পসংখ্যক ডিম পরিপক্ব তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন, যেগুলোকে ল্যাবরেটরিতে শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত করা সম্ভব।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই উদ্ভাবন সন্তানধারণের জন্য ট্রান্সজেন্ডার পুরুষদের নানামুখী শারীরিক ও আইনি সীমাবদ্ধতার অবসান ঘটাবে। মিনেসোটার মায়ো ক্লিনিকের প্রজনন এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সামির বাবায়েভের মতে, ‘এটি অত্যন্ত চমকপ্রদ ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হতে চলেছে যা সম্ভাব্য অনেককে সাহায্য করবে।’
আরও পড়ুন:চাঁদার দাবিতে বিয়ে বাড়িতে তাণ্ডবের অভিযোগে চার ট্রান্সজেন্ডারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মিরপুর মডেল থানার ৩ নং সেকশনের ৮ নং রোড থেকে মঙ্গলবার বিকেলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন- বৃষ্টি আফরিন, মধু, ঈশানী ও সুমি।
পুলিশ জানায়, স্থানীয় একটি বিয়েবাড়িতে গিয়ে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন ট্রান্সজেন্ডাররা। এ টাকা না দেয়ায় তারা চিৎকার চেঁচামেচি ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করতে থাকেন। তাদেরকে শান্ত করতে দেড় হাজার টাকা দেয়া হয়, কিন্তু এই টাকা পেয়ে আরও বেশি হট্টগোল শুরু করেন ট্রান্সজেন্ডাররা। এক পর্যায়ে তারা বিয়েবাড়ির লোকজনকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘ট্রান্সজেন্ডাদের দেয়া দেড় হাজার টাকাও জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ’
সাবেক বান্ধবীকে ধর্ষণের পর হত্যা করার অপরাধে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো এক ট্রান্সজেন্ডার নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে৷ স্থানীয় সময় মঙ্গলবার প্রাণঘাতী ইনজেকশন দিয়ে এ শাস্তি কার্যকর করা হয়৷
জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৬ সালে সাবেক বান্ধবী বেভারলি গুন্থারকে হত্যার অভিযোগে অ্যাম্বার ম্যাকলাফলিনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় মিসৌরির আদালত৷ দুজনের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পরও অ্যাম্বার ক্রমাগত উত্ত্যক্ত করতে থাকায় বেভারলি নিজের নিরাপত্তা চেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন৷ তাতেও তার শেষরক্ষা হয়নি৷ ২০০৩ সালে মিসিসিপি নদীর তীরে তার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়৷ ধর্ষণের পর রান্নাঘরের ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ফেলে রাখা হয় তাকে৷
বিচারকরা সর্বসম্মতিক্রমে অ্যাম্বারলিকে দোষী সাব্যস্ত করলেও মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিষয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়৷ অচলাবস্থা কাটাতে একজন বিচারক তখন মিসৌরির বিশেষ আইন প্রয়োগের পক্ষে রায় দেন৷
২০১৬ সালে অ্যাম্বারের মৃত্যুদণ্ড নিয়ে নতুন করে শুনানির আদেশ দেয় আদালত, তবে ২০২১ সালে কেন্দ্রীয় আপিল আদালত ২০০৬ সালের আদেশই বহাল রাখে৷
অ্যাম্বারের আইনজীবীরা তখন তার যন্ত্রণাময় শৈশব এবং দীর্ঘদিন হতাশার কথা উল্লেখ করে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার আর্জি জানান৷ কিন্তু রিপাবলিকান গভর্নর মাইক পারসন তাতে সায় না দেয়ায় সে চেষ্টাও বিফলে যায়৷
মঙ্গলবার বোনে টেরে শহরের ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কারেকশন সেন্টারে প্রাণঘাতী ইনজেকশন দিলে অ্যাম্বার ম্যাকলাফলিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন৷
অ্যাম্বারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর এক লিখিত বিবৃতিতে মিসৌরির গভর্নর মাইক পারসন বলেন, ম্যাকলাফলিনের কারণে জীবনের শেষ কয়েকটি বছর গুন্থারকে ভীষণ আতঙ্কের মধ্যে কাটাতে হয়েছে৷ অবশেষে তার পরিবার এবং অন্যান্য ভালোবাসার মানুষ একটু শান্তি পেলেন৷
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএতে ভর্তি হয়েছেন ট্রান্সজেন্ডার নারী অঙ্কিতা ইসলাম। অঙ্কিতাই প্রথম ট্রান্সজেন্ডার যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষায়িত এই প্রোগ্রামে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।
অঙ্কিতার অধ্যয়নের পথ মসৃণ করে দিতে তার পাশে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দুই বছরের বাণিজ্যিক এই প্রোগ্রাম শেষ করতে তাকে কোনো অর্থ খরচ করতে হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অদম্য ইচ্ছা পূরণের পথটি সহজ ছিল না অঙ্কিতার। দৃঢ় লড়াইয়ে তার পাশে ছায়ার মতো থেকেছেন ট্রান্সজেন্ডার অ্যাক্টিভিস্ট হোচিমিন ইসলাম।
অঙ্কিতার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নান্দুরিয়ায়। করোটিয়ায় সরকারি সা’দত কলেজ থেকে গণিতে স্নাতক করেছেন।
অঙ্কিতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন ছিল আমার। তবে ইন্টার পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে ভয় পেয়েছি। এত বড় পরিবেশে মানুষের সঙ্গে মেশা, বাড়ি ছেড়ে থাকার ভয়। এছাড়া আর্থিক সমস্যার কারণেও তখন পড়ার চিন্তা বাদ দিতে হয়েছে।
‘এরপর স্নাতক শেষে ব্র্যাকে চাকরি হওয়ার পর ভাবলাম যেহেতু আমি এইচআরএ চাকরি করছি এই রিলেটেড একটা বিষয়ে মাস্টার্স করি। এরই মাঝে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএতে ভর্তির সার্কুলার হয়। তখন অ্যাপ্লাই করার আগেও নিজের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। চান্স পেলেও নেবে কিনা- তা নিয়ে অনেক ভেবেছি।’
অঙ্কিতা বলেন, ‘পরীক্ষায় ১৮৩তম মেধা তালিকায় আসি। এরপর সাক্ষাৎকারে ডাকা হলো, সাবজেক্ট চয়েস দিতে হলো। তখন ম্যানেজমেন্ট চয়েস দিলাম, সেটা পেলামও। তবে যখন খরচের বিষয়টি নিয়ে বসলাম দেখলাম অনেক টাকা লাগবে, যেটা আমার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।
‘এদিকে ভর্তির তারিখ শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাই কিছু টাকা ধার করে ভর্তি ফিটা দিই। ভর্তি হওয়ার পর কোর্স ফি দেয়ার তারিখ এগিয়ে আসে, আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। আমি হোচিমিন আপুকে বিষয়টি জানাই। আপু অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। পরে দুজনে মিলে গত ১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ভিসি স্যারের সঙ্গে দেখা করলাম।
‘স্যার আমার জেন্ডার, আমার অর্থনৈতিক অবস্থাসহ বিস্তারিত শুনে সব মিলিয়ে আমার জন্য কোর্স ফি ফ্রি করে দেয়ার ব্যবস্থা নিলেন, সেটা প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। তিনি ডিন স্যারকে ডেকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বললেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অঙ্কিতা বলেন, ‘‘স্যার বললেন, ‘আমি একজন ট্রান্সজেন্ডারকে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগটা দিতে পারি এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও গর্বের।’’
অঙ্কিতার অভিযাত্রায় সঙ্গী হতে পেরে হোচিমিন ইসলামও উচ্ছ্বসিত। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অঙ্কিতা অনেক দিন ধরে বলছিল, একটা মাস্টার্স করতে চায়। ঢাবিতে এমবিএর জন্য পরীক্ষা দিল, চান্স পেল, কিন্তু এই প্রফেশনার কোর্সে এত ব্যয় ওর পক্ষে বহন করা কঠিন। আমাকে বিষয়টি জানালে প্রথমে স্টুডেন্ট লোন নেয়া যায় কিনা সেটি ভেবেছি। তবে একজন ট্রান্সজেন্ডার নারীর জন্য সেটি হয়তো অনেক কঠিন প্রক্রিয়া।
‘পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যারকে ফোন করে দেখা করার সময় চাইলাম। তিনি আমাদের যেতে বললেন। অফিসে ভিসি স্যার সব কিছু শুনে ডিন স্যারকে ডেকে পাঠালেন। তাকে বললেন একজন ট্রান্সজেন্ডারকে পড়ার সুযোগ দিতে পারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও গর্বের। পরে ডিন স্যার নিজেই তার গাড়িতে করে আমাদের ডিপার্টমেন্টে নিয়ে গেলেন। শুধুটা একটা অ্যাপ্লিকেশন করালেন। পুরো ব্যাপারটা আসলে এভাবেই হয়েছে।’
অঙ্কিতার মতো ট্রান্সজেন্ডারদের পড়াশোনার সুযোগ করে দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব বলেই মনে করছেন ঢাবি উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বিষয় কিন্তু বিশেষভাবে আমলে নিয়েছেন- বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডাররা সমাজে নানাভাবে সুবিধাবঞ্চিত ছিল, নিগৃহীত ছিল। তিনি এসডিজি করতে গিয়ে, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণের জন্য, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত, অবহেলিত প্রান্তিক মানুষের প্রতি বিশেষ নজর দিচ্ছেন।
‘আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই এটি একটি দায়িত্ব। মানবিক দায়িত্ব তো আছেই। আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হলে সব ক্ষেত্রেই সব মানুষকেই অন্তর্ভুক্তির সুযোগ দিতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, ‘অঙ্কিতা এতদূর পর্যন্ত এসেছে, নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছে। আমরা হয়তো তাকে কিছুটা সাহায্য করেছি, কিন্তু এটির বড় গুরুত্ব আছে। আমার লক্ষ্য হলো এর মাধ্যমে উদাহরণ হবে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যারা স্টেক হোল্ডার আছেন এটি দেখে অনুপ্রাণিত হবেন। আমরা চাই সমাজের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিটি যেন বদলায়।’
আরও পড়ুন:জৈবিক পরিচয়ের পরিবর্তে জেন্ডার পরিচয়ের ভিত্তিতে নারী ও পুরুষকে সংজ্ঞায়িত করেছে কেমব্রিজ ডিকশনারি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
কেমব্রিজ ডিকশনারির পরিবর্তিত সংজ্ঞায় পুরুষ বলতে সেসব প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে, যারা নিজেকে পুরুষ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। জন্মের সময় তাদের জৈবিক পরিচয় ভিন্ন হতে পারে।
অন্যদিকে নারী বলতে সেসব প্রাপ্তবয়স্কের কথা বলা হয়েছে, যারা নিজেদের নারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যদিও জন্মের সময় তাদের জৈবিক পরিচয় ভিন্ন হতে পারে।
এসব ব্যাখ্যা ছাড়াও পুরুষ ও নারী নিয়ে দুটি উদাহরণ দিয়েছে কেমব্রিজ। পুরুষের উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, মার্ক একজন ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ। অস্ত্রোপচারের আগে চিকিৎসক তাকে কিছুক্ষণের জন্য একজন মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকতে উৎসাহ দেন।
অন্যদিকে নারীর উদাহরণ হিসেবে ডিকশনারিতে বলা হয়, মেরি একজন নারী যিনি জন্মের সময় পুরুষ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন।
চলতি বছরে নারী ও পুরুষের সংজ্ঞায় উল্লিখিত পরিবর্তন আনে কেমব্রিজ ডিকশনারি।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক গ্রুপ ব্রিস্টল লিডিং অ্যাগেইনস্ট ট্রান্সফোবিয়া এ পরিবর্তনকে ‘চমৎকার’ আখ্যা দিয়েছে।
জৈবিক পরিচয়ের পরিবর্তে জেন্ডার পরিচয়ের ভিত্তিতে কাউকে চিহ্নিত করা নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বজুড়ে সোচ্চার হয়েছেন এলজিবিটিকিউ অধিকারকর্মীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনেক সংস্থা বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন:জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনের দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দিয়েছে ট্রান্সজেন্ডারদের প্রতিনিধিদল। ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য সংসদে অন্তত তিনটি আসন সংরক্ষিত রাখার দাবি জানানো হয়েছে।
জাতীয় পরিচয়পত্র করার সময় হয়রানি ও বিড়ম্বনার অবসানও চেয়েছে প্রতিনিধিদল।
ট্রান্সজেন্ডারদের উন্নয়নে কাজ করা ‘সুস্থ জীবন’ নামের বেসরকারি কমিউনিটিভিত্তিক সংস্থার প্রতিনিধিরা বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এই স্মারকলিপি দেন।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব ও রাশেদা সুলতানার সঙ্গে প্রতিনিধিদলের প্রায় আধা ঘণ্টা বৈঠক হয়।
পরে ‘সুস্থ জীবন’-এর চেয়ারম্যান পার্বতী আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দাবি জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসন পূর্ণ হবে সবার অংশগ্রহণে। ট্রান্সজেন্ডারদের অন্ততপক্ষে যেন তিনটি আসন দেয়া হয়।
‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- লিভ নো ওয়ান বিহাইন্ড, কাউকে বাদ দিয়ে নয়। তাহলে জাতীয় সংসদে নারী আছে, পুরুষ আছে; আমরা কোথায়? আমাদের দাবিদাওয়া এবং আমাদের নিয়ে কাজ করার জন্য সংসদে প্রতিনিধি দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে এখন অনেক শিক্ষিত আছে। সম্প্রতি একজন বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। দায়িত্ব দেয়া হলে অবশ্যই আমরা পালন করতে পারব।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনারদের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের বলেছেন কী করা যায় দেখবেন। সংবিধান কী বলে সেগুলো তারা দেখবেন। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ ধরনের বৈঠক করতে বলেছেন।’
পার্বতী আহমেদ বলেন, ‘ভোটার আইডি কার্ড তৈরি ও সংশোধন নিয়েও কথা বলেছি। আমাদের অনেকেরই পুরুষ হিসেবে আইডি কার্ড আছে। এখন সেটা নিয়ে কোথাও গেলে একসেপ্ট করে না। কারণ, আইডি কার্ড এক রকম, আর তাদের দেখতে আরেক রকম। অনেকে এ কারণে হ্যারাচমেন্টের শিকার হচ্ছেন।
‘এ ছাড়া সেখানে অভিভাবকের প্রয়োজন হয়। অভিভাবকরা তো আমাদের অনেক আগেই ছেড়েই দিয়েছেন। পরিবার তো আমাদের রাখে না। তাহলে আমরা অভিভাবক কীভাবে আনব?’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এফিডেফিট করতে হয় প্রথম শ্রেণির হাকিম দিয়ে। তিনি আবার থানায় পাঠান। এ জন্য অনেক হয়রানির মুখে পড়তে হতে হয়। এগুলো দেখা হবে বলে বৈঠকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে।’
পার্বতী আহমেদের সঙ্গে ছিলেন ‘সুস্থ জীবন’-এর সাধারণ সম্পাদক ববি হিজড়া ও কমিউনিটি লিয়াজোঁ অফিসার জোনাকী জোনাক।
আরও পড়ুন:হাত পেতে নয়, বিকল্প কর্মসংস্থান ও জীবনমানের উন্নয়নে ট্রান্সজেন্ডারদের মাঝে সেলাই মেশিন বিরতণ করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পাথওয়ে।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর মিরপুরে পাথওয়ের প্রধান কার্যলয়ে ১০ জন ট্রান্সজেন্ডারের মাঝে সেলাই মেশিনগুলো বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের নির্বাহী সচিব (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, বিশেষ অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ পরিষদের উপ-পরিচালক ভবেন্দ্র নাথ বাড়ৈ।
সমাজকল্যাণ পরিষদের নির্বাহী সচিব মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘চাঁদাবাজি কিংবা হাত পেতে জীবিকা নয়, স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ চায় তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী। তাদের মূলধারায় আনতে কাজ করছে সরকার।
‘তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই বলেই তাদের চাঁদাবাজি কিংবা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। হিজড়াদের অপরাধ থেকে ফিরিয়ে কর্মসংস্থানে কাজ করছে পাথওয়ে।’
পাথওয়েকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সকল সুযোগ-সুবিধা দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
পাথওয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. শাহিন বলেন, ‘তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়ের মানুষেরা সমাজের সর্বক্ষেত্রে অবজ্ঞা, অবহেলা ও নানা অপমানের শিকার হয় সবসময়। তারা খুবই অসহায়, তাই এদের জীবনমান উন্নয়ন খুবই জরুরি। আর এ জন্য যে বিষয়গুলো বেশি প্রয়োজন তা হলো, সর্বদাই তাদের প্রতি সুন্দর আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর পরীবাগ ফুটওভার ব্রিজের ওপর ছুরিকাঘাতে নীলা নামের এক ট্রান্সজেন্ডার নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১টার দিকে ছুরিকাহত হন নীলা। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
২৪ বছর বয়সী নীলাকে নিয়ে ঢামেকে যাওয়া সাথী নামের ট্রান্সজেন্ডার জানান, পরীবাগ ফুটওভার ব্রিজের ওপর দুই যুবক নীলার গলায় ছুরিকাঘাত করেন।
তিনি আরও জানান, পরীবাগে ওই যুবকদের আগে দেখা যায়নি। কী কারণে নীলাকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে, তা জানা যায়নি।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
মন্তব্য