সারাদেশে আদিবাসী ধর্ষণের মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ করেছেন আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ।
তিনি বলেছেন, ‘সারাদেশে এখন আদিবাসী নারী ধর্ষণ করার মহোৎসব চলছে। এসবের কোনো বিচারই হচ্ছে না। কেউ কেউ গ্রেপ্তার হলেও কিছুদিন পরই ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে আমাদের উচ্ছেদের এক গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।’
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আদিবাসী নারী নিপীড়ন এবং ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
শেরপুরের শ্রীবরদীতে বন বিভাগ কর্তৃক আদিবাসীদের ফসল কেটে ফেলা এবং সুনামগঞ্জে হাজং নারীর ওপর যৌন নিপীড়নকারীদের শাস্তির দাবিতে এই সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছিল।
সমাবেশে অলিক মৃ বলেন, ‘কীভাবে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করা জনগোষ্ঠীর ক্ষতি করা হচ্ছে, সেটি আমরা দেখতে পাচ্ছি। আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র চলছে। ধর্ষণ-নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আদিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের নিপীড়ন, ধর্ষণ ও জমি থেকে উচ্ছেদের শিকার হচ্ছে, কিন্তু এর কোনো বিচার হচ্ছে না। আমি মনে করি, আদিবাসীদের যথাযথ অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে স্বতন্ত্র মানবাধিকার কমিশন করা প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমরা ধর্ষক, নিপীড়ক ও উচ্ছেদকারীর বিরুদ্ধে কথা বলছি। কথা ও প্রতিবাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এর স্থায়ী সমাধান জরুরি। টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ অঞ্চলে কোনো সরকারি গণভূমি ছিল না। এগুলো সব আদিবাসীদের শ্রমে গড়ে উঠা ভূমি। ৭০ বছরের বেশি সময় ধরে তারা সেখানে বসবাস করে আসছে। সেখান থেকে তাদের উচ্ছেদ করার যে ষড়যন্ত্র চলছে সেটি রুখে দিতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন বলেন, ‘আদিবাসীদের ওপর নিপীড়ন, ধর্ষণের কোনো বিচার হয় না। ধর্ষককে গ্রেপ্তার করা হলেও দুদিন পর ছাড়া পেয়ে যায়। এই যে দেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতি, খামখেয়ালীপনা আচরণ এবং এক ধরনের এড়িয়ে যাওয়ার মানসিকতার কারণে আজ তাদের প্রতি নিপীড়ন, অত্যাচার, ধর্ষণ এবং উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র চলছে।’
আদিবাসীদের ওপর নিপীড়ন ও ধর্ষণের জন্য দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি, আদিবাসী নারীদের প্রতি প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতি সমানভাবে দায়ী বলেও মনে করেন এই শিক্ষক।
আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক বাদল হাজংয়ের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস), হাজং ছাত্র সংগঠন, হাজং স্টুডেন্টস কাউন্সিল, খাসিয়া স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম ও আদিবাসী ছাত্র সংগঠনের (নিসাব) নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে থেকে সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা পাঁচ দফা দাবি পেশ করেন।
এগুলো হলো শেরপুরের শ্রীবরদি উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্থ গারো আদিবাসী পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া, সংশ্লিষ্ঠ কাজে জড়িত রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বিট অফিসারকে অপসারণ, আদিবাসীদের প্রথাগত ভূমির অধিকার দেয়া, হাজং আদিবাসী নারীর উপর যৌন নিপীড়নকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, মৌলভীবাজারের ডলুছড়া এবং সাহেবটিলার গারো ও খাসিয়া আদিবাসীদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র বন্ধ করা এবং সমতল আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা।
আরও পড়ুন:নওগাঁর পোরশায় আমন ধানের জমিতে আগাছা নাশক কীটনাশক স্প্রে করে বিনষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। রোববার (২৪ আগষ্ট) রাতের কোন এক সময় উপজেলার খরপা গ্রামের মাঠে স্বর্না-৫ জাতের ধানে কীটনাশক স্প্রে করা হয়। এতে ৭ জন কৃষকের প্রায় আড়াই লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঘটনায় মঙ্গলবার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন আবু সাঈদ নামে এক ভুক্তভোগী কৃষক।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী কৃষক সূত্রে জানা যায়, গত ৩ বছর থেকে উপজেলার খরপা গ্রামের জামাল, সায়েম, কালাম, সালাম ও আবু সাঈদ সহ ৭ জন তাদের আত্মীয়স্বজন মিলে মাঠে ১০ বিঘা জমি চাষাবাদ করছেন। এ বছরও ওইসব জমিতে আমন মৌসুমে স্বর্না-৫ জাতের ধান রোপন করেছেন। আর দেড়-দুই মাস পর ওইসব ধান কৃষকদের ঘরে উঠার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই রোববার রাতের আধারে প্রতিপক্ষরা পুরো জমিতে ধানে আগাছা নাশক কীটনাশক স্প্রে করেছে। এতে জমির সব ধানের গাছ শুকিয়ে গেছে। ধানের গাছ মরে যাওয়া হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষীরা। অর্থনৈতিক ভাবেও তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
তবে ঘটনায় স্থানীয় আব্দুল মান্নান চৌধূরী, আব্দুল লতিফ ও ইসমাঈল হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ হয়েছে।
ভুক্তভোগী কৃষক সেকেন্দার বলেন- সোমবার সকালে জমিতে ফসল দেখতে গিয়েছিলাম। দেখা যায় জমিতে ধানের গাছ কোথাও সবুজ আবার কোথাও পাতা শুকিয়ে আছে। বেলা যত বাড়ছে ধানের গাছ ততই শুকিয়ে যাচ্ছে। দিনের মধ্যে প্রায় সব জমির ধান শুকিয়ে মরে গেছে। এখন সবগুলো ধানের গাছ মরা হয়ে আছে।
আরেক কৃষক কালাম বলেন- প্রতি বিঘা জমিতে আবাদ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৭-৮ হাজার টাকা। আর দেড় মাস পরই এসব ধান ঘরে উঠার কথা ছিল। বিঘাতে ফলন পাওয়া যেতো অন্তত ২০-২২ মন। বর্তমানে ধানের দামও ভাল আছেন ১৪শ থেকে ১৬শ টাকা মন। ধান আর ঘরে উঠবে না।
অভিযোগকারী কৃষক আবু সাঈদ বলেন- আমরা ৩ বছর থেকে ওইসব জমিতে চাষাবাদ করে আসছি। রাতের আধারে প্রতিপক্ষসহ অজ্ঞাত আরো ৫-৭ জন শ্রমিক দিয়ে ধানে আগাছা নাশক কীটনাশক স্প্রে করে পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা অর্থনৈতিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। এতে আমাদের প্রায় আড়াই লক্ষাধিক টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেছি। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক অপরাধিদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচারের দাবী করছি।
এ ব্যাপারে আব্দুল মান্নান বলেন, ওই জমি চাচাতো ভাইদের। তারা নওগাঁ শহরে বসবাস করে এবং ওই জমি দেখভাল করে। যারা অভিযোগ করছে তারাই জমি দখল করে ধান রোপন করেছে। বর্গাদারদের তারা মারধর করে আহত করেছে। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলাও রয়েছে। জমি দখল বা ফসল নষ্টের সাথে আমার কোন সম্পৃক্তা নাই।
উপজেলার মর্শিদপুর ইউনিয়নের উপসহকারি কৃষি অফিসার সেলিম রেজা বলেন, জমিতে আগাছা নাশক কীটনাশক স্প্রে করা হয়েছে। এতে জমির প্রায় ৭০ শতাংশ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ধানের গাছে বেশি পরিমান পানি দিয়ে স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিঘায় যেখানে ২০-২২ মন ফলন হওয়ার কথা ছিল সেখানে ৫-৭ মন ফলন হতে পারে। মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব থাকতে পারে। কিন্তু ফলস নষ্ট করা মোটেও ঠিক হয়নি।
পোরশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিন্টু রহমান বলেন- বিষয়টি নিয়ে থানায় একটি অভিযোগ হয়েছে। ঘটনাস্থলে তদন্ত করার জন্য পুলিশ পাঠানো হবে। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হলো।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আজ এই মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এরপর আবু সাঈদকে গুলি করার দুটি ভিডিও ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করা হয়। এ সময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন মনিটরে ছেলেকে গুলির দৃশ্যের ভিডিও দেখে বার বার চোখ মুছছিলেন।
এরপর প্রসিকিউসনের আবেদনে আগামীকাল এই মামলায় প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ৩০ জুলাই প্রসিকিউসনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এই মামলায় অভিযোগ গঠনের প্রার্থনা করেন।
অন্যদিকে, আসামী পক্ষে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চাওয়া হয়।
এরপর গত ৬ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ২৭ আগস্ট দিন ধার্য করেন।
এই মামলার যে ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আনা হয়, তাদের মধ্যে গ্রেফতার ৬ জন আজ ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন।
এরা হলেন-বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান রাসেল, রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক সাবেক কর্মচারী মো. আনোয়ার পারভেজ, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।
আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ৩০ জুন ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন যখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন আবু সাঈদ।
২৫ বছর বয়সী আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিরস্ত্র আবু সাঈদের পুলিশ কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে, সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদেই সোচ্চার হন বহু মানুষ, যাতে আরও গতিশীল হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন।
ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে, একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে।
জাজ্জ্বল্যমান এসব অপরাধের বিচার এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৩৪৪টি মামলা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
এছাড়াও অভিযানকালে ৩১৩টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১১৪টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।
ডিএমপি’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, মঙ্গলবার ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব মামলা করা হয়।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর সীমান্ত থেকে ৫ লাখ ৪ হাজার ভারতীয় জাল রুপিসহ দুই বাংলাদেশিকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মহেশপুর সীমান্তের খোসালপুর এলাকা থেকে তাদের দু’জনকে আটক করা হয়।
আটককৃত ওলিয়ার শেখ (৩৭) ও তার শিশু পুত্র আমান শেখ (০৫) কে মহেশপুর থানায় সোপর্দ করেছে বিজিবি। তাদের মধ্যে ওলিয়ার শেখকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আমান শেখ শিশু হওয়ায় তাকে পরিবারের জিম্মায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। ওলিয়ার শেখ বাগেরহাট সদর উপজেলার বেশরগাতী গ্রামের শামসুল হকের পুত্র।
আজ বেলা ১১টায় মহেশপুর ৫৮ বিজিবি ব্যাটেলিয়নের সহকারী পরিচালক মুন্সি ইমদাদুর রহমানের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজিবি জানায়, গতকাল মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খোসালপুর বিওপির নায়েক দীনবন্ধু রায়ের নেতৃত্বে সীমান্ত পিলার-৬০/১০৫ এলাকায় অভিযান চালায় বিজিবি। এসময় ৫ লাখ ৪ হাজার ভারতীয় জাল রুপিসহ ওলিয়ার শেখ নামে এক বাংলাদেশিকে আটক করা হয়। ওলিয়ার শেখের ৫ বছর বয়সী শিশু সন্তান আমান শেখ এসময় তার সঙ্গে ছিল। পরে দুজনকেই মহেশপুর থানায় সোপর্দ করে বিজিবি।
বিজিবি আরও জানায়, ২০১৪ সাল থেকে ওলিয়ার শেখ ভারতের বিহারে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি দর্জির কাজ করতেন। ২০১৭ সালে বিহারের আরাবিয়া থানার এক নারীকে বিয়ে করেন ওলিয়ার। বিয়ে করার পর ২০২২ সাল থেকে বাগেরহাট সদর উপজেলার মারুফ নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে নিয়মিত ভারতীয় জাল রুপি সংগ্রহ করতেন ওলিয়ার। ওই জাল রুপি তিনি ভারতে বসবাসকালে নিয়মিত ব্যবহার করতেন।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায় প্রবেশ করে ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে মারুফের কাছ থেকে ৫ লাখ ৪ হাজার ভারতীয় জাল রুপি সংগ্রহ করেন ওলিয়ার শেখ। ওই রুপি নিয়ে ভারতে প্রবেশের চেষ্টাকালে তিনি বিজিবির হাতে আটক হন।
মহেশপুর থানার ওসি সাজ্জাদুর রহমান বাসসকে বলেন, ভারতীয় জাল রুপিসহ আটক ওলিয়ার শেখের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। আটক ওলিয়ার শেখের শিশু পুত্র আমানকে মানবিক দিক বিবেচনায় পরিবারের জিম্মায় দেয়া হবে।
গরু চোর চক্রের দুই সদস্য সোহান শেখ (২৩) ও সাগর শেখ (২৫) কে গ্রেপ্তার করেছে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ।
সোমবার (২৫ আগস্ট) রাতে কোটালীপাড়া থানার এসআই সাদ্দাম হোসেন খান দিপ্তরের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কোটালীপাড়া ও গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গরুচোর চক্রের এই দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত গরুচোর মোঃ সোহান শেখ গোপালগঞ্জ জেলা সদরের মানিদাহ গ্রামের মৃত হানিফ শেখের ছেলে, এবং সাগর শেখ কোটালীপাড়া উপজেলার ধোরাল গ্রামের কাজল শেখের ছেলে। মঙ্গলবার তাদেরকে কোটালীপাড়া থানায় দায়েরকৃত গরু চুরির মামলায় আটক দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
কোটালীপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাদ্দাম হোসেন খান দিপ্ত জানান, গত ২৮ জুলাই গভীর রাতে উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের পুর্বপাড়া গ্রামের সঞ্জয় মুখার্জীর একটি কালো রঙের গাভী ও কুশলা ইউনিয়নের লাখিরপাড় গ্রামের সুভাষ বিশ্বাসের একটি লাল রঙের বকনা গরু চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় পুর্বপাড়া গ্রামের লোকদের ধাওয়া খেয়ে চোরেরা গরুসহ গাড়ী রেখে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ২৯ জুলাই পুর্বপাড়া গ্রামের সঞ্জয় মুখার্জি বাদী হয়ে কোটালীপাড়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
তিনি আরো জানান, এই মামলার পর গরু চোর চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ মাঠে নামে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গরু চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য মোঃ সোহান শেখকে গোপালগঞ্জ ও সাগর শেখকে কোটালীপাড়া থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা এই গরু চুরির সিন্ডিকেট সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত সোহান গরু চুরির ঘটনায় চোর চক্রদের গাড়ি সরবরাহ করতেন অন্যদিকে সাগর শেখ সরাসরি গরু চুরিতে অংশ নিতো। পুরো গরু চোর চক্রদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের পরিবারকে দেওয়া এককালীন অনুদান ও মাসিক ভাতা স্বামী বা স্ত্রী, সন্তান এবং বাবা-মায়ের মধ্যে সমান তিন ভাগে বণ্টনের বিধান রেখে নতুন বিধিমালা জারি করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সরকারি সহায়তাকে কেন্দ্র করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অনেক শহীদ পরিবারের স্বামী-স্ত্রী, সন্তান ও বাবা-মায়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকার বণ্টনের এই পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিল।
সমস্যা সমাধানে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাইযোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন বিধিমালা, ২০২৫’ জারি করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সহায়তা নিয়ে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এসব দ্বন্দ্ব মেটাতে হয়রান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রতিনিয়তই এ বিষয়ে বিচার-সালিশ আসছে। এমনকি শহীদদের উত্তরাধীকারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ায় সহায়তা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটার পাশাপাশি বিলম্ব হচ্ছে বলেও জানান তারা।
এই প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় যার যার ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন মেনে সহায়তার এককালীন অর্থ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া শুরু করেন। কিন্তু পরিবারের অনেক সদস্য এটি মানছিলেন না। যেহেতু অনুদান-ভাতার অর্থ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কোনো সম্পদ নয়, তাই এটি কেন ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী বণ্টন করা হচ্ছে— এমন প্রশ্ন ওঠে। এ পরিস্থিতিতে বিধিমালা করে সহায়তার অর্থ বণ্টন করার পদ্ধতি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের ‘জুলাই শহীদ’ ও আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। সরকারিভাবে জুলাই শহীদ পরিবারকে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে। গত অর্থবছরে (২০২৪-২০২৫) ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে। বাকি ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র চলতি (২০২৫-২০২৬) অর্থবছরে দেওয়া হচ্ছে। গত জুলাই থেকে শহীদ পরিবারকে মাসিক ২০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার কথা জানায় সরকার। এ পর্যন্ত ৮৪৪ জন শহীদের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে, পরে অবশ্য আটজনের গেজেট বাতিল করা হয়।
গত ৭ আগস্ট উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকেও সরকারি এসব সহায়তা নিয়ে শহীদ পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টি আলোচিত হয়। বৈঠকে এ বিষয়ে একটি বিধিমালা করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘জুলাই শহীদদের পরিবারের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব দেখছি, শহীদদের জন্য যে সম্মানী দেওয়া হচ্ছে সেটা নিয়ে। কে টাকাটা পাবেন তা নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হচ্ছে। এজন্য একটি বিধি করে দেওয়া হবে। কে কতটুকু অংশ পাবে সেটা বিধিতে উল্লেখ করা হবে। এ বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে জানতে পারবেন।’
এ বিষয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মশিউর রহমান ইউএনবিকে বলেন, ‘শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সহায়তার অর্থ কীভাবে বণ্টন করা হবে সেটি বিধিমালয় উল্লেখ করা হয়েছে। আগে অনুদানের প্রথম কিস্তির যে অর্থ বণ্টন করা হয়েছে সেটি বিধিমালা অনুযায়ী সমন্বয়ের চেষ্টা করা হবে। অনুদানের বড় অংশটি চলতি অর্থবছরে বিতরণ করা হবে; এটি বিধিমালা অনুযায়ী হবে। এই অর্থ বিতরণের কাজটি করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন বিধিমালা জারি হওয়ার মাধ্যমে জুলাই শহীদ পরিবার ও যোদ্ধাদের সহায়তা ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে আমরা একটি গাইডলাইন পেলাম। প্রাথমিকভাবে কোনো বিধি-বিধান না থাকায় আমরা ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী শহীদ পরিবারকে সহযোগিতা দেওয়া শুরু করেছিলাম। এখন বিধিমালা অনুযায়ী সহযোগিতার কার্যক্রম চলবে।’
জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে শহীদদের স্বামী বা স্ত্রী, ঔরসজাত বা গর্ভজাত সন্তান এবং মাতা ও পিতার মধ্যে সরকারের দেওয়া আর্থিক সহায়তা তিন ভাগে বণ্টন করতে হবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
শহীদের স্বামী বা স্ত্রী আর্থিক সহায়তার এক-তৃতীয়াংশ পাবেন। তবে একাধিক স্ত্রী থাকলে আর্থিক সহায়তা সমানভাবে বণ্টন করতে হবে।
শহীদের ঔরসজাত বা গর্ভজাত সন্তানও আর্থিক সহায়তার এক-তৃতীয়াংশ পাবেন। তবে একাধিক সন্তান থাকলে আর্থিক সহায়তা সমানভাবে বণ্টন করতে হবে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, শহীদের বাবা-মা আর্থিক সহায়তার এক-তৃতীয়াংশ পাবেন। তবে মা ও বাবার অনুকূলে দেওয়া আর্থিক সহায়তা সমানভাবে বণ্টন করতে হবে। আবার মা ও বাবার মধ্যে কোনো একজনের অবর্তমানে অপরজন আর্থিক সহায়তা উভয়ের সম্মিলিত অংশ অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশই পাবেন। তবে যদি শহীদের স্বামী বা স্ত্রী না থাকে তবে স্বামী বা স্ত্রীর জন্য নির্ধারিত আর্থিক সহায়তার অংশটি শহীদের সন্তান ও বাবা মায়ের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ হবে।
তবে সন্তান না থাকলে সন্তানের সহায়তার অংশটি স্বামী বা স্ত্রী এবং বাবা-মায়ের মধ্যে সমানভাবে ভাগ হবে। আর যদি বাবা-মা না থাকেন, তবে বাবা-মায়ের অংশ স্বামী বা স্ত্রী এবং সন্তানদের মধ্যে সমানভাগে ভাগ হবে।
এ ছাড়া কোনো অবিবাহিত ব্যক্তি শহীদ হলে তার জন্য প্রদত্ত আর্থিক সহায়তা তার বাবা-মায়ের মধ্যে সমানভাগে ভাগ করতে হবে। তবে বাবা ও মায়ের মধ্যে যেকোনো একজনের অবর্তমানে অপরজন সম্পূর্ণ আর্থিক সহায়তা পাবেন বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের মাসিক ভাতা সহায়তাপ্রাপ্ত কোনো সদস্য মারা গেলে মারা যাওয়ার তারিখ থেকে ভাতার অবসান ঘটবে। পরবর্তী সময়ে এ ভাতা শহীদ পরিবারের অন্য কোনো সদস্য দাবি করতে পারবেন না।
শহীদের স্বামী বা স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে করলে বিয়ে হওয়ার তারিখ থেকে তার মাসিক অনুদান বা ভাতার অংশের অবসান ঘটবে। পরিবারের অন্য কোনো সদস্য এই ভাতা পাবেন না।
এককালীন সহায়তা গ্রহণের আগে জুলাই যোদ্ধা মারা গেলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তা তিন ভাগে ভাগ করতে হবে। শহীদ পরিবারের মতো এক্ষেত্রে একই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। একই সঙ্গে জুলাই যোদ্ধা মারা গেলে তার মাসিক ভাতার অংশের অবসান ঘটবে বলেও বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বিধিমালায় জানানো হয়েছে, যদি কোনো জুলাই যোদ্ধা অভ্যুত্থানের সময় এক বা একাধিক শারীরিক আঘাতজনিত কারণে অতি গুরুতর হয়ে অব্যাহতভাবে দেশে বা বিদেশে কোনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মারা যান, তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ হিসেবে গণ্য হবেন এবং তার পরিবার সুযোগ-সুবিধা পাবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যরা এককালীন ৩০ লাখ টাকা সমমূল্যের পরিবার সঞ্চয়পত্র পাওয়ার অধিকারী হবেন। তবে যদি তিনি আহত হিসেবে এককালীন আর্থিক সহায়তা নেন, সেই অংশ কেটে রাখা হবে। একই সঙ্গে তার পরিবার শহীদ পরিবারের মতো মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন।
সব সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি ক্লিনিক বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং সরকার নির্ধারিত বিশেষায়িত হাসপাতাল সব শ্রেণির আহত জুলাই যোদ্ধাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেবে।
চিকিৎসা সহায়তা নিতে হাসপাতাল, ক্লিনিক বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো লিখিত আবেদন করার প্রয়োজন হবে না। তবে সেবা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের দেওয়া পরিচিতিমূলক হেলথ কার্ডের মূল কপি দেখিয়ে জুলাইযোদ্ধার স্বাক্ষর সম্বলিত একটি ফটোকপি দাখিল করতে হবে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনের জন্য তিনটি কমিটি থাকবে। এর মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি, জেলা কমিটি ও উপজেলা কমিটি।
কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হবেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা উপদেষ্টা, জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং উপজেলা কমিটির সভাপতি হবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। বিধিমালায় তিনটি কমিটির গঠন ও কার্যাবলী উল্লেখ করা হয়েছে।
শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য গৃহীত পরিকল্পনা বা প্রকল্পের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিধি দ্বারা নির্ধারণ করতে হবে। তবে বিধি না হওয়া পর্যন্ত প্রচলিত বিধি-বিধান ও পদ্ধতি অনুযায়ী পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কাজ সম্পাদন করা যাবে বলে বিধিমালায় জানানো হয়েছে।
পুনর্বাসনের জন্য জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক; ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স-বিষয়ক; ডিজিটাল মার্কেটিং, আইটি সাপোর্ট সার্ভিস, গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট; ফ্রিল্যান্সিং, মোবাইল সার্ভিসিং, অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, মেকানিক্যাল ও অটোমোবাইল-বিষয়ক; ড্রাইভিং, আধুনিক অফিস ব্যবস্থাপনা, নির্মাণ ও প্রকৌশলবিষয়ক; খাদ্য ও আতিথেয়তাবিষয়ক; বিউটিফিকেশন আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস; বস্ত্রশিল্পবিষয়ক; কৃষি, নার্সারি, গবাদি পশুপালন, মৎস্য হ্যাচারি ও মৎস্য চাষ এবং পোল্ট্রি ফার্মিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবে।
উপার্জনমুখী কাজ বা আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহজ শর্তে ঋণ বা এমন সুবিধাদি দিতে অধিদপ্তর উদ্যোগ নিতে পারবে বলেও বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
আর্থিক সহায়তা বা পুনর্বাসন-সংক্রান্ত বিষয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে তা নিষ্পত্তিতে একটি সালিশ বোর্ড গঠন করা হবে বলে বিধিমালায় জানানো হয়েছে। শহীদ পরিবারের বিরোধ-সংশ্লিষ্ট সদস্য, গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের মনোনীত কমপক্ষে সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি, দুই পক্ষের ভিত্তিতে মনোনীত একজন সালিশকারীর সমন্বয়ের সালিশ বোর্ড গঠন করা হবে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, সালিশ বোর্ডের সিদ্ধান্তের কারণে কোনো ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হলে তিনি ৩০ দিনের মধ্যে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আপিল করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে মহাপরিচালকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
সূত্র: ইউএনবি
বিগত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৭,৩০০ কোটি টাকা বেশি। মূলত ট্রেজারি বিল, বন্ড এবং সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত সুদের মাধ্যমে এই মুনাফা অর্জিত হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের মোট পরিচালন আয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। সেখান থেকে আনুষঙ্গিক ব্যয় ও কর পরিশোধের পর চূড়ান্ত নিট মুনাফা নির্ধারণ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই মুনাফা প্রতি বছরই বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নিট মুনাফা ছিল ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ছিল ১০ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। পরপর তিন অর্থবছরে মুনাফার এই প্রবৃদ্ধি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির স্পষ্ট প্রমাণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি মুনাফা অর্জন করেছে। বিশেষ করে সরকারের কাছে ধার দেওয়া এবং ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ থেকে বড় অঙ্কের সুদ আয় হয়েছে, যা মুনাফা বৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি।’
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর-এর সভাপতিত্বে পরিচালনা পর্ষদের ৪৪৩তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব বিবরণী অনুমোদন করা হয়। সভা শেষে জানানো হয়, নিট মুনাফার এই বিপুল অঙ্কের অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হবে, যা বাজেটসহ বিভিন্ন আর্থিক পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন ধারাবাহিকভাবে মুনাফা বাড়াতে সক্ষম হয়, তখন তা দেশের আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে বিবেচিত হয়। এতে সরকারের রাজস্ব আদায়ে সহায়তা যেমন বাড়ে, তেমনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বাধীনতা ও সক্ষমতাও বাড়ে।
এদিকে এ মুনাফার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আকর্ষণীয় বোনাস ঘোষণা করা হয়েছে। বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ব্যাংকের কর্মীদের নিজ নিজ বেসিক বেতনের ছয় গুন ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে নানামুখী আলোচনা থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালার আওতায় এবং মুনাফার অংশ হিসেবেই প্রদান করা হবে।
শুধুমাত্র গত অর্থবছরেই বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে দিয়েছে ১০ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। এবারের মুনাফা এর চেয়েও দ্বিগুণের কাছাকাছি হওয়ায়, সরকারের রাজস্ব ব্যবস্থাপনাতেও তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন অর্থনীতি সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই মুনাফা বৃদ্ধি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক ও প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধিরই একটি চিত্র তুলে ধরে। যদিও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং অভ্যন্তরীণ নানা চ্যালেঞ্জ ছিল, তবুও বাংলাদেশ ব্যাংক তার আয় বাড়াতে সক্ষম হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা।
মন্তব্য